ইরানের বিরুদ্ধে ট্রাম্পের একের পর এক মিথ্যাচারের স্বরূপ: পর্ব-দুই
মার্কিন
প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গত ৮মে ছয় জাতিগোষ্ঠীর সঙ্গে ইরানের
স্বাক্ষরিত পরমাণু সমঝোতা থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পর চুক্তিকে কেন্দ্র করে
আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক অঙ্গনে গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন লক্ষ্য করা যাচ্ছে।
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বহুবার পরমাণু সমঝোতাকে এক ধরনের মিথ্যাচার ও সবচেয়ে
খারাপ চুক্তি বলে অভিহিত করেছেন। তিনি শুধু যে পরমাণু সমঝোতা থেকে বেরিয়ে
গেছেন তাই নয় একই সঙ্গে ইরানের বিরুদ্ধেও নানা অপবাদ ও মিথ্যা অভিযোগ আরোপ
করেছেন।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প পরমাণু সমঝোতাকে 'বিপর্যয়' অভিহিত করে বলেছেন, "এ চুক্তির কল্যাণে ইরান এ পর্যন্ত কোটি কোটি নগদ ডলার ফিরে পেয়েছে।" এটা ঠিক যে পরমাণু সমঝোতার কারণে ইরানের হাতে এসব অর্থ হস্তগত হয়েছে। তবে এসব অর্থ ইরানের নিজস্ব এবং আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞার কারণে এসব ডলার এতদিন বিদেশে আটকে ছিল। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প দাবি করেছেন, পরমাণু সমঝোতার পর ইরান ১৫ হাজার কোটি ডলার ফেরত পেয়েছে অথচ তার এ সংক্রান্ত বক্তব্য ভিত্তিহীন। কারণ পরমাণু সমঝোতা অনুযায়ী বিদেশের ব্যাংকগুলোতে আটকে থাকা অর্থের মধ্যে ইরান প্রায় ১০ হাজার কোটি ডলার দেশে ফেরত আনতে পারবে। ইরান এ পর্যন্ত তিন হাজার ৫০০ থেকে ছয় হাজার ৫০০ কোটি ডলার ফেরত আনতে সক্ষম হয়েছে। এসব অর্থ ছিল ইরানের তেল বিক্রি বাবদ পাওনা টাকা। এ ছাড়া, ইরানে ইসলামি বিপ্লবের আগে রেজা শাহের শাসনামলে আমেরিকার কাছ থেকে অস্ত্রশস্ত্র কেনার জন্য ৪০ কোটি ডলার পরিশোধ করা হয়েছিল। কিন্তু বিপ্লবের পর আমেরিকা সেই অর্থ আর ইরানকে ফেরত দেয়নি।
ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহিল উজমা খামেনেয়ী ২০০৯ সালের মার্চে বলেছিলেন, "সাবেক স্বৈরাচারী শাহ সরকার আমেরিকার কাছ থেকে বিমান, হেলিকপ্টারসহ অন্যান্য অস্ত্রসস্ত্র কেনার জন্য অগ্রিম প্রচুর অর্থ দিয়ে রেখেছিল। কিন্তু বিপ্লবের পর অর্ডার দেয়া ওইসব অস্ত্রের বেশ কিছু অংশ তৈরি হলেও আমেরিকা তা ইরানকে হস্তান্তর করেনি, অর্থও ফেরত দেয়নি। বিস্ময়ের ব্যাপার হচ্ছে প্রস্তুতকৃত এসব অস্ত্র গুদামে সংরক্ষণের ব্যয়ভারও ইরানের ঘাড়ে চাপিয়ে দেয়া হয়।"
যাইহোক, ওই ঘটনার বহু বছর পর পরমাণু সমঝোতা বাস্তবায়ন ও ইরানের পক্ষ থেকে আস্থা অর্জনের জন্য তৎকালীন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি ২০১৬ সালের জানুয়ারিতে এক বিবৃতিতে ইরানের সঙ্গে এ সংক্রান্ত বিতর্ক নিরসনের বিষয়ে একটি সমঝোতায় পৌঁছে। কথা ছিল আমেরিকার কাছ থেকে অস্ত্র কেনা বাবদ পরিশোধকৃত ৪০ কোটি ডলার সুদসহ ইরানকে ফেরত দেয়া হবে।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের মিথ্যাচারিতার আরেকটি উদাহরণ হচ্ছে, তিনি দাবি করেছেন, ছয় জাতিগোষ্ঠীর সঙ্গে পরমাণু সমঝোতার পর ইরান সরকার সামরিক খাতে বাজেট ৪০ শতাংশ বাড়িয়ে। গত ৮মে পরমাণু সমঝোতা থেকে তিনি যেদিন বেরিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন সেদিনই ইরানের বিরুদ্ধে এ অভিযোগ তোলেন। এরপর ১২ তারিখে এক টুইট বার্তায় তিনি একই অভিযোগের পুনরাবৃত্তি করেন। অথচ স্টকহোম ইন্টারন্যাশনাল পিস রিসার্চ সেন্টার সংক্ষেপে 'সিপ্রি'র এক প্রতিবেদন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের এ সংক্রান্ত দাবিকে মিথ্যা প্রমাণ করেছে। সিপ্রি'র প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইরানের প্রতিরক্ষা বাজেটের বিষয়ে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের বক্তব্য সঠিক নয়। গত তিন বছরে অর্থাৎ ২০১৫ সালে পরমাণু সমঝোতা হওয়ার পর ইরানের সামরিক বাজেট মাত্র ৩০ শতাংশ বেড়েছে। অথচ প্রতিবেশী অন্য আরব দেশের সামরিক বাজেটের সঙ্গে তুলনা করলে দেখা যাবে সামরিক খাতে ইরানের বাজেটের পরিমাণ অনেক কম। আরব দেশগুলো বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ অস্ত্রের ক্রেতা। সৌদি আরব গত বছর আমেরিকার সঙ্গে ১১ হাজার কোটি ডলারের অস্ত্র চুক্তি করেছে। অথচ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সৌদি সেনাদের সামরিক অস্ত্র ব্যবহারের যোগ্যতা খুব একটা নেই।
রুশ সামরিক বিশেষজ্ঞ ভিক্টোর মোরাকোভস্কি মনে করেন, "সৌদি সেনাবাহিনী বহু বছর আগে থেকে আমেরিকার অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হলেও স্থল যুদ্ধ করার মতো প্রস্তুতি তাদের নেই আর বিমান কিংবা সমুদ্র পথে যুদ্ধতো দূরের কথা। কারণ এ দুই যুদ্ধের কারিগরি জ্ঞান ও প্রস্তুতি কোনটিই তাদের নেই।"
এর বিপরীতে ইরান সামরিক ক্ষেত্রে স্বয়ং সম্পূর্ণতা অর্জন করেছে এবং কোনো দিক দিয়েই ইরানের সঙ্গে সৌদি আরবের তুলনা চলে না। অথচ সৌদি আরবের তুলনায় সামরিক খাতে ইরানের ব্যয় খুবই কম। মধ্যপ্রাচ্যের নিরাপত্তা ও সামরিক বিষয়ক বিশেষজ্ঞ মাইকেল নাইটস্ এ ব্যাপারে বলেছেন, "নিঃসন্দেহে ইরান সামরিক ক্ষেত্রে অভাবনীয় সাফল্য অর্জন করেছে।" মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মিথ্যাচারিতার আরেকটি দৃষ্টান্ত হচ্ছে, সন্ত্রাসবাদের প্রতি ইরানের সমর্থনের অভিযোগ তুলেছেন তিনি। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প তার বক্তব্যে দাবি করেছেন, "ইরান সন্ত্রাসীদের প্রতি সমর্থন দেয়া ছাড়াও মধ্যপ্রাচ্যের যুদ্ধকবলিত এলাকায় ক্ষেপণাস্ত্র পাঠিয়ে উত্তেজনা ছড়াচ্ছে।" তিনি বলেন, "হিজবুল্লাহ, হামাস, তালেবান ও আল কায়দার মতো সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর প্রতি ইরানের সমর্থন রয়েছে।"
বাস্তবতা হচ্ছে, ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরান নিজেই বড় ধরণের সন্ত্রাসবাদের শিকার। ১৯৮০'র দশকের শুরু থেকে আমেরিকাসহ পাশ্চাত্যের দেশগুলো ইরান বিরোধী সন্ত্রাসী মোনাফেকিন গোষ্ঠীর প্রতি সমর্থন দিয়ে আসছে। সন্ত্রাসী মোনাফেকিনরা ইরানের বহু কর্মকর্তাসহ ১৫ হাজারের বেশি নিরীহ মানুষকে হত্যা করেছে। এখনো ইরানবিরোধী সন্ত্রাসী এই গোষ্ঠীর সঙ্গে আমেরিকার ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ ও সম্পর্ক রয়েছে এবং মধ্যপ্রাচ্যে পাশ্চাত্যের স্বার্থে তারা কাজ করে যাচ্ছে। অন্যদিকে, ব্রিটেন, ফ্রান্সের মতো ইউরোপীয় মিত্রদের সঙ্গে করে আমেরিকা মধ্যপ্রাচ্যে উগ্র তাকফিরি সন্ত্রাসীদের বিস্তার ঘটাচ্ছে। এর আগে আমেরিকা আফগানিস্তানে আল কায়দা সন্ত্রাসী গোষ্ঠীকে গড়ে তুলেছিল। আমেরিকা ও তাদের আরব মিত্ররা ইরাক ও সিরিয়ায় উগ্র সন্ত্রাসীদের মোকাবেলার পরিবর্তে তাদের প্রতি সমর্থন যোগাচ্ছে। এইসব সন্ত্রাসীদের তাণ্ডবে এ দুই দেশের লাখ লাখ মানুষ শরণার্থীতে পরিণত হয়েছে। অথচ ইরান বিশ্বের নির্যাতিত জনগোষ্ঠী ও মুসলমানদের অধিকার রক্ষায় হিজবুল্লাহ ও হামাসের মতো প্রতিরোধকামী শক্তিগুলোর প্রতি সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু তারপরও আমেরিকা ইরানকে সন্ত্রাসীদের সমর্থক বলে প্রচার চালাচ্ছে।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের মিথ্যাচারিতার আরেকটি দৃষ্টান্ত হচ্ছে তিনি ইরানের জনগণের প্রতি সমর্থন ও সহমর্মিতা দেখিয়েছেন। ট্রাম্প তার বক্তব্যে দাবি করেছেন, "মার্কিন জনগণ ইরানের জনগণের পাশে রয়েছে।" অথচ এর আগে বিভিন্ন সময়ে তিনি ইরানের জনগণকে তীব্র ভাষায় আক্রমণ করে বক্তব্য দিয়েছেন। তিনি ২০১৭ সালে হোয়াইট হাউজে এক সংবাদ সম্মেলনে ইরানের জনগণকে সন্ত্রাসী জাতি হিসেবে উল্লেখ করেছিলেন। এ থেকে বোঝা যায় তিনি ইরানের জনগণের পাশে থাকার যে দাবি করেছেন তা ডাহা মিথ্যা।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প পরমাণু সমঝোতাকে 'বিপর্যয়' অভিহিত করে বলেছেন, "এ চুক্তির কল্যাণে ইরান এ পর্যন্ত কোটি কোটি নগদ ডলার ফিরে পেয়েছে।" এটা ঠিক যে পরমাণু সমঝোতার কারণে ইরানের হাতে এসব অর্থ হস্তগত হয়েছে। তবে এসব অর্থ ইরানের নিজস্ব এবং আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞার কারণে এসব ডলার এতদিন বিদেশে আটকে ছিল। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প দাবি করেছেন, পরমাণু সমঝোতার পর ইরান ১৫ হাজার কোটি ডলার ফেরত পেয়েছে অথচ তার এ সংক্রান্ত বক্তব্য ভিত্তিহীন। কারণ পরমাণু সমঝোতা অনুযায়ী বিদেশের ব্যাংকগুলোতে আটকে থাকা অর্থের মধ্যে ইরান প্রায় ১০ হাজার কোটি ডলার দেশে ফেরত আনতে পারবে। ইরান এ পর্যন্ত তিন হাজার ৫০০ থেকে ছয় হাজার ৫০০ কোটি ডলার ফেরত আনতে সক্ষম হয়েছে। এসব অর্থ ছিল ইরানের তেল বিক্রি বাবদ পাওনা টাকা। এ ছাড়া, ইরানে ইসলামি বিপ্লবের আগে রেজা শাহের শাসনামলে আমেরিকার কাছ থেকে অস্ত্রশস্ত্র কেনার জন্য ৪০ কোটি ডলার পরিশোধ করা হয়েছিল। কিন্তু বিপ্লবের পর আমেরিকা সেই অর্থ আর ইরানকে ফেরত দেয়নি।
ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহিল উজমা খামেনেয়ী ২০০৯ সালের মার্চে বলেছিলেন, "সাবেক স্বৈরাচারী শাহ সরকার আমেরিকার কাছ থেকে বিমান, হেলিকপ্টারসহ অন্যান্য অস্ত্রসস্ত্র কেনার জন্য অগ্রিম প্রচুর অর্থ দিয়ে রেখেছিল। কিন্তু বিপ্লবের পর অর্ডার দেয়া ওইসব অস্ত্রের বেশ কিছু অংশ তৈরি হলেও আমেরিকা তা ইরানকে হস্তান্তর করেনি, অর্থও ফেরত দেয়নি। বিস্ময়ের ব্যাপার হচ্ছে প্রস্তুতকৃত এসব অস্ত্র গুদামে সংরক্ষণের ব্যয়ভারও ইরানের ঘাড়ে চাপিয়ে দেয়া হয়।"
যাইহোক, ওই ঘটনার বহু বছর পর পরমাণু সমঝোতা বাস্তবায়ন ও ইরানের পক্ষ থেকে আস্থা অর্জনের জন্য তৎকালীন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি ২০১৬ সালের জানুয়ারিতে এক বিবৃতিতে ইরানের সঙ্গে এ সংক্রান্ত বিতর্ক নিরসনের বিষয়ে একটি সমঝোতায় পৌঁছে। কথা ছিল আমেরিকার কাছ থেকে অস্ত্র কেনা বাবদ পরিশোধকৃত ৪০ কোটি ডলার সুদসহ ইরানকে ফেরত দেয়া হবে।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের মিথ্যাচারিতার আরেকটি উদাহরণ হচ্ছে, তিনি দাবি করেছেন, ছয় জাতিগোষ্ঠীর সঙ্গে পরমাণু সমঝোতার পর ইরান সরকার সামরিক খাতে বাজেট ৪০ শতাংশ বাড়িয়ে। গত ৮মে পরমাণু সমঝোতা থেকে তিনি যেদিন বেরিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন সেদিনই ইরানের বিরুদ্ধে এ অভিযোগ তোলেন। এরপর ১২ তারিখে এক টুইট বার্তায় তিনি একই অভিযোগের পুনরাবৃত্তি করেন। অথচ স্টকহোম ইন্টারন্যাশনাল পিস রিসার্চ সেন্টার সংক্ষেপে 'সিপ্রি'র এক প্রতিবেদন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের এ সংক্রান্ত দাবিকে মিথ্যা প্রমাণ করেছে। সিপ্রি'র প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইরানের প্রতিরক্ষা বাজেটের বিষয়ে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের বক্তব্য সঠিক নয়। গত তিন বছরে অর্থাৎ ২০১৫ সালে পরমাণু সমঝোতা হওয়ার পর ইরানের সামরিক বাজেট মাত্র ৩০ শতাংশ বেড়েছে। অথচ প্রতিবেশী অন্য আরব দেশের সামরিক বাজেটের সঙ্গে তুলনা করলে দেখা যাবে সামরিক খাতে ইরানের বাজেটের পরিমাণ অনেক কম। আরব দেশগুলো বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ অস্ত্রের ক্রেতা। সৌদি আরব গত বছর আমেরিকার সঙ্গে ১১ হাজার কোটি ডলারের অস্ত্র চুক্তি করেছে। অথচ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সৌদি সেনাদের সামরিক অস্ত্র ব্যবহারের যোগ্যতা খুব একটা নেই।
রুশ সামরিক বিশেষজ্ঞ ভিক্টোর মোরাকোভস্কি মনে করেন, "সৌদি সেনাবাহিনী বহু বছর আগে থেকে আমেরিকার অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হলেও স্থল যুদ্ধ করার মতো প্রস্তুতি তাদের নেই আর বিমান কিংবা সমুদ্র পথে যুদ্ধতো দূরের কথা। কারণ এ দুই যুদ্ধের কারিগরি জ্ঞান ও প্রস্তুতি কোনটিই তাদের নেই।"
এর বিপরীতে ইরান সামরিক ক্ষেত্রে স্বয়ং সম্পূর্ণতা অর্জন করেছে এবং কোনো দিক দিয়েই ইরানের সঙ্গে সৌদি আরবের তুলনা চলে না। অথচ সৌদি আরবের তুলনায় সামরিক খাতে ইরানের ব্যয় খুবই কম। মধ্যপ্রাচ্যের নিরাপত্তা ও সামরিক বিষয়ক বিশেষজ্ঞ মাইকেল নাইটস্ এ ব্যাপারে বলেছেন, "নিঃসন্দেহে ইরান সামরিক ক্ষেত্রে অভাবনীয় সাফল্য অর্জন করেছে।" মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মিথ্যাচারিতার আরেকটি দৃষ্টান্ত হচ্ছে, সন্ত্রাসবাদের প্রতি ইরানের সমর্থনের অভিযোগ তুলেছেন তিনি। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প তার বক্তব্যে দাবি করেছেন, "ইরান সন্ত্রাসীদের প্রতি সমর্থন দেয়া ছাড়াও মধ্যপ্রাচ্যের যুদ্ধকবলিত এলাকায় ক্ষেপণাস্ত্র পাঠিয়ে উত্তেজনা ছড়াচ্ছে।" তিনি বলেন, "হিজবুল্লাহ, হামাস, তালেবান ও আল কায়দার মতো সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর প্রতি ইরানের সমর্থন রয়েছে।"
বাস্তবতা হচ্ছে, ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরান নিজেই বড় ধরণের সন্ত্রাসবাদের শিকার। ১৯৮০'র দশকের শুরু থেকে আমেরিকাসহ পাশ্চাত্যের দেশগুলো ইরান বিরোধী সন্ত্রাসী মোনাফেকিন গোষ্ঠীর প্রতি সমর্থন দিয়ে আসছে। সন্ত্রাসী মোনাফেকিনরা ইরানের বহু কর্মকর্তাসহ ১৫ হাজারের বেশি নিরীহ মানুষকে হত্যা করেছে। এখনো ইরানবিরোধী সন্ত্রাসী এই গোষ্ঠীর সঙ্গে আমেরিকার ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ ও সম্পর্ক রয়েছে এবং মধ্যপ্রাচ্যে পাশ্চাত্যের স্বার্থে তারা কাজ করে যাচ্ছে। অন্যদিকে, ব্রিটেন, ফ্রান্সের মতো ইউরোপীয় মিত্রদের সঙ্গে করে আমেরিকা মধ্যপ্রাচ্যে উগ্র তাকফিরি সন্ত্রাসীদের বিস্তার ঘটাচ্ছে। এর আগে আমেরিকা আফগানিস্তানে আল কায়দা সন্ত্রাসী গোষ্ঠীকে গড়ে তুলেছিল। আমেরিকা ও তাদের আরব মিত্ররা ইরাক ও সিরিয়ায় উগ্র সন্ত্রাসীদের মোকাবেলার পরিবর্তে তাদের প্রতি সমর্থন যোগাচ্ছে। এইসব সন্ত্রাসীদের তাণ্ডবে এ দুই দেশের লাখ লাখ মানুষ শরণার্থীতে পরিণত হয়েছে। অথচ ইরান বিশ্বের নির্যাতিত জনগোষ্ঠী ও মুসলমানদের অধিকার রক্ষায় হিজবুল্লাহ ও হামাসের মতো প্রতিরোধকামী শক্তিগুলোর প্রতি সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু তারপরও আমেরিকা ইরানকে সন্ত্রাসীদের সমর্থক বলে প্রচার চালাচ্ছে।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের মিথ্যাচারিতার আরেকটি দৃষ্টান্ত হচ্ছে তিনি ইরানের জনগণের প্রতি সমর্থন ও সহমর্মিতা দেখিয়েছেন। ট্রাম্প তার বক্তব্যে দাবি করেছেন, "মার্কিন জনগণ ইরানের জনগণের পাশে রয়েছে।" অথচ এর আগে বিভিন্ন সময়ে তিনি ইরানের জনগণকে তীব্র ভাষায় আক্রমণ করে বক্তব্য দিয়েছেন। তিনি ২০১৭ সালে হোয়াইট হাউজে এক সংবাদ সম্মেলনে ইরানের জনগণকে সন্ত্রাসী জাতি হিসেবে উল্লেখ করেছিলেন। এ থেকে বোঝা যায় তিনি ইরানের জনগণের পাশে থাকার যে দাবি করেছেন তা ডাহা মিথ্যা।
No comments