সাইফুল হত্যা: আরও আট জন গ্রেপ্তার

আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফ হত্যাকাণ্ডে পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি এডভোকেট নাজিম উদ্দিন চৌধুরী। এসবের জন্য পুলিশ কমিশনারের পদত্যাগ দাবি করেছেন, নইলে টেনে-হিঁচড়ে নামানোরও হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তিনি। চিন্ময় কৃষ্ণ দাশ ব্রহ্মচারীর প্রিজনভ্যানে বক্তব্য দেয়াকে কেন্দ্র করে তিনি এ কথা বলেন। গতকাল সকালে আদালত প্রাঙ্গণে আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফ হত্যার বিচার চেয়ে অনুষ্ঠিত মানববন্ধনে এসব প্রশ্ন রাখেন চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির শীর্ষ এ নেতা। আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় চট্টগ্রামের ‘ল’ অ্যালামনাই এসোসিয়েশনের আয়োজনে এতে জেলা আইনজীবী সমিতি, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়, সাউদার্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও অন্যান্য বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘ল’ অ্যালামনাই এসোসিয়েশনের বর্তমান ও প্রাক্তন শিক্ষার্থী, নিপীড়নবিরোধী আইনজীবী সমাজসহ বিভিন্ন সংগঠনের সদস্যরা যোগ দেন।

আইনজীবী সমিতির সভাপতি এডভোকেট নাজিম উদ্দিন চৌধুরী বলেন, ‘আজ অত্যন্ত শোকাহত এবং ভারাক্রান্ত আমরা। আমরা একটি কঠিন সময়ের মধ্যে আছি। আমাদের চট্টগ্রামের আদালত অঙ্গন ও আশপাশে এ ধরনের ঘটনা আগে হয়নি। গত পরশু ইসকনের এক সন্ত্রাসী নেতাকে গ্রেপ্তার করে তাকে আদালতে তোলার পর বিজ্ঞ আদালত কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দিলেন এবং প্রিজনভ্যানে তোলা হলো। আমরা পরবর্তীতে দেখলাম তাদের সন্ত্রাসী কার্যক্রম। ওই প্রিজনভ্যানে তোলার পর ইসকন সমর্থিত সন্ত্রাসীরা ভ্যান ঘেরাও করে আদালত অঙ্গনে উল্লাস করেছে। আমরা পুলিশকে দেখেছিলাম নিষ্ক্রিয়। তারা নিরাপদ স্থানে দূরে দাঁড়িয়ে ছিল। এটার পেছনে পুলিশের ইন্ধন আছে বলে আমরা মনে করি। পুলিশ প্রিজনভ্যান ফেলে সেখান থেকে চলে গেছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, পুলিশ প্রিজনভ্যান ফেলে সেখান থেকে চলে গেছে। আমি পত্রিকায় দেখেছি এই চিন্ময় দাশ প্রিজন ভ্যান থেকে হ্যান্ডমাইক দিয়ে বক্তব্য দিয়েছে আন্দোলনকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য। আমি অনুরোধ করবো যতগুলো মামলা হবে এই চিন্ময় দাশকে যেন এক নম্বর আসামি করা হয়। যদি তাকে আসামি না করা হয় আমরা মানবো না। বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে ব্যর্থ করার জন্য দেশে ষড়যন্ত্র হচ্ছে। আন্দোলনের নামে দেশের বিভিন্ন জায়গায় বিশৃঙ্খলা হচ্ছে। পুলিশ নীরব ভূমিকা পালন করছে। পুলিশের মধ্যে ফ্যাসিস্ট সরকারের প্রেতাত্মারা এখনো রয়েছে। আলিফকে যেদিন হত্যা করা হচ্ছে এই জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সামনে পর্যাপ্ত পুলিশ, আর্মি, বিজিবি ছিল। তাদের কেন ডাকা হয়নি?
পুলিশ কমিশনারকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, ‘চিন্ময় দাশের হাতে হ্যান্ডমাইক কীভাবে গেল? এর জবাব দিতে হবে। নাহলে পুলিশ কমিশনার চট্টগ্রাম থাকতে পারবেন না। আমরা পুলিশ কমিশনারকে চাই না। জুলাই ৩৬-এ অনেক রক্ত গিয়েছে। অনেকে শহীদ হয়েছে। তাদের রক্তের সঙ্গে বেঈমানি করা যাবে না। আমরা সব জানি, চিনি। পুলিশ প্রশাসন এখনো বসে আছে। আপনাদের হুঁশিয়ার করছি, আপনারা স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করুন। আমরা গিয়ে টেনে-হিঁচড়ে নামিয়ে ফেলবো না হয়।’

কোন ধারায় চিন্ময়কে ডিভিশন দেয়া হয়েছে জানতে চেয়ে আইনজীবী নেতা নাজিম উদ্দীন বলেন, ‘আমরা জানতে পেরেছি চিন্ময় দাশকে ডিভিশন দেয়া হয়েছে। জেল কোডের নিয়ম এবং আইনের কোন ধারা অনুযায়ী আপনি রাষ্ট্রদ্রোহী মামলার আসামিকে ডিভিশন দিয়েছেন? জেল সুপার এবং সিনিয়র জেল সুপারকে অনুরোধ করবো আপনি ডিভিশন প্রত্যাহার করবেন। তাকে সাধারণ কয়েদির সঙ্গে রাখবেন। সে এমন কোনো ইম্পর্টেন্ট ব্যক্তি নয়। বিগত সরকার আমাদের অনেক রাজনৈতিক নেতাকে ডিভিশন না দিয়ে অসম্মান করেছে।’

এদিকে, আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফ হত্যার প্রতিবাদে জেলা আইনজীবী সমিতির পূর্বঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী দ্বিতীয় দিনের মতো বৃহস্পতিবারও বন্ধ রয়েছে আদালতের কার্যক্রম। ঘোষণা অনুযায়ী, সকালে জেলা আইনজীবী সমিতির পতাকা অর্ধনমিত রাখা হয়।

এর আগে, বুধবার চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিন চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক আশরাফ হোসেন চৌধুরী রাজ্জাক স্বাক্ষরিত এক বিশেষ বিজ্ঞপ্তিতে সাইফুল ইসলাম আলিফ হত্যার প্রতিবাদে ৬টি সিদ্ধান্তের কথা জানানো হয়। সিদ্ধান্তসমূহ হলো- সমিতির পতাকা অর্ধনমিত রাখা ও কালোব্যাজ ধারণ, বৃহস্পতিবরি চট্টগ্রামের সকল আদালতের কার্যক্রমে কর্মবিরতি, আইনজীবী আলিফের আত্মার মাগফিরাত কামনায় বৃহস্পতিবার বাদ জোহর কোর্ট হিল জামে মসজিদে দোয়া মাহফিলের আয়োজন এবং একইদিনের অবকাশকালীন প্রীতি সমাবেশ বাতিল। এ ছাড়া ১ ডিসেম্বর দুপুর ২টায় আইনজীবী দোয়েল ভবনের সম্মুখ থেকে শোক মিছিল অনুষ্ঠিত হবে এবং সমিতির বার্ষিক ইনডোর গেইমস স্থগিত থাকবে।
এদিকে আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফ হত্যার ঘটনায় আরও ৮ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। হত্যার দায়ে এখন পর্যন্ত ১৫ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

তারা হলেন, রাজিব ভট্টাচার্য্য, রুমিত দাশ, সুমিত দাশ, গগন দাশ, নয়ন দাশ, বিশাল দাশ, আমান দাশ, মনু, রাজীব প্রকাশ ডান্ডি সুমন, ববি চৌধুরী, কৌশিক চৌধুরী, আবির দে, রবিন দাশ, জুয়েল দাশ ও এডভোকেট আবদুল কাইয়ুম। একইসঙ্গে পুলিশের ওপর হামলার ঘটনায় দায়েরকৃত ৩টি মামলায় আটক করা হয়েছে ২৭ জনকে। তবে সাইফুলকে হত্যার ঘটনায় এ পর্যন্ত কোনো মামলা করা হয়নি।

mzamin

No comments

Powered by Blogger.