হলে হলে টর্চার সেল by মরিয়ম চম্পা
হলে
হলে টর্চার সেল। কোথায় নেই? বুয়েট, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ইডেন মহিলা কলেজ,
ঢাকা কলেজের হোস্টেলগুলোতে রয়েছে টর্চার সেল। সব হলে শাস্তি পদ্ধতি প্রায়
একই ধরনের। টার্গেটে থাকা শিক্ষার্থীকে টর্চার করার আগে দেয়া হয় বিরোধী
কোনো সংগঠনের তকমা। এরপর বড় ভাইয়ের কক্ষে কিংবা তার পরের পদ পদবিধারি
ভাইয়ের কক্ষকেই মূলত টর্চার সেল হিসেবে ব্যবহার করা হয়। মাঝে মাঝে হলের
ছাদকে নিরাপদ টর্চার সেল বানানো হয়। বুয়েটের মেধাবী শিক্ষার্থী আবরার হোসেন
ফাহাদের হত্যাকাণ্ডের পর বুয়েটের সবগুলো হলে মানবজমিনের অনুসন্ধানে বেরিয়ে
আসে ভিন্ন চিত্র। হলে থাকা শিক্ষার্থীরা জানান, প্রায় সবগুলো হলেই রয়েছে
ক্ষমতাসীন দলের ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগের টর্চার সেল।
শেরে বাংলা হলেই তিনটি টর্চার সেল বা রুমের খোঁজ মিলেছে।
এসকল সেলে বসে ছাত্রদের মারের টু শব্দটিও জানতে পায় না পাশের রুমের শিক্ষার্থীরা। হলে থাকা ভুক্তভোগী একাধিক শিক্ষার্থী বলেন, মারার সময় তাদের মুখ গামছা দিয়ে বেধে নেয়া হয়। আবরারের বেলাতে তাই ঘটেছিল। আবরারকে যে ভবনে পিটিয়ে হত্যা করা হয় ওই ভবনের শিক্ষার্থীরা জানায় তাকেও মুখে গামছা বেধে নেয়া হয়েছিল বলে তারা মনে করছেন। শেরে বাংলা হলে টর্চারের শিকার ভুক্তভোগী এক শিক্ষার্থী বলেন, আমাদের হলে ২০০৫, ২০১১, ৩০০৮ নং তিনটি রুমই মূলত টর্চার সেল হিসেবে একেক সময় ব্যবহার করা হয়। জিএস রাসেলসহ আরো কয়েকজন মিলে এই টর্চারের লিড দিতেন। দেড় বছর আগে আমাকে শিবির বলে মারা হয়েছিল। ওরা কাউকে টার্গেট করলে প্রথমেই তার ফোন, ল্যাপটপ অনুসন্ধান করে দেখে সে ভিন্ন কোনো দলের সমর্থক কি না। ফেসবুকে কি ধরনের পোস্ট দেয়। কোন পেইজে লাইক দেয়। কোনো শিক্ষার্থী ফেসবুকে পোস্ট দেয়ার পর যদি তাদের মনে হয় এটা তাদের পছন্দ হয়নি। তখনই তাকে রুমে ডেকে মারধর করে। ২০১১ নং কক্ষের তিনজন এখনো পলাতক। যারা আবরারকে মারের সময় ছিল। বুয়েটের জিমনেশিয়ামে নিয়েও মারা হয়। মারের ঘটনাগুলো মূলত শুরু হতো রাত ১২ টার পর। সম্প্রতি দুই শিক্ষার্থীর কান ফাটানোকে কেন্দ্র করে আমরা বিচার চাইলেও ভিসি গুরুত্ব দেননি। আবরারকে যে কক্ষে নির্যাতন করা হয় তার পাশের রুমে থাকা মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থী বলেন, আমি প্রায়ই বাসায় যাই। আবার হলেও থাকি। ঘটনার দিন রাতে আমি রুমে পড়ছিলাম। যখন বুয়েটের ডাক্তার আসে তখন আবরারের বিষয়টি জানতে পারি। এ ধরনের মারধরের ঘটনা নতুন নয়। এই কক্ষে প্রায়ই এই ধরনের ঘটনা ঘটে। চলতি সপ্তাহে একই কক্ষে আরো দুজনকে মার ধরের ঘটনা ঘটেছে। এই ঘটনার প্রতিবাদ সম্পর্কে তিনি বলেন, আমি চোখের সামনে দেখছি একজনকে স্ট্যাম্প দিয়ে পিটানো হচ্ছে, তখন যদি থামাতে যাই আমার অবস্থা কি হবে একবার ভেবে দেখেন। আমি গেলে আমাকেও তারা শিবির বানিয়ে দিবে।
আবরার যে ফ্লোরে থাকতেন সেখানকার দুই শিক্ষার্থী বলেন, ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে আমরা দুজনেই ওদের টর্চারের শিকার হয়েছি। ওরা শিক্ষার্থীদের মারধরের জন্য ছুটির সময়টা বেছে নেয়। বুধবার, বৃহস্পতিবার এবং শুক্রবার রাতগুলোকে ওরা মারের জন্য উপযুক্ত সময় হিসেবে বেছে নেয়। বিশেষ করে বুধবার রাত হচ্ছে প্রথম বর্ষের জুনিয়র শিক্ষার্থীদের কাছে ভয়ংকর রাত। গত এক বছর আগে র্যাগিং এর কারণে এক শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করে। যখন যেখানে সুবিধা সেখানে নিয়ে তারা র্যাগ দেয়।
সোহরাওয়ার্দী হলের সিএসসির শিক্ষার্থী বলেন, র্যাগিংয়ের ঘটনা প্রত্যেকটি হলেই আছে। কোনোটা প্রকাশ পায় কোনোটা পায় না। একমাস আগে আমাদের হলে একজন শিক্ষার্থীর কানের পর্দা ফাটিয়ে দেয়া হয়েছে। এটা নিয়ে অনেক লেখালেখি হয়েছে। আমাদের হলে নির্দিষ্ট কোনো রুম মেনটেন করা হয় না। এটা নির্ভর করে তাদের ইচ্ছার ওপর। তারা দেখে কোন রুম ফাঁকা আছে সেখানে নিয়েই ছেলেদের পিটানো হয়।
ড. এম. এ. রশীদ হলের একজন শিক্ষার্থী বলেন, মারামারির ঘটনা এখানে প্রতিমাসেই কম বেশি হয়। তবে মারা যাওয়ার ঘটনা ঘটেনি। আবরার মারা যাওয়াতে তার ঘটনা প্রকাশ পেয়েছে। বাকিদেরটা পায় না। পাঁচ মাস আগে আমাদের হলে ডাইনিং ম্যানেজার শিক্ষার্থীকে এক জুনিয়রকে দিয়ে পিটানো হয়েছে। আমাদের হলেও টর্চারের জন্য রুম আছে। যেটা সব হলেই থাকে। ভবনের দুপাশের চার তলায় টর্চার রুম আছে। অর্থাৎ ক্ষমতাসীনদের রুমগুলোই মূলত টর্চার সেল হিসেবে ব্যবহার করা হয়। আমাদের হলে প্রায় পাঁচ শ’র মতো শিক্ষার্থী আছে। ব্যক্তিগত নিরাপত্তার কারণে এই ধরনের ঘটনার কেউ প্রতিবাদ করতে সাহস পায় না। আমাদের ১৫ তম ব্যাচের এক শিক্ষার্থীকে সাত থেকে আট মাস আগে একটি রুমে নিয়ে হাত পা ভেঙ্গে দেয়া হয়েছে।
একই হলের ১৭তম ব্যাচের শিক্ষার্থী বলেন, এটা নতুন কোনো ঘটনা নয়। কয়েকদিন আগে আহসানউল্লাহ হলে, সোহরাওয়ার্দী হলে টর্চারের ঘটনা ঘটেছে। একজনকে মেরে কানের পর্দা ফাটিয়ে দেয়া হয়েছে। কিছুদিন আগে একজন শিক্ষার্থীর হাত পা ভেঙ্গে দিয়েছে। এর আগে এমন অনেক ঘটনা ধামাচাপা দেয়া হয়েছে।
বুয়েটে হলের সংখ্যা মোট ৮টি। আহসান উল্লাহ হল, তিতুমীর হল, কাজী নজরুল ইসলাম হল, ছাত্রী হল, শের-এ-বাংলা হল, সোহরাওয়াার্দী হল, ড. এম. এ. রশীদ হল, শহীদ স্মৃতি হল। মোট শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় সারে পাঁচ হাজার। এসব হলের মধ্যে অতিরিক্ত মাত্রায় র্যাগিং হচ্ছে শেরে বাংলা হলে। এ হলের একজন শিক্ষার্থী বলেন, হলের কোনো শিক্ষার্থী যদি বিরুদ্ধ মত দেয় কিংবা কাউকে যদি অপছন্দ হয় তাকেই শিবির বলে রুমে আলাদাভাবে ডেকে নেয়া হয়। আমি নিজ চোখে আমার রুমের বারান্দায় দাঁড়িয়ে চার থেকে পাঁচবার দশ বারোজন ছেলেকে অন্তত পিটাতে দেখেছি। একজন দৌঁড়াচ্ছে আর বাকীরা হল থেকে পিটিয়ে নামাচ্ছে। পিটিয়ে আধমরা করে পুলিশে খবর দিয়ে তুলে দিয়েছে। এক সপ্তাহ আগে জুনিয়র একজন শিক্ষার্থীকে দিয়ে সিনিয়র শিক্ষার্থীকে পিটিয়েছে। পরবর্তীতে তাকে হল থেকে বের করে দিয়েছে। র্যাগিং সবগুলো হলে রেগুলার একটি ঘটনা। তিতুমীর হলের একজন শিক্ষার্থী বলেন, অন্যান্য হলের মতো আমাদের হলে খুব বেশি টর্চারের ঘটনা না ঘটলেও একেবারেই যে ঘটেনা সেটা বলা যাবে না। তবে শেরে বাংলায় যেটা হয়েছে সেটা একেবারেই ব্যক্তিগত আক্রোস থেকে হয়েছে। আমাদের হলে মারা যাওয়ার মতো ঘটনা ঘটেনি। কিছু কিছু সময় পলিটিক্যাল ভাইয়েরা ডেকে ছাদে নিয়ে যায়। নিজেদের রুমে নিয়ে যায়। এরপর স্ট্যাম্প দিয়ে পেটানো, চড় থাপ্পর মারা হয়। হলে সিসি ক্যামেরা থাকায় ভয়ে অনেক সময় ছাদে নিয়ে যায়। মেয়েদের হলের একজন শিক্ষার্থী বলেন, মেয়েদের হলে এ ধরনের কোনো ঘটনা ঘটে না। আমাদের হলে সিকিউরিটি নিয়ে কিছু সমস্যা থাকলেও র্যাগিয়ের বিষয়টি একদমই নেই। আমাদের হলে প্রায় সাড়ে ৪শ থেকে ৫শ মেয়ে রয়েছে। কখনো র্যাগিং-এর শিকার হইনি। এ ধরনের কোনো ঘটনা শুনিনি। মেয়েদের হলের আরেক শিক্ষার্থী বলেন, মেয়েদের হলে ওভাবে রাজনীতির বিষয়টি নেই। কাজেই এটা হওয়ারও সুযোগ নেই। তবে ছেলেদের হলের অবস্থা এতোটা ভয়াবহ হয়েছে এটা আবরারের মৃত্যুর আগ পর্যন্ত আমাদেরও জানা ছিল না। নজরুল ইসলাম হলের একজন শিক্ষার্থী বলেন, আমাদের হলে জুনিয়ররা ভর্তির পরে পরিচয় পর্বের নামে টর্চার বা বিভিন্নভাবে হয়রানি করা হয়। আবরার যদি মারা না যেত তাহলে এখন হয়তো হাত পা ভেঙ্গে হাসপাতালে শুয়ে থাকতো। আমরা কেউ জানতে পারতাম না। এমনকি মিডিয়াও না। প্রায়ই এই টর্চারের ঘটনা ঘটে কিন্তু বুয়েট প্রশাসন কোনো ব্যবস্থা নেয় না।
শেরে বাংলা হলেই তিনটি টর্চার সেল বা রুমের খোঁজ মিলেছে।
এসকল সেলে বসে ছাত্রদের মারের টু শব্দটিও জানতে পায় না পাশের রুমের শিক্ষার্থীরা। হলে থাকা ভুক্তভোগী একাধিক শিক্ষার্থী বলেন, মারার সময় তাদের মুখ গামছা দিয়ে বেধে নেয়া হয়। আবরারের বেলাতে তাই ঘটেছিল। আবরারকে যে ভবনে পিটিয়ে হত্যা করা হয় ওই ভবনের শিক্ষার্থীরা জানায় তাকেও মুখে গামছা বেধে নেয়া হয়েছিল বলে তারা মনে করছেন। শেরে বাংলা হলে টর্চারের শিকার ভুক্তভোগী এক শিক্ষার্থী বলেন, আমাদের হলে ২০০৫, ২০১১, ৩০০৮ নং তিনটি রুমই মূলত টর্চার সেল হিসেবে একেক সময় ব্যবহার করা হয়। জিএস রাসেলসহ আরো কয়েকজন মিলে এই টর্চারের লিড দিতেন। দেড় বছর আগে আমাকে শিবির বলে মারা হয়েছিল। ওরা কাউকে টার্গেট করলে প্রথমেই তার ফোন, ল্যাপটপ অনুসন্ধান করে দেখে সে ভিন্ন কোনো দলের সমর্থক কি না। ফেসবুকে কি ধরনের পোস্ট দেয়। কোন পেইজে লাইক দেয়। কোনো শিক্ষার্থী ফেসবুকে পোস্ট দেয়ার পর যদি তাদের মনে হয় এটা তাদের পছন্দ হয়নি। তখনই তাকে রুমে ডেকে মারধর করে। ২০১১ নং কক্ষের তিনজন এখনো পলাতক। যারা আবরারকে মারের সময় ছিল। বুয়েটের জিমনেশিয়ামে নিয়েও মারা হয়। মারের ঘটনাগুলো মূলত শুরু হতো রাত ১২ টার পর। সম্প্রতি দুই শিক্ষার্থীর কান ফাটানোকে কেন্দ্র করে আমরা বিচার চাইলেও ভিসি গুরুত্ব দেননি। আবরারকে যে কক্ষে নির্যাতন করা হয় তার পাশের রুমে থাকা মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থী বলেন, আমি প্রায়ই বাসায় যাই। আবার হলেও থাকি। ঘটনার দিন রাতে আমি রুমে পড়ছিলাম। যখন বুয়েটের ডাক্তার আসে তখন আবরারের বিষয়টি জানতে পারি। এ ধরনের মারধরের ঘটনা নতুন নয়। এই কক্ষে প্রায়ই এই ধরনের ঘটনা ঘটে। চলতি সপ্তাহে একই কক্ষে আরো দুজনকে মার ধরের ঘটনা ঘটেছে। এই ঘটনার প্রতিবাদ সম্পর্কে তিনি বলেন, আমি চোখের সামনে দেখছি একজনকে স্ট্যাম্প দিয়ে পিটানো হচ্ছে, তখন যদি থামাতে যাই আমার অবস্থা কি হবে একবার ভেবে দেখেন। আমি গেলে আমাকেও তারা শিবির বানিয়ে দিবে।
আবরার যে ফ্লোরে থাকতেন সেখানকার দুই শিক্ষার্থী বলেন, ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে আমরা দুজনেই ওদের টর্চারের শিকার হয়েছি। ওরা শিক্ষার্থীদের মারধরের জন্য ছুটির সময়টা বেছে নেয়। বুধবার, বৃহস্পতিবার এবং শুক্রবার রাতগুলোকে ওরা মারের জন্য উপযুক্ত সময় হিসেবে বেছে নেয়। বিশেষ করে বুধবার রাত হচ্ছে প্রথম বর্ষের জুনিয়র শিক্ষার্থীদের কাছে ভয়ংকর রাত। গত এক বছর আগে র্যাগিং এর কারণে এক শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করে। যখন যেখানে সুবিধা সেখানে নিয়ে তারা র্যাগ দেয়।
সোহরাওয়ার্দী হলের সিএসসির শিক্ষার্থী বলেন, র্যাগিংয়ের ঘটনা প্রত্যেকটি হলেই আছে। কোনোটা প্রকাশ পায় কোনোটা পায় না। একমাস আগে আমাদের হলে একজন শিক্ষার্থীর কানের পর্দা ফাটিয়ে দেয়া হয়েছে। এটা নিয়ে অনেক লেখালেখি হয়েছে। আমাদের হলে নির্দিষ্ট কোনো রুম মেনটেন করা হয় না। এটা নির্ভর করে তাদের ইচ্ছার ওপর। তারা দেখে কোন রুম ফাঁকা আছে সেখানে নিয়েই ছেলেদের পিটানো হয়।
ড. এম. এ. রশীদ হলের একজন শিক্ষার্থী বলেন, মারামারির ঘটনা এখানে প্রতিমাসেই কম বেশি হয়। তবে মারা যাওয়ার ঘটনা ঘটেনি। আবরার মারা যাওয়াতে তার ঘটনা প্রকাশ পেয়েছে। বাকিদেরটা পায় না। পাঁচ মাস আগে আমাদের হলে ডাইনিং ম্যানেজার শিক্ষার্থীকে এক জুনিয়রকে দিয়ে পিটানো হয়েছে। আমাদের হলেও টর্চারের জন্য রুম আছে। যেটা সব হলেই থাকে। ভবনের দুপাশের চার তলায় টর্চার রুম আছে। অর্থাৎ ক্ষমতাসীনদের রুমগুলোই মূলত টর্চার সেল হিসেবে ব্যবহার করা হয়। আমাদের হলে প্রায় পাঁচ শ’র মতো শিক্ষার্থী আছে। ব্যক্তিগত নিরাপত্তার কারণে এই ধরনের ঘটনার কেউ প্রতিবাদ করতে সাহস পায় না। আমাদের ১৫ তম ব্যাচের এক শিক্ষার্থীকে সাত থেকে আট মাস আগে একটি রুমে নিয়ে হাত পা ভেঙ্গে দেয়া হয়েছে।
একই হলের ১৭তম ব্যাচের শিক্ষার্থী বলেন, এটা নতুন কোনো ঘটনা নয়। কয়েকদিন আগে আহসানউল্লাহ হলে, সোহরাওয়ার্দী হলে টর্চারের ঘটনা ঘটেছে। একজনকে মেরে কানের পর্দা ফাটিয়ে দেয়া হয়েছে। কিছুদিন আগে একজন শিক্ষার্থীর হাত পা ভেঙ্গে দিয়েছে। এর আগে এমন অনেক ঘটনা ধামাচাপা দেয়া হয়েছে।
বুয়েটে হলের সংখ্যা মোট ৮টি। আহসান উল্লাহ হল, তিতুমীর হল, কাজী নজরুল ইসলাম হল, ছাত্রী হল, শের-এ-বাংলা হল, সোহরাওয়াার্দী হল, ড. এম. এ. রশীদ হল, শহীদ স্মৃতি হল। মোট শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় সারে পাঁচ হাজার। এসব হলের মধ্যে অতিরিক্ত মাত্রায় র্যাগিং হচ্ছে শেরে বাংলা হলে। এ হলের একজন শিক্ষার্থী বলেন, হলের কোনো শিক্ষার্থী যদি বিরুদ্ধ মত দেয় কিংবা কাউকে যদি অপছন্দ হয় তাকেই শিবির বলে রুমে আলাদাভাবে ডেকে নেয়া হয়। আমি নিজ চোখে আমার রুমের বারান্দায় দাঁড়িয়ে চার থেকে পাঁচবার দশ বারোজন ছেলেকে অন্তত পিটাতে দেখেছি। একজন দৌঁড়াচ্ছে আর বাকীরা হল থেকে পিটিয়ে নামাচ্ছে। পিটিয়ে আধমরা করে পুলিশে খবর দিয়ে তুলে দিয়েছে। এক সপ্তাহ আগে জুনিয়র একজন শিক্ষার্থীকে দিয়ে সিনিয়র শিক্ষার্থীকে পিটিয়েছে। পরবর্তীতে তাকে হল থেকে বের করে দিয়েছে। র্যাগিং সবগুলো হলে রেগুলার একটি ঘটনা। তিতুমীর হলের একজন শিক্ষার্থী বলেন, অন্যান্য হলের মতো আমাদের হলে খুব বেশি টর্চারের ঘটনা না ঘটলেও একেবারেই যে ঘটেনা সেটা বলা যাবে না। তবে শেরে বাংলায় যেটা হয়েছে সেটা একেবারেই ব্যক্তিগত আক্রোস থেকে হয়েছে। আমাদের হলে মারা যাওয়ার মতো ঘটনা ঘটেনি। কিছু কিছু সময় পলিটিক্যাল ভাইয়েরা ডেকে ছাদে নিয়ে যায়। নিজেদের রুমে নিয়ে যায়। এরপর স্ট্যাম্প দিয়ে পেটানো, চড় থাপ্পর মারা হয়। হলে সিসি ক্যামেরা থাকায় ভয়ে অনেক সময় ছাদে নিয়ে যায়। মেয়েদের হলের একজন শিক্ষার্থী বলেন, মেয়েদের হলে এ ধরনের কোনো ঘটনা ঘটে না। আমাদের হলে সিকিউরিটি নিয়ে কিছু সমস্যা থাকলেও র্যাগিয়ের বিষয়টি একদমই নেই। আমাদের হলে প্রায় সাড়ে ৪শ থেকে ৫শ মেয়ে রয়েছে। কখনো র্যাগিং-এর শিকার হইনি। এ ধরনের কোনো ঘটনা শুনিনি। মেয়েদের হলের আরেক শিক্ষার্থী বলেন, মেয়েদের হলে ওভাবে রাজনীতির বিষয়টি নেই। কাজেই এটা হওয়ারও সুযোগ নেই। তবে ছেলেদের হলের অবস্থা এতোটা ভয়াবহ হয়েছে এটা আবরারের মৃত্যুর আগ পর্যন্ত আমাদেরও জানা ছিল না। নজরুল ইসলাম হলের একজন শিক্ষার্থী বলেন, আমাদের হলে জুনিয়ররা ভর্তির পরে পরিচয় পর্বের নামে টর্চার বা বিভিন্নভাবে হয়রানি করা হয়। আবরার যদি মারা না যেত তাহলে এখন হয়তো হাত পা ভেঙ্গে হাসপাতালে শুয়ে থাকতো। আমরা কেউ জানতে পারতাম না। এমনকি মিডিয়াও না। প্রায়ই এই টর্চারের ঘটনা ঘটে কিন্তু বুয়েট প্রশাসন কোনো ব্যবস্থা নেয় না।
No comments