বুয়েট শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদের নির্মম হত্যাকাণ্ডে ক্ষোভে উত্তাল বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস
বুয়েট
শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদের নির্মম হত্যাকাণ্ডে ক্ষোভে উত্তাল বিশ্ববিদ্যালয়
ক্যাম্পাস। নারকীয় এ হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে বিক্ষোভ হয়েছে বিভিন্ন
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে। ক্ষুব্ধ পুরো দেশ। সবার একটাই দাবি আবরার হত্যার সঙ্গে
জড়িত ছাত্রলীগ নেতাদের দ্রুত সময়ের মধ্যে সর্বোচ্চ শাস্তি। এদিকে
হত্যাকাণ্ডের পর বুয়েট ভিসির রহস্যময় আড়ালে অবস্থান নানা প্রশ্নের জন্ম
দিয়েছে। প্রায় ৩৮ ঘণ্টা পর তিনি গতকাল সন্ধ্যায় ক্যাম্পাসে এসে আন্দোলনরত
শিক্ষার্থীদের তোপের মুখে পড়েন। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কর্মকর্তাদের
সঙ্গে বৈঠকের পর তিনি শিক্ষার্থীদের দাবি ‘নীতিগত’ভাবে মেনে নেয়ার কথা
জানালে শিক্ষার্থীরা তা প্রত্যাখ্যান করেন। ভিসির এমন ঘোষণার পর
শিক্ষার্থীরা দাবি করেন, তাদের দাবি মেনে নেয়ার সুনির্দিষ্ট ঘোষণা দিতে
হবে।
ভিসি এমন কোনো ঘোষণা না দেয়ায় শিক্ষার্থীদের তোপের মুখে পড়েন। এক পর্যায়ে তিনি তার কার্যালয়ে ফিরে যান। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা ভিসির কার্যালয় অবরোধ করে রাখেন। তারা জানান, রাতভর আন্দোলন চলবে। বুধবার সকালে পরবর্তী ঘোষণা দেয়া হবে। এর আগে গতকাল সকাল ১০টার দিকে বুয়েটের ক্যাফেটেরিয়া থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের করেন আবরারের সহপাঠীরা। মিছিলটি বুয়েটের সকল একাডেমিক ভবন, প্রশাসনিক ভবন ও হল প্রদক্ষিণ করে। এরপর মিছিলটি পলাশী মোড় হয়ে জগন্নাথ হলের সামনে দিয়ে বকশীবাজার মোড় ঘুরে বুয়েটের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে গিয়ে সমাবেশে মিলিত হয়। এসময় আবরার আবরার স্লোগানে প্রকম্পিত হয়ে উঠে পুরো ক্যাম্পাস। শিক্ষার্থীরা আবরার হত্যাকারীদের সর্বোচ্চ শাস্তি দাবি করেন। এসময় বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা ৮ দফা দাবি উত্থাপন করেন। শিক্ষার্থীদের আট দফা দবি হলো- খুনিদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে; ৭২ ঘণ্টার মধ্যে খুনিদের বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আজীবনের জন্য বহিষ্কার করতে হবে; আবাসিক হলগুলোতে র্যাগের নামে এবং ভিন্নমত দমানোর নামে নির্যাতন বন্ধে প্রশাসনের সক্রিয় ভূমিকা নিশ্চিত করতে হবে; ঘটনার ৩০ ঘণ্টা পরও ভিসি কেন ঘটনাস্থলে উপস্থিত হননি, মঙ্গলবার বিকাল ৫টার মধ্যে ভিসিকে ক্যাম্পাসে উপস্থিত হয়ে শিক্ষার্থীদের কাছে এর জবাব দিতে হবে; হত্যা মামলার খরচ বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে বহন করতে হবে; এর আগের ঘটনাগুলোর বিচার করতে হবে; ১১ অক্টোবরের মধ্যে শেরেবাংলা হলের প্রভোস্টকে প্রত্যাহার করতে হবে; ক্যাম্পাসে ছাত্র রাজনীতি স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধ করতে হবে এবং ভর্তি পরীক্ষা স্থগিত করতে হবে। দুপুর সাড়ে ১১টায় আন্দোলনকারীদের সঙ্গে কথা বলতে এসে তোপের মুখে পড়েন ছাত্রকল্যাণ পরিচালক অধ্যাপক মিজানুর রহমান। এরপর শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে সংহতি জানায় বুয়েট শিক্ষক সমিতি, সাবেক শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা। এসময় তারাও আবরারের হত্যাকারীদের ফাঁসি দাবি করেন। আন্দোলনকারীরা আবরার হত্যার প্রতিবাদে বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকেন। দাবি করেন অবিলম্বে দ্রুত বিচার ট্রাইবুনালের মাধ্যমে হত্যাকারীদের ফাঁসি নিশ্চিত করতে। ভিসিকে আল্টিমেটাম দেয়া হয় বিকেল ৫টার মধ্যে শিক্ষার্থীদের কাছে এসে কথা বলতে। অন্যথায় কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করার হুশিয়ারিও দেয়া হয়। অনির্দিষ্টকালের জন্য ক্লাস পরীক্ষা বর্জনের ঘোষণা দেয়া হয়।
এদিকে বেলা সোয়া ৩টার দিকে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের পাঁচ সদস্যের প্রতিনিধির সঙ্গে আলোচনায় বসার প্রস্তাব দেন বুয়েটের ভিসি অধ্যাপক ড. সাইফুল ইসলাম। কিন্তু শিক্ষার্থীরা ভিসির সে প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনারে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের এ প্রস্তাবের কথা জানান বুয়েটের ছাত্র কল্যাণ পরিচালক মিজানুর রহমান। তিনি বলেন, ভিসির পিএস (ব্যক্তিগত সচিব) আমাকে ফোন করে জানিয়েছেন, ভিসি আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের পাঁচ প্রতিনিধির সঙ্গে বসতে চান। সেখানে বিভিন্ন অনুষদের ডিন ও আমি উপস্থিত থাকব। শিক্ষার্থীরা এ প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে বলেন, সেখানে ডিন ও বড় বড় শিক্ষকরা থাকবেন, আমাদের কথার কোনো জোর থাকবে না। ফলে আমরা সেখানে যাবো না। এদিকে বেঁধে দেয়া সময়ের মধ্যে ভিসি অধ্যাপক ড. সাইফুল ইসলাম আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের কাছে না যাওয়ায় বিকেল ৫টার দিকে ভিসি কার্যালয়ে তালা দেয় শিক্ষার্থীরা। যদিও ভিসি সাইফুল ইসলাম সে সময় ডিন, প্রভোস্টদের সঙ্গে নিয়ে সভা করছিলেন। এরপর বিক্ষোভকারীরা সেখানে অবস্থান নেন।
৩৮ ঘণ্টা পর শিক্ষার্থীদের সামনে ভিসি, বললেন আলোচনা করে দাবি পূরণ করা হবে: আবরার হত্যার ৩৮ ঘণ্টা পর শিক্ষার্থীদের সামনে আসেন ভিসি অধ্যাপক ড. সাইফুল ইসলাম। গতকাল সন্ধ্যা ৬টার দিকে তিনি নিজ কার্যালয়ের বাইরে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলতে চান। এসময় তিনি শিক্ষার্থীদের তোপের মুখে পড়েন। বিক্ষুব্ধ শিক্ষাথীরা বিভিন্ন প্রশ্ন করা শুরু করলে তিনি বিব্রত হন। এসময় তিনি বলেন, আমি তোমাদের এখানে প্রশ্নের উত্তর দিতে আসিনি। তিনি বলেন, শিক্ষার্থীদের দাবি সরকারের উচ্চমহলের কাছে পাঠিয়ে দিয়েছেন। বলেন, তোমরা যা দাবি দিয়েছ তোমাদের দাবির সঙ্গে অ্যাগ্রি করছি। আমরা নীতিগতভাবে সব দাবি মেনে নিচ্ছি। এসময় শিক্ষার্থীরা ভিসিকে দাবিগুলো পড়ে শুনিয়ে ঠিক কোন দাবিগুলো মানা হলো তা জানতে চাইলে তিনি এড়িয়ে চলে যেতে চান। এত পরে কেন এলেন জানতে চাইলে ভিসি বলেন, আমি সারাদিন মন্ত্রী মহোদয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি, মিটিং করেছি। এগুলো না করলে দাবিগুলোর সমাধান হবে কীভাবে। সব তো আমার হাতে নেই। এসময় শিক্ষার্থীদের আলাদা ডেকে নিয়ে কথা বলার প্রস্তাব দিলে ভিসির সে প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেন শিক্ষার্থীরা। পরে ভুয়া ভুয়া বলে স্লোগান দেন আন্দোলনরতরা। ভিসির আশ্বাসে আশ্বস্ত হতে না পেরে আন্দোলনকারীরা তার কার্যালয়ে তালা ঝুলিয়ে দেন।
তোপের মুখে ছাত্রকল্যাণ পরিচালক: এদিকে শিক্ষার্থীদের নিবৃত্ত করতে এসে তোপেরমুখে পড়েন বুয়েটের ছাত্রকল্যাণ পরিচালক অধ্যাপক মিজানুর রহমান। বেলা সাড়ে ১১টার দিকে তিনি কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে এসে তোপের মুখে পড়েন। এসময় শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ করার দাবি করেন। শিক্ষার্থীরা বলেন, স্যার, যে ঘটনা ঘটলো ক্যাম্পাসে। তাতে আপনি ছাত্ররাজনীতি বন্ধের ঘোষণা দেবেন কিনা। কিন্তু শিক্ষার্থীরা ছাত্রকল্যাণ পরিচালকের কাছ থেকে সন্তোষজনক জবাব না পেলে ক্ষুব্ধ হন তারা। এসময় বিক্ষুব্ধরা শেইম শেইম, লজ্জা লজ্জা স্লোগান দেন। পরে অধ্যাপক মিজানুর রহমান বলেন, আমি মনে করি বুয়েট ক্যাম্পাসে ছাত্ররাজনীতির প্রয়োজন নেই। আমাদের বর্তমান যে পরিস্থিতি তাতে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ছাত্ররাজনীতির প্রয়োজন নাই। এসময় শিক্ষার্থীরা করতালি দিয়ে তাকে অভিনন্দন জানান। এরপর শিক্ষার্থীরা বুয়েট ভিসিকে ক্যাম্পাসে আসার জন্য ছাত্রলকলাণ পরিচালককে ফোন দেয়ার দাবি করেন। শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন দাবির মধ্যে ছাত্রকল্যাণ পরিচালক এক পর্যায়ে বলতে বাধ্য হন তোমরা এমন করলেতো আমি কথা বলতে পারবো না।
ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধের দাবি, একমত শিক্ষকরাও: এদিকে বুয়েটে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধের দাবি জানিয়েছে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা। ৯ দফা দাবির মধ্যে বুয়েট শিক্ষার্থীদের অন্যতম দাবি ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধকরণ। যে দাবিতে একমত শিক্ষকরাও। ছাত্রদের দাবির সঙ্গে নিজেদের একাত্মতা পোষণ করেছে বুয়েট শিক্ষক সমিতি। সাবেক শিক্ষার্থীরা বুয়েটে পেশীশক্তির রাজনীতি নিষিদ্ধের পক্ষে। গতকাল আন্দোলনকারীরা বুয়েটের শহীদ মিনার থেকে ক্যাম্পাসে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধের জোর দাবি তুলেন। তাদের যুক্তি- যে রাজনীতি শিক্ষার্থীদের স্বপ্নকে হত্যা করে সে রাজনীতি তারা চায় না। অবিলম্বে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ করে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের দাবি করে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা। ক্যাম্পাসে ছাত্র রাজনীতি বন্ধে শিক্ষার্থীদের দাবির সঙ্গে একমত পোষণ করেছে বুয়েট শিক্ষক সমিতি। গতকাল দুপুরে বুয়েট কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে শিক্ষার্থীদের দাবির সঙ্গে একত্মতা পোষণ করে শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. এ কে এম মাসুদ রানা বলেন, বাবা-মা শিক্ষার্থীদের আমাদের হাতে তুলে দিয়ে গেছেন। কিন্তু আমরা দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হয়েছি। আমরা শিক্ষার্থীদের সব দাবির সঙ্গে একাত্মতা পোষণ করছি। বুয়েটের ছাত্রকল্যাণ পরিচালক অধ্যাপক মিজানুর রহমান বলেন, আমি মনে করি, বাংলাদেশের কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছাত্র রাজনীতির প্রয়োজন নেই। এসময় তিনিও শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বুয়েটে ছাত্র রাজনীতি বন্ধের দাবির সঙ্গে একমত পোষণ করেন। এদিকে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে সংহতি জানিয়ে বুয়েটের ৮৫ ব্যাচের শিক্ষার্থী ও কথাসাহিত্যিক আনিসুল হক বলেছেন, এক সময় রাজনীতি করা হতো আদর্শের জন্য। এখন করা হয় চাঁদাবাজি, বড় দলকে পাহারা দেয়ার জন্য। তিনি বলেন, আমার চাই বুয়েটে বিতর্ক ক্লাস, সংস্কৃতি ক্লাব এ ধরনের সংগঠনগুলো থাকুক। পেশিশক্তির রাজনীতি না থাকুক।
হত্যার জন্য প্রশাসন দায়ী, দাবি বুয়েট শিক্ষক সমিতি: এদিকে, বুয়েটে আবরার ফাহাদ হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদ ও হত্যাকারীদের শাস্তি দাবিতে সাধারণ শিক্ষার্থীদের চলমান আন্দোলনে সংহতি জানিয়েছে, বুয়েট শিক্ষক সমিতি। গতকাল বুয়েটের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে এ সংহতি জানান শিক্ষকরা। এছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রকল্যাণ দপ্তরের পরিচালক অধ্যাপক মিজানুর রহমান শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে সংহতি জানান। সকালে বুয়েটের শহীদ মিনারে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশকালে বুয়েট শিক্ষক সমিতির সভাপতি এ কে এম মাসুদ বলেন, ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সম্পূর্ণরূপে ব্যর্থ হয়েছে। আমরা শিক্ষার্থীদের সব দাবির সঙ্গে একমত। এদিকে বুয়েট শিক্ষক সমিতির সভাপতি ড. এ কে এম মাসুদ ও সাধারণ সম্পাদক ড. মো. মোস্তফা আলী স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে বলা হয়, আবরার হত্যার দায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এড়াতে পারেনা। অতীতে বিভিন্ন সময়ে শিক্ষার্থীদের ওপর ঘটে যাওয়া নির্যাতন ও র্যাগিংয়ের ঘটনায় দোষীদের চিহ্নিতকরণ ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদানে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের নিষ্ক্রিয়তার ফলে ক্রমাগত আইনশৃঙ্খলার অবনতি ঘটেছে। যার ফলশ্রুতিতে আবরার ফাহাদের নির্মম হত্যাকাণ্ডের মতো ঘটনা সংঘটিত হয়েছে। যার দায় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ কোনোভাবেই এড়াতে পারে না। বিবৃতিতে বলা হয়, বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলে কোনো শিক্ষার্থী নির্যাতনের স্বীকার হবে এবং মৃত্যুবরণ করবে তা কোনোভাবেই মেনে নেয়া যায় না। বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক ভবন ও শিক্ষার্থীদের আবাসিক হলসহ গোটা ক্যাম্পাসের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দায়িত্ব কর্তৃপক্ষের। আবরার হত্যার ঘটনা প্রমাণ করছে শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছে।
আন্দোলনে সাবেকরাও: এদিকে, আবরার হত্যার প্রতিবাদে সাধারণ শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে যোগ দিয়েছে সাবেক শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরাও। গতকাল কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সংহতি জানান তারা। ব্যানার ফেস্টুন হাতে নিয়ে মৌন মিছিলও করে সাবেক শিক্ষার্থীরা। ‘ভয় নেই, আমরা আছি তোমাদের সাথে’, ‘এই মৃত্যু উপত্যকা আমার বুয়েট’, ‘বিচার চাই’, ‘খুনিদের ফাঁসি চাই’, ‘আমার সেই গর্বের ক্যাম্পাস ফিরিয়ে দাও’ ইত্যাদি লেখা প্ল্যাকার্ড বহন করেন সাবেকরা। এসময় শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে সংহতি জানিয়ে বুয়েটের ৮৫ ব্যাচের শিক্ষার্থী ও কথাসাহিত্যিক আনিসুল হক বলেন, এক সময় রাজনীতি করা হতো আদর্শের জন্য। এখন করা হয় চাঁদাবাজি, বড় দলকে পাহারা দেয়ার জন্য। তিনি বলেন, বুয়েটে সারা দেশের সবচেয়ে মেধাবী শিক্ষার্থীদের তুলে আনা হয়। পৃথিবীর সব জায়গায় বুয়েটের সুনাম রয়েছে। অথচ বুয়েটের মেধাবী শিক্ষার্থীকে এমন পরিণতি ভোগ করতে হলো।
ঢাবিতে আবরারের গায়েবানা জানাজা: এদিকে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আবরার ফাহাদের গায়েবানা জানাজা অনুষ্ঠিত হয়েছে। গতকার দুপুর বারোটার দিকে টিএসসি চত্বরে গায়েবানা জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। এতে বিপুল সংখ্যক শিক্ষার্থী অংশ নেন। জানাজা পূর্বে সংক্ষিপ্ত সমাবেশে বক্তব্য রাখেন, ডাকসু ভিপি নুরুল হক নুর, সমাজসেবা সম্পাদক আখতার হোসেনসহ বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা। এসময় তারা আবরার হত্যার সঙ্গে জড়িত ছাত্রলীগ নেতাদের ফাঁসি দাবি করেন। আর বিচারকার্যে কোনো অবহেলা লক্ষ্য করা গেলে কঠোর আন্দোলনে যাওয়ার ঘোষণা দেন শিক্ষার্থীরা। তারা আববারকে শহীদ হিসেবে অবহিত করেন। তারা বলেন, আবরার দেশের পক্ষে কথা বলে শহীদ হয়েছেন। জানাজা শেষে আববারের বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করে মোনাজাত করা হয়। এসময় আবরারের স্বজনদের জন্যও দোয়া করা হয়।
ক্যাম্পাসে শেষবারের মতো আবরার: এর আগে গত সোমবার রাতে ঢাকা মেডিকেল থেকে আবরারের লাশ বুয়েটে আনা হয়। এসময় এক আবেগঘন পরিবেশ তৈরি হয়। এরপর রাত ৯টা ৫০ মিনিটের দিকে বুয়েট কেন্দ্রীয় মসজিদে আবরারের জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। আবরারের পরিবারের সদস্য, শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও সহপাঠীরা জানাজায় অংশ নেন। জানাজার পর শের-ই বাংলা হলে আবরারের মরদেহ নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে বিক্ষোভ করে শিক্ষার্থীরা। এরপর সেখান থেকে তার লাশ নিয়ে যাওয়া হয় কুষ্টিয়ার গ্রামের বাড়িতে। অন্যদিকে, শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে হত্যাকারীদের ফাঁসির দাবিতে বিক্ষোভ করেন। সমাবেশ করেন কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে। সেখান থেকে পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা দেয়া হয়।
এদিকে, আবরার ফাহাদ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত ১১ ছাত্রলীগ নেতাকে সংগঠন থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। গত সোমবার সংগঠনটির সভাপতি (ভারপ্রাপ্ত) আল নাহিয়ান খান জয় ও সাধারণ সম্পাদক (ভারপ্রাপ্ত) লেখক ভট্টাচার্য স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
পটুয়াখালীতে বিক্ষোভ
বুয়েটের মেধাবী শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদ হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে ও খুনিদের বিচারের দাবিতে পটুয়াখালী সরকারি কলেজে ও বাউফল উপজেলায় মানববন্ধন ও বিক্ষোভ কর্মসূচি পালিত হয়েছে।
মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে পটুয়াখালী সরকারি কলেজের সর্বস্তরের ছাত্র সমাজের ব্যানারে মানববন্ধন কর্মসূচি পালিন করে শিক্ষার্থীরা। সরকারি কলেজের প্রধান ফটকের সামনে আধাঘণ্টাব্যাপী মানববন্ধন শেষে শহরে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করা হয়। মিছিলটি বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে পুনরায় কলেজের প্রধান গেটে গিয়ে শেষ হয়। এ সময় সংক্ষিপ্ত সমাবেশে বক্তব্য রাখেন সরকারি কলেজের শিক্ষার্থী মানিক, হাসান, সুমন ও মাহাদি। বক্তারা আবরার হত্যার তীব্র ঘৃণা, নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত খুনিদের দ্রুত বিচারের কাঠগড়ায় এনে সর্বোচ্চ শাস্তির দাবি করেন। বক্তারা দেশের সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশসহ নিরাপদে শিক্ষার্থীরা লেখাপড়া করতে পারে তার আহ্বান জানান।
আবরার হত্যায় রাবি শিক্ষার্থীদের মহাসড়ক অবরোধ
বুয়েটের আবরার ফাহাদ হত্যার বিচার দাবিতে মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) শিক্ষার্থীরা। মহাসড়কে অবস্থান নেয়ার সময় পুলিশের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের একাধিকবার ধস্তাধস্তি ও বাকবিতণ্ডা হয়। মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনের রাজশাহী-ঢাকা মহাসড়ক অবরোধ করেন শিক্ষার্থীরা। এ সময় তারা আবরার হত্যার বিচার ও জড়িতদের সর্বোচ্চ শাস্তি দাবি জানান।
এর আগে বেলা ১১টায় কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে জড়ো হন শিক্ষার্থীরা। সেখান থেকে ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল করে প্রধান ফটকের সামনে মহাসড়কে অবস্থান নেন। মহাসড়ক অবরোধ করে অবস্থান নিতে চাইলে পুলিশ তাদের বাধা দেয়। এ সময় পুলিশের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের একাধিকবার ধস্তাধস্তি ও বাকবিতণ্ডা হয়। দ্রুত রাস্তা ছেড়ে না দিলে পুলিশ লাঠিচার্জ করতে বাধ্য হবেন বলে ঘোষণা দেন মহানগর পুলিশের সহকারী কমিশনার (এসি) মাসুদ রানা। এর কিছুক্ষণ পর সেখানে প্রক্টর লুৎফর রহমানসহ প্রক্টরিয়াল বডি এসে উপস্থিত হন।
প্রক্টর শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে তাদের চলে যেতে বলেন। শিক্ষার্থীরা সন্ধ্যা ছয়টায় মশাল মিছিলের ঘোষণা দিয়ে দুপুর সোয়া ১২টায় আন্দোলন স্থগিত করেন।
আবরারকে হত্যার প্রতিবাদে উত্তাল রংপুর
উত্তাল রংপুর। বুয়েটের মেধাবী ছাত্র আবরার ফাহাদকে পিটিয়ে হত্যার প্রতিবাদে বিভিন্ন স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা মানববন্ধন সমাবেশ, সড়ক অবরোধসহ বিক্ষোভ করে। এ সময় তারা ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের গ্রেপ্তার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান। গতকাল বেলা ১২টায় বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা নগরীর মডার্ন মোড় এলাকায় সড়ক রংপুর-ঢাকা মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করে। পরে সেখান থেকে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে এসে মানববন্ধন সমাবেশ করে। ঘণ্টাব্যাপী মানববন্ধন সমাবেশে বক্তব্য রাখেন, সাধারণ শিক্ষার্থী হাছান মাহমুদ, আলমগীর কবির, সাজাহান, রিনা মুরমু, মিজান, রাব্বি, রিপন, শাহ্ আলম, মিলন, নজরুল ইসলাম, আফরিন আক্তার, ফাতেমা আক্তারসহ অন্যরা। মানববন্ধন-সমাবেশ শিক্ষার্থীরা বলেন, রাজনৈতিক দলের ছাত্রসংগঠনের নেতাকর্মীদের নির্মম নির্যাতনের কারণে প্রাণ গেল বুয়েটের মেধাবী ছাত্র আবরারের। শিক্ষাঙ্গনে এখন শিক্ষার্থীদের জীবনের নিরাপত্তা নেই। ঠুনকো অভিযোগ এনে আবরারকে হত্যা করেছে ছাত্র নামধারী সন্ত্রাসীরা। দেশপ্রেমিক আবরারের ভারতবিদ্বেষী স্ট্যাটাস দেয়ার কারণে তাকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। আমরা চাই না কোনো কুলাঙ্গারের হাতে আর কোনো বাবা-মায়ের বুক খালি হোক। প্রতিটি ক্যাম্পাসে এই মানুষরূপী হায়েনাদের চিহ্নিত করে বহিষ্কারসহ আবরার হত্যাকারীদের অবিলম্বে গ্রেপ্তার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাচ্ছি। যদি আমাদের দাবি মানা না হয়, তবে রংপুর থেকে বৃহত্তর আন্দোলন গড়ে তুলে গোটা দেশকে অচল করে দেয়া হবে। এরপরই লালবাগ এলাকায় কারমাইকেল কলেজের শিক্ষার্থীরা মানববন্ধন সমাবেশ করে একই দাবি তোলেন। সকালে নগরীর বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল চত্বর এলাকায় বিভিন্ন স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা মানববন্ধন সমাবেশ করে আবরার হত্যাকারীদের গ্রেপ্তারের দাবি জানান।
আবরার হত্যায় জড়িতদের ফাঁসির দাবিতে বেরোবি শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) ইলেক্ট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেক্ট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদকে হত্যার প্রতিবাদে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশ করেছে। গতকাল দুপুর ১২টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটক থেকে মিছিলটি শুরু হয়ে ক্যাম্পাসের গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে নগরীর মডার্র্ন মোড়ে মহাসড়কে অবস্থান করে শিক্ষার্থীরা। এ সময় আবরারের খুনিদের ফাঁসির দাবিতে বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা। পরে বিক্ষোভ মিছিলটি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটক সংলগ্ন পার্কের মোড়ে এসে মানববন্ধনে রূপ নেয়।
ময়মনসিংহে মানববন্ধন
বুয়েট ছাত্র আবরারের হত্যাকারীদের দ্রুত গ্রেপ্তার করে ফাঁসির দাবিতে মুখে কালো কাপড় বেঁধে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে ময়মনসিংহের প্রগতিশীল ছাত্র জোট। সকাল ১১টা থেকে সাড়ে ১২টা পর্যন্ত নগরীর শহীদ ফিরোজ-জাহাঙ্গীর চত্বরে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশে করে ।
মানববন্ধন চলাকালে বক্তব্য দেন জেলা কমিউনিস্ট পার্টির সভাপতি এমদাদুল হক মিল্লাত, সুজন মহানগরের সাধারণ সম্পাদক আলী ইউসুফ, ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি আসজাদুল বোরহান তাহসিন, সাধারণ সম্পাদক বাহার উদ্দিন শুভ, যুব-ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক জহিরুল আমিন রনি, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফন্টের দপ্তর সম্পাদক ফজলুল হক রনি এবং রিফা সানজিদাসহ অন্যরা।
অবিলম্বে সব বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস দখলমুক্ত ক্ষমতাসীন দলের ছাত্র সংগঠনের করে সব ছাত্র হত্যাকারীদের বিচার দ্রুত সম্পন্ন দাবি জানায়।
আবারার হত্যার প্রতিবাদে মণিরামপুরে বিক্ষোভ
বুয়েট ছাত্র আবারার ফাহাদ হত্যার প্রতিবাদে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে স্থানীয় শিক্ষার্থীরা। গতকাল মঙ্গলবার সকালে মণিরামপুর পৌর শহরের প্রাণকেন্দ্র রাজগঞ্জ মোড়ে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। মানববন্ধন শেষে বিক্ষোভ সমাবেশে বুয়েট ছাত্র আবরার হত্যার তীব্র নিন্দা জানিয়ে বক্তারা হত্যার সাথে জড়িতদের আটক ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন।
আবরার হত্যার প্রতিবাদে সিলেটে বিক্ষোভ মিছিল
বুয়েটে ছাত্র আবরার ফাহাদের হত্যার প্রতিবাদে সিলেটে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল করেছে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজের শিক্ষার্থীরা। মঙ্গলবার দুপুর ১২ টায় নগরের চৌহাট্টাস্থ কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার প্রাঙ্গনে এ মানববন্ধনের আয়োজন করে কোটা সংস্কার আন্দোলনের মাধ্যমে গড়ে উঠা সংগঠন বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ। সংগঠনের সিলেট বিভাগীয় প্রধান সমন্বয়ক মো. নাসির উদ্দিনের সভাপতিত্বে ও যুগ্ম আহবায়ক নোমান হোসেন খন্দকারের পরিচালনায় মানববন্ধনে বক্তরা বলেন, আবরার হত্যার পেছনে ছাত্রলীগের অতিমাত্রায় ভারতপ্রেম প্রেরণা জুগিয়েছে। ভারতের সঙ্গে কয়েক’টি দেশবিরোধী চুক্তির সমালোচনা করায় আবরারকে হত্যা করা হয়েছে। এই রাষ্ট্র জনগণের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হয়েছে। বক্তারা অভিযোগ করে বলেন, ভারত বাংলাদেশের কাছ থেকে বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা নিলেও বাংলাদেশকে তার ন্যায্য হিস্যা দিচ্ছে না। ভারত আমাদের তিস্তার পানি দিচ্ছে না অথচ ফেনি নদীর পানি নিয়ে যাচ্ছে। ভারতের দু’টি রাজ্য যখন কোনো বিনিময় ছাড়া একে-অপরকে কিছু দিতে রাজি হয় না, সেখানে বাংলাদেশ কোনো বিনিময় ছাড়া ভারতকে আমাদের সমস্ত সম্পদ তুলে দিচ্ছে।’ একদিকে জনগণ বাসাবাড়িতে গ্যাস পাচ্ছে না অন্যদিকে ভারতে গ্যাস বিক্রি করা হচ্ছে। ভারত সীমান্তে নিরপরাধ বাংলাদেশি হত্যা করছে। এই সরকার জনগণকে প্রতিনিধিত্ব করে না তাই জনগণের অধিকার আদায়ে সচেতন নয়। ৩০শে ডিসেম্বর দেশের জনগণ ভোট দিতে পারেনি। মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন- বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ সিলেট বিভাগীয় সমন্বয় কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক নাজমুস সাকিব, আল মামুন সুজন, এসএম মনসুর, তাহসান খান, সালমান হোসেন, আলী হোসেন, ইমরান খান ও সাবিনা সেবিন প্রমুখ। মানববন্ধন শেষে বিক্ষোভ মিছিল নগরের চৌহাট্টা থেকে শুরু হয়ে কোর্ট পয়েন্টে গিয়ে শেষ হয়।
কুমিল্লায় বিক্ষোভ
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) এর শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদকে হত্যার প্রতিবাদে কুমিল্লায় বিক্ষোভ মিছিল করেছে শিক্ষার্থীরা। মঙ্গলবার সকাল দশটায় কুমিল্লা নগরীর টাউনহল থেকে মিছিল শুরু করে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়, কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা উপস্থিত ছিল। এসময় শিক্ষার্থীদের স্লোগানে মুখরিত হয়ে উঠে কুমিল্লা নগরী।
নোয়াখালী
বুয়েটের আবরার ফাহাদ হত্যার বিচার দাবিতে নোয়াখালী টাউন হল মোড়ে সকাল ১০টায় সাধারণ শিক্ষার্থীদের মানববন্ধনে পুলিশ বাধা দেয়। এ সময় তাদের ধাওয়া করে লাঠিচার্জ করার চেষ্টা চালিয়ে ছত্রভঙ্গ করে দেয় পুলিশ। পরে সকাল সাড়ে ১০টায় সাধারণ শিক্ষার্থীরা পুলিশের বাধা উপেক্ষা করে পুনরায় নোয়াখালী প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধন-সমাবেশে মিলিত হয়। প্রায় আধা ঘণ্টাব্যপী ওই কর্মসূচিতে বিশ্ববিদ্যালয়, বিভিন্ন কলেজ ও মাদ্রাসার শতাধিক শিক্ষার্থীরা অংশগ্রহণ করেন। এ সময় তারা হত্যার প্রতিবাদে ও বিচার দাবীতে নানা স্লোগান দেন। এ সময় একাধিক শিক্ষার্থী বক্তব্য রাখেন, তারা আবরার হত্যায় জড়িতদের গ্রেপ্তার এবং দ্রুত বিচার আইনে শাস্তি নিশ্চিত করার দাবী জানান।
খুলনা
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদকে পিটিয়ে হত্যার প্রতিবাদে খুলনায় মানববন্ধন কর্মসূচি ও বিক্ষোভ করেছে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা। মঙ্গলবার বেলা ১২টায় নগরীর শিববাড়ী মোড়ে ‘আগুয়ান-৭১’ নামের একটি সংগঠন?ের ব্যানারে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা এ কর্মসূচি পালন করে। এ সময় শিক্ষার্থীরা বাক স্বাধীনতার দাবিসহ বুয়েট ছাত্র আবরার হত্যার প্রতিবাদে বিভিন্ন স্লোগান খচিত প্ল্যাকার্ড বহন করে। কেউ কেউ প্রতিকী আবরার সেজে মানববন্ধনে অংশ নেয়।
ইবি শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ
বুয়েট শিক্ষার্থী ফাহাদকে নির্মমভাবে হত্যার প্রতিবাদে আন্দোলনে নেমেছে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। মঙ্গলবার তিন দফা দাবিতে ২য় দিনের মত প্রতিবাদ মিছিল ও বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে তারা। এসময় ব্যাপক পুলিশ মোতায়েন করে মেইন গেট আটকে রাখায় মহাসড়কে যেতে পারেনি বিক্ষুব্ধরা। বিকেল ৪টায় জিয়া মোড় থেকে প্রতিবাদ মিছিল শুরু করে সাধারণ শিক্ষার্থীরা। তারা পুরো ক্যাম্পাস প্রদক্ষিণ করে প্রধান ফটকে বিক্ষোভ সমাবেশ করে।
নারায়ণগঞ্জ
বুয়েট শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদ হত্যার বিচারের দাবিতে নারায়ণগঞ্জে পৃথক ভাবে বিক্ষোভ সমাবেশ ও মিছিল এবং মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে। মঙ্গলবার সকালে প্রথমে নারায়ণগঞ্জের সর্বস্তরের সাধারণ শিক্ষার্থীদের ব্যানারে নগরের চাষাঢ়া শহীদ মিনারের সামনে মানববন্ধন এবং এরপর প্রগতিশীল ছাত্র জোটের ব্যানারে একই স্থানে বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
প্রগতিশীল ছাত্র জোটের সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন প্রগতিশীল ছাত্র জোট নারায়ণগঞ্জ জেলার সমন্বয়ক ও সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট নারায়ণগঞ্জ জেলার সভাপতি সুলতানা আক্তার। বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন নারায়ণগঞ্জ জেলা সংসদের সভাপতি সুমাইয়া সেতু, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট নারায়ণগঞ্জ জেলার সাধারণ সম্পাদক বেলাল হোসাইন, বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন নারায়ণগঞ্জ জেলা সংসদের সাংগঠনিক সম্পাদক শুভ বনিক।
ভিসি এমন কোনো ঘোষণা না দেয়ায় শিক্ষার্থীদের তোপের মুখে পড়েন। এক পর্যায়ে তিনি তার কার্যালয়ে ফিরে যান। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা ভিসির কার্যালয় অবরোধ করে রাখেন। তারা জানান, রাতভর আন্দোলন চলবে। বুধবার সকালে পরবর্তী ঘোষণা দেয়া হবে। এর আগে গতকাল সকাল ১০টার দিকে বুয়েটের ক্যাফেটেরিয়া থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের করেন আবরারের সহপাঠীরা। মিছিলটি বুয়েটের সকল একাডেমিক ভবন, প্রশাসনিক ভবন ও হল প্রদক্ষিণ করে। এরপর মিছিলটি পলাশী মোড় হয়ে জগন্নাথ হলের সামনে দিয়ে বকশীবাজার মোড় ঘুরে বুয়েটের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে গিয়ে সমাবেশে মিলিত হয়। এসময় আবরার আবরার স্লোগানে প্রকম্পিত হয়ে উঠে পুরো ক্যাম্পাস। শিক্ষার্থীরা আবরার হত্যাকারীদের সর্বোচ্চ শাস্তি দাবি করেন। এসময় বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা ৮ দফা দাবি উত্থাপন করেন। শিক্ষার্থীদের আট দফা দবি হলো- খুনিদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে; ৭২ ঘণ্টার মধ্যে খুনিদের বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আজীবনের জন্য বহিষ্কার করতে হবে; আবাসিক হলগুলোতে র্যাগের নামে এবং ভিন্নমত দমানোর নামে নির্যাতন বন্ধে প্রশাসনের সক্রিয় ভূমিকা নিশ্চিত করতে হবে; ঘটনার ৩০ ঘণ্টা পরও ভিসি কেন ঘটনাস্থলে উপস্থিত হননি, মঙ্গলবার বিকাল ৫টার মধ্যে ভিসিকে ক্যাম্পাসে উপস্থিত হয়ে শিক্ষার্থীদের কাছে এর জবাব দিতে হবে; হত্যা মামলার খরচ বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে বহন করতে হবে; এর আগের ঘটনাগুলোর বিচার করতে হবে; ১১ অক্টোবরের মধ্যে শেরেবাংলা হলের প্রভোস্টকে প্রত্যাহার করতে হবে; ক্যাম্পাসে ছাত্র রাজনীতি স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধ করতে হবে এবং ভর্তি পরীক্ষা স্থগিত করতে হবে। দুপুর সাড়ে ১১টায় আন্দোলনকারীদের সঙ্গে কথা বলতে এসে তোপের মুখে পড়েন ছাত্রকল্যাণ পরিচালক অধ্যাপক মিজানুর রহমান। এরপর শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে সংহতি জানায় বুয়েট শিক্ষক সমিতি, সাবেক শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা। এসময় তারাও আবরারের হত্যাকারীদের ফাঁসি দাবি করেন। আন্দোলনকারীরা আবরার হত্যার প্রতিবাদে বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকেন। দাবি করেন অবিলম্বে দ্রুত বিচার ট্রাইবুনালের মাধ্যমে হত্যাকারীদের ফাঁসি নিশ্চিত করতে। ভিসিকে আল্টিমেটাম দেয়া হয় বিকেল ৫টার মধ্যে শিক্ষার্থীদের কাছে এসে কথা বলতে। অন্যথায় কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করার হুশিয়ারিও দেয়া হয়। অনির্দিষ্টকালের জন্য ক্লাস পরীক্ষা বর্জনের ঘোষণা দেয়া হয়।
এদিকে বেলা সোয়া ৩টার দিকে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের পাঁচ সদস্যের প্রতিনিধির সঙ্গে আলোচনায় বসার প্রস্তাব দেন বুয়েটের ভিসি অধ্যাপক ড. সাইফুল ইসলাম। কিন্তু শিক্ষার্থীরা ভিসির সে প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনারে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের এ প্রস্তাবের কথা জানান বুয়েটের ছাত্র কল্যাণ পরিচালক মিজানুর রহমান। তিনি বলেন, ভিসির পিএস (ব্যক্তিগত সচিব) আমাকে ফোন করে জানিয়েছেন, ভিসি আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের পাঁচ প্রতিনিধির সঙ্গে বসতে চান। সেখানে বিভিন্ন অনুষদের ডিন ও আমি উপস্থিত থাকব। শিক্ষার্থীরা এ প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে বলেন, সেখানে ডিন ও বড় বড় শিক্ষকরা থাকবেন, আমাদের কথার কোনো জোর থাকবে না। ফলে আমরা সেখানে যাবো না। এদিকে বেঁধে দেয়া সময়ের মধ্যে ভিসি অধ্যাপক ড. সাইফুল ইসলাম আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের কাছে না যাওয়ায় বিকেল ৫টার দিকে ভিসি কার্যালয়ে তালা দেয় শিক্ষার্থীরা। যদিও ভিসি সাইফুল ইসলাম সে সময় ডিন, প্রভোস্টদের সঙ্গে নিয়ে সভা করছিলেন। এরপর বিক্ষোভকারীরা সেখানে অবস্থান নেন।
৩৮ ঘণ্টা পর শিক্ষার্থীদের সামনে ভিসি, বললেন আলোচনা করে দাবি পূরণ করা হবে: আবরার হত্যার ৩৮ ঘণ্টা পর শিক্ষার্থীদের সামনে আসেন ভিসি অধ্যাপক ড. সাইফুল ইসলাম। গতকাল সন্ধ্যা ৬টার দিকে তিনি নিজ কার্যালয়ের বাইরে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলতে চান। এসময় তিনি শিক্ষার্থীদের তোপের মুখে পড়েন। বিক্ষুব্ধ শিক্ষাথীরা বিভিন্ন প্রশ্ন করা শুরু করলে তিনি বিব্রত হন। এসময় তিনি বলেন, আমি তোমাদের এখানে প্রশ্নের উত্তর দিতে আসিনি। তিনি বলেন, শিক্ষার্থীদের দাবি সরকারের উচ্চমহলের কাছে পাঠিয়ে দিয়েছেন। বলেন, তোমরা যা দাবি দিয়েছ তোমাদের দাবির সঙ্গে অ্যাগ্রি করছি। আমরা নীতিগতভাবে সব দাবি মেনে নিচ্ছি। এসময় শিক্ষার্থীরা ভিসিকে দাবিগুলো পড়ে শুনিয়ে ঠিক কোন দাবিগুলো মানা হলো তা জানতে চাইলে তিনি এড়িয়ে চলে যেতে চান। এত পরে কেন এলেন জানতে চাইলে ভিসি বলেন, আমি সারাদিন মন্ত্রী মহোদয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি, মিটিং করেছি। এগুলো না করলে দাবিগুলোর সমাধান হবে কীভাবে। সব তো আমার হাতে নেই। এসময় শিক্ষার্থীদের আলাদা ডেকে নিয়ে কথা বলার প্রস্তাব দিলে ভিসির সে প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেন শিক্ষার্থীরা। পরে ভুয়া ভুয়া বলে স্লোগান দেন আন্দোলনরতরা। ভিসির আশ্বাসে আশ্বস্ত হতে না পেরে আন্দোলনকারীরা তার কার্যালয়ে তালা ঝুলিয়ে দেন।
তোপের মুখে ছাত্রকল্যাণ পরিচালক: এদিকে শিক্ষার্থীদের নিবৃত্ত করতে এসে তোপেরমুখে পড়েন বুয়েটের ছাত্রকল্যাণ পরিচালক অধ্যাপক মিজানুর রহমান। বেলা সাড়ে ১১টার দিকে তিনি কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে এসে তোপের মুখে পড়েন। এসময় শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ করার দাবি করেন। শিক্ষার্থীরা বলেন, স্যার, যে ঘটনা ঘটলো ক্যাম্পাসে। তাতে আপনি ছাত্ররাজনীতি বন্ধের ঘোষণা দেবেন কিনা। কিন্তু শিক্ষার্থীরা ছাত্রকল্যাণ পরিচালকের কাছ থেকে সন্তোষজনক জবাব না পেলে ক্ষুব্ধ হন তারা। এসময় বিক্ষুব্ধরা শেইম শেইম, লজ্জা লজ্জা স্লোগান দেন। পরে অধ্যাপক মিজানুর রহমান বলেন, আমি মনে করি বুয়েট ক্যাম্পাসে ছাত্ররাজনীতির প্রয়োজন নেই। আমাদের বর্তমান যে পরিস্থিতি তাতে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ছাত্ররাজনীতির প্রয়োজন নাই। এসময় শিক্ষার্থীরা করতালি দিয়ে তাকে অভিনন্দন জানান। এরপর শিক্ষার্থীরা বুয়েট ভিসিকে ক্যাম্পাসে আসার জন্য ছাত্রলকলাণ পরিচালককে ফোন দেয়ার দাবি করেন। শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন দাবির মধ্যে ছাত্রকল্যাণ পরিচালক এক পর্যায়ে বলতে বাধ্য হন তোমরা এমন করলেতো আমি কথা বলতে পারবো না।
ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধের দাবি, একমত শিক্ষকরাও: এদিকে বুয়েটে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধের দাবি জানিয়েছে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা। ৯ দফা দাবির মধ্যে বুয়েট শিক্ষার্থীদের অন্যতম দাবি ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধকরণ। যে দাবিতে একমত শিক্ষকরাও। ছাত্রদের দাবির সঙ্গে নিজেদের একাত্মতা পোষণ করেছে বুয়েট শিক্ষক সমিতি। সাবেক শিক্ষার্থীরা বুয়েটে পেশীশক্তির রাজনীতি নিষিদ্ধের পক্ষে। গতকাল আন্দোলনকারীরা বুয়েটের শহীদ মিনার থেকে ক্যাম্পাসে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধের জোর দাবি তুলেন। তাদের যুক্তি- যে রাজনীতি শিক্ষার্থীদের স্বপ্নকে হত্যা করে সে রাজনীতি তারা চায় না। অবিলম্বে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ করে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের দাবি করে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা। ক্যাম্পাসে ছাত্র রাজনীতি বন্ধে শিক্ষার্থীদের দাবির সঙ্গে একমত পোষণ করেছে বুয়েট শিক্ষক সমিতি। গতকাল দুপুরে বুয়েট কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে শিক্ষার্থীদের দাবির সঙ্গে একত্মতা পোষণ করে শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. এ কে এম মাসুদ রানা বলেন, বাবা-মা শিক্ষার্থীদের আমাদের হাতে তুলে দিয়ে গেছেন। কিন্তু আমরা দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হয়েছি। আমরা শিক্ষার্থীদের সব দাবির সঙ্গে একাত্মতা পোষণ করছি। বুয়েটের ছাত্রকল্যাণ পরিচালক অধ্যাপক মিজানুর রহমান বলেন, আমি মনে করি, বাংলাদেশের কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছাত্র রাজনীতির প্রয়োজন নেই। এসময় তিনিও শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বুয়েটে ছাত্র রাজনীতি বন্ধের দাবির সঙ্গে একমত পোষণ করেন। এদিকে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে সংহতি জানিয়ে বুয়েটের ৮৫ ব্যাচের শিক্ষার্থী ও কথাসাহিত্যিক আনিসুল হক বলেছেন, এক সময় রাজনীতি করা হতো আদর্শের জন্য। এখন করা হয় চাঁদাবাজি, বড় দলকে পাহারা দেয়ার জন্য। তিনি বলেন, আমার চাই বুয়েটে বিতর্ক ক্লাস, সংস্কৃতি ক্লাব এ ধরনের সংগঠনগুলো থাকুক। পেশিশক্তির রাজনীতি না থাকুক।
হত্যার জন্য প্রশাসন দায়ী, দাবি বুয়েট শিক্ষক সমিতি: এদিকে, বুয়েটে আবরার ফাহাদ হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদ ও হত্যাকারীদের শাস্তি দাবিতে সাধারণ শিক্ষার্থীদের চলমান আন্দোলনে সংহতি জানিয়েছে, বুয়েট শিক্ষক সমিতি। গতকাল বুয়েটের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে এ সংহতি জানান শিক্ষকরা। এছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রকল্যাণ দপ্তরের পরিচালক অধ্যাপক মিজানুর রহমান শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে সংহতি জানান। সকালে বুয়েটের শহীদ মিনারে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশকালে বুয়েট শিক্ষক সমিতির সভাপতি এ কে এম মাসুদ বলেন, ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সম্পূর্ণরূপে ব্যর্থ হয়েছে। আমরা শিক্ষার্থীদের সব দাবির সঙ্গে একমত। এদিকে বুয়েট শিক্ষক সমিতির সভাপতি ড. এ কে এম মাসুদ ও সাধারণ সম্পাদক ড. মো. মোস্তফা আলী স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে বলা হয়, আবরার হত্যার দায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এড়াতে পারেনা। অতীতে বিভিন্ন সময়ে শিক্ষার্থীদের ওপর ঘটে যাওয়া নির্যাতন ও র্যাগিংয়ের ঘটনায় দোষীদের চিহ্নিতকরণ ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদানে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের নিষ্ক্রিয়তার ফলে ক্রমাগত আইনশৃঙ্খলার অবনতি ঘটেছে। যার ফলশ্রুতিতে আবরার ফাহাদের নির্মম হত্যাকাণ্ডের মতো ঘটনা সংঘটিত হয়েছে। যার দায় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ কোনোভাবেই এড়াতে পারে না। বিবৃতিতে বলা হয়, বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলে কোনো শিক্ষার্থী নির্যাতনের স্বীকার হবে এবং মৃত্যুবরণ করবে তা কোনোভাবেই মেনে নেয়া যায় না। বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক ভবন ও শিক্ষার্থীদের আবাসিক হলসহ গোটা ক্যাম্পাসের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দায়িত্ব কর্তৃপক্ষের। আবরার হত্যার ঘটনা প্রমাণ করছে শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছে।
আন্দোলনে সাবেকরাও: এদিকে, আবরার হত্যার প্রতিবাদে সাধারণ শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে যোগ দিয়েছে সাবেক শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরাও। গতকাল কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সংহতি জানান তারা। ব্যানার ফেস্টুন হাতে নিয়ে মৌন মিছিলও করে সাবেক শিক্ষার্থীরা। ‘ভয় নেই, আমরা আছি তোমাদের সাথে’, ‘এই মৃত্যু উপত্যকা আমার বুয়েট’, ‘বিচার চাই’, ‘খুনিদের ফাঁসি চাই’, ‘আমার সেই গর্বের ক্যাম্পাস ফিরিয়ে দাও’ ইত্যাদি লেখা প্ল্যাকার্ড বহন করেন সাবেকরা। এসময় শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে সংহতি জানিয়ে বুয়েটের ৮৫ ব্যাচের শিক্ষার্থী ও কথাসাহিত্যিক আনিসুল হক বলেন, এক সময় রাজনীতি করা হতো আদর্শের জন্য। এখন করা হয় চাঁদাবাজি, বড় দলকে পাহারা দেয়ার জন্য। তিনি বলেন, বুয়েটে সারা দেশের সবচেয়ে মেধাবী শিক্ষার্থীদের তুলে আনা হয়। পৃথিবীর সব জায়গায় বুয়েটের সুনাম রয়েছে। অথচ বুয়েটের মেধাবী শিক্ষার্থীকে এমন পরিণতি ভোগ করতে হলো।
ঢাবিতে আবরারের গায়েবানা জানাজা: এদিকে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আবরার ফাহাদের গায়েবানা জানাজা অনুষ্ঠিত হয়েছে। গতকার দুপুর বারোটার দিকে টিএসসি চত্বরে গায়েবানা জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। এতে বিপুল সংখ্যক শিক্ষার্থী অংশ নেন। জানাজা পূর্বে সংক্ষিপ্ত সমাবেশে বক্তব্য রাখেন, ডাকসু ভিপি নুরুল হক নুর, সমাজসেবা সম্পাদক আখতার হোসেনসহ বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা। এসময় তারা আবরার হত্যার সঙ্গে জড়িত ছাত্রলীগ নেতাদের ফাঁসি দাবি করেন। আর বিচারকার্যে কোনো অবহেলা লক্ষ্য করা গেলে কঠোর আন্দোলনে যাওয়ার ঘোষণা দেন শিক্ষার্থীরা। তারা আববারকে শহীদ হিসেবে অবহিত করেন। তারা বলেন, আবরার দেশের পক্ষে কথা বলে শহীদ হয়েছেন। জানাজা শেষে আববারের বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করে মোনাজাত করা হয়। এসময় আবরারের স্বজনদের জন্যও দোয়া করা হয়।
ক্যাম্পাসে শেষবারের মতো আবরার: এর আগে গত সোমবার রাতে ঢাকা মেডিকেল থেকে আবরারের লাশ বুয়েটে আনা হয়। এসময় এক আবেগঘন পরিবেশ তৈরি হয়। এরপর রাত ৯টা ৫০ মিনিটের দিকে বুয়েট কেন্দ্রীয় মসজিদে আবরারের জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। আবরারের পরিবারের সদস্য, শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও সহপাঠীরা জানাজায় অংশ নেন। জানাজার পর শের-ই বাংলা হলে আবরারের মরদেহ নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে বিক্ষোভ করে শিক্ষার্থীরা। এরপর সেখান থেকে তার লাশ নিয়ে যাওয়া হয় কুষ্টিয়ার গ্রামের বাড়িতে। অন্যদিকে, শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে হত্যাকারীদের ফাঁসির দাবিতে বিক্ষোভ করেন। সমাবেশ করেন কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে। সেখান থেকে পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা দেয়া হয়।
এদিকে, আবরার ফাহাদ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত ১১ ছাত্রলীগ নেতাকে সংগঠন থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। গত সোমবার সংগঠনটির সভাপতি (ভারপ্রাপ্ত) আল নাহিয়ান খান জয় ও সাধারণ সম্পাদক (ভারপ্রাপ্ত) লেখক ভট্টাচার্য স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
পটুয়াখালীতে বিক্ষোভ
বুয়েটের মেধাবী শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদ হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে ও খুনিদের বিচারের দাবিতে পটুয়াখালী সরকারি কলেজে ও বাউফল উপজেলায় মানববন্ধন ও বিক্ষোভ কর্মসূচি পালিত হয়েছে।
মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে পটুয়াখালী সরকারি কলেজের সর্বস্তরের ছাত্র সমাজের ব্যানারে মানববন্ধন কর্মসূচি পালিন করে শিক্ষার্থীরা। সরকারি কলেজের প্রধান ফটকের সামনে আধাঘণ্টাব্যাপী মানববন্ধন শেষে শহরে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করা হয়। মিছিলটি বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে পুনরায় কলেজের প্রধান গেটে গিয়ে শেষ হয়। এ সময় সংক্ষিপ্ত সমাবেশে বক্তব্য রাখেন সরকারি কলেজের শিক্ষার্থী মানিক, হাসান, সুমন ও মাহাদি। বক্তারা আবরার হত্যার তীব্র ঘৃণা, নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত খুনিদের দ্রুত বিচারের কাঠগড়ায় এনে সর্বোচ্চ শাস্তির দাবি করেন। বক্তারা দেশের সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশসহ নিরাপদে শিক্ষার্থীরা লেখাপড়া করতে পারে তার আহ্বান জানান।
আবরার হত্যায় রাবি শিক্ষার্থীদের মহাসড়ক অবরোধ
বুয়েটের আবরার ফাহাদ হত্যার বিচার দাবিতে মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) শিক্ষার্থীরা। মহাসড়কে অবস্থান নেয়ার সময় পুলিশের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের একাধিকবার ধস্তাধস্তি ও বাকবিতণ্ডা হয়। মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনের রাজশাহী-ঢাকা মহাসড়ক অবরোধ করেন শিক্ষার্থীরা। এ সময় তারা আবরার হত্যার বিচার ও জড়িতদের সর্বোচ্চ শাস্তি দাবি জানান।
এর আগে বেলা ১১টায় কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে জড়ো হন শিক্ষার্থীরা। সেখান থেকে ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল করে প্রধান ফটকের সামনে মহাসড়কে অবস্থান নেন। মহাসড়ক অবরোধ করে অবস্থান নিতে চাইলে পুলিশ তাদের বাধা দেয়। এ সময় পুলিশের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের একাধিকবার ধস্তাধস্তি ও বাকবিতণ্ডা হয়। দ্রুত রাস্তা ছেড়ে না দিলে পুলিশ লাঠিচার্জ করতে বাধ্য হবেন বলে ঘোষণা দেন মহানগর পুলিশের সহকারী কমিশনার (এসি) মাসুদ রানা। এর কিছুক্ষণ পর সেখানে প্রক্টর লুৎফর রহমানসহ প্রক্টরিয়াল বডি এসে উপস্থিত হন।
প্রক্টর শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে তাদের চলে যেতে বলেন। শিক্ষার্থীরা সন্ধ্যা ছয়টায় মশাল মিছিলের ঘোষণা দিয়ে দুপুর সোয়া ১২টায় আন্দোলন স্থগিত করেন।
আবরারকে হত্যার প্রতিবাদে উত্তাল রংপুর
উত্তাল রংপুর। বুয়েটের মেধাবী ছাত্র আবরার ফাহাদকে পিটিয়ে হত্যার প্রতিবাদে বিভিন্ন স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা মানববন্ধন সমাবেশ, সড়ক অবরোধসহ বিক্ষোভ করে। এ সময় তারা ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের গ্রেপ্তার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান। গতকাল বেলা ১২টায় বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা নগরীর মডার্ন মোড় এলাকায় সড়ক রংপুর-ঢাকা মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করে। পরে সেখান থেকে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে এসে মানববন্ধন সমাবেশ করে। ঘণ্টাব্যাপী মানববন্ধন সমাবেশে বক্তব্য রাখেন, সাধারণ শিক্ষার্থী হাছান মাহমুদ, আলমগীর কবির, সাজাহান, রিনা মুরমু, মিজান, রাব্বি, রিপন, শাহ্ আলম, মিলন, নজরুল ইসলাম, আফরিন আক্তার, ফাতেমা আক্তারসহ অন্যরা। মানববন্ধন-সমাবেশ শিক্ষার্থীরা বলেন, রাজনৈতিক দলের ছাত্রসংগঠনের নেতাকর্মীদের নির্মম নির্যাতনের কারণে প্রাণ গেল বুয়েটের মেধাবী ছাত্র আবরারের। শিক্ষাঙ্গনে এখন শিক্ষার্থীদের জীবনের নিরাপত্তা নেই। ঠুনকো অভিযোগ এনে আবরারকে হত্যা করেছে ছাত্র নামধারী সন্ত্রাসীরা। দেশপ্রেমিক আবরারের ভারতবিদ্বেষী স্ট্যাটাস দেয়ার কারণে তাকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। আমরা চাই না কোনো কুলাঙ্গারের হাতে আর কোনো বাবা-মায়ের বুক খালি হোক। প্রতিটি ক্যাম্পাসে এই মানুষরূপী হায়েনাদের চিহ্নিত করে বহিষ্কারসহ আবরার হত্যাকারীদের অবিলম্বে গ্রেপ্তার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাচ্ছি। যদি আমাদের দাবি মানা না হয়, তবে রংপুর থেকে বৃহত্তর আন্দোলন গড়ে তুলে গোটা দেশকে অচল করে দেয়া হবে। এরপরই লালবাগ এলাকায় কারমাইকেল কলেজের শিক্ষার্থীরা মানববন্ধন সমাবেশ করে একই দাবি তোলেন। সকালে নগরীর বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল চত্বর এলাকায় বিভিন্ন স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা মানববন্ধন সমাবেশ করে আবরার হত্যাকারীদের গ্রেপ্তারের দাবি জানান।
আবরার হত্যায় জড়িতদের ফাঁসির দাবিতে বেরোবি শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) ইলেক্ট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেক্ট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদকে হত্যার প্রতিবাদে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশ করেছে। গতকাল দুপুর ১২টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটক থেকে মিছিলটি শুরু হয়ে ক্যাম্পাসের গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে নগরীর মডার্র্ন মোড়ে মহাসড়কে অবস্থান করে শিক্ষার্থীরা। এ সময় আবরারের খুনিদের ফাঁসির দাবিতে বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা। পরে বিক্ষোভ মিছিলটি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটক সংলগ্ন পার্কের মোড়ে এসে মানববন্ধনে রূপ নেয়।
ময়মনসিংহে মানববন্ধন
বুয়েট ছাত্র আবরারের হত্যাকারীদের দ্রুত গ্রেপ্তার করে ফাঁসির দাবিতে মুখে কালো কাপড় বেঁধে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে ময়মনসিংহের প্রগতিশীল ছাত্র জোট। সকাল ১১টা থেকে সাড়ে ১২টা পর্যন্ত নগরীর শহীদ ফিরোজ-জাহাঙ্গীর চত্বরে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশে করে ।
মানববন্ধন চলাকালে বক্তব্য দেন জেলা কমিউনিস্ট পার্টির সভাপতি এমদাদুল হক মিল্লাত, সুজন মহানগরের সাধারণ সম্পাদক আলী ইউসুফ, ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি আসজাদুল বোরহান তাহসিন, সাধারণ সম্পাদক বাহার উদ্দিন শুভ, যুব-ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক জহিরুল আমিন রনি, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফন্টের দপ্তর সম্পাদক ফজলুল হক রনি এবং রিফা সানজিদাসহ অন্যরা।
অবিলম্বে সব বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস দখলমুক্ত ক্ষমতাসীন দলের ছাত্র সংগঠনের করে সব ছাত্র হত্যাকারীদের বিচার দ্রুত সম্পন্ন দাবি জানায়।
আবারার হত্যার প্রতিবাদে মণিরামপুরে বিক্ষোভ
বুয়েট ছাত্র আবারার ফাহাদ হত্যার প্রতিবাদে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে স্থানীয় শিক্ষার্থীরা। গতকাল মঙ্গলবার সকালে মণিরামপুর পৌর শহরের প্রাণকেন্দ্র রাজগঞ্জ মোড়ে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। মানববন্ধন শেষে বিক্ষোভ সমাবেশে বুয়েট ছাত্র আবরার হত্যার তীব্র নিন্দা জানিয়ে বক্তারা হত্যার সাথে জড়িতদের আটক ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন।
আবরার হত্যার প্রতিবাদে সিলেটে বিক্ষোভ মিছিল
বুয়েটে ছাত্র আবরার ফাহাদের হত্যার প্রতিবাদে সিলেটে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল করেছে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজের শিক্ষার্থীরা। মঙ্গলবার দুপুর ১২ টায় নগরের চৌহাট্টাস্থ কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার প্রাঙ্গনে এ মানববন্ধনের আয়োজন করে কোটা সংস্কার আন্দোলনের মাধ্যমে গড়ে উঠা সংগঠন বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ। সংগঠনের সিলেট বিভাগীয় প্রধান সমন্বয়ক মো. নাসির উদ্দিনের সভাপতিত্বে ও যুগ্ম আহবায়ক নোমান হোসেন খন্দকারের পরিচালনায় মানববন্ধনে বক্তরা বলেন, আবরার হত্যার পেছনে ছাত্রলীগের অতিমাত্রায় ভারতপ্রেম প্রেরণা জুগিয়েছে। ভারতের সঙ্গে কয়েক’টি দেশবিরোধী চুক্তির সমালোচনা করায় আবরারকে হত্যা করা হয়েছে। এই রাষ্ট্র জনগণের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হয়েছে। বক্তারা অভিযোগ করে বলেন, ভারত বাংলাদেশের কাছ থেকে বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা নিলেও বাংলাদেশকে তার ন্যায্য হিস্যা দিচ্ছে না। ভারত আমাদের তিস্তার পানি দিচ্ছে না অথচ ফেনি নদীর পানি নিয়ে যাচ্ছে। ভারতের দু’টি রাজ্য যখন কোনো বিনিময় ছাড়া একে-অপরকে কিছু দিতে রাজি হয় না, সেখানে বাংলাদেশ কোনো বিনিময় ছাড়া ভারতকে আমাদের সমস্ত সম্পদ তুলে দিচ্ছে।’ একদিকে জনগণ বাসাবাড়িতে গ্যাস পাচ্ছে না অন্যদিকে ভারতে গ্যাস বিক্রি করা হচ্ছে। ভারত সীমান্তে নিরপরাধ বাংলাদেশি হত্যা করছে। এই সরকার জনগণকে প্রতিনিধিত্ব করে না তাই জনগণের অধিকার আদায়ে সচেতন নয়। ৩০শে ডিসেম্বর দেশের জনগণ ভোট দিতে পারেনি। মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন- বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ সিলেট বিভাগীয় সমন্বয় কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক নাজমুস সাকিব, আল মামুন সুজন, এসএম মনসুর, তাহসান খান, সালমান হোসেন, আলী হোসেন, ইমরান খান ও সাবিনা সেবিন প্রমুখ। মানববন্ধন শেষে বিক্ষোভ মিছিল নগরের চৌহাট্টা থেকে শুরু হয়ে কোর্ট পয়েন্টে গিয়ে শেষ হয়।
কুমিল্লায় বিক্ষোভ
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) এর শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদকে হত্যার প্রতিবাদে কুমিল্লায় বিক্ষোভ মিছিল করেছে শিক্ষার্থীরা। মঙ্গলবার সকাল দশটায় কুমিল্লা নগরীর টাউনহল থেকে মিছিল শুরু করে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়, কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা উপস্থিত ছিল। এসময় শিক্ষার্থীদের স্লোগানে মুখরিত হয়ে উঠে কুমিল্লা নগরী।
নোয়াখালী
বুয়েটের আবরার ফাহাদ হত্যার বিচার দাবিতে নোয়াখালী টাউন হল মোড়ে সকাল ১০টায় সাধারণ শিক্ষার্থীদের মানববন্ধনে পুলিশ বাধা দেয়। এ সময় তাদের ধাওয়া করে লাঠিচার্জ করার চেষ্টা চালিয়ে ছত্রভঙ্গ করে দেয় পুলিশ। পরে সকাল সাড়ে ১০টায় সাধারণ শিক্ষার্থীরা পুলিশের বাধা উপেক্ষা করে পুনরায় নোয়াখালী প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধন-সমাবেশে মিলিত হয়। প্রায় আধা ঘণ্টাব্যপী ওই কর্মসূচিতে বিশ্ববিদ্যালয়, বিভিন্ন কলেজ ও মাদ্রাসার শতাধিক শিক্ষার্থীরা অংশগ্রহণ করেন। এ সময় তারা হত্যার প্রতিবাদে ও বিচার দাবীতে নানা স্লোগান দেন। এ সময় একাধিক শিক্ষার্থী বক্তব্য রাখেন, তারা আবরার হত্যায় জড়িতদের গ্রেপ্তার এবং দ্রুত বিচার আইনে শাস্তি নিশ্চিত করার দাবী জানান।
খুলনা
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদকে পিটিয়ে হত্যার প্রতিবাদে খুলনায় মানববন্ধন কর্মসূচি ও বিক্ষোভ করেছে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা। মঙ্গলবার বেলা ১২টায় নগরীর শিববাড়ী মোড়ে ‘আগুয়ান-৭১’ নামের একটি সংগঠন?ের ব্যানারে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা এ কর্মসূচি পালন করে। এ সময় শিক্ষার্থীরা বাক স্বাধীনতার দাবিসহ বুয়েট ছাত্র আবরার হত্যার প্রতিবাদে বিভিন্ন স্লোগান খচিত প্ল্যাকার্ড বহন করে। কেউ কেউ প্রতিকী আবরার সেজে মানববন্ধনে অংশ নেয়।
ইবি শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ
বুয়েট শিক্ষার্থী ফাহাদকে নির্মমভাবে হত্যার প্রতিবাদে আন্দোলনে নেমেছে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। মঙ্গলবার তিন দফা দাবিতে ২য় দিনের মত প্রতিবাদ মিছিল ও বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে তারা। এসময় ব্যাপক পুলিশ মোতায়েন করে মেইন গেট আটকে রাখায় মহাসড়কে যেতে পারেনি বিক্ষুব্ধরা। বিকেল ৪টায় জিয়া মোড় থেকে প্রতিবাদ মিছিল শুরু করে সাধারণ শিক্ষার্থীরা। তারা পুরো ক্যাম্পাস প্রদক্ষিণ করে প্রধান ফটকে বিক্ষোভ সমাবেশ করে।
নারায়ণগঞ্জ
বুয়েট শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদ হত্যার বিচারের দাবিতে নারায়ণগঞ্জে পৃথক ভাবে বিক্ষোভ সমাবেশ ও মিছিল এবং মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে। মঙ্গলবার সকালে প্রথমে নারায়ণগঞ্জের সর্বস্তরের সাধারণ শিক্ষার্থীদের ব্যানারে নগরের চাষাঢ়া শহীদ মিনারের সামনে মানববন্ধন এবং এরপর প্রগতিশীল ছাত্র জোটের ব্যানারে একই স্থানে বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
প্রগতিশীল ছাত্র জোটের সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন প্রগতিশীল ছাত্র জোট নারায়ণগঞ্জ জেলার সমন্বয়ক ও সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট নারায়ণগঞ্জ জেলার সভাপতি সুলতানা আক্তার। বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন নারায়ণগঞ্জ জেলা সংসদের সভাপতি সুমাইয়া সেতু, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট নারায়ণগঞ্জ জেলার সাধারণ সম্পাদক বেলাল হোসাইন, বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন নারায়ণগঞ্জ জেলা সংসদের সাংগঠনিক সম্পাদক শুভ বনিক।
No comments