ব্রুনাইয়ে দুর্ভোগে হাজারো বাংলাদেশী by রোকনুজ্জামান পিয়াস
পরিবারে সচ্ছলতা আনতে ব্রুনাই যান আমিনুর, আবদুর রহমান, কামরুল ও জামাল উদ্দিন। এ জন্য ধারদেনা করে প্রত্যেকে দালালচক্রকে দিয়েছেন ৪ লাখ টাকা। দালালরা জানিয়েছিল সেখানে ২ বছর নির্বিঘ্নে কাজ করতে পারবেন তারা। কিন্তু সে দেশের মাটিতে পা রেখেই বুঝতে পারেন দালালের পাতা ফাঁদে পা দিয়েছেন তারা। যে প্রতিশ্রুতি দিয়ে তাদের ব্রুনাই পাঠানো হয়েছে তার পুরোটাই মিছে। ৬ মাসের বেশি তারা সেখানে থাকতে পারবেন না। ২ বছর মেয়াদি ভিসা না দিয়ে তাদের দেয়া হয়েছে প্রজেক্ট ভিসা। যার মেয়াদ মাত্র তিন মাস। বড় জোর আরও তিন মাস বাড়াতে পারে এ মেয়াদ। এদের মতো প্রজেক্ট ভিসায় ব্রুনাই গিয়ে দুর্ভোগে পড়েছেন হাজারো বাংলাদেশী। এদের অনেকে দেশে ফেরার অপেক্ষায় রয়েছেন, আবার অনেকে এ স্বল্প সময়ের মধ্যে যতটুকু পারছেন কাজ করে যাচ্ছেন। এদিকে দালালদের সঙ্গে সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের যোগসাজশে তাদের ইমিগ্রেশন ক্লিয়ারেন্স দেয়া হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, বিএমইটি যদি সঠিকভাবে যাচাই-বাছাই করে ইমিগ্রেশন ক্লিয়ারেন্স দিতো তাহলে তারা ভোগান্তিতে পড়তেন না। সমপ্রতি সে দেশে যাওয়া বেশ কয়েক কর্মী এ ব্যাপারে অভিযোগ করেছেন। সেখানকার বর্তমান অবস্থা জানিয়ে ব্রুনাইস্থ বাংলাদেশী দূতাবাসের এক চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে, বাংলাদেশের যে সব কর্মী ব্রুনাইতে আসছেন তাদের রিক্রুটিং এজেন্সি ও সাব-এজেন্সিগুলো চাকরির মেয়াদ সম্পর্কে মিথ্যা তথ্য দিচ্ছে। ওই চিঠিতে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, সে দেশে দুই ধরনের কর্মসংস্থানের চুক্তি হয়। এক ধরনের হলো স্বল্পমেয়াদি চুক্তি- যেটাকে বলা হয় প্রজেক্ট ভিসা। এ ভিসার মেয়াদ থাকে ৩ মাস। যে কোম্পানির অধীনে কাজ নিয়ে যাওয়া হয় ওই কোম্পানি যদি প্রয়োজন মনে করে তবে এর মেয়াদ সর্বোচ্চ ৩ থেকে ৬ মাস পর্যন্ত আইনগতভাবে বৃদ্ধি করতে পারে। অন্য ভিসাটির মেয়াদ ২ বছর। দূতাবাস আরও জানায়, ইতিমধ্যে হাজারো কর্মী প্রজেক্ট ভিসার আওতায় ব্রুনাই এসেছেন। যাদের ভিসা-সংক্রান্ত জটিলতা পোহাতে হচ্ছে। এদের ২ বছরের কথা বলে এজেন্সিগুলো সে দেশে পাঠিয়েছে। চিঠিতে বলা হয়, এ প্রক্রিয়া অব্যাহত থাকবে যদি চুক্তির মেয়াদ সঠিকভাবে যাচাই-বাছাই না করে বিএমইটি স্মার্ট কার্ড দেয়া বন্ধ না করে। দূতাবাস আরও উল্লেখ করে, তাদের কাছে এ ধরনের অভিযোগ প্রায় প্রতিদিনই আসছে। এ সমস্য রোধ করতে চিঠিতে দূতাবাস পরামর্শ দিয়ে বলেছে, রিক্রুটিং এজেন্সিগুলোকে এ ব্যাপারে অবশ্যই দুই বছর মেয়াদি ভিসা দেয়ার চুক্তি করতে হবে এবং স্বল্পকালীন ভিসার অনুমতি দেয়া যাবে না। প্রজেক্ট ভিসা সম্পর্কে জানাতে সচেতনতা তৈরির জন্য প্রচার চালানোরও পরামর্শ দেয়া হয়। এদিকে কুড়িগ্রাম জেলার ৪ কর্মী জামাল উদ্দিন, আবদুর রহমান, কামরুল ইসলাম ও আমিনুর রহমান ব্রুনাইয়ের দারুসসালামস্থ বাংলাদেশ হাইকমিশনে তাদের সঙ্গে প্রতারণার অভিযোগ এনে একটি আবেদন করেছেন। ওই আবেদনে তারা বলেছেন, বাংলাদেশের দালাল মো. আশরাফুল ইসলামের মাধ্যমে ১৬ লাখ টাকা খরচ করে কাজ করার উদ্দেশ্যে তারা গত ১২ই জুলাই ব্রুনাইয়ে প্রবেশ করেন। মনিরুল ইসলাম নামে এক ব্যক্তি এয়ারপোর্ট থেকে রিসিভ করার পর মেডিকেল এবং ভিসা প্রসেস ফি বাবদ ৫০০ ডলার নিয়ে তাদের একটি ভাড়াটিয়া বাসায় রেখে পালিয়ে যায়। এরপর তাদের করুণ অবস্থা দেখে ওই বাড়ির মালিক তাদের মূল মালিকের কাছে নিয়ে যায়। এরপর থেকে তারা সেখানেই অবস্থান করছেন। তাদের এ অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশ হাইকমিশন খোঁজখবর নিয়ে জানতে পারে, বাংলাদেশের আজিজিয়া ইন্টারন্যাশনাল (প্রা.) লিমিটেড-এর মাধ্যমে তারা ব্রুনাই গেছেন। দূতাবাস ওই কোম্পানির মালিকের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি জানান, স্থানীয় এক মালয় এ ৪ জনসহ ৫ জনকে তার বাসায় রেখে যাওয়ার পর থেকে তারা সেখানেই আছেন। তারা যদি কাজ করেন তবে ওই মালিক তাদের কাজের ব্যবস্থা করে দেয়ার প্রতিশ্রুতি দেন এবং প্রমাণস্বরূপ তিনি তাদের পাসপোর্টগুলো দূতাবাসে জমা দেন। তবে তারা নভেম্বর পর্যন্ত সে দেশে কাজ করার সুযোগ পাবেন। অঙ্গীকার মোতাবেক তিনি গত ১৩ই সেপ্টেম্বর ৪ বাংলাদেশীকে দূতাবাসে হাজির করেন। সেখানে তাদের মুখ থেকে দূতাবাস তাদের সঙ্গে প্রতারণার কথা শোনেন। ভুক্তভোগী ওই কর্মীরা জানান, তাদের কাজ না থাকায় বর্তমানে সেখানে থাকলেও তিন বেলা ঠিকমতো খাবার পাচ্ছেন না। ওই কর্মীরা দেশে পাঠানোর জন্য দূতাবাসকে অনুরোধ করেন। দূতাবাস ব্রুনাইয়ের ওই মালিককে দ্রুত দেশে পাঠানোর কথা বললে প্রথমে টিকিট দিতে অস্বীকৃতি জানান। পরে দূতাবাসের চাপের মুখে এক সপ্তাহের মধ্যে তাদের দেশে পাঠানোর অঙ্গীকার করেন। গত ২০শে সেপ্টেম্বর আবারও যোগাযোগ করলে ২৭শে সেপ্টেম্বর তাদের টিকিট বুকিং দেয়া হয়েছে বলে কোম্পানির মালিক জানান। তবে আজ পর্যন্ত ওই চার কর্মী দেশে ফেরেননি। এ ব্যাপারে জামাল উদ্দিনের ভাই মো. বাবু জানান, ধারদেনা করে সেখানে গেছে। এখন সেখানে কাজ নেই। দুর্ভোগ পোহাচ্ছে। তাই চলে আসবে। গত ২৭ তারিখে আসার কথা ছিল। কিন্তু আজও ফেরেনি। স্বল্পমেয়াদি (প্রজেক্ট) ভিসার যাচাই-বাছাই ও ইমিগ্রেশনের ক্লিয়ারেন্সের ব্যাপারে জানতে চাইলে বিএমইটি বহির্গমন শাখার পরিচালক উপসচিব মোকাব্বের হোসেন বলেন, প্রজেক্ট ভিসার বিষয়টি তার জানা নেই। ব্রুনাই থেকে কর্মী দুর্ভোগের এ ধরনের কোন খবর তিনি জানেন না।
No comments