হঠাৎ করেই পাল্টে গেল রাজনীতির দৃশ্যপট, ঢাকার ১৪ স্পটসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে গাড়িতে আগুন, সারা দেশে বিজিবি মোতায়েন, অনড় খালেদা

(গাজীপুর শহরের শিববাড়ি মোড় এলাকায় ঢাকা-গাজীপুর সড়কে বিকেল সোয়া পাঁচটার দিকে ভিআইপি সাতাইশ পরিবহনের একটি বাসে  আগুন দিয়েছে দুবৃত্তরা। স্থানীয়রা এবং খবর পেয়ে জয়দেবপুর ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা গিয়ে আগুন নেভায়।আগুনে বাসের সবগুলো আসন পুড়ে গেছে।) একতরফা নির্বাচনের বর্ষপূর্তির একদিন আগেই রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছে। এদিন ঢাকার ১৪টি স্পটসহ কয়েকটি জেলায় গাড়িতে আগুন দেয়ার ঘটনা ঘটেছে। ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) রাজধানীতে বিএনপি নেতৃত্বাধীন বিরোধী জোটের পূর্বঘোষিত সমাবেশে নিষেধাজ্ঞা জারি করলে এ সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে। এর মধ্যে ঢাকার পল্টন, গুলিস্তান, তেঁজগাও, গেন্ডারিয়া, নর্দা, সায়দাবাদ, যাত্রাবাড়ী, শনিরআখড়া, আজিমপুর, কুড়িল, মালিবাগ, উত্তরা ও পোস্তাগোলায় বাসে আগুন দেয়া হয়। মতিঝিলে একটি প্রাইভেটকারে আগুন দেয় অজ্ঞাত ব্যক্তিরা। এছাড়া চট্টগ্রামের বহদ্দারহাট, ময়মনসিংহ সদর, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে এবং গাজীপুরের চান্দিনা চৌরাস্তা মোড় ও জয়দেবপুরেও বাস পোড়ানোর খবর পাওয়া গেছে। ময়মনসিংহের ঘটনায় আহত হয়েছেন চালকসহ অন্তত ১০ জন।
হঠাৎ করেই পাল্টে গেল রাজনীতির দৃশ্যপট
এমনটি হওয়ার কথা ছিল না। ছিল না কারো কল্পনাতেও। ৫ জানুয়ারির আগেই যে দেশে যুদ্ধংদেহী অবস্থা তৈরি হবে তেমন ধারণা ছিল না কারোরই। কিন্তু হঠাৎ করেই পাল্টে গেল রাজনীতির দৃশ্যপট। শনিবার মধ্যরাতে খালেদা জিয়াকে অবরুদ্ধ করার পর রবিবার অগ্নিগর্ভ হয়ে ওঠে দেশ। সারাদেশে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে বিএনপি-জামায়াতের নেতাকর্মীরা। অথচ এই সময়ে এমনটি হওয়ার কথা ছিল না। বিশেষ করে ৩১ ডিসেম্বর  সংবাদ সম্মেলনে খালেদা জিয়ার ‘নরম’ অবস্থানের কারণে সবাই ধরেই নিয়েছিলেন যে আপাতত রাজনীতির মাঠ গরম হচ্ছে না। কিন্তু সেসব পূর্বাভাসকে ভুল প্রমাণ করে ৫ জানুয়ারির বিতকির্ত নির্বাচনের এক বছর পূর্তির আগের দিনই উত্তপ্ত হয়ে সারা দেশ। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ঢাকায় সভা-সমাবেশ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। কিন্তু তাতেও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসেনি।  নিষেধাজ্ঞা ভঙ্গ করেই ঢাকার বিভিন্ন স্থানে মিছিল ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। সব মিলিয়ে ঢাকাসহ বিভিন্ন স্থানে প্রায় অর্ধশত গাড়িতে অগ্নিসংযোগ কিংবা ভাঙচুর করা হয়েছে। বিএনপি নেতারাও কঠোর অবস্থানই নিয়েছেন। খালেদা জিয়া তো সাফ জানিয়েই দিয়েছেন যে তিনি ‘অবৈধ’  সরকারের নিষেধাজ্ঞা মানেন না, সোমবারের পূর্ব নির্ধারিত সমাবেশ হবেই। এ অবস্থায় পরিস্থিতি আয়ত্বে রাখতে পুলিশ-র‌্যাবের পাশাপাশি বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে। ঢাকায় প্রায় ১৭৭ জনসহ সারা দেশে ৪ শতাধিক লোককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। দূর পাল্লার বাস ও লঞ্চ চলাচল বন্ধ করে দিয়ে সারাদেশ কার্যত অবরুদ্ধ করে ফেলেছে সরকার। ঢাকা আবার বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। তারপরও শাসকদল  সোমবার মহড়া দেয়ার ঘোষণা দিয়েছে। সব মিলিয়ে বলা যায়, রাজনৈতিক মাঠ আরো পরের দিকে উত্তপ্ত হতে পারে বলে যারা আশঙ্কা করেছিলেন তারা অবাক হয়ে দেখছেন মাত্র কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই দৃশ্যপট পাল্টে গেছে। রাজনৈতিক সংঘাত সহসাই আবার কোন পর্যায়ে পৌঁছায় তা নির্ভর করছে সরকার কতটা কঠোরতার পরিচয় দেয় কিংবা বিএনপি-জামায়াত জোট কতটা শক্তিমত্তা প্রদর্শন করতে পারে তার ওপর নির্ভর।
সারা দেশে বিজিবি মোতায়েন
রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) মোতায়েন করা হয়েছে। রোববার সন্ধ্যা ৬টা থেকে ৮০ প্লাটুন বিজিবি মোতায়নের কথা হয়। বিজিবির জনসংযোগ কর্মকর্তা মোহসিন রেজা ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, রাজধানীতে ২৫ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে। এর আগে রাজধানীতে আজ বিকেল ৫টা থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য সব ধরনের মিছিল, সভা-সমাবেশ নিষিদ্ধ করে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)। ডিএমপি’র যুগ্ম-কমিশনার মনিরুল ইসলাম সংবাদমাধ্যমকে জানান, যেকোনো সহিংসতা ও অরাজকতা পরিহার করতে এবং নগরবাসীর জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ডিএমপি অধ্যাদেশের ২৮ ও ২৯ ধারা অনুসারে এই নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত এ নিষেধাজ্ঞা বলবৎ থাকবে। কেউ এ নির্দেশ অমান্য করার চেষ্টা করলে তার বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে ডিএমপি’র পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।
সোমবার ১০টায় নয়া পল্টনে সমবেশ॥ অনড় খালেদা জিয়া
২০ দলীয় জোট প্রধান এবং বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া সোমবার সকাল ১০টায় সমাবেশ করতে অনড় রয়েছেন। তিনি নেতাকর্মীসহ দেশবাসীকে রাজধানীর নয়া পল্টনস্থ বিএনপি কার্যালয়ের সামনে সমাবেশ হতে বলেছেন। যেকোনো মূল্যে তিনি সমাবেশ করতে বদ্ধপরিকর। তিনি বাধা এলে তা প্রতিরোধ করার নির্দেশও দিয়েছেন। তিনি নিজেও ওই সমাবেশে উপস্থিত হবেন বলে জানিয়েছেন। বিএনপি সূত্র এ তথ্য জানিয়েছে। বিএনপির একাধিক সূত্র জানিয়েছে, খালেদা জিয়া সবস্তরের নেতাকর্মীদের নয়া পল্টনের সমাবেশে উপস্থিত হতে বলেছেন। এছাড়া ২০ দলীয় জোটের শরিকদেরও এতে সমবেত হতে বলেছেন। কোনো ধরনের বাধা এলে তা প্রতিরোধ করতেও বলা হয়েছে। ২০ দলীয় সূত্র জানিয়েছে, এখন আর পিছু হটার অবকাশ নেই। সোমবার নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করা হতে পারে বলেও জানানো হয়েছে। সোমবার সমাবেশ করতে না দেয়া হলে এর পর থেকে প্রতিদিনই এই কর্মসূচি থাকবে বলে সূত্র জানিয়েছে। খালেদা জিয়া এখনো তার গুলশান কার্যালয়ে অবরুদ্ধ রয়েছেন। তবে তিনি সোমবার নয়া পল্টন রওনা হবেন।

1 comment:

  1. ধন্যবাদ, লেখাটা পড়ে ভালো লাগলো | আমি আপনাকে কোন প্রকার অফার করছি না। আমার মানে হয় এই ছোট তথ্যটি আপনার উপকারে আসতে পারে অ্যাপার্টমেন্ট ভাড়া।

    ReplyDelete

Powered by Blogger.