সমশের মবিনের ‘বিদায়’ কীসের ইঙ্গিত? by সোহরাব হাসান
বিএনপি
থেকে সমশের মবিন চৌধুরীর পদত্যাগ এবং রাজনীতি থেকে অবসর দেশের অস্থির ও
অনিশ্চিত রাজনীতিতে নতুন মাত্রা যোগ করবে কি না, সে কথা বলার সময় এখনো
আসেনি। তবে সমশের মবিন চৌধুরীর অতীত বিশ্লেষণ করলে এই ঘটনাকে মোটেই
স্বাভাবিক বলা যায় না। বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান কিংবা পরবর্তী
সময়ে খালেদা জিয়ার সঙ্গে সমশের মবিনের আদর্শগত সম্পর্ক গড়ে ওঠে রাজনীতিতে
তাঁর আসার অনেক আগে থেকে। ফলে কূটনৈতিক দায়িত্ব থেকে অবসর নেওয়ার পর তাঁর
বিএনপিতে যোগদান ছিল স্বাভাবিক ঘটনা।
কিন্তু সেই স্বাভাবিক ঘটনা কেন অস্বাভাবিক হলো, সেটি কেবল পদত্যাগপত্রে লিখিত ভাষ্য থেকে জানা যাবে না। এ জন্য আমাদের দলীয় রাজনৈতিক সংস্কৃতির মাজেজাটা বুঝতে হবে। এখন যোগ্যতা, দক্ষতা, অভিজ্ঞতা ও অঙ্গীকারই রাজনীতির মাপকাঠি নয়। আরও কিছু প্রয়োজন। সম্ভবত সেটি দেখাতে সমশের মবিন ব্যর্থ হয়েছেন বলেই তাঁকে আজ স্বেচ্ছায় বা অনিচ্ছায় রাজনীতি থেকে বিদায় নিতে হয়েছে।
এখানে ২০১৩ সালের ডিসেম্বরে দলের জ্যেষ্ঠ ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে তাঁর টেলিফোন কথোপকথনটি স্মরণ করতে পারি। সেখানে দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিবের প্রতি প্রচণ্ড ক্ষোভ প্রকাশ করেছিলেন তারেক রহমান। আর সমশের মবিন তাঁর প্রায় সব কথায় সহমত প্রকাশ করে যাচ্ছিলেন। সেদিন তারেক রহমান অনেকটা নির্দেশের সুরে আন্দোলনে কোনো রকম বিরতি না দেওয়ার কথা বলেছিলেন। নির্বাচনের আগে শেখ হাসিনাকে প্রধানমন্ত্রী পদ থেকে সরে দাঁড়াতে হবে। অন্যথায় নির্বাচন হবে না। সমশের মবিন চৌধুরী তাঁর বেশির ভাগ কথার সঙ্গে সহমত প্রকাশ করলেও তারেকের সন্দেহ ও সংশয় ঘোচাতে পারেননি। এ সময়ে সমশের মবিনই দলের পক্ষে বাইরের সঙ্গে যোগাযোগ করতেন, পরামর্শ দিতেন। কিন্তু পরবর্তীকালে তাঁকে অনেকটা বাইরে রেখেই বিএনপির নেতৃত্ব আন্তর্জাতিক মহলের সঙ্গে কথাবার্তা চালিয়ে যায়। এমনকি বিদেশি কূটনীতিকদের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক আলোচনায়ও তাঁকে ডাকা হয়নি। তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ, জেলখানা থেকে বেরিয়ে তিনি দলীয় চেয়ারপারসনের সঙ্গে দেখা করেননি। দলীয় কাজে অংশ নেননি। কিন্তু এ ব্যাপারে দলেরও তো দায়িত্ব ছিল। খালেদা জিয়াও তো কোনো দিন ডেকে তাঁর কথা শুনতে চাননি। সে ক্ষেত্রে ধরে নেওয়া যায় দূরত্বটি তৈরির পেছনে দুই পক্ষেরই ভূমিকা আছে। শেষ পর্যন্ত ‘বিদায়’ ঘোষণার মধ্য দিয়ে যার পরিসমাপ্তি হলো।
এই ঘটনা বিএনপির রাজনীতিতে কী প্রভাব ফেলবে, তার চেয়েও বড় কথা হলো ভবিষ্যৎ রাজনীতিটা রাজনীতিতে থাকবে কি না? জি-হুজুর রাজনীতির দাপট এমনই যে পান থেকে চুন খসে পড়লেই পদ ও মর্যাদা দুটোই খোয়াতে হয়। সমশের মবিন চৌধুরী হয়তো আসন্ন বিপদ অনুধাবন করে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছেন। কিন্তু যাঁরা সিদ্ধান্ত নিতে পারেননি, বা পারছেন না, তাঁদের অবস্থা কী হবে? রাজনৈতিক দলগুলো দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য জান কোরবান করলেও দলে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার বিষয়টি বরাবরই উপেক্ষা করে চলেছে। তাই সমশের মবিনের রাজনীতি থেকে ‘বিদায়’ ঘোষণার পেছনে সরকারের দুরভিসন্ধি খোঁজার আগে বিএনপির নেতাদের উচিত আত্মজিজ্ঞাসা করা। তাঁরা সঠিক পথে আছেন না ভুল পথে চলছেন?
অন্যদিকে সমশের মবিন চৌধুরীর পদত্যাগের পর পরই আওয়ামী লীগের অতি উৎসাহী নেতারা যে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন, তাতেও জনমনে প্রশ্ন দেখা দেওয়াও অস্বাভাবিক নয়। দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ সমশের মবিন চৌধুরীর সিদ্ধান্তকে অভিনন্দিত করে বলেছেন, বিএনপিতে তাঁর মতো আরও অনেক নেতা মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধারণ করেন এবং তাঁরা শিগগিরই খালেদা ও তারেকের প্রতি অনাস্থা জানিয়ে দলত্যাগ করবেন।
আমরা এত দিন আওয়ামী নেতাদের মুখে শুনে এসেছি—‘বিএনপি একটি স্বাধীনতাবিরোধী ও জঙ্গিবাদী দল। এই দলে কোনো মুক্তিযোদ্ধা থাকতে পারেন না।’ আর এখন তাঁরা বলছেন, মুক্তিযুদ্ধের চেতনাধারী অনেক নেতা বিএনপিতে আছেন। এটা যদি আওয়ামী লীগের নেতাদের মনের কথা হয়, তাহলে রাজনীতিতে ক্ষীণ আশার রেখা দেখতে পাই। দেশের প্রধান দুটি দলের এই যুঝমান অবস্থা জারি রাজনীতি ও গণতন্ত্র কোনোটাই এগিয়ে নেওয়া যাবে না। আওয়ামী লীগের নেতারা এ কথা যত দ্রুত উপলব্ধি করবেন, ততই মঙ্গল।
সমশের মবিন চৌধুরীর পদত্যাগের পেছনে সরকারের চাপ বা অন্য কোনো উদ্দেশ্য আছে কি না, সেটি জানতে হয়তো আমাদের আরও কিছুদিন অপেক্ষা করতে হবে। আসুন, সেই সময় পর্যন্ত আমরা দেশের রাজনীতির শুভকামনা করি।
কিন্তু সেই স্বাভাবিক ঘটনা কেন অস্বাভাবিক হলো, সেটি কেবল পদত্যাগপত্রে লিখিত ভাষ্য থেকে জানা যাবে না। এ জন্য আমাদের দলীয় রাজনৈতিক সংস্কৃতির মাজেজাটা বুঝতে হবে। এখন যোগ্যতা, দক্ষতা, অভিজ্ঞতা ও অঙ্গীকারই রাজনীতির মাপকাঠি নয়। আরও কিছু প্রয়োজন। সম্ভবত সেটি দেখাতে সমশের মবিন ব্যর্থ হয়েছেন বলেই তাঁকে আজ স্বেচ্ছায় বা অনিচ্ছায় রাজনীতি থেকে বিদায় নিতে হয়েছে।
এখানে ২০১৩ সালের ডিসেম্বরে দলের জ্যেষ্ঠ ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে তাঁর টেলিফোন কথোপকথনটি স্মরণ করতে পারি। সেখানে দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিবের প্রতি প্রচণ্ড ক্ষোভ প্রকাশ করেছিলেন তারেক রহমান। আর সমশের মবিন তাঁর প্রায় সব কথায় সহমত প্রকাশ করে যাচ্ছিলেন। সেদিন তারেক রহমান অনেকটা নির্দেশের সুরে আন্দোলনে কোনো রকম বিরতি না দেওয়ার কথা বলেছিলেন। নির্বাচনের আগে শেখ হাসিনাকে প্রধানমন্ত্রী পদ থেকে সরে দাঁড়াতে হবে। অন্যথায় নির্বাচন হবে না। সমশের মবিন চৌধুরী তাঁর বেশির ভাগ কথার সঙ্গে সহমত প্রকাশ করলেও তারেকের সন্দেহ ও সংশয় ঘোচাতে পারেননি। এ সময়ে সমশের মবিনই দলের পক্ষে বাইরের সঙ্গে যোগাযোগ করতেন, পরামর্শ দিতেন। কিন্তু পরবর্তীকালে তাঁকে অনেকটা বাইরে রেখেই বিএনপির নেতৃত্ব আন্তর্জাতিক মহলের সঙ্গে কথাবার্তা চালিয়ে যায়। এমনকি বিদেশি কূটনীতিকদের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক আলোচনায়ও তাঁকে ডাকা হয়নি। তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ, জেলখানা থেকে বেরিয়ে তিনি দলীয় চেয়ারপারসনের সঙ্গে দেখা করেননি। দলীয় কাজে অংশ নেননি। কিন্তু এ ব্যাপারে দলেরও তো দায়িত্ব ছিল। খালেদা জিয়াও তো কোনো দিন ডেকে তাঁর কথা শুনতে চাননি। সে ক্ষেত্রে ধরে নেওয়া যায় দূরত্বটি তৈরির পেছনে দুই পক্ষেরই ভূমিকা আছে। শেষ পর্যন্ত ‘বিদায়’ ঘোষণার মধ্য দিয়ে যার পরিসমাপ্তি হলো।
এই ঘটনা বিএনপির রাজনীতিতে কী প্রভাব ফেলবে, তার চেয়েও বড় কথা হলো ভবিষ্যৎ রাজনীতিটা রাজনীতিতে থাকবে কি না? জি-হুজুর রাজনীতির দাপট এমনই যে পান থেকে চুন খসে পড়লেই পদ ও মর্যাদা দুটোই খোয়াতে হয়। সমশের মবিন চৌধুরী হয়তো আসন্ন বিপদ অনুধাবন করে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছেন। কিন্তু যাঁরা সিদ্ধান্ত নিতে পারেননি, বা পারছেন না, তাঁদের অবস্থা কী হবে? রাজনৈতিক দলগুলো দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য জান কোরবান করলেও দলে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার বিষয়টি বরাবরই উপেক্ষা করে চলেছে। তাই সমশের মবিনের রাজনীতি থেকে ‘বিদায়’ ঘোষণার পেছনে সরকারের দুরভিসন্ধি খোঁজার আগে বিএনপির নেতাদের উচিত আত্মজিজ্ঞাসা করা। তাঁরা সঠিক পথে আছেন না ভুল পথে চলছেন?
অন্যদিকে সমশের মবিন চৌধুরীর পদত্যাগের পর পরই আওয়ামী লীগের অতি উৎসাহী নেতারা যে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন, তাতেও জনমনে প্রশ্ন দেখা দেওয়াও অস্বাভাবিক নয়। দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ সমশের মবিন চৌধুরীর সিদ্ধান্তকে অভিনন্দিত করে বলেছেন, বিএনপিতে তাঁর মতো আরও অনেক নেতা মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধারণ করেন এবং তাঁরা শিগগিরই খালেদা ও তারেকের প্রতি অনাস্থা জানিয়ে দলত্যাগ করবেন।
আমরা এত দিন আওয়ামী নেতাদের মুখে শুনে এসেছি—‘বিএনপি একটি স্বাধীনতাবিরোধী ও জঙ্গিবাদী দল। এই দলে কোনো মুক্তিযোদ্ধা থাকতে পারেন না।’ আর এখন তাঁরা বলছেন, মুক্তিযুদ্ধের চেতনাধারী অনেক নেতা বিএনপিতে আছেন। এটা যদি আওয়ামী লীগের নেতাদের মনের কথা হয়, তাহলে রাজনীতিতে ক্ষীণ আশার রেখা দেখতে পাই। দেশের প্রধান দুটি দলের এই যুঝমান অবস্থা জারি রাজনীতি ও গণতন্ত্র কোনোটাই এগিয়ে নেওয়া যাবে না। আওয়ামী লীগের নেতারা এ কথা যত দ্রুত উপলব্ধি করবেন, ততই মঙ্গল।
সমশের মবিন চৌধুরীর পদত্যাগের পেছনে সরকারের চাপ বা অন্য কোনো উদ্দেশ্য আছে কি না, সেটি জানতে হয়তো আমাদের আরও কিছুদিন অপেক্ষা করতে হবে। আসুন, সেই সময় পর্যন্ত আমরা দেশের রাজনীতির শুভকামনা করি।
No comments