ইরানের বিরুদ্ধে বাকযুদ্ধে ট্রামেপর সাবধান হওয়া দরকার
যুক্তরাষ্ট্রের
প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প তার টুইটবার্তায় ক্রমাগত ইরানের প্রেসিডেন্ট
হাসান রুহানিকে আক্রমণ করে যাচ্ছেন। দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক এখন যেকোনো
সময়ের থেকে খারাপ। তার মধ্যে তিনি এ অবস্থাকে একটি যুদ্ধের দিকে ঠেলে
দিচ্ছেন। কেউ কেউ হয়ত বলছেন, এটা ডনাল্ড ট্রাম্পের স্বাভাবিক তর্জন-গর্জন।
উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে যেরকম যুদ্ধাবস্থা সৃষ্টি হয়েছিল তার শেষটা কিন্তু
ততটাই শান্তিপূর্ণ হয়েছিল। কিন্তু ইরানের ক্ষেত্রে ট্রাম্পের সাবধান হওয়া
উচিত। ইরানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ উস্কে দেয়া হতে পারে ট্রাম্পের রাজনৈতিক
ক্যারিয়ারের সব থেকে বড় ভুল।
ডনাল্ড ট্রাম্প প্রথমেই ইরানকে হুমকি দিয়ে বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রকে হুমকি দিলে তার পরিণাম ভালো হবে না। কিন্তু এরপরই বরাবরের মতো তার বিদেশনীতি অনুসরণ করে তিনি উল্টো পথে চলতে শুরু করলেন। এখন তিনি রুহানির সঙ্গে আলোচনায় বসতে চাচ্ছেন। উত্তর কোরিয়ার ক্ষেত্রে তিনি যে গেইম খেলেছেন, একই গেইম ইরানের সঙ্গেও খেলতে চান। কিন্তু উত্তর কোরিয়া ও ইরানকে একইরকম ভাবলে ভুল করবেন তিনি। ট্রাম্প ও কিম জং উনের মধ্যে যা হয়েছে সেটা ইরানের সঙ্গে বাকযুদ্ধ থেকে একেবারেই আলাদা।
প্রথমত, ১৯৭৯ সালে ইরানের শাহের পতনের পর থেকে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে দেশটির সম্পর্ক সবসময়ই খারাপ ছিল। ইরানের বর্তমান ইসলামপন্থি সরকার সবসময়ই যুক্তরাষ্ট্রের চক্ষুশূল হয়ে ছিল। ইরান নিজেকে যুদ্ধের জন্য এক প্রকার প্রস্তুত করেই রেখেছে। দ্বিতীয়ত, যুক্তরাষ্ট্র অন্যসব দেশের থেকে ইরানের প্রতি দীর্ঘকাল ধরেই অধিক নজর রেখে আসছে। বর্তমানে দেশটি ইরানের উপর চাপ বাড়াতে আগ্রহী হয়ে উঠেছে। তারই অংশ হিসেবে মে মাসে ইরানের সঙ্গে থাকা পরমাণু সমঝোতা থেকে বেরিয়ে এসেছে যুক্তরাষ্ট্র। নতুন করে অবরোধ আরোপ করেছে ইরানের উপর এবং আরো অবরোধের ঘোষণাও দিয়েছে। ইরানকে কোণঠাসা করে ফেললে তারাও যেকোনো উপায়ে বেরিয়ে আসার চেষ্টা চালাবেই। তা ছাড়া, উত্তর কোরিয়াকে কটাক্ষ করে যেসব টুইট ট্রাম্প করেছেন তা ছিল নিছক এক বাকযুদ্ধ। কিন্তু ইরানকে উদ্দেশ্য করে লেখা টুইট বার্তাগুলোকে রাজনৈতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে।
ইরানের উপর নতুন করে চাপ বাড়াতেই ইরান চুক্তি থেকে বেরিয়ে এসেছে ডনাল্ড ট্রাম্প। তিনি হয়ত ওবামার সময়ের থেকেও ইরানের সঙ্গে একটি ভালো চুক্তি করতে চাচ্ছেন। যেখানে যুক্তরাষ্ট্র অধিক লাভবান হবে। তবে, যুক্তরাষ্ট্রের এরকম একটা পদক্ষেপের বিপরীতে ইরান তখন খুবই মৃদু প্রতিক্রিয়া জানিয়েছিল। একইসঙ্গে, দেশটি এখনো চুক্তিটি টিকিয়ে রাখতে চাইছে। যুক্তরাষ্ট্র ক্রমাগত ইসরাইল ও সৌদি আরবের সঙ্গে সম্পর্ক দৃঢ় করছে। এ দেশ দুটি ইরানকে নিজেদের জন্য সবথেকে বড় হুমকি মনে করে। যুক্তরাষ্ট্রের ক্রমাগত হুমকি ইরানকেও এ বাকযুদ্ধে টেনে এনেছে। ইরানও পালটা জবাবে বলেছে, সিংহের লেজ নিয়ে খেলবেন না। ইতিমধ্যে দেশটি হরমুজ প্রণালী বন্ধ করে দেয়ার হুমকি দিয়েছে। ইরান বলেছে, ইরান যদি তেল রপ্তানি করতে না পারে তাহলে অন্য কেউও পারবে না। যুক্তরাষ্ট্রকে থামাতে এক ধরনের পরিকল্পিত প্রতিরোধের পথে আগাচ্ছে ইরান। এখানেই উত্তর কোরিয়া ও ইরানের মধ্যে আসল পার্থক্য। কিন্তু এত কিছুর পরেও ডনাল্ড ট্রাম্প ইরানের সঙ্গে উত্তেজনা বাড়িয়েই চলেছেন। যুক্তরাষ্ট্র কি সত্যিই ইরানের সঙ্গে যুদ্ধে জড়াতে চায়? ট্রাম্প যথেষ্ট বুদ্ধিমান হলে কখনোই এ ভুল করবেন না। এর কারণ হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র এখন একদম একা। এ যুদ্ধে কাউকেই পাশে পাওয়ার সম্ভাবনা নেই দেশটির।
ইউরোপের উপর নির্ভর করার সুযোগ নেই
বুশ জুনিয়র যখন প্রেসিডেন্ট ছিলেন তখন শুধু টেবিলে বসে আলোচনা করেই যুদ্ধের সিদ্ধান্ত নেয়া যেত। কিন্তু দিনদিন এ অবস্থার পরিবর্তন ঘটেছে। যুক্তরাষ্ট্রের কোনো যুদ্ধেই ইউরোপ নিশ্চিতভাবে নিজেকে জড়াবে না। ইরানকে থামাতে শুধু অবরোধই যথেষ্ট না এটা যুক্তরাষ্ট্র কিছু দিনের মধ্যেই বুঝবে। যদি যুদ্ধের প্রয়োজন হয় তখন তাকে একাই এ যুদ্ধটা করতে হবে। ইরান চুক্তি থেকে বের হয়ে যাওয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের ইউরোপিয়ান মিত্রদের সঙ্গে সম্পর্কে খারাপ প্রভাব পড়েছে।
এদিকে, বৈঠকে বসার জন্য ট্রাম্পের আহ্বানের পরেও রুহানি ইউরোপীয় দেশগুলোকে বলছে যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে অবস্থান নিতে। তিনি আহ্বান জানিয়েছেন, ইউরোপীয় দেশগুলোও যেন প্রচার করে যুক্তরাষ্ট্র অবৈধভাবে ইরানচুক্তি থেকে বেরিয়ে এসেছে। এরকম অবস্থায়, যুক্তরাষ্ট্র কোনোভাবেই আশা করতে পারে না ইরানের বিরুদ্ধে যুদ্ধে ইউরোপীয় দেশগুলো তাকে সাহায্য করবে। এর পরিবর্তে ট্রাম্প সরকার সৌদি আরব ও ইসরাইলের সহযোগিতা চাচ্ছে। বর্তমানে এ দেশ দুটিই তার সবথেকে বড় মিত্রের ভূমিকায় অবতীর্ণ হতে যাচ্ছে।
রাশিয়ার অনাগ্রহ
এ অঞ্চলের কোনো যুদ্ধে রাশিয়ার আগ্রহ না থাকার কোনো কারণ নেই। কিন্তু একইসঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের গেইম খেলার কোনো ইচ্ছে যে রাশিয়ার নেই তা স্পষ্ট। রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ইতিমধ্যে সিরিয়ায় ইরানি সেনাদের অবস্থানকে বৈধ প্রমাণের চেষ্টা চালিয়েছেন। সেখানে সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধে রাশিয়া-ইরান সম্মিলিতভাবে যুদ্ধ করছে। ইরান এখন রাশিয়ার সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ মিত্রদের একটি। তাছাড়া নিজের দক্ষিণ সীমান্তে যুদ্ধ দেখার কোনো ইচ্ছে রাশিয়ার নেই। দীর্ঘ দিন ধরেই ইরানের সঙ্গে চমৎকার কূটনৈতিক সম্পর্ক রয়েছে রাশিয়ার। রাশিয়া ভালো করেই জানে উপসাগরীয় অঞ্চলে নতুন কোনো যুদ্ধ এ অঞ্চলে তার প্রভাবকে হুমকির মুখে ফেলবে। তাই ইরানের বিরুদ্ধে কোনো পদক্ষেপে রাশিয়া ইরানের পক্ষেই অবস্থান নেবে সেটা নিশ্চিত।
সিরিয়াতে ট্রাম্প রাশিয়ার উপরে নির্ভরশীল
গত কয়েকদিনে এটা স্পষ্ট হয়েছে যে সিরিয়াতে রাশিয়ার উপর নির্ভর করছে যুক্তরাষ্ট্র। ইতিমধ্যে তারা সেখানে ইসলামিক স্টেটকে ছেড়ে ইরানকে নিয়ে ভাবতে শুরু করেছে। ইরানি সেনাবাহিনীকে গোলান হাইটস তথা সিরিয়ার দক্ষিণ থেকে দূরে রাখতে রাশিয়ার সাহায্য চাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। যাতে ইরান ও লেবাননের সশস্ত্র সংগঠন হেজবুল্লাহর মধ্যে নিরবচ্ছিন্ন সংযোগ সৃষ্টি না হয়। এখন দেখা যাচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্রকে অনেক ক্ষেত্রেই রাশিয়ার সঙ্গে আপস করতে হচ্ছে। রাশিয়াও এ অঞ্চলে নিজের প্রভাব বিস্তারে কাজ করে যাচ্ছে। ইসরাইলসহ সিরিয়া যুদ্ধের সব পক্ষের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বিগ্নতা প্রকাশ করেছে। রাশিয়ার এ ত্রাতার ভূমিকায় অবতীর্ণ হওয়া যুক্তরাষ্ট্রের এ অঞ্চলে ক্ষমতা প্রদর্শনের জন্য বেশ অসুবিধাজনক হবে। কিন্তু এতসব সমস্যার মানে এই না যে, যুক্তরাষ্ট্র ইরানকে হুমকি দেয়া বন্ধ করবে। যদিও ইতিমধ্যে তারা নিঃশর্তভাবে ইরানের সঙ্গে আলোচনায় বসার প্রস্তাব দিয়েছে। ডনাল্ড ট্রাম্পের উপদেষ্টারা সবাই দীর্ঘকাল ধরেই ইরানবিরোধী আমলা। একইসঙ্গে উপসাগরীয় অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্রের মিত্র ইসরাইল ও সৌদি আরব উভয়ই ইরানকে নিজেদের নিরাপত্তার জন্য সবথেকে বড় হুমকি মনে করে। কিন্তু এসবের বাইরেও ইরানের সঙ্গে নতুন চুক্তি করায় আগ্রহ রয়েছে ডনাল্ড ট্রাম্পের। গণমাধ্যমে নিজের প্রচারণা চালানোটাও তার আগ্রহের বাইরে নয়। ইরানের বিরুদ্ধে দেয়া হুমকিগুলো যদি যুদ্ধে রূপান্তরিত হয় তাহলে ট্রাম্পের অন্যতম লক্ষ্য নোবেল জয় অসম্ভব হয়ে উঠবে। তিনি হুমকি ও সমালোচনায় পটু। তবে ইতিমধ্যে তিনি দেখিয়েছেন, কিভাবে বাকযুদ্ধ তীব্র রূপ ধারণ করলেও সফলভাবে শান্তি আলোচনা করতে পারেন তিনি। উত্তর কোরিয়া কিংবা ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রধান জিন ক্লাউডি জানকারের সঙ্গে বৈঠকই তার সবথেকে বড় প্রমাণ। তাই, ইরানের সঙ্গেও তিনি শান্তি আলোচনায় সমর্থ হবেন, তার এরকম ভাবনার পেছনে যথেষ্ট যুক্তি রয়েছে। কিন্তু ভয়টা হচ্ছে, ইরানের সঙ্গে বাকযুদ্ধ ইতিমধ্যে অনেক গভীরে পৌঁছে গেছে। অন্য সমস্যাগুলোর মত ইরান এত সহজ পক্ষ না। আলোচনায় বসার আগে ইরানের পূর্বশর্ত রয়েছে। যুদ্ধ শুরু হওয়ার একাধিক সুযোগ রয়েছে। দীর্ঘকাল ধরে অর্থনৈতিক ও আন্তর্জাতিক চাপ ইরানকে ভেতর থেকে অনেক আত্মবিশ্বাসী করে তুলেছে। এ অঞ্চলের রাজনৈতিক অস্থিরতা থেকে যুদ্ধ শুরু হয়ে যাওয়া নতুন কিছু নয়। কিন্তু সবকিছুর পূর্বে ডনাল্ড ট্রাম্পকে নিজের কথা শুনতে হবে। ইরানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণার আগে অবশ্যই সাবধান হওয়া দরকার তার।
(আল জাজিরায় প্রকাশিত প্রতিবেদন অবলম্বনে)
ডনাল্ড ট্রাম্প প্রথমেই ইরানকে হুমকি দিয়ে বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রকে হুমকি দিলে তার পরিণাম ভালো হবে না। কিন্তু এরপরই বরাবরের মতো তার বিদেশনীতি অনুসরণ করে তিনি উল্টো পথে চলতে শুরু করলেন। এখন তিনি রুহানির সঙ্গে আলোচনায় বসতে চাচ্ছেন। উত্তর কোরিয়ার ক্ষেত্রে তিনি যে গেইম খেলেছেন, একই গেইম ইরানের সঙ্গেও খেলতে চান। কিন্তু উত্তর কোরিয়া ও ইরানকে একইরকম ভাবলে ভুল করবেন তিনি। ট্রাম্প ও কিম জং উনের মধ্যে যা হয়েছে সেটা ইরানের সঙ্গে বাকযুদ্ধ থেকে একেবারেই আলাদা।
প্রথমত, ১৯৭৯ সালে ইরানের শাহের পতনের পর থেকে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে দেশটির সম্পর্ক সবসময়ই খারাপ ছিল। ইরানের বর্তমান ইসলামপন্থি সরকার সবসময়ই যুক্তরাষ্ট্রের চক্ষুশূল হয়ে ছিল। ইরান নিজেকে যুদ্ধের জন্য এক প্রকার প্রস্তুত করেই রেখেছে। দ্বিতীয়ত, যুক্তরাষ্ট্র অন্যসব দেশের থেকে ইরানের প্রতি দীর্ঘকাল ধরেই অধিক নজর রেখে আসছে। বর্তমানে দেশটি ইরানের উপর চাপ বাড়াতে আগ্রহী হয়ে উঠেছে। তারই অংশ হিসেবে মে মাসে ইরানের সঙ্গে থাকা পরমাণু সমঝোতা থেকে বেরিয়ে এসেছে যুক্তরাষ্ট্র। নতুন করে অবরোধ আরোপ করেছে ইরানের উপর এবং আরো অবরোধের ঘোষণাও দিয়েছে। ইরানকে কোণঠাসা করে ফেললে তারাও যেকোনো উপায়ে বেরিয়ে আসার চেষ্টা চালাবেই। তা ছাড়া, উত্তর কোরিয়াকে কটাক্ষ করে যেসব টুইট ট্রাম্প করেছেন তা ছিল নিছক এক বাকযুদ্ধ। কিন্তু ইরানকে উদ্দেশ্য করে লেখা টুইট বার্তাগুলোকে রাজনৈতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে।
ইরানের উপর নতুন করে চাপ বাড়াতেই ইরান চুক্তি থেকে বেরিয়ে এসেছে ডনাল্ড ট্রাম্প। তিনি হয়ত ওবামার সময়ের থেকেও ইরানের সঙ্গে একটি ভালো চুক্তি করতে চাচ্ছেন। যেখানে যুক্তরাষ্ট্র অধিক লাভবান হবে। তবে, যুক্তরাষ্ট্রের এরকম একটা পদক্ষেপের বিপরীতে ইরান তখন খুবই মৃদু প্রতিক্রিয়া জানিয়েছিল। একইসঙ্গে, দেশটি এখনো চুক্তিটি টিকিয়ে রাখতে চাইছে। যুক্তরাষ্ট্র ক্রমাগত ইসরাইল ও সৌদি আরবের সঙ্গে সম্পর্ক দৃঢ় করছে। এ দেশ দুটি ইরানকে নিজেদের জন্য সবথেকে বড় হুমকি মনে করে। যুক্তরাষ্ট্রের ক্রমাগত হুমকি ইরানকেও এ বাকযুদ্ধে টেনে এনেছে। ইরানও পালটা জবাবে বলেছে, সিংহের লেজ নিয়ে খেলবেন না। ইতিমধ্যে দেশটি হরমুজ প্রণালী বন্ধ করে দেয়ার হুমকি দিয়েছে। ইরান বলেছে, ইরান যদি তেল রপ্তানি করতে না পারে তাহলে অন্য কেউও পারবে না। যুক্তরাষ্ট্রকে থামাতে এক ধরনের পরিকল্পিত প্রতিরোধের পথে আগাচ্ছে ইরান। এখানেই উত্তর কোরিয়া ও ইরানের মধ্যে আসল পার্থক্য। কিন্তু এত কিছুর পরেও ডনাল্ড ট্রাম্প ইরানের সঙ্গে উত্তেজনা বাড়িয়েই চলেছেন। যুক্তরাষ্ট্র কি সত্যিই ইরানের সঙ্গে যুদ্ধে জড়াতে চায়? ট্রাম্প যথেষ্ট বুদ্ধিমান হলে কখনোই এ ভুল করবেন না। এর কারণ হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র এখন একদম একা। এ যুদ্ধে কাউকেই পাশে পাওয়ার সম্ভাবনা নেই দেশটির।
ইউরোপের উপর নির্ভর করার সুযোগ নেই
বুশ জুনিয়র যখন প্রেসিডেন্ট ছিলেন তখন শুধু টেবিলে বসে আলোচনা করেই যুদ্ধের সিদ্ধান্ত নেয়া যেত। কিন্তু দিনদিন এ অবস্থার পরিবর্তন ঘটেছে। যুক্তরাষ্ট্রের কোনো যুদ্ধেই ইউরোপ নিশ্চিতভাবে নিজেকে জড়াবে না। ইরানকে থামাতে শুধু অবরোধই যথেষ্ট না এটা যুক্তরাষ্ট্র কিছু দিনের মধ্যেই বুঝবে। যদি যুদ্ধের প্রয়োজন হয় তখন তাকে একাই এ যুদ্ধটা করতে হবে। ইরান চুক্তি থেকে বের হয়ে যাওয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের ইউরোপিয়ান মিত্রদের সঙ্গে সম্পর্কে খারাপ প্রভাব পড়েছে।
এদিকে, বৈঠকে বসার জন্য ট্রাম্পের আহ্বানের পরেও রুহানি ইউরোপীয় দেশগুলোকে বলছে যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে অবস্থান নিতে। তিনি আহ্বান জানিয়েছেন, ইউরোপীয় দেশগুলোও যেন প্রচার করে যুক্তরাষ্ট্র অবৈধভাবে ইরানচুক্তি থেকে বেরিয়ে এসেছে। এরকম অবস্থায়, যুক্তরাষ্ট্র কোনোভাবেই আশা করতে পারে না ইরানের বিরুদ্ধে যুদ্ধে ইউরোপীয় দেশগুলো তাকে সাহায্য করবে। এর পরিবর্তে ট্রাম্প সরকার সৌদি আরব ও ইসরাইলের সহযোগিতা চাচ্ছে। বর্তমানে এ দেশ দুটিই তার সবথেকে বড় মিত্রের ভূমিকায় অবতীর্ণ হতে যাচ্ছে।
রাশিয়ার অনাগ্রহ
এ অঞ্চলের কোনো যুদ্ধে রাশিয়ার আগ্রহ না থাকার কোনো কারণ নেই। কিন্তু একইসঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের গেইম খেলার কোনো ইচ্ছে যে রাশিয়ার নেই তা স্পষ্ট। রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ইতিমধ্যে সিরিয়ায় ইরানি সেনাদের অবস্থানকে বৈধ প্রমাণের চেষ্টা চালিয়েছেন। সেখানে সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধে রাশিয়া-ইরান সম্মিলিতভাবে যুদ্ধ করছে। ইরান এখন রাশিয়ার সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ মিত্রদের একটি। তাছাড়া নিজের দক্ষিণ সীমান্তে যুদ্ধ দেখার কোনো ইচ্ছে রাশিয়ার নেই। দীর্ঘ দিন ধরেই ইরানের সঙ্গে চমৎকার কূটনৈতিক সম্পর্ক রয়েছে রাশিয়ার। রাশিয়া ভালো করেই জানে উপসাগরীয় অঞ্চলে নতুন কোনো যুদ্ধ এ অঞ্চলে তার প্রভাবকে হুমকির মুখে ফেলবে। তাই ইরানের বিরুদ্ধে কোনো পদক্ষেপে রাশিয়া ইরানের পক্ষেই অবস্থান নেবে সেটা নিশ্চিত।
সিরিয়াতে ট্রাম্প রাশিয়ার উপরে নির্ভরশীল
গত কয়েকদিনে এটা স্পষ্ট হয়েছে যে সিরিয়াতে রাশিয়ার উপর নির্ভর করছে যুক্তরাষ্ট্র। ইতিমধ্যে তারা সেখানে ইসলামিক স্টেটকে ছেড়ে ইরানকে নিয়ে ভাবতে শুরু করেছে। ইরানি সেনাবাহিনীকে গোলান হাইটস তথা সিরিয়ার দক্ষিণ থেকে দূরে রাখতে রাশিয়ার সাহায্য চাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। যাতে ইরান ও লেবাননের সশস্ত্র সংগঠন হেজবুল্লাহর মধ্যে নিরবচ্ছিন্ন সংযোগ সৃষ্টি না হয়। এখন দেখা যাচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্রকে অনেক ক্ষেত্রেই রাশিয়ার সঙ্গে আপস করতে হচ্ছে। রাশিয়াও এ অঞ্চলে নিজের প্রভাব বিস্তারে কাজ করে যাচ্ছে। ইসরাইলসহ সিরিয়া যুদ্ধের সব পক্ষের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বিগ্নতা প্রকাশ করেছে। রাশিয়ার এ ত্রাতার ভূমিকায় অবতীর্ণ হওয়া যুক্তরাষ্ট্রের এ অঞ্চলে ক্ষমতা প্রদর্শনের জন্য বেশ অসুবিধাজনক হবে। কিন্তু এতসব সমস্যার মানে এই না যে, যুক্তরাষ্ট্র ইরানকে হুমকি দেয়া বন্ধ করবে। যদিও ইতিমধ্যে তারা নিঃশর্তভাবে ইরানের সঙ্গে আলোচনায় বসার প্রস্তাব দিয়েছে। ডনাল্ড ট্রাম্পের উপদেষ্টারা সবাই দীর্ঘকাল ধরেই ইরানবিরোধী আমলা। একইসঙ্গে উপসাগরীয় অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্রের মিত্র ইসরাইল ও সৌদি আরব উভয়ই ইরানকে নিজেদের নিরাপত্তার জন্য সবথেকে বড় হুমকি মনে করে। কিন্তু এসবের বাইরেও ইরানের সঙ্গে নতুন চুক্তি করায় আগ্রহ রয়েছে ডনাল্ড ট্রাম্পের। গণমাধ্যমে নিজের প্রচারণা চালানোটাও তার আগ্রহের বাইরে নয়। ইরানের বিরুদ্ধে দেয়া হুমকিগুলো যদি যুদ্ধে রূপান্তরিত হয় তাহলে ট্রাম্পের অন্যতম লক্ষ্য নোবেল জয় অসম্ভব হয়ে উঠবে। তিনি হুমকি ও সমালোচনায় পটু। তবে ইতিমধ্যে তিনি দেখিয়েছেন, কিভাবে বাকযুদ্ধ তীব্র রূপ ধারণ করলেও সফলভাবে শান্তি আলোচনা করতে পারেন তিনি। উত্তর কোরিয়া কিংবা ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রধান জিন ক্লাউডি জানকারের সঙ্গে বৈঠকই তার সবথেকে বড় প্রমাণ। তাই, ইরানের সঙ্গেও তিনি শান্তি আলোচনায় সমর্থ হবেন, তার এরকম ভাবনার পেছনে যথেষ্ট যুক্তি রয়েছে। কিন্তু ভয়টা হচ্ছে, ইরানের সঙ্গে বাকযুদ্ধ ইতিমধ্যে অনেক গভীরে পৌঁছে গেছে। অন্য সমস্যাগুলোর মত ইরান এত সহজ পক্ষ না। আলোচনায় বসার আগে ইরানের পূর্বশর্ত রয়েছে। যুদ্ধ শুরু হওয়ার একাধিক সুযোগ রয়েছে। দীর্ঘকাল ধরে অর্থনৈতিক ও আন্তর্জাতিক চাপ ইরানকে ভেতর থেকে অনেক আত্মবিশ্বাসী করে তুলেছে। এ অঞ্চলের রাজনৈতিক অস্থিরতা থেকে যুদ্ধ শুরু হয়ে যাওয়া নতুন কিছু নয়। কিন্তু সবকিছুর পূর্বে ডনাল্ড ট্রাম্পকে নিজের কথা শুনতে হবে। ইরানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণার আগে অবশ্যই সাবধান হওয়া দরকার তার।
(আল জাজিরায় প্রকাশিত প্রতিবেদন অবলম্বনে)
No comments