নিমতলী থেকে চকবাজার: মৃত্যুর সঙ্গে বসবাস! by নুরুজ্জামান লাবু
নয়
বছর আগে পুরান ঢাকার নিমতলীতে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে মারা গিয়েছিলেন ১২৪ জন।
বুধবার (২০ ফেব্রুয়ারি) সেই নিমতলী থেকে দেড় কিলোমিটারের দূরত্বে চকবাজারের
চুড়িহাট্টায় আগুনে মারা গেলেন ৬৭ জন। আগুনের সূত্রপাত ভিন্ন হলেও দুটি
ঘটনায় মিল অনেক। ২০১০ সালের ৩ জুনের আগুন অবৈধভাবে পরিচালিত কেমিক্যালের
গুদামের কারণে তীব্রতা পেয়েছিল বেশি আর সেজন্য ক্ষয়ক্ষতিও হয় ব্যাপক।
বুধবারের আগুনের ভয়াবহতাও বাড়ায় বসতবাড়িতে অবৈধভাবে পরিচালিত হওয়া
কেমিক্যাল গুদাম।
২০১০ সালের অগ্নিকাণ্ডের পর সরকারের পক্ষ থেকে যেসব উদ্যোগ নেওয়ার কথা ছিল, তার কিছুই শেষ পর্যন্ত আলোর মুখ দেখেনি। আগের মতোই পুরান ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় অবৈধভাবে চলছে কেমিক্যাল কারখানা ও গুদামজাতকরণ। এই এলাকার বাসিন্দারা যেন মৃত্যুর সঙ্গেই বসবাস করছেন প্রতিটি মুহূর্ত।
বুধবার রাতে চকবাজারের চুড়িহাট্টার সর্বনাশা আগুনের পর আবারও আলোচনায় এসেছে সেই কেমিক্যাল কারখানা ও গুদাম। রাত সাড়ে দশটার দিকে একটি সিলিন্ডার বিস্ফোরণের মাধ্যমে আগুনের সূত্রপাত বলে জানা গেছে। পাশেই দাহ্য পদার্থের মজুদ থাকায় আগুন ছড়িয়ে পড়ে মুহূর্তে। আগুনের লেলিহান শিখায় সড়কের যানজটে আটকে থাকা লোকজনসহ আশেপাশের দোকানপাট ও বসতবাড়ির বাসিন্দারা দিগ্বিদিক নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে ছুটতে থাকেন। নারী ও শিশুসহ ৬৭ জন ঢলে পড়েন মৃত্যুর কোলে। আগুনে পুড়ে ও আগুন থেকে বাঁচতে ছোটাছুটির সময় নানাভাবে আহত হন ৪১ জন। যাদের মধ্যে নয়জন আশঙ্কাজনক অবস্থায় ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন। আর শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত নিহত ৬৭ জনের মধ্যে ৩৯ জনের মরদেহ শনাক্তের পর তাদের পরিবারের সদস্যরা নিয়ে গেছেন। বাকিদের ডিএনএ ম্যাচিং করে মরদেহ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হবে।
প্রত্যক্ষদর্শী ও ফায়ার সার্ভিস সূত্র জানায়, বুধবার রাত ১০টা ৩৮ মিনিটে আগুনের সূত্রপাতের খবর পেয়ে প্রথমে ফায়ার সার্ভিসের লালবাগ স্টেশনের একটি গাড়ি ঘটনাস্থলে ছুটে যায়। আগুনের ভয়াবহতা দেখে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানালে সদর দফতর ও সদরঘাট স্টেশন থেকে আরও কয়েকটি ইউনিট পাঠানো হয় ঘটনাস্থলে। কিন্তু আগুনের তীব্রতা বাড়তে থাকলে রাতে ঢাকা ও এর আশেপাশের সব ফায়ার স্টেশনের ইউনিটগুলোকে মুভ করতে বলা হয় চকবাজারের উদ্দেশে। শেষ পর্যন্ত ৩৯টি ইউনিট ভোর (বৃহস্পতিবার) পর্যন্ত টানা চেষ্টার পর আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয়। যদিও বৃহস্পতিবার দিনভর থেমে থেমে ছোট ছোট আগুনের কুণ্ডলী ও ধোঁয়া দেখা যায়, এমনকি বিকেলের দিকে স্প্রে ক্যানগুলো শব্দ করে ফুটতে থাকে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ভোর থেকেই ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা একের পর এক লাশ উদ্ধার করতে শুরু করেন। লাশের সংখ্যা বাড়তে থাকার সঙ্গে সঙ্গে বাড়তে থাকে স্বজনদেরও ভিড়। ফায়ার সার্ভিস ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে ছুটে যান। মধ্যরাতেই ঘটনাস্থলে যান ঢাকা দক্ষিণের (ডিএসসিসি) মেয়র সাঈদ খোকন। সকাল সাড়ে আটটার দিকে পুলিশের মহাপরিদর্শক ঘটনাস্থলে সাংবাদিকদের ৬৭টি লাশ উদ্ধারের খবর জানান।
ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আলী আহাম্মেদ খান বলেন, ‘আগুন নেভানোর কাজ শুরুর পর পানিস্বল্পতা হয়েছিল। পরে অবশ্য সেটার সমাধান করা হয়। এছাড়া ওই সময় রাস্তায় যানজট ছিল। তাই আগুন লাগার পর কেউ বের হতে পারেননি। আগুনে ঘটনাস্থলেই তারা মারা যান। আমরা খুব ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় কাজ করেছি।’
তিনি বলেন, ‘স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানতে পেরেছি, একটি গাড়ির গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণ ঘটেই দ্রুত চারপাশে আগুন ছড়িয়ে পড়ে। পাশে প্রচুর দাহ্য পদার্থ থাকায় দ্রুত আগুন বড় আকার ধারণ করে। বিস্ফোরণের পর ফায়ার সার্ভিসের কেউ ধারেকাছেও আসতে পারছিলেন না। গলিগুলোও খুব সরু। এ কারণে কাছে এসে কাজ করা কঠিন ছিল।’
ফায়ার সার্ভিসের এই কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘এটা খুব জনবহুল এলাকা, প্রচুর মানুষ থাকে। তবে আমরা চেষ্টা করি এ ধরনের ঘটনা নিয়ন্ত্রণে রাখার। মানুষ সচেতন না হলে যেকোনও বড় ধরনের ঘটনা ঘটে যায়। এ ধরনের এলাকার বিষয়ে এখনই সচেতন হওয়া প্রয়োজন।’
সরেজমিন দেখা গেছে, সকাল সাড়ে দশটার দিকে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল এবং স্থানীয় সংসদ সদস্য হাজী সেলিম। ওবায়দুল কাদের সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করতে এসেছি। আমরা ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে আছি। সরকার ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে থেকে সব ধরনের সহায়তা করবে।’ বিকেলে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে গিয়ে তিনি বলেন, ‘তদন্তের পর সরকার পুরান ঢাকায় কেমিক্যাল কারখানা পুরোপুরি উচ্ছেদ কার্যক্রমে (এভিকশন ড্রাইভ) যাবে।’ এসময় সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে সঙ্গে থাকা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল বলেন, ‘নিমতলীর ঘটনার পর থেকে আমরা বলে আসছি, ওখান থেকে কেমিক্যাল গুদাম সরিয়ে নিতে। এরপর আবার চলে আসছে। তাই এখন মেয়র মহোদয় পদক্ষেপ নিয়েছেন। তিনি আর লাইসেন্স রিনিউ করছেন না। এখন পর্যন্ত আমি যতটুকু জানি, তিনি একটা পদক্ষেপ নেবেন এগুলো সরিয়ে দেওয়ার জন্য।’
ধ্বংসস্তূপে পরিণত চুড়িহাট্টা
ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের পর চকবাজারের চুড়িহাট্টা শাহী মসজিদের মোড় পরিণত হয়েছে ধ্বংসস্তূপে। সাড়ে চারতলা হাজী ওয়াহেদ ম্যানশনের সবকিছু পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। এই ভবনের নিচতলায় ছিল মার্কেট। দোতালায় ছিল পারফিউম, অ্যারোসোল ও আফটার শেভ লোশন ক্যানের গুদাম। তিনতলার অর্ধেক ছিল বসতবাড়ি আর বাকি অর্ধেক ব্যবহৃত হতো গুদাম হিসেবে। চারতলায় থাকতেন বাড়ির মালিক। ওয়াহেদ ম্যানশনের পাশের ভবনের নিচতলার রাজমহল রেস্টুরেন্ট, দোতালায় রেস্টুরেন্ট কর্মচারীদের মেস, তিনতলায় বসতবাড়ি— সব পুড়ে গেছে। ওয়াহেদ ম্যানশনের বিপরীতে দুটি ভবন ও পশ্চিম দিকের সামনের ভবনের দোকানপাট ও বসতবাড়িও ছাই হয়ে গেছে আগুনে।
সরেজমিন দেখা গেছে, সড়কে প্লাস্টিকের দানা পড়ে আছে ছড়িয়েছিটিয়ে। মসজিদের সামনের অংশে পুড়ে কঙ্কালসার অবস্থায় দাঁড়িয়ে আছে দুটি প্রাইভেটকার। ওয়াহেদ ম্যানশনের সামনে দুটি পিকাপ ভ্যান। এছাড়া বাইসাইকেল, রিকশা, ভ্যান, মটরসাইকেল, ঠেলাগাড়ি— সব পুড়ে ছাই। চারদিকের ভবনের দেয়ালগুলো ভেঙে পড়েছে রাস্তায়। এই ধ্বংসস্তূপ ভারী হয়ে ওঠে স্বজনহারাদের আকুতি, আহাজারিতে। কৌতূহলী হাজারো মানুষের ভীড় সামলাতেও রীতিমতো বেগ পেতে হয় পুলিশের।
সরেজমিন দেখা যায়, দুপুরে ধ্বংসস্তূপ থেকে আলামত সংগ্রহ করেন সিআইডির ক্রাইম সিনের সদস্যরা। পুলিশের বিশেষ শাখার সদস্য, পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন—পিবিআই ও থানা পুলিশ সদস্যদের তৎপরতা ছিল চোখে পড়ার মতো। আগুনের কারণ, নানা উপকরণ সংগ্রহ, নাশকতা কিনা, তা যাচাই-বাছাই করতে তথ্য সংগ্রহ করতে ব্যস্ত ছিলেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। দুপুর একটার দিকে জনগণের চলাচল উন্মুক্ত করে দিলে মুহূর্তে ঘটনাস্থলসহ আশপাশ পরিণত হয় জনসমুদ্রে। বিকেলে মানুষের চলাচল আবার নিয়ন্ত্রণ করে পুলিশ। সন্ধ্যায় সিটি করপোরেশনের কর্মচারীরা রাস্তা থেকে সবকিছু সরিয়ে ফেলেন।
হাসপাতালে কান্না-আহাজারির রোল
ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের মর্গে সারি সারি লাশ। বাইরে স্বজনদের কান্না, আহাজারি। নিহতদের পরিচয় শনাক্ত করতে স্বজনদের করুণ অপেক্ষা। নিখোঁজ স্বজনের ছবি নিয়ে অনেকে ঘোরাঘুরি করছেন। কেউ কাঁদছেন প্রিয় সন্তান হারিয়ে আবার কেউ স্বামী কিংবা ভাই। পিতৃহারা হয়ে কেউ কেউ চোখের জলে ভেসেছেন পুরোটা সময়।
বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই নিহতদের শনাক্তের জন্য ব্যাপক তৎপর ছিল পুলিশ। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রতিটি পরিবারকে দেওয়া হয়েছে বিশ হাজার টাকা করে দাফন বা সৎকারের খরচ। লাশবাহী কফিন বক্স নিয়ে এসে অপেক্ষা করছিলেন স্বজনরা। দুপুর দুইটার পর কামলা নামে একজনের লাশ স্বজনদের হাতে তুলে দিয়ে শুরু হয় হস্তান্তর প্রক্রিয়া। এরপর তা চলে রাত পর্যন্ত। লাশবাহী অ্যাম্বুলেন্সগুলো সাইরেন বাজিয়ে একটি করে লাশ নিয়ে ছুটে যাচ্ছিল গন্তব্যে।
জানা গেছে, জেলা প্রশাসনের বিশ হাজার টাকা করে জানাজা বা সৎকারের খরচের বাইরে নিহত শ্রমিকদের প্রত্যেকের জন্য এক লাখ এবং যেসব শ্রমিক আহত হয়েছেন তাদের প্রত্যেকের চিকিৎসার জন্য ৫০ হাজার টাকা করে আর্থিক সহায়তা দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন শ্রম প্রতিমন্ত্রী মন্নুজান সুফিয়ান।
আবারও একাধিক কমিটি, আশ্বাস!
নয় বছর আগের নিমতলী ট্রাজেডির পর এবারও ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের পর একাধিক তদন্ত কমিটি করা হয়েছে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও সংস্থার পক্ষ থেকে। সরকারের মন্ত্রী-এমপিরা শুনিয়েছেন বিভিন্ন আশ্বাসবাণী। পুরান ঢাকার অলিগলিতে বাসিন্দারা যেভাবে দিনের পর দিন মৃত্যুর সঙ্গে বসবাস করছেন তা নিরসন করতে নানা উদ্যোগের কথা বলেছেন তারা। দুপুরে ফায়ার সার্ভিসের পরিচালক (অপারেশনস) মেজর শাকিল নেওয়াজ জানান, তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠনের কথা। উপ-পরিচালক দেবাশীষ বর্ধনের নেতৃত্বে গঠিত এই কমিটিকে সাত কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। তারা আগুনের সূত্রপাতের কারণ ও ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণ করবেন। শিল্প মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে ১২ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। শিল্প মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মফিজুল হককে কমিটির আহ্বায়ক এবং বিসিকের পরিচালক (প্রকল্প) আব্দুল মান্নানকে তদন্ত কমিটির সদস্য সচিব করা হয়েছে বলে পিআইডি’র এক তথ্য বিবরণীতে জানানো হয়েছে। আগামী পাঁচ কর্মদিবসের মধ্যে তাদের প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার দুপুরে ঘটনাস্থল ও বিকেলে ঢাকা মেডিকেলের বার্ন ইউনিট পরিদর্শন শেষে শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ুন সাংবাদিকদের বলেন, ‘চকবাজার এলাকার রাজ্জাক (হাজী ওয়াহেদ ম্যানশন) ভবনে সংঘটিত আগুনের ঘটনা গ্যাস সিলিন্ডারের বিস্ফোরণ থেকে হয়েছে। এরপরও এ দুর্ঘটনার কারণ অনুসন্ধান, প্রাথমিক ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণ এবং আগুন দুর্ঘটনা পুনরাবৃত্তি রোধে সুপারিশ দেওয়ার জন্য এরই মধ্যে ১২ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে।’
সাংবাদিকদের আরেক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, “রাজধানীর পুরনো ঢাকার কেমিক্যাল ও প্লাস্টিক কারখানাগুলো পরিবেশবান্ধব ও নিরাপদ জায়গায় স্থানান্তরের লক্ষ্যে শিল্প মন্ত্রণালয় এরই মধ্যে দুটি প্রকল্প গ্রহণ করেছে। এর মধ্যে কেমিক্যাল কারখানা স্থানান্তরের জন্য কেরানীগঞ্জে ‘বিসিক কেমিক্যাল পল্লী প্রকল্প’ বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। ৫০ একর জমির ওপর গড়ে তোলা এ প্রকল্পে ৯৩৬টি প্লট থাকছে। ২০১ কোটি ৮০ লাখ টাকা ব্যয়ে প্রকল্পটি ২০২১ সালের জুনের মধ্যে বাস্তবায়ন করা হবে।’
যদিও নয় বছর আগে নিমতলী ট্রাজেডির পর এরকম একাধিক উদ্যোগ ও সুপারিশের কথা জানানো হয়েছিল সরকারের পক্ষ থেকে। কিন্তু নয় বছরেও পুরান ঢাকা থেকে কেমিক্যাল কারখানা ও গুদাম সরেনি। উল্টো ২০১৭ সালে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন একবার এসব অবৈধ কারখানা ও গুদামের বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করলেও অজানা কারণে তা বন্ধ হয়ে যায়। ঢাকা দক্ষিণ সিটির (ডিএসসিসি) মেয়র সাঈদ খোকন অবশ্য বৃহস্পতিবার সাংবাদিকদের বলেছেন, সম্প্রতি তারা আবার সেই অভিযান শুরু করেছিলেন। কিন্তু এর মধ্যেই মর্মান্তিক এই ঘটনা ঘটে গেছে। এই অভিযান এখন আরও জোরদারভাবে পরিচালনা করা হবে।
রাতে ঢাকা মেডিক্যালে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালিক সাংবাদিকদের বলেন, ‘পুরান ঢাকা ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা। এখানে একই ভবনে ব্যবসা, দোকান আর মানুষজন থাকেন। এর মধ্যে ছোট ছোট কারখানার থাকে। এই দুঃখজনক ঘটনার পর সবার টনক নড়বে।’ তিনি বলেন, ‘এখানে হয় মানুষ বসবাস করবে, না হয় শিল্পকারখানা থাকবে। যেকোনও একটা সিদ্ধান্তে যেতে হবে।’
২০১০ সালের অগ্নিকাণ্ডের পর সরকারের পক্ষ থেকে যেসব উদ্যোগ নেওয়ার কথা ছিল, তার কিছুই শেষ পর্যন্ত আলোর মুখ দেখেনি। আগের মতোই পুরান ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় অবৈধভাবে চলছে কেমিক্যাল কারখানা ও গুদামজাতকরণ। এই এলাকার বাসিন্দারা যেন মৃত্যুর সঙ্গেই বসবাস করছেন প্রতিটি মুহূর্ত।
বুধবার রাতে চকবাজারের চুড়িহাট্টার সর্বনাশা আগুনের পর আবারও আলোচনায় এসেছে সেই কেমিক্যাল কারখানা ও গুদাম। রাত সাড়ে দশটার দিকে একটি সিলিন্ডার বিস্ফোরণের মাধ্যমে আগুনের সূত্রপাত বলে জানা গেছে। পাশেই দাহ্য পদার্থের মজুদ থাকায় আগুন ছড়িয়ে পড়ে মুহূর্তে। আগুনের লেলিহান শিখায় সড়কের যানজটে আটকে থাকা লোকজনসহ আশেপাশের দোকানপাট ও বসতবাড়ির বাসিন্দারা দিগ্বিদিক নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে ছুটতে থাকেন। নারী ও শিশুসহ ৬৭ জন ঢলে পড়েন মৃত্যুর কোলে। আগুনে পুড়ে ও আগুন থেকে বাঁচতে ছোটাছুটির সময় নানাভাবে আহত হন ৪১ জন। যাদের মধ্যে নয়জন আশঙ্কাজনক অবস্থায় ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন। আর শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত নিহত ৬৭ জনের মধ্যে ৩৯ জনের মরদেহ শনাক্তের পর তাদের পরিবারের সদস্যরা নিয়ে গেছেন। বাকিদের ডিএনএ ম্যাচিং করে মরদেহ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হবে।
প্রত্যক্ষদর্শী ও ফায়ার সার্ভিস সূত্র জানায়, বুধবার রাত ১০টা ৩৮ মিনিটে আগুনের সূত্রপাতের খবর পেয়ে প্রথমে ফায়ার সার্ভিসের লালবাগ স্টেশনের একটি গাড়ি ঘটনাস্থলে ছুটে যায়। আগুনের ভয়াবহতা দেখে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানালে সদর দফতর ও সদরঘাট স্টেশন থেকে আরও কয়েকটি ইউনিট পাঠানো হয় ঘটনাস্থলে। কিন্তু আগুনের তীব্রতা বাড়তে থাকলে রাতে ঢাকা ও এর আশেপাশের সব ফায়ার স্টেশনের ইউনিটগুলোকে মুভ করতে বলা হয় চকবাজারের উদ্দেশে। শেষ পর্যন্ত ৩৯টি ইউনিট ভোর (বৃহস্পতিবার) পর্যন্ত টানা চেষ্টার পর আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয়। যদিও বৃহস্পতিবার দিনভর থেমে থেমে ছোট ছোট আগুনের কুণ্ডলী ও ধোঁয়া দেখা যায়, এমনকি বিকেলের দিকে স্প্রে ক্যানগুলো শব্দ করে ফুটতে থাকে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ভোর থেকেই ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা একের পর এক লাশ উদ্ধার করতে শুরু করেন। লাশের সংখ্যা বাড়তে থাকার সঙ্গে সঙ্গে বাড়তে থাকে স্বজনদেরও ভিড়। ফায়ার সার্ভিস ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে ছুটে যান। মধ্যরাতেই ঘটনাস্থলে যান ঢাকা দক্ষিণের (ডিএসসিসি) মেয়র সাঈদ খোকন। সকাল সাড়ে আটটার দিকে পুলিশের মহাপরিদর্শক ঘটনাস্থলে সাংবাদিকদের ৬৭টি লাশ উদ্ধারের খবর জানান।
ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আলী আহাম্মেদ খান বলেন, ‘আগুন নেভানোর কাজ শুরুর পর পানিস্বল্পতা হয়েছিল। পরে অবশ্য সেটার সমাধান করা হয়। এছাড়া ওই সময় রাস্তায় যানজট ছিল। তাই আগুন লাগার পর কেউ বের হতে পারেননি। আগুনে ঘটনাস্থলেই তারা মারা যান। আমরা খুব ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় কাজ করেছি।’
তিনি বলেন, ‘স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানতে পেরেছি, একটি গাড়ির গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণ ঘটেই দ্রুত চারপাশে আগুন ছড়িয়ে পড়ে। পাশে প্রচুর দাহ্য পদার্থ থাকায় দ্রুত আগুন বড় আকার ধারণ করে। বিস্ফোরণের পর ফায়ার সার্ভিসের কেউ ধারেকাছেও আসতে পারছিলেন না। গলিগুলোও খুব সরু। এ কারণে কাছে এসে কাজ করা কঠিন ছিল।’
ফায়ার সার্ভিসের এই কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘এটা খুব জনবহুল এলাকা, প্রচুর মানুষ থাকে। তবে আমরা চেষ্টা করি এ ধরনের ঘটনা নিয়ন্ত্রণে রাখার। মানুষ সচেতন না হলে যেকোনও বড় ধরনের ঘটনা ঘটে যায়। এ ধরনের এলাকার বিষয়ে এখনই সচেতন হওয়া প্রয়োজন।’
সরেজমিন দেখা গেছে, সকাল সাড়ে দশটার দিকে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল এবং স্থানীয় সংসদ সদস্য হাজী সেলিম। ওবায়দুল কাদের সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করতে এসেছি। আমরা ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে আছি। সরকার ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে থেকে সব ধরনের সহায়তা করবে।’ বিকেলে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে গিয়ে তিনি বলেন, ‘তদন্তের পর সরকার পুরান ঢাকায় কেমিক্যাল কারখানা পুরোপুরি উচ্ছেদ কার্যক্রমে (এভিকশন ড্রাইভ) যাবে।’ এসময় সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে সঙ্গে থাকা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল বলেন, ‘নিমতলীর ঘটনার পর থেকে আমরা বলে আসছি, ওখান থেকে কেমিক্যাল গুদাম সরিয়ে নিতে। এরপর আবার চলে আসছে। তাই এখন মেয়র মহোদয় পদক্ষেপ নিয়েছেন। তিনি আর লাইসেন্স রিনিউ করছেন না। এখন পর্যন্ত আমি যতটুকু জানি, তিনি একটা পদক্ষেপ নেবেন এগুলো সরিয়ে দেওয়ার জন্য।’
ধ্বংসস্তূপে পরিণত চুড়িহাট্টা
ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের পর চকবাজারের চুড়িহাট্টা শাহী মসজিদের মোড় পরিণত হয়েছে ধ্বংসস্তূপে। সাড়ে চারতলা হাজী ওয়াহেদ ম্যানশনের সবকিছু পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। এই ভবনের নিচতলায় ছিল মার্কেট। দোতালায় ছিল পারফিউম, অ্যারোসোল ও আফটার শেভ লোশন ক্যানের গুদাম। তিনতলার অর্ধেক ছিল বসতবাড়ি আর বাকি অর্ধেক ব্যবহৃত হতো গুদাম হিসেবে। চারতলায় থাকতেন বাড়ির মালিক। ওয়াহেদ ম্যানশনের পাশের ভবনের নিচতলার রাজমহল রেস্টুরেন্ট, দোতালায় রেস্টুরেন্ট কর্মচারীদের মেস, তিনতলায় বসতবাড়ি— সব পুড়ে গেছে। ওয়াহেদ ম্যানশনের বিপরীতে দুটি ভবন ও পশ্চিম দিকের সামনের ভবনের দোকানপাট ও বসতবাড়িও ছাই হয়ে গেছে আগুনে।
সরেজমিন দেখা গেছে, সড়কে প্লাস্টিকের দানা পড়ে আছে ছড়িয়েছিটিয়ে। মসজিদের সামনের অংশে পুড়ে কঙ্কালসার অবস্থায় দাঁড়িয়ে আছে দুটি প্রাইভেটকার। ওয়াহেদ ম্যানশনের সামনে দুটি পিকাপ ভ্যান। এছাড়া বাইসাইকেল, রিকশা, ভ্যান, মটরসাইকেল, ঠেলাগাড়ি— সব পুড়ে ছাই। চারদিকের ভবনের দেয়ালগুলো ভেঙে পড়েছে রাস্তায়। এই ধ্বংসস্তূপ ভারী হয়ে ওঠে স্বজনহারাদের আকুতি, আহাজারিতে। কৌতূহলী হাজারো মানুষের ভীড় সামলাতেও রীতিমতো বেগ পেতে হয় পুলিশের।
সরেজমিন দেখা যায়, দুপুরে ধ্বংসস্তূপ থেকে আলামত সংগ্রহ করেন সিআইডির ক্রাইম সিনের সদস্যরা। পুলিশের বিশেষ শাখার সদস্য, পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন—পিবিআই ও থানা পুলিশ সদস্যদের তৎপরতা ছিল চোখে পড়ার মতো। আগুনের কারণ, নানা উপকরণ সংগ্রহ, নাশকতা কিনা, তা যাচাই-বাছাই করতে তথ্য সংগ্রহ করতে ব্যস্ত ছিলেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। দুপুর একটার দিকে জনগণের চলাচল উন্মুক্ত করে দিলে মুহূর্তে ঘটনাস্থলসহ আশপাশ পরিণত হয় জনসমুদ্রে। বিকেলে মানুষের চলাচল আবার নিয়ন্ত্রণ করে পুলিশ। সন্ধ্যায় সিটি করপোরেশনের কর্মচারীরা রাস্তা থেকে সবকিছু সরিয়ে ফেলেন।
হাসপাতালে কান্না-আহাজারির রোল
ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের মর্গে সারি সারি লাশ। বাইরে স্বজনদের কান্না, আহাজারি। নিহতদের পরিচয় শনাক্ত করতে স্বজনদের করুণ অপেক্ষা। নিখোঁজ স্বজনের ছবি নিয়ে অনেকে ঘোরাঘুরি করছেন। কেউ কাঁদছেন প্রিয় সন্তান হারিয়ে আবার কেউ স্বামী কিংবা ভাই। পিতৃহারা হয়ে কেউ কেউ চোখের জলে ভেসেছেন পুরোটা সময়।
বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই নিহতদের শনাক্তের জন্য ব্যাপক তৎপর ছিল পুলিশ। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রতিটি পরিবারকে দেওয়া হয়েছে বিশ হাজার টাকা করে দাফন বা সৎকারের খরচ। লাশবাহী কফিন বক্স নিয়ে এসে অপেক্ষা করছিলেন স্বজনরা। দুপুর দুইটার পর কামলা নামে একজনের লাশ স্বজনদের হাতে তুলে দিয়ে শুরু হয় হস্তান্তর প্রক্রিয়া। এরপর তা চলে রাত পর্যন্ত। লাশবাহী অ্যাম্বুলেন্সগুলো সাইরেন বাজিয়ে একটি করে লাশ নিয়ে ছুটে যাচ্ছিল গন্তব্যে।
জানা গেছে, জেলা প্রশাসনের বিশ হাজার টাকা করে জানাজা বা সৎকারের খরচের বাইরে নিহত শ্রমিকদের প্রত্যেকের জন্য এক লাখ এবং যেসব শ্রমিক আহত হয়েছেন তাদের প্রত্যেকের চিকিৎসার জন্য ৫০ হাজার টাকা করে আর্থিক সহায়তা দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন শ্রম প্রতিমন্ত্রী মন্নুজান সুফিয়ান।
আবারও একাধিক কমিটি, আশ্বাস!
নয় বছর আগের নিমতলী ট্রাজেডির পর এবারও ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের পর একাধিক তদন্ত কমিটি করা হয়েছে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও সংস্থার পক্ষ থেকে। সরকারের মন্ত্রী-এমপিরা শুনিয়েছেন বিভিন্ন আশ্বাসবাণী। পুরান ঢাকার অলিগলিতে বাসিন্দারা যেভাবে দিনের পর দিন মৃত্যুর সঙ্গে বসবাস করছেন তা নিরসন করতে নানা উদ্যোগের কথা বলেছেন তারা। দুপুরে ফায়ার সার্ভিসের পরিচালক (অপারেশনস) মেজর শাকিল নেওয়াজ জানান, তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠনের কথা। উপ-পরিচালক দেবাশীষ বর্ধনের নেতৃত্বে গঠিত এই কমিটিকে সাত কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। তারা আগুনের সূত্রপাতের কারণ ও ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণ করবেন। শিল্প মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে ১২ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। শিল্প মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মফিজুল হককে কমিটির আহ্বায়ক এবং বিসিকের পরিচালক (প্রকল্প) আব্দুল মান্নানকে তদন্ত কমিটির সদস্য সচিব করা হয়েছে বলে পিআইডি’র এক তথ্য বিবরণীতে জানানো হয়েছে। আগামী পাঁচ কর্মদিবসের মধ্যে তাদের প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার দুপুরে ঘটনাস্থল ও বিকেলে ঢাকা মেডিকেলের বার্ন ইউনিট পরিদর্শন শেষে শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ুন সাংবাদিকদের বলেন, ‘চকবাজার এলাকার রাজ্জাক (হাজী ওয়াহেদ ম্যানশন) ভবনে সংঘটিত আগুনের ঘটনা গ্যাস সিলিন্ডারের বিস্ফোরণ থেকে হয়েছে। এরপরও এ দুর্ঘটনার কারণ অনুসন্ধান, প্রাথমিক ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণ এবং আগুন দুর্ঘটনা পুনরাবৃত্তি রোধে সুপারিশ দেওয়ার জন্য এরই মধ্যে ১২ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে।’
সাংবাদিকদের আরেক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, “রাজধানীর পুরনো ঢাকার কেমিক্যাল ও প্লাস্টিক কারখানাগুলো পরিবেশবান্ধব ও নিরাপদ জায়গায় স্থানান্তরের লক্ষ্যে শিল্প মন্ত্রণালয় এরই মধ্যে দুটি প্রকল্প গ্রহণ করেছে। এর মধ্যে কেমিক্যাল কারখানা স্থানান্তরের জন্য কেরানীগঞ্জে ‘বিসিক কেমিক্যাল পল্লী প্রকল্প’ বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। ৫০ একর জমির ওপর গড়ে তোলা এ প্রকল্পে ৯৩৬টি প্লট থাকছে। ২০১ কোটি ৮০ লাখ টাকা ব্যয়ে প্রকল্পটি ২০২১ সালের জুনের মধ্যে বাস্তবায়ন করা হবে।’
যদিও নয় বছর আগে নিমতলী ট্রাজেডির পর এরকম একাধিক উদ্যোগ ও সুপারিশের কথা জানানো হয়েছিল সরকারের পক্ষ থেকে। কিন্তু নয় বছরেও পুরান ঢাকা থেকে কেমিক্যাল কারখানা ও গুদাম সরেনি। উল্টো ২০১৭ সালে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন একবার এসব অবৈধ কারখানা ও গুদামের বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করলেও অজানা কারণে তা বন্ধ হয়ে যায়। ঢাকা দক্ষিণ সিটির (ডিএসসিসি) মেয়র সাঈদ খোকন অবশ্য বৃহস্পতিবার সাংবাদিকদের বলেছেন, সম্প্রতি তারা আবার সেই অভিযান শুরু করেছিলেন। কিন্তু এর মধ্যেই মর্মান্তিক এই ঘটনা ঘটে গেছে। এই অভিযান এখন আরও জোরদারভাবে পরিচালনা করা হবে।
রাতে ঢাকা মেডিক্যালে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালিক সাংবাদিকদের বলেন, ‘পুরান ঢাকা ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা। এখানে একই ভবনে ব্যবসা, দোকান আর মানুষজন থাকেন। এর মধ্যে ছোট ছোট কারখানার থাকে। এই দুঃখজনক ঘটনার পর সবার টনক নড়বে।’ তিনি বলেন, ‘এখানে হয় মানুষ বসবাস করবে, না হয় শিল্পকারখানা থাকবে। যেকোনও একটা সিদ্ধান্তে যেতে হবে।’
No comments