এমন মৃত্যুতে হতভম্ব ভৈরব by রুদ্র মিজান
শোকে
ভারি হয়ে উঠেছে কর্মব্যস্ত ভৈরবের বাতাস। মেঘনা নদীর তীরে অবস্থিত
কিশোরগঞ্জের এই মফস্বল শহরের মানুষ হতভম্ব। সবার চোখে-মুখে নানা জিজ্ঞাসা।
এই এলাকার একটি পরিবারের করুণ পরিণতি, তিন সদস্যের চাঞ্চল্যকর মৃত্যু মেনে
নিতে পারছেন না তারা। ঢাকার উত্তরখানের বাসায় মা, মেয়ে ও ছেলের মৃত্যুকে
রহস্যময় হিসেবে দেখছেন ভৈরবের মানুষ। শোকাচ্ছন্ন নিহতের স্বজনরা। এই মৃত্যু
কোনোভাবেই মেনে নিতে পারছেন না তারা। প্রতিবেশী, স্বজনরা জানিয়েছেন
পরিবারের কর্তা ইকবাল হোসেনের মৃত্যুর পর আত্মীয়-স্বজনরা পাশে দাঁড়িয়েছিলেন
পরিবারটির। তারা ক্রমশ দুরে চলে গেলে হতাশ হয়ে যান মা ও ছেলে।
আমলাতান্ত্রিক জটিলতার কারণে বাবার পেনশনের টাকা উত্তোলন করতে পদে পদে
বাধার মুখোমুখি হওয়া, অসুস্থ বোনকে নিয়ে ভোগান্তি, আর্থিক সঙ্কটে পড়ে
দিশেহারা ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাশ করা মুহিব হাসান রশ্মি ও তার মা
জাহানারা বেগম মুক্তা। আর্থিক সঙ্কটের কারণেই ঢাকা ছেড়ে চলে গিয়েছিলেন
গ্রামে। পৈত্রিক জায়গায় বাসা বানিয়ে থাকতে চেয়েছিলেন রশ্মি। এ নিয়ে দৌড়ঝাঁপ
করেছেন। চাচাদের গুরুত্বহীনতার কারণে সেটাও দীর্ঘসূত্রিতায় পড়ে যায়।
গতকাল দিনভর ভৈরব শহর ও নিহতদের বাড়ি পৌরশহরের জগন্নাথপুরের উত্তরপাড়ার লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে নানা তথ্য। ঢাকা সিলেট-মহাসড়কের পাশে অবস্থিত ভৈরব শহরে পা দিতেই দেখা গেলো অনেকের দৃষ্টি পত্রিকার পাতায় ছাপা হওয়া নিহত মা, মেয়ে ও ছেলের ছবি-সংবাদে। সংবাদকর্মী পরিচয় পেতেই তাদের জিজ্ঞাসা, তিন জনের মৃত্যুর কারণ কি, এভাবে কেন আত্মহত্যা করবে তারা, কিভাবে সম্ভব? এরকম নানা প্রশ্ন। পিচঢালা সড়ক দিয়ে লক্ষীপুর পেরিয়ে জগন্নাথপুরের উত্তরপাড়ার ফকির বাড়ি মসজিদ। মসজিদের সামনে, পথে পথে মানুষের জটলা।
আলোচনার বিষয় অভিন্ন। মসজিদের পেছনেই মুহিব হাসান রশ্মির বাবা ও চাচাদের বাড়ি। তিন শতাংশ জায়গাতে চার কক্ষের একটা পাকা ঘর। এই বাড়িতেই মা ও বোনকে নিয়ে আশ্রয় চেয়েছিলেন রশ্মি। কিন্তু চাচারা দেই-দিচ্ছি করে সময় নিচ্ছিলেন। কেন তিনি ঢাকা থেকে গ্রামে যেতে চেয়েছিলেন এই প্রশ্নের জবাব খুঁজতে গিয়ে জানা গেছে, পল্লী উন্নয়ন বোর্ডের রুরাল ডেভেলপমেন্ট অফিসার ইকবাল হোসেনের ছেলে মুহিব হাসান রশ্মি লেখাপড়া করতেন সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে। বুদ্ধিপ্রতিবন্ধি মেয়ে আফিয়া সুলতানা মিম ও স্ত্রী জাহানারা বেগমকে নিয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদরে থাকতেন তিনি। ২০১৬ সালে ইকবাল হোসেন মারা যান। তখন সবেমাত্র সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষি অর্থনীতি ও ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগ থেকে অনার্স পাস করেছেন রশ্মি। বন্ধুদের কাছে রশি নামে পরিচিত রশ্মি ক্যাম্পাসে সাংস্কৃতিক কর্মী ও বিতার্কিক হিসেবে পরিচিত ছিলেন। বাবার মৃত্যুর পর তাদের সহযোগিতায় এগিয়ে যান মামা ও খালারা। ঢাকার কাফরুলে রশ্মির খালা রওশন আরা বেগমের বাসার পাশে একটি ভাড়া বাসায় উঠেন তারা।
ওই সময়ে বাসা ভাড়াসহ এই পরিবারের যাবতীয় আর্থিক যোগান দিচ্ছিলেন রশ্মির আমেরিকা প্রবাসী মামা মনিরুল হক, মোসলেহ উদ্দিন আহমদ ও খালা রওশন আরা বেগম। এরমধ্যেই গত বছরে বিইউপি থেকে এমবিএ করেন রশ্মি। এরমধ্যেই আমেরিকা থেকে দেশে ফিরেন মামা মনিরুল হক। ধীরে ধীরে আর্থিক সঙ্কট দেখা দেয়। আর্থিক সঙ্কটের কারণেই ঢাকার কাফরুলের বাসা ছেড়ে ভৈরবে গ্রামের বাড়িতে চলে যান তারা। এ বিষয়ে রশ্মির মামা মনিরুল ইসলাম বলেন, সবসময়ই আমরা বোন জাহানারার পরিবারকে আর্থিক সাপোর্ট দিয়েছি। কিন্তু বোনের বুদ্ধিপ্রতিবন্ধি মেয়ে আফিয়া সুলতানা মীমের কারণে সবসময় মানসিক চাপের মধ্যে ছিলো জাহানারা ও ভাগ্নে রশ্মি। তিনি জানান, কাফরুলের বাসার প্রতিবেশীরা প্রায়ই অভিযোগ করতো। অনেক সময় অযথা পাশের ফ্ল্যাটের কলিংবেল চাপতো, বাচ্চাদের সঙ্গে খারাপ আচরণ করতো, মীমকে সামলাতে গিয়ে তার মা ও ভাইকে হিমশিম খেতো হতো। এজন্য মানুষের নানা কটুকথা শুনতে হতো। মনিরুল ইসলাম বলেন, তাছাড়া আমরা যতোই আর্থিক সহযোগিতা করি একটা সঙ্কটতো ছিলোই।
তিনি জানান, রশ্মির পিতার পেনশন উত্তোলন নিয়ে জটিলতা রয়েছে। পেনশন উঠাতে পারেনি। দীর্ঘদিন পল্লী উন্নয়ন বোর্ডে, দেশের বিভিন্ন অফিসে দৌড়ঝাঁপ করেছে মুহিব হাসান রশ্মি। তার বাবা ইকবাল হোসেন পল্লী উন্নয়ন বোর্ডের ঋণ প্রদান সংক্রান্ত দায়িত্বে ছিলেন। তার দেয়া অনেক ঋণ আদায় হয়নি। তাই বিভাগীয় মামলা ছিলো। এসব কারণে পেনশন উত্তোলন করতে জটিলতার সৃষ্টি হয়। পল্লী উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা জানিয়েছিলেন, তার পেনশনের প্রায় অর্ধেক টাকা কর্তন করে রাখা হবে। সবকিছু মিলিয়ে হতাশ ছিলেন রশ্মি ও তার মা। এই অবস্থাতেই গত মার্চ মাসে ভৈরবে নিজেদের বাড়ির পাশে মা ও বোনকে নিয়ে একটা ভাড়া বাসায় উঠেন রশ্মি। বাসার মালিক সারোয়ার মাহমুদ মুকুল জানান, তিন তলা ভবনের নিচ তলার ফ্ল্যাট ভাড়া নেন রশ্মি। চার রুম ও তিন বাথরুমের ওই ফ্ল্যাটের ভাড়া ছিল সাড়ে ৭ হাজার টাকা।
নিজ বাড়িতে না উঠে ভাড়া বাসায় উঠার কারণ সম্পর্কে জানা গেছে, তিন শতাংশ জায়গার মধ্যে একটি চার কক্ষের ঘর। ওই ঘরে থাকেন রশ্মির দুই চাচার পরিবার। বাড়িটির মালিক রশ্মির বাবাসহ তিন চাচা। তার বড় চাচা সাবেক ব্যাংক কর্মকর্তা সুলতান আহমেদ কোরেশী থাকেন ঢাকায়। বাকি দুই ভাই বিদেশ ফেরত আশরাফুল আলম ও একটি বেসরকারি মেডিকেলের কর্মচারী আহসান উল্লাহ পরিবার নিয়ে থাকেন ওই বাড়িতে। এই বাড়ি ছাড়া তাদের পৈত্রিক আর কোনো সম্পত্তি নেই। এই বাড়িতে থাকতে চেয়েছিলেন রশ্মি। এজন্য ভাগ-বাটোয়ারা করতে চেয়েছিলেন। চাচারা দেই-দিচ্ছি করে সময় অতিবাহিত করেন। রশ্মি দ্বারস্থ হন স্থানীয় মুরুব্বি ও আত্মীয় রইছ উদ্দিনের। রইছ উদ্দিন জানান, এ নিয়ে রশ্মির চাচাদের সঙ্গে কথা বলেছিলেন তিনি। তার বড় চাচা সুলতান আহমেদ জানিয়েছিলেন ঈদের সময় বাড়িতে এসে ভাগ-বাটোয়ারা করবেন। সুলতান আহমেদ কোরেশী জানান, সবাই মিলে এখানে দু’তলা করার ইচ্ছে ছিলো তার। কিন্তু ঈদের আগেই এমন হৃদয়বিদারক ঘটনা ঘটবে তা কল্পনাও করতে পারেননি তারা।
দুই মাসের মধ্যেই ভৈরবের ওই বাসা ছেড়ে মা-বোনকে নিয়ে ঢাকার উত্তরখানে বাসা নেন রশ্মি। রশ্মির মামা মনিরুল হক জানান, উত্তরখানের ময়নারটেক এলাকায় পিতা-মাতার নামে সাড়ে চার কাঠা জমি রয়েছে। উত্তরাধিকার সূত্রে ওই জমির মালিক রশ্মির মা জাহানারাসহ তারা চার ভাই-বোন। জাহানারা তাকে বলেছিলেন, মফস্বলে থাকা সম্ভব না। ঢাকাতেই থাকতে হবে। এজন্য ওই জমিতে টিনশেড ঘর তৈরি করতে চান তিনি। যদি বাকি তিন ভাই-বোন আপত্তি না দেন। টিনশেড ঘর তৈরি করতে অনুমতি দিয়েছিলেন তারা। কথা ছিলো রমজানের মধ্যেই এ বিষয়ে বৈঠক করবেন জাহানারার সঙ্গে। কিন্তু তার আগেই সব শেষ হয়ে গেছে। ঘর তৈরি করার প্রস্তুতি নিয়ে কেন তার বোন, বোনের ছেলে-মেয়ে আত্মহত্যা করবে তা বুঝতে পারছেন না মনিরুল হক। একই কথা জানান ভৈরবের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ। তাদের সবার প্রশ্ন, সম্ভাবনাময় একটি তরুণ ছেলে থাকতে কেন তাদের মরতে হবে। একই পরিবারের তিনজনের করুণ মৃত্যুর ঘটনায় শোকে ভারী উঠেছে মেঘনা নদীর তীরের এই শহর।
গত রোববার রাতে উত্তরখানের বাসা থেকে তিন জনের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। ঢাকা মেডিকেলের ফরেনসিক বিভাগের চিকিৎসকরা জানান, মা ও মেয়েকে শ্বাসরুদ্ধ ও ছেলেকে গলা কেটে হত্যা করা হয়েছে।
গতকাল দিনভর ভৈরব শহর ও নিহতদের বাড়ি পৌরশহরের জগন্নাথপুরের উত্তরপাড়ার লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে নানা তথ্য। ঢাকা সিলেট-মহাসড়কের পাশে অবস্থিত ভৈরব শহরে পা দিতেই দেখা গেলো অনেকের দৃষ্টি পত্রিকার পাতায় ছাপা হওয়া নিহত মা, মেয়ে ও ছেলের ছবি-সংবাদে। সংবাদকর্মী পরিচয় পেতেই তাদের জিজ্ঞাসা, তিন জনের মৃত্যুর কারণ কি, এভাবে কেন আত্মহত্যা করবে তারা, কিভাবে সম্ভব? এরকম নানা প্রশ্ন। পিচঢালা সড়ক দিয়ে লক্ষীপুর পেরিয়ে জগন্নাথপুরের উত্তরপাড়ার ফকির বাড়ি মসজিদ। মসজিদের সামনে, পথে পথে মানুষের জটলা।
আলোচনার বিষয় অভিন্ন। মসজিদের পেছনেই মুহিব হাসান রশ্মির বাবা ও চাচাদের বাড়ি। তিন শতাংশ জায়গাতে চার কক্ষের একটা পাকা ঘর। এই বাড়িতেই মা ও বোনকে নিয়ে আশ্রয় চেয়েছিলেন রশ্মি। কিন্তু চাচারা দেই-দিচ্ছি করে সময় নিচ্ছিলেন। কেন তিনি ঢাকা থেকে গ্রামে যেতে চেয়েছিলেন এই প্রশ্নের জবাব খুঁজতে গিয়ে জানা গেছে, পল্লী উন্নয়ন বোর্ডের রুরাল ডেভেলপমেন্ট অফিসার ইকবাল হোসেনের ছেলে মুহিব হাসান রশ্মি লেখাপড়া করতেন সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে। বুদ্ধিপ্রতিবন্ধি মেয়ে আফিয়া সুলতানা মিম ও স্ত্রী জাহানারা বেগমকে নিয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদরে থাকতেন তিনি। ২০১৬ সালে ইকবাল হোসেন মারা যান। তখন সবেমাত্র সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষি অর্থনীতি ও ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগ থেকে অনার্স পাস করেছেন রশ্মি। বন্ধুদের কাছে রশি নামে পরিচিত রশ্মি ক্যাম্পাসে সাংস্কৃতিক কর্মী ও বিতার্কিক হিসেবে পরিচিত ছিলেন। বাবার মৃত্যুর পর তাদের সহযোগিতায় এগিয়ে যান মামা ও খালারা। ঢাকার কাফরুলে রশ্মির খালা রওশন আরা বেগমের বাসার পাশে একটি ভাড়া বাসায় উঠেন তারা।
ওই সময়ে বাসা ভাড়াসহ এই পরিবারের যাবতীয় আর্থিক যোগান দিচ্ছিলেন রশ্মির আমেরিকা প্রবাসী মামা মনিরুল হক, মোসলেহ উদ্দিন আহমদ ও খালা রওশন আরা বেগম। এরমধ্যেই গত বছরে বিইউপি থেকে এমবিএ করেন রশ্মি। এরমধ্যেই আমেরিকা থেকে দেশে ফিরেন মামা মনিরুল হক। ধীরে ধীরে আর্থিক সঙ্কট দেখা দেয়। আর্থিক সঙ্কটের কারণেই ঢাকার কাফরুলের বাসা ছেড়ে ভৈরবে গ্রামের বাড়িতে চলে যান তারা। এ বিষয়ে রশ্মির মামা মনিরুল ইসলাম বলেন, সবসময়ই আমরা বোন জাহানারার পরিবারকে আর্থিক সাপোর্ট দিয়েছি। কিন্তু বোনের বুদ্ধিপ্রতিবন্ধি মেয়ে আফিয়া সুলতানা মীমের কারণে সবসময় মানসিক চাপের মধ্যে ছিলো জাহানারা ও ভাগ্নে রশ্মি। তিনি জানান, কাফরুলের বাসার প্রতিবেশীরা প্রায়ই অভিযোগ করতো। অনেক সময় অযথা পাশের ফ্ল্যাটের কলিংবেল চাপতো, বাচ্চাদের সঙ্গে খারাপ আচরণ করতো, মীমকে সামলাতে গিয়ে তার মা ও ভাইকে হিমশিম খেতো হতো। এজন্য মানুষের নানা কটুকথা শুনতে হতো। মনিরুল ইসলাম বলেন, তাছাড়া আমরা যতোই আর্থিক সহযোগিতা করি একটা সঙ্কটতো ছিলোই।
তিনি জানান, রশ্মির পিতার পেনশন উত্তোলন নিয়ে জটিলতা রয়েছে। পেনশন উঠাতে পারেনি। দীর্ঘদিন পল্লী উন্নয়ন বোর্ডে, দেশের বিভিন্ন অফিসে দৌড়ঝাঁপ করেছে মুহিব হাসান রশ্মি। তার বাবা ইকবাল হোসেন পল্লী উন্নয়ন বোর্ডের ঋণ প্রদান সংক্রান্ত দায়িত্বে ছিলেন। তার দেয়া অনেক ঋণ আদায় হয়নি। তাই বিভাগীয় মামলা ছিলো। এসব কারণে পেনশন উত্তোলন করতে জটিলতার সৃষ্টি হয়। পল্লী উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা জানিয়েছিলেন, তার পেনশনের প্রায় অর্ধেক টাকা কর্তন করে রাখা হবে। সবকিছু মিলিয়ে হতাশ ছিলেন রশ্মি ও তার মা। এই অবস্থাতেই গত মার্চ মাসে ভৈরবে নিজেদের বাড়ির পাশে মা ও বোনকে নিয়ে একটা ভাড়া বাসায় উঠেন রশ্মি। বাসার মালিক সারোয়ার মাহমুদ মুকুল জানান, তিন তলা ভবনের নিচ তলার ফ্ল্যাট ভাড়া নেন রশ্মি। চার রুম ও তিন বাথরুমের ওই ফ্ল্যাটের ভাড়া ছিল সাড়ে ৭ হাজার টাকা।
নিজ বাড়িতে না উঠে ভাড়া বাসায় উঠার কারণ সম্পর্কে জানা গেছে, তিন শতাংশ জায়গার মধ্যে একটি চার কক্ষের ঘর। ওই ঘরে থাকেন রশ্মির দুই চাচার পরিবার। বাড়িটির মালিক রশ্মির বাবাসহ তিন চাচা। তার বড় চাচা সাবেক ব্যাংক কর্মকর্তা সুলতান আহমেদ কোরেশী থাকেন ঢাকায়। বাকি দুই ভাই বিদেশ ফেরত আশরাফুল আলম ও একটি বেসরকারি মেডিকেলের কর্মচারী আহসান উল্লাহ পরিবার নিয়ে থাকেন ওই বাড়িতে। এই বাড়ি ছাড়া তাদের পৈত্রিক আর কোনো সম্পত্তি নেই। এই বাড়িতে থাকতে চেয়েছিলেন রশ্মি। এজন্য ভাগ-বাটোয়ারা করতে চেয়েছিলেন। চাচারা দেই-দিচ্ছি করে সময় অতিবাহিত করেন। রশ্মি দ্বারস্থ হন স্থানীয় মুরুব্বি ও আত্মীয় রইছ উদ্দিনের। রইছ উদ্দিন জানান, এ নিয়ে রশ্মির চাচাদের সঙ্গে কথা বলেছিলেন তিনি। তার বড় চাচা সুলতান আহমেদ জানিয়েছিলেন ঈদের সময় বাড়িতে এসে ভাগ-বাটোয়ারা করবেন। সুলতান আহমেদ কোরেশী জানান, সবাই মিলে এখানে দু’তলা করার ইচ্ছে ছিলো তার। কিন্তু ঈদের আগেই এমন হৃদয়বিদারক ঘটনা ঘটবে তা কল্পনাও করতে পারেননি তারা।
দুই মাসের মধ্যেই ভৈরবের ওই বাসা ছেড়ে মা-বোনকে নিয়ে ঢাকার উত্তরখানে বাসা নেন রশ্মি। রশ্মির মামা মনিরুল হক জানান, উত্তরখানের ময়নারটেক এলাকায় পিতা-মাতার নামে সাড়ে চার কাঠা জমি রয়েছে। উত্তরাধিকার সূত্রে ওই জমির মালিক রশ্মির মা জাহানারাসহ তারা চার ভাই-বোন। জাহানারা তাকে বলেছিলেন, মফস্বলে থাকা সম্ভব না। ঢাকাতেই থাকতে হবে। এজন্য ওই জমিতে টিনশেড ঘর তৈরি করতে চান তিনি। যদি বাকি তিন ভাই-বোন আপত্তি না দেন। টিনশেড ঘর তৈরি করতে অনুমতি দিয়েছিলেন তারা। কথা ছিলো রমজানের মধ্যেই এ বিষয়ে বৈঠক করবেন জাহানারার সঙ্গে। কিন্তু তার আগেই সব শেষ হয়ে গেছে। ঘর তৈরি করার প্রস্তুতি নিয়ে কেন তার বোন, বোনের ছেলে-মেয়ে আত্মহত্যা করবে তা বুঝতে পারছেন না মনিরুল হক। একই কথা জানান ভৈরবের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ। তাদের সবার প্রশ্ন, সম্ভাবনাময় একটি তরুণ ছেলে থাকতে কেন তাদের মরতে হবে। একই পরিবারের তিনজনের করুণ মৃত্যুর ঘটনায় শোকে ভারী উঠেছে মেঘনা নদীর তীরের এই শহর।
গত রোববার রাতে উত্তরখানের বাসা থেকে তিন জনের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। ঢাকা মেডিকেলের ফরেনসিক বিভাগের চিকিৎসকরা জানান, মা ও মেয়েকে শ্বাসরুদ্ধ ও ছেলেকে গলা কেটে হত্যা করা হয়েছে।
No comments