বিশ্বকাপের রং হলুদ! by উৎপল শুভ্র
মাইকেল ক্লার্কের হাতে বিশ্বকাপ ট্রফি, অস্ট্রেলিয়ার বিশ্বজয়ের উচ্ছ্বাস। এমসিজিতে ৯৩ হাজার দর্শকের সামনে পঞ্চম বিশ্বকাপ শিরোপা জয় করেছে অস্ট্রেলিয়া |
বিশ্বকাপ ট্রফির সোনালি রংটা বদলে এখন সেটিকে হলুদ করে দিলেই হয়!
বিশ্বকাপকে তো হলুদই বানিয়ে ফেলেছে অস্ট্রেলিয়া! কাল এমসিজিতে অস্ট্রেলিয়ার ইতিহাসে কোনো ক্রিকেট ম্যাচে সবচেয়ে বেশি দর্শকের সামনে পঞ্চমবারের মতো ট্রফিটা হাতে নিলেন অস্ট্রেলিয়ান অধিনায়ক।
১১টি বিশ্বকাপের ৫টিই তাদের, অন্য কোনো দলের যেখানে দুবারের বেশি বিশ্বকাপ জেতা হয়নি। ৫০ ওভারের ক্রিকেটে অস্ট্রেলিয়ার শ্রেষ্ঠত্বের আসল প্রমাণ এখানে নয়। এই ৫টি বিশ্বকাপ এসেছে ক্রিকেট খেলা হয় এমন পাঁচ মহাদেশ থেকেই। বিশ্বকাপ ক্রিকেটের রং তো আসলেই হলুদ! অস্ট্রেলিয়ার ফাইনাল যেমন হয়, এটাও তেমনই হলো। সেই ১৯৮৭ সালে বিশ্বকাপে শিরোপা পঞ্চকের প্রথমটি জয়ের সময়ই শুধু ফাইনালের শেষ অঙ্কেও কী হয় কী হয় অনিশ্চয়তা ছিল। পরের চারটি বিশ্বকাপ ফাইনালে একই গল্প। প্রথম ইনিংসেই ম্যাচ শেষ করে দিয়েছে অস্ট্রেলিয়া। ২০০৩ ও ২০০৭ বিশ্বকাপে তা করেছিলেন ব্যাটসম্যানরা। ১৯৯৯ বিশ্বকাপ ফাইনালের কথা মনে করিয়ে দিয়ে কাল অস্ট্রেলিয়ান বোলাররা দেখা দিলেন অপ্রতিরোধ্য বিধ্বংসী রূপে।
ম্যাচের ৭৯তম ওভারের প্রথম বলে স্টিভ স্মিথের বাউন্ডারিতে ম্যাচটা আনুষ্ঠানিকভাবে শেষ হলো, তবে আসলে তা শেষ হয়ে গেছে আরও অনেক আগেই। অনেকে বলবেন, প্রথম ওভারেই। ফাইনালের সবচেয়ে রোমাঞ্চক লড়াইয়ের নাম ছিল ‘ব্রেন্ডন ম্যাককালাম বনাম মিচেল স্টার্ক।’ ম্যাককালাম নেমেছিলেন ১৯১.৮১ স্ট্রাইক রেট নিয়ে, স্টার্কের প্রতি ১৬.৭ বলে উইকেট। সেই লড়াই শুরু হওয়ার আগেই যেন শেষ! স্টার্কের প্রথম দুটি বলেই চালিয়েও বেঁচে গেলেন ম্যাককালাম। তৃতীয় বলটিতে আলো জ্বলে উঠল স্টাম্পে।
নিউজিল্যান্ডের স্বপ্নযাত্রায় শুরুতে ম্যাককালাম-ঝড়ের সবচেয়ে বড় অবদান। সেই ম্যাককালামের শূন্য রানে বিদায়েই লেখা হয়ে গেল একতরফা এক ফাইনালের পাণ্ডুলিপি। স্কোরবোর্ডে ৩৯ রান তুলতেই মার্টিন গাপটিল ও কেন উইলিয়ামসনেরও ড্রেসিংরুমে ফেরা সারা। ম্যাচ শুরুর আগের ‘ফাইনালটা কে জিতবে’ আলোচনা তখন ‘ফাইনালটা কখন শেষ হবে’ আলোচনায় রূপান্তরিত।
তবে ভাঙাচোরা ইনিংস পুনর্নির্মাণের কঠিন কাজটা তো করেই ফেলেছিলেন রস টেলর ও গ্রান্ট এলিয়ট। ৩৬তম ওভারে যখন ব্যাটিং পাওয়ার প্লে শুরু হলো, চতুর্থ উইকেট জুটিতে ১১১ রান উঠে গেছে। ২৬০-৭০ তখন একটুও অসম্ভব বলে মনে হচ্ছে না। বলে ব্যাট ঠিকমতো লাগাতে পারলে এর চেয়ে বেশিও হয়ে যেতে পারে! ম্যাককালামের আউটেই ম্যাচের মীমাংসা হয়ে গেছে বলে যদি কেউ না-ও মানেন; পরের আট বলেই যে তা হয়ে গেল, এ নিয়ে বোধ হয় কোনো তর্ক নেই।
পাওয়ার প্লের প্রথম বলেই ডান দিকে ঝাঁপিয়ে অবিশ্বাস্য এক ক্যাচে টেলরকে ফেরালেন হাডিন। মাঝখানে এক বল। পরের বলেই কোরি অ্যান্ডারসনকে বোল্ড করে দিয়ে জেমস ফকনার বুঝিয়ে দিলেন, চোট পাওয়ার পরও কেন তাঁকে বয়ে বেড়িয়েছে অস্ট্রেলিয়া! স্টার্ক ফিরে এসেছেন আক্রমণে, তিনি কি আর বসে থাকবেন! লুক রনকিকে স্লিপে ক্লার্কের ক্যাচ বানালেন। পাওয়ার প্লেতে যেখানে বোলিং আক্রমণের ছত্রখান হয়ে যাওয়ার কথা, উল্টো ধ্বংসস্তূপে পরিণত নিউজিল্যান্ডের ব্যাটিং। গ্রান্ট এলিয়ট শুরু থেকেই দারুণ খেলছিলেন। কিন্তু ব্যাটিংয়ের লেজ শুরু হয়ে যাওয়ায় তাঁকে বাড়তি ঝুঁকি নিতেই হলো। ফকনারের স্লোয়ার বল মৃত্যু লিখে দিল তাঁরও। নিউজিল্যান্ড ১৮৩ রানে অলআউট!
বিশ্বকাপ ফাইনালে কোনো দল প্রথমে ব্যাটিং করে ১৮৩ করলে অবধারিতভাবেই মনে পড়বে ১৯৮৩ বিশ্বকাপের লর্ডস ফাইনাল। আগের দুবারের চ্যাম্পিয়ন প্রমত্ত ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ভারত ১৮৩ রান করার পর তো ওই ফাইনালও শেষ বলেই ধরে নিয়েছিলেন সবাই। অথচ ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ১৪০ রানে অলআউট করে দিয়ে লেখা হয়েছিল ভারতীয় রূপকথা!
ব্রেন্ডন ম্যাককালাম কি ওই ফাইনালের গল্পটা জানতেন? ফিল্ডিংয়ে নামার আগে সতীর্থদের মনে করিয়ে দিয়েছিলেন সে কথা? কে জানে! তবে এটা খুব সহজেই অনুমান করা যাচ্ছে, ‘অসম্ভব বলে কিছু নেই’ বলে যে মন্ত্রটা এই বিশ্বকাপে নিউজিল্যান্ডের স্বপ্নযাত্রার মূলে, সেটি নিশ্চয়ই বলেছেন। হয়তো বলেছেন অকল্যান্ডে দুই দলের ম্যাচটির কথাও। যেটিতে এর চেয়ে কম রান করেও প্রায় জিতে গিয়েছিল অস্ট্রেলিয়া! কিন্তু অকল্যান্ড তো আর প্রতিদিন হওয়ার নয়।
এই বিশ্বকাপে ম্যাককালামের অধিনায়কত্ব শুধুই আক্রমণের তারে বাঁধা। কাল তো আক্রমণ না করে কোনো উপায়ই ছিল না। দ্বিতীয় ওভারে ট্রেন্ট বোল্টের বোলিংয়ে চার স্লিপ দাঁড় করিয়ে দিলেন। চতুর্থ বলেই অ্যারন ফিঞ্চকে ফিরিয়ে দিয়ে তাঁকে ছাড়িয়ে যাওয়া স্টার্ককে আবার ধরেও ফেললেন বোল্ট। বিশ্বকাপে দুজনেরই ২২টি করে উইকেট। এর পর আরও ৯.২ ওভার বোলিং করার পরও বজায় থাকল এই সমতাই। সেটিই আসলে অনিশ্চয়তার শেষ সম্ভাবনাটুকুও মুছে দিল ম্যাচের গা থেকে।
৪৬ বলে ৪৫ করে ডেভিড ওয়ার্নারের আউটটি ম্যাচের বৃহত্তর প্রেক্ষাপটে কোনো আঁচড়ই ফেলতে পারেনি। যা পেরেছে তা হলো, মাইকেল ক্লার্কের বিদায়টা রঙিন করে তুলতে। বিশ্বকাপ ফাইনালের আগের দিন হঠাৎই ওয়ানডে ছাড়ার ঘোষণা দিয়ে দিয়েছেন। ক্লার্ক নামার সময় তাই দাঁড়িয়ে গেল এমসিজির ৯৩০১৩ জন দর্শক। আবার যখন উঠে দাঁড়ালেন তাঁরা, অস্ট্রেলিয়ার পুরো দলও বাউন্ডারি লাইনের বাইরে দাঁড়িয়ে। মাইকেল ক্লার্ক যে আউট হয়ে ফিরছেন!
ম্যাচ নিয়ে কোনো আগ্রহই তখন অবশিষ্ট নেই। জয়ের সঙ্গে অস্ট্রেলিয়ার দূরত্ব মাত্র ৯ রানের। জয়সূচক রানটা ক্লার্কের ব্যাট থেকে এলে সত্যিকার অর্থেই সেটি রূপকথা হয়ে যেত। সেটি একটু বেশি অবাস্তব হয়ে যায় বলেই কি না, ম্যাট হেনরির বল ব্যাটের কানায় লাগিয়ে বোল্ড হয়ে গেলেন ক্লার্ক। এর আগে ৭২ বলে ৭৪ রানের ঝলমলে ইনিংস। যখন নেমেছেন, স্মিথ তখন ১৪ রানে। যখন ফিরছেন, স্মিথ অনেক পেছনে (৪৭)। ভেট্টোরিকে সোজা উড়িয়ে মারা ছক্কাটির পাশে ১০টি চার, যার চারটি সাউদির পরপর চার বলে।
জয়সূচক রানটা যে স্মিথের ব্যাট থেকেই এল, এরও একটা প্রতীকী অর্থ চাইলেই খুঁজে নেওয়া যায়।
হলদে রঙের অস্ট্রেলিয়ায় মাইকেল ক্লার্ক এখন অতীত আর স্টিভ স্মিথ ভবিষ্যৎ!
নিউজিল্যান্ড: ৪৫ ওভারে ১৮৩
অস্ট্রেলিয়া: ৩৩.১ ওভারে ১৮৬/৩
ফল: অস্ট্রেলিয়া ৭ উইকেটে জয়ী
বিশ্বকাপকে তো হলুদই বানিয়ে ফেলেছে অস্ট্রেলিয়া! কাল এমসিজিতে অস্ট্রেলিয়ার ইতিহাসে কোনো ক্রিকেট ম্যাচে সবচেয়ে বেশি দর্শকের সামনে পঞ্চমবারের মতো ট্রফিটা হাতে নিলেন অস্ট্রেলিয়ান অধিনায়ক।
১১টি বিশ্বকাপের ৫টিই তাদের, অন্য কোনো দলের যেখানে দুবারের বেশি বিশ্বকাপ জেতা হয়নি। ৫০ ওভারের ক্রিকেটে অস্ট্রেলিয়ার শ্রেষ্ঠত্বের আসল প্রমাণ এখানে নয়। এই ৫টি বিশ্বকাপ এসেছে ক্রিকেট খেলা হয় এমন পাঁচ মহাদেশ থেকেই। বিশ্বকাপ ক্রিকেটের রং তো আসলেই হলুদ! অস্ট্রেলিয়ার ফাইনাল যেমন হয়, এটাও তেমনই হলো। সেই ১৯৮৭ সালে বিশ্বকাপে শিরোপা পঞ্চকের প্রথমটি জয়ের সময়ই শুধু ফাইনালের শেষ অঙ্কেও কী হয় কী হয় অনিশ্চয়তা ছিল। পরের চারটি বিশ্বকাপ ফাইনালে একই গল্প। প্রথম ইনিংসেই ম্যাচ শেষ করে দিয়েছে অস্ট্রেলিয়া। ২০০৩ ও ২০০৭ বিশ্বকাপে তা করেছিলেন ব্যাটসম্যানরা। ১৯৯৯ বিশ্বকাপ ফাইনালের কথা মনে করিয়ে দিয়ে কাল অস্ট্রেলিয়ান বোলাররা দেখা দিলেন অপ্রতিরোধ্য বিধ্বংসী রূপে।
ম্যাচের ৭৯তম ওভারের প্রথম বলে স্টিভ স্মিথের বাউন্ডারিতে ম্যাচটা আনুষ্ঠানিকভাবে শেষ হলো, তবে আসলে তা শেষ হয়ে গেছে আরও অনেক আগেই। অনেকে বলবেন, প্রথম ওভারেই। ফাইনালের সবচেয়ে রোমাঞ্চক লড়াইয়ের নাম ছিল ‘ব্রেন্ডন ম্যাককালাম বনাম মিচেল স্টার্ক।’ ম্যাককালাম নেমেছিলেন ১৯১.৮১ স্ট্রাইক রেট নিয়ে, স্টার্কের প্রতি ১৬.৭ বলে উইকেট। সেই লড়াই শুরু হওয়ার আগেই যেন শেষ! স্টার্কের প্রথম দুটি বলেই চালিয়েও বেঁচে গেলেন ম্যাককালাম। তৃতীয় বলটিতে আলো জ্বলে উঠল স্টাম্পে।
নিউজিল্যান্ডের স্বপ্নযাত্রায় শুরুতে ম্যাককালাম-ঝড়ের সবচেয়ে বড় অবদান। সেই ম্যাককালামের শূন্য রানে বিদায়েই লেখা হয়ে গেল একতরফা এক ফাইনালের পাণ্ডুলিপি। স্কোরবোর্ডে ৩৯ রান তুলতেই মার্টিন গাপটিল ও কেন উইলিয়ামসনেরও ড্রেসিংরুমে ফেরা সারা। ম্যাচ শুরুর আগের ‘ফাইনালটা কে জিতবে’ আলোচনা তখন ‘ফাইনালটা কখন শেষ হবে’ আলোচনায় রূপান্তরিত।
তবে ভাঙাচোরা ইনিংস পুনর্নির্মাণের কঠিন কাজটা তো করেই ফেলেছিলেন রস টেলর ও গ্রান্ট এলিয়ট। ৩৬তম ওভারে যখন ব্যাটিং পাওয়ার প্লে শুরু হলো, চতুর্থ উইকেট জুটিতে ১১১ রান উঠে গেছে। ২৬০-৭০ তখন একটুও অসম্ভব বলে মনে হচ্ছে না। বলে ব্যাট ঠিকমতো লাগাতে পারলে এর চেয়ে বেশিও হয়ে যেতে পারে! ম্যাককালামের আউটেই ম্যাচের মীমাংসা হয়ে গেছে বলে যদি কেউ না-ও মানেন; পরের আট বলেই যে তা হয়ে গেল, এ নিয়ে বোধ হয় কোনো তর্ক নেই।
পাওয়ার প্লের প্রথম বলেই ডান দিকে ঝাঁপিয়ে অবিশ্বাস্য এক ক্যাচে টেলরকে ফেরালেন হাডিন। মাঝখানে এক বল। পরের বলেই কোরি অ্যান্ডারসনকে বোল্ড করে দিয়ে জেমস ফকনার বুঝিয়ে দিলেন, চোট পাওয়ার পরও কেন তাঁকে বয়ে বেড়িয়েছে অস্ট্রেলিয়া! স্টার্ক ফিরে এসেছেন আক্রমণে, তিনি কি আর বসে থাকবেন! লুক রনকিকে স্লিপে ক্লার্কের ক্যাচ বানালেন। পাওয়ার প্লেতে যেখানে বোলিং আক্রমণের ছত্রখান হয়ে যাওয়ার কথা, উল্টো ধ্বংসস্তূপে পরিণত নিউজিল্যান্ডের ব্যাটিং। গ্রান্ট এলিয়ট শুরু থেকেই দারুণ খেলছিলেন। কিন্তু ব্যাটিংয়ের লেজ শুরু হয়ে যাওয়ায় তাঁকে বাড়তি ঝুঁকি নিতেই হলো। ফকনারের স্লোয়ার বল মৃত্যু লিখে দিল তাঁরও। নিউজিল্যান্ড ১৮৩ রানে অলআউট!
বিশ্বকাপ ফাইনালে কোনো দল প্রথমে ব্যাটিং করে ১৮৩ করলে অবধারিতভাবেই মনে পড়বে ১৯৮৩ বিশ্বকাপের লর্ডস ফাইনাল। আগের দুবারের চ্যাম্পিয়ন প্রমত্ত ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ভারত ১৮৩ রান করার পর তো ওই ফাইনালও শেষ বলেই ধরে নিয়েছিলেন সবাই। অথচ ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ১৪০ রানে অলআউট করে দিয়ে লেখা হয়েছিল ভারতীয় রূপকথা!
ব্রেন্ডন ম্যাককালাম কি ওই ফাইনালের গল্পটা জানতেন? ফিল্ডিংয়ে নামার আগে সতীর্থদের মনে করিয়ে দিয়েছিলেন সে কথা? কে জানে! তবে এটা খুব সহজেই অনুমান করা যাচ্ছে, ‘অসম্ভব বলে কিছু নেই’ বলে যে মন্ত্রটা এই বিশ্বকাপে নিউজিল্যান্ডের স্বপ্নযাত্রার মূলে, সেটি নিশ্চয়ই বলেছেন। হয়তো বলেছেন অকল্যান্ডে দুই দলের ম্যাচটির কথাও। যেটিতে এর চেয়ে কম রান করেও প্রায় জিতে গিয়েছিল অস্ট্রেলিয়া! কিন্তু অকল্যান্ড তো আর প্রতিদিন হওয়ার নয়।
এই বিশ্বকাপে ম্যাককালামের অধিনায়কত্ব শুধুই আক্রমণের তারে বাঁধা। কাল তো আক্রমণ না করে কোনো উপায়ই ছিল না। দ্বিতীয় ওভারে ট্রেন্ট বোল্টের বোলিংয়ে চার স্লিপ দাঁড় করিয়ে দিলেন। চতুর্থ বলেই অ্যারন ফিঞ্চকে ফিরিয়ে দিয়ে তাঁকে ছাড়িয়ে যাওয়া স্টার্ককে আবার ধরেও ফেললেন বোল্ট। বিশ্বকাপে দুজনেরই ২২টি করে উইকেট। এর পর আরও ৯.২ ওভার বোলিং করার পরও বজায় থাকল এই সমতাই। সেটিই আসলে অনিশ্চয়তার শেষ সম্ভাবনাটুকুও মুছে দিল ম্যাচের গা থেকে।
৪৬ বলে ৪৫ করে ডেভিড ওয়ার্নারের আউটটি ম্যাচের বৃহত্তর প্রেক্ষাপটে কোনো আঁচড়ই ফেলতে পারেনি। যা পেরেছে তা হলো, মাইকেল ক্লার্কের বিদায়টা রঙিন করে তুলতে। বিশ্বকাপ ফাইনালের আগের দিন হঠাৎই ওয়ানডে ছাড়ার ঘোষণা দিয়ে দিয়েছেন। ক্লার্ক নামার সময় তাই দাঁড়িয়ে গেল এমসিজির ৯৩০১৩ জন দর্শক। আবার যখন উঠে দাঁড়ালেন তাঁরা, অস্ট্রেলিয়ার পুরো দলও বাউন্ডারি লাইনের বাইরে দাঁড়িয়ে। মাইকেল ক্লার্ক যে আউট হয়ে ফিরছেন!
ম্যাচ নিয়ে কোনো আগ্রহই তখন অবশিষ্ট নেই। জয়ের সঙ্গে অস্ট্রেলিয়ার দূরত্ব মাত্র ৯ রানের। জয়সূচক রানটা ক্লার্কের ব্যাট থেকে এলে সত্যিকার অর্থেই সেটি রূপকথা হয়ে যেত। সেটি একটু বেশি অবাস্তব হয়ে যায় বলেই কি না, ম্যাট হেনরির বল ব্যাটের কানায় লাগিয়ে বোল্ড হয়ে গেলেন ক্লার্ক। এর আগে ৭২ বলে ৭৪ রানের ঝলমলে ইনিংস। যখন নেমেছেন, স্মিথ তখন ১৪ রানে। যখন ফিরছেন, স্মিথ অনেক পেছনে (৪৭)। ভেট্টোরিকে সোজা উড়িয়ে মারা ছক্কাটির পাশে ১০টি চার, যার চারটি সাউদির পরপর চার বলে।
জয়সূচক রানটা যে স্মিথের ব্যাট থেকেই এল, এরও একটা প্রতীকী অর্থ চাইলেই খুঁজে নেওয়া যায়।
হলদে রঙের অস্ট্রেলিয়ায় মাইকেল ক্লার্ক এখন অতীত আর স্টিভ স্মিথ ভবিষ্যৎ!
নিউজিল্যান্ড: ৪৫ ওভারে ১৮৩
অস্ট্রেলিয়া: ৩৩.১ ওভারে ১৮৬/৩
ফল: অস্ট্রেলিয়া ৭ উইকেটে জয়ী
No comments