সুন্দরবন থেকে বিশ্বমঞ্চে by সাজেদুল হক ও ইয়ারব হোসেন
রায়নাকে ফেরানোর পর মুস্তাফিজ। |
সাতক্ষীরা
থেকে ৪৫ কিলোমিটার দক্ষিণের ছোট্ট গ্রাম তেঁতুলিয়া। সুন্দরবন থেকে খুব
বেশি দূরে নয়। যে বনের রয়েলবেঙ্গল টাইগার সারা দুনিয়াতেই বিখ্যাত।
বাংলাদেশের ক্রিকেটারদেরও বহু দিন ধরে ডাকা হয় এ নামে। যদিও তা নিয়ে কখনও
কখনও কেউ ঠাট্টা-মশকারাও করেছেন। সেসবই এখন ইতিহাস।
সময় ৬ই সেপ্টেম্বর ১৯৯৫। আলহাজ আবুল কাশেম গাজী এবং মাহমুদা খাতুন দম্পতির ঘর উজ্জ্বল করে এলো এক শিশু। নাম রাখা হলো মুস্তাফিজুর রহমান। চার ভাই ও দুই বোনের সংসারে বেড়ে ওঠা মুস্তাফিজের। এর পরের ঘটনা সব একরকম নয়। সবার কতরকম স্বপ্ন থাকে। জীবনে প্রতিষ্ঠা পেতে চায় ওরা। কিন্তু এই ছেলেটির স্বপ্ন একটু অন্যরকম। ক্রিকেটার হতে চায় সে। যদিও রাজধানী শহর তো দূরের কথা, সাতক্ষীরা শহরও চেনে না সে। নিজের বাড়ির উঠানে অবশ্য অনুশীলন চালিয়ে যায় ছেলেটি। তার এ স্বপ্নপূরণে এগিয়ে আসে কে?
অজিত টেন্ডুলকারের কথা মনে আছে! খুব সম্ভবত পৃথিবীর সবচেয়ে ‘বিখ্যাত ভাই’। নিজের ক্যারিয়ার সবকিছু যে বিসর্জন দিয়েছিলেন ভাইয়ের জন্য। প্রতিদিন ভাইকে নিয়ে যেতেন প্র্যাকটিসে। মাসের পর মাস সেই রুটিনে কোন ব্যতিক্রম হয়নি। তার সেই প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়নি। শচীন রমেশ টেন্ডুলকার সারাজীবনই কৃতার্থ থেকেছেন ভাই অজিত টেন্ডুলকারের প্রতি। বহুবারই বলেছেন, ভাই না থাকলে তিনি কখনও শচীন টেন্ডুলকার হতে পারতেন না।
আমাদের মুস্তাফিজুরেরও এমন একজন ভাই রয়েছেন, যা হয়তো এরই মধ্যে অনেকে জেনেও গেছেন। মুস্তাফিজুর রহমান নিজেই বলেছেন, সেজ ভাই মোখলেসুর রহমান কিভাবে প্রতিদিন তাকে ৪৫ কিলোমিটার দূর থেকে মোটরসাইকেলে করে প্র্যাকটিসে নিয়ে আসতেন। জীবনে প্রথম আন্তর্জাতিক ওয়ানডে ম্যাচ খেলতে নেমেই ৫ উইকেট পেয়ে নায়ক বনে যাওয়ার পরদিন ভাইয়ের কথা স্মরণ করেছেন মুস্তাফিজুর। অজিত টেন্ডুলকারের ভাইয়ের মতো বিখ্যাত কোন ভাই কি পেতে চলেছে বিশ্ব ক্রিকেট। কিছুদিন আগে মোখলেসুর রহমান বর্ণনা করেছেন কিভাবে ক্রিকেটের সঙ্গে জড়িয়ে যান তার ছোট্ট ভাইটি। তার কথায়, এই তো বছর-পাঁচেক আগের কথা। সাতক্ষীরায় অনূর্ধ্ব-১৪ ক্রিকেটে বাছাই পর্বে নজর কাড়ে সবার। এরপর জেলা পর্যায়ে অনূর্ধ্ব-১৬ ক্রিকেট খেলায় সাতক্ষীরার হয়ে প্রথম মাঠে নেমেছিল মুস্তাফিজুর রহমান। পড়াশোনায় অতটা মন তার কখনোই ছিল না। স্কুল ফাঁকি দিয়ে সে ক্রিকেট খেলতে যেতো। বাসায় তো বলেই দিয়েছিল, আমার দ্বারা ওসব হবে না। তোমরা আর জোর করো না। এরপর থেকে ক্রিকেটই তার ধ্যানজ্ঞান। বরেয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের মাঠে নেট প্যাকটিস করতো মুস্তাফিজ।
সাতক্ষীরা গণমুখী সংঘের কোর্চ আলতাফই প্রথম ধরতে পেরেছিলেন মুস্তাফিজের ভেতরের ‘ধারটা’। হিরে চিনে নিয়ে ঘষামাজার কাজটি তিনি শুরু করে দেন। জেলাপর্যায়ে এসে মুস্তাফিজকে আরও পরিণত করে তুলতে পরিশ্রম করেন সাতক্ষীরার জেলা কোচ মুফাসিনুল ইসলাম তপু। জেলাপর্যায়ের পর খুব বেশিদিন তাকে অপেক্ষা করতে হয়নি। ডাক পেয়ে যান খুলনার বিভাগীয় দলে খেলার। বছর তিনেক আগে শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে ফাস্ট বোলিং ক্যাম্পে ট্রায়াল দিতে এসে কোচরা আর ছাড়েননি এ প্রতিভাকে। নিয়মিতই অনূর্ধ্ব-১৯ দলে খেলেছেন। বল করতেন জাতীয় দলের নেটেও। তবে সম্ভাবনার দ্রুতি ছড়িয়েছেন গত বছর অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপে। তার ঝুলিতে ভরেছিলেন ৯ উইকেট। হয়েছিলেন দ্বিতীয় সর্বোচ্চ উইকেটশিকারি। গত বছরের মে মাসে ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে বাংলাদেশ ‘এ’ দলেও স্থান পেয়েছিলেন মুস্তাফিজ। রীতিমতো চমক ছিলেন তিনি। মুস্তাফিজ প্রথম শ্রেণীতে খেলা শুরু করেন গত বছর এপ্রিলে। এই তো ছয় মাস আগে অভিষেক হয়েছে ঘরোযা একদিনের ম্যাচে। পাকিস্তানের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি অভিষেকেই দৃষ্টি কাড়তে সক্ষম হন তিনি। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে তার প্রথম শিকারের নাম জানেন তো? শহীদ আফ্রিদী।
তবে ১৮ই জুন, ২০১৫, তেঁতুলিয়া গ্রামের লিকলিকে সেই তরুণটির জীবন আক্ষরিক অর্থেই বদলে গেছে। ভারতের বিরুদ্ধে ওয়ানডে সিরিজে দলে তার অন্তর্ভুক্তিই ছিল অনেকটা আকস্মিক। নিজেদের ক্রিকেট ইতিহাসে এই প্রথম একসঙ্গে ৪ পেসার নিয়ে মাঠে নামে বাংলাদেশ ক্রিকেট দল। দলে অন্তর্ভুক্ত হন মুস্তাফিজুর রহমান। ভারতের বিশ্ববিখ্যাত ব্যাটিং লাইনের আপের বিরুদ্ধে শুরুতেই তার হাতে বল তুলে দিয়ে বিস্ময় তৈরি করেন অধিনায়ক মাশরাফি। অধিনায়ক পরে অবশ্য বরেছেন, তা ছিল তার কৌশল। সেই কৌশল কতটা সফল হয়েছে তা এরই মধ্যে জেনে গেছে দুনিয়া। তবে বিস্ময়কর প্যাকেজ মুস্তাফিজের বিস্ময়ের শেষ নেই। গতকাল দ্বিতীয় ম্যাচেও ভারতের বিরুদ্ধে ৬ উইকেট নিয়েছেন তিনি। বিশ্বের অন্যতম সেরা বোলিং লাইনআপ কবে কোন ব্যাটসম্যানের কাছে এমন নাকানিচুবানি খেয়েছে তা মনে করা দুষ্কর। তবে একটি কথা বোধ হয় নিশ্চিত করেই বলা যায়, ক্রিকেট দুনিয়ায় ১৯ বছর বয়সী সবচেয়ে বিখ্যাত খেলোয়াড়টির নাম মুস্তাফিজুর রহমান।
সময় ৬ই সেপ্টেম্বর ১৯৯৫। আলহাজ আবুল কাশেম গাজী এবং মাহমুদা খাতুন দম্পতির ঘর উজ্জ্বল করে এলো এক শিশু। নাম রাখা হলো মুস্তাফিজুর রহমান। চার ভাই ও দুই বোনের সংসারে বেড়ে ওঠা মুস্তাফিজের। এর পরের ঘটনা সব একরকম নয়। সবার কতরকম স্বপ্ন থাকে। জীবনে প্রতিষ্ঠা পেতে চায় ওরা। কিন্তু এই ছেলেটির স্বপ্ন একটু অন্যরকম। ক্রিকেটার হতে চায় সে। যদিও রাজধানী শহর তো দূরের কথা, সাতক্ষীরা শহরও চেনে না সে। নিজের বাড়ির উঠানে অবশ্য অনুশীলন চালিয়ে যায় ছেলেটি। তার এ স্বপ্নপূরণে এগিয়ে আসে কে?
অজিত টেন্ডুলকারের কথা মনে আছে! খুব সম্ভবত পৃথিবীর সবচেয়ে ‘বিখ্যাত ভাই’। নিজের ক্যারিয়ার সবকিছু যে বিসর্জন দিয়েছিলেন ভাইয়ের জন্য। প্রতিদিন ভাইকে নিয়ে যেতেন প্র্যাকটিসে। মাসের পর মাস সেই রুটিনে কোন ব্যতিক্রম হয়নি। তার সেই প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়নি। শচীন রমেশ টেন্ডুলকার সারাজীবনই কৃতার্থ থেকেছেন ভাই অজিত টেন্ডুলকারের প্রতি। বহুবারই বলেছেন, ভাই না থাকলে তিনি কখনও শচীন টেন্ডুলকার হতে পারতেন না।
আমাদের মুস্তাফিজুরেরও এমন একজন ভাই রয়েছেন, যা হয়তো এরই মধ্যে অনেকে জেনেও গেছেন। মুস্তাফিজুর রহমান নিজেই বলেছেন, সেজ ভাই মোখলেসুর রহমান কিভাবে প্রতিদিন তাকে ৪৫ কিলোমিটার দূর থেকে মোটরসাইকেলে করে প্র্যাকটিসে নিয়ে আসতেন। জীবনে প্রথম আন্তর্জাতিক ওয়ানডে ম্যাচ খেলতে নেমেই ৫ উইকেট পেয়ে নায়ক বনে যাওয়ার পরদিন ভাইয়ের কথা স্মরণ করেছেন মুস্তাফিজুর। অজিত টেন্ডুলকারের ভাইয়ের মতো বিখ্যাত কোন ভাই কি পেতে চলেছে বিশ্ব ক্রিকেট। কিছুদিন আগে মোখলেসুর রহমান বর্ণনা করেছেন কিভাবে ক্রিকেটের সঙ্গে জড়িয়ে যান তার ছোট্ট ভাইটি। তার কথায়, এই তো বছর-পাঁচেক আগের কথা। সাতক্ষীরায় অনূর্ধ্ব-১৪ ক্রিকেটে বাছাই পর্বে নজর কাড়ে সবার। এরপর জেলা পর্যায়ে অনূর্ধ্ব-১৬ ক্রিকেট খেলায় সাতক্ষীরার হয়ে প্রথম মাঠে নেমেছিল মুস্তাফিজুর রহমান। পড়াশোনায় অতটা মন তার কখনোই ছিল না। স্কুল ফাঁকি দিয়ে সে ক্রিকেট খেলতে যেতো। বাসায় তো বলেই দিয়েছিল, আমার দ্বারা ওসব হবে না। তোমরা আর জোর করো না। এরপর থেকে ক্রিকেটই তার ধ্যানজ্ঞান। বরেয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের মাঠে নেট প্যাকটিস করতো মুস্তাফিজ।
সাতক্ষীরা গণমুখী সংঘের কোর্চ আলতাফই প্রথম ধরতে পেরেছিলেন মুস্তাফিজের ভেতরের ‘ধারটা’। হিরে চিনে নিয়ে ঘষামাজার কাজটি তিনি শুরু করে দেন। জেলাপর্যায়ে এসে মুস্তাফিজকে আরও পরিণত করে তুলতে পরিশ্রম করেন সাতক্ষীরার জেলা কোচ মুফাসিনুল ইসলাম তপু। জেলাপর্যায়ের পর খুব বেশিদিন তাকে অপেক্ষা করতে হয়নি। ডাক পেয়ে যান খুলনার বিভাগীয় দলে খেলার। বছর তিনেক আগে শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে ফাস্ট বোলিং ক্যাম্পে ট্রায়াল দিতে এসে কোচরা আর ছাড়েননি এ প্রতিভাকে। নিয়মিতই অনূর্ধ্ব-১৯ দলে খেলেছেন। বল করতেন জাতীয় দলের নেটেও। তবে সম্ভাবনার দ্রুতি ছড়িয়েছেন গত বছর অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপে। তার ঝুলিতে ভরেছিলেন ৯ উইকেট। হয়েছিলেন দ্বিতীয় সর্বোচ্চ উইকেটশিকারি। গত বছরের মে মাসে ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে বাংলাদেশ ‘এ’ দলেও স্থান পেয়েছিলেন মুস্তাফিজ। রীতিমতো চমক ছিলেন তিনি। মুস্তাফিজ প্রথম শ্রেণীতে খেলা শুরু করেন গত বছর এপ্রিলে। এই তো ছয় মাস আগে অভিষেক হয়েছে ঘরোযা একদিনের ম্যাচে। পাকিস্তানের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি অভিষেকেই দৃষ্টি কাড়তে সক্ষম হন তিনি। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে তার প্রথম শিকারের নাম জানেন তো? শহীদ আফ্রিদী।
তবে ১৮ই জুন, ২০১৫, তেঁতুলিয়া গ্রামের লিকলিকে সেই তরুণটির জীবন আক্ষরিক অর্থেই বদলে গেছে। ভারতের বিরুদ্ধে ওয়ানডে সিরিজে দলে তার অন্তর্ভুক্তিই ছিল অনেকটা আকস্মিক। নিজেদের ক্রিকেট ইতিহাসে এই প্রথম একসঙ্গে ৪ পেসার নিয়ে মাঠে নামে বাংলাদেশ ক্রিকেট দল। দলে অন্তর্ভুক্ত হন মুস্তাফিজুর রহমান। ভারতের বিশ্ববিখ্যাত ব্যাটিং লাইনের আপের বিরুদ্ধে শুরুতেই তার হাতে বল তুলে দিয়ে বিস্ময় তৈরি করেন অধিনায়ক মাশরাফি। অধিনায়ক পরে অবশ্য বরেছেন, তা ছিল তার কৌশল। সেই কৌশল কতটা সফল হয়েছে তা এরই মধ্যে জেনে গেছে দুনিয়া। তবে বিস্ময়কর প্যাকেজ মুস্তাফিজের বিস্ময়ের শেষ নেই। গতকাল দ্বিতীয় ম্যাচেও ভারতের বিরুদ্ধে ৬ উইকেট নিয়েছেন তিনি। বিশ্বের অন্যতম সেরা বোলিং লাইনআপ কবে কোন ব্যাটসম্যানের কাছে এমন নাকানিচুবানি খেয়েছে তা মনে করা দুষ্কর। তবে একটি কথা বোধ হয় নিশ্চিত করেই বলা যায়, ক্রিকেট দুনিয়ায় ১৯ বছর বয়সী সবচেয়ে বিখ্যাত খেলোয়াড়টির নাম মুস্তাফিজুর রহমান।
No comments