বড়িটা ক্ষুদ্র হলেও যুদ্ধটা হতে হবে সর্বাত্মক
দেশের
বিভিন্ন বয়সী মানুষ, বিশেষ করে যুবক ও তরুণদের মধ্যে মাদকাসক্তি যেভাবে
ছড়িয়ে পড়েছে, তা খুবই উদ্বেগের বিষয়। বিষয়টিকে নিছক উদ্বেগজনক বলাটাই
যথেষ্ট নয়। সমাজ ও জাতীয় জীবনে মাদকের বিরূপ প্রতিক্রিয়া এতই ভয়াবহ যে,
শুধু ‘উদ্বেগ’ শব্দটি দিয়ে এর ভয়াবহতা পরিমাপ করা যায় না। অভিধানে উদ্বেগের
কাছাকাছি যত শব্দ আছে, যেমন- উৎকণ্ঠা, দুশ্চিন্তা, আশঙ্কা, হতাশা,
প্রমাদগোনা- এসব শব্দগুচ্ছ দিয়ে মাদকের ভয়াবহ পরিণতি প্রকাশ করা দুষ্কর।
মাদকের বিরুদ্ধে সরকার ‘জিরো টলারেন্স নীতি’ ঘোষণা করেছে। এ সত্ত্বেও
মাদকের ব্যবহার আশঙ্কাজনকভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে। গত ১৯ জানুয়ারির একটি
পত্রিকার প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, গত ৭ বছরে (২০১১-২০১৭) ইয়াবা ব্যবহার
বেড়েছে ৮০ শতাংশ। বাংলাদেশ সরকারের মাদকবিষয়ক বার্ষিক প্রতিবেদন থেকে জানা
যায়, ২০১৪ সালে উদ্ধারকৃত ইয়াবার সংখ্যা ছিল ৬৫ লাখ ১২ হাজার ৮৬৯। পরের বছর
অর্থাৎ ২০১৫ সালে উদ্ধারকৃত ইয়াবার সংখ্যা ২ কোটি ১ লাখ ৭৭ হাজার ৫৮১।
২০১৬ ও ২০১৭ সালে এ সংখ্যা ছিল যথাক্রমে ২ কোটি ৯৪ লাখ ৫০ হাজার ১৮৭ এবং ৩
কোটি ৮০ লাখ ৯১ হাজার ৮৬৫। এ থেকেই অনুমান করা যায়, ইয়াবার মাদকাসক্তির
করাল গ্রাস কত দ্রুত বিস্তৃত হচ্ছে।
ইয়াবার উৎসভূমি মিয়ানমার।
বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তের ১৫টি স্থান দিয়ে ইয়াবা পাচার হয়। উদ্ধারকৃত
ইয়াবা অনেকটা হিমশৈলের দৃশ্যমান অংশের মতো। হিমশৈলের বেশিরভাগ অংশ যেভাবে
পানির নিচে লুকিয়ে থাকে, ঠিক সেভাবে অনুদ্ধার ইয়াবাও সমাজের রন্ধ্রে
রন্ধ্রে লুকিয়ে আছে। জাতিসংঘের মাদক নিয়ন্ত্রণ সংস্থার (UNODC) মতে, উদ্ধার
হওয়া ইয়াবার এ সংখ্যা বিক্রি হওয়া বড়ির মাত্র ১০ শতাংশ। সেই হিসাবে বছরে
শুধু ইয়াবা বড়িই বিক্রি হচ্ছে ৪০ কোটির মতো, যার বাজারমূল্য প্রায় ৬ হাজার
কোটি টাকা (প্রতিটি দেড়শ’ টাকা দাম হিসাবে)। এই টাকার অর্ধেকই চলে যাচ্ছে
ইয়াবার উৎসভূমি মিয়ানমারে। হিসাব করে দেখা গেছে, ইয়াবা বড়ির পেছনে
মাদকসেবীদের বছরে যে খরচ, তা বাংলাদেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিজিবি)
বার্ষিক বাজেটের প্রায় দ্বিগুণ। ২০১৭-১৮ অর্থবছরের বিজিবির বাজেট ৩ হাজার
৩০০ কোটি টাকা। আর তা পুলিশের বাজেটের প্রায় অর্ধেক। সরকারের দাবি,
বাংলাদেশ নিম্নমধ্য আয়ের দেশে পরিণত হয়েছে। এই দেশ ২০৪১ সালের মধ্যে উচ্চ
মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করা হচ্ছে। একটি দেশ যদি
জাতীয় আয় নিরন্তর ৮ শতাংশ হারে বাড়াতে পারে, তাহলে সেই দেশের পক্ষে উচ্চ
মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হওয়া সম্ভব। এভাবেই একটি দেশ টেকসই উন্নয়নের পথে
এগিয়ে যেতে পারে। এই এগিয়ে যাওয়াটা একদিকে যেমন শিক্ষা ও স্বাস্থ্যের
ক্ষেত্রে উচ্চমান সূচক অর্জনের ওপর নির্ভরশীল, অন্যদিকে তেমনি উন্নয়নের এই
গতি বাধাপ্রাপ্ত হয় Vulnerability Index দ্বারা। অর্থাৎ যেসব কারণে
উন্নয়নের ধারাবাহিক গতি বাধাপ্রাপ্ত হয়, সেগুলোই এই সূচককে বিপজ্জনক
অবস্থার দিকে চালিত করে। রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা, প্রাকৃতিক দুর্যোগ এবং
সামাজিক সমস্যা এই ভঙ্গুর অবস্থাকে নিশ্চিত করে তোলে। এ ধরনের ভঙ্গুর
অবস্থার মধ্য দিয়ে উন্নত ও সমৃদ্ধ দেশ গঠনের স্বপ্ন বুদ্বুদে পরিণত হতে
পারে। প্রাকৃতিক সম্পদের দিক থেকে বাংলাদেশ সমৃদ্ধ নয়।
এ দেশে যতটুকু
উন্নয়ন হয়েছে, তার ভিত্তি মূলত এ দেশের জনসম্পদ। অর্থনীতিবিদরা মনে করেন, এ
দেশের মানুষের মধ্যে ভাগ্য পরিবর্তনের অদম্য স্পৃহাই দেশটিকে বর্তমান
অবস্থায় তুলে এনেছে। বাংলাদেশের মানুষের সৃজনশীলতা এবং দুর্যোগ পাড়ি দিয়ে
টিকে থাকার ক্ষমতা ঈর্ষণীয়। দেশ এখন আর তলাবিহীন ঝুড়ি নয়, এ কথা ভেবে আমরা
প্রীতবোধ করি। অর্থনীতিবিদরা আরও যে আশার বাণী শোনান, তার মধ্যে জনমিতিক
লভ্যাংশ অর্জনের সুযোগটি অন্যতম। বাংলাদেশের জনগোষ্ঠীর একটি বিপুল অংশ তরুণ
ও কর্মক্ষম বয়সের মধ্যে রয়েছে। অর্থাৎ কর্মক্ষম লোকের সংখ্যা শিশু ও বয়স্ক
নির্ভরশীল লোকের তুলনায় অনেক বেশি। তরুণ ও কর্মক্ষম মানুষের কর্মক্ষমতা ও
কর্মদক্ষতা বৃদ্ধি করে উন্নয়ন ও প্রবৃদ্ধির চাকাকে অনেক বেশি গতিশীল করা
সম্ভব। কিন্তু কর্মক্ষমতা ও কর্মদক্ষতায় সম্ভাবনাময় জনগোষ্ঠী যদি
মাদকাসক্তির ফলে হীনবল হয়ে পড়ে, কর্মদক্ষতা অর্জনে ব্যর্থ হয় এবং বেঁচে
থাকার জন্য অন্যের ওপর নির্ভরশীর হয়ে পড়ে, তাহলে জনমিতিক লভ্যাংশ অর্জনের
আশা দূরাশায় পরিণত হতে বাধ্য। উন্নয়নের মহাসড়কটি হয়ে উঠবে তখন বিপদসংকুল ও
দুর্ঘটনাপ্রবণ। প্রথমদিকে মাদকের মধ্যে ফেনসিডিলই বড় উদ্বেগের বিষয় ছিল।
জনশ্রুতি রয়েছে, বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে শত শত ফেনসিডিলের কারখানা গড়ে
উঠেছে। ভারতে অবস্থিত সেসব কারখানা থেকেই ফেনসিডিল চোরাচালান হয়ে বাংলাদেশে
আসতে শুরু করে। বাংলাদেশ রাষ্ট্র সৃষ্টি হওয়ার পর চিকিৎসকরা সর্দি-কাশি
নিবারণের জন্য কফ সিরাপ হিসেবে ফেনসিডিল গ্রহণের পরামর্শ দিতেন। এই কফ
সিরাপে ঘুম ঘুম ভাব সৃষ্টি করার মতো সামান্য উপাদান ছিল। কিন্তু ভারত থেকে
যে ফেনসিডিল আসতে শুরু করে, তাতে মাদকের উপাদান অনেক বেশি। তাই এতে আসক্তি
সৃষ্টি হয়। আসক্ত ব্যক্তিরা যকৃতের রোগসহ নানারকম রোগে আক্রান্ত হয়ে
আপনজনদের ওপর বোঝা হয়ে দাঁড়ায়। ফেনসিডিল মাদকের বিরুদ্ধে সমাজ সোচ্চার হয়ে
উঠেছে।
গত ১০-১২ বছর ধরে ফেনসিডিলের স্থান দখল করেছে আরও ভয়াবহ আসক্তি
সৃষ্টিকারী ইয়াবা বড়ি। এখন ইয়াবা নিয়ে যত আলোচনা হয়, ফেনসিডিল নিয়ে সে রকম
আলোচনা হয় না। তাই বলে ফেনসিডিলের দৌরাত্ম্য হ্রাস পেয়েছে এমনটি বলা যাবে
না। মাদকদ্রব্যের ব্যবহার দমনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পেছনে অনেক অর্থ ব্যয়
করতে হয়। সেই তুলনায় সাফল্যের পরিমাণ খুবই সামান্য। আগেই বলা হয়েছে, জিরো
টলারেন্স নীতি সত্ত্বেও মাত্র ১০ শতাংশ ইয়াবা বড়ি উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে।
যারা ইয়াবায় আসক্ত হয়ে নানারকম রোগব্যাধিতে আক্রান্ত হচ্ছে, তাদের চিকিৎসার
জন্য বিরাট অঙ্কের অর্থ ব্যয় হচ্ছে। দেশ থেকে চলে যাচ্ছে মূল্যবান বৈদেশিক
মুদ্রা। ইয়াবা বাণিজ্য থেকে অর্জিত অর্থও জাতীয় আয় নিরূপণে সৃষ্টি করছে
বিভ্রান্তি। কী করে এত অল্প সময়ের মধ্যে ইয়াবা বাণিজ্য এতটা স্ফীত হল তাও
একটি বড় প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। ক্ষমতাধর ব্যক্তিবর্গ, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর
একটি অংশ এবং ইয়াবা বাণিজ্যের সঙ্গে জড়িত অসৎ ব্যক্তিদের নিয়ে একটি
অক্ষশক্তি তৈরি না হলে এই ক্ষতিকর বাণিজ্য এতটা স্ফীতি লাভ করতে পারত না।
অন্তত গণমাধ্যমের বিভিন্ন প্রতিবেদন থেকে সেরকমটি অনুমান করা যায়। ল্যাটিন
আমেরিকার কোনো কোনো দেশে মাদকের এই বাণিজ্যকে বলা হয় ড্রাগ কার্টেল।
মেক্সিকো ও কলম্বিয়ার মতো দেশে ড্রাগ কার্টেল দমনে সেনাবাহিনীকে ভারি
অস্ত্রে সজ্জিত হয়ে যুদ্ধে নামতে হচ্ছে। অস্ত্রের শক্তির দিক দিয়ে
ড্রাগ-ব্যারনরাও কম যায় না। দু-পক্ষের সশস্ত্র সংঘর্ষে নিহত-আহতের সংখ্যাও
কম নয়। ড্রাগ-ব্যারনরা এতই শক্তিশালী হয়ে উঠেছে যে, সেনাবাহিনীকে রীতিমতো
যুদ্ধে নামতে হয়েছে। বাংলাদেশেও মাদক সাম্রাজ্যের অধিপতিরা দিনে দিনে
অর্থবিত্তের শক্তিতে বলীয়ান হয়ে উঠছে। শেষ পর্যন্ত এরা যদি কলম্বিয়া ও
মেক্সিকোর ড্রাগ-ব্যারনদের মতো শক্তিমত্তা অর্জন করতে সক্ষম হয়, সেটাও
হিসাবের বাইরে থাকা উচিত নয়। জাতীয় নিরাপত্তার জন্য মাদক বাণিজ্য একটি
ভয়াবহ হুমকি হয়ে দাঁড়াতে পারে এমনটি বিবেচনায় রাখতে হবে। অন্যথায়
বাংলাদেশের উত্তরোত্তর উন্নয়নের সম্ভাবনা কর্পূরের মতো উবে যেতে পারে।
অর্থনীতি শাস্ত্রে মানুষ আসক্ত হয়ে পড়ে এমন দ্রব্য সম্পর্কে বিপরীতমুখী
আলোচনা রয়েছে। মুক্তবাজার অর্থনীতিতে সরকার জনগণকে কী কিনতে হবে এবং কী
বিক্রি করতে হবে সে ব্যাপারে স্বাধীনতা দেয়। যদি কিছু ব্যক্তি পিৎজার
পরিবর্তে আইসক্রিম খেতে চায় তাহলে অর্থনীতিবিদরা বলেন, জনগণই জানেন তাদের
জন্য কোনটি ভালো।
এ ক্ষেত্রে সরকার তাদের ব্যক্তিগত স্বাধীনতা এবং পছন্দের
প্রতি শ্রদ্ধা জানায়। কিছু কিছু ক্ষেত্র আছে, যেখানে সরকার কিছুটা ইতস্ততার
সঙ্গে বয়োপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের সিদ্ধান্ত নাকচ করে দেয়। অর্থনীতিবিদরা
দ্রব্যসমূহকে দু’ভাগে ভাগ করে। এর একটি হল মেরিট গুডস এবং অন্যটি ডিমেরিট
গুডস। ডিমেরিট গুডসের ভোগকে ক্ষতিকর মনে করা হয়। যেসব ক্ষেত্রে ভোগকর্ম
ক্ষতিকর প্রভাব বিস্তার করে, সেগুলোর ব্যবহারে সরকারের নাকচ করে দেয়া বা এর
রাশ টেনে ধরা কাম্য। যেমন সিগারেট, মদ এবং হেরোইন। ডিমেরিট গুডসের
ক্ষেত্রে দুশ্চিন্তার বিষয়টি হল আসক্তি। যেসব পণ্যে মানুষ আসক্ত হয়ে ওঠে,
সেসব পণ্যের ভোগ অনেকাংশেই অতীতের ভোগের সঙ্গে সম্পর্কিত। একবার আসক্ত হয়ে
পড়লে এটি ত্যাগ করা দুরূহ। অতি আসক্তি সৃষ্টিকারী পণ্যের চাহিদা
দাম-অস্থিতিস্থাপক। অর্থাৎ দাম বাড়া-কমার ওপর এগুলোর চাহিদা কমে কিংবা বাড়ে
না। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে আসক্তি সৃষ্টিকারী দ্রব্যের বাজারটি বেশ বিশাল।
সেখানে প্রতিবছর সিগারেটের জন্য ব্যয় হয় ৫০ বিলিয়ন ডলার, মদের জন্য ব্যয়
হয় ৩০ বিলিয়ন। বেআইনি মাদকদ্রব্যের পেছনে কত খরচ হয় তা অনুমানসাপেক্ষ। এই
খরচের পরিমাণ বার্ষিক ২০-৫০ বিলিয়ন ডলার। জননীতি নির্ধারণে এসব নেশাজাতীয়
দ্রব্য ব্যবহার বড় ইস্যু হয়ে দাঁড়ায়। কারণ এতে বিপুল অর্থ ব্যয় হয় এবং
আসক্ত ব্যক্তিরা মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকির মধ্যে পড়ে। আসক্ত ব্যক্তিরা
স্কুলের পরীক্ষায় ফেল করে, কর্মক্ষেত্রে চাকরি হারায় এবং পরিবারের মধ্যে
অশান্তি সৃষ্টি করে। এইডসের মতো রোগ ছড়িয়ে পড়ার জন্য দায়ী হচ্ছে শিরার
মাধ্যমে হেরোইন গ্রহণ। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে আসক্তি সৃষ্টিকারী দ্রব্যের
ব্যাপারে অনুসৃত নীতি হল এর বিপণন ও ব্যবহার নিষিদ্ধ করা এবং ফোজদারি আইনে
শাস্তিযোগ্য বলে ঘোষণা করা। কিন্তু এতসব করার পরেও এগুলোর চাহিদা কি কমেছে?
ব্যক্তি ও সমাজের জন্য এগুলোর ক্ষতিকর প্রভাব কি কমেছে? এর জবাব জানার
জন্য জানতে হবে মাদকদ্রব্যের চাহিদার প্রকৃতি কী। তথ্য সংগ্রহ করে জানা
গেছে, যারা কদাচিৎ বেআইনি মাদক গ্রহণ করে, তারা সরকারি নিষেধাজ্ঞার চাপে
পড়ে তুলনামূলকভাবে সস্তা বিকল্প মদ এবং তামাকের আশ্রয় নেয়। অর্থাৎ খুবই
ক্ষতিকর মাদকের চাহিদা এদের ক্ষেত্রে দাম স্থিতিস্থাপক। অন্যদিকে ভয়ানক
মাদকাসক্তরা মাদকের দাম বাড়ল কী কমল সে ব্যাপারে পরোয়া করে না।
বেশি দামে
হলেও তারা মাদক সংগ্রহ করবেই। সরকার যদি শক্ত কড়াকড়ি আরোপ করে, তাহলে
সরবরাহ রেখা ঊর্ধ্বমুখীভাবে স্থানান্তরিত হয় এবং নিষিদ্ধ মাদকটির দাম বেড়ে
যায়। তখন আসক্তরা বেশি দামে মাদক সংগ্রহ করে। মাদকের এই চড়া দাম জোগান
দেয়ার জন্য এরা নানারকম সামাজিক অপরাধ, যেমন পতিতাবৃত্তি এবং ছিনতাই
রাহাজানিতে জড়িয়ে পড়ে। এই বিশ্লেষণ পাওয়া গেছে নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ
স্যামুয়েলসন এবং তার সহযোগী প্রফেসর উইলিয়াম নর্টাসের লেখা গ্রন্থ
Economics-এর ষোড়শ সংস্করণে। সরকারের কড়ানীতি সফল হতে পারে কেবল মৃদু আসক্ত
ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে। যা হোক, পুরো মাদকাসক্তির ব্যাপারটি অর্থনৈতিক,
রাজনৈতিক ও সামাজিকভাবে উন্নয়নপ্রত্যাশী একটি জাতির জন্য বিশাল চ্যালেঞ্জ।
ফিলিপাইনের ক্ষমতাসীন প্রেসিডেন্ট দুয়ার্তে মাদক ব্যবসা ও মাদকাসক্তদের
দমনের জন্য পুলিশ বাহিনীকে বিচারবহির্ভূত হত্যার লাইসেন্স দিয়েছে। পুলিশের
অভিযানে বহু লোক নিহত হয়েছে। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলো
প্রেসিডেন্ট দুয়ার্তের নির্দেশে বিচারবহির্ভূত হত্যার নিন্দায় মুখর হয়েছে।
দেখা যাচ্ছে, মাদকাসক্তি ও মাদক বাণিজ্য দমন খুবই জটিল একটি কাজ। এর
জটিলতাগুলো চুলচেরা বিশ্লেষণ করেই নীতি-নির্ধারণ করতে হবে। মাদকের বিষাক্ত
ছোবল থেকে জাতিকে রক্ষার জন্য প্রয়োজন জাতীয় রাজনৈতিক ঐক্য, বিশাল সামাজিক
আন্দোলন এবং চিরায়ত সামাজিক মূল্যবোধগুলোর পুনর্জাগরণ। এটি একটি সর্বাত্মক
প্রয়াস। নিছক জিরো টলারেন্সের আপ্তবাক্যে এই অভিশাপ থেকে মুক্তি লাভ দুরূহ।
তবে যত দুরূহই হোক, প্রজ্ঞা, মেধা ও রাজনৈতিক অঙ্গীকার দিয়েই এই অভিশাপের
মোকাবেলা করতে হবে।
ড. মাহবুব উল্লাহ : অধ্যাপক ও অর্থনীতিবিদ
ড. মাহবুব উল্লাহ : অধ্যাপক ও অর্থনীতিবিদ
No comments