পল্টনে বস্তা বস্তা টাকা ও স্বর্ণ উদ্ধার- আওয়ামী লীগ নেতাও জড়িত by আল আমিন
পল্টনে
উদ্ধার হওয়া বস্তা বস্তা দেশী-বিদেশী মুদ্রা ও স্বর্ণ চোরাচালানের সঙ্গে
জড়িত রয়েছেন এক আওয়ামী লীগ নেতা। তিনি সিরাজগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের
সাংগঠনিক সম্পাদক ও সদর উপজেলার চেয়ারম্যান রিয়াজ উদ্দীন। গ্রেপ্তারকৃত
মোহাম্মদ আলীর সঙ্গে তার লেনদেন ছিল বলে তথ্য পেয়েছে গোয়েন্দা পুলিশ।
উদ্ধার হওয়া ওই স্বর্ণ ও বিদেশী মুদ্রার মধ্যে রিয়াজের একটি বড় অংশ রয়েছে।
মোহাম্মদ আলী শুল্ক গোয়েন্দাদের হাতে গ্রেপ্তার হওয়ার পরেই আওয়ামী লীগের ওই
নেতা আত্মগোপনে চলে যান। বন্ধ রেখেছেন মোবাইল ফোনও। এলাকাবাসীও তাকে খুঁজে
পাচ্ছেন না। তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করতে পুলিশের অভিযানও অব্যাহত
রয়েছে। গ্রেপ্তারকৃত মোহাম্মদ আলীর কাছে চোরাচালানকারীরা চোরাই মালামাল
রাখতো। ডিবি পুলিশের রিমান্ডে মোহাম্মদ আলী এসব কথা স্বীকার করেছেন। মামলার
তদন্তের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। গত ২৫শে
ডিসেম্বর রাতে রাজধানীর পুরানা পল্টন থানাধীন ঠিকানা নামের ২৯/১নং বাড়ির ৭
এবং ১১ তলার ফ্ল্যাটে অভিযান চালান শুল্ক ও গোয়েন্দা পুলিশ কর্মকর্তারা। এ
সময় ওই বাড়ির বেড, বালিশের নিচে, আলমারি ও টয়লেটের কার্নিশ থেকে ৩ কোটি
টাকা মূল্যের বিদেশী মুদ্রা এবং ৫২৮টি স্বর্ণের বার উদ্ধার করা হয়।
উদ্ধারকৃত স্বর্ণের আনুমানিক মূল্য ৩০ কোটি টাকা। এ সময় ওই বাড়ি থেকে
মোহাম্মদ আলীকে গ্রেপ্তার করা হয়। এ ঘটনায় শুল্ক অধিদপ্তরের মহাপরিচালক
মইনুল খান বাদী হয়ে চোরাচালান দমন ও প্রতিরোধ বিশেষ ক্ষমতা আইনে একটি মামলা
করেন। পুলিশ তাকে আদালতে হাজির করলে আদালত ৬ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করে।
শুক্রবার তার রিমান্ড শেষ হয়েছে। তাকে আরও জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পুলিশের পক্ষ
থেকে ৭ দিনের রিমান্ড আবেদন করা হবে। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ঢাকা
মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের উত্তর বিভাগের এডিসি মো. মাহাফুজুল ইসলাম জানান,
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে মনে হয়েছে আটককৃত মোহাম্মদ আলী একজন চোরাকারবারি
দলের সদস্য। এতগুলো টাকা ও স্বর্ণের উৎস সম্পর্কে তিনি সঠিক কোন তথ্য দিতে
পারেনি। তার সঙ্গে দেশী এবং বিদেশী চোরাকারবারি সিন্ডিকেটের যোগাযোগ রয়েছে।
তিনি আরও বলেন, সিরাজগঞ্জের আওয়ামী লীগের নেতার সঙ্গেও তার ঘনিষ্ঠতা রযেছে
বলে জিজ্ঞাসাবাদে সে স্বীকার করেছে। সিন্ডিকেটের অন্য সদস্যরা
চোরাচালানকৃত স্বর্ণ এবং টাকা তার কাছে রাখতো। এর সঙ্গে অনেক মহারথিও জড়িত।
তাদের গ্রেপ্তারের জন্যও খুঁজছে পুলিশ। তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মামলার
তদন্তকারী ডিবির এক সদস্য জানান, উদ্ধারকৃত স্বর্ণ ও টাকার সঙ্গে সিরাজগঞ্জ
জেলার আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক রিয়াজের বড় একটি অংশ রয়েছে। রিয়াজের
নয়া পল্টনে একটি ফ্ল্যাট আছে। তিনি প্রায় ঢাকায় আসতেন এবং ওই ফ্ল্যাটে রাত
যাপন করতেন। ওই চোরাচালানকৃত পণ্য উদ্ধার হওয়ার পরেই তার সংশ্লিষ্টতা আছে-
এমন খবর পত্রিকায় প্রকাশ পায়। তখন থেকেই তিনি আত্মগোপনে আছেন। বিভিন্ন
কাজের জন্য স্থানীয় এলাকাবাসী তার সঙ্গে যোগাযোগ করেও কোন হদিস পাচ্ছেন না।
পুলিশ তাকে জিজ্ঞাসাবাদ না করলে চোরাচালানকৃত ওই পণ্যের সঠিক তথ্য জানা
যাবে না। মোহাম্মদ আলীর সঙ্গে রিয়াজের কিভাবে যোগাযোগ স্থাপন হয় এবং তার কি
কি স্বার্থ জড়িত সেটিও তদন্ত করছে পুলিশ। এ ঘটনায় বিমানবন্দরের কয়েক
কর্মকর্তা এবং চোরাচালানকারি দলের নামও বলেছে মোহাম্মদ আলী। তাদের
গ্রেপ্তার করার জন্য ডিবি পুলিশের দল ঢাকা এবং বাইরের জেলাগুলোতে অভিযান
চালাচ্ছে। ডিবি পুলিশের ওই কর্মকর্তা আরও জানান, রিমান্ডে গ্রেপ্তারকৃত
মোহাম্মদ আলী ওই স্বর্ণ ও টাকার বিষয়ে কোন বিশ্বাসযোগ্য তথ্য দিতে পারেন
নি। তার বড় কোন ব্যবসা নেই। আগে ঢাকা বেনারশি কাপড় কিনে সিলেট ও চট্টগামসহ
বিভিন্ন স্থানে সরবারাহ করতো। কিন্তু ওই ব্যবসা বন্ধ আছে। তার ধানমণ্ডির
সাতমসজিদের রোডে ‘আলী সুইটস’ নামে একটি মিষ্টির দোকান রয়েছে। আর কোন ব্যবসা
নেই। তবে এত টাকা ও স্বর্ণের ব্যাপারে মোহাম্মদ আলী জানিয়েছেন, তিনি
শেয়ারবাজারের সঙ্গে জড়িত। ২০০৯ সাল এবং ২০১০ সালে ব্যবসা করতেন। ওই ব্যবসায়
লাভ করে তিনি ওই টাকা জমিয়েছেন এবং স্বর্ণগুলো কিনেছেন। কিন্তু, ওই সময়
শেয়ারবাজারে ধস হয়েছিল। সবাই তখন শেয়ারবাজার নিয়ে দিশাহারা। কাজেই তার ওই
তথ্যের বিশ্বাসযোগ্যতা নেই। তার দাবিকৃত মানি এক্সচেঞ্জের ব্যবসারও কোন
ভিত্তি পাওয়া যায়নি। তার কাছে মানি এক্সচেঞ্জের ব্যবসার কোন বৈধ কাগজপত্রও
নেই। ওই কর্মকর্তা আরও জানান, দেশী-বিদেশী চোরাচালানকারি সিন্ডিকেটের
সদস্যদের সঙ্গে যোগাযোগ ছিল মোহাম্মদ আলীর। চোরাচালানকারি দলের সদস্যরা তার
কাছে ওই সব বিদেশী মুদ্রা এবং স্বর্ণ রাখতো। তাদের কয়েকজনের নাম বলেছেন
তিনি। ঘটনার সঙ্গে জড়িত অনেকেই আত্মগোপন করেছেন। মোহাম্মদ আলীর পৈতৃক বাড়ি
যশোর জেলায়। জন্মস্থান পুরান ঢাকায়। পিতার নাম শের আলী। পুরান ঢাকার একটি
স্কুল থেকে ম্যাট্রিক পাস করার পর তিনি কাপড়ের ব্যবসা শুরু করেন।
No comments