রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন
বাংলাদেশ
ও মিয়ানমারের মধ্যে চুক্তি অনুযায়ী গতকাল থেকে রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে ফেরত
পাঠানোর কাজ শুরু হওয়ার কথা থাকলেও তা শুরু করা যায়নি। আশঙ্কার বিষয় হল-
কবে নাগাদ প্রত্যাবাসন শুরু হবে এ সম্পর্কেও অস্পষ্টতা বিরাজ করছে।
উল্লেখ্য, আন্তর্জাতিক চাপের মুখে গত বছরের ২৩ নভেম্বর মিয়ানমারের রাজধানী
নেপিদোয় রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে বাংলাদেশের সঙ্গে একটি চুক্তি সই করে
মিয়ানমার। ‘অ্যারেঞ্জমেন্ট অন রিটার্ন অব ডিসপ্লেসড পার্সন্স ফ্রম রাখাইন
স্টেট’ শীর্ষক চুক্তি অনুযায়ী ২৩ জানুয়ারির মধ্যে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন
শুরু হওয়ার কথা। সে সময় আমাদের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকেও মিয়ানমার
প্রতিদিন তিনশ’ করে রোহিঙ্গা ফিরিয়ে নিতে রাজি হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করা
হয়েছিল। অথচ এখন দেখা যাচ্ছে উল্টো চিত্র। এ প্রেক্ষাপটে প্রশ্নের উদ্রেক
হওয়া স্বাভাবিক- রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নিয়ে মিয়ানমার টালবাহানা শুরু করেছে
কিনা?
ভুলে গেলে চলবে না, চুক্তিটি স্বাক্ষরিত হয়েছে মিয়ানমারের পররাষ্ট্র
মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে। রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী সম্পর্কে মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর
দৃষ্টিভঙ্গি কারও অজানা নয়। চুক্তি বাস্তবায়নে সেনাবাহিনীর ভূমিকা যাতে
বাধা হয়ে না দাঁড়ায়, সেদিকে নজর দেয়া জরুরি। বলার অপেক্ষা রাখে না,
রোহিঙ্গাদের যে কোনো প্রত্যাবাসন হতে হবে স্বেচ্ছামূলক। জাতিসংঘের
শরণার্থীবিষয়ক সংস্থাসহ অপরাপর দেশের কূটনীতিক, সর্বোপরি বাংলাদেশও এ
বিষয়ে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছে। বস্তুত মিয়ানমারে ফিরে যাওয়ার পর সেখানে
রোহিঙ্গাদের নিরাপত্তার বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে। এটি সহজেই বোধগম্য যে,
নিরাপত্তার নিশ্চয়তা না পেলে বিপদ মাথায় নিয়ে রোহিঙ্গারা সেখানে ফিরে যেতে
চাইবে না। ফিরে গেলেও পুনরায় তারা নিগৃহীত হলে, তাদের ওপর হামলা হলে তারা
আবারও এ দেশে পালিয়ে আসবে। কাজেই মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের ফেরত যাওয়ার
পাশাপাশি সে দেশে তাদের নিরাপদ বসবাসের পরিবেশ তৈরি করা গুরুত্বপূর্ণ। এ
জন্য রোহিঙ্গাদের নাগরিকতা প্রদানের বিষয়টিও সমান গুরুত্বপূর্ণ। এ ব্যাপারে
মিয়ানমারের ওপর জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের চাপ অব্যাহত রাখতে হবে।
মিয়ানমার সরকার যাচাই-বাছাইসহ অন্যান্য অজুহাতে বাংলাদেশে অবস্থানকারী
রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে যাতে গড়িমসি না করতে পারে, এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট
সবার সজাগ থাকা দরকার। রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের ক্ষেত্রে আমাদের অভিজ্ঞতা
সুখকর নয়; অতীতে আসা রোহিঙ্গাদের বড় অংশ এখনও মিয়ানমারে ফিরে যেতে পারেনি।
কাজেই চুক্তি অনুযায়ী রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের উদ্যোগ সুসম্পন্ন করার
লক্ষ্যে আমাদের পক্ষ থেকে দ্বিপাক্ষিক কূটনীতির পাশাপাশি আন্তর্জাতিক চাপ
অব্যাহত রাখা হবে, এটাই কাম্য।
No comments