থমথমে রাজধানী
(রাজধানীর
বায়তুল মোকাররম এলাকায় একটি বাসে আজ রোববার দুপুরে আগুন দিয়েছে
দুর্বত্তরা। ময়মনসিংহ শহরের মাসকান্দা এলাকায় আজ বেলা পৌনে তিনটার দিকে
যাত্রীবাহী একটি বাসে আগুন দিয়েছে দুবৃর্ত্তরা। অন্যদিকে বিকেলে গাজীপুর
শহরের শিববাড়ি মোড় এলাকায় ঢাকা-গাজীপুর সড়কে বিকেল সোয়া পাঁচটার দিকে
ভিআইপি সাতাইশ পরিবহনের একটি বাসে আগুন দিয়েছে দুবৃত্তরা। স্থানীয়রা এবং
খবর পেয়ে জয়দেবপুর ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা গিয়ে আগুন নেভায়।আগুনে
বাসের সবগুলো আসন পুড়ে গেছে। এ ছাড়াও বিকেল সাড়ে চারটার দিকে চান্দনা
চৌরাস্তায় থেমে থাকা যাত্রীবাহী একটি বাসে আগুন দেয় দুর্বৃত্তরা। তবে এতে
কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি।) সন্ধ্যার
পর ভুতুড়ে শহরের রূপ নিচ্ছে রাজধানী ঢাকা। নামছে সুনসান নীরবতা। কমে গেছে
কোলাহল, যানবাহন চলাচল। রাস্তাঘাট ফাঁকা। শীতের কুয়াশামাখা রাতে থমথমে
পরিস্থিতি। রোববার দুপুরের পর থেকে রাজধানীতে ঘটছে সহিংসতা। পুড়িয়ে দেয়া
হয়েছে বেশ কয়েকটি যাত্রীবাহী বাস। নানা এলাকায় ঘটেছে অসংখ্য ককটেলের
বিস্ফোরণ। সন্ধ্যায় এসে নাগরিক-মনে ভর করছে উদ্বেগ। সোমবার দিনটি কেমন
কাটবে! এদিকে দেশের কোথাও থেকে ঢাকায় আসছে না দূরপাল্লার যানবাহন। আসছে না
লঞ্চ। দিন গড়িয়ে সন্ধ্যা নামতে নামতে ঢাকার সড়কগুলোতে যানবাহন কমতে থাকে।
রাতে গিয়ে ফাঁকা হয়ে যায় রাজপথ। একই সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর
সদস্যরাও তাদের তৎপরতা বাড়িয়েছেন। ঢাকা প্রবেশমুখসহ জায়গায় জায়গায় চলছে
তল্লাশি। সন্ধ্যায় রাজপথে নেমেছেন বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের জওয়ানরা। রাত
আটটায় এ প্রতিবেদন লেখা আগে রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে বাসে ভাঙচুর ও আগুনের
খবর পাওয়া গেছে। ৫ জানুয়ারি সামনে রেখে প্রশাসনের সতর্কতার জেরে রাজধানী
ঢাকা কার্যগত অবরুদ্ধ ও থমথমে। সরকার ও বিরোধী রাজনৈতিক জোটের
পাল্টাপাল্টি সমাবেশ ঘিরে বিরাজ করছে টানটান উত্তেজনা। সভা-সমাবেশে
নিষেধাজ্ঞা ৫ জানুয়ারির সোমবার ‘গণতন্ত্র হত্যা’ দিবস উপলক্ষে রাজধানীতে
কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দিয়েছিল বিএনপি। কর্মসূচির আগের দিন রোববার বিকাল
পাঁচটা থেকে ঢাকায় সব ধরনের সভা-সমাবেশ নিষিদ্ধ করেছে ঢাকা মহানগর পুলিশ
(ডিএমপি)। দুপুরে পুলিশের যুগ্ম কমিশনার মনিরুল ইসলাম এ ঘোষণা দিয়ে বলেন,
“পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত এ সিদ্ধান্ত বহাল থাকবে।” এর আগে
শনিবার রাত সাড়ে আটটার দিকে খালেদা জিয়া বাসা থেকে গুলশানের দলীয় কার্যালয়ে
যান। রাত সাড়ে ১১টার দিকে কার্যালয়ে থেকে বের হওয়ার পথে পুলিশ তাকে বাধা
দেয়। পরে রাতে তাকে কার্যালয়েই অবস্থান করতে হয়। এরপর সেখানেই কার্যত
অবরুদ্ধ হয়ে আছেন তিনি। বিপুল সংখ্যক পুলিশ ওই কার্যালয় ঘিরে রেখেছে।
পুলিশ কর্মকর্তা মনিরুল সাংবাদিকদের বলেন, “খালেদা জিয়াকে অবরুদ্ধ করা
হয়নি। সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও সাবেক বিরোধীদলীয় নেতা হিসেবে শুধু তার
নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে। শুধু খালেদা জিয়া নয়, বিএনপির কোনো নেতাকেই
অবরুদ্ধ করা হয়নি।” বিএনপির অভিযোগ, তাদের কর্মসূচি করতে না দিতে সরকার এসব
করছে। রোববার বিকালে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম
আলমগীর গণমাধ্যমে বিবৃতি দিয়েছেন। সেখানে তিনি জোটের নেতাকর্মীদের যেকোনো
মূল্যে গণতন্ত্র হত্যা দিবসের কর্মসূচি পালনের মাধ্যমে ক্ষমতাসীনদের দম্ভ ও
স্বেচ্ছাচারিতার জবাব দেয়ার আহ্বান জানান। যাত্রীবাহী বাসে আগুন-ভাঙচুর
রোববার বিকালের পর থেকে রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে যাত্রীবাহী বাসে আগুন ও
ভাঙচুরের ঘটনা ঘটছে। অন্যদিনের তুলনায় রোববার সন্ধ্যার পর ঢাকায় যান চলাচল
অনেক কমে যায়। আজিমপুরে সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টায় মিরপুর-মতিঝিলে চলাচলকারী
বিকল্প পরিবাহনের একটি বাসে (ঢাকা মেট্রো জ ১৪২৫৮৪) অজ্ঞাতপরিচয়
দুর্বৃত্তরা আগুন দেয়। পরে এলাকার লোকজন ও ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা আগুন
নেভান। সন্ধ্যা ছয়টার দিকে গুলিস্তানের গোলাপ শাহ্ মাজারের সামনে তানজিল
পরিবহনের একটি যাত্রীবাহী বাসে (ঢাকা মেট্রো-জ-১১-৩২০৫) আগুন দেয়া হয়। এ
ছাড়া কুড়িল বিশ্বরোডে বিকাল সাড়ে পাঁচটায় গাজিপুর-গুলিস্তানে চলাচলকারী
সুপ্রভাত পরিবহণের একটি বাসে, চারটার দিকে গেন্ডারিয়ায় মালঞ্চ বাসে, সাড়ে
তিনটার দিকে তেজগাঁও মহিলা কলেজের সামনে ৮ নম্বর বাসে (ঢাকা
মেট্রো-ব-১৪১১৮৬), দুপুর দেড়টার দিকে পুরানা পল্টনে নিউ ভিশন পরিবহনের
বাসে আগুন দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। রাত আটটায় এ প্রতিবেদন লেখার সময় বিভিন্ন
স্থান থেকে আগুন ও ভাঙচুরের খবর পাওয়া যাচ্ছিল। শিবিরও মাঠে ৫ জানুয়ারির
কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে রাজধানীসহ সারা দেশে জামায়াতে ইসলামীর ছাত্রসংগঠন
শিবিরের নেতাকর্মীরাও মাঠে নেমেছেন। নিষেধাজ্ঞা ভেঙে নেতাকর্মীদের আন্দোলনে
ঝাঁপিয়ে পড়ার আহ্বান জানিয়েছেন ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতি আবদুল
জব্বার। রোববার দুপুরে তিনি ফেসবুকে লিখেছেন, “সময় এসেছে গর্জে ওঠার, অবৈধ
সরকারের ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করার!!!! মৃত্যুভয়কে জয় করার। ক্ষমতান্ধদের প্রতিরোধ
করার, স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব রক্ষা করার, স্বাধীন দেশের বন্দি নাগরিকদের
মুক্ত করার। জালিমের পতন অনিবার্য। আল্লাহ সহায়।” দেশের বিভিন্ন
জেলা-উপজেলার নেতাকর্মীরা তার এ আহ্বানে সায় দিয়ে মন্তব্য লিখেছেন। ঢাকায়
গাড়ি-লঞ্চ আসছে না রোববার বিভিন্ন জেলা থেকে ঢাকামুখী যানবাহন বন্ধ করে
দেয়া হয়েছে। এতে কার্যত অবরুদ্ধ হয়ে পড়েছে রাজধানী। বিএনপির পক্ষ থেকে
অভিযোগ করা হয়েছে, সমাবেশে যাতে কেউ যোগ দিতে না পারে সে জন্যই বাধার
সৃষ্টি করছে সরকার। এদিকে পরিবহন মালিকরা দাবি করেছেন, নিরাপত্তাজনিত কারণে
তারা নিজেরাই যান চলাচল বন্ধ রেখেছেন। আমাদের প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর
থেকে জানা যায়, বগুড়ার ওপর দিয়ে সব ধরনের যান চলাচল বন্ধ। ফলে উত্তরবঙ্গ
থেকে ঢাকা অভিমুখে কোনো গাড়ি ছেড়ে যায়নি। বরিশাল থেকে ঢাকামুখী বাস ও লঞ্চ
বন্ধ। রংপুর, নাটোরসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে প্রশাসনের পক্ষ থেকে ঢাকামুখী
যান চলাচল নিয়ন্ত্রণের সংবাদ পাওয়া গেছে। সদরঘাট থেকের দেশের বিভিন্ন রুটের
লঞ্চ চলাচল বন্ধ রয়েছে।
No comments