মিরসরাই উপকূলে চাঁদাবাজিতে অতিষ্ট জনগন
চট্টগ্রামের মিরসরাই উপজেলার ১১নং মঘাদিয়া ইউনিয়নের উপকূলীয় এলাকায় পুলিশের সোর্স পরিচয়ে প্রায় প্রতিদিন ব্যাপক চাঁদবাজির অভিযোগ উঠেছে। ভূক্তভোগীদের অভিযোগ, সন্ধ্যা নামার সঙ্গে সঙ্গেই সিভিল পোশাকে পুলিশের সাথে উপকূলীয় এলাকার বাজার বদিউল্লাহ পাড়ায় আসে পুলিশের সোর্স। উপকূলীয় এলাকার খেটে খাওয়া মানুষ সন্ধ্যার পরপরই নিত্যপ্রয়োজনীয় কেনাকাটার জন্য বাজারে আসার সময় এবং বাজার শেষে বাড়িতে যাওয়ার সময় প্রথমে পুলিশের র্সোস পরিচয় দিয়ে প্রায় প্রতিদিন কাউকে না কাউকে আটক করা হয়। পরে তার দেহ তল্লাশির সময় কৌশলে তার পকেটে ঢুকিয়ে দেয়া হয় বিভিন্ন মাদকদ্রব্য যেমন, ইয়াব ও গাঁজা ইত্যাদি। পরে তার কাছে মাদক দ্রব্য পাওয়া গেছে বলে দাবি করা হয় মোটা অংকের টাকা। এলাকাবাসীর অভিযোগ কখনোই আটককৃতদের থানায় নেওয়া হয়না, তাদেরকে বিভিন্ন অংকের টাকার বিনিময়ে কিছুক্ষন পর ছেড়ে দেয়া হয়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এই টাকা নেওয়ার দরকষাকষির দায়িত্ব পালন করে মিরসরাই থানা পুলিশের সোর্স মো. রাজু ওরফে (কালাইয়্যা)। এ ব্যাপারে সাম্প্রতিক সময়ে ভূক্তভোগী ১১নং মঘাদিয়া ইউনিয়নের বদিউল্লাপাড়া গ্রামের গুরা মিয়ার পুত্র আবদুল মন্নান (২৫) বলেন, গত ২৬ মে (শুক্রবার) সন্ধ্যায় আমি ব্যবসায়িক কারনে নোয়াপাড়া মসজিদের সামনে আসলে তিনজন সিভিল পোশাকের পুলিশ ও পুলিশের র্সোস রাজু আমাকে আটক করে আমার পরনের শার্ট ছিড়ে ফেলে। এসময় পুলিশের সোর্স রাজু আমার পকেটে থাকা নগদ বিশ হাজার টাকা নিয়ে আমাকে ছেড়ে দেয়। পরে বিষয়টি আমি স্থানীয় ১১ নং মঘাদিয়া ইউনিয়নের ৯ নং ওয়ার্ডের মেম্বার মো. ইউনুসকে বললে তিনি বিষয়টি সুরাহা করবেন বলে আমাকে আশ্বাস দেয়।
পরবর্তিতে শনিবার সন্ধ্যায় এ বিষয়ে মিরসরাই থানার সামনের সালিস ঘরে বিষয়টি নিয়ে দুই জন পুলিশ, ইউনুস মেম্বার ও আমার উপস্থিতিতে আমাকে উক্ত টাকা ফেরত দেয়ার আশ্বাস দেয়া হয়। এসময় পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয় আমার কাছ থেকে ওই বিশ হাজার টাকা পুলিশের সোর্স রাজু নিয়েছিলো। এ ব্যাপারে আরেক ভূক্তভোগি ব্যবসায়ী আবু তাহের জানান, কিছুদিন আগে সিভিল পোশাকের তিন জন পুলিশ সহ পুলিশের সোর্স রাজু বদিউল্লাহ পাড়ায় অবস্থিত আমার ভাইয়ের দোকানে গিয়ে আমাকে আটক করার চেষ্টা করে। এক পর্যায়ে আমি দোকান থেকে পালিয়ে যেতে বাধ্য হই। পরে পুলিশ আমার দোকান ভাংচুর করে এবং দোকানের ক্যাশ বক্সে থাকা টাকা পয়সা নিয়ে যায়। অপর এক ভূক্তভোগি মো. আজমির (১৬) জানান, মাস দেড়েক আগে পুলিশের সোর্স রাজু আমাকে আটক করে জোর করে আমার পকেটে লাল একটা বড়ি (ইয়াবা) ঢুকিয়ে দিয়ে আমাকে মারধর করে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছিলো। পরে এখানকার ছাত্রনেতা শওকতের মধ্যস্থতায় আমাকে ছেড়ে দেয়া হয়। এর আগেও একবার আমাকে ধরে ব্যাপক মারধর করে এবং আমার কাছ থেকে এক হাজার টাকা নিয়ে যায়। এছাড়া পুলিশের সোর্স রাজুর বিরুদ্ধে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে চলাচল করা গাড়ি থামিয়ে চাঁদাবাজির অভিযোগও রয়েছে। রাতের বেলায় সড়কের বিভিন্ন স্থানে গাড়ি দাঁড় করিয়ে টাকা নেয় সে। গাড়ি থেকে টাকা নেয়ার সময় দুই বছর পূর্বে উপজেলার নিজামপুর কলেজ এলাকায় দুর্ঘটনার কবলে পড়ে সে। দীর্ঘ সময় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকার পর ফিরে আবার পুনরায় চাঁদাবাজিতে লিপ্ত হয়। এ বিষয়ে পুলিশের সোর্স রাজুর কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমার বিরুদ্ধে এসব অভিযোগ পুরোটা মিথ্যা ও বানোয়াট। আমি এসব বিষয়ে কিছুই জানিনা। এ ব্যাপারে মধাদিয়া ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ডের মেম্বার মো. ইউনুস বলেন, প্রায় প্রতিদিনই পুলিশের এ এস আই আনোয়ার, এ এস আই শওকত ও পুলিশের সোর্স রাজু আমাদের বদিউল্লাহ পাড়ায় এসে মাদকদ্রব্য উদ্ধারের নামে সাধারণ জনগনকে ধরে হয়রানি করে। ব্যাপারটি আমি মঘাদিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সাহেবকে মৌখিক ভাবে জানিয়েছি। ভূক্তভোগী মন্নানের টাকা ফেরতের বিষয়ে থানার সালিস ঘরে বৈঠকের বিষয়টি স্বীকার করে তিনি বলেন, গত শনিবার (২৭ মে) সন্ধ্যা ৭ টায় মিরসরাই থানার উচ্চপদস্থ কয়েকজন অফিসার সহ মন্নানের টাকা ফেরত দেয়ার ব্যাপারে একটি বৈঠক হয়েছিলো। এ ব্যাপারে মঘাদিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর হোসাইন মাষ্টার জানান, আমি বেশ কিছুদিন দেশের বাইরে ছিলাম। তাছাড়া এ বিষয়ে আমার কাছে এখনো পর্যন্ত নির্দিষ্ট ভাবে কেউ এ ব্যাপারে অভিযোগ দেয়নি। তবে বিষয়টি নিয়ে আমি এবার উপজেলা সমন্বয় সভায় আলোচনা করবো। এ বিষয়ে জানতে চাইলে মিরসরাই থানার ওসি তদন্ত মো. জাকির হোসেন বলেন, পুলিশের সোর্সের চাঁদাবাজির বিষয়ে আমি কিছু জানিনা এবং পুলিশের সোর্স রাজু নামের কাউকে আমি চিনিনা। পুলিশের সোর্স রাজু কতৃক নেয়া টাকার ব্যাপারে মিরসরাই থানায় কোন বৈঠকের বিষয়ে আমি অবগত নই। তবে মঘাদিয়া ইউনিয়নের একজন মেম্বার কাল থানায় এসেছিলো। এ ব্যাপারে ওসি স্যার থানায় আসলে আমরা বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করে ব্যবস্থা নেবো।
No comments