মানুষকে ভালোবেসে দান করি কিছু
রমজানে দানের বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ। দানে মানবতা জেগে ওঠে। আমরা স্বভাবতই দান করে থাকি। সমাজের অনেকেই দানের জন্য একটি মোক্ষম সময়ও অনুসন্ধান করে। কেউ শবেমিরাজে, কেউ শবেবরাতে, কেউ ঈদের দিনে, জুমআর দিনে অথবা অন্য কোনো সময়। কিন্তু রমজানের পবিত্র আবহে দানের বিষয়টি আলাদা মর্যাদা পায়। এর তাৎপর্য নিঃসন্দেহে অনেক বেশি। কোরআনে ইনফাক ফি সাবিলিল্লাহ, অর্থাৎ আল্লাহর রাস্তায় ব্যয়কে খুবই গুরুত্বের সঙ্গে আলোচনা করা হয়েছে। ইচ্ছা-অনিচ্ছায় আমরা দান করে থাকি। এ দানের প্রথম শর্ত হল, পরিশুদ্ধ নিয়ত হতে হবে। নিয়ত পবিত্র হলে দানও পবিত্র হয়। এই দানে আমার লাভ হয়। রমজানকে সহানুভূতির মাস হিসেবে দেখা হয়। রমজানে দানের বিষয়ে হজরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ছিলেন অনেক এগিয়ে। মানবজাতিকে প্রতিটি কর্মের মাধ্যমে যে শিক্ষা তিনি দিয়েছেন তা চিরকরণীয়। নবীজী দান করতেন। এক হাতে যা কিছু আসত অন্য হাতে তা দান করে দিতেন। ইবনে আব্বাস (রা.) এক হাদিসে বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ছিলেন মানুষের সামনে সর্বাধিক দানশীল। রমজানে তিনি সর্বাধিক দানশীল হতেন। নবীজী দানের হাতকে মর্যাদাবান হিসেবে উল্লেখ করেছেন। নিজের হাতকে উত্তম বলেননি। দাতার হাতকে উত্তম বলা মানে দাতাকেই উত্তম বলা। স্বাভাবিক দান আর জাকাত আলাদা জিনিস।
দান মানুষ সবসময় করবে। কিন্তু জাকাত সবসময় দেবে না। এক বছর পূর্ণ হলে পরই জাকাত আদায় করবে। বেশি পুণ্য লাভের আশাতে জাকাতও অনেকে রমজানে দেন। ক্ষুধার্তকে পানাহার করান। মহান আল্লাহ বলেন, ‘আমরা কি দেইনি তাকে দুটি চোখ? এবং জিহ্বা ও দুটি ঠোঁট? আর আমরা তাকে দেখিয়েছি দুটি পথ। কিন্তু সে তো গিরিসংকটে প্রবেশ করেনি। তুমি কি জান গিরিসংকট কী? তা হল দাস মুক্তি। অথবা ক্ষুধার দিনে অন্নদান করা ইয়াতিম নিকটাত্মীয়কে। অথবা ভূলুণ্ঠিত অভাবগ্রস্তকে। [সূরা বালাদ ৯০/৮-১৬]। কৃতজ্ঞতা আদায় করা একজন মুমিনের শ্রেষ্ঠ গুণ। অকৃতজ্ঞকে কেউ দেখতে পারে না। কৃতজ্ঞতা আদায়ে দুনিয়া ও আখিরাতে বান্দার সম্মান ও সম্পদ বৃদ্ধি পায়। মহান আল্লাহ বলেন, যদি তোমরা কৃতজ্ঞতা স্বীকার কর, তা হলে আমি অবশ্যই তোমাদের বেশি বেশি করে দেব। [সূরা ইবরাহিম ১৪/৭]। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ক্ষুধার্তকে খাদ্য দান করতে বিশেষভাবে নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, তোমরা ভিক্ষুক (ক্ষুধার্তকে) কিছু না কিছু দাও, আগুনে পোড়া একটা খুর হলেও’।[নাসাঈ শরিফ] রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম- এর পূর্ণ আনুগত্যকারী উম্মত হওয়ার জন্য ক্ষুধার্তকে খাদ্য দান করতে হবে। কেবল নিজে খেলে চলবে না। আল্লাহর রাসূল বলেছেন, নিশ্চয়ই সে ব্যক্তি পূর্ণ মুমিন নয় যে নিজে পেট ভরে আহার করে কিন্তু তার প্রতিবেশী ক্ষুধার্ত থাকে। [বায়হাকি] মুসলিম মানে হল আত্মসমর্পণকারী। বলেছেন, যে লোক তার কোনো ভাইয়ের অভাব পূরণের চেষ্টা করে মহান আল্লাহ তার অভাব পূরণ করবেন। [মুসলিম শরিফ] মানুষকে ভালোবেসে ইহজগৎ সুন্দর করতে পারলে পরকাল নিশ্চিত সুন্দর হবে- আল্লাহতায়ালা আমাদের তাওফিক দিন মানুষকে ভালোবাসতে।
লেখক : বাংলাদেশ জমিয়তুল উলামার চেয়ারম্যান
ও ঐতিহাসিক শোলাকিয়ার গ্র্যান্ড ইমাম
লেখক : বাংলাদেশ জমিয়তুল উলামার চেয়ারম্যান
ও ঐতিহাসিক শোলাকিয়ার গ্র্যান্ড ইমাম
No comments