ভূমধ্যসাগর ট্র্যাজেডি: দুই নৌকায় জোর করে তোলা হয় ১৩০ বাংলাদেশিকে
ভূমধ্যসাগরে
অভিবাসন প্রত্যাশীদের নৌকাডুবির ঘটনায় লোমহর্ষক তথ্য পেয়েছে বাংলাদেশ
দূতাবাস। সেখানে ১৩০ জন বাংলাদেশি ছিলেন। ইতালি নিয়ে যাওয়ার উদ্দেশ্যে
লিবিয়া উপকূল থেকে দালালরা তাদের ট্রলারে করে নিলেও মাঝ দরিয়ায় ছোট্ট দুটি
নৌকায় জবরদস্তি করে তাদের তুলে ছেড়ে দেয়। দালাল চক্রের বন্দি শিবিরে মাসের
পর মাস বর্বর নির্যাতন সহ্যকারী বাংলাদেশিসহ প্রায় ১৫০ জন অভিবাসন
প্রত্যাশীকে ওই দুটি নৌকায় চড়তে বাধ্য করা হয়। প্রথম নৌকাটি নিরাপদে ইতালী
পৌঁছালেও দ্বিতীয় নৌকাটিতে ৭০-৮০ জনকে গাদাগাদি করে তুলে দেয়ার ১০ মিনিটের
মধ্যেই তা উল্টে যায়। ডুবে যাওয়া নৌকায় ঠিক কতজন বাংলাদেশি ছিলেন সেটি কেউ
নিশ্চিত করে বলতে পারেনি জানিয়ে ত্রিপলির বাংলাদেশ দূতাবাস ঢাকায় রিপোর্ট
পাঠিয়েছে।
রাষ্ট্রদূত শেখ সেকান্দার আলী স্বাক্ষরিত ওই রিপোর্টে বলা হয়- এটা নিশ্চিত যে ডুবে যাওয়া নৌকার বেশীর ভাগই ছিলেন বাংলাদেশি। তারা জীবন বাঁচাতে প্রায় সকলেই সাঁতার কেঁটে, হাতের কাছে যে যা পেয়েছেন তা ধরেই ভেসে থাকার প্রাণপণ চেষ্টা করেন। কেউ তেলের ড্রাম, কেউবা ডুবন্ত নৌকার কিনারা ধরে ভেসে ছিলেন। রাত থেকে পরদিন ভোর অবধি ৭-৮ঘন্টা পর্যন্ত যারা টিকতে পেরেছেন তাদেরকে তিউনিসিয়ার জেলেরা উদ্ধার করেছেন। জীবিত অবস্থায় উদ্ধার হয়েছেন ১৬ জন, যার ১৪ জনই বাংলাদেশি। জেলেরা একটি মৃতদেহ উদ্ধার করেছেন, তিনিও বাংলাদেশি। রাষ্ট্রদূতের রিপোর্ট পাওয়ার পর পররাষ্ট্র মন্ত্রী ড. একে আবদুল মোমন জানিয়েছেন, ওই ঘটনায় এখন পর্যন্ত ৩৯ বাংলাদেশি নিখোঁজ রয়েছেন। তারা মারা গেছেন এবং সাগর বুকেই তাদের সলিল সমাধি হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। জীবিতদের কাছ থেকে প্রাপ্ত তথ্য মতে নিহত ওই ৩৯ বাংলাদেশির তালিকা তৈরি করা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, পরিস্থিতির কারণে দূতাবাস ওই তালিকা ভেরিফাই করতে পারেনি। পররাষ্ট্রমন্ত্রী আরও বলেন, জীবিত উদ্ধার হওয়া ১৪ বাংলাদেশির মধ্যে চার জনের অবস্থা গুরুতর। তারা তিউনিসিয়ার জার্জিস হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। বাকি ১০ জন তিউনিসিয়ার রেড ক্রিসেন্ট ক্যাম্পে রয়েছেন।
দালাল চক্রের বিষয়ে জীবিতদের কাছ থেকে দূতাবাস যে তথ্য পেয়েছে তার সূত্র ধরে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. মোমেন বলেন, নোয়াখালীর তিন ভাইয়ের একটি চক্র এবং সিলেটের বিভিন্ন ফ্রড (প্রতারক) ট্রাভেল এজেন্সিগুলোর প্রতারণার তথ্য পেয়েছেন তারা। ওই দালাল প্রতারক চক্রের সদস্যদের আইনের আওতায় নিয়ে আসা এবং তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার অঙ্গীকার করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, সিলেটে ২৩টি প্রতারক ট্রাভেল এজেন্টকে চিহ্নিত করা গেছে। পুলিশ অনেকটাই সিলগালা করে দিয়েছে। প্রতারকদের ধরতে অভিযান চলছে। মন্ত্রী বলেন, ‘উদ্ধার হওয়া বাংলাদেশিদের কাছ থেকে জানা গেছে, ওই ভিকটিমদের চার থেকে ছয় মাস আগে দুবাই হয়ে মিশরের আলেকজান্দ্রিয়া নিয়ে যাওয়া হয়। এতে মোটা অংকের অর্থ হাতিয়ে নেয় দালালরা। একেক জনের কাছ থেকে প্রায় ৮ লাখ টাকা করে নেয়া হয়েছে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, লিবিয়ায় দালালদের বন্দি শিবিরে রেখেও বর্বর নির্যাতন চালিয়ে অনেকের কাছ থেকে অতিরিক্ত অর্থ আদায় করা হয়েছে।
মন্ত্রী আরও জানান, নির্যাতন সইতে না পেরে অনেকে প্রদেয় অর্থের মায়া ছেড়ে দেশে ফিরতে চাইতো। কিন্তু দালালরা সেই পথও বন্ধ করে দিয়েছিল। পালাক্রমে ওই বন্দি শিবির পাহারা দিতো। এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, দালাল এবং ট্রাভেল এজেন্টদের প্রতারণার বিষয়টি তিনি আগেও শুনেছেন। কিন্তু বিমান কোম্পানী এবং ইমিগ্রেশন পুলিশের সম্পৃক্ততার বিষয়টি তার কাছে নতুন লাগছে। ১ কোটি ২০ লাখ বাংলাদেশি বিদেশে থাকেন। কত লোক আসা যাওয়া করেন। ইমিগ্রেশন পুলিশকেই সব সামলাতে হয়। ফলে এতে তাদের দায় কতটা সেটি বিশ্লেষণের বিষয়-এমনটাই মনে করেন মন্ত্রী। তবে তিনি বলেন, দায় সবার। তিনি নিজেও এ দায় থেকে মুক্ত নন। মন্ত্রী জোর দেন সবার সচেতনতার ওপর। গণমাধ্যমকে এ নিয়ে আরও সচেতনতা তৈরির পরামর্শ দেন। জীবিত বা মৃত উদ্ধার হওয়া বাংলাদেশিদের দেশে ফেরত আনার বিষয়ে মন্ত্রী বলেন, একজনের মরদেহ বাংলাদেশি বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে। তার নাম উত্তম কুমার দাস। শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলার ভূমকাড়া (পোস্ট অফিস চকদা বাজার) গ্রামের গৌতম দাসের ছেলে তিনি। তার ভাইকে ছবি পাঠানোর পর তিনি শনাক্ত করেছেন। তার লাশ দেশে ফেরানোর প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। জীবিতরা চাইলে তাদের বিষয়ে আরও খোজ খবর নিয়ে ফেরানো হবে।
‘নিখোঁজ’ ৩৯ বাংলাদেশির ২২ জনই সিলেটের: এদিকে দূতাবাসের পাঠানো রিপোর্টের উদ্বৃতি দিয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রী জানিয়েছেন দুর্ভ্যগ্যজনক হলেও সত্য যে সাগরে হারিয়ে যাওয়া ৩৯ বাংলাদেশির ২২ জনের বাড়িই বৃহত্তর সিলেটে। সিলেট-১ আসনের নির্বাচিত সংসদ সদস্য হওয়ার পর পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্ব পাওয়া মোমেন বলেন, দুষ্ট দালাল চক্রের কুবুদ্ধিতে ওই সম্ভাবনাময় তরুণরা প্রাণ হারিয়েছেন। তারা যে টাকা দালালকে দিয়েছেন। ৪ জনের টাকা একত্র করলে ৩২ লাখ টাকা হয়। এই টাকা দিয়ে দেশে ভাল দোকান করা যায়। যৌথ ওই বিনিয়োগে তারা দেশেই ভালভাবে বাঁচতে পারতেন- আফসোস করেন মন্ত্রী। তার দেয়া তথ্য মতে, নিহত সিলেটের ২২ হতভাগা হলেন- আবদুল আজিজ, ফেঞ্চুগঞ্জ, সিলেট; আহমদ ফেঞ্চুগঞ্জ, সিলেট; লিটন আহমেদ, ফেঞ্চুগঞ্জ, সিলেট; খোকন, বিশ্বনাথ, সিলেট; আফজাল হোসেন, গোলাপগঞ্জ, সিলেট; মমিন আহমেদ, বিশ্বনাথ, সিলেট; দিলাল আহমেদ, বিশ্বনাথ, সিলেট; কাশেম, গোলাপগঞ্জ, সিলেট; মৌলানা মাহবুবুর রহমান, সুনামগঞ্জ; জিল্লুর রহমান, বাংলাবাজার, সিলেট; কামরান আহমেদ মারুফ, সিলেট; রুকন আহমেদ, বিশ্বনাথ, সিলেট; নাজির আহমেদ, সুনামগঞ্জ; হাফিজ শামিম আহমেদ, মৌলভীবাজার; আয়াজ আহমেদ, ফেঞ্চুগঞ্জ, সিলেট; ফাহাদ আহমেদ, বড়লেখা, মৌলভীবাজার, সুজন আহমেদ, বিয়ানীবাজার, সিলেট; ইন্দ্রজিত, সিলেট; জুয়েল, বড়লেখা সিলেট (মৌলভীবাজার হওয়ার কথা); মুক্তাদির, হবিগঞ্জ; শোয়েব, বিয়ানীবাজার, সিলেট এবং সাজু, সিলেট।
নিখোঁজ অন্য জেলার বাসিন্দারা হলেন- সাব্বির, ভৈরব, কিশোরগঞ্জ; আলি আকবর, বাগমারা, শিবচর, মাদারীপুর; জাকির হাওলাদার, শিবচর, মাদারীপুর; মনির, শরিয়তপুর; শাহেদ, রাজৈর, মাদারীপুর; নাঈম, রাজৈর, মাদারীপুর; রাজিব, শরীয়তপুর; জালালউদ্দিন, কিশোরগঞ্জ; পারভেজ, শরীয়তপুর; স্বপন, মাদারীপুর; সজল, ভৈরব, কিশোরগঞ্জ; জাহিদ, নরসিংদী; আবদুর রহিম, নোয়াখালী; নাদিম, রাজৈর, মাদারীপুর; নাসির আহমেদ, চাটখালি, নোয়াখালী ও সজিব, মাদারীপুর। উল্লেখ্য, গত ১০ই মে ভূমধ্যসাগরের তিউনিসিয়া উপকূলে শরণার্থীবাহী একটি নৌকাডুবির ঘটনা ঘটে। আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলো আগেই জানিয়েছিল নৌকাটিতে বাংলাদেশি ও মরক্কোর নাগরিকসহ আরো কয়েকটি দেশের শরণার্থী ছিলেন। তাদের বেশীরভাগেরই সলিল সমাধি হয়েছে। তবে নৌকাটিতে ঠিক কতজন বাংলাদেশি বা কোন দেশের কতজন নাগরিক ছিলেন সে সম্পর্কে জীবিতরা সঠিক পরিসংখ্যান দিতে পারেনি। জাতিসংঘের তথ্য মতে, গত জানুয়ারি মাসের পর ভূমধ্যসাগরে এটিই সবচেয়ে ভয়াবহ নৌকাডুবির ঘটনা। জানুয়ারি মাসের ওই নৌকাডুবির ঘটনায় ১১৭ জন নিঁখোজ হয়েছিলেন।
৩ লাশের দিকে চেয়ে আছে গোটা বাংলাদেশ: এদিকে ত্রিপলীর বাংলাদেশ মিশন জানিয়েছে, তিউনিসিয়া উপকূলে স্ফ্যাক্স শহরে উদ্ধার হওয়া ৩ অভিবাসীর মৃতদেহ রয়েছে। এটি দেখতে গেছেন বাংলাদেশ দূতাবাসের কর্মকর্তারা। ওই লাশগুলো আজ হিমঘর থেকে বের করা হবে। এর মধ্যে এখনও নিখোঁজ ৩৯ বাংলাদেশির কেউ আছেন কি-না? সেদিকেই চেয়ে আছে দূতাবাস, কার্যত গোটা বাংলাদেশ।
রাষ্ট্রদূত শেখ সেকান্দার আলী স্বাক্ষরিত ওই রিপোর্টে বলা হয়- এটা নিশ্চিত যে ডুবে যাওয়া নৌকার বেশীর ভাগই ছিলেন বাংলাদেশি। তারা জীবন বাঁচাতে প্রায় সকলেই সাঁতার কেঁটে, হাতের কাছে যে যা পেয়েছেন তা ধরেই ভেসে থাকার প্রাণপণ চেষ্টা করেন। কেউ তেলের ড্রাম, কেউবা ডুবন্ত নৌকার কিনারা ধরে ভেসে ছিলেন। রাত থেকে পরদিন ভোর অবধি ৭-৮ঘন্টা পর্যন্ত যারা টিকতে পেরেছেন তাদেরকে তিউনিসিয়ার জেলেরা উদ্ধার করেছেন। জীবিত অবস্থায় উদ্ধার হয়েছেন ১৬ জন, যার ১৪ জনই বাংলাদেশি। জেলেরা একটি মৃতদেহ উদ্ধার করেছেন, তিনিও বাংলাদেশি। রাষ্ট্রদূতের রিপোর্ট পাওয়ার পর পররাষ্ট্র মন্ত্রী ড. একে আবদুল মোমন জানিয়েছেন, ওই ঘটনায় এখন পর্যন্ত ৩৯ বাংলাদেশি নিখোঁজ রয়েছেন। তারা মারা গেছেন এবং সাগর বুকেই তাদের সলিল সমাধি হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। জীবিতদের কাছ থেকে প্রাপ্ত তথ্য মতে নিহত ওই ৩৯ বাংলাদেশির তালিকা তৈরি করা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, পরিস্থিতির কারণে দূতাবাস ওই তালিকা ভেরিফাই করতে পারেনি। পররাষ্ট্রমন্ত্রী আরও বলেন, জীবিত উদ্ধার হওয়া ১৪ বাংলাদেশির মধ্যে চার জনের অবস্থা গুরুতর। তারা তিউনিসিয়ার জার্জিস হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। বাকি ১০ জন তিউনিসিয়ার রেড ক্রিসেন্ট ক্যাম্পে রয়েছেন।
দালাল চক্রের বিষয়ে জীবিতদের কাছ থেকে দূতাবাস যে তথ্য পেয়েছে তার সূত্র ধরে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. মোমেন বলেন, নোয়াখালীর তিন ভাইয়ের একটি চক্র এবং সিলেটের বিভিন্ন ফ্রড (প্রতারক) ট্রাভেল এজেন্সিগুলোর প্রতারণার তথ্য পেয়েছেন তারা। ওই দালাল প্রতারক চক্রের সদস্যদের আইনের আওতায় নিয়ে আসা এবং তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার অঙ্গীকার করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, সিলেটে ২৩টি প্রতারক ট্রাভেল এজেন্টকে চিহ্নিত করা গেছে। পুলিশ অনেকটাই সিলগালা করে দিয়েছে। প্রতারকদের ধরতে অভিযান চলছে। মন্ত্রী বলেন, ‘উদ্ধার হওয়া বাংলাদেশিদের কাছ থেকে জানা গেছে, ওই ভিকটিমদের চার থেকে ছয় মাস আগে দুবাই হয়ে মিশরের আলেকজান্দ্রিয়া নিয়ে যাওয়া হয়। এতে মোটা অংকের অর্থ হাতিয়ে নেয় দালালরা। একেক জনের কাছ থেকে প্রায় ৮ লাখ টাকা করে নেয়া হয়েছে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, লিবিয়ায় দালালদের বন্দি শিবিরে রেখেও বর্বর নির্যাতন চালিয়ে অনেকের কাছ থেকে অতিরিক্ত অর্থ আদায় করা হয়েছে।
মন্ত্রী আরও জানান, নির্যাতন সইতে না পেরে অনেকে প্রদেয় অর্থের মায়া ছেড়ে দেশে ফিরতে চাইতো। কিন্তু দালালরা সেই পথও বন্ধ করে দিয়েছিল। পালাক্রমে ওই বন্দি শিবির পাহারা দিতো। এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, দালাল এবং ট্রাভেল এজেন্টদের প্রতারণার বিষয়টি তিনি আগেও শুনেছেন। কিন্তু বিমান কোম্পানী এবং ইমিগ্রেশন পুলিশের সম্পৃক্ততার বিষয়টি তার কাছে নতুন লাগছে। ১ কোটি ২০ লাখ বাংলাদেশি বিদেশে থাকেন। কত লোক আসা যাওয়া করেন। ইমিগ্রেশন পুলিশকেই সব সামলাতে হয়। ফলে এতে তাদের দায় কতটা সেটি বিশ্লেষণের বিষয়-এমনটাই মনে করেন মন্ত্রী। তবে তিনি বলেন, দায় সবার। তিনি নিজেও এ দায় থেকে মুক্ত নন। মন্ত্রী জোর দেন সবার সচেতনতার ওপর। গণমাধ্যমকে এ নিয়ে আরও সচেতনতা তৈরির পরামর্শ দেন। জীবিত বা মৃত উদ্ধার হওয়া বাংলাদেশিদের দেশে ফেরত আনার বিষয়ে মন্ত্রী বলেন, একজনের মরদেহ বাংলাদেশি বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে। তার নাম উত্তম কুমার দাস। শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলার ভূমকাড়া (পোস্ট অফিস চকদা বাজার) গ্রামের গৌতম দাসের ছেলে তিনি। তার ভাইকে ছবি পাঠানোর পর তিনি শনাক্ত করেছেন। তার লাশ দেশে ফেরানোর প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। জীবিতরা চাইলে তাদের বিষয়ে আরও খোজ খবর নিয়ে ফেরানো হবে।
‘নিখোঁজ’ ৩৯ বাংলাদেশির ২২ জনই সিলেটের: এদিকে দূতাবাসের পাঠানো রিপোর্টের উদ্বৃতি দিয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রী জানিয়েছেন দুর্ভ্যগ্যজনক হলেও সত্য যে সাগরে হারিয়ে যাওয়া ৩৯ বাংলাদেশির ২২ জনের বাড়িই বৃহত্তর সিলেটে। সিলেট-১ আসনের নির্বাচিত সংসদ সদস্য হওয়ার পর পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্ব পাওয়া মোমেন বলেন, দুষ্ট দালাল চক্রের কুবুদ্ধিতে ওই সম্ভাবনাময় তরুণরা প্রাণ হারিয়েছেন। তারা যে টাকা দালালকে দিয়েছেন। ৪ জনের টাকা একত্র করলে ৩২ লাখ টাকা হয়। এই টাকা দিয়ে দেশে ভাল দোকান করা যায়। যৌথ ওই বিনিয়োগে তারা দেশেই ভালভাবে বাঁচতে পারতেন- আফসোস করেন মন্ত্রী। তার দেয়া তথ্য মতে, নিহত সিলেটের ২২ হতভাগা হলেন- আবদুল আজিজ, ফেঞ্চুগঞ্জ, সিলেট; আহমদ ফেঞ্চুগঞ্জ, সিলেট; লিটন আহমেদ, ফেঞ্চুগঞ্জ, সিলেট; খোকন, বিশ্বনাথ, সিলেট; আফজাল হোসেন, গোলাপগঞ্জ, সিলেট; মমিন আহমেদ, বিশ্বনাথ, সিলেট; দিলাল আহমেদ, বিশ্বনাথ, সিলেট; কাশেম, গোলাপগঞ্জ, সিলেট; মৌলানা মাহবুবুর রহমান, সুনামগঞ্জ; জিল্লুর রহমান, বাংলাবাজার, সিলেট; কামরান আহমেদ মারুফ, সিলেট; রুকন আহমেদ, বিশ্বনাথ, সিলেট; নাজির আহমেদ, সুনামগঞ্জ; হাফিজ শামিম আহমেদ, মৌলভীবাজার; আয়াজ আহমেদ, ফেঞ্চুগঞ্জ, সিলেট; ফাহাদ আহমেদ, বড়লেখা, মৌলভীবাজার, সুজন আহমেদ, বিয়ানীবাজার, সিলেট; ইন্দ্রজিত, সিলেট; জুয়েল, বড়লেখা সিলেট (মৌলভীবাজার হওয়ার কথা); মুক্তাদির, হবিগঞ্জ; শোয়েব, বিয়ানীবাজার, সিলেট এবং সাজু, সিলেট।
নিখোঁজ অন্য জেলার বাসিন্দারা হলেন- সাব্বির, ভৈরব, কিশোরগঞ্জ; আলি আকবর, বাগমারা, শিবচর, মাদারীপুর; জাকির হাওলাদার, শিবচর, মাদারীপুর; মনির, শরিয়তপুর; শাহেদ, রাজৈর, মাদারীপুর; নাঈম, রাজৈর, মাদারীপুর; রাজিব, শরীয়তপুর; জালালউদ্দিন, কিশোরগঞ্জ; পারভেজ, শরীয়তপুর; স্বপন, মাদারীপুর; সজল, ভৈরব, কিশোরগঞ্জ; জাহিদ, নরসিংদী; আবদুর রহিম, নোয়াখালী; নাদিম, রাজৈর, মাদারীপুর; নাসির আহমেদ, চাটখালি, নোয়াখালী ও সজিব, মাদারীপুর। উল্লেখ্য, গত ১০ই মে ভূমধ্যসাগরের তিউনিসিয়া উপকূলে শরণার্থীবাহী একটি নৌকাডুবির ঘটনা ঘটে। আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলো আগেই জানিয়েছিল নৌকাটিতে বাংলাদেশি ও মরক্কোর নাগরিকসহ আরো কয়েকটি দেশের শরণার্থী ছিলেন। তাদের বেশীরভাগেরই সলিল সমাধি হয়েছে। তবে নৌকাটিতে ঠিক কতজন বাংলাদেশি বা কোন দেশের কতজন নাগরিক ছিলেন সে সম্পর্কে জীবিতরা সঠিক পরিসংখ্যান দিতে পারেনি। জাতিসংঘের তথ্য মতে, গত জানুয়ারি মাসের পর ভূমধ্যসাগরে এটিই সবচেয়ে ভয়াবহ নৌকাডুবির ঘটনা। জানুয়ারি মাসের ওই নৌকাডুবির ঘটনায় ১১৭ জন নিঁখোজ হয়েছিলেন।
৩ লাশের দিকে চেয়ে আছে গোটা বাংলাদেশ: এদিকে ত্রিপলীর বাংলাদেশ মিশন জানিয়েছে, তিউনিসিয়া উপকূলে স্ফ্যাক্স শহরে উদ্ধার হওয়া ৩ অভিবাসীর মৃতদেহ রয়েছে। এটি দেখতে গেছেন বাংলাদেশ দূতাবাসের কর্মকর্তারা। ওই লাশগুলো আজ হিমঘর থেকে বের করা হবে। এর মধ্যে এখনও নিখোঁজ ৩৯ বাংলাদেশির কেউ আছেন কি-না? সেদিকেই চেয়ে আছে দূতাবাস, কার্যত গোটা বাংলাদেশ।
No comments