মালিক-শ্রমিকদের অঘোষিত ধর্মঘটে জনভোগান্তি: নোংরা কৌশল
এটা
নতুন কিছু নয়। পুরনো এবং নোংরা। পরিবহন মালিক-শ্রমিকরা অতীতে বহুবারই এ
কৌশল অবলম্বন করেছেন। নিষ্পাপ শিশুরা রাজপথে। নিরাপদ সড়ক আর ন্যায় বিচারের
দাবিতে তাদের আন্দোলন হৃদয় জয় করেছে বহু মানুষের। কিন্তু পরিবহন
মালিক-শ্রমিকদের তাতে কিছু আসে-যায়নি। শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মধ্যেই
গতকাল সারা দেশে বাস বন্ধ করে দেন তারা। আর এতে দেশজুড়ে সাধারণ মানুষকে
সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে। রাজধানীর সড়কে
গণপরিবহন না থাকায় গত তিন দিন থেকে সাধারণ মানুষ ভোগান্তিতে রয়েছেন। বৃহস্পতিবার পর্যন্ত কিছু ছোট যান চলাচল করলেও গতকাল তাও বন্ধ করে দেয় পরিবহন শ্রমিকরা। পরিবহন মালিকরা বলছেন, সড়ক নিরাপদ না হওয়া পর্যন্ত তারা বাস চালাবেন না। গতকাল সড়কে বড় কোনো কর্মসূচি না থাকলেও কেন বাস চালানো হয়নি এ প্রশ্নের কোনো উত্তর মিলেনি তাদের কাছ থেকে। শুক্রবার রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে সড়কে যাত্রীদের ভিড়।
তবে বিআরটিসির কয়েকটি বাস ছাড়া কোনো যাত্রীবাহী বাস নেই। জরুরি প্রয়োজনে ঘর থেকে বের হয়ে পরিবহন সঙ্কটে ভোগান্তিতে পড়েছেন তারা। বাধ্য হয়ে কেউ পায়ে হেঁটে, কেউবা সিএনজি চালিত অটোরিকশায় বা রিকশায় গন্তব্যে রওয়ানা দেন। গণপরিবহন সংকটে তাদের গুনতে হয়েছে অতিরিক্ত ভাড়াও। মিরপুরের দুই নম্বর এলাকায় থাকেন ব্যবসায়ী উজ্জ্বল। সকাল ১০টার দিকে এই যাত্রী সদরঘাট যাওয়ার উদ্দেশে বাসা থেকে বের হলেও কোনো গণপরিবহন রাস্তায় পাননি। এত দূরের রাস্তা হেঁটে যাওয়াও কষ্টকর বলে তিনি মন্তব্য করেন। ফলে বাধ্য হয়ে সিএনজি অটোরিকশায় ৫০০ টাকায় প্রায় দ্বিগুণ ভাড়া দিয়ে সদরঘাট গিয়েছেন। কিন্তু শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে তার বিরক্তি নেই। ফার্মগেটে কথা হয় যাত্রী সবুজ মিয়ার সঙ্গে। গাবতলী যাচ্ছিলেন তিনি। কিন্তু কোনো বাস মিলছে না। সিএনজি চালক এইটুকু দূরত্বের জন্য ৩০০ টাকা ভাড়া চাচ্ছিল তার কাছে। তিনি বলেন, অপেক্ষা করছি, যদি কোনো কিছুতে উঠতে পারি।
বিকাল তিনটা। ফার্মগেট মোড়। শত শত মানুষের কয়েক ঘণ্টার অপেক্ষা। কখন আসবে একটি বাস? কারও চোখ কাওরান বাজারের দিকে। কারো বিজয় সরণি পানে। তাদের দূরদৃষ্টি হতাশ হয়ে ফিরছিল বার বার। যতদূর চোখ যায় এই ব্যস্ততম সড়কটিতে বাসের দেখা নেই। শেষ হয় না যাত্রীদের প্রতীক্ষাও। মাঝে মাঝে দু-একটি বিআরটিসির বাস আসলেই হুমড়ি খেয়ে পড়ছিলেন যাত্রীরা। কিন্তু প্রাণপণ যুদ্ধেও তাতে ঠাঁই মিলছিল না অধিকাংশের। আবার সেগুলোর বেশিরভাগ একই রুটের হওয়ায় অপেক্ষমাণদের অধিকাংশকেই টানছিল না বাসগুলো। বাস না পেয়ে অনেককে পায়ে হেঁটে রওয়ানা দিতে দেখা গেছে। কেউ কেউ রিকশা বা অটোরিকশার সন্ধান করে ব্যর্থ হয়ে ফিরছিলেন।
উজ্জ্বল দাস, তার স্ত্রী শিশু-সন্তান নিয়ে মতিঝিলের শামীবাগের এক মন্দিরে পূজা দিতে যাচ্ছিলেন। বাসা থেকে বের হন দুপুর দু’টার আগে। গাড়ির অপেক্ষায় উজ্জ্বল দাস মানবজমিনকে জানান, শুভ কাজে বের হয়েছি। চেষ্টা না করে তো ফিরে যেতে পারি না। বাসের আশা ছেড়ে দিয়েছি। এখন রিকশা বা অটোরিকশাও পাচ্ছি না।
দু’হাতে ভারি ব্যাগ ও বস্তা নিয়ে দৌড়ঝাঁপ করছিলেন ৫৩ বছরের বৃদ্ধা রওশন আরা। তিনি ট্রেনে ময়মনসিংহ থেকে ঢাকায় আসেন। কমলাপুরে দীর্ঘ অপেক্ষার পর একটি বিআরটিসি বাসে কোনোমতে জায়গা করে নিয়ে ফার্মগেট পৌঁছেন। কিন্তু সেখান থেকে মোহাম্মদপুর যাওয়ার কোনো বাস না পেয়ে আটকা পড়েন।
তিনি বলেন, দু’ঘণ্টা ধরে মোহাম্মদপুরে যাওয়ার একটি বাসও দেখতে পাইনি। বাস না থাকার সুযোগে কয়েকটি রিকশাকে মিরপুরের যাত্রী বহনের জন্য লাইন দিতে দেখা গেছে। তাদের একজন মো. আলহাছ। তিনি বলেন, হাতেগোনা সরকারি বাস ছাড়া সকাল থেকে রাস্তায় পাবলিকের বাস দেখিনি। আমি মিরপুর ১০ নম্বরে যাত্রী নিয়ে যাচ্ছি। প্রতিজন ১০০ টাকা ভাড়ায় দু’জন করে দু’বার নিয়ে গেছি।
তার পাশেই পাঠাও-এর মোটরসাইকেল চালক মো. ইউসুফ। তিনি বলেন, আমি বহু জায়গায় গেছি। আজ কোথাও বেসরকারি গণপরিবহন দেখিনি। রাস্তায় রাস্তায়, মোড়ে মোড়ে মানুষ গাড়ির জন্য ভোগান্তিতে পড়েছেন। কয়েক স্থানে ছাত্ররা মাঠে নেমেছে। তারা গাড়ির লাইসেন্স চেক এবং লাইন ধরে গাড়ি চলতে বাধ্য করছে। তাকেও বেলা ১২টার দিকে কুড়িল বিশ্বরোড় মোড়ে ও সকালে ফকিরাপুল মোড়ে গাড়ির লাইসেন্স দেখাতে হয়েছে বলে জানান।
গতকাল সায়েদাবাদ বাস টার্মিনাল ঘুরে দেখা গেছে, একদিকে বিভিন্ন বয়সী শত শত নারী, পুরুষ বাসের অপেক্ষায়। ব্যাগ, লাগেজ, ট্রলি ব্যাগ নিয়ে ঘণ্টার ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করার পরও বিকাল পর্যন্ত কোনো বাস ছাড়েনি। অন্যদিকে, পরিবহন শ্রমিকেরা অলস সময় পার করছেন। সায়েদাবাদ থেকে চট্টগ্রাম, সিলেট, নোয়াখালী, কুমিল্লা, সুনামগঞ্জ, হবিগঞ্জ, কিশোরগঞ্জ, চাঁদপুরের উদ্দেশ্যে দিনরাত বাস ছেড়ে যায়। গত তিন দিন ছিল ছাত্রদের আন্দোলন। অনেকেই আশায় ছিলেন শুক্রবার ছুটির দিন হওয়ায় তারা নিজেদের গন্তব্যে যাবেন। কিন্তু পরিবহন শ্রমিকদের অঘোষিত ধর্মঘটে সে সুযোগ আর মেলেনি। বাস না ছাড়ায় অনেকেই মনোকষ্টে ফিরে যান।
কুমিল্লার হোমনায় যাবার উদ্দেশ্যে সায়েদাবাদ বাসস্ট্যান্ডে প্রায় দেড় ঘণ্টা ধরে বাসের অপেক্ষায় ছিলেন তাপস সূত্রধর (৩০)। তিনি বলেন, গাড়ির চালকেরা বলছেন তারা যাবেন না। সমস্যা আছে। কিন্তু কি সমস্যা সেটি বলছেন না। আসলে মাঝে মাঝেই তারা নানা অজুহাতে এমন কষ্ট দেন। এর কোনো মানে হয় না। সিলেটে যাওয়ার উদ্দেশ্যে গাজীপুরের চৌরাস্তা থেকে সায়েদাবাদ বাসস্ট্যান্ডে এসেছেন শিব্বির আহমেদ (২৭)। যাবেন সিলেটে। সকাল থেকে কয়েক ঘণ্টা অপেক্ষা করেও কোনো বাস ছাড়তে দেখেননি তিনি। দুপুর ১টার দিকে তিনি বলেন, যদি জানতাম আজ (গতকাল) কোনো বাস ছাড়বে না তাহলে এতদূর থেকে ব্যাগ লাগেজ নিয়ে আসতাম না। তিনি বলেন, ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করে হতাশ হয়ে পড়েছি। প্রায় সময়ই তারা (পরিবহন সংশ্লিষ্টরা) এ ধরনের আচরণ করেন। এর কি কোনো বিহিত নেই? কিশোরগঞ্জের কুলিয়ারচর যাওয়ার উদ্দেশ্যে সায়েদাবাদ বাস টার্মিনালে এসেছিলেন কলেজ শিক্ষার্থী প্রশান্ত রায় (২৬)। এসেই জানতে পারলেন কোনো বাস ছাড়বে না। ক্ষোভের সঙ্গে তিনি বলেন, চালকেরা বলছে, তারা নিরাপত্তাহীনতার কারণে গাড়ি চালাবেন না। কিন্তু আসলে কলকাটি নাড়ছে পরিবহন মালিক ও নেতারা। তাদের অপকৌশলের কারণেই চালকেরা গাড়ি ছাড়ছেন না। তারাই চালকদের নিষেধ করেছেন। অঘোষিত ধর্মঘটের মাধ্যমে মানুষকে জিম্মি করেছেন। এভাবে মানুষকে জিম্মি করার কোনো মানে হয় না। আমিনা বেগম (৬০) যাবেন সিলেটে। সকাল থেকে সায়েদাবাদ বাসস্ট্যান্ডে বাসের অপেক্ষায় তিনি। কিন্তু দুপুর গড়িয়ে গেলেও বাস ছাড়ার নাম নেই। অসুস্থ শরীরে ক্ষুধায় কাতর আমিনা বেগম ঝালমুড়ি খেতে খেতে বলেন, আমারে কইছে ২টার পরে গাড়ি ছাড়তে পারে। হেই আশায় আছি। মগবাজারের ঢাকা কমিউনিটি মেডিকেল কলেজ অ্যান্ড হাসপাতালের চতুর্থ বর্ষের ছাত্র আল আমিন যাবেন কুমিল্লার দাউদকান্দিতে। শুক্রবার হওয়ায় বাসা থেকে বেরিয়েছিলেন তিনি খুব আশা নিয়ে।
কিন্তু বিধিবাম। সায়েদাবাদ বাসস্ট্যান্ডে এসে জানতে পারলেন অঘোষিত ধর্মঘট চলছে পরিবহন শ্রমিকদের। তারা বাস চালাবেন না। হতাশায় বাসায় ফিরে যাচ্ছেন আল আমিন। তিনি বলেন, ছাত্রদের আন্দোলন যৌক্তিক। তারা ভুয়া ড্রাইভারদের বিরুদ্ধে আন্দোলন করছে। নিরাপদ সড়কের নামে আন্দোলন করছে। কিন্তু পরিবহন সংশ্লিষ্টরা সাধারণ মানুষকে জিম্মি করতে চাইছেন। এর আগেও তারা বিভিন্ন সময়ে নানা অজুহাতে এমন করেছেন। এর কি কোন প্রতিকার নেই?
সায়েদাবাদ বাস টার্মিনালে কথা হয় ঢাকা-চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রুটে চলাচলকারী ‘সি ডি এম’ পরিবহনের চালক মো. জামাল হোসেনের সঙ্গে। তিনি বলেন, যেখানে সেখানে ছাত্ররা লাইসেন্স দেখতে চাইছে। গাড়ি ভাঙছে। পরিবহন চালক ও তাদের সহকারীদের উপর হামলা করছে। আমরা একপ্রকার নিরাপত্তাহীনতায় আছি। আমাদের জীবনের ভয় আছে। তাছাড়া দুর্ঘটনা ঘটলেই চালকদের ফাঁসির দাবি করা হয়। যে কারণে চালকেরা ভয়ে আছেন। গাড়ি চালানো বন্ধ রেখেছেন। জামাল হোসেন বলেন, আমরা কোনো ধর্মঘট, হরতাল করছি না। পরিস্থিতির কারণে ‘কর্মবিরতি’ পালন করছি। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলেই আবারো গাড়ি চলবে। ঢাকা টু দৌলখাঁর রুটে চলাচলকারী একটি বাসের চালক মোতালেব হোসেন বলেন, ছাত্রছাত্রীদের দাবি যৌক্তিক। তাদের মতো আমরাও নিরাপদ সড়ক চাই। কিন্তু আমাদের নিরাপত্তার বিষয়টিও যৌক্তিক। আর দুর্ঘটনা ঘটলেই চালকদের ফাঁসির দাবি করা হচ্ছে। আমাদেরও তো ভয় আছে। তাই পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার আশায় আছি আমরা। বাস না চালানোর বিষয়ে পরিবহন মালিকদের কোনো নির্দেশনা আছে কি না- এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, এ বিষয়ে মালিকদের কোনো নির্দেশনা নেই। আমরাই নিরাপত্তার কারণে বাস চালাচ্ছি না। সায়েদাবাদ আন্তঃজেলা ও নগর বাস টার্মিনাল শ্রমিক কমিটির সাধারণ সম্পাদক কাজী সেলিম সরোয়ার মানবজমিনকে বলেন, বিভিন্ন জায়গায় বাস ভাঙচুর করা হচ্ছে। চালক শ্রমিকদের উপর হামলা হয়েছে।
নিরাপত্তার কারণে চালকেরা যদি গাড়ি না চালান তাহলে আমরা কি করবো? শ্রমিকেরা যদি আশ্বস্ত হন যে রাস্তায় কোথাও কোনো প্রতিবন্ধকতা হবে না, তাহলে তারা গাড়ি চালাবেন। তিনি বলেন, মূলত ছাত্ররা কোনো গাড়িতে হামলা করে না। কিছু দুরভিসন্ধি ও সুযোগ সন্ধানী লোক হামলা করছে। যে কারণে শ্রমিকেরা আতঙ্কিত। তবে, সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির পক্ষ থেকে সিদ্ধান্ত হয়েছে এবং নিরাপত্তার ব্যাপারে শ্রমিকদের আশ্বস্ত করা হয়েছে। আজ (গতকাল) সন্ধ্যা থেকে বাস চলাচল করবে।
এদিকে, সায়েদাবাদ থেকে যাত্রাবাড়ী হয়ে চিটাগাং কাঁচপুর রোড পর্যন্ত সড়কের বিভিন্ন স্থানে গতকাল সকাল থেকেই অবস্থান নেয় পরিবহন শ্রমিকরা। এ সময় বিভিন্ন জেলা থেকে আসা দূরপাল্লার কোনো গাড়িকে ঢাকায় প্রবেশ করতে দেয়া হয়নি। আবার ঢাকা থেকে ছেড়ে যাওয়া বিভিন্ন পরিবহনকেও আটকে দেয়া হয়েছে সড়কে। এ সময় সড়কের দু’পাশেই চরম ভোগান্তিতে পড়েন বিভিন্ন বয়সী নারী পুরুষ। অসুস্থ ভাইকে দেখতে কুমিল্লা থেকে ঢাকার উদ্দেশ্যে মোস্তাফিজুর রহমান (৩১) রওয়ানা হন ভোর ৫টায়। অবর্ণনীয় দুর্ভোগ সয়ে নানা উপায়ে দুপুর ১১টায় এসে পৌঁছান কাঁচপুর ব্রিজের ওপাড়ে। কিন্তু নিস্তার মেলেনি। যাত্রাবাড়ী কিংবা ফার্মগেট আসার মতো কোনো গণপরিবহনই নেই। অগত্যা কয়েকগুণ বেশি ভাড়ার চুক্তিতে উঠেন রিকশায়। মোস্তাফিজের সঙ্গে কথা হয় চিটাগাং রোড এলাকায়। তিনি বলেন, সাভারের একটি হাসপাতালে যাবেন তিনি। কিন্তু সোয়া এক ঘণ্টা অপেক্ষা করেও যাত্রাবাড়ী যাবার মতো কোনো গাড়ি পাইনি। এখন রিকশাই ভরসা। প্রায় জোর করে কয়েক গুণ বেশি ভাড়া দিয়ে একটি রিকশায় উঠেছি। মোস্তাফিজ বলেন, শুনেছি গাড়ি ভাঙচুরের অজুহাতে মালিক, চালকেরা গাড়ি চালানো বন্ধ রেখেছেন। কিন্তু এগুলো আসলে ঠুনকো অজুহাত। এক ধরনের অপকৌশল। মানুষকে কষ্ট দিয়ে মালিক, চালকেরা কি আনন্দ পান তা তারাই জানেন।
নাারয়ণগঞ্জ থেকে সাইনবোর্ড এলাকায় বেলা ১১টায় এসে উত্তরা যাওয়ার জন্য বাসের অপেক্ষায় ছিলেন কাওসার হোসেন (৪০)। তিনি বলেন, প্রায় এক ঘণ্টা ধরে বাসের অপেক্ষায় তিনি। কিন্তু কাঁচপুরের দিক থেকে কোনো গাড়ি আসছে না। শনিরা আখড়ায় মো. টিটু মিয়ার সঙ্গে কথা হলে তিনি জানান, রামপুরা যাবেন তিনি। কিন্তু কাঁচপুরের দিক থেকে ঢাকার উদ্দেশ্যে কোনো গাড়ি আসছে না। তেমনি যাত্রাবাড়ী ও সায়েদাবাদ থেকেও কাঁচপুর বা অন্য রুট অভিমুখী কোনো গাড়ি চলাচল করছে না। অনেকক্ষণ অপেক্ষা করার পর একপর্যায়ে রিকশা ভ্যানে চেপে বসেন টিটু। তিনি বলেন, অসহ্য ভোগান্তি। এর কোনো মানে হয় না।
দুপুর পৌনে ১টায় যাত্রাবাড়ী চৌরাস্তায় দেখা যায়, বাসের জন্য শত শত যাত্রীরা অপেক্ষায়। কিন্তু যে জন্য এত অপেক্ষা, সেই কাঙ্ক্ষিত কোনো গণপরিবহন একেবারেই নেই। কয়েকজন যাত্রী জানান, এখানে দিনরাত বাসের সারি থাকতো। কিন্তু শুক্রবার ছিল একেবারেই ভিন্ন চিত্র। আর বাস না থাকায় গুলিস্তান, শাহবাগ, ফার্মগেট অভিমুখী রিকশা ভাড়া এত বেশি ছিল যে অনেকেই হেঁটে গন্তব্যে রওয়ানা হন। যাত্রাবাড়ী চৌরাস্তায় কথা হয় জুবায়ের আহমেদের সঙ্গে। মা ও স্ত্রীকে নিয়ে টঙ্গী যাওয়ার উদ্দেশ্যে বের হয়েছিলেন তিনি। জুবায়ের বলেন, এক ঘণ্টার উপর বসে আছি। সিএনজি ভাড়া চায় ১২শ’ টাকা। তাই অপেক্ষায় আছি। সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হয়ে সাভারের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন এক আত্মীয়কে দেখতে যাওয়ার উদ্দেশ্যে যাত্রবাড়ী চৌরাস্তায় বাসের অপেক্ষায় ছিলেন ষাটোর্ধ্ব সরবানু। কিন্তু দুপুর ১টা পর্যন্ত কোনো বাস না পেয়ে কাজলার বাসায় ফিরে যান তিনি।
রাজশাহীর দূরপাল্লার বাস চলাচল বন্ধে দুর্ভোগে যাত্রীরা
গণপরিবহন না থাকায় গত তিন দিন থেকে সাধারণ মানুষ ভোগান্তিতে রয়েছেন। বৃহস্পতিবার পর্যন্ত কিছু ছোট যান চলাচল করলেও গতকাল তাও বন্ধ করে দেয় পরিবহন শ্রমিকরা। পরিবহন মালিকরা বলছেন, সড়ক নিরাপদ না হওয়া পর্যন্ত তারা বাস চালাবেন না। গতকাল সড়কে বড় কোনো কর্মসূচি না থাকলেও কেন বাস চালানো হয়নি এ প্রশ্নের কোনো উত্তর মিলেনি তাদের কাছ থেকে। শুক্রবার রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে সড়কে যাত্রীদের ভিড়।
তবে বিআরটিসির কয়েকটি বাস ছাড়া কোনো যাত্রীবাহী বাস নেই। জরুরি প্রয়োজনে ঘর থেকে বের হয়ে পরিবহন সঙ্কটে ভোগান্তিতে পড়েছেন তারা। বাধ্য হয়ে কেউ পায়ে হেঁটে, কেউবা সিএনজি চালিত অটোরিকশায় বা রিকশায় গন্তব্যে রওয়ানা দেন। গণপরিবহন সংকটে তাদের গুনতে হয়েছে অতিরিক্ত ভাড়াও। মিরপুরের দুই নম্বর এলাকায় থাকেন ব্যবসায়ী উজ্জ্বল। সকাল ১০টার দিকে এই যাত্রী সদরঘাট যাওয়ার উদ্দেশে বাসা থেকে বের হলেও কোনো গণপরিবহন রাস্তায় পাননি। এত দূরের রাস্তা হেঁটে যাওয়াও কষ্টকর বলে তিনি মন্তব্য করেন। ফলে বাধ্য হয়ে সিএনজি অটোরিকশায় ৫০০ টাকায় প্রায় দ্বিগুণ ভাড়া দিয়ে সদরঘাট গিয়েছেন। কিন্তু শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে তার বিরক্তি নেই। ফার্মগেটে কথা হয় যাত্রী সবুজ মিয়ার সঙ্গে। গাবতলী যাচ্ছিলেন তিনি। কিন্তু কোনো বাস মিলছে না। সিএনজি চালক এইটুকু দূরত্বের জন্য ৩০০ টাকা ভাড়া চাচ্ছিল তার কাছে। তিনি বলেন, অপেক্ষা করছি, যদি কোনো কিছুতে উঠতে পারি।
বিকাল তিনটা। ফার্মগেট মোড়। শত শত মানুষের কয়েক ঘণ্টার অপেক্ষা। কখন আসবে একটি বাস? কারও চোখ কাওরান বাজারের দিকে। কারো বিজয় সরণি পানে। তাদের দূরদৃষ্টি হতাশ হয়ে ফিরছিল বার বার। যতদূর চোখ যায় এই ব্যস্ততম সড়কটিতে বাসের দেখা নেই। শেষ হয় না যাত্রীদের প্রতীক্ষাও। মাঝে মাঝে দু-একটি বিআরটিসির বাস আসলেই হুমড়ি খেয়ে পড়ছিলেন যাত্রীরা। কিন্তু প্রাণপণ যুদ্ধেও তাতে ঠাঁই মিলছিল না অধিকাংশের। আবার সেগুলোর বেশিরভাগ একই রুটের হওয়ায় অপেক্ষমাণদের অধিকাংশকেই টানছিল না বাসগুলো। বাস না পেয়ে অনেককে পায়ে হেঁটে রওয়ানা দিতে দেখা গেছে। কেউ কেউ রিকশা বা অটোরিকশার সন্ধান করে ব্যর্থ হয়ে ফিরছিলেন।
উজ্জ্বল দাস, তার স্ত্রী শিশু-সন্তান নিয়ে মতিঝিলের শামীবাগের এক মন্দিরে পূজা দিতে যাচ্ছিলেন। বাসা থেকে বের হন দুপুর দু’টার আগে। গাড়ির অপেক্ষায় উজ্জ্বল দাস মানবজমিনকে জানান, শুভ কাজে বের হয়েছি। চেষ্টা না করে তো ফিরে যেতে পারি না। বাসের আশা ছেড়ে দিয়েছি। এখন রিকশা বা অটোরিকশাও পাচ্ছি না।
দু’হাতে ভারি ব্যাগ ও বস্তা নিয়ে দৌড়ঝাঁপ করছিলেন ৫৩ বছরের বৃদ্ধা রওশন আরা। তিনি ট্রেনে ময়মনসিংহ থেকে ঢাকায় আসেন। কমলাপুরে দীর্ঘ অপেক্ষার পর একটি বিআরটিসি বাসে কোনোমতে জায়গা করে নিয়ে ফার্মগেট পৌঁছেন। কিন্তু সেখান থেকে মোহাম্মদপুর যাওয়ার কোনো বাস না পেয়ে আটকা পড়েন।
তিনি বলেন, দু’ঘণ্টা ধরে মোহাম্মদপুরে যাওয়ার একটি বাসও দেখতে পাইনি। বাস না থাকার সুযোগে কয়েকটি রিকশাকে মিরপুরের যাত্রী বহনের জন্য লাইন দিতে দেখা গেছে। তাদের একজন মো. আলহাছ। তিনি বলেন, হাতেগোনা সরকারি বাস ছাড়া সকাল থেকে রাস্তায় পাবলিকের বাস দেখিনি। আমি মিরপুর ১০ নম্বরে যাত্রী নিয়ে যাচ্ছি। প্রতিজন ১০০ টাকা ভাড়ায় দু’জন করে দু’বার নিয়ে গেছি।
তার পাশেই পাঠাও-এর মোটরসাইকেল চালক মো. ইউসুফ। তিনি বলেন, আমি বহু জায়গায় গেছি। আজ কোথাও বেসরকারি গণপরিবহন দেখিনি। রাস্তায় রাস্তায়, মোড়ে মোড়ে মানুষ গাড়ির জন্য ভোগান্তিতে পড়েছেন। কয়েক স্থানে ছাত্ররা মাঠে নেমেছে। তারা গাড়ির লাইসেন্স চেক এবং লাইন ধরে গাড়ি চলতে বাধ্য করছে। তাকেও বেলা ১২টার দিকে কুড়িল বিশ্বরোড় মোড়ে ও সকালে ফকিরাপুল মোড়ে গাড়ির লাইসেন্স দেখাতে হয়েছে বলে জানান।
গতকাল সায়েদাবাদ বাস টার্মিনাল ঘুরে দেখা গেছে, একদিকে বিভিন্ন বয়সী শত শত নারী, পুরুষ বাসের অপেক্ষায়। ব্যাগ, লাগেজ, ট্রলি ব্যাগ নিয়ে ঘণ্টার ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করার পরও বিকাল পর্যন্ত কোনো বাস ছাড়েনি। অন্যদিকে, পরিবহন শ্রমিকেরা অলস সময় পার করছেন। সায়েদাবাদ থেকে চট্টগ্রাম, সিলেট, নোয়াখালী, কুমিল্লা, সুনামগঞ্জ, হবিগঞ্জ, কিশোরগঞ্জ, চাঁদপুরের উদ্দেশ্যে দিনরাত বাস ছেড়ে যায়। গত তিন দিন ছিল ছাত্রদের আন্দোলন। অনেকেই আশায় ছিলেন শুক্রবার ছুটির দিন হওয়ায় তারা নিজেদের গন্তব্যে যাবেন। কিন্তু পরিবহন শ্রমিকদের অঘোষিত ধর্মঘটে সে সুযোগ আর মেলেনি। বাস না ছাড়ায় অনেকেই মনোকষ্টে ফিরে যান।
কুমিল্লার হোমনায় যাবার উদ্দেশ্যে সায়েদাবাদ বাসস্ট্যান্ডে প্রায় দেড় ঘণ্টা ধরে বাসের অপেক্ষায় ছিলেন তাপস সূত্রধর (৩০)। তিনি বলেন, গাড়ির চালকেরা বলছেন তারা যাবেন না। সমস্যা আছে। কিন্তু কি সমস্যা সেটি বলছেন না। আসলে মাঝে মাঝেই তারা নানা অজুহাতে এমন কষ্ট দেন। এর কোনো মানে হয় না। সিলেটে যাওয়ার উদ্দেশ্যে গাজীপুরের চৌরাস্তা থেকে সায়েদাবাদ বাসস্ট্যান্ডে এসেছেন শিব্বির আহমেদ (২৭)। যাবেন সিলেটে। সকাল থেকে কয়েক ঘণ্টা অপেক্ষা করেও কোনো বাস ছাড়তে দেখেননি তিনি। দুপুর ১টার দিকে তিনি বলেন, যদি জানতাম আজ (গতকাল) কোনো বাস ছাড়বে না তাহলে এতদূর থেকে ব্যাগ লাগেজ নিয়ে আসতাম না। তিনি বলেন, ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করে হতাশ হয়ে পড়েছি। প্রায় সময়ই তারা (পরিবহন সংশ্লিষ্টরা) এ ধরনের আচরণ করেন। এর কি কোনো বিহিত নেই? কিশোরগঞ্জের কুলিয়ারচর যাওয়ার উদ্দেশ্যে সায়েদাবাদ বাস টার্মিনালে এসেছিলেন কলেজ শিক্ষার্থী প্রশান্ত রায় (২৬)। এসেই জানতে পারলেন কোনো বাস ছাড়বে না। ক্ষোভের সঙ্গে তিনি বলেন, চালকেরা বলছে, তারা নিরাপত্তাহীনতার কারণে গাড়ি চালাবেন না। কিন্তু আসলে কলকাটি নাড়ছে পরিবহন মালিক ও নেতারা। তাদের অপকৌশলের কারণেই চালকেরা গাড়ি ছাড়ছেন না। তারাই চালকদের নিষেধ করেছেন। অঘোষিত ধর্মঘটের মাধ্যমে মানুষকে জিম্মি করেছেন। এভাবে মানুষকে জিম্মি করার কোনো মানে হয় না। আমিনা বেগম (৬০) যাবেন সিলেটে। সকাল থেকে সায়েদাবাদ বাসস্ট্যান্ডে বাসের অপেক্ষায় তিনি। কিন্তু দুপুর গড়িয়ে গেলেও বাস ছাড়ার নাম নেই। অসুস্থ শরীরে ক্ষুধায় কাতর আমিনা বেগম ঝালমুড়ি খেতে খেতে বলেন, আমারে কইছে ২টার পরে গাড়ি ছাড়তে পারে। হেই আশায় আছি। মগবাজারের ঢাকা কমিউনিটি মেডিকেল কলেজ অ্যান্ড হাসপাতালের চতুর্থ বর্ষের ছাত্র আল আমিন যাবেন কুমিল্লার দাউদকান্দিতে। শুক্রবার হওয়ায় বাসা থেকে বেরিয়েছিলেন তিনি খুব আশা নিয়ে।
কিন্তু বিধিবাম। সায়েদাবাদ বাসস্ট্যান্ডে এসে জানতে পারলেন অঘোষিত ধর্মঘট চলছে পরিবহন শ্রমিকদের। তারা বাস চালাবেন না। হতাশায় বাসায় ফিরে যাচ্ছেন আল আমিন। তিনি বলেন, ছাত্রদের আন্দোলন যৌক্তিক। তারা ভুয়া ড্রাইভারদের বিরুদ্ধে আন্দোলন করছে। নিরাপদ সড়কের নামে আন্দোলন করছে। কিন্তু পরিবহন সংশ্লিষ্টরা সাধারণ মানুষকে জিম্মি করতে চাইছেন। এর আগেও তারা বিভিন্ন সময়ে নানা অজুহাতে এমন করেছেন। এর কি কোন প্রতিকার নেই?
সায়েদাবাদ বাস টার্মিনালে কথা হয় ঢাকা-চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রুটে চলাচলকারী ‘সি ডি এম’ পরিবহনের চালক মো. জামাল হোসেনের সঙ্গে। তিনি বলেন, যেখানে সেখানে ছাত্ররা লাইসেন্স দেখতে চাইছে। গাড়ি ভাঙছে। পরিবহন চালক ও তাদের সহকারীদের উপর হামলা করছে। আমরা একপ্রকার নিরাপত্তাহীনতায় আছি। আমাদের জীবনের ভয় আছে। তাছাড়া দুর্ঘটনা ঘটলেই চালকদের ফাঁসির দাবি করা হয়। যে কারণে চালকেরা ভয়ে আছেন। গাড়ি চালানো বন্ধ রেখেছেন। জামাল হোসেন বলেন, আমরা কোনো ধর্মঘট, হরতাল করছি না। পরিস্থিতির কারণে ‘কর্মবিরতি’ পালন করছি। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলেই আবারো গাড়ি চলবে। ঢাকা টু দৌলখাঁর রুটে চলাচলকারী একটি বাসের চালক মোতালেব হোসেন বলেন, ছাত্রছাত্রীদের দাবি যৌক্তিক। তাদের মতো আমরাও নিরাপদ সড়ক চাই। কিন্তু আমাদের নিরাপত্তার বিষয়টিও যৌক্তিক। আর দুর্ঘটনা ঘটলেই চালকদের ফাঁসির দাবি করা হচ্ছে। আমাদেরও তো ভয় আছে। তাই পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার আশায় আছি আমরা। বাস না চালানোর বিষয়ে পরিবহন মালিকদের কোনো নির্দেশনা আছে কি না- এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, এ বিষয়ে মালিকদের কোনো নির্দেশনা নেই। আমরাই নিরাপত্তার কারণে বাস চালাচ্ছি না। সায়েদাবাদ আন্তঃজেলা ও নগর বাস টার্মিনাল শ্রমিক কমিটির সাধারণ সম্পাদক কাজী সেলিম সরোয়ার মানবজমিনকে বলেন, বিভিন্ন জায়গায় বাস ভাঙচুর করা হচ্ছে। চালক শ্রমিকদের উপর হামলা হয়েছে।
নিরাপত্তার কারণে চালকেরা যদি গাড়ি না চালান তাহলে আমরা কি করবো? শ্রমিকেরা যদি আশ্বস্ত হন যে রাস্তায় কোথাও কোনো প্রতিবন্ধকতা হবে না, তাহলে তারা গাড়ি চালাবেন। তিনি বলেন, মূলত ছাত্ররা কোনো গাড়িতে হামলা করে না। কিছু দুরভিসন্ধি ও সুযোগ সন্ধানী লোক হামলা করছে। যে কারণে শ্রমিকেরা আতঙ্কিত। তবে, সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির পক্ষ থেকে সিদ্ধান্ত হয়েছে এবং নিরাপত্তার ব্যাপারে শ্রমিকদের আশ্বস্ত করা হয়েছে। আজ (গতকাল) সন্ধ্যা থেকে বাস চলাচল করবে।
এদিকে, সায়েদাবাদ থেকে যাত্রাবাড়ী হয়ে চিটাগাং কাঁচপুর রোড পর্যন্ত সড়কের বিভিন্ন স্থানে গতকাল সকাল থেকেই অবস্থান নেয় পরিবহন শ্রমিকরা। এ সময় বিভিন্ন জেলা থেকে আসা দূরপাল্লার কোনো গাড়িকে ঢাকায় প্রবেশ করতে দেয়া হয়নি। আবার ঢাকা থেকে ছেড়ে যাওয়া বিভিন্ন পরিবহনকেও আটকে দেয়া হয়েছে সড়কে। এ সময় সড়কের দু’পাশেই চরম ভোগান্তিতে পড়েন বিভিন্ন বয়সী নারী পুরুষ। অসুস্থ ভাইকে দেখতে কুমিল্লা থেকে ঢাকার উদ্দেশ্যে মোস্তাফিজুর রহমান (৩১) রওয়ানা হন ভোর ৫টায়। অবর্ণনীয় দুর্ভোগ সয়ে নানা উপায়ে দুপুর ১১টায় এসে পৌঁছান কাঁচপুর ব্রিজের ওপাড়ে। কিন্তু নিস্তার মেলেনি। যাত্রাবাড়ী কিংবা ফার্মগেট আসার মতো কোনো গণপরিবহনই নেই। অগত্যা কয়েকগুণ বেশি ভাড়ার চুক্তিতে উঠেন রিকশায়। মোস্তাফিজের সঙ্গে কথা হয় চিটাগাং রোড এলাকায়। তিনি বলেন, সাভারের একটি হাসপাতালে যাবেন তিনি। কিন্তু সোয়া এক ঘণ্টা অপেক্ষা করেও যাত্রাবাড়ী যাবার মতো কোনো গাড়ি পাইনি। এখন রিকশাই ভরসা। প্রায় জোর করে কয়েক গুণ বেশি ভাড়া দিয়ে একটি রিকশায় উঠেছি। মোস্তাফিজ বলেন, শুনেছি গাড়ি ভাঙচুরের অজুহাতে মালিক, চালকেরা গাড়ি চালানো বন্ধ রেখেছেন। কিন্তু এগুলো আসলে ঠুনকো অজুহাত। এক ধরনের অপকৌশল। মানুষকে কষ্ট দিয়ে মালিক, চালকেরা কি আনন্দ পান তা তারাই জানেন।
নাারয়ণগঞ্জ থেকে সাইনবোর্ড এলাকায় বেলা ১১টায় এসে উত্তরা যাওয়ার জন্য বাসের অপেক্ষায় ছিলেন কাওসার হোসেন (৪০)। তিনি বলেন, প্রায় এক ঘণ্টা ধরে বাসের অপেক্ষায় তিনি। কিন্তু কাঁচপুরের দিক থেকে কোনো গাড়ি আসছে না। শনিরা আখড়ায় মো. টিটু মিয়ার সঙ্গে কথা হলে তিনি জানান, রামপুরা যাবেন তিনি। কিন্তু কাঁচপুরের দিক থেকে ঢাকার উদ্দেশ্যে কোনো গাড়ি আসছে না। তেমনি যাত্রাবাড়ী ও সায়েদাবাদ থেকেও কাঁচপুর বা অন্য রুট অভিমুখী কোনো গাড়ি চলাচল করছে না। অনেকক্ষণ অপেক্ষা করার পর একপর্যায়ে রিকশা ভ্যানে চেপে বসেন টিটু। তিনি বলেন, অসহ্য ভোগান্তি। এর কোনো মানে হয় না।
দুপুর পৌনে ১টায় যাত্রাবাড়ী চৌরাস্তায় দেখা যায়, বাসের জন্য শত শত যাত্রীরা অপেক্ষায়। কিন্তু যে জন্য এত অপেক্ষা, সেই কাঙ্ক্ষিত কোনো গণপরিবহন একেবারেই নেই। কয়েকজন যাত্রী জানান, এখানে দিনরাত বাসের সারি থাকতো। কিন্তু শুক্রবার ছিল একেবারেই ভিন্ন চিত্র। আর বাস না থাকায় গুলিস্তান, শাহবাগ, ফার্মগেট অভিমুখী রিকশা ভাড়া এত বেশি ছিল যে অনেকেই হেঁটে গন্তব্যে রওয়ানা হন। যাত্রাবাড়ী চৌরাস্তায় কথা হয় জুবায়ের আহমেদের সঙ্গে। মা ও স্ত্রীকে নিয়ে টঙ্গী যাওয়ার উদ্দেশ্যে বের হয়েছিলেন তিনি। জুবায়ের বলেন, এক ঘণ্টার উপর বসে আছি। সিএনজি ভাড়া চায় ১২শ’ টাকা। তাই অপেক্ষায় আছি। সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হয়ে সাভারের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন এক আত্মীয়কে দেখতে যাওয়ার উদ্দেশ্যে যাত্রবাড়ী চৌরাস্তায় বাসের অপেক্ষায় ছিলেন ষাটোর্ধ্ব সরবানু। কিন্তু দুপুর ১টা পর্যন্ত কোনো বাস না পেয়ে কাজলার বাসায় ফিরে যান তিনি।
রাজশাহীর দূরপাল্লার বাস চলাচল বন্ধে দুর্ভোগে যাত্রীরা
রাজশাহী
থেকে আন্তঃজেলা ও দূরপাল্লার সব রুটে সকাল থেকে বাস চলাচল বন্ধ ছিল।
নিরাপত্তাহীনতার কারণ দেখিয়ে গতকাল শুক্রবার সকাল থেকে রাজশাহীর কোনো রূটে
বাস ছাড়েনি পরিবহন মালিক-শ্রমিক ইউনিয়ন। তবে জরুরি সংবাদ সম্মেলন করে
সন্ধ্যার পর থেকে পুনরায় বাস চলাচল শুরু হবে জানিয়েছেন রাজশাহী সড়ক পরিবহন
গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক মঞ্জুর রহমান পিটার।
এদিকে হঠাৎ করেই পরিবহন শ্রমিকরা বাস চলাচল বন্ধ করে দেয়ায় দুর্ভোগে পড়েছেন যাত্রীরা। বিশেষ করে আন্তঃজেলা রুটের যাত্রীরা বেশি ভোগান্তিতে পড়েছেন। তবে বিভিন্ন রুটে চলাচলকারী বিআরটিসির বাসগুলো নিয়মিত শিডিউল অনুযায়ী চলাচল করছে।
বাস চলাচল বন্ধের বিষয়ে মঞ্জুর রহমান পিটার জানান, সাধারণ শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের প্রতি তাদেরও সমর্থন রয়েছে। শিক্ষার্থীদের প্রতিটি দাবিই যৌক্তিক। আমরা শিক্ষার্থীদের মতো নিরাপদ সড়ক চাই। কিন্তু লক্ষ্য করা যাচ্ছে, তাদের যৌক্তিক আন্দোলনের মধ্যে একটি গোষ্ঠী জড়িয়ে পড়েছে এবং তারা ছাত্রদের আন্দোলনের ওপর ভর করে ঘটনাটি ভিন্নখাতে নিয়ে যাওয়ার অপচেষ্টা শুরু করেছেন। কোমলমতি শিক্ষার্থীদের ভিড়ে ঢুকে যানবাহন ভাঙচুরসহ রাষ্ট্রী সম্পদ ধ্বংসের অপচেষ্টা শুরু করেছে গোষ্ঠীটি। তাই ‘নিরাপত্তাহীনতার’ বিষয়টি চিন্তা করে দিনের বেলায় আপাতত বাস চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে। তবে সন্ধ্যা থেকে বাস চলাচল করবে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত বাধ্য হয়ে তাদের এমন সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে বলে জানান পিটার।
হবিগঞ্জে অনির্দিষ্টকালের বাস ধর্মঘট
নিরাপত্তার কারণ দেখিয়ে অর্নিদিষ্টকালের জন্য হবিগঞ্জের সকল সড়কে বাস চলাচল বন্ধ করে দিয়েছে মোটর মালিক গ্রুপ। গতকাল ভোর থেকে স্থানীয় ও দূরপাল্লার সকল বাস চলাচল বন্ধ রয়েছে। সকাল থেকে হবিগঞ্জ পৌরবাস টার্মিনাল থেকে ছেড়ে যায়নি সিলেট ও ঢাকাসহ দূরপাল্লার কোন যানবাহন। এছাড়াও ৯টি অভ্যন্তরীণ রুটেও বাস চলাচল বন্ধ রয়েছে। এতে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন শত শত যাত্রী। হবিগঞ্জ জেলা মোটরমালিক গ্রুপ জানায়, নিরাপত্তা ঝুঁকি থাকায় তারা বাস চলাচল বন্ধ রেখেছেন। সরকার কর্তৃক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হলেই তারা বাস চলাচল স্বাভাবিক করবেন। হবিগঞ্জ মোটর মালিক গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক শঙ্ক শুভ্র রায় জানান, কেন্দ্রীয় নির্দেশনায় পরিবহন ও শ্রমিকদের নিরাপত্তার কারণে আমরা সারা জেলায় বাস চলাচল বন্ধ রেখেছি। এতে যাত্রীদের সাময়িক অসুবিধার জন্য আমরা দুঃখিত। কেন্দ্রের নির্দেশ না পাওয়া পর্যন্ত বাস চলাচল বন্ধ থাকবে।
খুলনায় হঠাৎ পরিবহন ধর্মঘটে যাত্রীদের চরম ভোগান্তি
হঠাৎ করে খুলনা থেকে ঢাকা, চট্টগ্রামসহ দূরপাল্লার বাস চলাচল অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ করেছে পরিবহন মালিক-শ্রমিকরা। যানবাহন ভাঙচুর ও শ্রমিকদের নিরাপত্তার দাবিতে গতকাল সকাল ১০টা থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য এ ধর্মঘটের ডাক দেয়া হয়। এতে দূরপাল্লার রুটে চলাচলকারীযাত্রীরা চরম ভোগান্তিতে পড়েছে।
সোনাডাঙ্গা বাসটার্মিনালে আসা আবদুল্লাহ নামের এক যাত্রী বলেন, বাস না চলার এমন সিদ্ধান্তের কথা অনেকেই জানেন না। আমার মতো অনেক যাত্রী দুর্ভোগে পড়েছেন। সোনাডাঙ্গা বাসটার্মিনাল, রয়্যালের মোড় ও শিববাড়ির মোড়ের অনেক কাউন্টার বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। যেগুলো খোলা আছে সেখানে অলস সময় পার করছেন কর্মচারীরা।
পরিবহন শ্রমিক নেতারা জানান, শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভের মধ্যে উচ্ছৃঙ্খল একটি গোষ্ঠী ঢুকে পড়েছে। তারা বাসে ভাঙচুর চালাচ্ছে। নিরাপত্তার কারণে বাস না চালানোর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
খুলনাবাস-মিনিবাস কোচ মালিক সমিতির সভাপতি ও মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সংসদ সদস্য মুহাম্মদ মিজানুর রহমান মিজানের মোবাইল ফোনে একাধিবার চেষ্টা করেও পাওয়া যায়নি। তবে, সমিতির যুগ্ম সম্পাদক আনোয়ার হোসেন সোনা ধর্মঘটে বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, খুলনা জেলার অভ্যন্তরের লোকাল বাস চলাচল করলেও দূরপাল্লার কোনো পরিবহন ছেড়ে যাচ্ছে না।
গাজীপুরে শিক্ষার্থীরা নামেনি, শ্রমিক অবরোধে দুর্ভোগ চরমে
এদিকে হঠাৎ করেই পরিবহন শ্রমিকরা বাস চলাচল বন্ধ করে দেয়ায় দুর্ভোগে পড়েছেন যাত্রীরা। বিশেষ করে আন্তঃজেলা রুটের যাত্রীরা বেশি ভোগান্তিতে পড়েছেন। তবে বিভিন্ন রুটে চলাচলকারী বিআরটিসির বাসগুলো নিয়মিত শিডিউল অনুযায়ী চলাচল করছে।
বাস চলাচল বন্ধের বিষয়ে মঞ্জুর রহমান পিটার জানান, সাধারণ শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের প্রতি তাদেরও সমর্থন রয়েছে। শিক্ষার্থীদের প্রতিটি দাবিই যৌক্তিক। আমরা শিক্ষার্থীদের মতো নিরাপদ সড়ক চাই। কিন্তু লক্ষ্য করা যাচ্ছে, তাদের যৌক্তিক আন্দোলনের মধ্যে একটি গোষ্ঠী জড়িয়ে পড়েছে এবং তারা ছাত্রদের আন্দোলনের ওপর ভর করে ঘটনাটি ভিন্নখাতে নিয়ে যাওয়ার অপচেষ্টা শুরু করেছেন। কোমলমতি শিক্ষার্থীদের ভিড়ে ঢুকে যানবাহন ভাঙচুরসহ রাষ্ট্রী সম্পদ ধ্বংসের অপচেষ্টা শুরু করেছে গোষ্ঠীটি। তাই ‘নিরাপত্তাহীনতার’ বিষয়টি চিন্তা করে দিনের বেলায় আপাতত বাস চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে। তবে সন্ধ্যা থেকে বাস চলাচল করবে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত বাধ্য হয়ে তাদের এমন সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে বলে জানান পিটার।
হবিগঞ্জে অনির্দিষ্টকালের বাস ধর্মঘট
নিরাপত্তার কারণ দেখিয়ে অর্নিদিষ্টকালের জন্য হবিগঞ্জের সকল সড়কে বাস চলাচল বন্ধ করে দিয়েছে মোটর মালিক গ্রুপ। গতকাল ভোর থেকে স্থানীয় ও দূরপাল্লার সকল বাস চলাচল বন্ধ রয়েছে। সকাল থেকে হবিগঞ্জ পৌরবাস টার্মিনাল থেকে ছেড়ে যায়নি সিলেট ও ঢাকাসহ দূরপাল্লার কোন যানবাহন। এছাড়াও ৯টি অভ্যন্তরীণ রুটেও বাস চলাচল বন্ধ রয়েছে। এতে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন শত শত যাত্রী। হবিগঞ্জ জেলা মোটরমালিক গ্রুপ জানায়, নিরাপত্তা ঝুঁকি থাকায় তারা বাস চলাচল বন্ধ রেখেছেন। সরকার কর্তৃক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হলেই তারা বাস চলাচল স্বাভাবিক করবেন। হবিগঞ্জ মোটর মালিক গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক শঙ্ক শুভ্র রায় জানান, কেন্দ্রীয় নির্দেশনায় পরিবহন ও শ্রমিকদের নিরাপত্তার কারণে আমরা সারা জেলায় বাস চলাচল বন্ধ রেখেছি। এতে যাত্রীদের সাময়িক অসুবিধার জন্য আমরা দুঃখিত। কেন্দ্রের নির্দেশ না পাওয়া পর্যন্ত বাস চলাচল বন্ধ থাকবে।
খুলনায় হঠাৎ পরিবহন ধর্মঘটে যাত্রীদের চরম ভোগান্তি
হঠাৎ করে খুলনা থেকে ঢাকা, চট্টগ্রামসহ দূরপাল্লার বাস চলাচল অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ করেছে পরিবহন মালিক-শ্রমিকরা। যানবাহন ভাঙচুর ও শ্রমিকদের নিরাপত্তার দাবিতে গতকাল সকাল ১০টা থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য এ ধর্মঘটের ডাক দেয়া হয়। এতে দূরপাল্লার রুটে চলাচলকারীযাত্রীরা চরম ভোগান্তিতে পড়েছে।
সোনাডাঙ্গা বাসটার্মিনালে আসা আবদুল্লাহ নামের এক যাত্রী বলেন, বাস না চলার এমন সিদ্ধান্তের কথা অনেকেই জানেন না। আমার মতো অনেক যাত্রী দুর্ভোগে পড়েছেন। সোনাডাঙ্গা বাসটার্মিনাল, রয়্যালের মোড় ও শিববাড়ির মোড়ের অনেক কাউন্টার বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। যেগুলো খোলা আছে সেখানে অলস সময় পার করছেন কর্মচারীরা।
পরিবহন শ্রমিক নেতারা জানান, শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভের মধ্যে উচ্ছৃঙ্খল একটি গোষ্ঠী ঢুকে পড়েছে। তারা বাসে ভাঙচুর চালাচ্ছে। নিরাপত্তার কারণে বাস না চালানোর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
খুলনাবাস-মিনিবাস কোচ মালিক সমিতির সভাপতি ও মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সংসদ সদস্য মুহাম্মদ মিজানুর রহমান মিজানের মোবাইল ফোনে একাধিবার চেষ্টা করেও পাওয়া যায়নি। তবে, সমিতির যুগ্ম সম্পাদক আনোয়ার হোসেন সোনা ধর্মঘটে বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, খুলনা জেলার অভ্যন্তরের লোকাল বাস চলাচল করলেও দূরপাল্লার কোনো পরিবহন ছেড়ে যাচ্ছে না।
গাজীপুরে শিক্ষার্থীরা নামেনি, শ্রমিক অবরোধে দুর্ভোগ চরমে
সাপ্তাহিক
ছুটির দিনে শিক্ষার্থীরা আন্দোলনে না থাকলেও যানবাহন ভাঙচুরের প্রতিবাদ,
কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ ও চালকদের সর্বোচ্চ সাজার আইন না করার দাবিতে গাজীপুরে
মহাসড়কে নেমেছে পরিবহন শ্রমিকরা। শুক্রবার সকাল থেকে শ্রমিকরা
ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের বড়বাড়ি, টঙ্গী এবং ঢাকা-গাজীপুর সড়কের শিববাড়ি মোড় ও
জয়দেবপুর বাসস্ট্যান্ড এলাকায় বিক্ষোভ করে তারা সড়ক অবরোধ করে রাখে। পরে
পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। স্বল্পসংখ্যক লোকাল বাস
চলাচল করলেও আন্তঃজেলা ও দূরপাল্লার বাস চলাচল বন্ধ থাকায় চরম দুর্ভোগে
পড়েছেন যাত্রীরা। সড়কে মহাসড়কে গণপরিবহন না থাকায় ভোগান্তিতে পড়েন নানা
শ্রেণি পেশার লোকজন। পায়ে হেঁটে অথবা হালকা যানবাহনে চড়ে গন্তব্যে যেতে
হচ্ছে যাত্রীদের। এই সুযোগে যাত্রীদের কাছ থেকে রিকশা, ব্যাটারিচালিত
অটোরিকশার চালকরা স্বাভাবিক ভাড়ার চেয়ে ৪-৫ গুণ অধিক ভাড়া আদায় করছেন বলে
জানিয়েছেন যাত্রীরা।
অবরোধকারী শ্রমিকরা জানায়, কারণে অকারণে সড়কে যানবাহন ভাঙচুর করা হয়। সরকার সড়ক দুর্ঘটনায় চালকদের ফাঁসির সাজা এবং এক কোটি টাকার ক্ষতিপূরণ রেখে আইন করছে বলে আমরা শুনেছি। এমন হলে কয়জন চালক গাড়ি চালাতে চাইবে। এসব কারণে এবং পরিবহন মালিক ও শ্রমিক নেতাদের সিদ্ধান্তে আমরা গাড়ি চলাচল বন্ধ রেখেছি।
নওগাঁয় আভ্যন্তরীণ ও দূরপাল্লার রুটে বাস চলাচল বন্ধ’
নিরাপদ সড়কের দাবিতে ছাত্র আন্দোনের মুখে নওগাঁ থেকে দূরপাল্লার ও অভ্যন্তরীণ সকল রুটে বৃহস্পতিবার রাত থেকে বাস চলাচল বন্ধ রয়েছে। ফলে দেশের বিভিন্ন স্থানে যাতায়াতকারী যাত্রীদের পড়তে হয়েছে দুর্ভোগের মুখে।
দূরপাল্লার রুটের শ্যামলী পরিবহনের নওগাঁর কাউন্টার ম্যানেজার মামুন জানান, পরিবহনের মালিক কর্তৃপক্ষ পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত টিকিট বিক্রয় বন্ধ রাখতে বলা হয়েছে। নিরাপত্তার কারণে বাস শ্রমিকরা বাস চালাতে চাইছেন না। এদিকে জেলা মোটর পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের সহসভাপতি অলিউল রাজি আশিক জানান নিরাপত্তার কারনে শ্রমিক অনির্দিষ্টকালের কর্মবিরতি পালন করছেন। এ কারণে জেলার অভ্যন্তরীণ ও দূরপাল্লার সকল রুটে বাস চলাচল বন্ধ রয়েছে।
লক্ষ্মীপুরেও চলছে পরিবহন ধর্মঘট
লক্ষ্মীপুরে অনির্দিষ্টকালের জন্য সকাল পরিবহন ধর্মঘট ও কর্মবিরতি পালন করা হচ্ছে। বন্ধ রাখা হয়েছে দূরপাল্লাগামী ছোট বড় যাত্রীবাহী বাস। শুক্রবার সকাল থেকেই এ কর্মসূচি পালন করছেন পরিবহন শ্রমিক ও মালিকরা। এদিকে বাস বন্ধ থাকায় টার্মিনাল এলাকায় যাত্রীদের দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। এতে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন এ রুটে যাতায়াতরত শত শত যাত্রী।
পরিবহন মালিক ও শ্রমিকরা জানায়, আন্দোলনের নামে সারা দেশে গাড়ি ভাঙচুর করা হচ্ছে। এতে পরিবহন মালিক ও শ্রমিকরা চরম ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এর প্রতিবাদে সারা দেশের ন্যায় লক্ষ্মীপুরেও দূরপাল্লার যানবাহন বন্ধ রাখা হয়েছে। এদিকে জকসিন ইকোনো কাউন্টারের মালিক আবদুল মালেক জানান, নিরাপত্তার কারণে সকাল থেকে দূরপাল্লার ইকোনো চেয়ারকোচসহ কোনো যানবাহন চলাচল করছে না। যানবাহন চলাচল না করায় দুর্ভোগে পড়েছেন যাত্রীরা।
ফেনী থেকে ঢাকা-চট্টগ্রাম রুটে বাস চলাচল বন্ধ
ফেনী থেকে ঢাকা-চট্টগ্রাম রুটে বাস চলাচল বন্ধ করে দিয়েছে পরিবহন মালিক ও শ্রমিকরা। শুক্রবার ভোর থেকে ওইসব রুটের বাস চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়।
ফেনী আন্তঃজেলা বাস মালিক সমিতির সভাপতি জাফর উদ্দিন জানান, স্কুল ও কলেজ শিক্ষার্থীদের আন্দোলন ও গাড়ি ভাঙচুরের কারণে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সিদ্ধান্তের আলোকে তারা বাস চলাচল বন্ধ করে দিয়েছে চালকরা। পরিবহন শ্রমিকরাও বাস চালাতে অপারগতা প্রকাশ করায় শুক্রবার ভোর থেকে ঢাকা-চট্টগ্রাম রুটে স্টার লাইন পরিবহনসহ সব বাস চলাচল বন্ধ রয়েছে।
যশোরসহ ১৮টি রুটে বাস চলাচল বন্ধ
সড়কে বাস চলাচল বন্ধ রেখেছে যশোরসহ গোটা দক্ষিণাঞ্চলের ১০ জেলা পরিবহন মালিক ও শ্রমিকরা। ফলে গতকাল সকাল থেকে যশোরসহ এই অঞ্চলের ১৮টি রুটে সব ধরনের পরিবহন চলাচল বন্ধ রয়েছে। পরিবহন বন্ধ সম্পর্কে মালিক আর শ্রমিকদের বক্তব্যে কোনো মিল পাওয়া যাচ্ছে না। বাংলাদেশ পরিবহন সংস্থা শ্রমিক সমিতির সভাপতি মামুনুর রশীদ বাচ্চু বলেন, রাস্তায় বাস নামালে হামলা হচ্ছে, ভাঙচুর হচ্ছে। চালক ও শ্রমিকদের মারপিট করছে ছাত্ররা। রাস্তায় পরিবহন ও শ্রমিকদের নিরাপত্তা দিতে সরকার ব্যর্থ হয়েছে। এই কারণে মালিকদের নির্দেশে সকাল থেকে যশোরসহ এই অঞ্চলের ১৮টি রুটে সব ধরনের পরিবহন চলাচল বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত এই অবস্থা অব্যাহত থাকবে বলে এই শ্রমিক নেতা দাবি করেন। এদিকে যশোর জেলা বাস মালিক সমিতির সভাপতি আলী আকবর বলেন, শ্রমিকরা বাস চালাতে অপারগতা প্রকাশ করার কারণে এই অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। এর সঙ্গে বাস মালিকদের কোনো সম্পর্ক নেই। ইন্টারডিস্ট্রিক্ট বাস সিন্ডিকেটের সভাপতি ও ঈগল পরিবহনের স্বত্বাধিকারী পবিত্র কাপুড়িয়া এই প্রসঙ্গে বলেন, শ্রমিকরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে।
রাস্তায় নানা অঘটন ঘটছে। সরকার নিরাপত্তা দিচ্ছে না। বাস দেখলেই তাতে হামলা চালানো হচ্ছে। ইট-পাটকেল মারা হচ্ছে। ছাত্ররা ট্রাফিক পুলিশের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়ে রাস্তায় নৈরাজ্য সৃষ্টি করছে। এই অবস্থায় শ্রমিকরা বাস নিয়ে রাস্তায় নামতে সাহস পাচ্ছে না। যার কারণে শুক্রবার সকাল থেকে যশোর, খুলনা, সাতক্ষীরা, বাগেরহাট, মাগুরা, নড়াইল, ঝিনাইদহ, কুষ্টিয়া, চুয়াডাঙ্গা, মেহেরপুর, ফরিদপুর, রাজবাড়ী, গোপালগঞ্জসহ দেশের দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের সব রুটে সকল ধরনের বাস বা পরিবহন চলাচল বন্ধ রয়েছে। এদিকে শিক্ষার্থীদের অহিংস নিরাপদ সড়ক চাই- আন্দোলনকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করতেই পরিবহন মালিক শ্রমিকরা এই নৈরাজ্য সৃষ্টি করে দেশবাসীকে জিম্মি করতে চাই বলে মন্তব্য করেছেন নিরাপদ সড়ক চাই আন্দোলন যশোরের যুগ্ম আহ্বায়ক এসএম শফি। তিনি বলেন, এভাবে পরিবহন বন্ধ রেখে শিক্ষার্থী তথা দেশবাসীকে জিম্মি করে তাদের দাবিকে পাশ কাটানো সম্ভব নয়। দ্রুত এই অবস্থার অবসান না হলে শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকদের নিয়ে বৃহত্তর আন্দোলন গড়ে তোলার হুমকি দেন নিরাপদক সড়ক আন্দোলনের এই নেতা।
মৌলভীবাজার থেকে ঢাকার পথে কোনো বাস ছাড়েনি
মৌলভীবাজার থেকে গতকাল ঢাকাগামী দূরপাল্লার কোনো বাস সকাল থেকে ছাড়েনি। শহরের কোদালীপাড়ে অবস্থিত ঢাকাগামী সব বাসের কাউন্টার বন্ধ ছিল। বিকালের দিকে কাউন্টার ২/১ টি খোলা হলেও টিকেট কাটা হয়নি। হবিগঞ্জ-সিলেট লাইনের কোনো বাসও চলেনি। হবিগঞ্জ বাস মালিক সমিতির মৌলভীবাজার কার্যালয় বন্ধ ছিল সারাদিন। বিভিন্ন বাস কাউন্টারে কর্মরত কর্মচারীরা জানিয়েছেন চলমান ছাত্র আন্দোলনের কারণে সকাল থেকে বাস চলাচল বন্ধ রেখেছেন মালিক পক্ষ। গতকাল বিকাল ৫ টায় গিয়ে দেখা গেছে ঢাকা-সিলেট সড়ক পথের শ্যামলী, হানিফ, রূপসী বাংলা, সৌদিয়া বাস কাউন্টার প্রায় বন্ধ। রূপসী বাংলার কাউন্টারের সামনে ৪ জন যাত্রী দাঁড়িয়ে ছিলেন এ সময়। কাউন্টারের কর্মচারী জানান ঢাকা অফিস না বললে বাস ছাড়া হবে না। এই কর্মচারী জানান, সকালে ঢাকার উদ্দেশে একটি গাড়ি ছেড়ে গেলে পরে পথ থেকে ফিরে আসে। এই সময় দাঁড়িয়ে থাকা যাত্রী জাকির জানান- রাস্তায় গাড়ি বদলিয়ে কেউ কেউ যাচ্ছেন। হানিফের কাউন্টার মাস্টার আবদুুর রহমান জানান, সারাদিন কাউন্টার বন্ধ ছিল। কোনো বাস ঢাকার উদ্দেশ্যে ছাড়েনি। ঢাকা থেকে গ্রীন সিগন্যাল না পেলে গাড়ি ছাড়া হবে না। এদিকে অভ্যন্তরীণ পথেও গতকাল গাড়ি কম ছিল। এক পরিবহন শ্রমিক নেতা জানিয়েছেন ধর্মঘট না হলেও নিরাপত্তার জন্য অনেকে গাড়ি সড়কে নামাননি।
অবরোধকারী শ্রমিকরা জানায়, কারণে অকারণে সড়কে যানবাহন ভাঙচুর করা হয়। সরকার সড়ক দুর্ঘটনায় চালকদের ফাঁসির সাজা এবং এক কোটি টাকার ক্ষতিপূরণ রেখে আইন করছে বলে আমরা শুনেছি। এমন হলে কয়জন চালক গাড়ি চালাতে চাইবে। এসব কারণে এবং পরিবহন মালিক ও শ্রমিক নেতাদের সিদ্ধান্তে আমরা গাড়ি চলাচল বন্ধ রেখেছি।
নওগাঁয় আভ্যন্তরীণ ও দূরপাল্লার রুটে বাস চলাচল বন্ধ’
নিরাপদ সড়কের দাবিতে ছাত্র আন্দোনের মুখে নওগাঁ থেকে দূরপাল্লার ও অভ্যন্তরীণ সকল রুটে বৃহস্পতিবার রাত থেকে বাস চলাচল বন্ধ রয়েছে। ফলে দেশের বিভিন্ন স্থানে যাতায়াতকারী যাত্রীদের পড়তে হয়েছে দুর্ভোগের মুখে।
দূরপাল্লার রুটের শ্যামলী পরিবহনের নওগাঁর কাউন্টার ম্যানেজার মামুন জানান, পরিবহনের মালিক কর্তৃপক্ষ পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত টিকিট বিক্রয় বন্ধ রাখতে বলা হয়েছে। নিরাপত্তার কারণে বাস শ্রমিকরা বাস চালাতে চাইছেন না। এদিকে জেলা মোটর পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের সহসভাপতি অলিউল রাজি আশিক জানান নিরাপত্তার কারনে শ্রমিক অনির্দিষ্টকালের কর্মবিরতি পালন করছেন। এ কারণে জেলার অভ্যন্তরীণ ও দূরপাল্লার সকল রুটে বাস চলাচল বন্ধ রয়েছে।
লক্ষ্মীপুরেও চলছে পরিবহন ধর্মঘট
লক্ষ্মীপুরে অনির্দিষ্টকালের জন্য সকাল পরিবহন ধর্মঘট ও কর্মবিরতি পালন করা হচ্ছে। বন্ধ রাখা হয়েছে দূরপাল্লাগামী ছোট বড় যাত্রীবাহী বাস। শুক্রবার সকাল থেকেই এ কর্মসূচি পালন করছেন পরিবহন শ্রমিক ও মালিকরা। এদিকে বাস বন্ধ থাকায় টার্মিনাল এলাকায় যাত্রীদের দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। এতে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন এ রুটে যাতায়াতরত শত শত যাত্রী।
পরিবহন মালিক ও শ্রমিকরা জানায়, আন্দোলনের নামে সারা দেশে গাড়ি ভাঙচুর করা হচ্ছে। এতে পরিবহন মালিক ও শ্রমিকরা চরম ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এর প্রতিবাদে সারা দেশের ন্যায় লক্ষ্মীপুরেও দূরপাল্লার যানবাহন বন্ধ রাখা হয়েছে। এদিকে জকসিন ইকোনো কাউন্টারের মালিক আবদুল মালেক জানান, নিরাপত্তার কারণে সকাল থেকে দূরপাল্লার ইকোনো চেয়ারকোচসহ কোনো যানবাহন চলাচল করছে না। যানবাহন চলাচল না করায় দুর্ভোগে পড়েছেন যাত্রীরা।
ফেনী থেকে ঢাকা-চট্টগ্রাম রুটে বাস চলাচল বন্ধ
ফেনী থেকে ঢাকা-চট্টগ্রাম রুটে বাস চলাচল বন্ধ করে দিয়েছে পরিবহন মালিক ও শ্রমিকরা। শুক্রবার ভোর থেকে ওইসব রুটের বাস চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়।
ফেনী আন্তঃজেলা বাস মালিক সমিতির সভাপতি জাফর উদ্দিন জানান, স্কুল ও কলেজ শিক্ষার্থীদের আন্দোলন ও গাড়ি ভাঙচুরের কারণে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সিদ্ধান্তের আলোকে তারা বাস চলাচল বন্ধ করে দিয়েছে চালকরা। পরিবহন শ্রমিকরাও বাস চালাতে অপারগতা প্রকাশ করায় শুক্রবার ভোর থেকে ঢাকা-চট্টগ্রাম রুটে স্টার লাইন পরিবহনসহ সব বাস চলাচল বন্ধ রয়েছে।
যশোরসহ ১৮টি রুটে বাস চলাচল বন্ধ
সড়কে বাস চলাচল বন্ধ রেখেছে যশোরসহ গোটা দক্ষিণাঞ্চলের ১০ জেলা পরিবহন মালিক ও শ্রমিকরা। ফলে গতকাল সকাল থেকে যশোরসহ এই অঞ্চলের ১৮টি রুটে সব ধরনের পরিবহন চলাচল বন্ধ রয়েছে। পরিবহন বন্ধ সম্পর্কে মালিক আর শ্রমিকদের বক্তব্যে কোনো মিল পাওয়া যাচ্ছে না। বাংলাদেশ পরিবহন সংস্থা শ্রমিক সমিতির সভাপতি মামুনুর রশীদ বাচ্চু বলেন, রাস্তায় বাস নামালে হামলা হচ্ছে, ভাঙচুর হচ্ছে। চালক ও শ্রমিকদের মারপিট করছে ছাত্ররা। রাস্তায় পরিবহন ও শ্রমিকদের নিরাপত্তা দিতে সরকার ব্যর্থ হয়েছে। এই কারণে মালিকদের নির্দেশে সকাল থেকে যশোরসহ এই অঞ্চলের ১৮টি রুটে সব ধরনের পরিবহন চলাচল বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত এই অবস্থা অব্যাহত থাকবে বলে এই শ্রমিক নেতা দাবি করেন। এদিকে যশোর জেলা বাস মালিক সমিতির সভাপতি আলী আকবর বলেন, শ্রমিকরা বাস চালাতে অপারগতা প্রকাশ করার কারণে এই অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। এর সঙ্গে বাস মালিকদের কোনো সম্পর্ক নেই। ইন্টারডিস্ট্রিক্ট বাস সিন্ডিকেটের সভাপতি ও ঈগল পরিবহনের স্বত্বাধিকারী পবিত্র কাপুড়িয়া এই প্রসঙ্গে বলেন, শ্রমিকরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে।
রাস্তায় নানা অঘটন ঘটছে। সরকার নিরাপত্তা দিচ্ছে না। বাস দেখলেই তাতে হামলা চালানো হচ্ছে। ইট-পাটকেল মারা হচ্ছে। ছাত্ররা ট্রাফিক পুলিশের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়ে রাস্তায় নৈরাজ্য সৃষ্টি করছে। এই অবস্থায় শ্রমিকরা বাস নিয়ে রাস্তায় নামতে সাহস পাচ্ছে না। যার কারণে শুক্রবার সকাল থেকে যশোর, খুলনা, সাতক্ষীরা, বাগেরহাট, মাগুরা, নড়াইল, ঝিনাইদহ, কুষ্টিয়া, চুয়াডাঙ্গা, মেহেরপুর, ফরিদপুর, রাজবাড়ী, গোপালগঞ্জসহ দেশের দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের সব রুটে সকল ধরনের বাস বা পরিবহন চলাচল বন্ধ রয়েছে। এদিকে শিক্ষার্থীদের অহিংস নিরাপদ সড়ক চাই- আন্দোলনকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করতেই পরিবহন মালিক শ্রমিকরা এই নৈরাজ্য সৃষ্টি করে দেশবাসীকে জিম্মি করতে চাই বলে মন্তব্য করেছেন নিরাপদ সড়ক চাই আন্দোলন যশোরের যুগ্ম আহ্বায়ক এসএম শফি। তিনি বলেন, এভাবে পরিবহন বন্ধ রেখে শিক্ষার্থী তথা দেশবাসীকে জিম্মি করে তাদের দাবিকে পাশ কাটানো সম্ভব নয়। দ্রুত এই অবস্থার অবসান না হলে শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকদের নিয়ে বৃহত্তর আন্দোলন গড়ে তোলার হুমকি দেন নিরাপদক সড়ক আন্দোলনের এই নেতা।
মৌলভীবাজার থেকে ঢাকার পথে কোনো বাস ছাড়েনি
মৌলভীবাজার থেকে গতকাল ঢাকাগামী দূরপাল্লার কোনো বাস সকাল থেকে ছাড়েনি। শহরের কোদালীপাড়ে অবস্থিত ঢাকাগামী সব বাসের কাউন্টার বন্ধ ছিল। বিকালের দিকে কাউন্টার ২/১ টি খোলা হলেও টিকেট কাটা হয়নি। হবিগঞ্জ-সিলেট লাইনের কোনো বাসও চলেনি। হবিগঞ্জ বাস মালিক সমিতির মৌলভীবাজার কার্যালয় বন্ধ ছিল সারাদিন। বিভিন্ন বাস কাউন্টারে কর্মরত কর্মচারীরা জানিয়েছেন চলমান ছাত্র আন্দোলনের কারণে সকাল থেকে বাস চলাচল বন্ধ রেখেছেন মালিক পক্ষ। গতকাল বিকাল ৫ টায় গিয়ে দেখা গেছে ঢাকা-সিলেট সড়ক পথের শ্যামলী, হানিফ, রূপসী বাংলা, সৌদিয়া বাস কাউন্টার প্রায় বন্ধ। রূপসী বাংলার কাউন্টারের সামনে ৪ জন যাত্রী দাঁড়িয়ে ছিলেন এ সময়। কাউন্টারের কর্মচারী জানান ঢাকা অফিস না বললে বাস ছাড়া হবে না। এই কর্মচারী জানান, সকালে ঢাকার উদ্দেশে একটি গাড়ি ছেড়ে গেলে পরে পথ থেকে ফিরে আসে। এই সময় দাঁড়িয়ে থাকা যাত্রী জাকির জানান- রাস্তায় গাড়ি বদলিয়ে কেউ কেউ যাচ্ছেন। হানিফের কাউন্টার মাস্টার আবদুুর রহমান জানান, সারাদিন কাউন্টার বন্ধ ছিল। কোনো বাস ঢাকার উদ্দেশ্যে ছাড়েনি। ঢাকা থেকে গ্রীন সিগন্যাল না পেলে গাড়ি ছাড়া হবে না। এদিকে অভ্যন্তরীণ পথেও গতকাল গাড়ি কম ছিল। এক পরিবহন শ্রমিক নেতা জানিয়েছেন ধর্মঘট না হলেও নিরাপত্তার জন্য অনেকে গাড়ি সড়কে নামাননি।
No comments