না দেখার, না শোনার, না বলার বিপদ! by-শিশির ভট্টাচার্য্য
গর্তে পড়া এক শিয়ালের রক্ত শুষে খাচ্ছিল শত শত জোঁক। জোঁকগুলো সরিয়ে দিতে গেলে শিয়াল উপচিকীর্ষু ব্যক্তিকে বাধা দিয়ে বলেছিল: ‘দোহাই, এই অপকারটুকু আমার করবেন না! পেট ভরে গেছে বলে জোঁকগুলো আর নতুন করে রক্ত পান করছে না। এগুলোকে সরিয়ে দিলে নতুন সব জোঁক এসে আমার বাকি রক্ত শুষে নেবে!’ ‘আরব বসন্ত নামে পরিচিত মার্কিন-ইউরোপীয় প্রকল্পে সাদ্দাম-গাদ্দাফি উৎখাত হওয়ার পর থেকে ইশপের গল্পের এই শিয়ালের দুরবস্থায় পড়েছে ইরাক-লিবিয়ার অসহায় জনগণ।
ইরাকে ‘শান্তি’ স্থাপনের পর মার্কিন বাহিনী যখন স্বদেশে প্রত্যাবর্তন করে, তখন বহু অস্ত্রশস্ত্র, যন্ত্রপাতি, গাড়িবহর তারা নাকি ইরাকে ফেলে আসে ইচ্ছা করেই, যাতে আইএস সেগুলো ব্যবহার করতে পারে। কীভাবে, কার অঙ্গুলি হেলনে শত শত মুসলিম তরুণ ইউরোপ-আমেরিকা থেকে মধ্যপ্রাচ্যে গিয়ে জঙ্গি হয়ে গিয়েছিল? এই প্রশ্নগুলো উঠছে। মার্কিন গণমাধ্যমে ইদানীং আর এ নিয়ে কোনো ঢাক ঢাক গুড় গুড় নেই। প্রকাশ্যে বলা হচ্ছে, তালেবান আর আইএস মার্কিন সরকারের সৃষ্টি। লাখ লাখ ÿঅসহায়, নিরপরাধ মানুষকে হত্যা এবং বহু শতকোটি ডলারের সম্পদ ধ্বংসের পর ব্রিটেনের সাবেক প্রধানমন্ত্রী টনি ব্লেয়ারও সম্প্রতি স্বীকার করেছেন: ‘ইরাক আক্রমণ ভুল ছিল।’
পাশ্চাত্য বিদেশনীতির সর্বশেষ মানসপুত্র আইএসকে খতম করতে ইঙ্গো-মার্কিন-ফরাসি সরকার বদ্ধপরিকর। সাদ্দাম-তালেবান কাহিনির করুণ পুনরাবৃত্তি: প্রথমে নিজের স্বার্থে ব্যবহার, প্রয়োজন ফুরিয়ে গেলে সংহার। তালেবান সংহার চলছে আড়াই দশক ধরে। আগামী ৩০ বছরেও নাকি আইএস সংহার সমাপ্ত হবে না। সিরিয়া-ইরাক-আফগানিস্তানে যখন জঙ্গি নিধনের উদ্দেশ্যে বিমান থেকে বোমা নিক্ষেপ করা হয়, তখন নিরপরাধ নাগরিকেরা কি রক্ষা পায়? পাশ্চাত্যের বেশির ভাগ বুদ্ধিজীবী এ প্রশ্নের উত্তর জানতে আগ্রহী বলে মনে হয় না। সুতরাং আরও অনেক দিন তথাকথিত সন্ত্রাসবিরোধী যুদ্ধ চলবে সেই ইঙ্গো-মার্কিন-ফরাসি দেশের নিরপরাধ জনগণের ট্যাক্সের টাকায়, যাদের মাথা বহু দিন ধরে সন্ত্রাসের গিলোটিনের নিচে আটকে আছে।
ধর্ম নয়, যুদ্ধ বা সন্ত্রাসের প্রকৃত নিয়ামক রাজনীতির রাংতায় মোড়ানো অর্থনীতি। পুঁজিবাদী অর্থনীতি কিছুদিন পরপর মন্দার কবলে পড়ে। এর অন্যতম চটজলদি সমাধান, বিশ্বের কোথাও, কোনো অজুহাতে যুদ্ধ লাগিয়ে দেওয়া। যুদ্ধ একবার শুরু হলে অস্ত্র, পোশাক, খাবার, ওষুধ থেকে শুরু করে টয়লেট পেপার পর্যন্ত বহু বিচিত্র জিনিস সরবরাহ করতে হয় হাজার হাজার সেনার জন্য। ফলে কর্মসংস্থান হয়, পুঁজির পরিমাণ ও বিনিয়োগ বেড়ে গিয়ে অর্থনীতির মন্দাভাব কেটে যায়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে আণবিক বোমায় বিধ্বস্ত জাপানের অর্থনীতি কোরিয়ার যুদ্ধের রসদ সরবরাহ করে এক দশকের মধ্যেই ঘুরে দাঁড়িয়েছিল। মধ্যপ্রাচ্যে একের পর এক যুদ্ধের কারণেই মার্কিন ডলার আর ইউরোর দাম কমবেশি স্থির রয়েছে। বাংলাদেশের কাঙ্ক্ষিত অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জন করার পেছনে ডলার-ইউরোর দামের একটা ভূমিকা আছে।
হাতির দুটি মাত্র দাঁত বাইরে থেকে দেখা যায়। বাকি সব দাঁত ভেতরে থাকে এবং চিবানোর মূল কাজটা সেখানেই হয়। আশির দশকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের উদ্যোগে যখন ইরানের ওপর অর্থনৈতিক অবরোধ চলছিল, তখন রিগান সরকার গোপনে ইরানের কাছে অস্ত্র বিক্রি করেছিল। রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিন সম্প্রতি বলেছেন, কমবেশি ৪০টি দেশের সঙ্গে আইএসের লেনদেন রয়েছে। শুধু প্রত্নসম্পদ, জ্বালানি তেল বিক্রি করেই আইএসের দৈনিক আয় নাকি কয়েক মিলিয়ন মার্কিন ডলার।
আলেক্সান্ডার, নেপোলিয়ন, ক্রুসেড যোদ্ধাদের একসময় কষ্ট করে আরব দেশে আসতে হয়েছিল মধ্যপ্রাচ্যের সম্পদ লুট করার জন্য। এখন আরবরা নিজেরাই নিজেদের সম্পদ লুট করে তুলে দিচ্ছে পাশ্চাত্যের হাতে। শুধু কি পশ্চিমারা? প্রতিদিন আইএসের কাছ থেকে তেল কিনছে না আসাদের সরকার? আফগানিস্তানে তালেবানরা কিসের বিনিময়ে আধুনিক অস্ত্র সংগ্রহ করত? ড্রাগ আর প্রত্নসম্পদ ছাড়া মূল্যবান কীই-বা ছিল আফগানিস্তানে? সেই ড্রাগ ইউরোপ-আমেরিকায় পাচার হয়ে সেখানকার তরুণদের অধঃপতন ও মৃত্যুর কারণ হয়েছে। পাচার করা প্রত্নসম্পদ কোনো একদিন প্রদর্শিত হবে পাশ্চাত্যের মিউজিয়ামে। আরব-আফগানদের উত্তর-পুরুষেরা নিজেদের গাঁটের পয়সা খরচ করে সেগুলো দেখতে যাবে।
প্যারিসের সাম্প্রতিক ভয়াবহ সন্ত্রাস, ইরাক-সিরিয়ার ধ্বংসযজ্ঞের মতো পৌনঃপুনিক অপঘাত থেকে সাধারণ মানুষ কি তাহলে কখনোই মুক্তি পাবে না? ফরাসি রাষ্ট্রচিন্তাবিদ মোঁতেস্কিও বলেছিলেন: ‘গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে সরকার হলো জনগণের কাছে গচ্ছিত রাখা বন্ধকি মাল। সরকার পৃথিবীর তাবৎ জিনিসের মতোই। সরকারকে যদি আগলে রাখতে চাও, তবে প্রথমে সরকারকে ভালোবাসতে হবে।’ সরকারকে আমরা অবশ্যই ভালোবাসব, ভালোবেসে ট্যাক্সও দেব তার হাতখরচের জন্য, কিন্তু এতেই সরকারের প্রতি জনগণের কর্তব্য শেষ হয়ে যাবে না। জনগণকে প্রতিনিয়ত খেয়াল রাখতে হবে, সরকার ঐশীর মতো বখে যাচ্ছে কি না।
বাবা-মায়ের সঙ্গে যোগাযোগ ছিন্ন হলে, হাতে অফুরন্ত কাঁচা পয়সা পেলে সন্তান বখে যায়। জনগণের সঙ্গে যোগাযোগ ছিন্ন হলে, হাতে অবাধ কাঁচা ক্ষমতা পেলে বখে যায় সরকার। সাদ্দাম-গাদ্দাফির মতো স্বৈরাচারী শাসকেরা যদি জনবিচ্ছিন্ন না হয়ে পড়তেন, ক্ষমতার অপব্যবহার না করতেন, তবে তাঁদের নিজেদের, দেশের জনগণের ভবিতব্য অন্য রকম হতে পারত। ইঙ্গো-মার্কিন-ফরাসি-সৌদি জনগণ যদি তাদের সরকারের বিদেশনীতিকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারত, নিজ নিজ সরকারের জবাবদিহি নিশ্চিত করতে পারত, তবে সাম্প্রতিক কালের অধিকাংশ বিপর্যয়, লোকক্ষয় সম্ভবত এড়ানো যেত।
মহাত্মা গান্ধীর তিন বানরের মতো ‘কিছু না দেখার, না বলার, না শোনার’ (অথবা, ভাড়াটে বুদ্ধিজীবীদের ক্ষেত্রে, সবকিছুকেই আরোপিত দৃষ্টিকোণ থেকে দেখার) এক অভূতপূর্ব রাজনৈতিক অপসংস্কৃতির সৃষ্টি হয়েছে গত কয়েক দশকে, এ দেশে এবং বিদেশে। ব্যক্তি ও গোষ্ঠীর কখনো নির্লিপ্ত, কখনো ধান্দাবাজ আচরণের পেছনে আছে হয় শঙ্কা, নয়তো লোভ অথবা একসঙ্গে দুটোই। এই আচরণ ও অপসংস্কৃতি ইদানীংকালের বেশির ভাগ মনুষ্যসৃষ্ট বিপর্যয়ের অন্যতম অনুঘটক কি না, তা ভেবে দেখার সময় এসেছে।
শিশির ভট্টাচার্য্য: অধ্যাপক, আধুনিক ভাষা ইনস্টিটিউট, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
ইরাকে ‘শান্তি’ স্থাপনের পর মার্কিন বাহিনী যখন স্বদেশে প্রত্যাবর্তন করে, তখন বহু অস্ত্রশস্ত্র, যন্ত্রপাতি, গাড়িবহর তারা নাকি ইরাকে ফেলে আসে ইচ্ছা করেই, যাতে আইএস সেগুলো ব্যবহার করতে পারে। কীভাবে, কার অঙ্গুলি হেলনে শত শত মুসলিম তরুণ ইউরোপ-আমেরিকা থেকে মধ্যপ্রাচ্যে গিয়ে জঙ্গি হয়ে গিয়েছিল? এই প্রশ্নগুলো উঠছে। মার্কিন গণমাধ্যমে ইদানীং আর এ নিয়ে কোনো ঢাক ঢাক গুড় গুড় নেই। প্রকাশ্যে বলা হচ্ছে, তালেবান আর আইএস মার্কিন সরকারের সৃষ্টি। লাখ লাখ ÿঅসহায়, নিরপরাধ মানুষকে হত্যা এবং বহু শতকোটি ডলারের সম্পদ ধ্বংসের পর ব্রিটেনের সাবেক প্রধানমন্ত্রী টনি ব্লেয়ারও সম্প্রতি স্বীকার করেছেন: ‘ইরাক আক্রমণ ভুল ছিল।’
পাশ্চাত্য বিদেশনীতির সর্বশেষ মানসপুত্র আইএসকে খতম করতে ইঙ্গো-মার্কিন-ফরাসি সরকার বদ্ধপরিকর। সাদ্দাম-তালেবান কাহিনির করুণ পুনরাবৃত্তি: প্রথমে নিজের স্বার্থে ব্যবহার, প্রয়োজন ফুরিয়ে গেলে সংহার। তালেবান সংহার চলছে আড়াই দশক ধরে। আগামী ৩০ বছরেও নাকি আইএস সংহার সমাপ্ত হবে না। সিরিয়া-ইরাক-আফগানিস্তানে যখন জঙ্গি নিধনের উদ্দেশ্যে বিমান থেকে বোমা নিক্ষেপ করা হয়, তখন নিরপরাধ নাগরিকেরা কি রক্ষা পায়? পাশ্চাত্যের বেশির ভাগ বুদ্ধিজীবী এ প্রশ্নের উত্তর জানতে আগ্রহী বলে মনে হয় না। সুতরাং আরও অনেক দিন তথাকথিত সন্ত্রাসবিরোধী যুদ্ধ চলবে সেই ইঙ্গো-মার্কিন-ফরাসি দেশের নিরপরাধ জনগণের ট্যাক্সের টাকায়, যাদের মাথা বহু দিন ধরে সন্ত্রাসের গিলোটিনের নিচে আটকে আছে।
ধর্ম নয়, যুদ্ধ বা সন্ত্রাসের প্রকৃত নিয়ামক রাজনীতির রাংতায় মোড়ানো অর্থনীতি। পুঁজিবাদী অর্থনীতি কিছুদিন পরপর মন্দার কবলে পড়ে। এর অন্যতম চটজলদি সমাধান, বিশ্বের কোথাও, কোনো অজুহাতে যুদ্ধ লাগিয়ে দেওয়া। যুদ্ধ একবার শুরু হলে অস্ত্র, পোশাক, খাবার, ওষুধ থেকে শুরু করে টয়লেট পেপার পর্যন্ত বহু বিচিত্র জিনিস সরবরাহ করতে হয় হাজার হাজার সেনার জন্য। ফলে কর্মসংস্থান হয়, পুঁজির পরিমাণ ও বিনিয়োগ বেড়ে গিয়ে অর্থনীতির মন্দাভাব কেটে যায়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে আণবিক বোমায় বিধ্বস্ত জাপানের অর্থনীতি কোরিয়ার যুদ্ধের রসদ সরবরাহ করে এক দশকের মধ্যেই ঘুরে দাঁড়িয়েছিল। মধ্যপ্রাচ্যে একের পর এক যুদ্ধের কারণেই মার্কিন ডলার আর ইউরোর দাম কমবেশি স্থির রয়েছে। বাংলাদেশের কাঙ্ক্ষিত অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জন করার পেছনে ডলার-ইউরোর দামের একটা ভূমিকা আছে।
হাতির দুটি মাত্র দাঁত বাইরে থেকে দেখা যায়। বাকি সব দাঁত ভেতরে থাকে এবং চিবানোর মূল কাজটা সেখানেই হয়। আশির দশকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের উদ্যোগে যখন ইরানের ওপর অর্থনৈতিক অবরোধ চলছিল, তখন রিগান সরকার গোপনে ইরানের কাছে অস্ত্র বিক্রি করেছিল। রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিন সম্প্রতি বলেছেন, কমবেশি ৪০টি দেশের সঙ্গে আইএসের লেনদেন রয়েছে। শুধু প্রত্নসম্পদ, জ্বালানি তেল বিক্রি করেই আইএসের দৈনিক আয় নাকি কয়েক মিলিয়ন মার্কিন ডলার।
আলেক্সান্ডার, নেপোলিয়ন, ক্রুসেড যোদ্ধাদের একসময় কষ্ট করে আরব দেশে আসতে হয়েছিল মধ্যপ্রাচ্যের সম্পদ লুট করার জন্য। এখন আরবরা নিজেরাই নিজেদের সম্পদ লুট করে তুলে দিচ্ছে পাশ্চাত্যের হাতে। শুধু কি পশ্চিমারা? প্রতিদিন আইএসের কাছ থেকে তেল কিনছে না আসাদের সরকার? আফগানিস্তানে তালেবানরা কিসের বিনিময়ে আধুনিক অস্ত্র সংগ্রহ করত? ড্রাগ আর প্রত্নসম্পদ ছাড়া মূল্যবান কীই-বা ছিল আফগানিস্তানে? সেই ড্রাগ ইউরোপ-আমেরিকায় পাচার হয়ে সেখানকার তরুণদের অধঃপতন ও মৃত্যুর কারণ হয়েছে। পাচার করা প্রত্নসম্পদ কোনো একদিন প্রদর্শিত হবে পাশ্চাত্যের মিউজিয়ামে। আরব-আফগানদের উত্তর-পুরুষেরা নিজেদের গাঁটের পয়সা খরচ করে সেগুলো দেখতে যাবে।
প্যারিসের সাম্প্রতিক ভয়াবহ সন্ত্রাস, ইরাক-সিরিয়ার ধ্বংসযজ্ঞের মতো পৌনঃপুনিক অপঘাত থেকে সাধারণ মানুষ কি তাহলে কখনোই মুক্তি পাবে না? ফরাসি রাষ্ট্রচিন্তাবিদ মোঁতেস্কিও বলেছিলেন: ‘গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে সরকার হলো জনগণের কাছে গচ্ছিত রাখা বন্ধকি মাল। সরকার পৃথিবীর তাবৎ জিনিসের মতোই। সরকারকে যদি আগলে রাখতে চাও, তবে প্রথমে সরকারকে ভালোবাসতে হবে।’ সরকারকে আমরা অবশ্যই ভালোবাসব, ভালোবেসে ট্যাক্সও দেব তার হাতখরচের জন্য, কিন্তু এতেই সরকারের প্রতি জনগণের কর্তব্য শেষ হয়ে যাবে না। জনগণকে প্রতিনিয়ত খেয়াল রাখতে হবে, সরকার ঐশীর মতো বখে যাচ্ছে কি না।
বাবা-মায়ের সঙ্গে যোগাযোগ ছিন্ন হলে, হাতে অফুরন্ত কাঁচা পয়সা পেলে সন্তান বখে যায়। জনগণের সঙ্গে যোগাযোগ ছিন্ন হলে, হাতে অবাধ কাঁচা ক্ষমতা পেলে বখে যায় সরকার। সাদ্দাম-গাদ্দাফির মতো স্বৈরাচারী শাসকেরা যদি জনবিচ্ছিন্ন না হয়ে পড়তেন, ক্ষমতার অপব্যবহার না করতেন, তবে তাঁদের নিজেদের, দেশের জনগণের ভবিতব্য অন্য রকম হতে পারত। ইঙ্গো-মার্কিন-ফরাসি-সৌদি জনগণ যদি তাদের সরকারের বিদেশনীতিকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারত, নিজ নিজ সরকারের জবাবদিহি নিশ্চিত করতে পারত, তবে সাম্প্রতিক কালের অধিকাংশ বিপর্যয়, লোকক্ষয় সম্ভবত এড়ানো যেত।
মহাত্মা গান্ধীর তিন বানরের মতো ‘কিছু না দেখার, না বলার, না শোনার’ (অথবা, ভাড়াটে বুদ্ধিজীবীদের ক্ষেত্রে, সবকিছুকেই আরোপিত দৃষ্টিকোণ থেকে দেখার) এক অভূতপূর্ব রাজনৈতিক অপসংস্কৃতির সৃষ্টি হয়েছে গত কয়েক দশকে, এ দেশে এবং বিদেশে। ব্যক্তি ও গোষ্ঠীর কখনো নির্লিপ্ত, কখনো ধান্দাবাজ আচরণের পেছনে আছে হয় শঙ্কা, নয়তো লোভ অথবা একসঙ্গে দুটোই। এই আচরণ ও অপসংস্কৃতি ইদানীংকালের বেশির ভাগ মনুষ্যসৃষ্ট বিপর্যয়ের অন্যতম অনুঘটক কি না, তা ভেবে দেখার সময় এসেছে।
শিশির ভট্টাচার্য্য: অধ্যাপক, আধুনিক ভাষা ইনস্টিটিউট, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
No comments