চট্টগ্রামে আইনজীবী হত্যা: পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন, কমিশনারের পদত্যাগ দাবি

আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফ হত্যাকাণ্ডে পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি এডভোকেট নাজিম উদ্দিন চৌধুরী। এমনকি এসবের জন্য পুলিশ কমিশনারের পদত্যাগ দাবি করেছেন, না হলে টেনে-হিঁচড়ে নামানোরও হুঁশিয়ারি দেন তিনি। বৃহস্পতিবার সকালে আদালত প্রাঙ্গণে চিন্ময় কৃষ্ণ দাশ ব্রহ্মচারীর প্রিজনভ্যানে বক্তব্য দেয়াকে কেন্দ্র করে এ কথা বলেন চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির শীর্ষ এ নেতা। আইনজীবী আলিফ হত্যার বিচার চেয়ে আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় চট্টগ্রামের ‘ল’ অ্যালামনাই এসোসিয়েশনের আয়োজনে অনুষ্ঠিত মানববন্ধনে, জেলা আইনজীবী সমিতি, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়, সাউদার্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও অন্যান্য বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘ল’ অ্যালামনাই এসোসিয়েশনের বর্তমান ও প্রাক্তন শিক্ষার্থী, নিপীড়নবিরোধী আইনজীবী সমাজসহ বিভিন্ন সংগঠনের সদস্যরাও যোগ দেন।

এডভোকেট নাজিম উদ্দিন বলেন, আমাদের চট্টগ্রামের আদালত অঙ্গন ও আশপাশে এ ধরনের ঘটনা আগে হয়নি। গত পরশু ইসকনের এক সন্ত্রাসী নেতাকে গ্রেপ্তার করে তাকে আদালতে তোলার পর বিজ্ঞ আদালত কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দিলেন এবং প্রিজনভ্যানে তোলা হলো। আমরা পরবর্তীতে দেখলাম তাদের সন্ত্রাসী কার্যক্রম। ভ্যানে তোলার পর ইসকন সমর্থিত সন্ত্রাসীরা ভ্যান ঘেরাও করে আদালত অঙ্গনে উল্লাস করেছে। আমরা পুলিশকে দেখেছিলাম নিষ্ক্রিয়। তারা নিরাপদ স্থানে দূরে দাঁড়িয়ে ছিল। এটার পেছনে পুলিশের ইন্ধন আছে বলে আমরা মনে করি।’

পুলিশ প্রিজনভ্যান ফেলে সেখান থেকে চলে গেছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, পুলিশ প্রিজনভ্যান ফেলে সেখান থেকে চলে গেছে। আমি পত্রিকায় দেখেছি এই চিন্ময় দাস প্রিজনভ্যান থেকে হ্যান্ডমাইক দিয়ে বক্তব্য দিয়েছে আন্দোলনকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য। আমি অনুরোধ করবো যতগুলো মামলা হবে এই চিন্ময় দাশকে যেন ১নম্বর আসামি করা হয়। যদি তাকে আসামি না করা হয় আমরা মানবো না। বর্তমান সরকারকে ব্যর্থ করার জন্য দেশে ষড়যন্ত্র হচ্ছে। আন্দোলনের নামে দেশের বিভিন্ন জায়গায় বিশৃঙ্খলা হচ্ছে। পুলিশ নীরব ভূমিকা পালন করছে। পুলিশ কমিশনারকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, ‘চিন্ময় দাশের হাতে হ্যান্ডমাইক কীভাবে গেল? এর জবাব দিতে হবে। নাহলে পুলিশ কমিশনার চট্টগ্রামে থাকতে পারবেন না। জুলাই ৩৬-এ অনেক রক্ত গিয়েছে। অনেকে শহীদ হয়েছে। তাদের রক্তের সঙ্গে বেঈমানি করা যাবে না। পুলিশ প্রশাসন এখনো বসে আছে। আপনাদের হুঁশিয়ার করছি, আপনারা স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করুন। অন্যথায় টেনে-হিঁচড়ে নামানো হবে।

কোন ধারায় চিন্ময়কে ডিভিশন দেয়া হয়েছে জানতে চেয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা জানতে পেরেছি চিন্ময় দাশকে ডিভিশন দেয়া হয়েছে। জেল কোডের নিয়ম এবং আইনের কোন ধারা অনুযায়ী আপনি রাষ্ট্রদ্রোহী মামলার আসামিকে ডিভিশন দিয়েছেন? জেল সুপার এবং সিনিয়র জেল সুপারকে অনুরোধ করবো আপনি ডিভিশন প্রত্যাহার করবেন। তাকে সাধারণ কয়েদির সঙ্গে রাখবেন। সে এমন কোনো ইম্পর্টেন্ট ব্যক্তি নয়। বিগত সরকারে আমাদের অনেক রাজনৈতিক নেতাকে ডিভিশন না দিয়ে অসম্মান করা হয়েছে।’
এদিকে, আলিফ হত্যার প্রতিবাদে জেলা আইনজীবী সমিতির পূর্বঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী দ্বিতীয় দিনের মতো বৃহস্পতিবারও বন্ধ রয়েছে আদালতের কার্যক্রম। ঘোষণা অনুযায়ী, সকালে জেলা আইনজীবী সমিতির পতাকা অর্ধনমিত রাখা হয়। এর আগে, বুধবার চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিন চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক আশরাফ হোসেন চৌধুরী রাজ্জাক স্বাক্ষরিত এক বিশেষ বিজ্ঞপ্তিতে আলিফ হত্যার প্রতিবাদে ৬টি সিদ্ধান্তের কথা জানানো হয়।

mzamin

No comments

Powered by Blogger.