মুঠোফোনে নিঃশ্বাসের শব্দ by স্বপ্না রেজা

কাজে মন বসছে না। মন বসাতে পারছে না শুভ। মুঠোফোনের অপেক্ষাকৃত নিষ্প্রাণ হয়ে যাওয়াটা মানতে পারছে না। প্রতিদিনের জীবনযাত্রার সঙ্গে এ যেন মেলে না। মেলাতে পারছে না। মানায়ও না। মনকে প্রাণবন্ত করে রাখতে এই ক্ষুদ্রযন্ত্রটির ব্যবহার বহুল। সকাল, দুপুর, বিকেল, রাত কোনো সময়েই আলাদা থাকে না জীবন আর এই ক্ষুদ্রযন্ত্রটি। দেহের ভেতর ধারণ করা জীবন নামক অস্তিত্বের মতোই যেন তার উপস্থিতি। অথচ এই এক মুঠো আকৃতির যন্ত্রটির প্রচলনের আগে জীবনের চলন-বলন ছিল অন্যরকম। ছিল সীমিত পরিসর আবেগ, ভাবনা আর প্রত্যাশা। এই ক্ষুদ্রযন্ত্রটি ধীরে ধীরে আবেগ, অনুভূতিকে গ্রাস করে নিজের মতো করেই তার অবস্থান আকাশচুম্বী করে তুলেছে। প্রত্যাশা বাড়িয়েছে। স্বপ্ন বেড়েছে পাল্লা দিয়ে। আবার মিথ্যাচারিতাকেও প্রশ্রয় দিয়েছে অনেক সময়। মিথ্যা কথা শিখিয়েছে। শুভ খেয়াল করেছেন অবলীলায় এই যন্ত্রের সাহায্যে মানুষ মিথ্যা কথা বলছে। নিজেও বলে অনেক সময়। এ ধরনের আচরণে অপরাধবোধ নেই, হয়তো অস্বস্তি আছে কিছুটা। যাই হোক, যেটাই হোক মোবাইল ফোন প্রত্যাশিতভাবে বেজে ওঠে না। মন তাই ভালো থাকে না শুভর। শিশুর মতো কান্না পায়। কাঁদেও হয়তো আড়ালে।
অফিসের ছোট্ট টেবিলটার কোলঘেঁষেই বসেন বখতিয়ার সাহেব। শুভর প্রতি তার কৌতূহল প্রচুর; কারণে অকারণে, প্রয়োজনে অপ্রয়োজনে ওই কৌতূহল।
কী হল আপনার? মন খারাপ? বখতিয়ার সাহেবের প্রশ্ন। সুযোগ পেলেই প্রশ্ন করার অভ্যাস মানুষটার। উত্তর পাক আর না পাক। বিরক্ত ধেই ধেই করে বেড়ে যায় শুভর। বয়স পঞ্চাশ পার হওয়া বখতিয়ার সাহেব দিন দিন পরজীবী উদ্ভিদের মতো বেড়ে উঠছেন। কাছে কাউকে পেলেই ধরে বসেন। গায়ে পড়ে কথা বলেন। প্রাসঙ্গিকতা নেই। তারপরও প্রাসঙ্গিক হয়ে ওঠা। হঠাৎ মোবাইল ফোন বেজে ওঠে। যেন শুভর হৃৎপিণ্ডটাও বেজে উঠল। বখতিয়ার সাহেবের চোখ দুটো বৃত্তের মতো গোল হয়ে উঠেছে। সরে যায় শুভ।
হ্যালো! জমে থাকা আবেগ কাঁপিয়ে দিচ্ছে শরীর। নিশ্চল নদীতে ঢেউয়ের পর ঢেউ। ওপাশ থেকে ভেসে আসে অসম্ভব রকম চাওয়া সেই কণ্ঠস্বর। কেমন আছ শুভ? শান্ত আর সাবলীল প্রশ্ন অর্নার। অবাক হয় শুভ। চোখ ভিজে ওঠে। ঝাপসা হয় দৃষ্টি। উত্তর খুঁজে পায় না।
কাঁদছ? না দেখেও অর্নার বুঝতে পারার ক্ষমতা অনেক। অর্নার প্রশ্নে শুভর কান্নার পূর্ণ বিকাশ ঘটে।
উফ্! একটুতেই তুমি কাঁদো! তোমার চোখের পানি বড্ড বেশি সস্তা!
তুমি ফোন করা ছেড়ে দিয়েছ! শুভর অভিমান।
মিথ্যা বলো না। কম কথা হয় এটা সত্য। অর্না ভুল ধরিয়ে দেয়। শুভর অভিমান জোরালো হয়।
তোমার আমার সম্পর্কের মূল সেতু তো এই ফোন অর্না!
মানে? বজ পাতের মতো শোনায়। অর্না জ্বলে ওঠে। দ্যাখো শুভ সম্পর্ককে কোনো কিছুর সঙ্গে জুড়ে দিও না! ফোন না থাকলে কি আমাদের সম্পর্ক থাকবে না?
হয়তো থাকবে যোগাযোগহীনভাবে। আমিতো তোমাকে এখনও দেখতে পাইনি অর্না! কথার যোগসূত্রেই কাছে থাকা। তোমার ছবি আঁকা। না দেখলে, না কথা বললে সম্পর্ক বাঁচে কী করে?
অর্না নিরুত্তর। ছোট ছোট শ্বাস-প্রশ্বাসের শব্দ শুনতে পায় শুভ। যেন স্তব্ধতার মাঝ থেকেই অনেক পাওয়ার ইঙ্গিত। ভ্রম কিনা তা যাচাই করতে বিন্দুমাত্র ইচ্ছা নেই শুভর। স্বপ্নের ছকে ফেলে নিজেকে খোঁজার আনন্দ অনেক। যদিও এই আনন্দ এখন অশ্র“ভেজা।
কিছু বলছ না যে, অর্না?
ভাবছি সম্পর্কটা বাঁচা-মরার প্রশ্নে এসে ঠেকেছে। ভালো শুভ। অর্নার কথায় অন্যরকম সুর। অধীর হয় শুভ।
তুমি একবার দেখা দাও অর্না!
হবে। খুব শিগগিরই হবে।
টেবিলে ফিরে আসে শুভ। কপাল ভরা বিন্দু বিন্দু ঘাম। বখতিয়ার সাহেবের দৃষ্টি অবিকল রয়ে গেছে। সিগারেটে পুড়ে যাওয়া ঠোঁটের ফাঁক দিয়ে বত্রিশ পাটি দাঁত বের করা।
মন ভালো হল? শুভর বিরক্তি সীমা ছাড়ায়। সেদিকে ভ্রুক্ষেপ নেই বখতিয়ার সাহেবের। টিস্যু বক্স থেকে টিস্যু বের করে শুভর দিকে এগিয়ে দেয়।
কপালের ঘাম মুছে নিন। এত্ত ঘামলে হয়? নাছোড়বান্দা এই মানুষটির হাত থেকে রেহাই পাওয়ার উপায় হল তার কথা শোনা। টিস্যু নিয়ে কপালের ঘাম মুছে ফেলে শুভ। কাজে মন বসাতে চেষ্টা করে। ফাইলে ঠাসা নোটগুলো শুয়োপোকার মতো হেঁটে বেড়ায়। শরীর শিরশির করে ওঠে। মোবাইলে ম্যাসেজ আসে। অর্না লিখেছে, কাল সকাল এগারোটায় দেখা হবে। বেইলি রোডের পিৎজা হাটে। মন উড়ে যায় কাজ থেকে। সম্ভব নয় কোনোভাবেই মনকে আর ধরে রাখা। বখতিয়ার সাহেবের দৃষ্টি শুভর মোবাইল ফোনে। শুভ মোবাইল ফোন প্যান্টের পকেটে ঢুকিয়ে ফেলে।
রুমের দেয়ালে লেপ্টে থাকা কলিংবেল কর্কশ স্বরে বেজে ওঠে। বাষ্পীয় রেল ইঞ্জিনের হুইসেল যেন। ইন্টারকম ফোন থাকতে এ ধরনের তলব-সংস্কৃতি ভালো লাগে না শুভর। বেশ কবার এ নিয়ে কথা বললেও কাজ হয়নি। বখতিয়ার সাহেব পড়িমরি করে দৌড় দিলেন। আর শুভ বের হয়ে আসে অফিস থেকে।
বাসে চড়ে সোজা গাউছিয়া মার্কেট। অর্নাকে প্রথম দেখার দিন কাল। খালি হাতে কোনোভাবেই নয়। সামর্থ্যরে নাগালে একটা শাড়ি অর্নার হাতে দেয়া চাই। পাঁচটি বছর সম্পর্ক চলছে মোবাইল ফোনে। কথা শুনে, নিঃশ্বাসের শব্দ গুনে মেয়েটির একটি ছবি শুভর হৃদয়ে আঁকা হয়ে আছে। চোখ, ভ্রু, ঠোঁট, চুল সবকিছুই যেন শুভর অতিচেনা। অদেখার মাঝে দেখার এত তীব্রতা শুভর ভালোবাসার বয়স বাড়িয়েছে কেবল। পকেটে নগদ তিন হাজার টাকা। মাসের বাকি দিনগুলো চালিয়ে নেয়ার অবলম্বন। হিসাবের বাইরে এখন শুভ। তাগাদা নেই জীবন যাপনের প্রয়োজনের মুখোমুখি হওয়ার। একটাই প্রয়োজন, অর্নাকে দেখার ছোট্ট এক আয়োজন। মোবাইল ফোন বেজে ওঠে। বখতিয়ার সাহেব খুঁজছে শুভকে। কপাল ভরা বিরক্ত নিয়ে ফোন কানে তোলে শুভ।
কী ব্যাপার?
কই গেলেন? বস খোঁজে আপনাকে। বখতিয়ার সাহেবের কণ্ঠে ঠাট্টার আভাস।
ব্যক্তিগত কাজে বের হয়ে গেছি। আপনি চালিয়ে নিন।
আরে ভাই একজনার প্রয়োজন কি আরেকজনকে দিয়ে পূরণ হয়? তারপর হে হে করে হাসি। গাড়ির শব্দে আরও বিকট শোনায়। হাসি থামিয়ে আবার কথা, আপনি বড্ড অস্থির যুবক! এবার সত্যি মেজাজ বিগড়ে যায় শুভর।
ফোনটা রাখবেন দয়া করে?
জ্বি রাখব। দরদাম করে কিনবেন, যাই-ই কিনুন।
আশ্চর্য কী করে বখতিয়ার জানল শুভ মার্কেটে। লোকটি জিন না তো?
জেগে রাতটা পার হল। অর্নার সঙ্গে শুভর পরিচয়ের পর থেকে রাত জাগা শুরু। অর্নাকে দেখার অপেক্ষায় নির্ঘুমকে কাছে পাওয়া। তবে প্রতি রাতে ঘুমানোর আগে অর্না ও শুভ দুজন দুজনকে সুন্দর কথা লেখে মোবাইল ফোনের ম্যাসেজ বক্সে। সারা দিনের অবসাদ, ক্লান্তি দূর করার এ এক নিবিড় স্পর্শ যেন। অনুভবের মাঝে একমাত্র বসবাসকারী অর্নার ম্যাসেজ না পেলে ঘুম আসে না শুভর। অপ্রচলিত এ চর্চা অপ্রচলিত হয়ে গেল শেষঅব্দি। অর্নার বোধে এমন চর্চার আর জায়গা থাকল না। জ্ঞান বা অজ্ঞানতাবশত কোনো ভুল হলেও তার ক্ষমা চেয়েও ফেরাতে পারেনি শুভ অর্নাকে সেই অনাবিল সুখ চর্চা থেকে। অর্না থেমে গেলেও শুভ থামেনি। নিজের এমন পরিবর্তন চায় না শুভ। অর্নাকে ভালোবাসার অভ্যাসের কোনো পরিবর্তন মৃত্যু ছাড়া অন্য কিছু নয়।
বিছানার লাবণ্য গাঢ় হয় অর্নার ফোন কলে। অনেকদিন পর আবার হল। অর্নার ফোন। জানালায় ঝুলে থাকা পর্দার ফাঁক দিয়ে সূর্যের হাসি ঘরে ঢোকে। ঘরে স্যাঁতসেঁতে ভাব নেই।
হ্যালো! কেমন আছ? অর্নার প্রশ্ন শত সহস কিলোমিটার দীর্ঘ।
তারপরও শুভ বলে,
তোমার অপেক্ষায় আছি! দেখা আর স্পর্শ করার অপেক্ষায়! তোমার গন্ধ নেয়ার অপেক্ষায়!
প্রেমিকের মতো কথা বলছ কেন?
সম্পর্কের একটি দৃশ্যমান অভিব্যক্তি জরুরি অর্না! দিশেহারার মতো কথা বোঝাতে চায় শুভ। আচ্ছা প্রেম করলে প্রেমিক, প্রেমিকা হয়। আর ভালোবাসলে?
হুম। বেশি আবেগপ্রবণ হয়ে আছ।
হওয়ার কারণ আছে? তুমি হচ্ছ না? জানতে চায় শুভ।
না। অর্না বেশ সাবলীলভাবে জবাব দেয়। সম্পর্কের শুরুতে এ রকম প্রশ্নের উত্তর অসমাপ্ত থেকে যেত। অনেক কথা বলেও অর্না ক্ষান্ত হতো না। সেই অর্না এখন এ রকম প্রশ্নের উত্তর করে না। আজ যেহেতু একটা বিশেষ দিন তাই শুভ পরিবেশ মধুর রাখতে সচেষ্ট।
জানো অর্না! এতদিন তোমাকে ভেবে আমি অনেক কবিতা লিখেছি। কবিতা ছেড়ে আমার ভাবনায় তুমি আজ মর্ত্যে আসবে! আমার দৃষ্টির কানায় কানায় তুমি ভরে উঠবে! উফ্! ভাবতেও ভালো লাগছে!
অর্না নিরুত্তর।
কী পরে আসবে তুমি?
কেন?
তোমায় চিনে নেব।
নাই-ই যদি বলি। দেখব চিনতে পার কি না। অর্না শুভর হৃদয়ে লেপ্টে থাকা ছায়া। চিনতে ভুল হওয়ার কথা নয়। দেখা হওয়ার আকুল বাসনা জানিয়ে, অফুরান সুখ পাওয়ার আভাস ছড়িয়ে শুভ ফোনের কথা শেষ করে।
দুহাজার তিনশ টাকা দিয়ে অর্নার জন্য একটা শাড়ি আর একশ পঞ্চাশ টাকা দিয়ে ঢাকা কলেজের সামনে থেকে নিজের জন্য একটা নতুন শার্ট কেনে শুভ। ফুটপাতে ঝোলানো সারি সারি শার্ট থেকে একটি বেছে নেয় অর্নার পছন্দটা মাথায় রেখে। অভ্যাস না থাকলেও আজ মোটামুটি দামি সেলুনে ঢোকে। চুল কাটা, সেভ করা বাবদ আড়াইশ টাকা বের করে দেয়। নিজেকে পরিপাটি করা যেন শতভাগ। অর্নার পাশে নিজেকে মানানসই করার চেষ্টা। অন্যান্য দিনের মতো দ্বিধা, সংশয় বা সংকোচ নেই। নেই কৃপণতা। ঘড়ির কাঁটাকে দৃষ্টির আড়াল হতে না দেয়ার চেষ্টা শুভর। বেইলি রোডের পিৎজা হাট বেশ বড়। বুকের ভেতর অদ্ভুত অন্য রকম এক অনুভূতি নিয়ে শুভ পৌঁছায় পিৎজা হাটের দোরগোড়ায়। নির্ধারিত সময়ের পাঁচ মিনিট আগেই আসা। মোবাইলে কোনো তথ্য নেই। হয়তো অর্না রাস্তার জ্যামে। পিৎজা হাটের ভেতরে বসে শুভ। চারিদিক অনুসন্ধানী চোখ। বেশ কজনকে অর্না বলে মনে হলেও মনে হওয়াটা বেশিদূর গড়ায় না। মোবাইল নিশ্চুপ, হাতঘড়িও। কল্পনায় নিয়ে আসে অর্নাকে। ইশ্! এত অপরূপ! দেহের ভেতর এঁটে থাকা হৃৎপিণ্ডের ছোট্ট ছোট্ট শব্দ ঘনীভূত হচ্ছে ক্রমশ। ধ্যানে বিভোর শুভ কেঁপে ওঠে। এক স্পর্শ, এক গন্ধ শুভকে ছুঁয়ে যায়। চোখ মেলে শুভ। শ্বাস আটকে যায়। সংস্পর্শে দাঁড়িয়ে নীল শাড়ি পরা এক নারী মোবাইলে ব্যস্ত। শুভর মোবাইল কেঁপে ওঠে। স্ক্রিনে ক্ষুদ্রবার্তা, এলাম। তারপর মুখোমুখি অর্না আর শুভ। অপলক দৃষ্টি। শুকনো মাটি যেন অঝোর বৃষ্টি শুষে নিচ্ছে চাহিদামতো। এক রত্তি সময় ব্যয় হয়নি চিনে নিতে কেউ কাউকে। দুজনই নির্বাক। কথা খুঁজে না পাওয়ার নদীতে ভাসছে। শুভ অবাক হয় অর্নার সৌন্দর্যে বিধাতার এতটা বাড়াবাড়ি দেখে।
তুমি অনেক সুন্দর! বিধাতা নিজ হাতে তোমায় এঁকেছেন!
তুমিও।
ধ্যাৎ! আমি নই। আমি একটু চিৎকার করি? ইয়েয়য়য়য়! শুভর পাগলামির সুইচ অন হয়ে গেছে।
গলা বাড়িয়ে, শব্দ করে শুভ বলে, আমি আজ দারুণ সুখী! ওহ্ খোদা! শাড়ির প্যাকেট এগিয়ে দেয় শুভ। তোমার জন্য অর্না! আমি পছন্দ করেছি। তুমি পছন্দ করবে তো? শুভ হাঁপাচ্ছে।
একটু স্থির হও শুভ! অর্না বেশ শান্ত।
শুভ নিজের অস্থিরতায় কিছুটা লজ্জিত হয়। ঠিক সেই মুহূর্ত থেকে মুঠোফোনে প্রতিদিন নিঃশ্বাসের শব্দ গোনা মানুষটিকে অপরিচিত মনে হয়। মানব প্রকৃতির কী বিচিত্রতা। প্যাকেট খুলে শাড়ি দেখে অর্না।
সুন্দর!
সত্যি?
হ্যাঁ। তোমার সঙ্গে আমার কিছু কথা আছে শুভ।
আজ বাদ দাও না! আজ শুধু তোমাকে দেখি!
না-এর একটা মস্ত ঢেউ বুকে করে অর্না তীরে ওঠে। শুভ খেয়াল করে পাশের চেয়ারে এসে বসে এক পুরুষ। চওড়া দৃষ্টি।
ঠোঁট কাঁপানো হাসি। পুরুষটিকে দেখে অর্নার চেহারায় অন্য রোদের আভাস ফোটে।
এই তোমার সেই মানুষ, যে তোমাকে ভাবায়? পুরুষটির বিগলিত কণ্ঠ, গলিত লাশের মতো। এই পুরুষটি কী হয় অর্নার?
শুভ, উনি হচ্ছেন আমার স্বামী সায়মন।
শুভর সমস্ত শরীরে তিরতির করে বইতে শুরু করে হিম লোহিত ধারা। জটলা বেঁধে গেছে আবেগের। অর্না বলে চলছে,
সায়মনের সঙ্গে আমার দূরত্ব তোমার কাছে আমাকে পৌঁছে দিয়েছিল। সে দূরত্ব এখন ঘুচে গেছে। কিন্তু তোমাকে আমি ভালোবাসি। ভালোবাসব শুভ যতদিন বাঁচি।
শুভ জীবনপূর্ণ বিস্ময় নিয়ে চেয়ে থাকে। কেন বলেনি এতদিন অর্না! পাঁচ বছর ধরে দেখার যে অপেক্ষার ঘর শুভর বুকে তা অবিশ্বাসের রিখটার স্কেলে হেলে পড়ল। সুখের ধ্বংসস্তূপে ভর করল দিগন্তছোঁয়া কষ্ট। শুভ বুঝে উঠতে পারে না কী বলা যায়। কী বলা উচিত। মন, শরীরের কোনো অংশে অবস্থান করছে এ মুহূর্তে বোঝা মুশকিল। সে চেষ্টাও বৃথা। তারপরও শুভ টেনে টেনে বলে।
শুভকামনা অর্না! প্রেমের পরিণতি পরিণয়। আর ভালোবাসার পরিণতি, কষ্ট। একান্ত আমার হয়ে থাকুক সে কষ্ট।
সায়মন মোবাইলে কথা বলার অজুহাতে একটু দূরে সরে যায়। অর্নার চোখ থেকে অশ্র“ গড়িয়ে পড়ে।
আমি কি তোমাকে একটু স্পর্শ করতে পারি শুভ?
জানি তোমার স্পর্শ আমাকে দেয়ার জন্য নয়, আমার স্পর্শ নেয়ার জন্য হলে হয়তো পারো।
তুমি আমাকে চাও না?
চেয়েছিলাম।

No comments

Powered by Blogger.