হাসপাতালে হৃদয়বিদারক দৃশ্য: পুড়ে মরলো ১০ নবজাতক, ১৬ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক

উত্তর প্রদেশের এক হাসপাতালে ভয়াবহ দৃশ্য। আকস্মিক সৃষ্ট অগ্নিকাণ্ডে সেখানে নিহত হয়েছে কমপক্ষে ১০টি নবজাতক। জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে লড়ছে কমপক্ষে ১৬টি শিশু। এ ঘটনায় পুরো হাসপাতালে, এর আশপাশে এক শোকের ছায়া নেমে এসেছে। অভিভাবকরা প্রতিবাদে বিক্ষোভ করছেন। রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত আহত শিশুদের দেখতে  দেয়নি কর্তৃপক্ষ। এতে ক্ষোভ কয়েকগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। কিন্তু কর্তৃপক্ষ বলছে, আগুনে পুড়ে যাওয়ার ফলে এসব শিশুকে অভিভাবকরা শনাক্ত করতে হিমশিম খেতে পারেন। এ জন্য তাদেরকে বিরত রাখা হয়েছে।  এ খবর দিয়েছে অনলাইন এনডিটিভি। এতে বলা হয়, শুক্রবার দিবাগত রাতে উত্তর প্রদেশের ঝাঁসিতে অবস্থিত মহারানি লক্ষ্মী বাঈ মেডিকেল কলেজের নবজাতকদের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (এনআইসিইউ) এই আগুন দেখা দেয় স্থানীয় সময় রাত প্রায় ১০টা ৪৫ মিনিটের দিকে। ডিস্ট্রিক্ট ম্যাজিস্টেট অভিনাশ কুমার এ তথ্য দিয়ে হতাহতের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। ঘটনার সময় এনআইসিইউ’তে কমপক্ষে ৫৪টি নবজাতক ভর্তি ছিল। আগুন ছড়িয়ে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে কর্মকর্তারা দ্রুত ব্যবস্থা নিয়ে উদ্ধার করেন ৪৪টি শিশুকে। যে ১০ শিশু নিহত হয়েছে তার মধ্যে সাত জনকে শনাক্ত করা হয়েছে। বাকিদের শনাক্ত করতে ডিএনএ পরীক্ষা করা হবে। এমন খবরে শনিবার সকালে হাসপাতালের বাইরে ব্যাপক বিশৃঙ্খল অবস্থার সৃষ্টি হয়। সন্তানদের দেখতে না দেয়ায় অভিভাবকদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। তারা শুক্রবার রাতের পর আবার হাসপাতালের বাইরে সমবেত হন। একটি সড়কে অবরোধ করার চেষ্টা করেছিলেন তারা। তাদেরকে তাতে বাধা দেয়া হয়েছে। উপমুখ্যমন্ত্রী ব্রজেশ পাঠক বলেছেন, অক্সিজেন ক্যানিস্টার রাখা ছিল ভিতরে।

শর্ট সার্কিটের ফলে তা থেকে অগ্নিকাণ্ড হয়ে থাকতে পারে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ছবিতে দেখা যায়, হাসপাতালের বাইরে অস্থির পিতামাতা ও আত্মীয়রা উদ্বেগ নিয়ে অপেক্ষা করছেন। হাসপাতালের ভিতরে বেশ কিছু মেডিকেল সরঞ্জাম পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। সন্তান হারানো এক মা বলেছেন, আগুনের পর তার সন্তানকে খুঁজে পাননি। পরে জানানো হয়েছে তার বুকের ধন মারা গেছে। ঝাঁসির সিনিয়র এসপি সুধা সিং শনিবার সকালে বলেছেন, আগুনে পুড়ে যাওয়া ১৬টি শিশুকে স্থানীয় হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। তাদেরকে রক্ষা করার সব চেষ্টাই করা হচ্ছে। প্রয়োজনীয় সব রকম চিকিৎসক রাখা হয়েছে সেখানে। অভিযোগ আছে ওই হাসপাতালের ফায়ার এলার্ম এবং অন্য নিরাপত্তা ব্যবস্থা যথাযথভাবে ঘটনার সময় কাজ করছিল না। কিন্তু এ অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছে উত্তর প্রদেশ রাজ্য সরকার।

রাজ্যের স্বাস্থ্যমন্ত্রীর দায়িত্বে আছেন ব্রজেশ পাঠক। তিনি বলেন, হাসপাতালের অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা অডিট করা হয়েছে ফেব্রুয়ারিতে। তারপর জুনে একটি মহড়া অনুষ্ঠিত হয়েছে। তা সত্ত্বেও কেন অগ্নিকাণ্ড ঘটলো সে বিষয়ে তিনি বলেন, তদন্তের পর বলা যাবে। তিনি বলেন, তিন স্তরের তদন্ত হচ্ছে। একটি তদন্ত করছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। একটি করছে পুলিশ এবং একটি তদন্ত করছেন ম্যাজিস্ট্রেট। শুক্রবার রাতেই সিনিয়র কর্মকর্তা ও চিকিৎসকদের উদ্ধার এবং আহতদের দ্রুত চিকিৎসার নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী যোগি আদিত্যনাথ। হতাহতদের পরিবারের প্রতি ৫ লাখ রুপি করে আর্থিক সহায়তার ঘোষণা দিয়েছেন তিনি। যেসব শিশু গুরুত্বর আহত হয়েছে তার প্রতিজনের জন্য দেয়া হবে ৫০ হাজার রুপি। ১২ ঘণ্টার মধ্যে বিভাগীয় কমিশনার, ঝাঁসির ডিআইজিকে রিপোর্ট জমা দেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। অগ্নিকাণ্ডে শোক প্রকাশ করে বিবৃতি দিয়েছেন প্রেসিডেন্ট দ্রুপদি মুরমু, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। অগ্নিকাণ্ডকে হৃদয়ভাঙ্গা বর্ণনা করে নিহতদের জন্য প্রধানমন্ত্রীর জাতীয় ত্রাণ তহবিল থেকে দুই লাখ রুপি এবং আহতদের দ্রুত রোগমুক্তির জন্য ৫০ হাজার রুপি করে দেয়ার ঘোষণা দিয়েছেন মোদি।

mzamin

No comments

Powered by Blogger.