রেকর্ড by তালহা বিন নজরুল
ফের
এক পেশে ফাইনাল, অস্ট্রেলিয়াই চ্যাম্পিয়ন। উড়ন্ত নিউজিল্যান্ডকে উড়িয়ে
বিশ্বকাপ ক্রিকেটের শিরোপা আবারও নিজেদের ঘরে ফিরিয়ে এনেছে অস্ট্রেলিয়া।
সেমিফাইনালে গতবারের চ্যাম্পিয়ন ভারতকে হারিয়ে শিরোপাটা স্বাগতিকদের কাছে
থাকা নিশ্চিত করেছিল অস্ট্রেলিয়া। মার মার কাট কাট করে ফাইনালে ওঠা
অদম্য-অজেয়-অপ্রতিরোধ্য নিউজিল্যান্ডকে পরাজয়ের গ্লানি নিয়েই মাঠ ছাড়তে
হলো। টসে জিতে ব্যাট করতে নেমে ৪৫ ওভারে মাত্র ১৮৩ রান করে অলআউট হয়ে যায়
নিউজিল্যান্ড। জবাবে অস্ট্রেলিয়া (৩৩.১) ১০১ বল আর সাতটি উইকেট হাতে রেখে
জয়ের বন্দরে পৌঁছে যায় অস্ট্রেলিয়া। নতুন কোন চ্যাম্পিয়ন পেলো না ক্রিকেট
বিশ্ব। ১১ আসরে পঞ্চমবারের মতো শিরোপা জিতলো অস্ট্রেলিয়া। আগের দিন ওয়ান ডে
ক্রিকেট থেকে অবসরের ঘোষণা দিয়ে রেখেছিলেন। কাল বিশ্বকাপ জয়ে তার বিদায়টাও
ঐতিহাসিক হয়ে রইলো। রেকর্ড ৯৩ হাজারে বেশি দর্শকের সামনে মাথা উঁচু করে
বিদায় নেয়ার চেয়ে বড় মঞ্চ আর হতে পারে না। চিত্রটা কি আগের দিনই তার
দিব্যদৃষ্টিতে ফুটে উঠেছিল? অ্যালান বর্ডার, স্টিভ ওয়াহ, রিকি পন্টিংয়ের
পাশে ট্রফি হাতে তার ছবিটাও শোভা পাবে এখন ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়ার দেয়ালে।
১৯৮৭-তে অস্ট্রেলিয়ার প্রথম শিরোপাজয়ী অধিনায়ক অ্যালান বর্ডার। এরপর ১৯৯৯-এ
স্টিভ ওয়াহ এবং ২০০৩ ও ২০০৭-এ রিকি পন্টিংয়ের নেতৃত্বে চ্যাম্পিয়ন হয়
অস্ট্রেলিয়া। এ জয়ে নিজেদের সর্বকালের সেরা ক্রিকেট দলে পরিণত করলো
অস্ট্রেলিয়া। পাঁচটি পৃথক দলকে হারিয়ে পাঁচটি পৃথক মহাদেশ থেকে শিরোপা
জিতলো তারা। ১৯৭৫এ ওয়েস্ট ইন্ডিজ আর ১৯৯৬-তে শ্রীলঙ্কার কাছে ফাইনালে হেরে
যায় অজিরা। হেরেও খুব একটা আফসোস নেই নিউজিল্যান্ড শিবিরে। পুরস্কার বিতরণী
অনুষ্ঠানে তাদের চেহারা মলিন দেখালেও কিউই দল দেশে ফিরেছে বীরের বেশেই।
বিশ্বকাপের ফাইনালে খেলার যোগ্যতা অর্জনই তাদের পূর্বের সব কৃতিত্ব ম্লান
করে দেয়। খেলা শেষে বিজয়ী অধিনায়কের হাতে পুরস্কার তুলে দেন আইসিসির
চেয়ারম্যান ভারতের এন শ্রীনিবাসন। অলঙ্কারিক প্রেসিডেন্ট বাংলাদেশের আ হ ম
মুস্তফা কামালকে পুরস্কার বিতরণী মঞ্চেও ডাকা হয়নি। তবে ম্যান অব দ্য
ফাইনাল জেমস ফকনার ও ম্যান অব দ্য টুর্নামেন্ট মিচেল স্টার্কের হাতে
পুরস্কার তুলে দেন বিশ্বকাপ ক্রিকেট ২০১৫-এর বিশেষ দূত ভারতের শচীন
টেন্ডুলকার।
ব্যাটসম্যানদের বিশ্বকাপে রানের বন্যার তোড়ের মধ্যেও ফাইনাল ও পুরো আসরের সেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কার পেলেন দুই জন বোলার। অস্ট্রেলিয়াতে ১৯৯২ বিশ্বকাপে যেখানে ৮টি সেঞ্চুরি হয়েছিল সেখানে এবার হয়েছে ৩৮টি। তবুও শেষটা হলো বোলারদের দাপটেই। যেখানে কোয়ার্টার ফাইনালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ৩৯৩ রান করেছিল নিউজিল্যান্ড সেখানে কাল তাদের সংগ্রহ অর্ধেকও না। অস্ট্রেলিয়ার মিচেল স্টার্ক, মিচের জনসন ও জেমস ফকনার মিলে আট উইকেট নিলেও নিউজিল্যান্ডের দুই আগুনে বোলার ট্রেন্ট বোল্ট আর টিম সাউদি আার ঘুর্ণি বোলার ডেনিয়েল ভেট্টরি অজি ব্যাটসম্যানদের কাবু করতে পারেন নি। ১৯৮৩ বিশ্বকাপে ভারত ১৮৩ রানে অলআউট হয়েও শিরোপা জিতেছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হারিয়ে। তবে কিউই বোলাররা সেরকম কোন সম্ভবনাও জাগাতে পারেননি। নিউজিল্যান্ডের কাছে গ্রুপ পর্বে হেরে যাওয়া অস্ট্রেলিয়া এক জয়ে যেন দুই লক্ষ্য হাসিল করলো।
১৮৪ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে অস্ট্রেলিয়াও শুরুতে আঘাত পায়। দলের রান যখন সবে দুই তখন ট্রেন্ট বোল্টের শিকার হয়ে অ্যারন ফিঞ্চ ফিরে গেলে তাসমান সাগরের ওপারে আনন্দের ঢেউ জেগে ওঠে। কিন্তু সে ঢেউ ক্রমেই স্তিমিত হয়ে আসে ওয়ার্নার-স্মিথের প্রতিরোধে। দ্বিতীয় উইকেটে সতর্কতার সঙ্গে এগুতে থাকলেও ওয়ার্নার হাফ সেঞ্চুরি থেকে ৫ রান দূরে থাকতেই হেনরির শিকার হন। এরপর দর্শকদের মুহুর্মুহু করতালিতে ক্রিজে আসেন বিদায়ী অধিনায়ক মাইকেল ক্লার্ক। পিঠের ব্যথা নিয়ে তার এ আসরে খেলাটাই অনিশ্চয়তায় ঢাকা ছিল। দলে স্থান পেলেও তিনি নিজেকে মেলে ধরতে পারছিলেন না। মাত্র একটি অর্ধশতকই তার সেরা স্কোর। সেই ক্লার্ক যে বিদায় বেলাতে ঔজ্জ্বল্য ছড়াবেন কে জানত। কি ধীরস্থির কিন্তু অবিচল এক ইনিংস খেলে দলকে জয়ের বন্দরে পৌঁছে দিয়েই ক্ষান্ত হন তিনি। ৭২ বলে ৭৬ রান, ১০টি চার আর একটি ছক্কা। লো স্কোরিং ম্যাচে দুই উইকেট পড়ার পর এর চেয়ে আদর্শ ইনিংস হয় না। ১৯৯২ বিশ্বকাপে ঠিক এমনভাবেই পাকিস্তানকে উদ্ধার করেছিলেন কিংবদন্তি দুই ক্রিকেটার ইমরান খান ও জাভেদ মিয়াঁদাদ। তৃতীয় উইকেটে ১১২ রানের জুটি যখন বিচ্ছিন্ন হয় জয়ের জন্য অস্ট্রেলিয়ার দরকার আর মাত্র ৯ রান। টানা ৫ খেলায় ফিফটি প্লাস ইনিংস খেলে বাকিটা সেরে নেন ক্লার্কের উত্তরসূরি স্টিভেন স্মিথ। তিনি অপরাজিত থাকেন ৭১ বলে ৫৬ রান করে। মাত্র তিনটি চার মারেন তিনি। ক্রিজে ক্লার্কের সম্মানেই তিনি যেন নিজেকে গুটিয়ে রাখেন কাল। টসে জেতার পর কিউই শিবিরে বেশ স্বস্তির ভাব ফিরে আসে। তারা মোটামুটি নিশ্চিত হয় যে, তিন শতাধিক রানের টার্গেট দিলে অস্ট্রেলিয়াকে আর কে পায়। আত্মবিশ্বাসে বলীয়ান হওয়ার কারণও ছিল অনেক। মার্টিন গাপটিল আর ব্রেন্ডন ম্যাককালাম তো এবারের নায়ক। কিন্তু মিচেল স্টার্কের প্রথম স্পেলেই যেন খেলার ভবিষ্যৎ নির্ধারিত হয়ে যায়। ১৪৮ কিলোমিটার বেগের প্রথম বলে রান নয়, দ্বিতীয় বলে গাপটিল এক রান নেয়ার পর তৃতীয় বল মোকাবিলা করেন ম্যাককালাম। তিনি প্রথম বলটি পান ১৫০ কিলোমিটার বেগের। হাঁকাতে গিয়েছিলেন কিন্তু লাইন মিস। বল কোন মতে স্টাম্প ছুঁয়ে বেরিয়ে যায়। দ্বিতীয় বলেও নার্ভাস। ওভারের পঞ্চম আর নিজের তৃতীয় বলে আর বাঁচতে পারলেন না বোলারদের ত্রাস হয়ে ওঠা ব্রেন্ডন ম্যাককালাম। যার দিকে গোটা বিশ্ব তিনিই ফিরে গেলেন শূন্য হাতে। এরপর ৩ রানের সময় গাপটিল আর ৩৯ রানের মাথায় কেন উইলিয়ামসন বিদায় নিলে খেলা অস্ট্রেলিয়ার দিকে ঝুঁকে যায়। এরপর রস টেইলর ও গ্রান্ট এলিয়ট ধীরে ধীরে খেলায় ফেরার চেষ্টা করেন। অনেকটা সফলও হন। কিন্তু ফকনার এক ওভারেই এই দুই খুঁটি উপড়ে দিলে ফের ধস নামে কিউই শিবিরে। ১৫০/৩ থেকে স্কোর দাঁড়ায় ১৫১/৬। এরপর তাসের ঘরের মতো ভেঙে যায় সব। ২৩ রানের ব্যবধানে ৭টি উইকেট হারিয়ে লড়াইয়ের পুঁজি গড়তে ব্যর্থ হয় প্রথম ফাইনালে ওঠা নিউজিল্যান্ড।
ব্যাটসম্যানদের বিশ্বকাপে রানের বন্যার তোড়ের মধ্যেও ফাইনাল ও পুরো আসরের সেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কার পেলেন দুই জন বোলার। অস্ট্রেলিয়াতে ১৯৯২ বিশ্বকাপে যেখানে ৮টি সেঞ্চুরি হয়েছিল সেখানে এবার হয়েছে ৩৮টি। তবুও শেষটা হলো বোলারদের দাপটেই। যেখানে কোয়ার্টার ফাইনালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ৩৯৩ রান করেছিল নিউজিল্যান্ড সেখানে কাল তাদের সংগ্রহ অর্ধেকও না। অস্ট্রেলিয়ার মিচেল স্টার্ক, মিচের জনসন ও জেমস ফকনার মিলে আট উইকেট নিলেও নিউজিল্যান্ডের দুই আগুনে বোলার ট্রেন্ট বোল্ট আর টিম সাউদি আার ঘুর্ণি বোলার ডেনিয়েল ভেট্টরি অজি ব্যাটসম্যানদের কাবু করতে পারেন নি। ১৯৮৩ বিশ্বকাপে ভারত ১৮৩ রানে অলআউট হয়েও শিরোপা জিতেছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হারিয়ে। তবে কিউই বোলাররা সেরকম কোন সম্ভবনাও জাগাতে পারেননি। নিউজিল্যান্ডের কাছে গ্রুপ পর্বে হেরে যাওয়া অস্ট্রেলিয়া এক জয়ে যেন দুই লক্ষ্য হাসিল করলো।
১৮৪ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে অস্ট্রেলিয়াও শুরুতে আঘাত পায়। দলের রান যখন সবে দুই তখন ট্রেন্ট বোল্টের শিকার হয়ে অ্যারন ফিঞ্চ ফিরে গেলে তাসমান সাগরের ওপারে আনন্দের ঢেউ জেগে ওঠে। কিন্তু সে ঢেউ ক্রমেই স্তিমিত হয়ে আসে ওয়ার্নার-স্মিথের প্রতিরোধে। দ্বিতীয় উইকেটে সতর্কতার সঙ্গে এগুতে থাকলেও ওয়ার্নার হাফ সেঞ্চুরি থেকে ৫ রান দূরে থাকতেই হেনরির শিকার হন। এরপর দর্শকদের মুহুর্মুহু করতালিতে ক্রিজে আসেন বিদায়ী অধিনায়ক মাইকেল ক্লার্ক। পিঠের ব্যথা নিয়ে তার এ আসরে খেলাটাই অনিশ্চয়তায় ঢাকা ছিল। দলে স্থান পেলেও তিনি নিজেকে মেলে ধরতে পারছিলেন না। মাত্র একটি অর্ধশতকই তার সেরা স্কোর। সেই ক্লার্ক যে বিদায় বেলাতে ঔজ্জ্বল্য ছড়াবেন কে জানত। কি ধীরস্থির কিন্তু অবিচল এক ইনিংস খেলে দলকে জয়ের বন্দরে পৌঁছে দিয়েই ক্ষান্ত হন তিনি। ৭২ বলে ৭৬ রান, ১০টি চার আর একটি ছক্কা। লো স্কোরিং ম্যাচে দুই উইকেট পড়ার পর এর চেয়ে আদর্শ ইনিংস হয় না। ১৯৯২ বিশ্বকাপে ঠিক এমনভাবেই পাকিস্তানকে উদ্ধার করেছিলেন কিংবদন্তি দুই ক্রিকেটার ইমরান খান ও জাভেদ মিয়াঁদাদ। তৃতীয় উইকেটে ১১২ রানের জুটি যখন বিচ্ছিন্ন হয় জয়ের জন্য অস্ট্রেলিয়ার দরকার আর মাত্র ৯ রান। টানা ৫ খেলায় ফিফটি প্লাস ইনিংস খেলে বাকিটা সেরে নেন ক্লার্কের উত্তরসূরি স্টিভেন স্মিথ। তিনি অপরাজিত থাকেন ৭১ বলে ৫৬ রান করে। মাত্র তিনটি চার মারেন তিনি। ক্রিজে ক্লার্কের সম্মানেই তিনি যেন নিজেকে গুটিয়ে রাখেন কাল। টসে জেতার পর কিউই শিবিরে বেশ স্বস্তির ভাব ফিরে আসে। তারা মোটামুটি নিশ্চিত হয় যে, তিন শতাধিক রানের টার্গেট দিলে অস্ট্রেলিয়াকে আর কে পায়। আত্মবিশ্বাসে বলীয়ান হওয়ার কারণও ছিল অনেক। মার্টিন গাপটিল আর ব্রেন্ডন ম্যাককালাম তো এবারের নায়ক। কিন্তু মিচেল স্টার্কের প্রথম স্পেলেই যেন খেলার ভবিষ্যৎ নির্ধারিত হয়ে যায়। ১৪৮ কিলোমিটার বেগের প্রথম বলে রান নয়, দ্বিতীয় বলে গাপটিল এক রান নেয়ার পর তৃতীয় বল মোকাবিলা করেন ম্যাককালাম। তিনি প্রথম বলটি পান ১৫০ কিলোমিটার বেগের। হাঁকাতে গিয়েছিলেন কিন্তু লাইন মিস। বল কোন মতে স্টাম্প ছুঁয়ে বেরিয়ে যায়। দ্বিতীয় বলেও নার্ভাস। ওভারের পঞ্চম আর নিজের তৃতীয় বলে আর বাঁচতে পারলেন না বোলারদের ত্রাস হয়ে ওঠা ব্রেন্ডন ম্যাককালাম। যার দিকে গোটা বিশ্ব তিনিই ফিরে গেলেন শূন্য হাতে। এরপর ৩ রানের সময় গাপটিল আর ৩৯ রানের মাথায় কেন উইলিয়ামসন বিদায় নিলে খেলা অস্ট্রেলিয়ার দিকে ঝুঁকে যায়। এরপর রস টেইলর ও গ্রান্ট এলিয়ট ধীরে ধীরে খেলায় ফেরার চেষ্টা করেন। অনেকটা সফলও হন। কিন্তু ফকনার এক ওভারেই এই দুই খুঁটি উপড়ে দিলে ফের ধস নামে কিউই শিবিরে। ১৫০/৩ থেকে স্কোর দাঁড়ায় ১৫১/৬। এরপর তাসের ঘরের মতো ভেঙে যায় সব। ২৩ রানের ব্যবধানে ৭টি উইকেট হারিয়ে লড়াইয়ের পুঁজি গড়তে ব্যর্থ হয় প্রথম ফাইনালে ওঠা নিউজিল্যান্ড।
No comments