ভারতের মোস্ট ওয়ান্টেড তালিকায় কারা?
বিভিন্ন সময়ে জঙ্গি হামলার শিকার হওয়ার পাশাপাশি শীর্ষ
সন্ত্রাসীদের আক্রমণের লক্ষ্যবস্তু হয়েছে ভারত। এসব ঘটনায় শত শত প্রাণহানির
সঙ্গে হামলার ক্ষত নিয়ে বেঁচে থাকতে হচ্ছে আরও অনেককে। এসব ঘটনায় দিল্লি
যাদের অভিযুক্ত বলে মনে করে তাদের অনেকেই এখন ভারতের বাইরে পালিয়ে রয়েছে।
তবে তাদের অনেকেই আবার ভারতে লুকিয়ে রেখে নিজেদের কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে
বলে সন্দেহ করে দিল্লি। ভারতের মোস্ট ওয়ান্টেড তালিকায় থাকা শীর্ষ কয়েকজন
সন্দেহভাজন অপরাধীর তালিকা দেখে নেওয়া যাক।
দাউদ ইব্রাহীম
ভারতের মোস্ট ওয়ান্টেড তালিকার প্রথমেই আসে দাউদ ইব্রাহিমের নাম। ১৯৯৩
সালের মু্ম্বাই হামলার মূল হোতা বলে দাউদকে সন্দেহ করা হয়। ভারতসহ
উপমহাদেশের অপরাধ জগতের বড় ক্রীড়নক বলে মনে করা হয় তাকে। ইন্টারপোলের মোস্ট
ওয়ান্টেড তালিকাতে দ্বিতীয় স্থানে আছে দাউদ। ডি কোম্পানি নামে নিজের অপরাধ
জগত চালায় বলে মনে করা হয়। ধারণা করা হয় পাকিস্তানে নিরাপদে বসবাস করেই
নিজের অপরাধ সাম্রাজ্য নিয়ন্ত্রণ করে থাকে দাউদ।
মাসুদ আজহার
পাকিস্তানভিত্তিক জঙ্গি সংগঠন জইশ-ই-মোহাম্মদের এই নেতা ২০০১ সালে
ভারতের পার্লামেন্ট ভবনে হামলায় জড়িত বলে দাবি করে থাকে ভারত। ভারতের হাতে
আটক হলেও আফগানিস্তানের কান্দাহারে বিমান ছিনতাইয়ের ঘটনায় তাঁকে
পাকিস্তানের হাতে তুলে দিতে বাধ্য হয় তৎকালীন ভারত সরকার। সম্প্রতি
কাশ্মিরের পুলওয়ামাতে ভারতের ‘সেন্ট্রাল রিজার্ভ পুলিশ ফোর্স’র গাড়ি বহরে
আত্মঘাতী হামলার ঘটনায় তার হাত আছে বলে অভিযোগ তুলেছে দিল্লি।
সাইদ সালাউদ্দিন
ভারতে নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন হিজবুল মুজাহিদিনের প্রধান সাইদ সালাউদ্দিন।
পাকিস্তান নিয়ন্ত্রিত কাশ্মির থেকে ভারতীয় সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে সালাউদ্দিন
যুদ্ধ চালিয়ে আসছে বলে মনে করা হয়। ২০১১ সাল থেকে তাকে খুঁজছে ভারতের
গোয়েন্দারা।
হাফিজ মোহাম্মদ সাইদ
জঙ্গি সংগঠন লস্কর-ই-তৈয়বা প্রধান হাফিজ মোহাম্মদ সাইদ। তাকে ২৬/১১
মুম্বাই হামলার অন্যতম মাস্টারমাইন্ড বলে মনে করে ভারত। ২০০৮ সালে
মুম্বাইয়ের জঙ্গি হামলার পরিকল্পনাকারী হিসেবে তাকে অভিযুক্ত করে ভারত। তবে
পাকিস্তানে প্রকাশ্য রাজনীতিতে সক্রিয় সাইদ। ২০১৮ সালের পাকিস্তানের
নির্বাচনে অংশগ্রহণও করেছিল সে।
জাকি-উর-রহমান লাখভি
লস্কর-ই-তৈয়বার সদস্য পাকিস্তানি নাগরিক জাকি-উর-রহমান লাখভি বর্তমানে
কাশ্মিরের সুপ্রিম কমান্ডার হিসেবে কাজ করছে বলে মনে করে ভারতের
গোয়েন্দারা। মুম্বাই হামলাতেও তার সম্পৃক্ততা রয়েছে বলে অভিযোগ করে ভারত।
দিল্লির অভিযোগ হামলায় অংশ নিতে ধরা পড়া হামলাকারী আজমল কাসভের পরিবারকে
দেড় লক্ষ টাকা দিয়েছিলো লাখভি। ২০০৮ থেকে ভারতের মোস্ট ওয়ান্টেড তালিকায়
রয়েছে তার নাম।
ছোটা সাকিল
মোহাম্মদ শাকিল বাবু মিয়া শেখ অপরাধ জগতে ছোটা সাকিল নামেই পরিচিত।
তাকে ১৯৯৩-এর মুম্বাই হামলায় দাউদের অন্যতম সঙ্গী বলে মনে করা হয়।
গোয়ান্দাদের মোস্ট ওয়ান্টেড তালিকায় থাকা এই অপরাধী ২০১৭-র ডিসেম্বরে মারা
গিয়েছে বলে খবর রটে। কিন্তু সেই খবরের সত্যতা নিয়ে মতভেদ রয়েছে গোয়েন্দাদের
মধ্যে।
আব্দুল সুভান কুরেশি
ভারতের বিন লাদেন বলে কুখ্যাত আব্দুল সুভান কুরেশি। ইন্ডিয়ান
মুজাহিদিনের এই সদস্য বোমা বানানোয় পারদর্শী। ২০০৬-এর ১১ জুলাই মুম্বাইয়ের
ট্রেনে হামলায় তার সম্পৃক্ততা রয়েছে বলে জানিয়েছে ভারতীয় গোয়েন্দারা।
মোহাম্মদ আহমেদ সিদ্দিবাপ্পা
অপরাধ জগতে তার নাম ইয়াসিন ভাটকল। জঙ্গি সংগঠন ইন্ডিয়ান মুজাহিদিন-এর
অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা বলে পরিচিত ভাটকল। জঙ্গিদের প্রশিক্ষণ দেওয়াই ছিল তার
কাজ। দীর্ঘদিন ওয়ান্টেড তালিকায় থাকার পর ২০১৩ সালে ভারত-নেপাল সীমান্তে
ধরা পড়ে সে। ২০১৬ সালে তাকে মৃত্যুদণ্ড দেয় ভারতের বিশেষ আদালত।
আব্দুল রউফ আসগর
জঙ্গি সংগঠন জইশ-ই-মোহম্মদ-এর নেতা মাসুদ আজহারের ছোট ভাই আব্দুল রউফ
আসগর। ভারত ও আফগানিস্তানে একাধিক হামলায় তার সম্পৃক্ততা রয়েছে বলে মনে
করা হয়। কান্দাহারে বিমান ছিনতাইয়ের নেতৃত্ব দেয় সে। ওই বিমান ছিনতাইয়ের
ঘটনায় মাসুদ আজহারকে ভারত থেকে ছাড়িয়ে নিয়ে যায় সে।
No comments