পানির তীব্র সঙ্কটে ব্যাঙ্গালোর
ভারতের দ্রুত বর্ধনশীল শহরগুলোর একটি ব্যাঙ্গালোর। বিশ্বজুড়ে এর পরিচিতি রয়েছে সিলিকন ভ্যালি হিসেবে। তথ্য প্রযুক্তির শহর জুড়ে এর যেমন সমাদর রয়েছে তেমনি রয়েছেন নয়নাভিরাম সুউচ্চ আকাশছোঁয়া ভবনও। কিন্তু এর ভিন্ন দিকও রয়েছে। শহরটির এমন চমকপ্রদ বৈশিষ্ট্যের বিপরীতে সবচেয়ে বড় সংকট হলো পানির সংকট। পরিস্থিতি এমন যে বলা হচ্ছে দ্রুতই শুকিয়ে যাচ্ছে ব্যাঙ্গালোর। সন্দেহ নেই এটাই ভারতের প্রথম কোন শহর যেটি চলছে রীতিমত পানি ছাড়াই। সকালে বাসা থেকে বের হলেই দেখা যায় শুরু হচ্ছে সকালের কর্মব্যস্ততা আর এ সময়টাতেই আপনি দেখবেন শহরের রাস্তায় রাস্তায় অসংখ্য ট্যাংকার। তারা নিয়ে যাচ্ছে এখন এই মূহুর্তে শহরের সবচেয়ে দামী পণ্য- পানি। কেন এটি এতো দামি হয়ে উঠলো। পানি ট্যাংকার অপারেটর হরিশ সেটিই ব্যাখ্যা করছিলেন। ‘আমরা যদি পানি সরবরাহ না করি তাহলে অন্যরা তো কোন পানিই পাবে না। আগে সবই ছিলো নিচু জমি। লোকজন পানি তুলে চাষাবাদ করতো। পানিও পাওয়া যেতো সহজে। ওই সময় ৩০০ ফুট গভীরেই পানি পাওয়া যেতো। এরপর এটি ৫শ’, ৭শ’ ৫০, এক হাজার, বারো শ’ ফুট। আর এখন ১৪শ’ থেকে পনেরশ’ ফুট গভীরে যেতে হয় পানির জন্য।’ এখন নানা কোম্পানি পানির গভীর জলাধার খুড়ে সেখান থেকে পানি সংগ্রহ করে তা পৌঁছে দেয় গ্রাহকের কাছে। আর এজন্য মাটি খুঁড়তে হয় এক থেকে দেড় হাজার ফুট গভীর পর্যন্ত। এমন জলাধার থেকে ট্যাংকার ভর্তি করে পানি নিয়ে গাড়ি রওনা হয় শহরের নানা জায়গায়।
প্রতিদিন লাখ লাখ লিটার ভর্তি পানি নিয়ে হাজার হাজার ট্যাংকার প্রতিদিন এভাবে ছুটে চলে ব্যাঙ্গালোর শহরের আনাচে কানাচে। এটি ভারতের সবচেয়ে দ্রুত বর্ধনশীল শহরগুলোর একটি। কিন্তু এর প্রচলিত যেসব পানির উৎস ছিলো সেগুলো এখন শুকিয়ে গেছে। যেটুকু বাকী আছে তার পানিও চরমভাবে দূষিত হয়ে পড়ছে। আর সে কারণেই শহরটির বহু মানুষ এখন নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে বেসরকারি পানি সরবরাহকারীদের ওপর। আর এই পানি সরবরাহের বিষয়টিও এখন নিয়ন্ত্রণ করে একটি চক্র, যাদের বলা হয় ওয়াটার মাফিয়া। সফটওয়্যার পেশাজীবী সুবির বোস বসবাস করেন একটি কমপ্লেক্সে, যেখানে বাস করে আরও অন্তত দুশো পরিবার, যাদের সবসময় পানি বাহী ট্যাংকার অপারেটরদের দয়ার ওপর নির্ভর করতে হয়। ‘আমার মনে হয় এটি আসলে একটি চক্র বা জোটবদ্ধ হয়ে কাজ করার মতো। কিন্তু এটা এমন কিছু যা নিয়ে লোকজন প্রকাশ্যে কিছু বলতে চায় না। আমরা এখনো পানি পাচ্ছি কিন্তু এর গুনগত মান নিয়ে বেশ সংশয় আছে। তাদের সাথে আলোচনা করাই কঠিন। পানির দাম প্রতিনিয়ত বেড়েই চলেছে। কারণ এর চাহিদাও আছে অনেক। কিন্তু কোনো কথাই এ নিয়ে বলা যায় না।’ ব্যাঙ্গালোরে প্রায় চার লাখ পানির কূপ রয়েছে যাতে করে প্রতিনিয়ত শেষ হচ্ছে মাটির নিচের পানি। পরিবেশ কর্মী এস বিশ্বনাথের মতে, প্রতিদিন শহরটিতে প্রয়োজন হয় অন্তত ৪ থেকে ৫শ’ মিলিয়ন লিটার পানি। সে কারণে কূপগুলো যদি শুকিয়ে যায় তাহলে প্রাণ হারাতে শুরু করবে শহরটি। ‘সে কারণে এই কূপগুলো আবার সক্রিয় করা কিংবা পুনরুজ্জীবিত করাটাই এখন বড় সংকটের বিষয়। অথচ ১৮৯০ সালের দিকে ব্যাঙ্গালোরই পানি ব্যবস্থাপনায় পাইওনিয়ার ছিলো। এ শহরকে এখনকার সংকট সমাধানেও আবার সেভাবেই নতুন করে এগিয়ে আসতে হবে।’ সূত্র: বিবিসি
No comments