সংসদীয় আসনের সীমানা পুনর্নির্ধারণ
চলতি
বছরের শেষের দিকে অনুষ্ঠেয় ১১তম জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে সংসদীয়
আসনের সীমানা পুনর্নির্ধারণের উদ্যোগ নিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।
গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে ভোটারের সংখ্যা, প্রশাসনিক কাঠামো বিন্যাস ও বিভিন্ন
বিষয় বিবেচনায় নিয়ে নির্বাচনী আসনের সীমানা পরিবর্তন ও পরিবর্ধন একটি রুটিন
কাজ। তবে এটি যেন কম ঝামেলা ও বিতর্কযুক্ত হয়, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
অন্যথায় সংক্ষুব্ধ প্রার্থী, এলাকাবাসী বা যে কোনো স্টেকহোল্ডার আইনের
আশ্রয় নিলে পুরো প্রক্রিয়া, এমনকি নির্বাচনী তফসিল ঘোষণার মতো জরুরি বিষয়
বিলম্বিত হয়ে পড়তে পারে। ফলে সীমান নির্ধারণের দায়িত্বে থাকা ইসির
কমিশনার-কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্ট সবার সতর্ক থাকার বিকল্প নেই। জানা যায়,
সংসদীয় আসনের সীমানা পুনর্নির্ধারণ সংশ্লিষ্ট কমিটির এক বৈঠকে শনিবার এ
সংক্রান্ত প্রাথমিক তালিকা করা হয় এবং এ কাজে নিয়োজিত একটি প্রতিষ্ঠান ও এক
ব্যক্তিকে খসড়া তালিকা তৈরির দায়িত্বও দেয়া হয়েছে। নির্বাচন কমিশন বলছে,
সীমানা পুনর্নির্ধারণের ক্ষেত্রে উপজেলা ও সিটি কর্পোরেশনের ওয়ার্ডকে
অখণ্ড রাখার ওপর জোর দেয়া হবে এবং জেলার বিদ্যমান আসন সংখ্যাতেও কোনো
হেরফের হবে না। যদিও উপজেলা অখণ্ড রাখা হলে অন্তত ৬৩টি আসনের সীমানায়
পরিবর্তন আসবে। অন্যদিকে সংসদীয় আসনের অবিভাজ্যতা ও জনসংখ্যার ভারসাম্য
রক্ষা করতে হলে অন্তত ১০টি উপজেলার অখণ্ডতা রক্ষা সম্ভব হবে না। এছাড়া কিছু
কিছু আসনের অনেক ইউনিয়ন অন্য আসনের আওতায় চলে যাবে।
কিছু আসনে যুক্ত হবে
ভারতের সঙ্গে বিনিময় হয়ে পাওয়া ছিটমহল। যেহেতু বিষয়টি সম্ভাব্য এমপি
প্রার্থীদের প্রচার-প্রচারণা, উন্নয়ন কর্মকাণ্ড এবং ভোটারদের পছন্দের
প্রার্থীকে ভোট দেয়ার মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের সঙ্গে সম্পর্কিত, তাই এটিকে
যতটা সম্ভব নির্ঝঞ্ঝাট রাখাসহ সংশ্লিষ্টদের দাবি-দাওয়াকে প্রাধান্য দেয়া
যায়, তা নিশ্চিত করতে হবে। নির্বাচনী আসনের সীমানা পরিবর্তনে সর্বশেষ বড়
ধরনের পরিবর্তন হয়েছিল ২০০৮ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়। তখন ১৩৩টি
আসনের সীমানায় পরিবর্তন আনার পর ২০১৩ সালে জেলার আসন সংখ্যা ঠিক রেখে
সামান্য পরিবর্তন আনা হয়। তারপর এবার বড় ধরনের পরিবর্তন হতে যাচ্ছে। বড়
পরিবর্তনে বেশি সমস্যা তৈরি হওয়া অস্বাভাবিক নয়। তার ওপর কমিশন তার
রোডম্যাপ অনুযায়ী এবার সীমানা নির্ধারণ করতে পারছে না বিধায় ১৯৭৬ সালের
‘ডিলিমিটেশন অর্ডিন্যান্স’ অনুযায়ী সেটি করতে যাচ্ছে। নির্বাচনের বছর হওয়ায়
সীমানা নিয়ে তর্ক-বিতর্ক যেন সীমা ছাড়িয়ে না যায়, তা নিশ্চিত করতে
রাজনৈতিক দলগুলোকেও বড় ভূমিকা রাখতে হবে। নির্বাচনকে সামনে রেখে গত বছর
ইসির রোডম্যাপে বড় দুই দল- আওয়ামী লীগ ও বিএনপি যথাক্রমে বিদ্যমান সীমানা
বহাল রাখা ও ২০০৮ সালের আগের সীমানায় ফিরে যাওয়ার প্রস্তাব দিয়েছে। কিন্তু
বাস্তবতার নিরিখে কারও প্রস্তাব মানাই ইসির পক্ষে যে সম্ভব হবে না, এটি
তাদেরও জানা। ফলে ইসির পুনর্নির্ধারিত সীমানার তালিকা প্রকাশের পর আপিলে যে
রায় আসবে তা মেনে নেয়ার মানসিকতা সম্ভাব্য প্রার্থী ও দলগুলোর থাকতে হবে।
বর্তমানে রাজনৈতিক পরিস্থিতি সৌহার্দ্যপূর্ণ আছে। এটি বজায় রাখার জন্য ইসি,
রাজনৈতিক দল ও প্রার্থী- সব পক্ষ ভারসাম্যমূলক পরিস্থিতি বজায় রাখলে
নির্ধারিত সময় মার্চ-এপ্রিলের মধ্যে সীমানা পুনর্নির্ধারণ কাজ শেষ করা যাবে
বলে আশা করা যায়।
No comments