বাংলাদেশের প্রশংসা, মোদির সমালোচনায় অমর্ত্য সেন
ভারতে
গণতন্ত্রের অবস্থা নিয়ে নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেন বেশ কিছুদিন
ধরেই উদ্বেগ প্রকাশ করে চলেছেন। সম্প্রতি আমেরিকান সাময়িকী দ্য নিউ
ইয়র্কারকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে ভারতে গণতন্ত্রের অবস্থা নিয়ে ফের উদ্বেগ
প্রকাশ করে তিনি বলেছেন, মানুষ ভয়ে আছেন। এটা আগে কখনো দেখিনি। আমার সঙ্গে
ফোনেও সরকারের সমালোচনার প্রসঙ্গ উঠলে অনেকে বলছেন, ‘থাক, দেখা হলে
বলব’খন।’ আমি নিশ্চিত ওরা আমাদের কথা শুনছে। এটা গণতন্ত্রের পন্থা নয়।
সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ কী চান, সেটা বোঝারও পথ নয় এটা। তবে ভারতের চেয়ে অনেক
দিক দিয়ে বাংলাদেশ সফল বলে মন্তব্য করেছেন তিনি। অমর্ত্য সেন বলেন,
বাংলাদেশের এসব উন্নতির ক্ষেত্রে বহুজাতিকতা বা জাতিগত সহাবস্থান বিশাল
ভূমিকা রেখেছে।
অতীতে এই একই কারণে ভারতও বিপুল সাফল্যের মুখ দেখেছিল।
ওই সাক্ষাৎকারে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সমালোচনা করে অমর্ত্য সেন বলেছেন, বহু ধর্ম ও বহু জাতির দেশ ভারতকে বোঝার মতো মনের প্রসারতাই নেই মোদির। জন স্টুয়ার্ট মিলের বক্তব্যের উল্লেখ করে তিনি বলেছেন, আমরা তার কাছ থেকে জেনেছি, গণতন্ত্র মানে আলোচনার ভিত্তিতে চলা সরকার। ভোট যেভাবেই গোনো, আলোচনাকে ভয়ের বস্তু করে তুললে তুমি গণতন্ত্র পাবে না। তার আক্ষেপ, ভারতে এখন কট্টর হিন্দুত্বের ডাক্তারি পরীক্ষার জন্য হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। অভিযুক্তদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। দাপট চলছে। গণতন্ত্রের চতুর্থ স্তম্ভ সম্পর্কে তিনি বলেছেন, সরকার যদি বিরুদ্ধে থাকে, তবে সরকারি শুধু নয়, সম্ভবত অনেক বেসরকারি বিজ্ঞাপনও পায় না সংবাদমাধ্যম। ফলে স্বাধীন সংবাদপত্র বা সংবাদ চ্যানেল পাওয়াই দুষ্কর। তবে তিনি মনে করেন, সব কিছুই হারিয়ে যায়নি। এখনো সাহসী কয়েকটি সংবাদপত্র আছে, যারা ঝুঁকি নিয়ে কিছু ছাপতে ভয় পায় না। দু’-একটা টিভি চ্যানেল ও রেডিও স্টেশনও আছে। প্রকাশ্য সভাও হচ্ছে কিছু। ভারতের কাঠামো যুক্তরাষ্ট্রীয়। বেশক’টি রাজ্যে বিজেপিই একমাত্র প্রভাবশালী শক্তি নয়। দুঃসময়ের প্রসঙ্গে ছোটবেলার স্মৃতি উল্লেখ করে তিনি জানিয়েছেন, ছেলেবেলাতেও খুব খারাপ সময় দেখেছি। দেখেছি, কাকাদের সকলকে জেলে আটকে রাখা হয়েছে। ন’বছর বয়সে দেখেছি মন্বন্তর। তিন লাখ মানুষ এতে মারা যান। হিন্দু-মুসলিম দাঙ্গা দেখেছি। মুসলিম জনমজুরকে কুপিয়ে খুন করেছে আমারই পাড়ার কিছু হিন্দু। আমার বয়স তখন দশ কি এগারো। বাগানে খেলছিলাম। দেখি, রক্তাক্ত অবস্থায় ছুটে আসছেন একজন। চিৎকার করে বাবাকে ডাকলাম। জল খেতে দিলাম। এত রক্ত কখনো দেখিনি। আমার কোলে মাথা, স্পষ্ট বলেছিলেন- ‘বিবি বলেছিল হিন্দু এলাকায় কাজ করো না। কিন্তু বাচ্চারা না খেয়ে আছে। কিছু তো রোজগার করতেই হবে। বাবা ওকে হাসপাতালে নিয়ে গেলেন। পুলিশকেও জানিয়েছিলেন। কিন্তু হিন্দু এলাকার পুলিশ কিছু করতে রাজি হয়নি। আবার অনেক বড় বড় সমস্যা মিটে যেতেও দেখেছি। তবে তার অর্থ এই নয় যে, আমি নিশ্চিত। কোনো কিছু সম্পর্কেই আমি নিশ্চিত নই। এর অর্থ এটাও নয় যে, হতাশার পরিস্থিতিতে সব আশা ছেড়ে দিতে হবে।
এক পর্যায়ে তাকে তার কাজের মধ্যে বহুজাতিকতার উপস্থিতি নিয়ে প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, অবশ্যই। এটা (আমার কাজের) অত্যন্ত কেন্দ্রীয় একটি বিষয়। তিনি বলেন, আপনি চিন্তা করলে দেখবেন বাংলাদেশ এখন বহুদিক দিয়ে ভারতের চেয়ে সফল। পূর্বে বাংলাদেশের গড় আয়ু ভারতের চেয়ে কম ছিল, আর এখন তা ভারতের চেয়ে পাঁচ বছর বেশি। এ ছাড়া, ভারতের তুলনায় বাংলাদেশের সাক্ষরতার হারও বেশি। আর ভারতে যেরকম সংকীর্ণমনা হিন্দু চিন্তাধারার বিস্তার ঘটেছে, বাংলাদেশে তেমন সংকীর্ণমনা মুসলিম চিন্তাধারার প্রতিফলন দেখা যায় না। আমি মনে করি জাতিগত সহাবস্থান বাংলাদেশের জন্য অনেক সুফল বয়ে এনেছে।
অমর্ত্য সেন আরো বলেন, এই বহুজাতিকতাকে ভারতকেও সফলতা এনে দিচ্ছিল। তবে একসময় ইচ্ছাকৃতভাবে এই জাতিগত সহাবস্থানকে ধ্বংস করার চেষ্টা শুরু হয়। অতীতের ভারতে এটা বিদ্যমান ছিল। বিংশ শতাব্দীর বিশের দশকে ভারতে জোরদার হিন্দুপন্থি আন্দোলন হয়। রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘ (আরএসএস) মহাত্মা গান্ধীজীকে গুলি করে খুন করে। বর্তমানে ভারতের ক্ষমতাসীন দল বিজেপির ওপর তাদের প্রভাব সবচেয়ে বেশি। ক্ষমতায় আসার আগে তাদের নিয়ে বিচলিত হওয়ার কিছু ছিল না। তাদের একটা আঁচলার মতো মনে হয়েছিল। কিন্তু সে আঁচলা ধীরে ধীরে প্রভাবশালী হতে থাকে। আর গত নির্বাচনে এক নিরঙ্কুশ জয় ছিনিয়ে নেয়। আংশিকভাবে তাদের রাজনৈতিক কার্যকারিতার জন্যই এই জয় এসেছে।
অতীতে এই একই কারণে ভারতও বিপুল সাফল্যের মুখ দেখেছিল।
ওই সাক্ষাৎকারে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সমালোচনা করে অমর্ত্য সেন বলেছেন, বহু ধর্ম ও বহু জাতির দেশ ভারতকে বোঝার মতো মনের প্রসারতাই নেই মোদির। জন স্টুয়ার্ট মিলের বক্তব্যের উল্লেখ করে তিনি বলেছেন, আমরা তার কাছ থেকে জেনেছি, গণতন্ত্র মানে আলোচনার ভিত্তিতে চলা সরকার। ভোট যেভাবেই গোনো, আলোচনাকে ভয়ের বস্তু করে তুললে তুমি গণতন্ত্র পাবে না। তার আক্ষেপ, ভারতে এখন কট্টর হিন্দুত্বের ডাক্তারি পরীক্ষার জন্য হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। অভিযুক্তদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। দাপট চলছে। গণতন্ত্রের চতুর্থ স্তম্ভ সম্পর্কে তিনি বলেছেন, সরকার যদি বিরুদ্ধে থাকে, তবে সরকারি শুধু নয়, সম্ভবত অনেক বেসরকারি বিজ্ঞাপনও পায় না সংবাদমাধ্যম। ফলে স্বাধীন সংবাদপত্র বা সংবাদ চ্যানেল পাওয়াই দুষ্কর। তবে তিনি মনে করেন, সব কিছুই হারিয়ে যায়নি। এখনো সাহসী কয়েকটি সংবাদপত্র আছে, যারা ঝুঁকি নিয়ে কিছু ছাপতে ভয় পায় না। দু’-একটা টিভি চ্যানেল ও রেডিও স্টেশনও আছে। প্রকাশ্য সভাও হচ্ছে কিছু। ভারতের কাঠামো যুক্তরাষ্ট্রীয়। বেশক’টি রাজ্যে বিজেপিই একমাত্র প্রভাবশালী শক্তি নয়। দুঃসময়ের প্রসঙ্গে ছোটবেলার স্মৃতি উল্লেখ করে তিনি জানিয়েছেন, ছেলেবেলাতেও খুব খারাপ সময় দেখেছি। দেখেছি, কাকাদের সকলকে জেলে আটকে রাখা হয়েছে। ন’বছর বয়সে দেখেছি মন্বন্তর। তিন লাখ মানুষ এতে মারা যান। হিন্দু-মুসলিম দাঙ্গা দেখেছি। মুসলিম জনমজুরকে কুপিয়ে খুন করেছে আমারই পাড়ার কিছু হিন্দু। আমার বয়স তখন দশ কি এগারো। বাগানে খেলছিলাম। দেখি, রক্তাক্ত অবস্থায় ছুটে আসছেন একজন। চিৎকার করে বাবাকে ডাকলাম। জল খেতে দিলাম। এত রক্ত কখনো দেখিনি। আমার কোলে মাথা, স্পষ্ট বলেছিলেন- ‘বিবি বলেছিল হিন্দু এলাকায় কাজ করো না। কিন্তু বাচ্চারা না খেয়ে আছে। কিছু তো রোজগার করতেই হবে। বাবা ওকে হাসপাতালে নিয়ে গেলেন। পুলিশকেও জানিয়েছিলেন। কিন্তু হিন্দু এলাকার পুলিশ কিছু করতে রাজি হয়নি। আবার অনেক বড় বড় সমস্যা মিটে যেতেও দেখেছি। তবে তার অর্থ এই নয় যে, আমি নিশ্চিত। কোনো কিছু সম্পর্কেই আমি নিশ্চিত নই। এর অর্থ এটাও নয় যে, হতাশার পরিস্থিতিতে সব আশা ছেড়ে দিতে হবে।
এক পর্যায়ে তাকে তার কাজের মধ্যে বহুজাতিকতার উপস্থিতি নিয়ে প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, অবশ্যই। এটা (আমার কাজের) অত্যন্ত কেন্দ্রীয় একটি বিষয়। তিনি বলেন, আপনি চিন্তা করলে দেখবেন বাংলাদেশ এখন বহুদিক দিয়ে ভারতের চেয়ে সফল। পূর্বে বাংলাদেশের গড় আয়ু ভারতের চেয়ে কম ছিল, আর এখন তা ভারতের চেয়ে পাঁচ বছর বেশি। এ ছাড়া, ভারতের তুলনায় বাংলাদেশের সাক্ষরতার হারও বেশি। আর ভারতে যেরকম সংকীর্ণমনা হিন্দু চিন্তাধারার বিস্তার ঘটেছে, বাংলাদেশে তেমন সংকীর্ণমনা মুসলিম চিন্তাধারার প্রতিফলন দেখা যায় না। আমি মনে করি জাতিগত সহাবস্থান বাংলাদেশের জন্য অনেক সুফল বয়ে এনেছে।
অমর্ত্য সেন আরো বলেন, এই বহুজাতিকতাকে ভারতকেও সফলতা এনে দিচ্ছিল। তবে একসময় ইচ্ছাকৃতভাবে এই জাতিগত সহাবস্থানকে ধ্বংস করার চেষ্টা শুরু হয়। অতীতের ভারতে এটা বিদ্যমান ছিল। বিংশ শতাব্দীর বিশের দশকে ভারতে জোরদার হিন্দুপন্থি আন্দোলন হয়। রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘ (আরএসএস) মহাত্মা গান্ধীজীকে গুলি করে খুন করে। বর্তমানে ভারতের ক্ষমতাসীন দল বিজেপির ওপর তাদের প্রভাব সবচেয়ে বেশি। ক্ষমতায় আসার আগে তাদের নিয়ে বিচলিত হওয়ার কিছু ছিল না। তাদের একটা আঁচলার মতো মনে হয়েছিল। কিন্তু সে আঁচলা ধীরে ধীরে প্রভাবশালী হতে থাকে। আর গত নির্বাচনে এক নিরঙ্কুশ জয় ছিনিয়ে নেয়। আংশিকভাবে তাদের রাজনৈতিক কার্যকারিতার জন্যই এই জয় এসেছে।
No comments