থমথমে নারায়ণগঞ্জ: আইভী ও শামীম ওসমান পাল্টাপাল্টি
থমথমে
নারায়ণগঞ্জ। চাপা ক্ষোভ আর আতঙ্ক সর্বত্র। মুখোমুখি অবস্থানে সিটি মেয়র
সেলিনা হায়াৎ আইভী ও সংসদ সদস্য শামীম ওসমানের সমর্থকরা। মঙ্গলবার ব্যাপক
সংঘর্ষের পর থেকে উত্তেজনা বিরাজ করছে দুই পক্ষের মধ্যে। গতকাল আইভী ও
শামীম ওসমান পাল্টাপাল্টি সংবাদ সম্মেলন করে একে অন্যকে দোষারোপ করেছেন।
এতদিন বাকযুদ্ধে উত্তাপ ছড়ানো দুই নেতার দ্বন্দ্ব রাজপথে আসে নগরীর
ফুটপাথে হকার উচ্ছেদ ও বসানোকে কেন্দ্র করে।
যাদের কেন্দ্র করে মঙ্গলবারের তুলকালাম ঘটনা সেই হকাররা ঘোষণা দিয়েও গতকাল ফুটপাথে বসেনি। গতকাল পর্যন্ত নগরীর ফুটপাথ হকারমুক্তই ছিল। এদিকে মঙ্গলবার অস্ত্র উঁচিয়ে গুলি করতে যাওয়া নিয়াজুল ইসলামকে এখনো পুলিশ গ্রেপ্তার করতে পারেনি। এ নিয়ে চরম ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন নাসিক মেয়র আইভী ও সাধারণ মানুষ। ওদিকে ১২ জন সাংবাদিক আহত হওয়ার ঘটনায় সন্ত্রাসী নিয়াজুলসহ জড়িতদের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে গ্রেপ্তারের আল্টিমেটাম দিয়েছেন সাংবাদিকরা। পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে শহরের কয়েকটি পয়েন্টে অতিরিক্তি পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। সংঘর্ষের ঘটনায় ক্ষুব্ধ আওয়ামী লীগের হাইকমান্ডও। গতকাল দফায় দফায় আইভী ও শামীম ওসমানের সঙ্গে কথা বলেছেন কেন্দ্রীয় নেতারা। তারা তাদের সংঘাতে না জড়ানোর পরামর্শ দিয়েছেন। এছাড়া পুরো বিষয় নিয়ে তাদের ঢাকায় ডাকা হতে পারে বলে দলীয়ভাবে জানানো হয়েছে।
হত্যার উদ্দেশে হামলা: আইভী
সিটি মেয়র ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী বলেছেন, মঙ্গলবার যে হামলা হয়েছে, তা তাকে হত্যার উদ্দেশ্যেই করা হয়েছে। তিনি অভিযোগ করেন, নিকট আত্মীয় ভাই, ভাগ্নে ও ভগ্নিপতিসহ কাছের নেতাকর্মীদের মুখ দেখে দেখে হামলা করা হয়েছে। ইটবৃষ্টি ঝরানো হয়েছে। হামলার বিষয়ে আইনি লড়াইয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন তিনি। বুধবার বিকালে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। আইভী বলেন, হকারদের উচ্ছেদ ঘটনাটি শান্তিপূর্ণভাবে সমাধান করার জন্য স্থানীয় প্রশাসন ও স্থানীয় সংসদ সদস্যদের সঙ্গে আলোচনা করে আমরা বিকল্প ব্যবস্থার উদ্যোগ নিয়েছিলাম। কিন্তু এরই মধ্যে সংসদ সদস্য শামীম ওসমান অযাচিতভাবে হকার বসানোর ঘোষণা দিয়ে পরিবেশকে উত্তপ্ত করে এই সংঘর্ষের ঘটনা ঘটিয়েছেন।
জেলা প্রশাসক (ডিসি) ও পুলিশ সুপারকে (এসপি) প্রত্যাহারের দাবিতে অনড় থেকে আইভি বলেন, প্রশাসনের নিষ্ক্রীয়তার কারণেই এই হামলা হয়েছে। যখন আমার ওপর ইটবৃষ্টি ঝরানো হচ্ছিল তখন পুলিশ কোথায় ছিল? এমন বিষয় ঘটতে পারে তা জানিয়ে প্রশাসনের পক্ষ থেকে আমাদের সাবধানও করা হয়নি।
আইভী বলেন, মঙ্গলবার আমি তো হেঁটে হেঁটে স্বাভাবিক ও শান্তিপূর্ণভাবে প্রেস ক্লাবের সামনে প্রেস ব্রিফিং করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশ জানাতে যাচ্ছিলাম। কিন্তু আমি তো আমার গন্তব্যে যেতেই পারলাম না, শুরু হলো অঝরে ইট-বৃষ্টির হামলা। আমি ঝগড়া করতে যাইনি, কারো বিপক্ষে কথা বলতে যাইনি, আমি শান্তিপূর্ণভাবে আমাদের কার্যক্রম প্রেসকে জানানোর পরে আবার ফিরে আসবো এমন প্রস্তুতিতে গিয়েছিলাম।
সাংবাদিকরা প্রশ্ন করেন হকাররা ফুটপাথে বসবে না- এটা হাই কোর্টের রুল দেয়া আছে। এই তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে পূর্বের রাজনৈতিক শত্রুতার জেরে নারায়ণগঞ্জ আবার উত্তপ্ত হলো- এটা কেন? আপনি আরো বলেছেন, আপনাকে হত্যার জন্য এ আক্রমণ করা হলো। এবং নারায়ণগঞ্জের ডিসি এসপির ভূমিকা নিয়ে আপনি প্রশ্ন তুলেছেন এবং তাদের অপসারণ চেয়েছেন- এ ব্যাপারে আপনার অবস্থান কি। জবাবে আইভী বলেন, আমি এ কথা এখনো বলছি। আমার দুই গজ সামনে থেকে নিয়াজুল পিস্তল উঁচিয়ে আমাকে টার্গেট করেছে। এটা আপনারা সংবাদকর্মীরা সবাই দেখেছেন। আসলে দুই পরিবারকে এভাবে দেখার কোনো সুযোগ নেই। বাংলাদেশের সব জেলায় বড় দলগুলোতে এ ধরনের ব্যবধান থাকে। নেতৃত্বের প্রতিযোগিতা থাকবেই। এই শহরে আমি কোনোদিনই আগ বাড়িয়ে লাগিনি। আমার কাজ হলো নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনকে নিয়ে সারাদিন চিন্তা করা এবং জনগণের জন্য কাজ করা। এই শহরের মানুষ স্বাচ্ছন্দ্যে হাঁটতে পারছে না এটাও তো আমার জন্য একটা ব্যর্থতা। এই সাধারণ মানুষ তো আমাকে ভোট দিয়েছেন।
তবে মানবিক দিক বিবেচনা করলে হকাররাও কাজ করে খান। কিন্তু তাদের পুনর্বাসনে তো আমরা হকার্স মার্কেট করে দিয়েছি। ঢাকায় উচ্ছেদের পর ঢাকার হকাররা যদি এসে নারায়ণগঞ্জে ব্যবসা করে তাকেও আমার আশ্রয় দিতে হবে? সে জায়গা কোথায়?
রাজউকের যে জায়গায় টার্গেট করেছি সেগুলোও রাজউক বিক্রি করতে চাচ্ছে। আমি ওটা রেজিস্ট্রি করে রাখিনি। আমাকে ৪ আসনের এমপি মহোদয় তো বলতে পারতেন এখানে যে হকার্স মার্কেটটা আছে সেটা দশ তলা করা হোক। আমি আপনাকে সহযোগিতা করবো। এই প্রস্তাবতো আমাকে উনি দেননি।
তিনি বলেন, পারিবারিক ভাবে এখানে আমাদের মধ্যে কোনো সংঘর্ষ নেই। তবে মঙ্গলবার যারা আহত হয়েছে প্রত্যেকে আমার আত্মীয়। আমার একেবারে কাছের কর্মী। মুখ চিনে চিনে, দেখে দেখে তাদের ওপর হামলা করা হয়। এটা আমার জন্য একটা দুঃখজনক ঘটনা। আমি মাইর খাইতে প্রস্তুত, কিন্তু আমার কর্মীরা মার খাবে এটা আমি কখনোই চাইনি। আমার বাবাও কর্মীদের সন্তানের মতো দেখতেন। মঙ্গলবার আমি আমার একজন কর্মীকেও আঘাত থেকে বাঁচাতে পারিনি।
অনেক পত্রিকায় বলা হয়েছিল আমি পড়ে গেছিলাম। আসলে আমি পড়ে যাইনি। আমি পরিস্থিতি দেখে বসে পড়েছিলাম। তখন পায়ে ইটের আঘাতে প্রচণ্ড ব্যথা পাই। আমি বসে পড়েছিলাম কারণ আমি ভেবেছিলাম আমার উপস্থিতিতে হয়তো ওরা বিশৃঙ্খলা করবে না। কিন্তু ওরা আমাকেই মারতে আসে। আর কর্মীদের কাউকে ডেকে আনিনি, আমি হাঁটতে বের হলে সবাই আমার সঙ্গে সঙ্গে চলে আসে।
রাজনৈতিক আধিপত্য ঘিরে মঙ্গলবারের ঘটনা কিনা এমন প্রশ্নে আইভী বলেন, এটা বলতে পারেন না। কারণ সংঘর্ষে উভয় পক্ষের অংশগ্রহণ থাকলে আপনি তা বলতে পারতেন। কিন্তু এখানে তো মারলো এক পক্ষ। আর একপক্ষ মার খেলো।
আমি শান্তিপূর্ণভাবে প্রেস ব্রিফিংয়ের জন্য আসছিলাম। আর প্রেস ক্লাবের সামনে আসার পর আমার ওপর হামলা হলো, এখানে তো একপক্ষ থেকে পরিকল্পিতভাবে হামলা করা হলো। এখানে প্রভাব বিস্তারের কিছু নেই, ভাই। আমি সিটির মেয়র আর উনি আমার দলীয় এমপি। উনি একতরফাভাবে হামলা করলো। গতকালের (মঙ্গলবার) ঘটনার নেপথ্যে শামীম ওসমান। তিনি ঘটনাকে উসকে দিয়েছেন। উনি (শামীম ওসমান) এসপিকে ডিসিকে আদেশ করেছেন যে হকার বসবে। অনুরোধ নয়, আদেশ। আমরা তো যে জায়গা বিকল্প হিসেবে ঠিক করেছিলাম তা তো এমপি সেলিম ওসমানের এলাকা। তিনি চিঠি দিলেন আমি চিঠির উত্তর দিলাম। এটা আমরা ডিসিকে পাঠিয়েছি। এবং আমরা আলোচনায় আছি। ডিসি বললেন, এমপি দেশের বাইরে আছেন, উনি এলেই আমরা আলোচনা করবো। আমি ডিসিকে বললাম, আপনি আইডি কার্ড সংগ্রহ করেন এবং তালিকার ব্যবস্থা করেন। যেখানে প্রশাসন বসে আমরা সমাধানের ব্যবস্থা করলাম। তখন কিভাবে উনি হামলা করলেন এবং পিস্তল দেখানো হলো তা আমার বোধগম্য নয়।
এটা শামীম বনাম আইভীর সংঘর্ষ না- শামীম ওসমান : ওদিকে মঙ্গলবারের ঘটনায় গতকাল সংবাদ সম্মেলন করেছেন এমপি শামীম ওসমান। বিকাল ৪টায় নারায়ণগঞ্জ শহরের রাইফেলস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, প্রকৃত ঘটনা তুলে ধরার উদ্দেশ্যেই এই সংবাদ সম্মেলন শামীম ওসমান বলেন, মঙ্গলবার যে ঘটনা ঘটেছে তা আমার সঙ্গে সেলিনা হায়াৎ আইভীর নয়। এটি সেলিনা হায়াৎ আইভী বনাম হকারদের। আমি গরিব মানুষের পক্ষে কথা বলেছি। আমি কখনও ফুটপাথে দোকান বসানোর পক্ষে না। এমনকি দেশের মানুষ বস্তিতে থাকুক তাও আমি চাই না।
তিনি বলেন, ২৫শে ডিসেম্বর কোনো নোটিশ ছাড়াই হকারদের বেধড়ক পিটিয়ে উচ্ছেদ করা হয়। তাদের দোকানের গরম কাপড় পুড়িয়ে দেয়া হয় সিটি করপোরেশনের সামনে। হকাররা আমার কাছে এসে কান্না করেছেন। তাদের ঘরে স্ত্রী-সন্তান আছে। ফুটপাতে ব্যবসা করেই তারা পরিবারের মুখে ভাত তুলে দেয়। তারা বলেছে, আমাদের বাঁচান। আমাদের ঘরে খাবার নেই। আমি তাদের বলেছি মেয়রের কাছে যান। কয়েকবার তারা গেছে। ফল পায়নি। শ্রমজীবী মানুষের দায়িত্ব নিয়েছে বামমোর্চা। আইভীকে তারা পাঁচ বছর অক্লান্ত পরিশ্রম করে আজকের আইভী বানিয়েছে। বাম মোর্চার নেতৃবৃন্দের কথাও আইভী শুনেনি। এমপি সেলিম ওসমান সাহেবকে বলেছি আপনি চিঠি পাঠান। আগে হকারদের পুনর্বাসন করা হোক। তিনি চিঠি পাঠালেন। আইভী পাল্টা চিঠি পাঠালেন, সম্ভব না। তিনি পুনর্বাসনের জন্য ব্যক্তিগত সম্পত্তি দেখালেন। এ সময় শামীম ওসমান নিজের অতীতের নানা কষ্টের কথা তুলে ধরে বলেন, গরিব মানুষের কষ্ট আমি উপলব্ধি করি। যদি ভাত না খেয়ে থাকতেন, যদি ছেলেকে স্কুলে-কলেজে ভর্তির ফি দিতে না পারতেন তাহলে বুঝতেন গরিবের কী কষ্ট। শামীম ওসমান বলেন, আমি বলেছি উচ্ছেদের আগে পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করেন। আমি গরিব মানুষের পক্ষে। ভোটের আগে তাদের বাপ ডেকেছি, হাতে ধরেছি। এখন লাথি মারতে পারবো না। এমন ভণ্ডামির রাজনীতি শামীম ওসমান করে না।
সংঘর্ষের বর্ণনা দিতে গিয়ে শামীম ওসমান বলেন, শুনলাম আইভী প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করবেন। তিনি হকারদের উচ্ছেদ করলেন। মারধর করলেন। হকারদের দোকানের কাপড় পুড়িয়ে দিলেন। এ সময় একটি ছবি দেখিয়ে শামীম ওসমান বলেন, এই দেখেন আইভীর প্রিয়বন্ধু সুফিয়ানের কোমরে পিস্তল। তার সঙ্গে ছিল যুবদলের আহ্বায়ক খুরশেদ। বিভা, যার ভাই মার্ডার মামলার আসামি। এ সময় আরও একটি ছবি দেখিয়ে শামীম ওসমান বলেন, পিস্তল উঁচিয়ে গুলি করছে বিএনপি’র ক্যাডার সুমন। নিয়াজুলকে তারা তিন দফা পিটিয়েছে। তারপর সে তার লাইসেন্স করা পিস্তল বের করেছে। লাইসেন্স করা পিস্তল কেন দেয়া হয়, আত্মরক্ষার জন্যই। নিয়াজুল তিন দফা মার খাওয়ার পরে পিস্তল বের করেছে। নিয়াজুল আমাদের কর্মী, তবে সে মার্কেটের মালিক। একজন বয়স্ক মানুষ। দুই শ’ লোক তাকে পিঠিয়েছে। মাথা ফাটিয়েছে।
সিটি করপোরেশন নির্বাচন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, নির্বাচন করেছি। অনেক কিছুই ওলট-পালট করে দিয়েছি। দল- বলে কিছু বলতে চাই না। কিভাবে নির্বাচন করেছি, কোথায় কি হয়েছে কিভাবে কাকে পাস করানো হয়েছে- সময় হলে বলবো।
এ সময় এক প্রশ্নের উত্তরে শামীম ওসমান বলেন, একজন এমপি শুধু নিজের নির্বাচনী এলাকা নিয়ে কথা বলেন না। একইভাবে পুলিশের ভূমিকা নিয়ে তিনি বলেন, নিয়াজুলের পিস্তল নিয়ে গেছে। কারা নিয়েছে। এ বিষয়ে লিখিত অভিযোগ দেয়া হলেও তা রেকর্ড করা হয়নি। ডিসি ও এসপি প্রত্যাহার সংক্রান্ত আইভীর দাবি সম্পর্কে শামীম ওসমান বলেন, আমি পাগলও না, ছাগলও না। ডিসি, এসপি’র বিরুদ্ধে অভিযোগ থাকলে কোথায় করতে হয় তা আমি ভালো করেই জানি। প্রেসের কাছে না।
আইভী সম্পর্কে তিনি বলেন, আইভী আমার দুশমন না। তাকে প্রকাশ্যে ভোট দিয়েছি। পাস করিয়েছি। ছেলের বিয়েতে তাকে কার্ড দিতে বাসায় গিয়ে এক ঘণ্টা অপেক্ষা করেও তার দেখা পাইনি। সে আমার ছেলেকে নিয়ে কথা বলে। অথচ আমি তৈমূর আলম খন্দকারের মেয়েকে মা বলে ডাকি। আইভীকে আমি বোন বলেছি।
২৪ ঘণ্টার মধ্যে নিয়াজুলকে গ্রেপ্তারের আল্টিমেটাম: এদিকে মঙ্গলবার সাংবাদিকদের ওপর হামলাকারী নিয়াজুলকে গ্রেপ্তারে ২৪ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দিয়েছেন সাংবাদিক নেতারা। অন্যথায় প্রশাসনের সকল সংবাদ বর্জনসহ সারা দেশের সাংবাদিকদের নিয়ে আন্দোলন গড়ে তোলার হুঁশিয়ারী দেন তারা। বুধবার দুপুরে নারায়ণগঞ্জ প্রেস ক্লাবের সামনে এক প্রতিবাদী মানববন্ধন থেকে প্রশাসনের উদ্দেশে এই আল্টিমেটাম দেয়া হয়। নারায়ণগঞ্জ প্রেস ক্লাব ও নারায়ণগঞ্জ জেলা সাংবাদিক ইউনিয়ন (এনইউজে) এই মানববন্ধনের আয়োজন করে।
ঘটনার নিন্দা জানিয়ে বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের মহাসচিব ওমর ফারুক বলেন, ভেবেছিলাম নারায়ণগঞ্জের জেলা প্রশাসক ন্যায়পরায়ণ। কিন্তু না সেটা ভুল ভাবনা। প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক শরিফউদ্দিন সবুজকে যেভাবে প্রকাশ্যে পেটানো হয়েছে আজকে যদি সেভাবে আপনাকে কিংবা প্রশাসন এবং বিচার বিভাগের কাউকে পেটানো হতো তবে এতক্ষণে দেখতাম সেই পিস্তল উঁচু করা নিয়াজুলরা মাটির নিচে থাকতো। সেই সন্ত্রাসীদের আপনারা ক্রসফায়ারে দিতেন। আমরা সাংবাদিকরা রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভ। তারপরও আমরা আমাদের ন্যায্য পাওনা পাচ্ছি না, নিরাপত্তা পাচ্ছি না।
জেলা প্রশাসক এবং পুলিশ সুপারকে বলছি, আপনারা যদি আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সন্ত্রাসীদের গ্রেপ্তার না করেন তবে বৃহস্পতিবার সকাল ১১টায় ঢাকা প্রেস ক্লাবের সামনে আমরা মানববন্ধন করবো। এবং সেখান থেকে আমরা পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা করব। প্রয়োজনে সারা দেশের সাংবাদিকরা নারায়ণগঞ্জে আসবেন বলেও তিনি হুঁশিয়ারী উচ্চারণ করেন। নারায়ণগঞ্জ প্রেস ক্লাব সভাপতি মাহবুবুর রহমান মাসুমের সভাপতিত্বে মানবন্ধনে বক্তব্য রাখেন, বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের মহাসচিব ওমর ফারুক, সাবেক মহাসচিব আবদুল জলিল ভূঁইয়া, নারায়ণগঞ্জ প্রেস ক্লাবের সাবেক সভাপতি কবি হালিম আজাদ, প্রবীণ ফটো সাংবাদিক শফিউদ্দিন বিটু, নারায়ণগঞ্জ সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি আবদুস সালাম প্রমুখ।
মানববন্ধনের শুরুতে নারায়ণগঞ্জ সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি আব্দুস সালাম দায়িত্ব পালন করতে না পারলে ডিসি এসপিকে জেলা ছেড়ে চলে যাওয়ার পরামর্শ দিয়ে বলেন, সন্ত্রাসীরা যখন প্রকাশ্যে অস্ত্র উঁচিয়ে হামলা চালায় পুলিশ তখন নীরব ভূমিকা পালন করে। ঘটনার দীর্ঘ সময় অতিবাহিত হওয়ার পরও সন্ত্রাসী হামলার ঘটনায় এখনো প্রশাসন কোনো মামলা করেনি। তাদের ব্যর্থতায় পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে সবুজ, তাপসসহ ১২ জন সাংবাদিককে রক্ত ঝরাতে হয়েছে। প্রশাসন শহরের এক প্রান্তে দাঁড়িয়ে আরেক প্রান্তকে উস্কানি দিয়ে নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করে। তাদের এমন ভূমিকার জন্য নিন্দা ও ধিক্কার জানাই।
প্রেস ক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক নাফিজ আশরাফের সঞ্চালনায় মানববন্ধনে সাংবাদিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক আফজাল হোসেন পন্টি, ইন্ডিপেন্ডেন্ট টেলিভিশনের জেলা প্রতিনিধি মুজিবুল হক পলাশ, দৈনিক মানবজমিন-এর স্টাফ রিপোর্টার বিল্লাল হোসেন রবিন, দৈনিক সংবাদের সাংবাদিক অন্তু রেজা, গণসংহতি আন্দোলন নারায়ণগঞ্জ জেলার আহ্বায়ক তরিকুল সুজনসহ জেলার বিভিন্ন স্থানীয় ও জাতীয় পর্যায়ের গণমাধ্যমকর্মীরা এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
শহীদ মিনারে হকারদের অবস্থান: অন্যদিকে শহীদ মিনারে ব্যানার টাঙিয়ে দিনভর সেখানে অবস্থান করেছে হকাররা। বেঁচে থাকার অবলম্বন হিসেবে ব্যবসা করার সুযোগ দিতে অনুরোধ করা হয়েছে ওই ব্যানারে। সেইসঙ্গে বলা হয়েছে, স্থায়ী সমাধান হলে অন্যত্র চলে যাবেন তারা। একই দাবিতে নগরবাসীর উদ্দেশে খোলা চিঠি বিতরণ করেছেন হকাররা। হকাররা দাবি করেছেন, ‘আমাদের ব্যবসা হয় দু’টি ঈদ, পূজা, পহেলা বৈশাখ ও শীত মৌসুমে। সারা বছর এই আয় দিয়েই সংসার চলে। যদি দুই মাস আগে উচ্ছেদের নোটিশ করা হতো আমরা অন্য কোনো অবলম্বন খুঁজে বের করতাম। আমরা শুধু একমাস এই শীতে রাস্তায় বসার অনুমতি চেয়েছি। তারপরও আমাদের সঙ্গে বিমাতাসুলভ আচরণে আমরা কষ্ট পেয়েছি।
যাদের কেন্দ্র করে মঙ্গলবারের তুলকালাম ঘটনা সেই হকাররা ঘোষণা দিয়েও গতকাল ফুটপাথে বসেনি। গতকাল পর্যন্ত নগরীর ফুটপাথ হকারমুক্তই ছিল। এদিকে মঙ্গলবার অস্ত্র উঁচিয়ে গুলি করতে যাওয়া নিয়াজুল ইসলামকে এখনো পুলিশ গ্রেপ্তার করতে পারেনি। এ নিয়ে চরম ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন নাসিক মেয়র আইভী ও সাধারণ মানুষ। ওদিকে ১২ জন সাংবাদিক আহত হওয়ার ঘটনায় সন্ত্রাসী নিয়াজুলসহ জড়িতদের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে গ্রেপ্তারের আল্টিমেটাম দিয়েছেন সাংবাদিকরা। পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে শহরের কয়েকটি পয়েন্টে অতিরিক্তি পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। সংঘর্ষের ঘটনায় ক্ষুব্ধ আওয়ামী লীগের হাইকমান্ডও। গতকাল দফায় দফায় আইভী ও শামীম ওসমানের সঙ্গে কথা বলেছেন কেন্দ্রীয় নেতারা। তারা তাদের সংঘাতে না জড়ানোর পরামর্শ দিয়েছেন। এছাড়া পুরো বিষয় নিয়ে তাদের ঢাকায় ডাকা হতে পারে বলে দলীয়ভাবে জানানো হয়েছে।
হত্যার উদ্দেশে হামলা: আইভী
সিটি মেয়র ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী বলেছেন, মঙ্গলবার যে হামলা হয়েছে, তা তাকে হত্যার উদ্দেশ্যেই করা হয়েছে। তিনি অভিযোগ করেন, নিকট আত্মীয় ভাই, ভাগ্নে ও ভগ্নিপতিসহ কাছের নেতাকর্মীদের মুখ দেখে দেখে হামলা করা হয়েছে। ইটবৃষ্টি ঝরানো হয়েছে। হামলার বিষয়ে আইনি লড়াইয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন তিনি। বুধবার বিকালে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। আইভী বলেন, হকারদের উচ্ছেদ ঘটনাটি শান্তিপূর্ণভাবে সমাধান করার জন্য স্থানীয় প্রশাসন ও স্থানীয় সংসদ সদস্যদের সঙ্গে আলোচনা করে আমরা বিকল্প ব্যবস্থার উদ্যোগ নিয়েছিলাম। কিন্তু এরই মধ্যে সংসদ সদস্য শামীম ওসমান অযাচিতভাবে হকার বসানোর ঘোষণা দিয়ে পরিবেশকে উত্তপ্ত করে এই সংঘর্ষের ঘটনা ঘটিয়েছেন।
জেলা প্রশাসক (ডিসি) ও পুলিশ সুপারকে (এসপি) প্রত্যাহারের দাবিতে অনড় থেকে আইভি বলেন, প্রশাসনের নিষ্ক্রীয়তার কারণেই এই হামলা হয়েছে। যখন আমার ওপর ইটবৃষ্টি ঝরানো হচ্ছিল তখন পুলিশ কোথায় ছিল? এমন বিষয় ঘটতে পারে তা জানিয়ে প্রশাসনের পক্ষ থেকে আমাদের সাবধানও করা হয়নি।
আইভী বলেন, মঙ্গলবার আমি তো হেঁটে হেঁটে স্বাভাবিক ও শান্তিপূর্ণভাবে প্রেস ক্লাবের সামনে প্রেস ব্রিফিং করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশ জানাতে যাচ্ছিলাম। কিন্তু আমি তো আমার গন্তব্যে যেতেই পারলাম না, শুরু হলো অঝরে ইট-বৃষ্টির হামলা। আমি ঝগড়া করতে যাইনি, কারো বিপক্ষে কথা বলতে যাইনি, আমি শান্তিপূর্ণভাবে আমাদের কার্যক্রম প্রেসকে জানানোর পরে আবার ফিরে আসবো এমন প্রস্তুতিতে গিয়েছিলাম।
সাংবাদিকরা প্রশ্ন করেন হকাররা ফুটপাথে বসবে না- এটা হাই কোর্টের রুল দেয়া আছে। এই তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে পূর্বের রাজনৈতিক শত্রুতার জেরে নারায়ণগঞ্জ আবার উত্তপ্ত হলো- এটা কেন? আপনি আরো বলেছেন, আপনাকে হত্যার জন্য এ আক্রমণ করা হলো। এবং নারায়ণগঞ্জের ডিসি এসপির ভূমিকা নিয়ে আপনি প্রশ্ন তুলেছেন এবং তাদের অপসারণ চেয়েছেন- এ ব্যাপারে আপনার অবস্থান কি। জবাবে আইভী বলেন, আমি এ কথা এখনো বলছি। আমার দুই গজ সামনে থেকে নিয়াজুল পিস্তল উঁচিয়ে আমাকে টার্গেট করেছে। এটা আপনারা সংবাদকর্মীরা সবাই দেখেছেন। আসলে দুই পরিবারকে এভাবে দেখার কোনো সুযোগ নেই। বাংলাদেশের সব জেলায় বড় দলগুলোতে এ ধরনের ব্যবধান থাকে। নেতৃত্বের প্রতিযোগিতা থাকবেই। এই শহরে আমি কোনোদিনই আগ বাড়িয়ে লাগিনি। আমার কাজ হলো নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনকে নিয়ে সারাদিন চিন্তা করা এবং জনগণের জন্য কাজ করা। এই শহরের মানুষ স্বাচ্ছন্দ্যে হাঁটতে পারছে না এটাও তো আমার জন্য একটা ব্যর্থতা। এই সাধারণ মানুষ তো আমাকে ভোট দিয়েছেন।
তবে মানবিক দিক বিবেচনা করলে হকাররাও কাজ করে খান। কিন্তু তাদের পুনর্বাসনে তো আমরা হকার্স মার্কেট করে দিয়েছি। ঢাকায় উচ্ছেদের পর ঢাকার হকাররা যদি এসে নারায়ণগঞ্জে ব্যবসা করে তাকেও আমার আশ্রয় দিতে হবে? সে জায়গা কোথায়?
রাজউকের যে জায়গায় টার্গেট করেছি সেগুলোও রাজউক বিক্রি করতে চাচ্ছে। আমি ওটা রেজিস্ট্রি করে রাখিনি। আমাকে ৪ আসনের এমপি মহোদয় তো বলতে পারতেন এখানে যে হকার্স মার্কেটটা আছে সেটা দশ তলা করা হোক। আমি আপনাকে সহযোগিতা করবো। এই প্রস্তাবতো আমাকে উনি দেননি।
তিনি বলেন, পারিবারিক ভাবে এখানে আমাদের মধ্যে কোনো সংঘর্ষ নেই। তবে মঙ্গলবার যারা আহত হয়েছে প্রত্যেকে আমার আত্মীয়। আমার একেবারে কাছের কর্মী। মুখ চিনে চিনে, দেখে দেখে তাদের ওপর হামলা করা হয়। এটা আমার জন্য একটা দুঃখজনক ঘটনা। আমি মাইর খাইতে প্রস্তুত, কিন্তু আমার কর্মীরা মার খাবে এটা আমি কখনোই চাইনি। আমার বাবাও কর্মীদের সন্তানের মতো দেখতেন। মঙ্গলবার আমি আমার একজন কর্মীকেও আঘাত থেকে বাঁচাতে পারিনি।
অনেক পত্রিকায় বলা হয়েছিল আমি পড়ে গেছিলাম। আসলে আমি পড়ে যাইনি। আমি পরিস্থিতি দেখে বসে পড়েছিলাম। তখন পায়ে ইটের আঘাতে প্রচণ্ড ব্যথা পাই। আমি বসে পড়েছিলাম কারণ আমি ভেবেছিলাম আমার উপস্থিতিতে হয়তো ওরা বিশৃঙ্খলা করবে না। কিন্তু ওরা আমাকেই মারতে আসে। আর কর্মীদের কাউকে ডেকে আনিনি, আমি হাঁটতে বের হলে সবাই আমার সঙ্গে সঙ্গে চলে আসে।
রাজনৈতিক আধিপত্য ঘিরে মঙ্গলবারের ঘটনা কিনা এমন প্রশ্নে আইভী বলেন, এটা বলতে পারেন না। কারণ সংঘর্ষে উভয় পক্ষের অংশগ্রহণ থাকলে আপনি তা বলতে পারতেন। কিন্তু এখানে তো মারলো এক পক্ষ। আর একপক্ষ মার খেলো।
আমি শান্তিপূর্ণভাবে প্রেস ব্রিফিংয়ের জন্য আসছিলাম। আর প্রেস ক্লাবের সামনে আসার পর আমার ওপর হামলা হলো, এখানে তো একপক্ষ থেকে পরিকল্পিতভাবে হামলা করা হলো। এখানে প্রভাব বিস্তারের কিছু নেই, ভাই। আমি সিটির মেয়র আর উনি আমার দলীয় এমপি। উনি একতরফাভাবে হামলা করলো। গতকালের (মঙ্গলবার) ঘটনার নেপথ্যে শামীম ওসমান। তিনি ঘটনাকে উসকে দিয়েছেন। উনি (শামীম ওসমান) এসপিকে ডিসিকে আদেশ করেছেন যে হকার বসবে। অনুরোধ নয়, আদেশ। আমরা তো যে জায়গা বিকল্প হিসেবে ঠিক করেছিলাম তা তো এমপি সেলিম ওসমানের এলাকা। তিনি চিঠি দিলেন আমি চিঠির উত্তর দিলাম। এটা আমরা ডিসিকে পাঠিয়েছি। এবং আমরা আলোচনায় আছি। ডিসি বললেন, এমপি দেশের বাইরে আছেন, উনি এলেই আমরা আলোচনা করবো। আমি ডিসিকে বললাম, আপনি আইডি কার্ড সংগ্রহ করেন এবং তালিকার ব্যবস্থা করেন। যেখানে প্রশাসন বসে আমরা সমাধানের ব্যবস্থা করলাম। তখন কিভাবে উনি হামলা করলেন এবং পিস্তল দেখানো হলো তা আমার বোধগম্য নয়।
এটা শামীম বনাম আইভীর সংঘর্ষ না- শামীম ওসমান : ওদিকে মঙ্গলবারের ঘটনায় গতকাল সংবাদ সম্মেলন করেছেন এমপি শামীম ওসমান। বিকাল ৪টায় নারায়ণগঞ্জ শহরের রাইফেলস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, প্রকৃত ঘটনা তুলে ধরার উদ্দেশ্যেই এই সংবাদ সম্মেলন শামীম ওসমান বলেন, মঙ্গলবার যে ঘটনা ঘটেছে তা আমার সঙ্গে সেলিনা হায়াৎ আইভীর নয়। এটি সেলিনা হায়াৎ আইভী বনাম হকারদের। আমি গরিব মানুষের পক্ষে কথা বলেছি। আমি কখনও ফুটপাথে দোকান বসানোর পক্ষে না। এমনকি দেশের মানুষ বস্তিতে থাকুক তাও আমি চাই না।
তিনি বলেন, ২৫শে ডিসেম্বর কোনো নোটিশ ছাড়াই হকারদের বেধড়ক পিটিয়ে উচ্ছেদ করা হয়। তাদের দোকানের গরম কাপড় পুড়িয়ে দেয়া হয় সিটি করপোরেশনের সামনে। হকাররা আমার কাছে এসে কান্না করেছেন। তাদের ঘরে স্ত্রী-সন্তান আছে। ফুটপাতে ব্যবসা করেই তারা পরিবারের মুখে ভাত তুলে দেয়। তারা বলেছে, আমাদের বাঁচান। আমাদের ঘরে খাবার নেই। আমি তাদের বলেছি মেয়রের কাছে যান। কয়েকবার তারা গেছে। ফল পায়নি। শ্রমজীবী মানুষের দায়িত্ব নিয়েছে বামমোর্চা। আইভীকে তারা পাঁচ বছর অক্লান্ত পরিশ্রম করে আজকের আইভী বানিয়েছে। বাম মোর্চার নেতৃবৃন্দের কথাও আইভী শুনেনি। এমপি সেলিম ওসমান সাহেবকে বলেছি আপনি চিঠি পাঠান। আগে হকারদের পুনর্বাসন করা হোক। তিনি চিঠি পাঠালেন। আইভী পাল্টা চিঠি পাঠালেন, সম্ভব না। তিনি পুনর্বাসনের জন্য ব্যক্তিগত সম্পত্তি দেখালেন। এ সময় শামীম ওসমান নিজের অতীতের নানা কষ্টের কথা তুলে ধরে বলেন, গরিব মানুষের কষ্ট আমি উপলব্ধি করি। যদি ভাত না খেয়ে থাকতেন, যদি ছেলেকে স্কুলে-কলেজে ভর্তির ফি দিতে না পারতেন তাহলে বুঝতেন গরিবের কী কষ্ট। শামীম ওসমান বলেন, আমি বলেছি উচ্ছেদের আগে পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করেন। আমি গরিব মানুষের পক্ষে। ভোটের আগে তাদের বাপ ডেকেছি, হাতে ধরেছি। এখন লাথি মারতে পারবো না। এমন ভণ্ডামির রাজনীতি শামীম ওসমান করে না।
সংঘর্ষের বর্ণনা দিতে গিয়ে শামীম ওসমান বলেন, শুনলাম আইভী প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করবেন। তিনি হকারদের উচ্ছেদ করলেন। মারধর করলেন। হকারদের দোকানের কাপড় পুড়িয়ে দিলেন। এ সময় একটি ছবি দেখিয়ে শামীম ওসমান বলেন, এই দেখেন আইভীর প্রিয়বন্ধু সুফিয়ানের কোমরে পিস্তল। তার সঙ্গে ছিল যুবদলের আহ্বায়ক খুরশেদ। বিভা, যার ভাই মার্ডার মামলার আসামি। এ সময় আরও একটি ছবি দেখিয়ে শামীম ওসমান বলেন, পিস্তল উঁচিয়ে গুলি করছে বিএনপি’র ক্যাডার সুমন। নিয়াজুলকে তারা তিন দফা পিটিয়েছে। তারপর সে তার লাইসেন্স করা পিস্তল বের করেছে। লাইসেন্স করা পিস্তল কেন দেয়া হয়, আত্মরক্ষার জন্যই। নিয়াজুল তিন দফা মার খাওয়ার পরে পিস্তল বের করেছে। নিয়াজুল আমাদের কর্মী, তবে সে মার্কেটের মালিক। একজন বয়স্ক মানুষ। দুই শ’ লোক তাকে পিঠিয়েছে। মাথা ফাটিয়েছে।
সিটি করপোরেশন নির্বাচন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, নির্বাচন করেছি। অনেক কিছুই ওলট-পালট করে দিয়েছি। দল- বলে কিছু বলতে চাই না। কিভাবে নির্বাচন করেছি, কোথায় কি হয়েছে কিভাবে কাকে পাস করানো হয়েছে- সময় হলে বলবো।
এ সময় এক প্রশ্নের উত্তরে শামীম ওসমান বলেন, একজন এমপি শুধু নিজের নির্বাচনী এলাকা নিয়ে কথা বলেন না। একইভাবে পুলিশের ভূমিকা নিয়ে তিনি বলেন, নিয়াজুলের পিস্তল নিয়ে গেছে। কারা নিয়েছে। এ বিষয়ে লিখিত অভিযোগ দেয়া হলেও তা রেকর্ড করা হয়নি। ডিসি ও এসপি প্রত্যাহার সংক্রান্ত আইভীর দাবি সম্পর্কে শামীম ওসমান বলেন, আমি পাগলও না, ছাগলও না। ডিসি, এসপি’র বিরুদ্ধে অভিযোগ থাকলে কোথায় করতে হয় তা আমি ভালো করেই জানি। প্রেসের কাছে না।
আইভী সম্পর্কে তিনি বলেন, আইভী আমার দুশমন না। তাকে প্রকাশ্যে ভোট দিয়েছি। পাস করিয়েছি। ছেলের বিয়েতে তাকে কার্ড দিতে বাসায় গিয়ে এক ঘণ্টা অপেক্ষা করেও তার দেখা পাইনি। সে আমার ছেলেকে নিয়ে কথা বলে। অথচ আমি তৈমূর আলম খন্দকারের মেয়েকে মা বলে ডাকি। আইভীকে আমি বোন বলেছি।
২৪ ঘণ্টার মধ্যে নিয়াজুলকে গ্রেপ্তারের আল্টিমেটাম: এদিকে মঙ্গলবার সাংবাদিকদের ওপর হামলাকারী নিয়াজুলকে গ্রেপ্তারে ২৪ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দিয়েছেন সাংবাদিক নেতারা। অন্যথায় প্রশাসনের সকল সংবাদ বর্জনসহ সারা দেশের সাংবাদিকদের নিয়ে আন্দোলন গড়ে তোলার হুঁশিয়ারী দেন তারা। বুধবার দুপুরে নারায়ণগঞ্জ প্রেস ক্লাবের সামনে এক প্রতিবাদী মানববন্ধন থেকে প্রশাসনের উদ্দেশে এই আল্টিমেটাম দেয়া হয়। নারায়ণগঞ্জ প্রেস ক্লাব ও নারায়ণগঞ্জ জেলা সাংবাদিক ইউনিয়ন (এনইউজে) এই মানববন্ধনের আয়োজন করে।
ঘটনার নিন্দা জানিয়ে বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের মহাসচিব ওমর ফারুক বলেন, ভেবেছিলাম নারায়ণগঞ্জের জেলা প্রশাসক ন্যায়পরায়ণ। কিন্তু না সেটা ভুল ভাবনা। প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক শরিফউদ্দিন সবুজকে যেভাবে প্রকাশ্যে পেটানো হয়েছে আজকে যদি সেভাবে আপনাকে কিংবা প্রশাসন এবং বিচার বিভাগের কাউকে পেটানো হতো তবে এতক্ষণে দেখতাম সেই পিস্তল উঁচু করা নিয়াজুলরা মাটির নিচে থাকতো। সেই সন্ত্রাসীদের আপনারা ক্রসফায়ারে দিতেন। আমরা সাংবাদিকরা রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভ। তারপরও আমরা আমাদের ন্যায্য পাওনা পাচ্ছি না, নিরাপত্তা পাচ্ছি না।
জেলা প্রশাসক এবং পুলিশ সুপারকে বলছি, আপনারা যদি আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সন্ত্রাসীদের গ্রেপ্তার না করেন তবে বৃহস্পতিবার সকাল ১১টায় ঢাকা প্রেস ক্লাবের সামনে আমরা মানববন্ধন করবো। এবং সেখান থেকে আমরা পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা করব। প্রয়োজনে সারা দেশের সাংবাদিকরা নারায়ণগঞ্জে আসবেন বলেও তিনি হুঁশিয়ারী উচ্চারণ করেন। নারায়ণগঞ্জ প্রেস ক্লাব সভাপতি মাহবুবুর রহমান মাসুমের সভাপতিত্বে মানবন্ধনে বক্তব্য রাখেন, বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের মহাসচিব ওমর ফারুক, সাবেক মহাসচিব আবদুল জলিল ভূঁইয়া, নারায়ণগঞ্জ প্রেস ক্লাবের সাবেক সভাপতি কবি হালিম আজাদ, প্রবীণ ফটো সাংবাদিক শফিউদ্দিন বিটু, নারায়ণগঞ্জ সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি আবদুস সালাম প্রমুখ।
মানববন্ধনের শুরুতে নারায়ণগঞ্জ সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি আব্দুস সালাম দায়িত্ব পালন করতে না পারলে ডিসি এসপিকে জেলা ছেড়ে চলে যাওয়ার পরামর্শ দিয়ে বলেন, সন্ত্রাসীরা যখন প্রকাশ্যে অস্ত্র উঁচিয়ে হামলা চালায় পুলিশ তখন নীরব ভূমিকা পালন করে। ঘটনার দীর্ঘ সময় অতিবাহিত হওয়ার পরও সন্ত্রাসী হামলার ঘটনায় এখনো প্রশাসন কোনো মামলা করেনি। তাদের ব্যর্থতায় পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে সবুজ, তাপসসহ ১২ জন সাংবাদিককে রক্ত ঝরাতে হয়েছে। প্রশাসন শহরের এক প্রান্তে দাঁড়িয়ে আরেক প্রান্তকে উস্কানি দিয়ে নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করে। তাদের এমন ভূমিকার জন্য নিন্দা ও ধিক্কার জানাই।
প্রেস ক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক নাফিজ আশরাফের সঞ্চালনায় মানববন্ধনে সাংবাদিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক আফজাল হোসেন পন্টি, ইন্ডিপেন্ডেন্ট টেলিভিশনের জেলা প্রতিনিধি মুজিবুল হক পলাশ, দৈনিক মানবজমিন-এর স্টাফ রিপোর্টার বিল্লাল হোসেন রবিন, দৈনিক সংবাদের সাংবাদিক অন্তু রেজা, গণসংহতি আন্দোলন নারায়ণগঞ্জ জেলার আহ্বায়ক তরিকুল সুজনসহ জেলার বিভিন্ন স্থানীয় ও জাতীয় পর্যায়ের গণমাধ্যমকর্মীরা এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
শহীদ মিনারে হকারদের অবস্থান: অন্যদিকে শহীদ মিনারে ব্যানার টাঙিয়ে দিনভর সেখানে অবস্থান করেছে হকাররা। বেঁচে থাকার অবলম্বন হিসেবে ব্যবসা করার সুযোগ দিতে অনুরোধ করা হয়েছে ওই ব্যানারে। সেইসঙ্গে বলা হয়েছে, স্থায়ী সমাধান হলে অন্যত্র চলে যাবেন তারা। একই দাবিতে নগরবাসীর উদ্দেশে খোলা চিঠি বিতরণ করেছেন হকাররা। হকাররা দাবি করেছেন, ‘আমাদের ব্যবসা হয় দু’টি ঈদ, পূজা, পহেলা বৈশাখ ও শীত মৌসুমে। সারা বছর এই আয় দিয়েই সংসার চলে। যদি দুই মাস আগে উচ্ছেদের নোটিশ করা হতো আমরা অন্য কোনো অবলম্বন খুঁজে বের করতাম। আমরা শুধু একমাস এই শীতে রাস্তায় বসার অনুমতি চেয়েছি। তারপরও আমাদের সঙ্গে বিমাতাসুলভ আচরণে আমরা কষ্ট পেয়েছি।
No comments