কানুর ক্যামেরায় মহাত্মা গান্ধী
গ্রামটির নাম তিনি নিজেই দিয়েছিলেন সেবাগ্রাম। ভারতের মহারাষ্ট্রের এই গ্রামে মহাত্মা গান্ধী আশ্রম প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। সেই আশ্রমে তাঁর সঙ্গে ছিলেন দৌহিত্র কানু গান্ধী। ২০ বছরের কানুর সঙ্গী তখন রোলিফ্লেক্স ক্যামেরা। মহাত্মার দুর্লভ সাহচর্যে তাঁর জীবনের শেষ ১০ বছরে ২ হাজারেরও বেশি ছবি তুলেছিলেন কানু। সেসব দুর্লভ ছবির মধ্যে ৯২টি ছবি নিয়ে দিল্লি-ভিত্তিক নজর ফাউন্ডেশন একটি অ্যালবাম বের করেছে। কার ছবি নেই সেখানে? গান্ধীজির সঙ্গে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, জওহরলাল নেহরু বা নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসুর মতো ব্যক্তিদেরও ছবি পাওয়া গেছে। বিখ্যাত ব্যক্তিদের সঙ্গে থাকা এসব ছবি হয়তো খুঁজে পাওয়া যেতে পারে। কিন্তু মুম্বাইয়ে বিড়লা সেন্টারে নিজের ওজন পরীক্ষারত গান্ধী, স্ত্রী কৌস্তর্ভর মরদেহের পাশে বসে থাকা গান্ধী কিংবা টেলিফোনে আলাপরত গান্ধীর ছবি আর কার পক্ষে পাওয়া সম্ভব ছিল কানু ছাড়া? কানু চিকিৎসক হতে চেয়েছিলেন। কিন্তু তাঁর মা-বাবা তাঁকে মহাত্মার ব্যক্তিগত কর্মকর্তা হিসেবে কাজে যুক্ত করেন। তিনি সেবাগ্রাম আশ্রমের হিসাবরক্ষণ এবং চিঠিপত্র লেখার কাজ করতেন। কানুর ছবি তোলার শখ ছিল বেজায়। তবে মহাত্মা কানুকে বলেছিলেন, ক্যামেরা কিনে দেওয়ার মতো অর্থ তাঁর নেই। নাছোড় কানু এতে দমে যাননি। ব্যবসায়ী ঘনশ্যাম দাস বিড়লাকে গান্ধী অনুরোধ করেছিলেন কানুকে এক শ রুপি দিতে। এই টাকায় কানু ক্যামেরা আর ফিল্মের রোল কিনেছিলেন।
ক্যামেরা কেনার পর অবশ্য গান্ধী তিনটি শর্ত জুড়ে দিয়েছিলেন নাতির জন্য। এক, ফ্লাশ ব্যবহার করা যাবে না। দুই, গান্ধীকে কখনোই ছবির জন্য পোজ দিতে বলা যাবে না। তিন, আশ্রম কানুকে ছবি তোলার জন্য এক পয়সাও দেবে না। কানু মহাত্মার এক ভক্তের কাছে থেকে পাওয়া বৃত্তির টাকা এবং পত্রিকায় ছবি বিক্রির টাকায় তাঁর ছবি তোলার শখ মেটাতেন। ১৯৪৮ সালে মহাত্মা গান্ধী নিহত হওয়ার আগে পর্যন্ত কানু ভারতের এই মহান নেতার দুই হাজারের বেশি ছবি তুলেছেন। নজর ফাউন্ডেশনের দুই কৃতি চিত্রগ্রাহক প্রশান্ত পানজিয়ার ও দীনেশ খান্না দুর্লভ সেসব ছবি নিয়ে ১৫০ পৃষ্ঠার একটি বই প্রকাশ করেছেন। অহিংস আন্দোলনের প্রাণপুরুষ মহাত্মার ব্যক্তিগত জীবনযাপনের পাশাপাশি বিভিন্ন আন্দোলনের ছবি স্থান পেয়েছে এ বইটিতে। পানজিয়ার বলেন, ‘গান্ধীর কাছে ভিড়তে পারার অসামান্য সুযোগ ছিল কানুর। কিন্তু ছবিগুলো দেখলে বোঝা যায়, গান্ধীর সঙ্গে অত্যন্ত শ্রদ্ধাপূর্ণ এক দূরত্ব বজায় রাখতেন তিনি। আধুনিক ফটোগ্রাফির নানা কলাকৌশল কানু সজ্ঞানেই জেনেছিলেন। তিনি প্রথাগত ছবির কাঠামো ভেঙে নানা ধরন ও বিন্যাসে ছবি তুলেছেন।’ গান্ধীর মৃত্যু কানু ও তাঁর স্ত্রী আভার জীবনে বিরাট প্রভাব ফেলে। পানজিয়ারের ভাষায়, ‘ছবি তোলার চেয়ে কানুর কাছে গুরুত্বপূর্ণ ছিল গান্ধীর সুমহান আদর্শকে তুলে ধরা।’ কানু গান্ধী মারা যান ১৯৮৬ সালে। তবে রেখে যান অমর কিছু চিত্র। সূত্র: বিবিসি
No comments