সব বহুতল ভবনেই ত্রুটি
বনানীর
এফ আর টাওয়ারে ভয়াবহ অগ্নিকান্ডের পর রাজধানীর বহুতল ভবন পরিদর্শন শুরু
করেছে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক)। আটটি জোনে ভাগ করে ১৬টি টিমের
মাধ্যমে এ পরিদর্শন কার্যক্রম চালানো হচ্ছে। ১০ তলার উপরে সব ভবনের অগ্নি
নির্বাপণ ব্যবস্থা, নকশা ও অন্যান্য নিরাপত্তার দিক খতিয়ে দেখা হচ্ছে। গত
দুই দিন ধরে এ কার্যক্রমে যেসব ভবন পরীক্ষা করা হয়েছে তার কোনটিই
ত্রুটিমুক্ত পাওয়া যায়নি। পরিদর্শনে যাওয়া কর্মকর্তারা বলছেন কোন ভবনই
ত্রুটিমুক্ত নয়। কোন না কোন সমস্যা আছে। এছাড়া এফ আর টাওয়ারে অগ্নিকান্ডের
পর অভিযান পরিচালনার কথা বলা হলেও রাজউক মুলত ভবনগুলো পরীক্ষা করছে। বলা
হচ্ছে সমস্যা চিহ্নিত করে পরবর্তীতে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
পরিদর্শনে যাওয়া কর্মকর্তারা বলছেন, মাত্র কয়েক তলার অনুমোদন নিয়ে তৈরি করা হয়েছে বহুতলা। নকশায় রয়েছে গড়মিল। এমনকি জাল নকশারও সন্ধান পেয়েছে কর্তৃপক্ষ। ভবন আবাসিকের অনুমোদন নিয়ে চালানো হচ্ছে বাণিজ্যক। নেই অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা, জরুরি নির্গমন পথ ও অন্যান্য নিরাপত্তা ব্যবস্থা। আবার বেজমেন্টে জেনারেটরসহ রাখা হয়েছে বিভিন্ন সরঞ্জাম। নিয়ম বহির্ভূত এমন ত্রটিপূর্ণ অসংখ্য ভবনের হদিস মিলছে রাজধানীতে। বনানীর এফ আর টাওয়ারে কয়েক তলা আগুনে পোড়ার পরই নড়েচড়ে বসে ভবন নির্মাণে অনুমোদনকারী প্রতিষ্ঠান রাজউক। সোমবার থেকে রাজউক রাজধানীতে বহুতল ভবন পরিদর্শনে নামে। প্রথম দিনেই ত্রুটিপূর্ণ অনেক বহুতল ভবন খুঁজে পায় তারা।
ঢাকা ও নারায়নগঞ্জে মোট ৭৭টি ভবন পরিদর্শন করেছে রাজউকের ২৪টি টিম। এ সময় তারা ভবনগুলোর বিভিন্ন ডকুমেন্ট সংগ্রহ করেন। পরবর্তীতে এগুলো অনুসন্ধান এবং পর্যালোচনা করে পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন দেয়া হবে বলে জানান অভিযানের সঙ্গে যুক্ত থাকা সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তরা। এসব ভবনে ত্রুটির বিষয়গুলো সুনির্দিষ্ট করে সময় বেঁধে তাৎক্ষনিক নোটিশ দেয় রাজউক। গতকাল ছিল বহুতল ভবন পরিদর্শনের দ্বিতীয় দিন। প্রথম দিন যেখান থেকে শেষ করা হয় সেখান থেকেই শুরু করে ভবন পরিদর্শন। বনানীর আলোচিত এফ আর টাওয়ারের পার্শ্ববর্তী বহুতল ভবনগুলো পরিদর্শনে নামে রাজউকের জোন-৪ এর একটি টিম। এ এলাকায় বাংলাদেশ সিভিল এভিয়েশন থেকে ১৮০ ফিট ভবন তৈরির অনুমতি রয়েছে। সেক্ষেত্রে এ এলাকায় সর্বোচ্চ ১৮ থেকে ১৯ তলা ভবন তৈরি করার নিয়ম রয়েছে। রাজউক এর বেশি কোন ভবনের নকশার অনুমোদন দেয়নি বলে জানায়। সেক্ষেত্রে বনানীতে এর বেশি তলা বিশিষ্ট সব ভবনই ত্রুটিযুক্ত। রাজউক শুরুতে ‘বাংলাদেশ ইরেকটরস টাওয়ার’ নামে বহুতল ভবনটি পরিদর্শন করে। এ ভবনটি ১৫ তলা। ভবনটিতে নানা অনিয়ম পেয়েছে রাজউক। রয়েছে একটি মাত্র সিঁড়ি। অগ্নিনিরাপত্তা সিঁড়ি নেই।
তাছাড়া অনুমোদিত নকশার সঙ্গে সামাঞ্জস্যতা খুঁজে পায়নি রাজউক টিম। ভবন কর্তৃপক্ষ যে নকশাটি পরিদর্শন করছে তা নিয়ে রাজউক কর্তৃপক্ষের সন্দেহ রয়েছে। তারা নিজেদের নকশা দেখেই সঠিক কি-না তা বলতে পারবেন বলে জানানো হয়। এর পরেই রয়েছে ২০নং হোল্ডিংয়ের সফুরা টাওয়ার। ১৬ তলা বিশিষ্ট ভবনটিতে কোনো অগ্নিনিরাপত্তা সিঁড়ি নেই। একটি মাত্র সিঁড়ি রয়েছে। তাছাড়াও গ্রাউন্ড ফ্লোর যেভাবে প্রশস্থ থাকার কথা নকশায় রয়েছে সরেজমিনে সেভাবে নেই। তবে তাদের বেইজমেন্টগুলো ঠিকঠাক রয়েছে। ২২নং হোল্ডিংয়ের আতাতুর্ক ভবন। ১৫ তলার অনুমোদন নেয়া হলেও ভবনটি এখন পর্যন্ত ১৩ তলা তৈরি করা হয়েছে। বাকি দুই তলার নির্মাণ কাজ চলমান। ভবনটিতে সিঁড়ি রয়েছে ১টি। তবে ভবনটির ৩ থেকে ১৫ তলা পর্যন্ত আবাসিক অনুমোদন রয়েছে। কিন্তু বর্তমানে সেখানে বাণিজ্যিক পরিচালনা করা হচ্ছে। ভবন কর্তৃপক্ষ বলছে রাজউক কখনো তাদের ভবন দেখতে আসেনি। তাই এমনটা হয়েছে। তারা ঠিকভাবে জানেনও না। ২৪নং হোল্ডিংয়ে রয়েছে এ আর টাওয়ার। এটি ১৫ তলা। ভবনের নকশা অনুযায়ী কিছুই ঠিক নেই। প্রথম তলায় খোলামেলা থাকার কথা থাকলেও সেখানে একটি বেসরকারি ব্যাংক পরিচালনা করা হচ্ছে। একপাশ দিয়ে অন্যপাশে বের হওয়ার কোনো সুযোগ রাখেনি।
এর বাইরে রয়েছে একটি মাত্র সিঁড়ি। এছাড়া নকশায় যেখানে সিঁড়ি ও লিফট তৈরির অনুমোদন দেয়া হয়েছে সেখানে তা না করে অন্যপাশে তৈরি করা হয়েছে। এছাড়া এর পাশেই জেনারেটর কক্ষ ব্যবহার করা হচ্ছে। ২৬নং হোল্ডিংয়ের ভবনটির নাম হক প্লাজা। এটি নকশায় অনুযায়ী ঠিকভাবে তৈরি করা হয়েছে। বর্তমানে ১৭ তলা পর্যন্ত নির্মাণ করা হয়েছে। ভবন কর্তৃপক্ষ বলছে ২০ তলা পর্যন্ত নির্মাণের অনুমোদন রয়েছে। তবে রাজউক বলছে তাদের নকশা যাচাই-বাছাই করেই সঠিকটা বলতে পারবে।
এরপরে ২৮ ও ৩০ নং প্লটে তৈরি করা হয়েছে বহুতল ভবন আহমেদ টাওয়ার। এটি শুধুই অননুমোদিত তা নয়। ভবনটি ২৭ তলা পর্যন্ত তৈরি করা হয়েছে। যেটা সম্পূর্ণ অবৈধ বলে জানায় রাজউক। রাজউকের টিমটি আহমেদ টাওয়ারে গেলে ভবনের কর্মকর্তারা নকশা আনার কথা বলে আর ফেরেননি। প্রায় দুই ঘণ্টা অপেক্ষার পরে তারা ভবনে নির্মানাধীন অংশের কাজ বন্ধের নির্দেশ দিয়ে অন্য ভবন পরিদর্শনে যান। এরপরেই পুড়ে যাওয়া এফ আর টাওয়ার। বর্তমানে এটি পুলিশি নিরাপত্তায় রয়েছে। পাশের ৩৪নং হোল্ডিংয়ের ভবনটি আউয়াল সেন্টার। ভবনটি ২৩ তলা। ভবনটির মালিক ঢাকার বাইরে রয়েছে বলে জানান এস্টেট ম্যানেজার। তারা নকশা প্রদর্শন করতে পারেনি। এছাড়া ভবনটিতে একটি মাত্র সিঁড়ি রয়েছে। জেনারেটর চললেও রাজউকের টিমকে বিদ্যুৎ নেই বলে ভবনের উপরে উঠতে দেয়া হয়নি। ৩৬ নং হোল্ডিংয়ের ডেল্টা ডালিহা টাওয়ার পরিদর্শন করে রাজউকের টিমটি। তাদের আধা ঘণ্টা বসিয়ে রেখেও নকশা দেখাতে ব্যর্থ হয় ভবন কর্তৃপক্ষ। রাজউকের ভবন পরিদর্শনকারী টিমটি গতকাল যেসব বিল্ডিংয়ে নকশা দেখাতে ব্যর্থ হয়েছে সেগুলো আজ যাচাই-বাছাই করবে। তারপরে আবার নতুন ভবন পরিদর্শন শুরু করবে।
সাভার ও মিরপুর এলাকায় অভিযানের দায়িত্বে থাকা অথরাইজড অফিসার মোবারক হোসেন মানবজমিনকে বলেন, মঙ্গলবার সাভার, মিরপুর ও মোহম্মদপুর এলাকায় অভিযানের অংশ হিসেবে ২৫টি ভবন পরিদর্শন করেছি আমরা। এই সময় ভবনগুলোর বিভিন্ন ডকুমেন্ট সংগ্রহ করেছি। এখন আমরা শুধু এই কাজই করব। পরে ডকুমেন্টগুলো পর্যালোচনা এবং তদন্ত করে পূর্ণাঙ্গ রিপোর্ট জমা দেব। পরিদর্শন শেষ হলেই মন্ত্রী সিদ্ধান্ত নেবেন অভিযান শুরুর।
গতকালের মত তার আগের দিন সকালে রাজধানীর বনানীর বহুতল ভবন পরিদর্শন শুরু হয় কাকলী মোড় থেকে। রাজউকের জোন-৪ এর পরিচালক মামুন মিয়ার নেতৃত্বে একটি টিম প্রথমে কাকলী মোড়ের নির্মানাধীন কনকর্ড টাওয়ার পরিদর্শন করে। এরপরে পাশের প্রসাদ ট্রেড সেন্টার পরিদর্শন করেন। এ ভবনে নানা অসঙ্গতি খুঁজে পায় রাজউক টিমটি। এ সময় ভবনের লোকজন নকশা দেখাতে ব্যর্থ হয়। ভবনের প্রবেশ পথেই রয়েছে রেস্টুরেন্ট। যা সেখানে থাকার কথা নয়। রেস্টুরেন্টটি তাৎক্ষণিক বন্ধ করে দিয়ে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে সরানোর নির্দেশ দেয়া হয়। এরপরেই রাজউকের এ টিমটি পাশের এবিসি টাওয়ারে অভিযান চালায়। এসময় ভবনের ছাদে একটি অনুমোদনহীন রেস্টুরেন্ট পাওয়া যায়। এটা বন্ধের জন্য নোটিশ দেয় রাজউক টিম। এবিসির পাশের ১৬ তলা বিশিষ্ট স্টার টাওয়ার পরির্দশন করে। এ ভবনটির মালিক ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র সাঈদ খোকন। সম্পূর্ণ ভবনটি প্রাইম এশিয়া নামে একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ভাড়ায় নিয়ে পরিচালনা করছে। যেটা সম্পূর্ণ নিয়ম বহির্ভূত বলে জানায় রাজউক। এসময় রাজউক চেয়ারম্যান সেখানে উপস্থিত হন। ভবনটির কর্তৃপক্ষ যারা রয়েছে তারা কেউ ভবনের নকশা দেখাতে পারেনি। তবে রাজউকের দলটি ভবন ঠিকভাবে পরিদর্শন না করেই নেমে পরে। পরবর্তীতে দুপুরের পর দলটি টাওয়ার হেমলেট ভবনটি পরিদর্শন করে। এসময় ভবনের অগ্নিনিরাপত্তা সিঁড়ি খুঁজে পায়নি। তবে ভবন কর্তৃপক্ষ বলছে অগ্নিনিরাপত্তা সিঁড়ি রয়েছে সেটা অকেজো। সোমবার রাজউক চেয়ারম্যান আবদুর রহমান বনানীতে টিমের কাজ তদারকিতে আসেন।
এসময় তিনি বলেন, আমাদের পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেছে, এখন আমাদের কঠিন পদক্ষেপ নিতে হবে। তথ্য সংগ্রহ করছি এরপরেই আমরা কার্যকর অভিযানে নামবো। রাজউক তদারকি করলে কিভাবে অননুমোদনভাবে বহুতল ভবন গড়ে তোলে এর দায়ভার রাজউকের কিনা সাংবাদিকরা জানতে চাইলে রাজউক চেয়ারম্যান বলেন, এর দায়ভার কিছু না কিছু তো আমাদের নিতেই হবে। এটা কয়েক তলার অনুমোদন নিয়ে তার থেকে বেশি করে এটা আমাদের দায়িত্বের মধ্যে পড়ে। আমরা প্রত্যেকেই সচেতন নাগরিক। যারা এই বহুতল ভবন বানায় তারা প্রত্যেকে অনেক বড় মাপের। তারা যদি এই একটু বিষয় লক্ষ্য রাখে তাহলে এটা আমাদের দেশের জন্য ভালো।
পরিদর্শনে যাওয়া কর্মকর্তারা বলছেন, মাত্র কয়েক তলার অনুমোদন নিয়ে তৈরি করা হয়েছে বহুতলা। নকশায় রয়েছে গড়মিল। এমনকি জাল নকশারও সন্ধান পেয়েছে কর্তৃপক্ষ। ভবন আবাসিকের অনুমোদন নিয়ে চালানো হচ্ছে বাণিজ্যক। নেই অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা, জরুরি নির্গমন পথ ও অন্যান্য নিরাপত্তা ব্যবস্থা। আবার বেজমেন্টে জেনারেটরসহ রাখা হয়েছে বিভিন্ন সরঞ্জাম। নিয়ম বহির্ভূত এমন ত্রটিপূর্ণ অসংখ্য ভবনের হদিস মিলছে রাজধানীতে। বনানীর এফ আর টাওয়ারে কয়েক তলা আগুনে পোড়ার পরই নড়েচড়ে বসে ভবন নির্মাণে অনুমোদনকারী প্রতিষ্ঠান রাজউক। সোমবার থেকে রাজউক রাজধানীতে বহুতল ভবন পরিদর্শনে নামে। প্রথম দিনেই ত্রুটিপূর্ণ অনেক বহুতল ভবন খুঁজে পায় তারা।
ঢাকা ও নারায়নগঞ্জে মোট ৭৭টি ভবন পরিদর্শন করেছে রাজউকের ২৪টি টিম। এ সময় তারা ভবনগুলোর বিভিন্ন ডকুমেন্ট সংগ্রহ করেন। পরবর্তীতে এগুলো অনুসন্ধান এবং পর্যালোচনা করে পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন দেয়া হবে বলে জানান অভিযানের সঙ্গে যুক্ত থাকা সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তরা। এসব ভবনে ত্রুটির বিষয়গুলো সুনির্দিষ্ট করে সময় বেঁধে তাৎক্ষনিক নোটিশ দেয় রাজউক। গতকাল ছিল বহুতল ভবন পরিদর্শনের দ্বিতীয় দিন। প্রথম দিন যেখান থেকে শেষ করা হয় সেখান থেকেই শুরু করে ভবন পরিদর্শন। বনানীর আলোচিত এফ আর টাওয়ারের পার্শ্ববর্তী বহুতল ভবনগুলো পরিদর্শনে নামে রাজউকের জোন-৪ এর একটি টিম। এ এলাকায় বাংলাদেশ সিভিল এভিয়েশন থেকে ১৮০ ফিট ভবন তৈরির অনুমতি রয়েছে। সেক্ষেত্রে এ এলাকায় সর্বোচ্চ ১৮ থেকে ১৯ তলা ভবন তৈরি করার নিয়ম রয়েছে। রাজউক এর বেশি কোন ভবনের নকশার অনুমোদন দেয়নি বলে জানায়। সেক্ষেত্রে বনানীতে এর বেশি তলা বিশিষ্ট সব ভবনই ত্রুটিযুক্ত। রাজউক শুরুতে ‘বাংলাদেশ ইরেকটরস টাওয়ার’ নামে বহুতল ভবনটি পরিদর্শন করে। এ ভবনটি ১৫ তলা। ভবনটিতে নানা অনিয়ম পেয়েছে রাজউক। রয়েছে একটি মাত্র সিঁড়ি। অগ্নিনিরাপত্তা সিঁড়ি নেই।
তাছাড়া অনুমোদিত নকশার সঙ্গে সামাঞ্জস্যতা খুঁজে পায়নি রাজউক টিম। ভবন কর্তৃপক্ষ যে নকশাটি পরিদর্শন করছে তা নিয়ে রাজউক কর্তৃপক্ষের সন্দেহ রয়েছে। তারা নিজেদের নকশা দেখেই সঠিক কি-না তা বলতে পারবেন বলে জানানো হয়। এর পরেই রয়েছে ২০নং হোল্ডিংয়ের সফুরা টাওয়ার। ১৬ তলা বিশিষ্ট ভবনটিতে কোনো অগ্নিনিরাপত্তা সিঁড়ি নেই। একটি মাত্র সিঁড়ি রয়েছে। তাছাড়াও গ্রাউন্ড ফ্লোর যেভাবে প্রশস্থ থাকার কথা নকশায় রয়েছে সরেজমিনে সেভাবে নেই। তবে তাদের বেইজমেন্টগুলো ঠিকঠাক রয়েছে। ২২নং হোল্ডিংয়ের আতাতুর্ক ভবন। ১৫ তলার অনুমোদন নেয়া হলেও ভবনটি এখন পর্যন্ত ১৩ তলা তৈরি করা হয়েছে। বাকি দুই তলার নির্মাণ কাজ চলমান। ভবনটিতে সিঁড়ি রয়েছে ১টি। তবে ভবনটির ৩ থেকে ১৫ তলা পর্যন্ত আবাসিক অনুমোদন রয়েছে। কিন্তু বর্তমানে সেখানে বাণিজ্যিক পরিচালনা করা হচ্ছে। ভবন কর্তৃপক্ষ বলছে রাজউক কখনো তাদের ভবন দেখতে আসেনি। তাই এমনটা হয়েছে। তারা ঠিকভাবে জানেনও না। ২৪নং হোল্ডিংয়ে রয়েছে এ আর টাওয়ার। এটি ১৫ তলা। ভবনের নকশা অনুযায়ী কিছুই ঠিক নেই। প্রথম তলায় খোলামেলা থাকার কথা থাকলেও সেখানে একটি বেসরকারি ব্যাংক পরিচালনা করা হচ্ছে। একপাশ দিয়ে অন্যপাশে বের হওয়ার কোনো সুযোগ রাখেনি।
এর বাইরে রয়েছে একটি মাত্র সিঁড়ি। এছাড়া নকশায় যেখানে সিঁড়ি ও লিফট তৈরির অনুমোদন দেয়া হয়েছে সেখানে তা না করে অন্যপাশে তৈরি করা হয়েছে। এছাড়া এর পাশেই জেনারেটর কক্ষ ব্যবহার করা হচ্ছে। ২৬নং হোল্ডিংয়ের ভবনটির নাম হক প্লাজা। এটি নকশায় অনুযায়ী ঠিকভাবে তৈরি করা হয়েছে। বর্তমানে ১৭ তলা পর্যন্ত নির্মাণ করা হয়েছে। ভবন কর্তৃপক্ষ বলছে ২০ তলা পর্যন্ত নির্মাণের অনুমোদন রয়েছে। তবে রাজউক বলছে তাদের নকশা যাচাই-বাছাই করেই সঠিকটা বলতে পারবে।
এরপরে ২৮ ও ৩০ নং প্লটে তৈরি করা হয়েছে বহুতল ভবন আহমেদ টাওয়ার। এটি শুধুই অননুমোদিত তা নয়। ভবনটি ২৭ তলা পর্যন্ত তৈরি করা হয়েছে। যেটা সম্পূর্ণ অবৈধ বলে জানায় রাজউক। রাজউকের টিমটি আহমেদ টাওয়ারে গেলে ভবনের কর্মকর্তারা নকশা আনার কথা বলে আর ফেরেননি। প্রায় দুই ঘণ্টা অপেক্ষার পরে তারা ভবনে নির্মানাধীন অংশের কাজ বন্ধের নির্দেশ দিয়ে অন্য ভবন পরিদর্শনে যান। এরপরেই পুড়ে যাওয়া এফ আর টাওয়ার। বর্তমানে এটি পুলিশি নিরাপত্তায় রয়েছে। পাশের ৩৪নং হোল্ডিংয়ের ভবনটি আউয়াল সেন্টার। ভবনটি ২৩ তলা। ভবনটির মালিক ঢাকার বাইরে রয়েছে বলে জানান এস্টেট ম্যানেজার। তারা নকশা প্রদর্শন করতে পারেনি। এছাড়া ভবনটিতে একটি মাত্র সিঁড়ি রয়েছে। জেনারেটর চললেও রাজউকের টিমকে বিদ্যুৎ নেই বলে ভবনের উপরে উঠতে দেয়া হয়নি। ৩৬ নং হোল্ডিংয়ের ডেল্টা ডালিহা টাওয়ার পরিদর্শন করে রাজউকের টিমটি। তাদের আধা ঘণ্টা বসিয়ে রেখেও নকশা দেখাতে ব্যর্থ হয় ভবন কর্তৃপক্ষ। রাজউকের ভবন পরিদর্শনকারী টিমটি গতকাল যেসব বিল্ডিংয়ে নকশা দেখাতে ব্যর্থ হয়েছে সেগুলো আজ যাচাই-বাছাই করবে। তারপরে আবার নতুন ভবন পরিদর্শন শুরু করবে।
সাভার ও মিরপুর এলাকায় অভিযানের দায়িত্বে থাকা অথরাইজড অফিসার মোবারক হোসেন মানবজমিনকে বলেন, মঙ্গলবার সাভার, মিরপুর ও মোহম্মদপুর এলাকায় অভিযানের অংশ হিসেবে ২৫টি ভবন পরিদর্শন করেছি আমরা। এই সময় ভবনগুলোর বিভিন্ন ডকুমেন্ট সংগ্রহ করেছি। এখন আমরা শুধু এই কাজই করব। পরে ডকুমেন্টগুলো পর্যালোচনা এবং তদন্ত করে পূর্ণাঙ্গ রিপোর্ট জমা দেব। পরিদর্শন শেষ হলেই মন্ত্রী সিদ্ধান্ত নেবেন অভিযান শুরুর।
গতকালের মত তার আগের দিন সকালে রাজধানীর বনানীর বহুতল ভবন পরিদর্শন শুরু হয় কাকলী মোড় থেকে। রাজউকের জোন-৪ এর পরিচালক মামুন মিয়ার নেতৃত্বে একটি টিম প্রথমে কাকলী মোড়ের নির্মানাধীন কনকর্ড টাওয়ার পরিদর্শন করে। এরপরে পাশের প্রসাদ ট্রেড সেন্টার পরিদর্শন করেন। এ ভবনে নানা অসঙ্গতি খুঁজে পায় রাজউক টিমটি। এ সময় ভবনের লোকজন নকশা দেখাতে ব্যর্থ হয়। ভবনের প্রবেশ পথেই রয়েছে রেস্টুরেন্ট। যা সেখানে থাকার কথা নয়। রেস্টুরেন্টটি তাৎক্ষণিক বন্ধ করে দিয়ে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে সরানোর নির্দেশ দেয়া হয়। এরপরেই রাজউকের এ টিমটি পাশের এবিসি টাওয়ারে অভিযান চালায়। এসময় ভবনের ছাদে একটি অনুমোদনহীন রেস্টুরেন্ট পাওয়া যায়। এটা বন্ধের জন্য নোটিশ দেয় রাজউক টিম। এবিসির পাশের ১৬ তলা বিশিষ্ট স্টার টাওয়ার পরির্দশন করে। এ ভবনটির মালিক ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র সাঈদ খোকন। সম্পূর্ণ ভবনটি প্রাইম এশিয়া নামে একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ভাড়ায় নিয়ে পরিচালনা করছে। যেটা সম্পূর্ণ নিয়ম বহির্ভূত বলে জানায় রাজউক। এসময় রাজউক চেয়ারম্যান সেখানে উপস্থিত হন। ভবনটির কর্তৃপক্ষ যারা রয়েছে তারা কেউ ভবনের নকশা দেখাতে পারেনি। তবে রাজউকের দলটি ভবন ঠিকভাবে পরিদর্শন না করেই নেমে পরে। পরবর্তীতে দুপুরের পর দলটি টাওয়ার হেমলেট ভবনটি পরিদর্শন করে। এসময় ভবনের অগ্নিনিরাপত্তা সিঁড়ি খুঁজে পায়নি। তবে ভবন কর্তৃপক্ষ বলছে অগ্নিনিরাপত্তা সিঁড়ি রয়েছে সেটা অকেজো। সোমবার রাজউক চেয়ারম্যান আবদুর রহমান বনানীতে টিমের কাজ তদারকিতে আসেন।
এসময় তিনি বলেন, আমাদের পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেছে, এখন আমাদের কঠিন পদক্ষেপ নিতে হবে। তথ্য সংগ্রহ করছি এরপরেই আমরা কার্যকর অভিযানে নামবো। রাজউক তদারকি করলে কিভাবে অননুমোদনভাবে বহুতল ভবন গড়ে তোলে এর দায়ভার রাজউকের কিনা সাংবাদিকরা জানতে চাইলে রাজউক চেয়ারম্যান বলেন, এর দায়ভার কিছু না কিছু তো আমাদের নিতেই হবে। এটা কয়েক তলার অনুমোদন নিয়ে তার থেকে বেশি করে এটা আমাদের দায়িত্বের মধ্যে পড়ে। আমরা প্রত্যেকেই সচেতন নাগরিক। যারা এই বহুতল ভবন বানায় তারা প্রত্যেকে অনেক বড় মাপের। তারা যদি এই একটু বিষয় লক্ষ্য রাখে তাহলে এটা আমাদের দেশের জন্য ভালো।
No comments