অর্থনৈতিক সফলতায় বাংলাদেশি রেসিপি by ড. কামাল মন্নু
নতুন
সাউথ এশিয়ান ইন্ডাস্ট্রিয়াল পাওয়ার হাউসের শিখা হিসেবে দ্রুত বেড়ে উঠছে
বাংলাদেশ- এমনটাই মনে করা হচ্ছে। রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা,
সামাজিক সুসঙ্গতি এবং প্রগতিশীল ব্যবসায় পরিবেশ বাংলাদেশকে অর্থনেতিক নতুন
উচ্চতায় নিয়ে যাচ্ছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে এই দেশটি নিজেকে বিশ্বের সবচেয়ে
আকর্ষণীয় বিনিয়োগের অন্যতম স্থান হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে। আরো
গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, যে ধরনের বিনিয়োগ আকৃষ্ট করছে এই দেশটি তা শুধু
রাষ্ট্র বনাম রাষ্ট্রের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, যেখানে থাকে ঋণের ফাঁদ। এর
পরিবর্তে বেসরকারি খাতকে শক্তিশালী করা হয়েছে। যা পরিচালিত হয় দেশে তৈরি
পণ্য দিয়ে। এর ফলে দেশটি নিজেকে বিশ্বের অন্যতম উদীয়মান রপ্তানির পাওয়ার
হাউস হিসেবে অবস্থান দৃঢ় করছে। ২০১৮ সালে এ দেশটি সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ
(এফডিআই) আকৃষ্ট করেছে ২৫৮ কোটি ডলার।
২০০৯ সালের চেয়ে যা ৭০ কোটি ডলার বেশি। আর বর্তমানে এ দেশটিতে এমন অনেক কিছু আছে যা দেখে বিনিয়োগকারীরা আকৃষ্ট হবেন।
এসব সফলতা গড়ে তোলা হয়েছে একটি শক্তিশালী, স্থিতিশীল ও টেকসই অর্থনীতির ওপর ভিত্তি করে। ব্যবসার জন্য আকৃষ্ট করা হয়েছে প্রণোদনা প্যাকেজ। সুশাসনে কার্যকর একটি ব্যবস্থা বজায় রাখা হয়েছে। বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতি চিত্তাকর্ষক। তা শুধু আঞ্চলিকতার বিচারেই নয়, বৈশ্বিক দিক থেকেও। এর জাতীয় প্রবৃদ্ধি গত এক দশকে শতকরা ৬ ভাগের বেশিতে পৌঁছেছে (গত তিন বছরে তা শতকরা ৭ ভাগ ছাড়িয়ে গেছে)। এ ছাড়া গত ৩০ বছরে এখানে কোনো নেতিবাচক প্রবৃদ্ধি নেই। মাথাপিছু আয় ১৭৫৪ ডলার, যা ২০০৯ সাল থেকে ৭২৫ ডলার বেশি। এর ফলে জাতিসংঘের স্বল্পোন্নত দেশের মর্যাদা থেকে ২০১৭ সালে মধ্যম আয়ের দেশের মর্যাদায় উঠে এসেছে বাংলাদেশ। মুদ্রাস্ফীতি শতকরা প্রায় ৫ ভাগ। এ ছাড়া সরকার ২০৪১ সালে দেশটিকে উন্নয়নশীল দেশে পরিণত করার যে আকাক্সক্ষা দেখাচ্ছে তা এখন বাস্তবতা।
পরবর্তী বা ‘নেক্সট ১১’ জাতি, যারা বিশ্ব অর্থনীতির শক্তি হবে, তাদের একটি সদস্য হিসেবে বাংলাদেশকে অন্তর্ভুক্ত করেছে গোল্ডম্যান স্যাশে। এখানে উল্লেখ করা প্রয়োজন যে, টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রায় সমতাভিত্তি প্রতিশ্রুতিতে জাতিসংঘের সহ¯্রাব্দের উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের সর্বোচ্চ দেশের মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। বাংলাদেশ হলো একটি সামাজিক সম্প্রীতি ও গণতান্ত্রিক দেশ, যেখানে বেসরকারি বিনিয়োগে দ্বিদলীয় রাজনৈতিক সমর্থন রয়েছে। এখানে আছে কঠোর নিয়মনীতি। এই উপমহাদেশে সর্বনি¤œ বেতন, মজুরি সম্বলিত উচ্চ পর্যায়ের কর্মশক্তি আছে এখানে। দেশটির শতকরা প্রায় ৫৭ ভাগ মানুষ ২৫ বছর বয়সের নিচে। এর ফলে বর্তমান ব্যবসায় প্রয়োজনীয় যুবক ও মেধাবী কর্মশক্তি রয়েছে এখানে। বাংলাদেশের সবচেয়ে শক্তিশালী সম্পদ হলো অর্থনৈতিক জোন এবং রপ্তানি সংশ্লিষ্ট শিল্প এলাকা। সেখানে আছে পরিবহন, লজিস্টিক এবং অবকাঠামোগত সুবিধা, যা বিদেশি বিনিয়োগকারীদের জন্য প্রয়োজনীয়। বাংলাদেশে বিদ্যুতের মূল্য এ অঞ্চলে খুব বেশি প্রতিযোগিতামূলক, প্রতি কিলোওয়াট আওয়ারের মূল্য ০.০৯ ডলার। অবকাঠামো এবং প্রতিযোগিতামূলক বিদ্যুৎ উৎপাদন সরকারের অগ্রাধিকারে রয়েছে। বিনিয়োগকারীদের আকর্ষণীয় প্রণোদনা প্রস্তাব করেছে বাংলাদেশ।
মজার বিষয় হলো, নতুন যেসব খাতে বিনিয়োগ সুবিধা দেয়া হয়েছে তা প্রায় সব সেক্টরের জন্যই এখন উন্মুক্ত, শুধু আগ্নেয়াস্ত্র ও নিরাপত্তা বিষয়ক প্রিন্টিং বাদে। ১৬ কোটি মানুষ নিয়ে এবং দ্রুত মধ্যম শ্রেণির মানুষের বৃদ্ধি বলে দেয় এখানে রয়েছে একটি বিশাল আভ্যন্তরীণ বাজার। বিনিয়োগকারীরা তাদের উৎপাদিত পণ্যের শতকরা ২০ ভাগ পর্যন্ত অভ্যন্তরীণভাবে বিক্রি করতে অনুমোদিত। এ ছাড়া বাংলাদেশ ভূরাজনৈতিক যে অবস্থানে আছে তাতে সে আঞ্চলিক একটি মার্কেটের সুবিধা পায়। যেখানে রয়েছেন ৩০ লাখ যুবক এবং ব্রান্ড সচেতন ক্রেতা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরাসরি তত্ত্বাবধানে কাজ করছে বাংলাদেশ ইনভেস্টমেন্ট ডেভেলপমেন্ট অথরিটি (বিডা)। অর্থনৈতিক/রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ জোনের বাইরে সারা দেশে বিনিয়োগকারীদের রেজিস্ট্রেশন, ট্যাক্স/ট্যারিফ সনদ প্রদান ও সব রকম সমর্থনমূলক সেবা দিয়ে যাওয়ার একটি ওয়ান-স্টপ বিনিয়োগ বিষয়ক এজেন্সির সেবা দিয়ে যাচ্ছে বিডা। এই বছর সব সহযোগী এজেন্সিকে এক ছাতার নিচে আনার জন্য একটি ওয়ান স্টপ সার্ভিস (ওএসএস) চালু করার পরিকল্পনা নিয়েছে বিডা। এক্ষেত্রে ব্যবসায় প্রয়োজনীয় সব সেবা অনলাইনে দেয়ার চেষ্টা করা হবে।
এর ফলে ব্যবসা সফলতার সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠতে আরো সহায়তা করবে বাংলাদেশকে। উপরে বর্ণিত এসবই হলো বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সফলতায় অবদানের বর্ণনা। বিশেষ করে দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশ এসব খাতে একটি ভালো মডেল।
(পাকিস্তানের অনলাইন দ্য নেশন পত্রিকায় প্রকাশিত লেখার সংক্ষেপিত অনুবাদ)
২০০৯ সালের চেয়ে যা ৭০ কোটি ডলার বেশি। আর বর্তমানে এ দেশটিতে এমন অনেক কিছু আছে যা দেখে বিনিয়োগকারীরা আকৃষ্ট হবেন।
এসব সফলতা গড়ে তোলা হয়েছে একটি শক্তিশালী, স্থিতিশীল ও টেকসই অর্থনীতির ওপর ভিত্তি করে। ব্যবসার জন্য আকৃষ্ট করা হয়েছে প্রণোদনা প্যাকেজ। সুশাসনে কার্যকর একটি ব্যবস্থা বজায় রাখা হয়েছে। বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতি চিত্তাকর্ষক। তা শুধু আঞ্চলিকতার বিচারেই নয়, বৈশ্বিক দিক থেকেও। এর জাতীয় প্রবৃদ্ধি গত এক দশকে শতকরা ৬ ভাগের বেশিতে পৌঁছেছে (গত তিন বছরে তা শতকরা ৭ ভাগ ছাড়িয়ে গেছে)। এ ছাড়া গত ৩০ বছরে এখানে কোনো নেতিবাচক প্রবৃদ্ধি নেই। মাথাপিছু আয় ১৭৫৪ ডলার, যা ২০০৯ সাল থেকে ৭২৫ ডলার বেশি। এর ফলে জাতিসংঘের স্বল্পোন্নত দেশের মর্যাদা থেকে ২০১৭ সালে মধ্যম আয়ের দেশের মর্যাদায় উঠে এসেছে বাংলাদেশ। মুদ্রাস্ফীতি শতকরা প্রায় ৫ ভাগ। এ ছাড়া সরকার ২০৪১ সালে দেশটিকে উন্নয়নশীল দেশে পরিণত করার যে আকাক্সক্ষা দেখাচ্ছে তা এখন বাস্তবতা।
পরবর্তী বা ‘নেক্সট ১১’ জাতি, যারা বিশ্ব অর্থনীতির শক্তি হবে, তাদের একটি সদস্য হিসেবে বাংলাদেশকে অন্তর্ভুক্ত করেছে গোল্ডম্যান স্যাশে। এখানে উল্লেখ করা প্রয়োজন যে, টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রায় সমতাভিত্তি প্রতিশ্রুতিতে জাতিসংঘের সহ¯্রাব্দের উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের সর্বোচ্চ দেশের মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। বাংলাদেশ হলো একটি সামাজিক সম্প্রীতি ও গণতান্ত্রিক দেশ, যেখানে বেসরকারি বিনিয়োগে দ্বিদলীয় রাজনৈতিক সমর্থন রয়েছে। এখানে আছে কঠোর নিয়মনীতি। এই উপমহাদেশে সর্বনি¤œ বেতন, মজুরি সম্বলিত উচ্চ পর্যায়ের কর্মশক্তি আছে এখানে। দেশটির শতকরা প্রায় ৫৭ ভাগ মানুষ ২৫ বছর বয়সের নিচে। এর ফলে বর্তমান ব্যবসায় প্রয়োজনীয় যুবক ও মেধাবী কর্মশক্তি রয়েছে এখানে। বাংলাদেশের সবচেয়ে শক্তিশালী সম্পদ হলো অর্থনৈতিক জোন এবং রপ্তানি সংশ্লিষ্ট শিল্প এলাকা। সেখানে আছে পরিবহন, লজিস্টিক এবং অবকাঠামোগত সুবিধা, যা বিদেশি বিনিয়োগকারীদের জন্য প্রয়োজনীয়। বাংলাদেশে বিদ্যুতের মূল্য এ অঞ্চলে খুব বেশি প্রতিযোগিতামূলক, প্রতি কিলোওয়াট আওয়ারের মূল্য ০.০৯ ডলার। অবকাঠামো এবং প্রতিযোগিতামূলক বিদ্যুৎ উৎপাদন সরকারের অগ্রাধিকারে রয়েছে। বিনিয়োগকারীদের আকর্ষণীয় প্রণোদনা প্রস্তাব করেছে বাংলাদেশ।
মজার বিষয় হলো, নতুন যেসব খাতে বিনিয়োগ সুবিধা দেয়া হয়েছে তা প্রায় সব সেক্টরের জন্যই এখন উন্মুক্ত, শুধু আগ্নেয়াস্ত্র ও নিরাপত্তা বিষয়ক প্রিন্টিং বাদে। ১৬ কোটি মানুষ নিয়ে এবং দ্রুত মধ্যম শ্রেণির মানুষের বৃদ্ধি বলে দেয় এখানে রয়েছে একটি বিশাল আভ্যন্তরীণ বাজার। বিনিয়োগকারীরা তাদের উৎপাদিত পণ্যের শতকরা ২০ ভাগ পর্যন্ত অভ্যন্তরীণভাবে বিক্রি করতে অনুমোদিত। এ ছাড়া বাংলাদেশ ভূরাজনৈতিক যে অবস্থানে আছে তাতে সে আঞ্চলিক একটি মার্কেটের সুবিধা পায়। যেখানে রয়েছেন ৩০ লাখ যুবক এবং ব্রান্ড সচেতন ক্রেতা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরাসরি তত্ত্বাবধানে কাজ করছে বাংলাদেশ ইনভেস্টমেন্ট ডেভেলপমেন্ট অথরিটি (বিডা)। অর্থনৈতিক/রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ জোনের বাইরে সারা দেশে বিনিয়োগকারীদের রেজিস্ট্রেশন, ট্যাক্স/ট্যারিফ সনদ প্রদান ও সব রকম সমর্থনমূলক সেবা দিয়ে যাওয়ার একটি ওয়ান-স্টপ বিনিয়োগ বিষয়ক এজেন্সির সেবা দিয়ে যাচ্ছে বিডা। এই বছর সব সহযোগী এজেন্সিকে এক ছাতার নিচে আনার জন্য একটি ওয়ান স্টপ সার্ভিস (ওএসএস) চালু করার পরিকল্পনা নিয়েছে বিডা। এক্ষেত্রে ব্যবসায় প্রয়োজনীয় সব সেবা অনলাইনে দেয়ার চেষ্টা করা হবে।
এর ফলে ব্যবসা সফলতার সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠতে আরো সহায়তা করবে বাংলাদেশকে। উপরে বর্ণিত এসবই হলো বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সফলতায় অবদানের বর্ণনা। বিশেষ করে দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশ এসব খাতে একটি ভালো মডেল।
(পাকিস্তানের অনলাইন দ্য নেশন পত্রিকায় প্রকাশিত লেখার সংক্ষেপিত অনুবাদ)
No comments