সিঙ্গাপুরের ‘আলোকবর্তিকা’ লি কুয়ান ইউর চিরবিদায়

সিঙ্গাপুরের প্রতিষ্ঠাতা ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী প্রয়াত লি কুয়ান ইউকে
শেষবিদায় জানিয়েছে মানুষ। ছবি: এএফপি
শেষকৃত্যের জন্য লি কুয়ান ইউর মরদেহ বৃষ্টির মধ্যে সামরিক
শকটে করে পার্লামেন্ট ভবন থেকে নিয়ে যাওয়া হয় l এএফপি
‘যে আলো আমাদের এত দিন পথের দিশা দিয়েছে, তা আজ নিভে যাচ্ছে’—বলছিলেন সিঙ্গাপুরের প্রধানমন্ত্রী লি সেইন লুং। যাঁকে উদ্দেশ করে তাঁর এই শোকগাথা, সেই লি কুয়ান ইউ সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রীর বাবা। বাবার জন্য সন্তানের এই শোক কেবল ব্যক্তিগত সম্পর্কের অভিব্যক্তি নয়। গতকাল রোববার পুরো সিঙ্গাপুরই কেঁদেছে দেশটির প্রতিষ্ঠাতা সদ্য প্রয়াত লি কুয়ানের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায়। সিঙ্গাপুর ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটিতে লি কুয়ান ইউকে শেষবিদায় জানাতে এ কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী লুং। খবর এএফপির।
রাষ্ট্রনায়ক লি কুয়ান ইউ গত সোমবার ৯১ বছর বয়সে মারা যান। কয়েক দিন ধরে জাতীয় পতাকায় মোড়া লি কুয়ানের কফিনে শ্রদ্ধা জানান দেশের লাখো মানুষ। গতকাল মরদেহ পার্লামেন্ট ভবন থেকে নিয়ে যাওয়া হয় ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটিতে। ১৫ কিলোমিটারের এই শেষযাত্রায় হাজারো মানুষ শরিক হন। অঝোর বৃষ্টি থামাতে পারেনি জনস্রোত। ২১ বার তোপধ্বনি আর চারটি এফ-১৬ যুদ্ধবিমানের ‘ফ্লাই পাস্টের’ মাধ্যমে শেষশ্রদ্ধা জানানো হয় প্রয়াত নেতাকে। সিঙ্গাপুরে ২১ বার তোপধ্বনি শুধু দায়িত্ব পালনরত রাষ্ট্রপ্রধানের মৃত্যুতেই দেওয়ার রীতি। দেশের জনক লির ক্ষেত্রে এর ব্যতিক্রম হলো।
লির কফিন বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণে নিয়ে যাওয়ার সময় অনেককেই কাঁদতে দেখা যায়। অনেকেরই হাতে ছিল জাতীয় পতাকা। কেউ কেউ ফুল ছিটাচ্ছিলেন শববাহী শকটের ওপর। এ রকম হাজারো শোকাতুর মানুষের একজন তান ইয়েন লি। ২৬ বছর বয়সী তান ইয়েন সিঙ্গাপুর জেনারেল হাসপাতালের স্টাফ নার্স। সাত সপ্তাহ ধরে নিউমোনিয়ায় ভুগে ওই হাসপাতালেই শেষনিঃশ্বাস ত্যাগ করেন লি কুয়ান ইউ। তান বললেন, ‘তিনি যেন সিঙ্গাপুরের সব মানুষের পিতা। অতীত, বর্তমান আর ভবিষ্যতের সব মানুষের পিতা তিনি।’
সিঙ্গাপুরের সরকারি সূত্রগুলো বলেছে, লি কুয়ানকে গত কয়েক দিনে চিরবিদায় জানান সাড়ে ৪ লাখের বেশি মানুষ। সিঙ্গাপুরের মোট জনসংখ্যাই ৩৪ লাখ।
লি কুয়ানকে চিরবিদায় জানাতে হাজির হন বিশ্বের অনেক রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধান। ছিলেন সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটন, জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী টনি অ্যাবট, ইন্দোনেশিয়ার প্রেসিডেন্ট জোকো উইদোদোসহ অনেকে।
লি কুয়ান ইউ ১৯৫৯ সালে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে সিঙ্গাপুরের দায়িত্ব নিয়েছিলেন। ক্ষমতায় ছিলেন ৩১ বছর। তিনি শক্ত হাতে একসময়ের অনগ্রসর ও ক্ষুদ্র এই ব্রিটিশ উপনিবেশকে অত্যাধুনিক নগররাষ্ট্রে পরিণত করেন। অন্যদিকে স্বৈরতান্ত্রিক কায়দায় দেশ চালানোর জন্য সমালোচনাও হয়েছে তাঁর।

No comments

Powered by Blogger.