ছুটির দিনেও রাজপথে শিক্ষার্থীরা
‘নির্দিষ্ট
দূরত্বে দাঁড়ানো এক একজন শিক্ষার্থী। গলায় ঝুলানো নিজ নিজ
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পরিচয়পত্র। হাত উঁচিয়ে যানবাহনকে দিকনির্দেশনা দিচ্ছে।
লেন ধরে চলতে সহযোগিতা করছে। কেউ আবার বুকে প্ল্যাকার্ড ঝুলিয়ে দাঁড়িয়ে আছে
ফুটপাথে বা ফুটওভারব্রিজের কাছে। প্ল্যাকার্ডে লেখা দয়া করে ফুটপাথ দিয়ে
হাঁটুন। ওভারব্রিজ দিয়ে রাস্তা পার হোন।’ শুক্রবার ছুটির দিন রাজধানীর
বিভিন্ন জায়গায় দেখা গেছে এমন চিত্র। নিরাপদ সড়কের দাবিতে চলা
শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের ষষ্ঠ দিন গতকালও বিভিন্ন সড়কে তারা শান্তিপূর্ণ
কর্মসূচি পালন করে। যানবাহনের কাগজপত্র পরীক্ষায় ট্রাফিক পুলিশকে সহযোগিতার
পাশাপাশি তারা ট্রাফিক ব্যবস্থাপনায়ও কাজ করে। কোথাও কোথাও শিক্ষার্থীদের
জমায়েত থেকে নিরাপদ সড়কের দাবিতে স্লোগান দিতেও দেখা গেছে। গতকালের এসব
জমায়েতে নৌ পরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খানের পদত্যাগের দাবি উঠেছে জোরালোভাবে।
বৃহস্পতিবার মিরপুরে শিক্ষার্থীদের ওপর পুলিশ ও দুর্বৃত্তদের একযোগে হামলার
প্রতিবাদে গতকাল মানববন্ধনও করেছেন ওই এলাকার সাবেক শিক্ষার্থী ও
অভিভাবকরা।
সকাল ১১টার দিকে রাজধানীর ধানমন্ডি-২৭ নম্বর ও মানিক মিয়া এভিনিউয়ে জড়ো হতে শুরু করে ধানমিন্ড বয়েজ স্কুল, নিউ মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজ, রাজধানী সরকারি বিদ্যালয়সহ আশেপাশের বিভিন্ন স্কুল-কলেজ পড়ুয়া শিক্ষার্থীরা। পরে এতে যোগ দেয় ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীরা। তাদের কাছে ছিল বিভিন্ন হাতে লেখা ব্যানার-ফেস্টুন। মাথায় ‘নিরাপদ সড়ক চাই’ লেখা সংবলিত ফিতা। এ সময় তারা ‘আমার ভাই কবরে, খুনি কেন বাহিরে; হয় মরবো, না হয় নিরাপদ সড়ক গড়বো; উই ওয়ান্ট জাস্টিস’সহ নানা স্লোগান দিতে থাকে। শিক্ষার্থীদের এক দল রাস্তায় চলমান হাতেগোনা ব্যক্তিগত গাড়িরগুলোকে এক সারিতে চলতে বাধ্য করে। কেউ কেউ আবার গাড়ির কাগজপত্র দেখে। তবে কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ছাড়াই বেলা ১টা পর্যন্ত শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের পর সরে পড়ে তারা।
এ সময় শিক্ষার্থীরা বলেছে, অনেকেই আমাদের শান্তিপূর্ণ আন্দোলনকে বিশৃঙ্খলায় পরিণত করার অপচেষ্টা করছে।
কিন্তু আমরা সেটা হতে দেবো না। তারা যত চেষ্টা করুন না কেন, আমরা আমাদের দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাবো। একই সময় মোহাম্মদপুর বাসস্ট্যান্ড থেকে শুরু করে আসাদগেট পর্যন্ত পুরো রাস্তা নিজেদের দখলে নেয় সেন্ট জোসেফ স্কুল, গভর্মেন্ট মোহাম্মদপুর কলেজ, বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয়সহ বেশকিছু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছাত্র-ছাত্রীরা। আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা রিকশা, প্রাইভেটকারসহ বিভিন্ন যানবাহন আলাদা আলাদা লেনে যাওয়ার ব্যবস্থা করে দেয়। কর্তব্যরত ট্রাফিক পুলিশকেও তার দায়িত্ব পালনে সহায়তা করে। এ সময় আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন গাড়ির ফিটনেস ও ড্রাইভিং লাইসেন্স দেখে। তবে ঢাকা সিটি কলেজ থেকে সাইন্স ল্যাব মোড়, নিউ মার্কেট এলাকা, জিগাতলা, পান্থপথ মোড়, কলাবাগান মোড়সহ ধানমন্ডির অন্যান্য এলাকার রাস্তাগুলোতে শিক্ষার্থীদের দেখা যায়নি।
এদিকে সকাল থেকে শাহবাগ চত্বরে বিপুলসংখ্যক পুলিশের উপস্থিতি ছিল। ১১টার দিকে শাহবাগ এলাকায় বেশকিছু শিক্ষার্থী জড়ো হওয়ার চেষ্টা করে। সন্দেহজনক উল্লেখ করে পুলিশ তাদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রদত্ত পরিচয়পত্র দেখতে চায়। তখন অনেকেই তাদের পরিচয়পত্র দেখাতে পারেনি। পরে পুলিশ তাদের চলে যেতে বলে। সন্দেহভাজন উল্লেখ করে পুলিশ তাদের শাহবাগে দাঁড়াতে দেয়নি। কিন্তু বিকাল ৩টা থেকে আবার ১০-১৫ জন শিক্ষার্থী সেখানে জড়ে হয়। বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের হাতে প্ল্যাকার্ড নিয়ে শাহবাগ মোড়ে দাঁড়িয়ে প্রতিবাদ জানাতে দেখা গেছে। ‘উই ওয়ান্ট জাস্টিস’; ‘আমিই বাংলাদেশ; নিরাপদ সড়ক চাই’ ইত্যাদি নানা প্ল্যাকার্ড প্রদর্শন করে। এ সময় জড়ো হওয়া শিক্ষার্থীরা প্রাইভেটকারের যাত্রীদের সিটবেল্ট বেঁধে চলাচলের জন্য অনুরোধ করে। অন্যদিনের ব্যস্ততম শাহবাগ দিয়ে তখন যানবাহন চলাচল ছিল একেবারে কম। শুধু বিআরটিসির দু’একটি বাস দেখা গেছে। দীর্ঘ সময় আর কোনো গণপরিবহন চোখে পড়েনি।
এদিকে নিরাপদ সড়কের দাবিতে চলমান ছাত্র আন্দোলনের সঙ্গে এতাত্মতা প্রকাশ করেছেন অনেক অভিভাবক। গতকাল সকালে মিরপুর সনি সিনেমা হলের সামনে ‘মনিপুর উচ্চ বিদ্যালয়’ ৯৫ ব্যাচ’ আয়োজিত এক মানববন্ধনে যোগ দেন আশেপাশের এলাকার অভিভাবকরা। এ সময় তারা বিভিন্ন প্ল্যাকার্ড, ব্যানার ও ফেস্টুন প্রদর্শন করেন। তাতে সরকারের কাছে নিরাপদ সড়ক বাস্তবায়নে ছাত্র সমাজের দাবি মেনে নেয়ার আহ্বান জানান।
সারোয়ার আলম নামে এক অভিভাবক বলেন, সড়কে দুর্ঘটনা বন্ধ এবং নিরাপত্তার জন্য কিছুদিন ধরে ছাত্রদের যে আন্দোলন চলে আসছে তা যেন সরকার দ্রুত মেনে নেয়। আমরা লক্ষ্য করেছি এই আন্দোলনে সরকারের লোকজন অন্য একটি রাজনৈতিক দলের নাম জড়ানোর চেষ্টা করছে। আমরা সরকারকে বলবো আপনারা এটা না করে প্লিজ ছোট ছোট ছেলেমেয়েদের দাবি মেনে নেন। এটা শুধু ওদের দাবি নয়, এটা আমাদের সবার দাবি।
শারমিন আরা নিপা নামে অন্য এক অভিভাবক বলেন, আমরা চাই আমাদের বাচ্চারা নিরাপদে স্কুলে যাক এবং বাসায় ফিরে আসুক। কিন্তু গতকাল পুলিশের সঙ্গে ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীরা যে নির্মমভাবে আমাদের বাচ্চাদের মারধর করছে তার দ্রুত বিচার করে ওদের দাবি মেনে নিতে হবে। ছাত্রসমাজের এই আন্দোলনে আমরা পূর্ণ সমর্থন প্রকাশ করছি। সেই সঙ্গে সরকারের কাছে ওদের ৯ দফা দাবি মেনে নিয়ে কার্যকরের আহ্বান জানাচ্ছি।
এদিকে নিরাপদ সড়কের দাবিতে আন্দোলনরত ছাত্ররা গতকালও মিরপুর দুই নম্বর এবং মিরপুর ১০ নম্বর গোল চত্বরে নেমে আসে। দুপুরের বিরতি ছাড়া বাকি সময় তারা রাস্তায় অবস্থান করে। এ সময় যানবাহনকে নিজ নিজ সিগন্যাল মানতে সচেতনতা তৈরি এবং নিয়ন্ত্রণ করে ছাত্ররা। মোটর সাইকেলসহ বিভিন্ন গাড়ির এবং চালকদের লাইসেন্স না থাকায় পুলিশের হাতে তুলে দিতে দেখা যায়। এক্ষেত্রে বাদ যায়নি পুলিশ ও দুর্নীতি দমন কমিশনের গাড়িও। লাইসেন্স না থাকায় সে গাড়িগুলোর বিরুদ্ধেও মামলা নিতে বাধ্য করা হয় ট্রাফিক পুলিশকে। দুপুরের বিরতির পর ছাত্ররা পুনরায় জড়ো হয়ে নিজেদের দাবি-দাওয়া তুলে ধরে। ছাত্রদের পক্ষে ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির বিবিএর এক শিক্ষার্থী বলেছে, আমাদের সব দাবির মূল হলো নৌ পরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খানের পদত্যাগ। তিনি আমাদের ভাই-বোনের হত্যা নিয়ে তাচ্ছিল্য করে হেসেছেন। এটা কোনোভাবে মেনে নেয়ার নয়। এছাড়া সরকার নিহত দু’ভাইবোনের পরিবারকে ২০ লাখ টাকা করে অনুদান দিয়েছে। একটা জীবনের মূল্য কি ২০ লাখ টাকা? আমরা চাই সড়কে যেন আর একটি প্রাণও না যায়। আগামীকাল সকাল ১০টায় পার্শ্ববর্তী সব স্কুল কলেজের শিক্ষার্থীরা একত্রিত হয়ে একই স্থানে বিক্ষোভ এবং নিরাপদ সড়কের দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে এই শিক্ষার্থী।
সকাল থেকে রাজধানীর তেজগাঁওয়ের অন্যতম মহাখালী বাস টার্মিনাল থেকে দূরপাল্লার কোনো বাস ছেড়ে যায়নি। সকাল থেকে বাসের চালক ও হেলপারদের টার্মিনালের মধ্যে আড্ডা দিতে দেখা গেছে। কাউকে আবার লাঠি হাতে বসে থাকতে দেখা যায়। টার্মিনাল থেকে কোনো বাস যাতে বের না হতে পারে সেদিকে তাদের কড়া দৃষ্টি ছিল। এনা পরিবহনের একটি বাস গ্যারেজে নেয়ার জন্য বের হলে শ্রমিকরা বাধা দেয়। চালক বাধ্য হয়ে টার্মিনালে রেখে দেন। পরিবহন শ্রমিকদের একটি দলকে মহাখালীর চৌরাস্তার মোড়ে মহড়া দিতে দেখা যায়।
গতকাল বিকাল ৩টার দিকে নৌ পরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান মহাখালী বাস টার্মিনালে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির অফিসে গেলেও উপস্থিত সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেননি। তবে বাংলাদেশে সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির কেন্দ্রীয় মহাসচিব খন্দকার এনায়েত উল্লাহ সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন।
সকাল ১১টার দিকে রাজধানীর ধানমন্ডি-২৭ নম্বর ও মানিক মিয়া এভিনিউয়ে জড়ো হতে শুরু করে ধানমিন্ড বয়েজ স্কুল, নিউ মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজ, রাজধানী সরকারি বিদ্যালয়সহ আশেপাশের বিভিন্ন স্কুল-কলেজ পড়ুয়া শিক্ষার্থীরা। পরে এতে যোগ দেয় ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীরা। তাদের কাছে ছিল বিভিন্ন হাতে লেখা ব্যানার-ফেস্টুন। মাথায় ‘নিরাপদ সড়ক চাই’ লেখা সংবলিত ফিতা। এ সময় তারা ‘আমার ভাই কবরে, খুনি কেন বাহিরে; হয় মরবো, না হয় নিরাপদ সড়ক গড়বো; উই ওয়ান্ট জাস্টিস’সহ নানা স্লোগান দিতে থাকে। শিক্ষার্থীদের এক দল রাস্তায় চলমান হাতেগোনা ব্যক্তিগত গাড়িরগুলোকে এক সারিতে চলতে বাধ্য করে। কেউ কেউ আবার গাড়ির কাগজপত্র দেখে। তবে কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ছাড়াই বেলা ১টা পর্যন্ত শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের পর সরে পড়ে তারা।
এ সময় শিক্ষার্থীরা বলেছে, অনেকেই আমাদের শান্তিপূর্ণ আন্দোলনকে বিশৃঙ্খলায় পরিণত করার অপচেষ্টা করছে।
কিন্তু আমরা সেটা হতে দেবো না। তারা যত চেষ্টা করুন না কেন, আমরা আমাদের দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাবো। একই সময় মোহাম্মদপুর বাসস্ট্যান্ড থেকে শুরু করে আসাদগেট পর্যন্ত পুরো রাস্তা নিজেদের দখলে নেয় সেন্ট জোসেফ স্কুল, গভর্মেন্ট মোহাম্মদপুর কলেজ, বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয়সহ বেশকিছু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছাত্র-ছাত্রীরা। আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা রিকশা, প্রাইভেটকারসহ বিভিন্ন যানবাহন আলাদা আলাদা লেনে যাওয়ার ব্যবস্থা করে দেয়। কর্তব্যরত ট্রাফিক পুলিশকেও তার দায়িত্ব পালনে সহায়তা করে। এ সময় আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন গাড়ির ফিটনেস ও ড্রাইভিং লাইসেন্স দেখে। তবে ঢাকা সিটি কলেজ থেকে সাইন্স ল্যাব মোড়, নিউ মার্কেট এলাকা, জিগাতলা, পান্থপথ মোড়, কলাবাগান মোড়সহ ধানমন্ডির অন্যান্য এলাকার রাস্তাগুলোতে শিক্ষার্থীদের দেখা যায়নি।
এদিকে সকাল থেকে শাহবাগ চত্বরে বিপুলসংখ্যক পুলিশের উপস্থিতি ছিল। ১১টার দিকে শাহবাগ এলাকায় বেশকিছু শিক্ষার্থী জড়ো হওয়ার চেষ্টা করে। সন্দেহজনক উল্লেখ করে পুলিশ তাদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রদত্ত পরিচয়পত্র দেখতে চায়। তখন অনেকেই তাদের পরিচয়পত্র দেখাতে পারেনি। পরে পুলিশ তাদের চলে যেতে বলে। সন্দেহভাজন উল্লেখ করে পুলিশ তাদের শাহবাগে দাঁড়াতে দেয়নি। কিন্তু বিকাল ৩টা থেকে আবার ১০-১৫ জন শিক্ষার্থী সেখানে জড়ে হয়। বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের হাতে প্ল্যাকার্ড নিয়ে শাহবাগ মোড়ে দাঁড়িয়ে প্রতিবাদ জানাতে দেখা গেছে। ‘উই ওয়ান্ট জাস্টিস’; ‘আমিই বাংলাদেশ; নিরাপদ সড়ক চাই’ ইত্যাদি নানা প্ল্যাকার্ড প্রদর্শন করে। এ সময় জড়ো হওয়া শিক্ষার্থীরা প্রাইভেটকারের যাত্রীদের সিটবেল্ট বেঁধে চলাচলের জন্য অনুরোধ করে। অন্যদিনের ব্যস্ততম শাহবাগ দিয়ে তখন যানবাহন চলাচল ছিল একেবারে কম। শুধু বিআরটিসির দু’একটি বাস দেখা গেছে। দীর্ঘ সময় আর কোনো গণপরিবহন চোখে পড়েনি।
এদিকে নিরাপদ সড়কের দাবিতে চলমান ছাত্র আন্দোলনের সঙ্গে এতাত্মতা প্রকাশ করেছেন অনেক অভিভাবক। গতকাল সকালে মিরপুর সনি সিনেমা হলের সামনে ‘মনিপুর উচ্চ বিদ্যালয়’ ৯৫ ব্যাচ’ আয়োজিত এক মানববন্ধনে যোগ দেন আশেপাশের এলাকার অভিভাবকরা। এ সময় তারা বিভিন্ন প্ল্যাকার্ড, ব্যানার ও ফেস্টুন প্রদর্শন করেন। তাতে সরকারের কাছে নিরাপদ সড়ক বাস্তবায়নে ছাত্র সমাজের দাবি মেনে নেয়ার আহ্বান জানান।
সারোয়ার আলম নামে এক অভিভাবক বলেন, সড়কে দুর্ঘটনা বন্ধ এবং নিরাপত্তার জন্য কিছুদিন ধরে ছাত্রদের যে আন্দোলন চলে আসছে তা যেন সরকার দ্রুত মেনে নেয়। আমরা লক্ষ্য করেছি এই আন্দোলনে সরকারের লোকজন অন্য একটি রাজনৈতিক দলের নাম জড়ানোর চেষ্টা করছে। আমরা সরকারকে বলবো আপনারা এটা না করে প্লিজ ছোট ছোট ছেলেমেয়েদের দাবি মেনে নেন। এটা শুধু ওদের দাবি নয়, এটা আমাদের সবার দাবি।
শারমিন আরা নিপা নামে অন্য এক অভিভাবক বলেন, আমরা চাই আমাদের বাচ্চারা নিরাপদে স্কুলে যাক এবং বাসায় ফিরে আসুক। কিন্তু গতকাল পুলিশের সঙ্গে ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীরা যে নির্মমভাবে আমাদের বাচ্চাদের মারধর করছে তার দ্রুত বিচার করে ওদের দাবি মেনে নিতে হবে। ছাত্রসমাজের এই আন্দোলনে আমরা পূর্ণ সমর্থন প্রকাশ করছি। সেই সঙ্গে সরকারের কাছে ওদের ৯ দফা দাবি মেনে নিয়ে কার্যকরের আহ্বান জানাচ্ছি।
এদিকে নিরাপদ সড়কের দাবিতে আন্দোলনরত ছাত্ররা গতকালও মিরপুর দুই নম্বর এবং মিরপুর ১০ নম্বর গোল চত্বরে নেমে আসে। দুপুরের বিরতি ছাড়া বাকি সময় তারা রাস্তায় অবস্থান করে। এ সময় যানবাহনকে নিজ নিজ সিগন্যাল মানতে সচেতনতা তৈরি এবং নিয়ন্ত্রণ করে ছাত্ররা। মোটর সাইকেলসহ বিভিন্ন গাড়ির এবং চালকদের লাইসেন্স না থাকায় পুলিশের হাতে তুলে দিতে দেখা যায়। এক্ষেত্রে বাদ যায়নি পুলিশ ও দুর্নীতি দমন কমিশনের গাড়িও। লাইসেন্স না থাকায় সে গাড়িগুলোর বিরুদ্ধেও মামলা নিতে বাধ্য করা হয় ট্রাফিক পুলিশকে। দুপুরের বিরতির পর ছাত্ররা পুনরায় জড়ো হয়ে নিজেদের দাবি-দাওয়া তুলে ধরে। ছাত্রদের পক্ষে ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির বিবিএর এক শিক্ষার্থী বলেছে, আমাদের সব দাবির মূল হলো নৌ পরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খানের পদত্যাগ। তিনি আমাদের ভাই-বোনের হত্যা নিয়ে তাচ্ছিল্য করে হেসেছেন। এটা কোনোভাবে মেনে নেয়ার নয়। এছাড়া সরকার নিহত দু’ভাইবোনের পরিবারকে ২০ লাখ টাকা করে অনুদান দিয়েছে। একটা জীবনের মূল্য কি ২০ লাখ টাকা? আমরা চাই সড়কে যেন আর একটি প্রাণও না যায়। আগামীকাল সকাল ১০টায় পার্শ্ববর্তী সব স্কুল কলেজের শিক্ষার্থীরা একত্রিত হয়ে একই স্থানে বিক্ষোভ এবং নিরাপদ সড়কের দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে এই শিক্ষার্থী।
সকাল থেকে রাজধানীর তেজগাঁওয়ের অন্যতম মহাখালী বাস টার্মিনাল থেকে দূরপাল্লার কোনো বাস ছেড়ে যায়নি। সকাল থেকে বাসের চালক ও হেলপারদের টার্মিনালের মধ্যে আড্ডা দিতে দেখা গেছে। কাউকে আবার লাঠি হাতে বসে থাকতে দেখা যায়। টার্মিনাল থেকে কোনো বাস যাতে বের না হতে পারে সেদিকে তাদের কড়া দৃষ্টি ছিল। এনা পরিবহনের একটি বাস গ্যারেজে নেয়ার জন্য বের হলে শ্রমিকরা বাধা দেয়। চালক বাধ্য হয়ে টার্মিনালে রেখে দেন। পরিবহন শ্রমিকদের একটি দলকে মহাখালীর চৌরাস্তার মোড়ে মহড়া দিতে দেখা যায়।
গতকাল বিকাল ৩টার দিকে নৌ পরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান মহাখালী বাস টার্মিনালে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির অফিসে গেলেও উপস্থিত সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেননি। তবে বাংলাদেশে সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির কেন্দ্রীয় মহাসচিব খন্দকার এনায়েত উল্লাহ সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন।
No comments