তুরস্কের বিরুদ্ধে কী পদক্ষেপ নেবে রাশিয়া? by নাজমুল আহসান
তুরস্ক-সিরিয়া
সীমান্তে রাশিয়ার একটি যুদ্ধবিমান তুরস্ক ভূপাতিত করার পর অনেক আশঙ্কাই
দানা বেঁধেছিল। অনেক বিশ্লেষক সতর্ক করে দিয়ে বলেছিলেন, রাশিয়া ন্যাটোভুক্ত
তুরস্কে পালটা আঘাত হানলে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ বেঁধে যেতে পারে। সব উত্তেজনায়
পানি ঢেলে রাশিয়ান পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভ জানিয়ে দেন, তুরস্কের
সঙ্গে যুদ্ধ করার কোন পরিকল্পনা রাশিয়ার নেই। তাই বলে কি এ অপমান চুপচাপ
হজম করবে রাশিয়া? এ প্রশ্নের উত্তর দিয়েছে বিবিসি। বিবিসি জানিয়েছে, ওই
ঘটনার পর তুরস্কের ওপর বিস্তৃত আকারে অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করবে
রাশিয়া। বৃহসপতিবার তুর্কি সামরিক বাহিনীর সঙ্গে সব ধরনের যোগাযোগ চ্যানেল
বাতিল করেছে রাশিয়ার সেনাবাহিনী। আকাশে দুর্ঘটনা ও সংঘর্ষ এড়াতে দু’দেশের
মধ্যে স্থাপিত হটলাইনও বাতিল করা হয়েছে। প্রসঙ্গত, তুরস্ক ও রাশিয়ার মধ্যে
উত্তেজনা অনেকদিন ধরেই ক্রমান্বয়ে বাড়ছিল। তুরস্ক প্রতিবেশী সিরিয়ার
প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদের কট্টর বিরোধিতা করে আসছে, এমনকি সরকারবিরোধী
বিদ্রোহীদের সরাসরি সহায়তা দিয়ে আসছে। কিন্তু দীর্ঘদিনের মিত্র আসাদের
পক্ষে সমপ্রতি রাশিয়ান বাহিনী সিরিয়ায় নামলে, দু’দেশের তিক্ততা নতুন রূপ
লাভ করে। এরই ধারাবাহিকতায় তুর্কি বাহিনী রাশিয়ান বিমান ভূপাতিত করলে
দ্বন্দ্ব চরম আকার ধারণ করে। পাল্টা ব্যবস্থা হিসেবে সিরিয়ায় অত্যাধুনিক
ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা এস-৪০০ মোতায়েন করেছে রাশিয়া। এ ছাড়া
তীব্র গোলাবর্ষণ হয়েছে সিরিয়া-তুরস্ক সীমান্তবর্তী এলাকায়, যেখানে মূলত
তুর্কম্যানদের বসবাস। হুমকির মুখে পড়তে যাচ্ছে দেশ দু’টির যৌথ বিনিয়োগ
প্রকল্প। তুর্কি খাদ্য আমদানির ওপর নিয়ন্ত্রণ ও নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে
যাচ্ছে রাশিয়া। ইতিমধ্যে দেশটি বলেছে, তুর্কি খাদ্যসামগ্রীর অন্তত ১৫
শতাংশের গুণগত মান ভালো নয়। এর আগেও শত্রুভাবাপন্ন অনেক দেশের বিরুদ্ধে এ
অস্ত্র ব্যবহার করেছে রাশিয়া। তুরস্কের সঙ্গে বেশ গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক
সংযোগ রয়েছে রাশিয়ার। জার্মানির পর তুরস্কের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনৈতিক
আংশীদার হলো রাশিয়া। রাশিয়ান পর্যটকদের সবচেয়ে বড় বিদেশি গন্তব্যও তুরস্ক।
ফলে রাশিয়ার অর্থনৈতিক প্রতিশোধ ভালোভাবেই টের পাবে তুরস্ক। অবশ্য রাশিয়াও
ক্ষতি পুরোপুরি এড়াতে পারবে না। যেসব খাতে এ নিষেধাজ্ঞার প্রভাব পড়বে বেশি,
সেগুলো হলো পর্যটন, প্রাকৃতিক গ্যাস, পারমাণবিক জ্বালানি, অবকাঠামো ও
পোশাক খাত ইত্যাদি।
পর্যটন: তুরস্ক হলো রাশিয়ান পর্যটকদের সবচেয়ে বড় গন্তব্য। গত বছর প্রায় ৩২ লাখ রাশিয়ান পর্যটক তুরস্ক ভ্রমণে গিয়েছিল। মিশরে গিয়েছিল ২৫ লাখ রাশিয়ান। গত বছরের আগে তুরস্কে সবচেয়ে বেশি বিদেশি পর্যটক আসতো রাশিয়া থেকে। কিন্তু রুবলের দর পড়ে যাওয়ায় গত বছর জার্মান পর্যটকরা ওই স্থান দখলে নেয়। মিশরের সিনাইয়ে ৩১শে অক্টোবর রাশিয়ান যাত্রীবাহী বিমান সন্ত্রাসী হামলায় বিধ্বস্ত হলে, মিশরে নিজ দেশের পর্যটকদের ভ্রমণের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে রাশিয়ার কর্তৃপক্ষ। এই ফাঁকে, তুরস্কে রাশিয়ান পর্যটকদের সংখ্যা ও বুকিং বাড়ছিল। কিন্তু রাশিয়ান অর্থনৈতিক প্রতিশোধের মধ্যে এ অবস্থা বেশিদিন থাকবে না।
প্রাকৃতিক গ্যাস: ২০১৩ সালে নিজেদের মোট প্রাকৃতিক গ্যাসের ৫৭ শতাংশ রাশিয়ার কাছ থেকে কিনেছে তুরস্ক। জার্মানির পর রাশিয়ান গ্যাসের সবচেয়ে বড় ক্রেতা হলো দেশটি। জার্মানি যেখানে রাশিয়া থেকে ৩৬০০ কোটি কিউবিক মিটার গ্যাস কিনেছে, তুর্কি কিনেছে ২৭৩০ কোটি কিউবিক মিটার। রাশিয়া থেকে তুরস্কে গ্যাস যায় দুইটি পথে- কৃষ্ণসাগর হয়ে ব্লু স্ট্রিম পাইপলাইন এবং রোমানিয়া, ইউক্রেন, মালদোভা হয়ে আরেকটি গ্যাস কোরিডোরের মাধ্যমে। ২০১৪ সালের ডিসেম্বরে তুর্কি ও রাশিয়ান প্রেসিডেন্ট ঘোষণা দেন, ইউক্রেন এড়িয়ে তুরস্ক ও ইউরোপে ৬৩০০ কোটি কিউবিক মিটার রাশিয়ান গ্যাস সরবরাহের জন্য নতুন পাইপলাইন (তুর্কি স্ট্রিম) নির্মিত হবে। কিন্তু ওই পাইপলাইন নির্মাণের কাজ বন্ধ হয়ে গেছে।
পারমাণবিক জ্বালানি: তুরস্ক নিজের প্রায় সমপূর্ণ জ্বালানি বিদেশ থেকে আমদানি করে। ২০১২ সালে তুরস্কের প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণে মস্কো ও আঙ্কারার মধ্যে চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। এতে করে প্রতি বছর জ্বালানি আমদানি ব্যয়ের ১৪০০ কোটি ডলার বাঁচবে তুরস্কের। মার্সিন প্রদেশে ওই পারমাণবিক কেন্দ্রের কাজ চলছে। ওই কেন্দ্রে ইতিমধ্যেই ৩০০ কোটি ডলার বিনিয়োগ করেছে রাশিয়া। কিন্তু সিরিয়ায় রাশিয়ার সামরিক কর্মকাণ্ডের দরুন ওই রাশিয়ান বিনিয়োগ হুমকির মুখে পড়তে পারে বলে সতর্ক করে দেয় তুর্কি কর্তৃপক্ষ। এমনকি তুর্কি প্রেসিডেন্ট অক্টোবরে ঘোষণা দেন, যদি ওই বিদ্যুৎ কেন্দ্র রাশিয়ানরা তৈরি না করে, অন্য কেউ এগিয়ে আসবে ও নির্মাণ করে দেবে।
অবকাঠামো ও পোশাক খাত: রাশিয়ায় প্রায় ১০০টি তুর্কি অবকাঠামো নির্মাণ কোমপানি কাজ করছে। ১৯৮০’র পর থেকে রাশিয়ায় ৮ শতাধিক প্রকল্প নির্মাণ করেছে তুর্কি প্রতিষ্ঠানগুলো। এ ছাড়া রাশিয়ার বাজারের বহু ব্র্যান্ডে শেয়ার আছে তুর্কি বিনিয়োগকারীদের। যেমন, তেভোলিনা শো, গ্লোরিয়া জিনসসহ খাদ্য ও রাসায়নিক শিল্পে।
ইতিমধ্যেই রাশিয়ার প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য থেকে আঁচ করা যাচ্ছে, এ খাতেও নিষেধাজ্ঞা আরোপের পরিকল্পনা রয়েছে দেশটির।
পর্যটন: তুরস্ক হলো রাশিয়ান পর্যটকদের সবচেয়ে বড় গন্তব্য। গত বছর প্রায় ৩২ লাখ রাশিয়ান পর্যটক তুরস্ক ভ্রমণে গিয়েছিল। মিশরে গিয়েছিল ২৫ লাখ রাশিয়ান। গত বছরের আগে তুরস্কে সবচেয়ে বেশি বিদেশি পর্যটক আসতো রাশিয়া থেকে। কিন্তু রুবলের দর পড়ে যাওয়ায় গত বছর জার্মান পর্যটকরা ওই স্থান দখলে নেয়। মিশরের সিনাইয়ে ৩১শে অক্টোবর রাশিয়ান যাত্রীবাহী বিমান সন্ত্রাসী হামলায় বিধ্বস্ত হলে, মিশরে নিজ দেশের পর্যটকদের ভ্রমণের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে রাশিয়ার কর্তৃপক্ষ। এই ফাঁকে, তুরস্কে রাশিয়ান পর্যটকদের সংখ্যা ও বুকিং বাড়ছিল। কিন্তু রাশিয়ান অর্থনৈতিক প্রতিশোধের মধ্যে এ অবস্থা বেশিদিন থাকবে না।
প্রাকৃতিক গ্যাস: ২০১৩ সালে নিজেদের মোট প্রাকৃতিক গ্যাসের ৫৭ শতাংশ রাশিয়ার কাছ থেকে কিনেছে তুরস্ক। জার্মানির পর রাশিয়ান গ্যাসের সবচেয়ে বড় ক্রেতা হলো দেশটি। জার্মানি যেখানে রাশিয়া থেকে ৩৬০০ কোটি কিউবিক মিটার গ্যাস কিনেছে, তুর্কি কিনেছে ২৭৩০ কোটি কিউবিক মিটার। রাশিয়া থেকে তুরস্কে গ্যাস যায় দুইটি পথে- কৃষ্ণসাগর হয়ে ব্লু স্ট্রিম পাইপলাইন এবং রোমানিয়া, ইউক্রেন, মালদোভা হয়ে আরেকটি গ্যাস কোরিডোরের মাধ্যমে। ২০১৪ সালের ডিসেম্বরে তুর্কি ও রাশিয়ান প্রেসিডেন্ট ঘোষণা দেন, ইউক্রেন এড়িয়ে তুরস্ক ও ইউরোপে ৬৩০০ কোটি কিউবিক মিটার রাশিয়ান গ্যাস সরবরাহের জন্য নতুন পাইপলাইন (তুর্কি স্ট্রিম) নির্মিত হবে। কিন্তু ওই পাইপলাইন নির্মাণের কাজ বন্ধ হয়ে গেছে।
পারমাণবিক জ্বালানি: তুরস্ক নিজের প্রায় সমপূর্ণ জ্বালানি বিদেশ থেকে আমদানি করে। ২০১২ সালে তুরস্কের প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণে মস্কো ও আঙ্কারার মধ্যে চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। এতে করে প্রতি বছর জ্বালানি আমদানি ব্যয়ের ১৪০০ কোটি ডলার বাঁচবে তুরস্কের। মার্সিন প্রদেশে ওই পারমাণবিক কেন্দ্রের কাজ চলছে। ওই কেন্দ্রে ইতিমধ্যেই ৩০০ কোটি ডলার বিনিয়োগ করেছে রাশিয়া। কিন্তু সিরিয়ায় রাশিয়ার সামরিক কর্মকাণ্ডের দরুন ওই রাশিয়ান বিনিয়োগ হুমকির মুখে পড়তে পারে বলে সতর্ক করে দেয় তুর্কি কর্তৃপক্ষ। এমনকি তুর্কি প্রেসিডেন্ট অক্টোবরে ঘোষণা দেন, যদি ওই বিদ্যুৎ কেন্দ্র রাশিয়ানরা তৈরি না করে, অন্য কেউ এগিয়ে আসবে ও নির্মাণ করে দেবে।
অবকাঠামো ও পোশাক খাত: রাশিয়ায় প্রায় ১০০টি তুর্কি অবকাঠামো নির্মাণ কোমপানি কাজ করছে। ১৯৮০’র পর থেকে রাশিয়ায় ৮ শতাধিক প্রকল্প নির্মাণ করেছে তুর্কি প্রতিষ্ঠানগুলো। এ ছাড়া রাশিয়ার বাজারের বহু ব্র্যান্ডে শেয়ার আছে তুর্কি বিনিয়োগকারীদের। যেমন, তেভোলিনা শো, গ্লোরিয়া জিনসসহ খাদ্য ও রাসায়নিক শিল্পে।
ইতিমধ্যেই রাশিয়ার প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য থেকে আঁচ করা যাচ্ছে, এ খাতেও নিষেধাজ্ঞা আরোপের পরিকল্পনা রয়েছে দেশটির।
No comments