বিচারহীনতার সংস্কৃতির কারণেই দলীয় নেতাকর্মীরা ফ্রাঙ্কেনস্টাইনে পরিণত হয়েছে: -স্থপতি মোবাশ্বের হোসেন by কাজল ঘোষ
বুয়েটের
ঘটনায় একজন ছাত্রকে হত্যা করা হয়নি আমার বুয়েটকে হত্যা করা হয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয় কতৃপক্ষ ও প্রশাসন সম্পূর্ণরুপে এ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে
ব্যর্থ হয়েছে। শুধু দল থেকে বহিষ্কারের নামে আইওয়াশ প্রদর্শনে কাজ হবে না।
বিচারহীনতার সংস্কৃতির কারণেই দলীয় নেতাকর্মীরা আজ ফ্রাঙ্কেনস্টাইনে পরিণত
হয়েছে। ছাত্রলীগের কর্মকাণ্ড আর ক্যাসিনো কাণ্ডে সরকারের ইমেজ ক্ষুন্ন
হয়েছে। বুয়েট পরিস্থিতি নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্র দেশের
খ্যতনামা স্থপতি মোবাশ্বের হোসেন এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, বুয়েটের প্রাক্তন শিক্ষার্থী হিসেবে মনে করি, বুয়েটের ঘটনা আমাদের জন্য একটি কলঙ্কজনক অধ্যায়ের সূচনা করেছে। এ ঘটনার মাধ্যমে একজন ছাত্রকে হত্যা করা হয়নি, আমার বুয়েটকে হত্যা করা হয়েছে। ঘটনার আদ্যপান্ত বিশ্লেষণ করে বেশকিছু বিষয় লক্ষ্য করার আছে।
যদি মাঝরাতে কোন একটি কক্ষে কাউকে টর্চার করা হয়, তাহলে তার চিৎকারে আশপাশের রুম থেকে অন্য শিক্ষার্থীদের ভিড় করার কথা। এখানে এমনটি ঘটেনি। অর্থাৎ এখানে নিয়মিত এ ধরণের টর্চার চলত। এটা সকলেরই জানা। আর এ ধরণের টর্চার সেল বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বা কতৃপক্ষ অবগত, না হলে দিনের পর দিন কিভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি কক্ষ টর্চার সেল হিসেবে ব্যবহার করা হল?
এমন নয় এটি বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি হলের ক্ষেত্রেই ঘটেছে। অন্যান্য হলেও একইরকমের টর্চার সেল আছে বলে শোনা যাচ্ছে যা বুয়েটের মতো স্বনামধন্য প্রতিষ্টানের মর্যাদাকে মাটিতে মিশিয়ে দিয়েছে। আমি জোড় দিয়ে বলতে চাই, এ ধরণের ঘটনা জেনেও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও কতৃপক্ষ তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে সম্পূর্ণরুপে ব্যর্থ হয়েছে। কারণ, বুয়েট ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বা অন্য কোন শিক্ষা প্রতিষ্টানের মত নয়। এখানকার সকল শিক্ষার্থীদের ডাটা অনলাইনেই রয়েছে। আর যারা দিনের পর দিন এ ধরণের ঘটনা ঘটিয়েছে তারা কেউ বাইরের নন, এরা ভেতরের। তাহলে এদের বিষয়ে সব তথ্য জেনেও বিশ্ববিদ্যালয় কতৃপক্ষ কেন ব্যবস্থা নেয়নি? বুয়েটে হল প্রভোস্ট, প্রক্টরিয়াল টিম ছাড়াও রয়েছে ডিএসডব্লিউ অর্থাৎ ডিরেক্টর অব স্টুডেন্টস উইংস যাদের কাজ কেবল ছাত্রদের বিষয়াদি তদারক করা, খোঁজ রাখা কোথায় কি হচ্ছে? অর্থাৎ এ ঘটনায় আমি মনে করি তাদেরও অবহেলা রয়েছে। এদেরকেও আইনের আওতায় আনা উচিৎ।
ব্যর্থতা কি কেবলই বিশ্ববিদ্যালয় কতৃপক্ষের নাকি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীরও?
প্রথমে আসি, বিশ্ববিদ্যালয় কতৃপক্ষের দায়িত্বে অবহেলার বিষয়ে। এটা অন্য বিশ্বদ্যিালয়ের মত না। এখানে সবসময় ভিন্নমতের সহ অবস্থান ছিল ঐতিহ্য। ঊনসত্তরের গণ অভ্যুত্থানের সময় নির্মল সেন, মনি সিং, ফরহাদ ভাইয়ের মতো বড় বড় ছাত্র নেতারা আমার কক্ষে এসে লুকিয়ে থাকতেন। তারা বিছানায় পর্যন্ত থাকতেন না। নিচে শুয়ে পড়তেন। আমাদের সময় ছাত্রলীগ, ছাত্র ইউনিয়নসহ সকলেই একসঙ্গে রাজনীতি করেছি। কিন্তু পরিস্থিতি এমন হলো কেন? এটাতো রাতারাতি একদিনে হয়নি। এর পেছনে রয়েছে সবকিছুকে রাজনীতিকরণ। গত তিন টার্মে উপাচার্য পদকে দলীয় পদে পরিণত করা হয়েছে। তারা ব্যক্তিগত স্বার্থে ছাত্রলীগকে ব্যবহার করেছে। ফলে ছাত্রলীগের সব ধরণের অন্যায় কাজে তারা নতজানু হয়ে সমর্থন দিয়েছে। আর এভাবেই প্রশাসনের ছত্রচ্ছায়ায় ছাত্র রাজনীতির নামে একটি গ্রুপ বুয়েটের ইমেজ পুরোপুরি ধ্বংস করে দিয়েছে।
মিডিয়ায় খবর এসেছে পুলিশ এসেও ফিরে গিয়েছে?
ঘটনার রাতে খবর পেয়ে পুলিশও এসেছিল। কিন্তু হল গেটে থেকেই তারা ফিরে যায়। আমরা জানতে পেরেছি শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদকের নির্দেশে তারা ফিরে যায়। যে দেশে সবই রাজনীতির ঘূর্ণাবর্তে নিয়ন্ত্রিত সেদেশে এমন হওয়াই স্বাভাবিক। কদিন আগেই ক্যাসিনো কাণ্ডে রাজধানীর তিন থানার ওসিকে প্রত্যাহার করা হলো। কিন্তু তাদের প্রত্যাহার করে অন্যত্র বদলি করা হয়েছে। অর্থাৎ তাদের আয় একটু কমিয়ে দেয়া হয়েছে। কিন্তু তাদের কৃত অপরাধের জন্য আইনের আওতায় এনে শাস্তি দেয়া হয়নি। যতদিন পর্যন্ত অপরাধীদের সাজা নিশ্চিত করা হবে না, ততদিন এ ধরণের ঘটনা ঘটতেই থাকবে। বুয়েটের হল গেট থেকে পুলিশ ফিরে যাওয়াটাও এসবেরই ধারাবাহিকতা। এ দেশে অপরাধ করে কোনধরণের শাস্তি হয় না।
তাহলে আইনহীনতার সংস্কৃতিই কি আমাদের নিয়তি?
লক্ষ্য করুণ, সাম্প্রতিক সময়ে দুর্নীতিসহ বিভিন্ন অপরাধে জড়িয়ে পরায় দলের সভানেত্রী ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে বহিষ্কার করেছেন। কিন্তু এরপর কি হওয়া উচিৎ ছিল? তাদের গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় এনে বিচারের মুখোমুখি করা। কিন্তু তা তো হয়নি। এখন দলীয় লোকদের যদি আইনের আওতায় এনে সাজা নিশ্চিত না করা হয় এবং দল থেকে বহিষ্কার করার নামে লোক দেখানো আইওয়াশ করা হয় তাহলে বিচারহীনতার বলে দলের লোকেরাই ফ্রাঙ্কেনস্টাইনে পরিণত হবে। বুয়েটের ক্ষেত্রে এমনটিই ঘটেছে। তারা দেখেছে, অপরাধ করে কোনরকম শাস্তি পেতে হয় না।
এ অবস্থার পরিবর্তনে করনীয় কি?
একটাই পথ। কঠোর থেকে কঠোরতর আইনের শাসন বাস্তবায়ন করা। বুয়েটের ঘটনায় সমস্যা কোথায় পুলিশের উচিৎ এই তথ্যগুলি পরিষ্কার করে সকলকে বলা। যদি সত্যিকার আইনের শাসন প্রতিষ্টা করতে হয় তাহলে আমি মনে করি, যারা আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় জড়িত তাদের সবধরণের টেলিফোন কনভারসেশন রেকর্ড করে পরীক্ষা করা। যদিও এ ঘটনার পর জড়িতদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সরকার বলেছে, দ্রুত বিচার আইনে জড়িতদের সাজা নিশ্চিত করা হবে। এখন দেখার বিষয় কি হচ্ছে? আবার ভয়ও পাচ্ছি, প্রধানমন্ত্রীকে হত্যা চেষ্টার বিচার যদি ১৪ বছরেও শেষ না হয়, তাহলে আবরার হত্যার বিচার কত বছরে হয় সেটাই দেখার বিষয়।
তিনি বলেন, বুয়েটের প্রাক্তন শিক্ষার্থী হিসেবে মনে করি, বুয়েটের ঘটনা আমাদের জন্য একটি কলঙ্কজনক অধ্যায়ের সূচনা করেছে। এ ঘটনার মাধ্যমে একজন ছাত্রকে হত্যা করা হয়নি, আমার বুয়েটকে হত্যা করা হয়েছে। ঘটনার আদ্যপান্ত বিশ্লেষণ করে বেশকিছু বিষয় লক্ষ্য করার আছে।
যদি মাঝরাতে কোন একটি কক্ষে কাউকে টর্চার করা হয়, তাহলে তার চিৎকারে আশপাশের রুম থেকে অন্য শিক্ষার্থীদের ভিড় করার কথা। এখানে এমনটি ঘটেনি। অর্থাৎ এখানে নিয়মিত এ ধরণের টর্চার চলত। এটা সকলেরই জানা। আর এ ধরণের টর্চার সেল বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বা কতৃপক্ষ অবগত, না হলে দিনের পর দিন কিভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি কক্ষ টর্চার সেল হিসেবে ব্যবহার করা হল?
এমন নয় এটি বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি হলের ক্ষেত্রেই ঘটেছে। অন্যান্য হলেও একইরকমের টর্চার সেল আছে বলে শোনা যাচ্ছে যা বুয়েটের মতো স্বনামধন্য প্রতিষ্টানের মর্যাদাকে মাটিতে মিশিয়ে দিয়েছে। আমি জোড় দিয়ে বলতে চাই, এ ধরণের ঘটনা জেনেও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও কতৃপক্ষ তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে সম্পূর্ণরুপে ব্যর্থ হয়েছে। কারণ, বুয়েট ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বা অন্য কোন শিক্ষা প্রতিষ্টানের মত নয়। এখানকার সকল শিক্ষার্থীদের ডাটা অনলাইনেই রয়েছে। আর যারা দিনের পর দিন এ ধরণের ঘটনা ঘটিয়েছে তারা কেউ বাইরের নন, এরা ভেতরের। তাহলে এদের বিষয়ে সব তথ্য জেনেও বিশ্ববিদ্যালয় কতৃপক্ষ কেন ব্যবস্থা নেয়নি? বুয়েটে হল প্রভোস্ট, প্রক্টরিয়াল টিম ছাড়াও রয়েছে ডিএসডব্লিউ অর্থাৎ ডিরেক্টর অব স্টুডেন্টস উইংস যাদের কাজ কেবল ছাত্রদের বিষয়াদি তদারক করা, খোঁজ রাখা কোথায় কি হচ্ছে? অর্থাৎ এ ঘটনায় আমি মনে করি তাদেরও অবহেলা রয়েছে। এদেরকেও আইনের আওতায় আনা উচিৎ।
ব্যর্থতা কি কেবলই বিশ্ববিদ্যালয় কতৃপক্ষের নাকি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীরও?
প্রথমে আসি, বিশ্ববিদ্যালয় কতৃপক্ষের দায়িত্বে অবহেলার বিষয়ে। এটা অন্য বিশ্বদ্যিালয়ের মত না। এখানে সবসময় ভিন্নমতের সহ অবস্থান ছিল ঐতিহ্য। ঊনসত্তরের গণ অভ্যুত্থানের সময় নির্মল সেন, মনি সিং, ফরহাদ ভাইয়ের মতো বড় বড় ছাত্র নেতারা আমার কক্ষে এসে লুকিয়ে থাকতেন। তারা বিছানায় পর্যন্ত থাকতেন না। নিচে শুয়ে পড়তেন। আমাদের সময় ছাত্রলীগ, ছাত্র ইউনিয়নসহ সকলেই একসঙ্গে রাজনীতি করেছি। কিন্তু পরিস্থিতি এমন হলো কেন? এটাতো রাতারাতি একদিনে হয়নি। এর পেছনে রয়েছে সবকিছুকে রাজনীতিকরণ। গত তিন টার্মে উপাচার্য পদকে দলীয় পদে পরিণত করা হয়েছে। তারা ব্যক্তিগত স্বার্থে ছাত্রলীগকে ব্যবহার করেছে। ফলে ছাত্রলীগের সব ধরণের অন্যায় কাজে তারা নতজানু হয়ে সমর্থন দিয়েছে। আর এভাবেই প্রশাসনের ছত্রচ্ছায়ায় ছাত্র রাজনীতির নামে একটি গ্রুপ বুয়েটের ইমেজ পুরোপুরি ধ্বংস করে দিয়েছে।
মিডিয়ায় খবর এসেছে পুলিশ এসেও ফিরে গিয়েছে?
ঘটনার রাতে খবর পেয়ে পুলিশও এসেছিল। কিন্তু হল গেটে থেকেই তারা ফিরে যায়। আমরা জানতে পেরেছি শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদকের নির্দেশে তারা ফিরে যায়। যে দেশে সবই রাজনীতির ঘূর্ণাবর্তে নিয়ন্ত্রিত সেদেশে এমন হওয়াই স্বাভাবিক। কদিন আগেই ক্যাসিনো কাণ্ডে রাজধানীর তিন থানার ওসিকে প্রত্যাহার করা হলো। কিন্তু তাদের প্রত্যাহার করে অন্যত্র বদলি করা হয়েছে। অর্থাৎ তাদের আয় একটু কমিয়ে দেয়া হয়েছে। কিন্তু তাদের কৃত অপরাধের জন্য আইনের আওতায় এনে শাস্তি দেয়া হয়নি। যতদিন পর্যন্ত অপরাধীদের সাজা নিশ্চিত করা হবে না, ততদিন এ ধরণের ঘটনা ঘটতেই থাকবে। বুয়েটের হল গেট থেকে পুলিশ ফিরে যাওয়াটাও এসবেরই ধারাবাহিকতা। এ দেশে অপরাধ করে কোনধরণের শাস্তি হয় না।
তাহলে আইনহীনতার সংস্কৃতিই কি আমাদের নিয়তি?
লক্ষ্য করুণ, সাম্প্রতিক সময়ে দুর্নীতিসহ বিভিন্ন অপরাধে জড়িয়ে পরায় দলের সভানেত্রী ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে বহিষ্কার করেছেন। কিন্তু এরপর কি হওয়া উচিৎ ছিল? তাদের গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় এনে বিচারের মুখোমুখি করা। কিন্তু তা তো হয়নি। এখন দলীয় লোকদের যদি আইনের আওতায় এনে সাজা নিশ্চিত না করা হয় এবং দল থেকে বহিষ্কার করার নামে লোক দেখানো আইওয়াশ করা হয় তাহলে বিচারহীনতার বলে দলের লোকেরাই ফ্রাঙ্কেনস্টাইনে পরিণত হবে। বুয়েটের ক্ষেত্রে এমনটিই ঘটেছে। তারা দেখেছে, অপরাধ করে কোনরকম শাস্তি পেতে হয় না।
এ অবস্থার পরিবর্তনে করনীয় কি?
একটাই পথ। কঠোর থেকে কঠোরতর আইনের শাসন বাস্তবায়ন করা। বুয়েটের ঘটনায় সমস্যা কোথায় পুলিশের উচিৎ এই তথ্যগুলি পরিষ্কার করে সকলকে বলা। যদি সত্যিকার আইনের শাসন প্রতিষ্টা করতে হয় তাহলে আমি মনে করি, যারা আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় জড়িত তাদের সবধরণের টেলিফোন কনভারসেশন রেকর্ড করে পরীক্ষা করা। যদিও এ ঘটনার পর জড়িতদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সরকার বলেছে, দ্রুত বিচার আইনে জড়িতদের সাজা নিশ্চিত করা হবে। এখন দেখার বিষয় কি হচ্ছে? আবার ভয়ও পাচ্ছি, প্রধানমন্ত্রীকে হত্যা চেষ্টার বিচার যদি ১৪ বছরেও শেষ না হয়, তাহলে আবরার হত্যার বিচার কত বছরে হয় সেটাই দেখার বিষয়।
No comments