যমুনায় মাইলের পর মাইল ধু-ধু বালুচর by সাগর বসাক
এক
সময়ের প্রবলা, প্রমত্তা, প্রগলভা, সমুদ্রের যোগ্য সহচারী, রাক্ষুসী, ভয়াল,
উত্তাল, আগ্রাসী ও স্রোতস্বিনী যমুনা নদী ভারতের মরূকরণ প্রক্রিয়ায় পাষাণ
বেড়াজালে আবদ্ধ হয়ে শুষ্ক মৌসুমে যৌবন হারিয়ে এক শান্ত মরা খালে পরিণত
হয়েছে। ভূগর্ভস্থ পানির স্তর অতীতের তুলনায় উদ্বেগজনকহারে বর্তমানে নিচে
নেমে গেছে। পাশাপাশি যমুনার বিভিন্ন শাখা নদী, খাল-বিল শুকিয়ে চারদিকে
পানির জন্য হাহাকার শুরু হয়েছে। যমুনা নদী তীরবর্তী শাহজাদপুরসহ বিভিন্ন
অঞ্চলে সেচ কাজের জন্য সচল গভীর-অগভীর নলকূপ থেকে পর্যাপ্ত পানি পাওয়া
যাচ্ছে না। এ কারণে, দেশের কৃষি অর্থনীতিতে বিরূপ প্রভাব-প্রতিক্রিয়া
পরিলক্ষিত হচ্ছে। যমুনা নদীনির্ভর এসব অঞ্চলে ভূগর্ভস্থ পানির অপরিকল্পিত ও
অতিমাত্রায় ব্যবহার এবং সেচ কাজে পানির অপচয় রোধ করা না গেলে বাংলাদেশ এক
মহাসংকটের মুখোমুখি হবে বলে বিশেষজ্ঞরা হুঁশিয়ারি উচ্চরণ করেছেন। যমুনাসহ
দেশের বৃহত্তর নদ-নদীগুলোতে পানির অভাবে দেশের বৃহত্তম গঙ্গা-কপোতাক্ষ
(জিকে) প্রকল্প, তিস্তা প্রকল্প, পাবনা সেচ ও পল্লী উন্নয়ন প্রকল্পের সেচ
কার্যক্রম বিঘ্নিত হওয়ার সমূহ সম্ভাবনা বিরাজ করছে। ভারতের মরুকরণ
প্রক্রিয়ার নির্মম, নিষ্ঠুর যাঁতাকলে আবদ্ধ ও পিষ্ট হয়ে যমুনায় তীব্র নাব্য
সংকট সৃষ্টি হয়েছে। ফলশ্রুতিতে, যমুনার বুকে জেগে ওঠা অসংখ্য ছোট বড় বালু
চরে মাইলের পর মাইল বিস্তার করছে ধু-ধু বালুচর। ওই চরের দিকে তাকালে
হাহাকার করে উঠছে এলাকাবাসীর মন। কালের আবর্তনে অনেক স্থানে ভয়াল যমুনা
নদীর পানি প্রবাহ এলাকা প্রায় ৬০০-৭০০ মিটারে বর্তমানে নেমে এসেছে। পানির
অভাবে যমুনার শাখা নদী এক সময়ের রাক্ষুসী হুরাসাগর, পারজামিরতাসহ বহু নদী
বর্তমানে পুরোপুরি শুকিয়ে মরে গেছে। এসব শাখানদী বক্ষে এক ফোটাও পানি আর
দেখা যাচ্ছে না। করতোয়ার পরিণতিও বর্তমানে একই পথে! নাব্য সংকট, বাসযোগ্য
পানি ও প্রতিকূল পরিবেশ বিরাজ করায় যমুনা নদী থেকে দেশীয় ৪০ প্রজাতির ছোট
মাছ নিশ্চিহ্নের পথে। এসব কারণে যমুনানির্ভর কৃষক ও এলাকাবাসীর বুকভরা আশা
ক্রমশ হতাশায় নিমজ্জিত হচ্ছে। এছাড়া যমুনা নদীতে প্রয়োজনীয় পানি না থাকায়
একদিকে যেমন নৌ-চলাচল মারাত্মক বিঘ্নিত হচ্ছে, অন্যদিকে জাতীয় অর্থনীতিতেও
এর বিরূপ প্রতিক্রিয়া পরিলক্ষিত হচ্ছে। সিরাজগঞ্জ জেলার যমুনা বিধৌত
শাহজাদপুর উপজেলার গোপালপুর গ্রামের মৃত জুড়ান সরদারের ছেলে প্রবীণ অনাথ
সরদার (৮৫), হাটবায়রা গ্রামের মৃত লালু শেখের ছেলে প্রবীণ রিয়াজ উদ্দিন
(৭০), কাশিপুর গ্রামের মৃত আবদুস সাত্তার মোল্লার ছেলে প্রবীণ আবুল
মোল্লাসহ (৭০) বয়োবৃদ্ধ অনেকেই এ প্রতিবেদককে জানান, ‘ছোটবেলায় তারা ভয়াল
উত্তাল যমুনার এপার (পশ্চিম) থেকে ওপারে (পূর্ব) তাকালে চোখে পড়তো দিগন্ত
ছোঁয়া পানি আর পানি। আর এখন সেখানে চোখে পড়ছে ধু-ধু বালু চর। বিজলী বাতি
জ্বলা জাহাজ তো দূরের কথা! পানির অভাবে পাল তোলা নৌকাও সচরাচার আর দেখা
যাচ্ছে না। যমুনায় আগে ভূখণ্ড থেকে ৫ মানুষ সমান (দীর্ঘ) বা ৩০ ফুট গভীরে
শুষ্ক মৌসুমে পানির স্তর পাওয়া গেলেও বর্তমানে তদস্থলে ১২-১৩ মানুষ সমান
(দীর্ঘ) বা ৬০-৬৫ ফুট গভীরেরও অনেক নিচে পানির স্তর নেমে গেছে। যমুনার
বিস্তীর্ণ জলসীমা সংকুচিত হয়ে প্রায় দেশীয় প্রায় ৪০টি ছোট-বড় মাছ যমুনা
থেকে নিশ্চিহ্নের পথে! মরুকরণের কুপ্রভাবে যমুনাসহ মিঠা পানির প্রায় ২০
শতাংশ বিভিন্ন প্রজাতির মাছের বসবাস ও প্রজনন ক্ষেত্র বিপন্ন হয়ে পড়েছে।
যমুনাসহ শাখা নদী করতোয়া, হুরাসাগর, পারজামিরতাসহ বিভিন্ন খাল, বিল, নালা ও
জলাশয় থেকে নিশ্চিহ্নের পথে দেশীয় ছোট ৪০টি প্রজাতির মাছ।
জানা গেছে, প্রতি বছর ১লা জানুয়ারি থেকে ৩১শে মে- এই ৫ মাসে (শুষ্ক মৌসুম) পানির অভাবে যমুনা নদী ও এর বেশ ক’টি শাখানদীসহ খাল-বিল প্রতি বছরেই শুকিয়ে যায়। ফলে যমুনা নদী তীরবর্তী অঞ্চলবাসীর শুরু হয় নানা দুঃখ দুর্দশার পালা। প্রকৃতি নির্ভর কৃষিপ্রধান এ অঞ্চলের বিস্তৃর্ণ এলাকা হয়ে যায় মিনি মরুভূমি। দ’ুচোখ যেদিকে যায় সেদিকেই দেখা যায় ধু-ধু বালুচর। প্রতিবেশী দেশ ভারত নদ-নদীগুলোর স্বাভাবিক গতিপথ রুদ্ধ করে দেয়ায় সুজলা-সুফলা, শস্য-শ্যামলা বাংলাদেশ ক্রমান্বয়ে মরু অঞ্চলে পরিণত হতে চলেছে। যমুনা নদী উত্তরাঞ্চলের বিস্তৃত এলাকাজুড়ে অবস্থান করায় এর মরূকরণের কু-প্রভাব এ অঞ্চলের প্রাকৃতিক পরিবেশকে করছে ভারসাম্যহীন। এসব কারণে যমুনার শাখানদীসহ খাল-বিলের গতি প্রকৃতির পরিবর্তন ঘটছে। আমরা হারাতে বসেছি আমাদের অনেক গ্রামীণ ঐতিহ্য। আবহমানকাল থেকে গ্রামীণ জনপদের মানুষের প্রিয় সুস্বাদু দেশি মাছ এখন সোনার হরিণের মতো। এখন আর দেখা যায় না গ্রামীণ ঐতিহ্যের অনুষঙ্গ নৌকাবাইচ, খরা জাল, সূতি ফাঁদ, সেচের মাধ্যম দাঁড়। মৎস্যভাণ্ডার সংকুচিত বা শুকানোর ফলে অনেক মৎস্যজীবী বর্তমানে বেকার হয়ে পরিবার পরিজন নিয়ে খেয়ে না খেয়ে দিন কাটাচ্ছে। আবার অনেকেই পেশা পরিবর্তন করতে বাধ্য হচ্ছে।
জানা গেছে, প্রতি বছর ১লা জানুয়ারি থেকে ৩১শে মে- এই ৫ মাসে (শুষ্ক মৌসুম) পানির অভাবে যমুনা নদী ও এর বেশ ক’টি শাখানদীসহ খাল-বিল প্রতি বছরেই শুকিয়ে যায়। ফলে যমুনা নদী তীরবর্তী অঞ্চলবাসীর শুরু হয় নানা দুঃখ দুর্দশার পালা। প্রকৃতি নির্ভর কৃষিপ্রধান এ অঞ্চলের বিস্তৃর্ণ এলাকা হয়ে যায় মিনি মরুভূমি। দ’ুচোখ যেদিকে যায় সেদিকেই দেখা যায় ধু-ধু বালুচর। প্রতিবেশী দেশ ভারত নদ-নদীগুলোর স্বাভাবিক গতিপথ রুদ্ধ করে দেয়ায় সুজলা-সুফলা, শস্য-শ্যামলা বাংলাদেশ ক্রমান্বয়ে মরু অঞ্চলে পরিণত হতে চলেছে। যমুনা নদী উত্তরাঞ্চলের বিস্তৃত এলাকাজুড়ে অবস্থান করায় এর মরূকরণের কু-প্রভাব এ অঞ্চলের প্রাকৃতিক পরিবেশকে করছে ভারসাম্যহীন। এসব কারণে যমুনার শাখানদীসহ খাল-বিলের গতি প্রকৃতির পরিবর্তন ঘটছে। আমরা হারাতে বসেছি আমাদের অনেক গ্রামীণ ঐতিহ্য। আবহমানকাল থেকে গ্রামীণ জনপদের মানুষের প্রিয় সুস্বাদু দেশি মাছ এখন সোনার হরিণের মতো। এখন আর দেখা যায় না গ্রামীণ ঐতিহ্যের অনুষঙ্গ নৌকাবাইচ, খরা জাল, সূতি ফাঁদ, সেচের মাধ্যম দাঁড়। মৎস্যভাণ্ডার সংকুচিত বা শুকানোর ফলে অনেক মৎস্যজীবী বর্তমানে বেকার হয়ে পরিবার পরিজন নিয়ে খেয়ে না খেয়ে দিন কাটাচ্ছে। আবার অনেকেই পেশা পরিবর্তন করতে বাধ্য হচ্ছে।
No comments