গাড়িতে গাড়িতে ‘গ্যাস বোমা’ by ফরিদ উদ্দিন আহমেদ
একেকটি
যানবাহনে গ্যাস সিলিন্ডার যেন শক্তিশালী বোমা। বিপজ্জনক এ সিলিন্ডার এখন
ধ্বংসযজ্ঞ ডেকে আনছে কোনো কোনো ক্ষেত্রে। যানবাহন, বাসাবাড়ি ও রেস্তোরাঁয়
অনিরাপদ সিলিন্ডার বিস্ফোরণে প্রতিদিনই দেশের কোথাও না কোথাও ঘটছে
প্রাণঘাতী দুর্ঘটনা। বাড়ছে মৃত্যুর মিছিল। প্রতিটি গাড়িই যেন গ্যাস বোমা
বহন করছে! নিম্নমানের সিলিন্ডার ও কিটস ব্যবহার, পাঁচ বছর পরপর রিটেস্ট না
করাসহ বিভিন্ন কারণে সিলিন্ডার এখন বিপজ্জনক বোমায় পরিণত হয়েছে। বৈধ বা
অবৈধভাবে গাড়িতে সংযোজিত সিএনজি সিলিন্ডার এখন জানমালের জন্য ভয়ঙ্কর হুমকি
হয়ে দাঁড়িয়েছে। দুর্ঘটনায় অনেকে আহত হয়ে হাসপাতালে কাতরাচ্ছেন। কিন্তু
সরকারের নিয়ন্ত্রক সংস্থার তেমন কোনো উদ্যোগই চোখে পড়ছে না।
চকবাজার ট্র্যাজেডির পর গাড়িতে গ্যাস সিলিন্ডার ব্যবহার না করার বিকল্প ভাবছে সরকার।
বিশেষজ্ঞদের মতে, সিএনজি সিলিন্ডারে প্রতি বর্গইঞ্চিতে ৩২শ’ পাউন্ড চাপে গ্যাস ভরা হয়, ওই সময় গাড়ি ভয়াবহ বোমা হয়ে বিস্ফোরণের বিপদ সৃষ্টি করতে পারে। এ আশঙ্কা রোধে গ্যাস সিলিন্ডারের সঠিক মান রক্ষা করা জরুরি। বাধ্যবাধকতা থাকলেও সিএনজিচালিত গাড়ির পাঁচ বছরের বেশি পুরনো সিলিন্ডার পুনঃপরীক্ষায় কেউ উদ্যোগী হচ্ছে না। রিটেস্টের মেয়াদোত্তীর্ণ বেশিরভাগ গাড়ি বিপজ্জনক সিলিন্ডার নিয়ে রাস্তায় চলছে প্রতিদিন। ঘন ঘন দুর্ঘটনার কারণে সিএনজি সিলিন্ডারের নিরাপত্তায় উদ্বিগ্ন নিয়ন্ত্রক সংস্থা রূপান্তরিত প্রাকৃতিক গ্যাস কোম্পানি লি. (আরপিজিসিএল)।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়ায় গাড়িতে ব্যবহার করা গ্যাস সিলিন্ডার মৃত্যু ফাঁদে পরিণত হয়েছে। মানহীন ও সময়মত পুনঃপরীক্ষা না করানোই এসব দুর্ঘটনার মূল কারণ। নিয়ন্ত্রক সংস্থা রূপান্তরিত দায় চাপাচ্ছে বিআরটিএ’র (বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি) কাঁধে। বলছে, বিষয়টি আইনের মধ্যে না থাকায় রোধ করা যাচ্ছে না সিলিন্ডার বিস্ফোরণ। আরপিজিসিএল’র হিসাব অনুযায়ী সারা দেশে প্রায় ৫ লাখ সিএনজিচালিত যানবাহন রয়েছে। এর মধ্যে একই সিলিন্ডার পাঁচ বছরের বেশি সময় ধরে ব্যবহার করা গাড়ির সংখ্যা অর্ধেকের বেশি। পুনঃপরীক্ষা ছাড়াই চলছে সড়ক-মহাসড়কে।
এ বিষয়ে আরপিজিসিএল’র মহাব্যবস্থাপক (অপারেশন) প্রকৌশলী মহাম্মদ আলী বিশ্বাস বলেন, ৫ লাখ গাড়িতে সাড়ে ৫ লাখ সিলিন্ডার রয়েছে। এর অর্ধেকের বেশি মেয়াদোত্তীর্ণ হলেও রিটেস্ট করাতে আসে না। আর ট্রাকগুলো যে সিলিন্ডার ব্যবহার করে তার পুরোটাই অবৈধ। নিয়ম অনুযায়ী প্রতিটি সিলিন্ডার ৫ বছর অন্তর পরীক্ষা করানোর কথা থাকলেও পরিবহনগুলো আসে না। তিনি বলেন, এক্ষেত্রে বিআরটিএ’র ভূমিকা রয়েছে। ফিটসেনকে ঠিকমত দেখলে এ রকম দুর্ঘটনা ঘটতো না।
সূত্র জানায়, সারা দেশে রিটেস্ট সেন্টার রয়েছে মাত্র ১৩ থেকে ১৪টি। বিআরটিএ থেকে ফিটনেস নেয়ার সময় যদি রিটেস্ট বা পুনঃপরীক্ষা বাধ্যতামূলক করা হয় তাহলে কমবে ঝুঁকি। আর বাঁচবে জীবন। বিআরটিএ’র হিসাব অনুযায়ী চলতি বছরের জানুয়ারি পর্যন্ত সারা দেশে নিবন্ধিত যানবাহনের সংখ্যা সাড়ে ৩৮ লাখ। এর মধ্যে ঢাকায় চলছে ১৩ লাখ ৮৪ হাজার ১৯২। যার বড় একটি অংশ সিএনজিচালিত। কিন্তু এর সঠিক কোনো পরিসংখ্যান তাদের কাছে নেই। ঢাকাসহ সারা দেশে যানবাহনের একটি বড় অংশই সিএনজিচালিত। কিন্তু সিলিন্ডারের ফিটনেস পাঁচ বছর পর পর পরীক্ষার নিয়ম থাকলেও, তা করা হচ্ছে না। জ্বালানি বিভাগের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সারা দেশে চার লাখ গ্যাস সিলিন্ডারের মধ্যে মাত্র ৫৩ হাজার ৮০০ সিলিন্ডারের রিটেস্টিং করা হয়েছে। মোট সিলিন্ডারের যা মাত্র ১৪ ভাগ। সারা দেশে সরকারি বেসরকারি মিলিয়ে ১৮০ সিএনজি কনভারশন ওয়ার্কশপ রয়েছে। দেশে গত ১৫ বছর ধরে সিএনজিচালিত গাড়ির প্রচলন শুরু হয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, দীর্ঘদিনের পুরাতন সিলিন্ডার ব্যবহার করায় গাড়িচালক ও ব্যবহারকারী নিজেই জানেন না তার গাড়িটি বিপজ্জনক বোমা হয়ে উঠেছে। এ বিষয়ে প্রচার কম থাকার অভিযোগ উঠছে। অথচ মেয়াদোত্তীর্ণ এক একটি সিলিন্ডার একটি বোমার চেয়েও ভয়াবহ। সূত্র মতে, প্রতিটি গাড়ির সিএনজি সিলিন্ডার রিটেস্টিং জন্য দু-তিনদিন সময় লাগে। এ ছাড়া রিটেস্টিং করাতে গেলে ২০ থেকে ৪০ লিটারের প্রতিটি সিলিন্ডারের জন্য দুই হাজার টাকা, ৪০ থেকে ৬০ লিটারের প্রতিটি সিলিন্ডারের জন্য আড়াই হাজার টাকা, ৬০ থেকে ৮০ লিটারের প্রতিটি সিলিন্ডারের জন্য তিন হাজার টাকা এবং ৮০ লিটারের বেশি প্রতিটি সিলিন্ডারের জন্য সাড়ে তিন হাজার টাকা খরচ হয়। এ কারণে গাড়ির মালিকরা এ প্রক্রিয়াকে বাড়তি খরচ ও সময় নষ্ট বলে মনে করেন। সূত্র জানায়, মাঝে মধ্যে কিছু প্রাইভেটকারের পুনঃপরীক্ষার প্রতিবেদন পাওয়া যায় তবে বাস-ট্রাক বা অন্য যানবহনগুলোর কোনো তথ্যই নেই।
অভিযোগ রয়েছে রূপান্তরিত প্রাকৃতিক গ্যাস কোম্পানির আড়ালে কিছু অসাধু ব্যক্তি নিয়মের তোয়াক্কা না করে কম পয়সায় যানবাহনকে সিএনজিতে রূপান্তর করে দিচ্ছে। এসব ক্ষেত্রে অক্সিজেন সিলিন্ডার এমনকি কম দামি জোড়াতালি দেয়া সিলিন্ডারও গাড়িতে বসানো হয়। রফিক নামের একজন সিএনজিচালক মানবজমিনকে বলেন, নতুন গাড়ির সঙ্গে যে সিলিন্ডারগুলো আসে সেগুলো পাঁচ বছরের বেশি সময় যায়। তার গাড়ি বয়স ৬ বছরের উপরে। এখনো পুরানো সিলিন্ডার দিয়েই চলছে। তিনি অভিযোগ করে বলেন, কিছু অসাধু ব্যক্তি জোড়াতালি দেয়া সিলিন্ডার তৈরি করে দেশে। এগুলোই দুর্ঘটনা ঘটায়। মানুষ মারা যায়। মনে হচ্ছে দেখার কেউ নেই। গাড়ির জন্য বিশেষভাবে তৈরি করা সিলিন্ডারগুলো উচ্চ তাপমাত্রা ও হাইড্রোলিক চাপ সহনীয় করে তৈরি করা হয়। সেখানে জোড়া থাকে না।
কনজুমারস এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব)-এর জ্বালানি বিষয়ক উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. শামসুল আলম এ প্রসঙ্গে মানবজমিনকে বলেন, বাজারে গুণগত সিলিন্ডার আসছে না। গাড়িগুলো সিলিন্ডার সঠিক সময় পরীক্ষা করছে না। মান ঠিকমত যাচাই হচ্ছে না। ফিটনেস দেখা হচ্ছে না। মেয়াদোত্তীর্ণ ও নিম্নমানের সিলিন্ডার ব্যবহার এখন জীবন্ত বোমায় পরিণত হচ্ছে। পাঁচ বছর পর পর রিটেস্ট না করাসহ বিভিন্ন কারণে সিলিন্ডার বিস্ফোরণ ও হতাহতের সংখ্যা উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে। রাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণকারী প্রতিষ্ঠানগুলো পুরোপুরি ব্যর্থ। নিয়ন্ত্রণকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর কর্তা ব্যক্তিরা ঘুষ খেয়ে সুবিধা দিচ্ছে। এদিকে মানুষের জীবন যাচ্ছে। জীবন রক্ষার অধিকার হারাচ্ছে জনগণ। দেশে সুশাসনের অভাবেই এসব ঘটনা ঘটছে বলে তিনি মন্তব্য করেন।
ওবায়দুল কাদের যা বললেন: এদিকে গতকাল ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে অগ্নিকাণ্ডে দগ্ধদের দেখতে এসে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, পুরান ঢাকার চকবাজার ট্র্যাজেডির দায় সরকার এড়িয়ে যেতে পারে না। সরকার নাকে তেল দিয়ে ঘুমাচ্ছে না। একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি যাতে না ঘটে তার জন্য কাজ করছে। তিনি বলেন, এখানে জীবিকার চেয়ে জীবনের ঝুঁকি বেশি। তাই এখানে কেমিক্যাল গোডাউন থাকতে দেয়া হবে না। নিমতলির ঘটনার পর কেমিক্যাল গোডাউন সরানোর উদ্যোগ নেয়া হয়েছিল। কিন্তু ক্লোজ মনিটরিংয়ের অভাব ছিল। তাই এখানে আবার গোডাউন করা হয়েছে। আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, গাড়িতে থাকা গ্যাস সিলিন্ডার বিপজ্জনক ঘটনা ঘটাচ্ছে। সিলিন্ডার ব্যবহার না করাই ভালো। এ বিষয়ে নির্দেশনা দিয়েছি। গাড়িতে গ্যাস সিলিন্ডার ব্যবহার না করার বিকল্প ভাবা হচ্ছে। ইতিমধ্যে এ বিষয়ে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে যাতে কেমিক্যাল গোডাউন না থাকে। এ সময় নিহত মধ্যে ৯ জনকে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে একলাখ টাকা দেন সেতুমন্ত্রী।
চকবাজার ট্র্যাজেডির পর গাড়িতে গ্যাস সিলিন্ডার ব্যবহার না করার বিকল্প ভাবছে সরকার।
বিশেষজ্ঞদের মতে, সিএনজি সিলিন্ডারে প্রতি বর্গইঞ্চিতে ৩২শ’ পাউন্ড চাপে গ্যাস ভরা হয়, ওই সময় গাড়ি ভয়াবহ বোমা হয়ে বিস্ফোরণের বিপদ সৃষ্টি করতে পারে। এ আশঙ্কা রোধে গ্যাস সিলিন্ডারের সঠিক মান রক্ষা করা জরুরি। বাধ্যবাধকতা থাকলেও সিএনজিচালিত গাড়ির পাঁচ বছরের বেশি পুরনো সিলিন্ডার পুনঃপরীক্ষায় কেউ উদ্যোগী হচ্ছে না। রিটেস্টের মেয়াদোত্তীর্ণ বেশিরভাগ গাড়ি বিপজ্জনক সিলিন্ডার নিয়ে রাস্তায় চলছে প্রতিদিন। ঘন ঘন দুর্ঘটনার কারণে সিএনজি সিলিন্ডারের নিরাপত্তায় উদ্বিগ্ন নিয়ন্ত্রক সংস্থা রূপান্তরিত প্রাকৃতিক গ্যাস কোম্পানি লি. (আরপিজিসিএল)।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়ায় গাড়িতে ব্যবহার করা গ্যাস সিলিন্ডার মৃত্যু ফাঁদে পরিণত হয়েছে। মানহীন ও সময়মত পুনঃপরীক্ষা না করানোই এসব দুর্ঘটনার মূল কারণ। নিয়ন্ত্রক সংস্থা রূপান্তরিত দায় চাপাচ্ছে বিআরটিএ’র (বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি) কাঁধে। বলছে, বিষয়টি আইনের মধ্যে না থাকায় রোধ করা যাচ্ছে না সিলিন্ডার বিস্ফোরণ। আরপিজিসিএল’র হিসাব অনুযায়ী সারা দেশে প্রায় ৫ লাখ সিএনজিচালিত যানবাহন রয়েছে। এর মধ্যে একই সিলিন্ডার পাঁচ বছরের বেশি সময় ধরে ব্যবহার করা গাড়ির সংখ্যা অর্ধেকের বেশি। পুনঃপরীক্ষা ছাড়াই চলছে সড়ক-মহাসড়কে।
এ বিষয়ে আরপিজিসিএল’র মহাব্যবস্থাপক (অপারেশন) প্রকৌশলী মহাম্মদ আলী বিশ্বাস বলেন, ৫ লাখ গাড়িতে সাড়ে ৫ লাখ সিলিন্ডার রয়েছে। এর অর্ধেকের বেশি মেয়াদোত্তীর্ণ হলেও রিটেস্ট করাতে আসে না। আর ট্রাকগুলো যে সিলিন্ডার ব্যবহার করে তার পুরোটাই অবৈধ। নিয়ম অনুযায়ী প্রতিটি সিলিন্ডার ৫ বছর অন্তর পরীক্ষা করানোর কথা থাকলেও পরিবহনগুলো আসে না। তিনি বলেন, এক্ষেত্রে বিআরটিএ’র ভূমিকা রয়েছে। ফিটসেনকে ঠিকমত দেখলে এ রকম দুর্ঘটনা ঘটতো না।
সূত্র জানায়, সারা দেশে রিটেস্ট সেন্টার রয়েছে মাত্র ১৩ থেকে ১৪টি। বিআরটিএ থেকে ফিটনেস নেয়ার সময় যদি রিটেস্ট বা পুনঃপরীক্ষা বাধ্যতামূলক করা হয় তাহলে কমবে ঝুঁকি। আর বাঁচবে জীবন। বিআরটিএ’র হিসাব অনুযায়ী চলতি বছরের জানুয়ারি পর্যন্ত সারা দেশে নিবন্ধিত যানবাহনের সংখ্যা সাড়ে ৩৮ লাখ। এর মধ্যে ঢাকায় চলছে ১৩ লাখ ৮৪ হাজার ১৯২। যার বড় একটি অংশ সিএনজিচালিত। কিন্তু এর সঠিক কোনো পরিসংখ্যান তাদের কাছে নেই। ঢাকাসহ সারা দেশে যানবাহনের একটি বড় অংশই সিএনজিচালিত। কিন্তু সিলিন্ডারের ফিটনেস পাঁচ বছর পর পর পরীক্ষার নিয়ম থাকলেও, তা করা হচ্ছে না। জ্বালানি বিভাগের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সারা দেশে চার লাখ গ্যাস সিলিন্ডারের মধ্যে মাত্র ৫৩ হাজার ৮০০ সিলিন্ডারের রিটেস্টিং করা হয়েছে। মোট সিলিন্ডারের যা মাত্র ১৪ ভাগ। সারা দেশে সরকারি বেসরকারি মিলিয়ে ১৮০ সিএনজি কনভারশন ওয়ার্কশপ রয়েছে। দেশে গত ১৫ বছর ধরে সিএনজিচালিত গাড়ির প্রচলন শুরু হয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, দীর্ঘদিনের পুরাতন সিলিন্ডার ব্যবহার করায় গাড়িচালক ও ব্যবহারকারী নিজেই জানেন না তার গাড়িটি বিপজ্জনক বোমা হয়ে উঠেছে। এ বিষয়ে প্রচার কম থাকার অভিযোগ উঠছে। অথচ মেয়াদোত্তীর্ণ এক একটি সিলিন্ডার একটি বোমার চেয়েও ভয়াবহ। সূত্র মতে, প্রতিটি গাড়ির সিএনজি সিলিন্ডার রিটেস্টিং জন্য দু-তিনদিন সময় লাগে। এ ছাড়া রিটেস্টিং করাতে গেলে ২০ থেকে ৪০ লিটারের প্রতিটি সিলিন্ডারের জন্য দুই হাজার টাকা, ৪০ থেকে ৬০ লিটারের প্রতিটি সিলিন্ডারের জন্য আড়াই হাজার টাকা, ৬০ থেকে ৮০ লিটারের প্রতিটি সিলিন্ডারের জন্য তিন হাজার টাকা এবং ৮০ লিটারের বেশি প্রতিটি সিলিন্ডারের জন্য সাড়ে তিন হাজার টাকা খরচ হয়। এ কারণে গাড়ির মালিকরা এ প্রক্রিয়াকে বাড়তি খরচ ও সময় নষ্ট বলে মনে করেন। সূত্র জানায়, মাঝে মধ্যে কিছু প্রাইভেটকারের পুনঃপরীক্ষার প্রতিবেদন পাওয়া যায় তবে বাস-ট্রাক বা অন্য যানবহনগুলোর কোনো তথ্যই নেই।
অভিযোগ রয়েছে রূপান্তরিত প্রাকৃতিক গ্যাস কোম্পানির আড়ালে কিছু অসাধু ব্যক্তি নিয়মের তোয়াক্কা না করে কম পয়সায় যানবাহনকে সিএনজিতে রূপান্তর করে দিচ্ছে। এসব ক্ষেত্রে অক্সিজেন সিলিন্ডার এমনকি কম দামি জোড়াতালি দেয়া সিলিন্ডারও গাড়িতে বসানো হয়। রফিক নামের একজন সিএনজিচালক মানবজমিনকে বলেন, নতুন গাড়ির সঙ্গে যে সিলিন্ডারগুলো আসে সেগুলো পাঁচ বছরের বেশি সময় যায়। তার গাড়ি বয়স ৬ বছরের উপরে। এখনো পুরানো সিলিন্ডার দিয়েই চলছে। তিনি অভিযোগ করে বলেন, কিছু অসাধু ব্যক্তি জোড়াতালি দেয়া সিলিন্ডার তৈরি করে দেশে। এগুলোই দুর্ঘটনা ঘটায়। মানুষ মারা যায়। মনে হচ্ছে দেখার কেউ নেই। গাড়ির জন্য বিশেষভাবে তৈরি করা সিলিন্ডারগুলো উচ্চ তাপমাত্রা ও হাইড্রোলিক চাপ সহনীয় করে তৈরি করা হয়। সেখানে জোড়া থাকে না।
কনজুমারস এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব)-এর জ্বালানি বিষয়ক উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. শামসুল আলম এ প্রসঙ্গে মানবজমিনকে বলেন, বাজারে গুণগত সিলিন্ডার আসছে না। গাড়িগুলো সিলিন্ডার সঠিক সময় পরীক্ষা করছে না। মান ঠিকমত যাচাই হচ্ছে না। ফিটনেস দেখা হচ্ছে না। মেয়াদোত্তীর্ণ ও নিম্নমানের সিলিন্ডার ব্যবহার এখন জীবন্ত বোমায় পরিণত হচ্ছে। পাঁচ বছর পর পর রিটেস্ট না করাসহ বিভিন্ন কারণে সিলিন্ডার বিস্ফোরণ ও হতাহতের সংখ্যা উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে। রাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণকারী প্রতিষ্ঠানগুলো পুরোপুরি ব্যর্থ। নিয়ন্ত্রণকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর কর্তা ব্যক্তিরা ঘুষ খেয়ে সুবিধা দিচ্ছে। এদিকে মানুষের জীবন যাচ্ছে। জীবন রক্ষার অধিকার হারাচ্ছে জনগণ। দেশে সুশাসনের অভাবেই এসব ঘটনা ঘটছে বলে তিনি মন্তব্য করেন।
ওবায়দুল কাদের যা বললেন: এদিকে গতকাল ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে অগ্নিকাণ্ডে দগ্ধদের দেখতে এসে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, পুরান ঢাকার চকবাজার ট্র্যাজেডির দায় সরকার এড়িয়ে যেতে পারে না। সরকার নাকে তেল দিয়ে ঘুমাচ্ছে না। একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি যাতে না ঘটে তার জন্য কাজ করছে। তিনি বলেন, এখানে জীবিকার চেয়ে জীবনের ঝুঁকি বেশি। তাই এখানে কেমিক্যাল গোডাউন থাকতে দেয়া হবে না। নিমতলির ঘটনার পর কেমিক্যাল গোডাউন সরানোর উদ্যোগ নেয়া হয়েছিল। কিন্তু ক্লোজ মনিটরিংয়ের অভাব ছিল। তাই এখানে আবার গোডাউন করা হয়েছে। আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, গাড়িতে থাকা গ্যাস সিলিন্ডার বিপজ্জনক ঘটনা ঘটাচ্ছে। সিলিন্ডার ব্যবহার না করাই ভালো। এ বিষয়ে নির্দেশনা দিয়েছি। গাড়িতে গ্যাস সিলিন্ডার ব্যবহার না করার বিকল্প ভাবা হচ্ছে। ইতিমধ্যে এ বিষয়ে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে যাতে কেমিক্যাল গোডাউন না থাকে। এ সময় নিহত মধ্যে ৯ জনকে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে একলাখ টাকা দেন সেতুমন্ত্রী।
No comments