বড়া ভাজে পোড়া মবিলে, জিলাপিতে বাসন্তী রং by সুমনকুমার দাশ



বাসন্তী রং খাবারে ব্যবহৃত হলে পেটের পীড়া থেকে
শুরু করে ক্যানসার, জন্ডিস ও কিডনি-সংক্রান্ত
ব্যাধিতে আক্রান্ত হওয়ার প্রবল আশঙ্কা থাকে
সিলেটের অধিকাংশ হোটেল-রেস্তোরাঁয় অবাধে ক্ষতিকর রাসায়নিক রং মিশিয়ে বাহারি পদের ইফতারসামগ্রী তৈরি করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। রং মেশানোয় এসব ইফতারসামগ্রী দেখতে আকর্ষণীয় হয়ে ওঠে। কদর বাড়ে ক্রেতাদের কাছে। তবে রাসায়নিক মিশিয়ে বানানো খাবার বর্জনের আহ্বান জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকেরা।
গতকাল রোববার দুপুরে সরেজমিনে দেখা গেছে, নগরের বন্দরবাজার, জিন্দাবাজার, সোবহানীঘাট, মীরাবাজার, শিবগঞ্জ, টিলাগড়, কাজীবাজার, কালীঘাট, আম্বরখানা, শাহী ঈদগাহ, সুবিদবাজার, পাঠানটোলা, কদমতলী, ভার্থখলাসহ দেড় শতাধিক এলাকায় খোলাবাজারে ইফতারসামগ্রী বিক্রি হচ্ছে। এসব এলাকায় কারিগরেরা প্রকাশ্যে রাসায়নিক মিশিয়ে জিলাপি, পেঁয়াজু, বেগুনি, বড়াসহ বিভিন্ন সামগ্রী তৈরি করছেন।
সিলেট জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোস্তাফিজুর রহমান রমজানের প্রথম দিন নগরে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনায় নেতৃত্ব দিয়েছেন। ওই দিনের অভিজ্ঞতার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, কয়েকজন ব্যবসায়ী প্রকাশ্যে রং মিশিয়ে ইফতারসামগ্রী তৈরি করছিলেন। তাঁদের আটকের পর নিজেদের দোষ স্বীকার করে ভবিষ্যতে আর এমনটি করবেন না বলে উপস্থিত সাধারণ মানুষ, ক্রেতা ও পথচারীদের সামনে কথা দিলে তাঁদের ছেড়ে দেওয়া হয়। একই কাজের পুনরাবৃত্তি যেন না ঘটে, তাই এসব ব্যবসায়ীকে নজরদারিতে রাখা হয়েছে।
ইফতারি তৈরির কাজে নিয়োজিত নগরের বন্দরবাজার, জিন্দাবাজার ও কদমতলী এলাকার ছয়জন কারিগর জানান, জিলাপি ও পেঁয়াজু তৈরির উপকরণ ময়দা ও ডালের গুঁড়ায় বাসন্তী রং ব্যবহার করা হয়। এতে এগুলোর ঔজ্জ্বল্য বাড়ে। বেগুনি তৈরির বেসন, চপ, বড়াসহ ময়দাজাত বিভিন্ন সামগ্রীতেও বাসন্তী রং ব্যবহার করা হয়। এ ছাড়া প্রস্তুত করা পণ্য মচমচে, তাজা ও কড়কড়ে রাখতে তেলের সঙ্গে পোড়া মবিল মেশানো হয়।
আম্বরখানা এলাকার ফুটপাতে স্থাপিত একটি ভ্রাম্যমাণ ইফতারি দোকানের কারিগর সাইদুর রহমান বলেন, ‘মাল (ইফতারসামগ্রী) তাজা রাখতে সব কারিগর তেলে পোড়া মবিল মিশায়। বাসন্তী রং না দিলে জিলাপি দেখতে সুন্দর লাগে না। তাই অনেকে এগুলো কিনতে চায় না। সবাই রং মিশায়, তাই আমিও মিশাই।’
সিলেটের সিভিল সার্জন মো. আজহারুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘বাসন্তী রং খুবই নিম্নমানের রাসায়নিক। এটি খাবারে ব্যবহৃত হলে পেটের পীড়া থেকে শুরু করে ক্যানসার, জন্ডিস ও কিডনি-সংক্রান্ত ব্যাধিতে আক্রান্ত হওয়ার প্রবল আশঙ্কা থাকে। এর বাইরে পোড়া মবিল দিয়ে তৈরি করা ইফতারসামগ্রী খেলে বিষক্রিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি থাকে।’
সিলেটের কয়েকটি হোটেল-রেস্তোরাঁর কারিগরেরা জানিয়েছেন, বাসন্তী রং ও মিষ্টিজাত সামগ্রীতে ব্যবহৃত রাসায়নিক নগরের মহাজনপট্টি, কালীঘাট ও বন্দরবাজার এলাকার বিভিন্ন দোকানে কিনতে পাওয়া যায়। বছরের অন্যান্য সময়ের তুলনায় রমজান মাসে বাসন্তী রঙের চাহিদা অনেকটাই বেড়ে যায় বলে মহাজনপট্টি এলাকার তিনজন বিক্রেতা জানিয়েছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দক্ষিণ সুরমার কদমতলী এলাকার দুই বিক্রেতা জানান, জিলাপি তৈরিতে বাসন্তী রং (শস্যফুলি) এবং বিভিন্ন ধরনের বড়া মচমচে রাখতে পোড়া মবিল ব্যবহার করা হচ্ছে। বছরের পর বছর ধরে এমনটা হয়ে আসছে। গতকাল বেলা দুইটায় নগরের বারুতখানা এলাকায় ইফতারসামগ্রী কিনতে আসা খায়রুল কবীর বলেন, ‘বাজারের খোলা ও নিম্নমানের দোকান থেকে আমি ইফতারসামগ্রী কিনি না। যেসব সামগ্রীতে রং কিংবা পোড়া মবিল মেশানোর সুযোগ থাকে, সেসব খাবার আমি ইফতারে বর্জন করে থাকি।’
সিলেটের জেলা প্রশাসক মো. শহিদুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘রমজানের প্রথম দিন থেকেই জেলা প্রশাসন প্রায় সব কটি এলাকায় ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করছেন। ইফতার ও মিষ্টিজাত সামগ্রীতে বাসন্তী রং কিংবা পোড়া মবিল ব্যবহারকারীদের বিরুদ্ধেও শিগগির জোরেশোরে অভিযান চালানো হবে।’

No comments

Powered by Blogger.