লিবিয়া-তুরস্কের পথে হাজারো তরুণ by মিলাদ জয়নুল
ইউরোপ
যাওয়ার ট্রানজিট রুট লিবিয়া-তুরস্কের পথ ধরেছে হাজারো তরুণ। স্বপ্নের
ভুবনের হাতছানিতে মুগ্ধ হয়ে এসব তরুণ বাড়ি ছেড়েছে। তাদের কেউ আছে
ঢাকা-চট্টগ্রামে কেউ আছে লিবিয়া-তুরস্কের অদূরে। বিদেশগামী তরুণদের
কিছুসংখ্যক লিবিয়া-তুরস্কে পাড়ি জমানোর জন্য ‘থার্ডকান্ট্রি’তে অবস্থান
করছে। তাদের কারো বাড়িতে চলছে কান্নার রোল, কারো বাড়িতে খুশির জোয়ার। তারা
সবাই ইউরোপে যেতে চায়। যেখানে আছে মোটা টাকা, ইউরো।
প্রবাসী অধ্যুষিত বিয়ানীবাজার উপজেলার মানুষ যে কোনো উপায়ে ইউরোপে যেতে চায়। গত ক’বছর বাংলাদেশ থেকে প্রবাস গমনের হার মাত্রাতিরিক্ত কমে যাওয়ায় এ উপজেলার তরুণরা হতাশ ছিল। তাছাড়া দু’-একটি দেশ ছাড়া মধ্যপ্রাচ্যের ভিসা প্রায় বন্ধ থাকায় তরুণদের মধ্যে বেকারত্ব অনেকটা বেড়ে যায়। এসব দিক বিবেচনায় নিয়ে ক’মাস থেকে লিবিয়া-তুরস্ক হয়ে ইউরোপে পাড়ি জমাচ্ছে হাজারো তরুণ। গত ৬ মাসে বিয়ানীবাজারের অন্তত ৩ শতাধিক যুবক এ দু’টি দেশের ট্রানজিট রুট ব্যবহার করে ইতালি, ফ্রান্স, স্পেন, পর্তুগাল পাড়ি জমিয়েছে। একটি সূত্র জানায়, তাদের যাত্রা শুরু হয় চট্টগ্রাম আমানত শাহ বিমানবন্দর থেকে।
ইতালিতে আশ্রয় নেয়া যুবক নাহিদের কাছ থেকে শুনুন- ‘উত্তাল সমুদ্রে ভাসছে নৌকা। প্রবল ঢেউয়ের তোড়ে নৌকায় পানি উঠতে শুরু করেছে। নৌকা ঘিরে চলছে হাঙ্গর ও ডলফিন। নৌকার মানুষগুলোর মৃত্যু হলেই গিলে ফেলবে হাঙ্গর! ভাগ্য বদলের আশায় লিবিয়ার জোয়ারা উপকূল থেকে অশান্ত সাগরে ভাসছেন বাংলাদেশের রবিউলসহ ৮০ জন। গন্তব্য ইউরোপে পাড়ি জমানো। কিন্তু মৃত্যু এখন তাদের খুব কাছে। ডুবছে নৌকা, সেই নৌকায় সোমালিয়া, ক্যামেরুনের কালো চামড়ার মানুষের ভিড়ে থাকা রবিউলদের কান্না কি শুনতে পাচ্ছে।’
সূত্র জানায়, বর্তমানে অবৈধপথে ইউরোপে যাওয়ার সবচেয়ে উত্তম রাস্তা লিবিয়া অথবা তুরস্কে যেতে একজন তরুণকে দালালদের হাতে তুলে দিতে হয় সাড়ে ৭ থেকে ৮ লাখ টাকা। ‘ট্রানজিট দেশে’ পৌঁছার পর সেখানে কিছুদিন থাকতে হয়। এরপর সাগর পথে প্রথমে ইতালি, তারপর ফ্রান্স কিংবা অন্যান্য দেশে আশ্রয় নিচ্ছে এসব তরুণ। লিবিয়া-তুরস্ক থেকে সাগরপথ পাড়ি দিতে গুনতে হয় আরো লাখ দেড়েক টাকা। ইতালিতে আশ্রয় নেয়া যুবক আলিম উদ্দিন (২৯) জানান, ‘লিবিয়া থেকে শুকনো খাবার সঙ্গে করে তারা দেড়শ’ যুবক একটি জাহাজে করে ইতালির উদ্দেশে রওনা দেন। ইতালির সীমান্তে পৌঁছার পর ছোট ট্রলারে তাদের তুলে দেয়া হয়। এরপর জাতিসংঘের সাহায্যকারী জাহাজগুলো এগিয়ে এসে তাদের উদ্ধার করে ইতালির তীরে নিয়ে যায়। সেখান থেকে বাংলাদেশিরা পালিয়ে নিজের আত্মীয়-স্বজনদের কাছে আশ্রয় নেয়।’ ফ্রান্সে পাড়ি দেয়া জাফর আহমদ (২৮) বলেন, ‘শুকনো খাবার বলতে চিঁড়া, বিস্কুট, মুড়ি ইত্যাদি সঙ্গে রাখতে হয়। সঙ্গে ঠাণ্ডা নিবারণের কাপড়, লাইফ জ্যাকেট রাখা বাধ্যতামূলক।’ মোট ১৩ লাখ টাকায় গত অক্টোবর মাসে ফ্রান্সে আশ্রয় নেন বলে জানান তিনি। লিবিয়া যেতে চট্টগামের একটি হোটেলে থাকা শাহীন জানান- ‘৬ দিন থেকে হোটেলে আছেন। এরমধ্যে দু’দফা তাকে বিমানবন্দরে নেয়া হয়। কিন্তু সবুজ সংকেত না থাকায় ফিরে আসতে হয়েছে। আগামী সপ্তাহে ফের তাকে বিমানবন্দরে নেয়া হবে।’ তিনি বলেন- ‘চট্টগ্রামের বিভিন্ন হোটেলে বিয়ানীবাজারের প্রায় ২ শতাধিক যুবক আশ্রয় নিয়েছে। তারা সবাই লিবিয়া-তুরস্ক হয়ে ইউরোপে যেতে চায়।’
বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, বিয়ানীবাজারের আরও সহস্রাধিক যুবক বেকারত্ব ঘোচাতে লিবিয়া-তুরস্ক হয়ে ইউরোপ পাড়ি জমানোর স্বপ্নে বিভোর। তুরস্কে পাড়ি জমানো সংবাদকর্মী হাসান আহমদ বলেন- ‘সাড়ে ৫ লাখ টাকায় তিনি তুরস্কে পৌঁছেছেন। সেখানে কিছুদিন থাকার পর ইউরোপে যাওয়ার পথ ধরবেন।’ সম্প্রতি সাগরপথে লিবিয়া থেকে ইতালি যাওয়ার পথে চারখাইয়ের এক মাদ্রাসা ছাত্রের সলিল সমাধি হয়েছে। ইতালির সীমান্তে তার লাশ পাওয়া গেলে সেখানকার জাতিসংঘ স্বেচ্ছাসেবক দলের কর্মীরা তার লাশ দাফন করে। আকাখাজানার আশফাক আহমদ বলেন, ‘ইতালিতে যাওয়ার সময় সাগরে ডুবে তার সঙ্গে থাকা সাত যুবক মারা যায়। লিবিয়ায় অবস্থানকালে দালালের অনেক অত্যাচার-নির্যাতন সইতে হয়েছে।’ তিনি বাংলাদেশি তরুণদের এ পথে পা না বাড়ানোর অনুরোধ করেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক আদম ব্যবসায়ী বলেন, ‘গত দু’মাসে তার মাধ্যমে ৪ জন তরুণ লিবিয়া গেছে। আরো কয়েকজন লাইনে আছে। আমি তাদেরকে লিবিয়া পাঠানোর কন্ট্রাক্ট নিয়েছি। বাকি পথ তারা কীভাবে যাবে, তা তিনি জানেন না।’
বিয়ানীবাজার পৌরশহরের ট্রাভেল ওয়েস্টের মালিক হুমায়ুন কবির বলেন- ইউরোপে যেতে অনেক পথ খোলা রয়েছে। তবুও কেন এখানকার তরুণরা অবৈধপথে পা বাড়ায়, তা তার বোধগম্য নয়। তিনি এভাবে বিদেশ পাড়ি না জমাতে সবার প্রতি অনুরোধ করেন। উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান মুফতি শিব্বির আহমদ বলেন, দেশে কর্মসংস্থান কম থাকায় ছেলেরা এভাবে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বিদেশ যাচ্ছে। এ থেকে পরিত্রাণ পেতে হলে দেশে কর্মসংস্থান বাড়াতে হবে। বিয়ানীবাজার থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) অবণী শংকর কর জানান- ‘আসলে আমরা মানবপাচার সিন্ডিকেটের ব্যাপারে সজাগ ও সতর্ক রয়েছি। কোনো তথ্য পেলেই আইনশৃঙ্খলা বাহিনী অভিযান চালায়।’ তিনি বলেন- ‘সব জীবনই আমাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ। আমরা চাই না জীবিকার জন্য কেউ এভাবে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কোথাও পাড়ি জমাক।’
প্রবাসী অধ্যুষিত বিয়ানীবাজার উপজেলার মানুষ যে কোনো উপায়ে ইউরোপে যেতে চায়। গত ক’বছর বাংলাদেশ থেকে প্রবাস গমনের হার মাত্রাতিরিক্ত কমে যাওয়ায় এ উপজেলার তরুণরা হতাশ ছিল। তাছাড়া দু’-একটি দেশ ছাড়া মধ্যপ্রাচ্যের ভিসা প্রায় বন্ধ থাকায় তরুণদের মধ্যে বেকারত্ব অনেকটা বেড়ে যায়। এসব দিক বিবেচনায় নিয়ে ক’মাস থেকে লিবিয়া-তুরস্ক হয়ে ইউরোপে পাড়ি জমাচ্ছে হাজারো তরুণ। গত ৬ মাসে বিয়ানীবাজারের অন্তত ৩ শতাধিক যুবক এ দু’টি দেশের ট্রানজিট রুট ব্যবহার করে ইতালি, ফ্রান্স, স্পেন, পর্তুগাল পাড়ি জমিয়েছে। একটি সূত্র জানায়, তাদের যাত্রা শুরু হয় চট্টগ্রাম আমানত শাহ বিমানবন্দর থেকে।
ইতালিতে আশ্রয় নেয়া যুবক নাহিদের কাছ থেকে শুনুন- ‘উত্তাল সমুদ্রে ভাসছে নৌকা। প্রবল ঢেউয়ের তোড়ে নৌকায় পানি উঠতে শুরু করেছে। নৌকা ঘিরে চলছে হাঙ্গর ও ডলফিন। নৌকার মানুষগুলোর মৃত্যু হলেই গিলে ফেলবে হাঙ্গর! ভাগ্য বদলের আশায় লিবিয়ার জোয়ারা উপকূল থেকে অশান্ত সাগরে ভাসছেন বাংলাদেশের রবিউলসহ ৮০ জন। গন্তব্য ইউরোপে পাড়ি জমানো। কিন্তু মৃত্যু এখন তাদের খুব কাছে। ডুবছে নৌকা, সেই নৌকায় সোমালিয়া, ক্যামেরুনের কালো চামড়ার মানুষের ভিড়ে থাকা রবিউলদের কান্না কি শুনতে পাচ্ছে।’
সূত্র জানায়, বর্তমানে অবৈধপথে ইউরোপে যাওয়ার সবচেয়ে উত্তম রাস্তা লিবিয়া অথবা তুরস্কে যেতে একজন তরুণকে দালালদের হাতে তুলে দিতে হয় সাড়ে ৭ থেকে ৮ লাখ টাকা। ‘ট্রানজিট দেশে’ পৌঁছার পর সেখানে কিছুদিন থাকতে হয়। এরপর সাগর পথে প্রথমে ইতালি, তারপর ফ্রান্স কিংবা অন্যান্য দেশে আশ্রয় নিচ্ছে এসব তরুণ। লিবিয়া-তুরস্ক থেকে সাগরপথ পাড়ি দিতে গুনতে হয় আরো লাখ দেড়েক টাকা। ইতালিতে আশ্রয় নেয়া যুবক আলিম উদ্দিন (২৯) জানান, ‘লিবিয়া থেকে শুকনো খাবার সঙ্গে করে তারা দেড়শ’ যুবক একটি জাহাজে করে ইতালির উদ্দেশে রওনা দেন। ইতালির সীমান্তে পৌঁছার পর ছোট ট্রলারে তাদের তুলে দেয়া হয়। এরপর জাতিসংঘের সাহায্যকারী জাহাজগুলো এগিয়ে এসে তাদের উদ্ধার করে ইতালির তীরে নিয়ে যায়। সেখান থেকে বাংলাদেশিরা পালিয়ে নিজের আত্মীয়-স্বজনদের কাছে আশ্রয় নেয়।’ ফ্রান্সে পাড়ি দেয়া জাফর আহমদ (২৮) বলেন, ‘শুকনো খাবার বলতে চিঁড়া, বিস্কুট, মুড়ি ইত্যাদি সঙ্গে রাখতে হয়। সঙ্গে ঠাণ্ডা নিবারণের কাপড়, লাইফ জ্যাকেট রাখা বাধ্যতামূলক।’ মোট ১৩ লাখ টাকায় গত অক্টোবর মাসে ফ্রান্সে আশ্রয় নেন বলে জানান তিনি। লিবিয়া যেতে চট্টগামের একটি হোটেলে থাকা শাহীন জানান- ‘৬ দিন থেকে হোটেলে আছেন। এরমধ্যে দু’দফা তাকে বিমানবন্দরে নেয়া হয়। কিন্তু সবুজ সংকেত না থাকায় ফিরে আসতে হয়েছে। আগামী সপ্তাহে ফের তাকে বিমানবন্দরে নেয়া হবে।’ তিনি বলেন- ‘চট্টগ্রামের বিভিন্ন হোটেলে বিয়ানীবাজারের প্রায় ২ শতাধিক যুবক আশ্রয় নিয়েছে। তারা সবাই লিবিয়া-তুরস্ক হয়ে ইউরোপে যেতে চায়।’
বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, বিয়ানীবাজারের আরও সহস্রাধিক যুবক বেকারত্ব ঘোচাতে লিবিয়া-তুরস্ক হয়ে ইউরোপ পাড়ি জমানোর স্বপ্নে বিভোর। তুরস্কে পাড়ি জমানো সংবাদকর্মী হাসান আহমদ বলেন- ‘সাড়ে ৫ লাখ টাকায় তিনি তুরস্কে পৌঁছেছেন। সেখানে কিছুদিন থাকার পর ইউরোপে যাওয়ার পথ ধরবেন।’ সম্প্রতি সাগরপথে লিবিয়া থেকে ইতালি যাওয়ার পথে চারখাইয়ের এক মাদ্রাসা ছাত্রের সলিল সমাধি হয়েছে। ইতালির সীমান্তে তার লাশ পাওয়া গেলে সেখানকার জাতিসংঘ স্বেচ্ছাসেবক দলের কর্মীরা তার লাশ দাফন করে। আকাখাজানার আশফাক আহমদ বলেন, ‘ইতালিতে যাওয়ার সময় সাগরে ডুবে তার সঙ্গে থাকা সাত যুবক মারা যায়। লিবিয়ায় অবস্থানকালে দালালের অনেক অত্যাচার-নির্যাতন সইতে হয়েছে।’ তিনি বাংলাদেশি তরুণদের এ পথে পা না বাড়ানোর অনুরোধ করেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক আদম ব্যবসায়ী বলেন, ‘গত দু’মাসে তার মাধ্যমে ৪ জন তরুণ লিবিয়া গেছে। আরো কয়েকজন লাইনে আছে। আমি তাদেরকে লিবিয়া পাঠানোর কন্ট্রাক্ট নিয়েছি। বাকি পথ তারা কীভাবে যাবে, তা তিনি জানেন না।’
বিয়ানীবাজার পৌরশহরের ট্রাভেল ওয়েস্টের মালিক হুমায়ুন কবির বলেন- ইউরোপে যেতে অনেক পথ খোলা রয়েছে। তবুও কেন এখানকার তরুণরা অবৈধপথে পা বাড়ায়, তা তার বোধগম্য নয়। তিনি এভাবে বিদেশ পাড়ি না জমাতে সবার প্রতি অনুরোধ করেন। উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান মুফতি শিব্বির আহমদ বলেন, দেশে কর্মসংস্থান কম থাকায় ছেলেরা এভাবে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বিদেশ যাচ্ছে। এ থেকে পরিত্রাণ পেতে হলে দেশে কর্মসংস্থান বাড়াতে হবে। বিয়ানীবাজার থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) অবণী শংকর কর জানান- ‘আসলে আমরা মানবপাচার সিন্ডিকেটের ব্যাপারে সজাগ ও সতর্ক রয়েছি। কোনো তথ্য পেলেই আইনশৃঙ্খলা বাহিনী অভিযান চালায়।’ তিনি বলেন- ‘সব জীবনই আমাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ। আমরা চাই না জীবিকার জন্য কেউ এভাবে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কোথাও পাড়ি জমাক।’
No comments