কাগজপত্র দেখাতে ফের ব্যর্থ আপন জুয়েলার্স
পাঁচটি শোরুম থেকে জব্দ করা প্রায় সাড়ে ১৩ মণ স্বর্ণ ও ৪২৭ গ্রাম হীরার কাগজপত্র দেখাতে ফের ব্যর্থ হয়েছেন আপন জুয়েলার্সের তিন মালিক। ওইসব স্বর্ণালংকারের সঠিক কোনো ব্যাখাও দিতে পারেননি তারা। মঙ্গলবার আপন জুয়েলার্সের মালিক দিলদার আহমেদ ও তার দুই ভাই গুলজার আহমেদ এবং আজাদ আহমেদকে রাজধানীর কাকরাইলে শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতর কার্যালয়ে তলব করা হয়। এদিন বেলা ১১টা থেকে প্রায় চার ঘণ্টা তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। তারা বৈধ কাগজপত্র উপস্থাপন না করে তৃতীয়বারের মতো সময়ের আবেদন করেন। এর আগে দুই দফা সময় নিয়েও বৈধ কাগজপত্র দেখাতে পারেননি তারা। জিজ্ঞাসাবাদের সময় তাদের তিন আইনজীবী ব্যারিস্টার তাইফুল সিরাজ, অ্যাডভোকেট আক্তার ফাহাদ জামান ও অ্যাডভোকেট নাসির উদ্দিন লিংকন উপস্থিত ছিলেন। জিজ্ঞাসাবাদের পর শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতরের যুগ্ম পরিচালক মোহাম্মদ সাফিউর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, কাগজপত্র না থাকায় এখন তারা সময়ক্ষেপণের কৌশল নিয়েছেন। তাই আবারও সময় চেয়েছেন। তবে এবার তারা সময়ের কোনো ট্রাইমফ্রেম দেননি। কিন্তু শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতরের পক্ষে অফুরন্ত সময় দেয়া সম্ভব নয়। কারণ কাস্টমস আইনে কোনো পণ্য সাময়িকভাবে আটকের পর ২ মাসের মধ্যেই প্রতিবেদন দাখিলের মাধ্যমে মামলা দিতে হয়। ইতিমধ্যে আপন জুয়েলার্স কর্তৃপক্ষ দুই সপ্তাহের বেশি সময় পেয়েছে। অথচ যেখানে স্বর্ণ ছিল সেখানেই ব্যাখ্যা থাকা উচিত ছিল। তাই আপন জুয়েলার্সকে আর সময় নাও দেয়া হতে পারে। গোয়েন্দা অধিদফতর থেকে বেরিয়ে যাওয়ার সময় ব্যারিস্টার তাইফুল সিরাজ বলেন, ‘জব্দ করা মালামালের বৈধ হিসাব দিতে আমাদের ডাকা হয়েছিল। আমরা পাঁচটি ইউনিটের বিভিন্ন উৎস থেকে জব্দ করা মালামালের একটি উৎসের কাগজপত্র জমা দিয়েছি। বাকি মালামালের হিসাব দেয়ার জন্য আমাদের আরও সময় প্রয়োজন। তাই সময় চেয়েছি।’ কতদিন সময় চাওয়া হয়েছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, নির্ধারিত কোনো সময় উল্লেখ করা হয়নি। সাড়ে ১৩ মণ স্বর্ণের মধ্যে কত কেজি স্বর্ণের কাগজপত্র দেয়া হয়েছে জানতে চাইলে তিনি একবার বলেন, ৭০-৮০ কেজি স্বর্ণের হিসাব দেয়া হয়েছে। আবার বলেন, ৫০-৬০ কেজি স্বর্ণালংকারের হিসাব দেয়া হয়েছে। তবে গোয়েন্দা অধিদফতরের যুগ্ম পরিচালক মোহাম্মদ সাফিউর রহমান বলেন, ‘আপন জুয়েলার্সের পক্ষ থেকে মঙ্গলবার আনুমানিক ১২৫ কেজি সোনার হিসাব দেয়া হয়েছে। তবে এ হিসাব জব্দ করা সোনার সঙ্গে সম্পৃক্ত নয়।
তারা স্বর্ণের যে হিসাব দিয়েছেন, এগুলো লাগেজ সুবিধায় দেশের বাইরে থেকে আনা। যে কোনো যাত্রী নিজের ব্যবহারের জন্য ওই পরিমাণ স্বর্ণ বিদেশ থেকে আনতে পারেন। কিন্তু প্রশ্ন হল সব যাত্রী নিজেদের ব্যবহারের জন্য স্বর্ণ এনে তাদের কাছে বিক্রি করেন? এসব স্বর্ণ কেনার কাগজপত্র এবং পারচেজ রেজিস্টারের সঙ্গে গরমিল রয়েছে।’ তিনি জানান, সিলগালা করা শোরুমগুলো গত ২৫ মার্চ খোলা হয়েছিল। সেদিনও শোরুম কর্তৃপক্ষ কাগজপত্র দেখাতে পারেনি। গত ২৮ মার্চ রাতে রাজধানীর বনানীর ‘দ্য রেইনট্রি’ হোটেলে আপন জুয়েলার্সের মালিক দিলদার আহমেদের ছেলে সাফাত আহমেদের জন্মদিনের অনুষ্ঠানে গিয়ে রাতভর ধর্ষণের শিকার হন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই ছাত্রী। ধর্ষণের ঘটনার ভিডিওচিত্র ধারণ করে সাফাতের গাড়িচালক বিল্লাল হোসেন। আরেক ধর্ষক হিসেবে নাঈম আশরাফের নাম প্রকাশিত হয়। দুই ধর্ষকের সহযোগী সাদমান সাকিফ ‘রগনাম গ্রুপ’-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক। অপর আসামি আবুল কালাম আজাদ সাফাতের দেহরক্ষী। ধর্ষণের ঘটনায় গত ৬ মে দুই ছাত্রী বনানী থানায় মামলা করেন। পরে শুল্ক গোয়েন্দা কর্মকর্তারা অভিযান চালান আপন জুয়েলার্সের শোরুমে। অবৈধ উল্লেখ করে জব্দ করা হয় বিপুল পরিমাণ স্বর্ণালংকার। এ ব্যাপারে ১৭ মে আপন জুয়েলার্সের মালিকদের তলব করা হয়। পরে ২৫ মে শোরুমগুলোতে গিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেন গোয়েন্দারা। ওই সময় জব্দ করা স্বর্ণালংকারের কাগজপত্র দেখাতে মঙ্গলবার বেলা ১১টা পর্যন্ত সময় নিয়েছিল আপন জুয়েলার্স কর্তৃপক্ষ।
No comments