কন্যার স্মৃতিতে পিতা- কবি আল মাহমুদ
বাবার
সঙ্গে সুখস্মৃতি কী একজীবনে বলে শেষ করা যায়। ৮ ভাইবোনের মধ্যে আমি ছিলাম
বাবার সবচেয়ে আদরের। আতিয়া বলতেই বাবা অজ্ঞান। বিদেশ থেকে এসেছেন- বাবার
লাগেজ ব্যাগেজ কে খুলবে? আতিয়া ‘মায়ো’ (মা)। এভাবেই বাবার স্মৃতিচারণ করতে
গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন সোনালী কাবিনের কবি আল মাহমুদের বড় মেয়ে আতিয়া মীর।
তিনি বলেন, হাসপাতালে ভর্তির আগে বৃহস্পতিবার পুরো দিনটিই আমি আব্বার সঙ্গে ছিলাম। ওইদিন আব্বাকে নিজ হাতে সুপ খাইয়েছি। ওটাই ছিল আমার হাতে আব্বার শেষ খাওয়া।
বিয়ের আগ পর্যন্ত আব্বার সকল মিটিং, অনুষ্ঠান, সভা- সমিতিতে কখন কোথায় যাবেন- এসব টাইমিং ডায়েরি আমিই লিখতাম। আব্বা আমাকে সবসময় সঙ্গে করে ঢাকার বাইরে, শিল্পকলা একাডেমিসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানে নিয়ে যেতেন। ১৯৯১ সালে বিয়ে হয়ে গেলেও শ্বশুরের বাসা তেজগাঁও বেগুনবাড়ী আব্বার কাছে আসতাম। আব্বা বিদেশে গেলে অনেক জিনিসপত্র নিয়ে আসতেন। আব্বা যখন বিদেশ থেকে আসতেন তখন তার ব্যাগ ও সকলের জন্য আনা উপহার আমাকে ছাড়া কাউকে খুলতে দিতেন না। আমি নিজ হাতে সবাইকে আব্বার গিফটের জিনিস বিলিয়ে দিতাম। আব্বা আমার জন্য চকলেটসহ পছন্দের জিনিস আলাদা করে মায়ের কাছে রেখে দিতেন। যেটা সম্পর্কে কেউ জানতো না। কারণ আব্বা জানতেন যে, আমি সবাইকে দিয়ে নিজের জন্য কিছুই রাখবো না। পরবর্তীতে আমাকে একা ডেকে ওই বিদেশি উপহার দিতেন।
সকালে ঘুম থেকে উঠে আমার প্রথম কাজ ছিল আব্বাকে অনেকগুলো পত্রিকার হেডলাইন পড়ে শোনানো। এরপর আবার স্কুল থেকে এসে আব্বাকে তার পছন্দের নিউজ বিস্তারিত পড়ে শোনাতাম। বাসায় প্রায় ৭ থেকে ৮টি পেপার রাখতেন। আমার পছন্দের ম্যাগাজিন ছিল ইন্ডিয়ান ম্যাগাজিন সানন্দা। আব্বা নিয়মিত আমার জন্য ম্যাগাজিনটা বাসায় নিয়ে আসতেন। এমনকি বিয়ের পর ১০ বছর পর্যন্ত এটি আব্বা নিয়মিত আমার জন্য কিনতেন। আব্বা ছিলেন প্রচণ্ড আত্মভোলা মানুষ। মাকে নিয়ে বেড়াতে যাবেন কিন্তু আব্বার কোনো খবর নেই। কোনো আড্ডায় আছেন বা কাজ করছেন তো করছেনই। বেড়াতে যাওয়ার কথা ভুলে বসে আছেন। আমরা ৮ ভাইবোন বাসায় এতই দুষ্টুমি, ঝগড়াঝাটি, মারামারি করতাম যে, মায়ের মাথা খারাপ হয়ে যেতো। বাবা এসবের মধ্যেও লিখেই যাচ্ছেন। দিন-দুনিয়ার কোনো খবর থাকতো না তার কাছে। তখন মা রেগে গিয়ে বলতেন আমার মাথা খারাপ হওয়ার উপক্রম আর তুমি বাচ্চাদের কিছুই বলছো না।
আব্বা ছিলেন খুবই ভুলোমনা। কোনো জিনিসের কথা তার মনে থাকতো না। মা ভাত বেড়েছেন সময় গড়িয়ে যাচ্ছে কিন্তু আব্বা বই পড়তে পড়তে খেতে আসতে ভুলে গেছেন। মায়ের ধমক খেয়ে অতঃপর খেতে আসতেন। তখন আমি খুব ছোট। সময়টা ছিল ঈদের আগমুহূর্ত। বিটিভিতে এলিগেন নামে একটি ড্রেসের বিজ্ঞাপন দেখে আব্বাকে বলেছিলাম আমাকে ড্রেসটি কিনে দিতে হবে। আব্বা বললেন ঠিক আছে অফিস থেকে এসে কিনে দেবো। কিসের কি। রাত গভীর হয়ে যায় আব্বা আর বাসায় আসেন না। শেষমেশ আমি কান্না করতে করতে ঘুমিয়ে পড়েছি। পরে আব্বা বাসায় এসে আমাকে ঘুম থেকে জাগিয়ে এলিফ্যান্ট রোড থেকে সেই জামাটি কিনে দেন।
একবার আদমশুমারির লোকজন বাসায় এসেছে নাম তালিকাভুক্ত করতে। আব্বা একে একে আমাদের সব ভাইবোনের নাম বললেন। কিন্তু যে আমাকে এতটাই ভালোবাসতেন, সে আমার নাম লেখানোর কথাটাই ভুলে গেছেন। শুমারির লোকটি বাসা থেকে বের হওয়ার পর আমি ভ্যাঁ ভ্যাঁ করে কান্না করে দিয়ে বললাম আব্বা আপনি আমার নামটিই বলেন নি। তখন আব্বা বললো কি সাংঘাতিক কথা। এরপর ওই লোককে ডেকে আমার নাম তালিকাভুক্ত করান।
আমি কোনো কারণে রাগ করলে প্রায় সময় ভাত না খেয়ে ঘুমিয়ে থাকতাম। আব্বা বাসায় এসে আমাকে বলতো ‘মায়ো’ (মা) ওঠো ভাত খাবে। আব্বা দেখতে এতটাই সুন্দর ছিলেন যে, আমি প্রায়ই অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকতাম আর ভাবতাম আমার আব্বা এত সুন্দর। আমরা কেউ তার মতো সুন্দর হলাম না কেনো? আব্বা তার লেখা একটি কবিতার বই ‘পাখির কাছে, ফুলের কাছে’ আমাদের তিন বোন আতিয়া, তানিয়া ও জিনিয়ার নামে উৎসর্গ করেন।
তিনি বলেন, হাসপাতালে ভর্তির আগে বৃহস্পতিবার পুরো দিনটিই আমি আব্বার সঙ্গে ছিলাম। ওইদিন আব্বাকে নিজ হাতে সুপ খাইয়েছি। ওটাই ছিল আমার হাতে আব্বার শেষ খাওয়া।
বিয়ের আগ পর্যন্ত আব্বার সকল মিটিং, অনুষ্ঠান, সভা- সমিতিতে কখন কোথায় যাবেন- এসব টাইমিং ডায়েরি আমিই লিখতাম। আব্বা আমাকে সবসময় সঙ্গে করে ঢাকার বাইরে, শিল্পকলা একাডেমিসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানে নিয়ে যেতেন। ১৯৯১ সালে বিয়ে হয়ে গেলেও শ্বশুরের বাসা তেজগাঁও বেগুনবাড়ী আব্বার কাছে আসতাম। আব্বা বিদেশে গেলে অনেক জিনিসপত্র নিয়ে আসতেন। আব্বা যখন বিদেশ থেকে আসতেন তখন তার ব্যাগ ও সকলের জন্য আনা উপহার আমাকে ছাড়া কাউকে খুলতে দিতেন না। আমি নিজ হাতে সবাইকে আব্বার গিফটের জিনিস বিলিয়ে দিতাম। আব্বা আমার জন্য চকলেটসহ পছন্দের জিনিস আলাদা করে মায়ের কাছে রেখে দিতেন। যেটা সম্পর্কে কেউ জানতো না। কারণ আব্বা জানতেন যে, আমি সবাইকে দিয়ে নিজের জন্য কিছুই রাখবো না। পরবর্তীতে আমাকে একা ডেকে ওই বিদেশি উপহার দিতেন।
সকালে ঘুম থেকে উঠে আমার প্রথম কাজ ছিল আব্বাকে অনেকগুলো পত্রিকার হেডলাইন পড়ে শোনানো। এরপর আবার স্কুল থেকে এসে আব্বাকে তার পছন্দের নিউজ বিস্তারিত পড়ে শোনাতাম। বাসায় প্রায় ৭ থেকে ৮টি পেপার রাখতেন। আমার পছন্দের ম্যাগাজিন ছিল ইন্ডিয়ান ম্যাগাজিন সানন্দা। আব্বা নিয়মিত আমার জন্য ম্যাগাজিনটা বাসায় নিয়ে আসতেন। এমনকি বিয়ের পর ১০ বছর পর্যন্ত এটি আব্বা নিয়মিত আমার জন্য কিনতেন। আব্বা ছিলেন প্রচণ্ড আত্মভোলা মানুষ। মাকে নিয়ে বেড়াতে যাবেন কিন্তু আব্বার কোনো খবর নেই। কোনো আড্ডায় আছেন বা কাজ করছেন তো করছেনই। বেড়াতে যাওয়ার কথা ভুলে বসে আছেন। আমরা ৮ ভাইবোন বাসায় এতই দুষ্টুমি, ঝগড়াঝাটি, মারামারি করতাম যে, মায়ের মাথা খারাপ হয়ে যেতো। বাবা এসবের মধ্যেও লিখেই যাচ্ছেন। দিন-দুনিয়ার কোনো খবর থাকতো না তার কাছে। তখন মা রেগে গিয়ে বলতেন আমার মাথা খারাপ হওয়ার উপক্রম আর তুমি বাচ্চাদের কিছুই বলছো না।
আব্বা ছিলেন খুবই ভুলোমনা। কোনো জিনিসের কথা তার মনে থাকতো না। মা ভাত বেড়েছেন সময় গড়িয়ে যাচ্ছে কিন্তু আব্বা বই পড়তে পড়তে খেতে আসতে ভুলে গেছেন। মায়ের ধমক খেয়ে অতঃপর খেতে আসতেন। তখন আমি খুব ছোট। সময়টা ছিল ঈদের আগমুহূর্ত। বিটিভিতে এলিগেন নামে একটি ড্রেসের বিজ্ঞাপন দেখে আব্বাকে বলেছিলাম আমাকে ড্রেসটি কিনে দিতে হবে। আব্বা বললেন ঠিক আছে অফিস থেকে এসে কিনে দেবো। কিসের কি। রাত গভীর হয়ে যায় আব্বা আর বাসায় আসেন না। শেষমেশ আমি কান্না করতে করতে ঘুমিয়ে পড়েছি। পরে আব্বা বাসায় এসে আমাকে ঘুম থেকে জাগিয়ে এলিফ্যান্ট রোড থেকে সেই জামাটি কিনে দেন।
একবার আদমশুমারির লোকজন বাসায় এসেছে নাম তালিকাভুক্ত করতে। আব্বা একে একে আমাদের সব ভাইবোনের নাম বললেন। কিন্তু যে আমাকে এতটাই ভালোবাসতেন, সে আমার নাম লেখানোর কথাটাই ভুলে গেছেন। শুমারির লোকটি বাসা থেকে বের হওয়ার পর আমি ভ্যাঁ ভ্যাঁ করে কান্না করে দিয়ে বললাম আব্বা আপনি আমার নামটিই বলেন নি। তখন আব্বা বললো কি সাংঘাতিক কথা। এরপর ওই লোককে ডেকে আমার নাম তালিকাভুক্ত করান।
আমি কোনো কারণে রাগ করলে প্রায় সময় ভাত না খেয়ে ঘুমিয়ে থাকতাম। আব্বা বাসায় এসে আমাকে বলতো ‘মায়ো’ (মা) ওঠো ভাত খাবে। আব্বা দেখতে এতটাই সুন্দর ছিলেন যে, আমি প্রায়ই অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকতাম আর ভাবতাম আমার আব্বা এত সুন্দর। আমরা কেউ তার মতো সুন্দর হলাম না কেনো? আব্বা তার লেখা একটি কবিতার বই ‘পাখির কাছে, ফুলের কাছে’ আমাদের তিন বোন আতিয়া, তানিয়া ও জিনিয়ার নামে উৎসর্গ করেন।
No comments