সিলেট সিটি নির্বাচন: সবাই চান অর্থমন্ত্রীর সুনজর by ওয়েছ খছরু
সিলেট
নগরীতে গেল ৫ বছরে অনেক উন্নয়ন হয়েছে। প্রায় ২৯ মাস জেলে ছিলেন মেয়র আরিফ।
এরপরও উন্নয়ন কর্মকাণ্ড থেমে থাকেনি। অর্থমন্ত্রীর নির্দেশে তখনকার সিও
এনামুল হাবিব নগরের অগ্রযাত্রা অব্যাহত রেখেছিলেন। টাকা দিয়েছেন
অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। আর কাজ করিয়েছেন মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী।
এ কারণে উন্নয়ন হয়েছে সিলেটে। এই উন্নয়নের সিংহভাগ ভাগীদার হয়েছেন মেয়র
আরিফ। এ কারণে সিলেটের রাজনীতির মাঠে গুঞ্জন রয়েছে- আরিফের সঙ্গে
অর্থমন্ত্রীর সখ্য রয়েছে। প্রায় তিন বছর আগে গাভিয়ার খাল উদ্ধারের সময়
একসঙ্গে রিকশায় ঘুরে বেড়িয়েছিলেন তারা দু’জন। এই সখ্যে এবার নিজ দল আওয়ামী
লীগের ভেতরে কদর বেড়েছে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের। গেল
নির্বাচনে দলের ভেতরে অর্থমন্ত্রীর তেমন গুরুত্ব ছিল না। তার গ্রুপের
কর্মীরা মাঠে নামলেও জোরালো ভাবে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থীর সঙ্গে মাঠে
নামেননি। অর্থমন্ত্রী বলয়ের প্রতি এই ক্ষোভ রয়েছে সিলেট সিটির সাবেক মেয়র
কামরানের। আর আরিফ নির্বাচিত হওয়ার সিলেটের উন্নয়নে তিনি অর্থমন্ত্রীর
সহায়তা চান। গত মঙ্গলবার সিলেট সিটি করপোরেশনের বাজেট বক্তৃতায়ও আরিফ
অর্থমন্ত্রীর প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করেন। একই সঙ্গে তিনি তার দীর্ঘায়ুও
কামনা করেন। বাজেটসহ নানা কারণে দীর্ঘ দিন সিলেটে অনুপস্থিত অর্থমন্ত্রী।
সংসদে বাজেট ঘোষণার পর তিনি গতকাল সিলেটে আসেন। এলাকার সংসদ হলেও
অর্থমন্ত্রী এতো দীর্ঘ সময় অনুপস্থিত থেকে সিলেটবাসীকে হতাশ করেননি। কিন্তু
এবার ছিল তার ব্যতিক্রম। আর গতকাল সিলেটে আসার পর দল হিসেবে আওয়ামী লীগের
সম্ভাব্য মেয়র প্রার্থীরা এবার তার দিকে ঝুঁকছেন বেশি। এর অন্যতম কারন
হচ্ছে- আওয়ামী লীগের সম্ভাব্য প্রার্থীরা মনে করছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল
আবদুল মুহিত বর্তমান মেয়র আরিফকে নিয়ে ব্যস্ত রয়েছেন। তিনি যেহেতু আরিফকে
উন্নয়নের টাকা দিতে কার্পণ্যবোধ করেননি সেহেতু আরিফ অর্থমন্ত্রীর সুনজরে
পেতে পারেন। ইতোমধ্যে সিলেটের অর্থমন্ত্রী বলয়ের নেতারাও সেই ভূমিকা পালন
করছেন। সিলেট আওয়ামী লীগ থেকে এখন পর্যন্ত মেয়র পদে প্রার্থী হচ্ছে ৩ জন।
এর মধ্যে মনোনয়ন প্রায় নিশ্চিত করে বসে আছেন সাবেক মেয়র ও সিলেট মহানগর
আওয়ামী লীগের সভাপতি বদরউদ্দিন উদ্দিন আহমদ কামরান। তিনি গেল নির্বাচনে
পরাজয় বরণের পর থেকে মাঠে রয়েছেন। নির্বাচনে টিকিট পেতে ইতোমধ্যে দৌড়ঝাঁপ
শুরু করেছেন মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আসাদ উদ্দিন আহমদ। সঙ্গে
রয়েছেন সিলেট জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক মাহি উদ্দিন আহমদ সেলিম।
মহানগর সম্পাদক আসাদ উদ্দিনের প্রতি রয়েছে কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক
এডভোকেট মিসবাহ উদ্দিন সিরাজের সুনজর। এরপরও আসাদ উদ্দিন আহমদ নিজেকে যোগ্য
প্রার্থী মনে করে মাঠে সক্রিয় রয়েছে। তাকে ঘিরে একটি বলয়ও তৈরি হয়েছে। আর
জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারন সম্পাদক মাহিউদ্দিন আহমদ সেলিম অর্থমন্ত্রী
আবুল মাল আবদুল মুহিতের সুনজর নিয়ে নির্বাচনের মাঠে নামতে চান। মাহি সেলিম
অর্থমন্ত্রী বলয়ের নেতা বলে সিলেট আওয়ামী লীগের কর্মীরা মনে করেন।
অর্থমন্ত্রী বলয়ের নেতা শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল ও বিজিত চৌধুরীর সঙ্গে
টিমওয়ার্ক গড়ে সিলেটের ক্রীড়াঙ্গনে কাজ করছেন তিনি। বাজেট পেশ করে গতকাল
সিলেটে আসেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। সঙ্গে আসেন তার ছোটো ভাই ড.
একে আবদুল মোমেনসহ পরিবারের সদস্যরা। অর্থমন্ত্রী পরিবারের সদস্যদের নিয়ে
এবার ঈদ পালন করবেন সিলেটে। তাকে বরন করতে বিমানবন্দরে ছুটে যান সাবেক মেয়র
বদরউদ্দিন আহমদ কামরান ও মাহিউদ্দিন আহমদ সেলিম। তারা অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে
গতকাল বিভিন্ন অনুষ্ঠানে শরীক হন। এবার অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে আর সম্পর্কের
গ্যাপ রাখতে চান না কামরান। এ কারণে গেল নির্বাচন থেকে কামরান অর্থমন্ত্রীর
বিরুদ্ধে অবস্থান নেননি। বরং যতটুকু পেরেছেন নিজের মতো করেছেন। সিলেটে
অর্থমন্ত্রীকে যন্ত্রনা দেয়ার মতো রাজনীতিতে নেই কামরান। তবে আগের চেয়ে
অনেক বেশি ঘনিষ্ঠ হয়েছে। একই সঙ্গে আসাদউদ্দিন আহমদও ঘনিষ্ঠ হওয়ার চেষ্টা
করছেন।
No comments