ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় বিএনপি-জামায়াতের নেতাকর্মীরাও আসামির তালিকায়: মামলার স্টিয়ারিং কার হাতে? by জাবেদ রহিম বিজন

মামলা করছে না বিএনপি, জামায়াত, হেফাজতে ইসলাম। এই দাবি দলগুলোর ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নেতাদের। তারা এ ব্যাপারে কাউকে মদতও দিচ্ছেন না। বরং ঢালাও মামলায় বিএনপি-জামায়াতে ইসলামীর নেতাকর্মীদের ফাঁসানো হচ্ছে বলে তথ্য দেন তারা নিজেরাই। তাহলে কারা করছে এসব মামলা, কী তাদের উদ্দেশ্যে?  মামলার স্টেয়ারিং কার হাতে? এরই মধ্যে ব্যাপক মামলা বাণিজ্যের বিষয়টি সামনে এসেছে।

বিএনপি’র দায়িত্বশীল এক নেতা জানান-জমি-সংক্রান্ত বিরোধ, পারিবারিক দ্বন্দ্ব ইত্যাদি নানা বিরোধের বদলা নিতে অনেককে মামলায় আসামি করা হচ্ছে। যা থেকে তাদের দলের নেতাকর্মীরাও পরিত্রাণ পাচ্ছেন না।

সরাইলের অরুয়াইল ছাত্রদলের সাবেক সিনিয়র সহ-সভাপতি শাহ মিরান মামলা খেয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন এখন। তার পুরো পরিবার বিএনপি’র সমর্থক। তার ভাই যুবদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক। এসব জানিয়ে মিরান বলেন-তারপরও আমি মামলার আসামি। আমার অপরাধ বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে আমি অ্যাকটিভ ছিলাম। আমাদের স্কুলের একটি জায়গা আওয়ামী লীগের লোকজন দখল করে রেখেছিল। ৫ই আগস্টের পর আমি এ নিয়ে আন্দোলন করেছিলাম। দুইজন ভুয়া মুক্তিযোদ্ধাও এই জায়গা দখলে জড়িত ছিল। তাদের বিষয়ে মন্ত্রণালয়, ডিসি ও ইউএনও অফিসে স্মারকলিপি দিয়েছিলাম। এ কারণে আমাকে ফাঁসিয়ে দিয়েছে। ইতিপূর্বে আমার পরিবারের কেউ মামলায় পড়েনি। আমি এখন পালিয়ে বেড়াচ্ছি। আতঙ্কের মধ্যে আছি। মিরান আরও জানান- তার এলাকাতেই আরও অনেক নিরপরাধ লোক মামলার আসামি হয়েছে।

বিজয়নগরের পাহাড়পুর ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য আবদুল হককে মামলা ছাড়াই ১৫/২০ দিন আগে আটক করে পুলিশ। পরে তাকে মামলায় ঢুকিয়ে দেয়া হয়। এরপরই আতঙ্কে এলাকা ছাড়া হন ৪ নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য কামরুল, ৫নং ওয়ার্ডের রফিকুল ইসলাম, ৮নং ওয়ার্ডের সিরাজ মিয়াসহ ইউনিয়নের আরও কয়েকজন ইউপি সদস্য। কে কাকে ইশারা দিয়ে পুলিশে ধরিয়ে দেয় সেই আতঙ্কে আছেন এখন ওই এলাকার সবাই। ওই ইউনিয়নের এক ইউপি সদস্য জানান- মামলায় আসামি করার ভয় দেখিয়ে বা আসামি থেকে নাম কাটানোর কথা বলে টাকা দাবি করা হচ্ছে। এসব কারা করছে তা সবাই জানে। কিন্তু ভয়ে মুখ খুলেন না।
জেলা জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি মোবারক হোসেন জানান-মামলায় তাদের ১২ কর্মীকে আসামি করা হয়েছে। বলেন, আমরা যেখানে ১৭ বছর নির্যাতনের শিকার হলাম। আমাদের আবার মামলা দেয়া হচ্ছে। এ বিষয়ে আমি প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছি। ইতিমধ্যে আখাউড়ায় আমাদের গ্রাম কমিটির এক অর্থ সম্পাদককে অ্যারেস্ট করা হয়েছে। জামায়াতে ইসলামী কোনো মামলা-মোকদ্দমা করেনি জানিয়ে তিনি আরও বলেন, আমরা মনে করি প্রকৃত অপরাধীদের চিহ্নিত করে তাদের নামেই মামলা করা হোক। সাধারণ জনগণের নামে হয়রানিমূলক মামলা যেন না করা হয়।

হেফাজতে ইসলামের নেতা মুফতি জাকারিয়া খান জানান- হেফাজতে ইসলাম কোনো মামলা করছে না। যারা মারা গেছেন তাদের ফ্যামিলি মামলা করছেন।  

জেলা বিএনপি’র সদস্য সচিব সিরাজুল ইসলাম জানান- ২০১৪, ২০১৮ এবং ২০২১ সালে স্বৈরাচার সরকারের নির্যাতনের শিকার হয়ে যারা নিহত হয়েছেন তাদের স্বজনরা তৎকালীন সময়ে কোনো মামলা করতে পারেননি। সরকার তাদের বিভিন্নভাবে বাধা দিয়ে রেখেছিল। সরকারের পতনের পর এখন তারা নিজ নিজ দায়িত্বে এসব মামলা করছে। ওই তিনটি সালে যেসব ঘটনা ঘটেছে এর সঙ্গে বিএনপি’র কোনো সম্পৃক্ততা ছিল না। বিএনপি এখন পর্যন্ত কোনো মামলা করেনি। তবে পরিবেশ-পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করে ভবিষ্যতে আলাপ-আলোচনা করে মামলা করতে পারেন। যেসব মামলা হয়েছে এতে তার দলের কেউ আসামি হয়েছে কিনা এমন প্রশ্নের উত্তরে জানান, দলের পদধারী কেউ আসামি হয়েছেন- এমন তথ্য তার জানা নেই। মামলার শিকার হয়ে সাধারণ লোকজন হয়রানি বা  ভোগান্তির শিকার হোক- তা আমরা চাই না।

জেলার রাজনৈতিক দলের নেতারা মামলা-মোকদ্দমার সঙ্গে তাদের সম্পৃক্ততা অস্বীকার করলেও হয়রানির শিকার মানুষজন মামলা খেয়ে তাদের কাছে ছুটে যাচ্ছেন পরিত্রাণ পেতে।   

উল্লেখ্য, ৫ই আগস্টের পর জেলার বিভিন্ন থানায় রাজনৈতিক মামলা হয়েছে ২৯টি। এসব মামলায় এজাহারনামীয় আসামি করা হয়েছে ১৯২৯ জনকে। প্রত্যেক মামলায় আরও এক-দেড়শ’ জন অজ্ঞাতনামা আসামি রয়েছে। এছাড়া আদালতেও হয়েছে বেশ কয়েকটি মামলা।

No comments

Powered by Blogger.