জমি অধিগ্রহণ জটিলতায় ১১ ইউলুপ নির্মাণ অনিশ্চিত by সুদীপ অধিকারী
যানজট
মুক্ত রাজধানী গড়ার লক্ষ্যে তেজগাঁও সাতরাস্তা থেকে উত্তরা হাউজ বিল্ডিং
পর্যন্ত ১১টি ইউলুপ নির্মাণের প্রকল্প হাতে নিয়েছিলেন ঢাকা উত্তরের প্রয়াত
মেয়র আনিসুল হক। প্রায় ২৫ কোটি টাকা ব্যয়ে এই নির্মাণ কাজ ৬ মাসের মধ্যে
সম্পন্ন হওয়ার কথা থাকলেও জমি অধিগ্রহণের জটিলতায় তা থেমে গেছে। আনিসুল
হকের মৃত্যুর পর রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ, সড়ক ও জনপথ বিভাগ এবং জাতীয় গৃহায়ন
কর্তৃপক্ষের সঙ্গে উত্তর সিটি করপোরেশনের টানাপড়েনে থেমে যায় এই প্রকল্পের
নির্মাণ কাজ। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সাতরাস্তা, নাবিস্কো, মহাখালী বাস
টার্মিনাল, মহাখালী ফ্লাইওভারের নিচে, বনানী চেয়ারম্যান বাড়ি, বনানী
কবরস্থান, কাকলী, আর্মি গলফ ক্লাব, শ্যাওড়াপাড়া, উত্তরা ও খিলক্ষেতের
মাঝামাঝি কাওলা, র্যাব-১ অফিসের সামনে, উত্তরা ৪ নম্বর সেক্টরের জসীম
উদ্দীন রোড ও আবদুল্লাহপুরে নির্মাণ হওয়ার কথা ১১টি ইউলুপ। ‘এ’ ও ‘বি’ দুই
টাইপে নির্মিত এই ইউলুপগুলো হবে ১৪৪ ও ১০৪ ফুট প্রশস্ত। শূন্য দশমিক ৮
কিলোমিটার থেকে ৩ দশমিক ২ কিলোমিটার দূরত্বের এই ইউলুপের ‘এ’ টাইপে চলবে বড়
গাড়ি এবং টাইপ ‘বি’ নকশা করা হয়েছে ছোট গাড়ির জন্য। ঘোষণা অনুযায়ী এই
নির্মাণ প্রকল্পের পুরো কাজই শেষ হওয়ার কথা ছিল চলতি বছরের জুনে। কিন্তু
সরজমিন দেখা যায়, উত্তরা রাজলক্ষ্মী ও র্যাব-১ অফিসের সামনে বাদে পুরো
প্রকল্পের কাজই এখন বন্ধ রয়েছে। এ বিষয়ে ডিএনসিসির অতিরিক্ত প্রধান
প্রকৌশলী কুদরত উল্লাহ বলেন, যত্রতত্র গাড়ির ইউটার্ন নেয়ার জন্যই
রাজধানীজুড়ে সৃষ্টি হয় তীব্র যানজটের। আর যানজটের এই অসহনীয় যন্ত্রণার হাত
থেকে নগরবাসীকে স্বস্তি দেয়ার জন্যই ইউলুপ নির্মাণ প্রকল্প হাতে নিয়েছিলেন
প্রয়াত মেয়র। ডিএনসিসির প্রকল্প পরিচালক মাহবুব আলম বলেন, এই প্রকল্পটি
বাস্তবায়নের জন্য সিটি করপোরেশনের জায়গার পাশাপাশি সড়ক ও জনপথ বিভাগের ১
দশমিক ৩৬ একর, রেলওয়ের দশমিক ২২ একর, ভূমি রেকর্ড ও জরিপ অধিদপ্তরের দশমিক
শূন্য ৯ একর এবং জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের দশমিক শূন্য ৬ একর জমি ব্যবহার
প্রয়োজন। প্রকল্পের শুরুতে কেউ জমি দিতে আপত্তি না করলেও, সংশ্লিষ্ট সরকারি
সংস্থাগুলো এখন ঝামেলা শুরু করেছেন। তিনি বলেন, তাদের জমি ব্যবহারের কথা
নিশ্চিত হওয়ার পরই আমরা নির্মাণ কাজ বাস্তবায়নের প্রক্রিয়া শুরু করি।
ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকেও কাজ শুরু করতে বলি। কিন্তু নির্মাণ কাজ শুরুর পর
থেকেই জমি কিনে নিতে হবে বলে ঝামেলা শুরু করেন সড়ক ও জনপদ বিভাগসহ অন্য
কর্মকর্তারা। তারা বলছেন, জমি দেয়া নিয়ে সিটি করপোরেশনের সঙ্গে তাদের কোনো
দালিলিক কথাই হয়নি। এ জন্য নির্মাণ কাজ শেষ করতে হলে ডিএনসিসিকে জমি কিনে
নিতে হবে। কিন্তু প্রকল্প ছোট হওয়ায়, জমি ক্রয় করে কাজ করার মতো অর্থ
ডিএনসিসির ফান্ডে নেই বলে জানান এই কর্মকর্তা। তিনি বলেন, এই নির্মাণ কাজে
মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ২৪ কোটি ৮৩ লাখ টাকা। এর মধ্যে ৪ কোটি ৯৬ লাখ ৬০ হাজার
টাকা নেয়া হবে উত্তর সিটি করপোরেশনের নিজস্ব তহবিল থেকে। আর বাকি ১৯ কোটি
৮৬ লাখ ৪০ হাজার টাকার যোগান দেবে সরকার। এই নির্মাণ জটিলতা নিয়ে গত বছরের
৩০শে নভেম্বর স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিবকে ডিএনসিসি একটা চিঠি পাঠিয়েছে
বলেও জানান তিনি। চিঠিতে উল্লেখ ছিল, বিভিন্ন সংস্থার জমি হস্তান্তর বা
ব্যবহারের অনুমতি না পাওয়ায় ইউলুপ নির্মাণ প্রকল্প কাজে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।
প্রকল্পটি ছোট হলেও ঢাকার ট্রাফিক সিস্টেমের ওপর এটা তাৎপর্যপূর্ণ প্রভাব
বিস্তার করবে বলেও জানান তিনি। এদিকে সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী
মেহেদি ইকবাল বলেন, ইউলুপ প্রকল্পের জন্য নির্ধারিত একই জায়গায় সড়ক ও
জনপথের বাস র্যাপিড ট্রানজিট (বিআরটি) প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য নির্ধারণ
করা হয়েছে। ইতিমধ্যে বিআরটি প্রকল্পের ওয়ার্ক অর্ডারও দিয়ে দেয়া হয়েছে। এখন
ইউলুপ প্রকল্পের সঙ্গে বিআরটি প্রকল্পের সাংঘর্ষিক না হলে, ডিএনসিসিকে জমি
হস্তান্তর করে দেয়া হবে। জানা যায়, গত বছরে ইউলুপ প্রকল্প কাজ নিয়ে একটি
ডিপিপি স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। স্থানীয় সরকার সচিব আব্দুল
মালেকের নেতৃত্বে এই ডিপিপি নিয়ে বৈঠকও হয়েছে। এখন ডিপিপি পরিকল্পনা
মন্ত্রণালয়ের প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটিতে চূড়ান্ত হলেই, কাজ শুরু করবে ঢাকা
উত্তর সিটি করপোরেশন। কিন্তু আনুষ্ঠিকতা শেষ করে এটি কবে নাগাদ পরিকল্পনা
মন্ত্রণালয়ে পৌঁছাবে, সে সম্পর্কে সংশ্লিষ্ট কেউই সঠিক উত্তর দিতে পারে
নাই। ফলে ইউলুপ নির্মাণ কবে নাগাদ শুরু হবে এবিষয়ে কোনো ধোঁয়াশাই কাটছে না
নগরবাসীর কাছে।
No comments