একরামুল হত্যায় কে জড়িত? by কাফি কামাল ও আহমেদ জামাল
একটি নির্মম ও বর্বর হত্যাকা-। আতঙ্কের
জনপদ ফেনী এখন অশান্ত-উত্তাল। ফুলগাজী উপজেলার আলোচিত চেয়ারম্যান একরামুল
হকের খুনি কে? এ প্রশ্নের উত্তর ফেনীর মানুষের মুখে মুখে। অভিযোগ-পাল্টা
অভিযোগ। মুখোমুখি গুরু-শিষ্য দুই হাজারী। দুই দিন ধরেই আলোচনায় ফেনী সদর
আসনের সংসদ সদস্য নিজাম হাজারী। অভিযোগের আঙুল তার দিকে। তবে গতকাল সংবাদ
সম্মেলন করে দাবি করলেন, একরামুল হকের হত্যাকা-ে জড়িত নন তিনি। তার অভিযোগ
আবার জয়নাল হাজারীর বিরুদ্ধে। বলেন, এ হত্যাকা-ে জয়নাল হাজারী জড়িত। তাকে
রিমান্ডে নিলে সবকিছু জানা যাবে। ফেনীর বহুল আলোচিত-সমালোচিত সাবেক সংসদ
সদস্য জয়নাল হাজারী অস্বীকার করেছেন এ অভিযোগ। তার সাফ জবাব নিজাম হাজারী
ছাড়া কেউ এ ধরনের ঘটনা ঘটাতে পারে না। মর্মন্তুদ এ হত্যাকা-ের দুই দিন পরও
কোন ক্লু উদ্ধার করতে পারেনি পুলিশ। কি কারণে গুলির পর আগুনে পুড়িয়ে হত্যার
মতো নিষ্ঠুরতা সে প্রশ্নেরও উত্তর খুঁজছেন তদন্তকারীরা। নিহত একরামের ভাই এ
ঘটনায় মামলা করলেও গতকাল তিনি জানিয়েছেন দলের সিদ্ধান্তে মামলা হয়েছে।
এজাহার না পড়েই তিনি তাতে সাক্ষর করেছেন। এদিকে হত্যাকা-ে জড়িত কয়েকজনকে
চিনতে পেরেছিলেন প্রত্যক্ষদর্শীরা। তাদেরও নামও বিভিন্ন সূত্র থেকে বের হয়ে
আসছে। তারা ক্ষমতাসীন দলের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট। যদিও যাদের নাম
প্রত্যক্ষদর্শীরা বলছেন, তাদের নিয়ে কোন মাথা ব্যথা নেই পুলিশের। তাদের
কাউকে গ্রেপ্তারও করেনি। এদিকে বিএনপি নেতা মাহতাব উদ্দিন চৌধুরী মিনার
দাবি করেছেন গত উপজেলা নির্বাচনের পর থেকে তিনি এলাকা ছাড়া। দলীয় কোন্দলেই এ
ঘটনা ঘটেছে। একরামকে খুন করা হয়েছে এক ঢিলে দুই পাখি মারার লক্ষ্য নিয়ে।
মামলায় তাকে জড়ানো হয়েছে উদ্দেশ্যমূলকভাবে। এদিকে বিক্ষুব্ধ ফুলগাজীতে
গতকাল স্বতঃস্ফূর্তভাবে হরতাল পালিত হয়েছে।
নির্মম মৃত্যুর রাজনৈতিক মামলা
২০ মিনিটের কিলিং মিশনে শহরের ব্যস্ততম রাস্তায় প্রকাশ্য দিবালোকে খুন হয়েছেন ফুলগাজী উপজেলা চেয়ারম্যান একরামুল হক। অন্তত দুই ঘণ্টা আগে থেকেই খুনিরা অবস্থান করছিলেন স্পটে। তাদের দেখেছে ফেনী একাডেমি রোডের বাসিন্দারা। দেখেছে চলতি পথের অনেক মানুষ। হত্যাকা-ের পরপর স্থানীয় কমিশনার শিবলু, জেহাদ চৌধুরী, রুটি সোহেল, আবিদসহ কিলিং মিশনে অংশ নেয়া অনেকের নাম ছড়িয়ে পড়েছে শহরের প্রতিটি মানুষের মুখে মুখে। যাদের সকলেই সরকার দলীয় রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত। জেলা আওয়ামী লীগের কতিপয় নেতার নামে ওঠে আসে খুনিদের সহায়তা ও শেল্টার দেয়ার অভিযোগ। কিন্তু দিন শেষে মধ্যরাতে মামলা হয় উপজেলা নির্বাচনে তার প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী এক বিএনপি নেতা ও অজ্ঞাতনামাদের আসামি করে। এখন মামলা নিয়ে নানা প্রশ্ন ঘুরছে ফেনীবাসীর মুখে। কে খুন করল আর কার গায়ে লাগলো রক্তের ছিটা? এমনকি মামলা নিয়ে সন্তুষ্ট নয় একরামের পরিবারও। অসহায়ত্ব প্রকাশ করে তারা বলছেন, এমন মামলার সিদ্ধান্ত নিয়েছে জেলা আওয়ামী লীগ। অভিযুক্তদের নাম যেমন মামলায় নেই, তেমনি তৎপরতা নেই প্রশাসনেরও। এমনকি ঘটনার দুদিন পর জেলা বিএনপির সংবাদ সম্মেলনে দাবি করা হয় জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক নেতা জয়নাল হাজারীকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাদের। এমন পরিস্থিতিতে ফেনীবাসী বলছেন, পুরো ঘটনাটি নিয়ে চলছে ‘সিনেমার মতো সাপ-ওঝা খেলা’। পরিকল্পিত হত্যাকা-ের পর দায়ের করা হয়েছে একটি পরিকল্পিত মামলা। প্রশ্ন দেখা দিয়েছে ফেনী আওয়ামী লীগ কি হত্যাকা-ের বিচার চায় নাকি সেটা নিয়ে রাজনীতি করতে চায়?
সিদ্ধান্ত দলের আমি কেবল স্বাক্ষর করেছি: জসিম
মামলার বাদী রেজাউল করিম জসিম বলেন, ভাইয়ের মর্মান্তিক হত্যাকা-ের পর আমরা মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছি। দলের পক্ষ থেকে মামলা দায়েরের সিদ্ধান্ত হয়েছে। সে অনুযায়ী আমি মামলার আবেদনে বাদী হিসেবে স্বাক্ষর করেছি। এটা রাজনৈতিক মামলা। ঘটনার সঙ্গে অভিযুক্তদের নাম এজাহারে উল্লেখ না থাকার ব্যাপারে তিনি বলেন, আমি অত কিছু জানি-বুঝি না। রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত অনুযায়ী মামলা হয়েছে। একরামের ঘনিষ্ঠরা জানান, মামলা হয়েছে এমপি নিজাম হাজারীর নির্দেশে। কারণ শহরের মাস্টার পাড়ায় একরামের বাড়ি। মাস্টার পাড়াতেই স্থানীয় এমপি নিজাম হাজারীর বাড়ি। একরামের ভাইয়েরা রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত নয়। মামলা দায়েরের ক্ষেত্রে তারা এমপির ভয়েই নিজেদের বিবেচনায় সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি। আওয়ামী লীগ সূত্র জানায়, জেলা আওয়ামী লীগের পক্ষে নিজাম হাজারী মামলা ড্রাফট করেন। একরামের ভাই রেজাউল করিম জসিমের কাছ থেকে কেবল স্বাক্ষর নেয়া হয়। ফেনীর রাজনৈতিক মহল মনে করে, পরিকল্পিত হত্যাকা-ের পর পরিকল্পিতভাবেই মামলা দেয়া হয়েছে। হত্যাকা-ের ঘটনায় বিএনপি নেতার বিরুদ্ধে মামলা করে এক ঢিলে দুই পাখি মারা হচ্ছে। আওয়ামী লীগ আমলে বিএনপি নেতা মিনার চৌধুরীর নামে মামলা দেয়ার কারণে বিরোধী নেতাকর্মী দমন-পীড়ন করা যাবে। আবার বিএনপি ক্ষমতায় এলে মিনার চৌধুরী ছাড়া পেলেও তারা একরাম হত্যার বিচার নিয়ে তৎপরতা অব্যাহত রাখবে না। মধ্যখান দিয়ে আসল অপরাধীরা বেঁচে যাবেন। বন্ধুয়া গ্রামের শফিকুল, সালাম, বাদলসহ বেশ কয়েকজন জানান, এক গ্রুপ শহরের একাডেমি রোডে কিলিং মিশন চালিয়েছে আরেকটি গ্রুপ ঘটনা ভিন্নখাতে প্রবাহিত করতে ফুলগাজীতে মিনার চৌধুরীর বাড়িতে হামলা করেছে। তারা বলেন, মিনার চৌধুরী অর্থ সহযোগিতা দিতেন পারেন কিন্তু সন্ত্রাসীদের যোগান দিয়েছে জেলা আওয়ামী লীগেরই কিছু নেতা। তাদের ছত্রচ্ছায়া না থাকলে ফেনীতে এত কিলিং মিশনের অবস্থান ও দিন-দুপুরে এত বড় ঘটনো সম্ভব নয়। একরামের জেটাতো ভাই গিয়াসউদ্দিন বলেন, হত্যাকা-ের সময় প্রশাসনের নীরব ভূমিকা মেনে নেয়া কঠিন। প্রশাসন সক্রিয় হলে অন্তত আমাদের ভাইয়ের লাশটি দেখতে পেতাম। তিনি বলেন, যাদের কথা শোনা যাচ্ছে তাদের নাম মামলায় অন্তর্ভুক্ত হয়নি। কেন হয়নি জানি না। তবে আমরা সরকারের কাছে উপযুক্ত বিচার চাই। ফেনীর নানা শ্রেণী পেশার মানুষ বলছেন, বর্তমান সরকারের আমলে দেশের অন্যান্য জায়গার মতো ফেনী জেলা বিএনপি নেতাকর্মীরাও মামলা-হামলায় বিপর্যস্ত। জেলার বেশিরভাগ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে একাধিক মামলা রয়েছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হয়রানি ও সরকার দলীয় নেতাকর্মীদের ভয়ে তারা প্রকাশ্যে চলাফেরাও করতে পারেন না। এমন অবস্থায় ফেনীর একাডেমি রোডের মতো ব্যস্ত জায়গায় শ’দেড়েক বিএনপি নেতাকর্মীর জড়ো হওয়া এবং সকাল থেকে কয়েকঘন্টা অবস্থান করার বিষয়টি অবিশ্বাস্য।
রাজনৈতিক দ্বন্দ্বের বলি
দলীয় সূত্র জানায়, ১৭ই মে বৈঠকের সময় ফেনী জেলা আওয়ামী লীগ নেতাদের সঙ্গে যখন জেল-জালিয়াতির প্রতিবেদন নিয়ে কথা হচ্ছিল তখন একরামের প্রশংসা করেন প্রধানমন্ত্রী। এমপি পদ হারানো ও জেলে যাওয়ার পরিস্থিতি তৈরির পর নিজাম হাজারী জেলার দ্বিতীয় প্রভাবশালী একরামকে তার স্থান দখলের প্রতিদ্বন্দ্বী মনে করেন। বিগত জাতীয় নির্বাচনে ফেনী-১ আসন থেকে প্রধানমন্ত্রীর সাবেক প্রটোকল অফিসার আলাউদ্দিন চৌধুরী নাসিমের চাচাতো ভাই খায়রুল বাশার তপন নির্বাচনে প্রচারণা চালিয়েছেন। তখন একরামের লোকজন তার গাড়িবহরে হামলা করে। পরে জাসদ নেত্রী শিরিন আক্তারকে সেখানে নির্বাচনে আগ্রহী করে তোলার পেছনে বড় ভূমিকা রাখেন একরাম। বিষয়টি ভালভাবে নিতে পারেননি আলাউদ্দিন নাসিম। তিনি এ নিয়ে প্রকাশ্যে কোন বিরোধে না গেলেও একরামের প্রতি বিরক্ত ছিলেন। অন্যদিকে জয়নাল হাজারীর শত্রু হিসাবে খ্যাত আলাউদ্দিন নাসিমের সঙ্গে গুরু-শিষ্যের সম্পর্ক রয়েছে নিজাম হাজারীর। ওদিকে ফেনী আওয়ামী লীগের রাজনীতির পরামর্শদাতা হিসেবে খ্যাত যুগ্ম সম্পাদক জাহাঙ্গীর আদেল। অভিযোগ রয়েছে, ফেনীতে তার বুদ্ধি অনুযায়ীই জয়নাল হাজারী এবং পরে নিজাম হাজারী রাজনৈতিক নৈরাজ্যের সিদ্ধান্ত নেয়। জেলা ডায়াবেটিক হাসপাতালের পদ নিয়ে তার সঙ্গে বিরোধে জড়িয়ে পড়েছিলেন একরাম। এছাড়া এমপি পদ নিয়ে আশঙ্কার পাশাপাশি ওই জেল-জালিয়াতি প্রকাশের ঘটনায় ফের ফেনীর নিজাম হাজারী গ্রুপের মধ্যে ভর করেছে জয়নাল হাজারী আতঙ্ক। অনেকেই মনে করেন, জয়নাল হাজারী ও একরাম মিলে যে কোন দিন দখলে নিতে পারে নিজামের সাম্রাজ্য এ আশঙ্কাও হতে পারে হত্যাকা-ের বড় কারণ। বর্তমানে ঠিকাদারি ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত একরামের সাবেক এক শিষ্য আদর বর্তমানে নিজাম হাজারীর খুবই ঘনিষ্ঠ। একটি পারিবারিক ঘটনা নিয়ে তার সঙ্গে দূরত্ব ছিল একরামের। পরে তার সঙ্গে সম্পর্ক হলেও কয়েক বছর ধরে আদর পক্ষত্যাগ করে নিয়েছেন নিজাম হাজারীর আশ্রয়। এ আদরই একরামের টেন্ডার সংক্রান্ত শক্তি ও দুর্বলতার কথা জানতেন।
প্রত্যক্ষদর্শীদের বর্ণনা
হত্যাকা-ের সময় ঘটনাস্থল থেকে ৩০০ মিটার দূরে বিরিঞ্চি রেলক্রসিংয়ের পাশে বাজারে ছিলেন একরামের চাচাতো ভাই রাজু। ভাইয়ের ওপর হামলার কথা শুনে সেখানে ছুটে যান রাজু। তিনি যখন পৌঁছেন তখন কেবল আগুন জ্বলছে। রাজু অভিযোগ করে বলেন, পুলিশ দ্রুত উদ্ধার তৎপরতা চালালে আমরা অন্তত ভাইয়ের লাশটি দেখতে পেতাম। ওদিকে কিলিং মিশনে অংশ নেয়া অনেকের গায়ে ফেনী কলেজের ইউনিফর্ম ছিল। স্টেডিয়াম এলাকার একজন দোকানদার বলেন, এতদিন শুনেছি র্যাবের পোশাক পরে অপরাধীরা নানা অপহরণ বা গুম-খুনের ঘটনা ঘটায়। এখন দেখছি কলেজের ইউনিফর্মও সে কাজে ব্যবহার হচ্ছে। কিলিং মিশনে অংশ নেয়া অনেকের গায়ে ফেনী কলেজের ইউনিফর্ম দেখা গেছে। প্রত্যক্ষদর্শী সূত্র জানায়, হত্যাকা-ের সময় পাশের বিল্ডিং থেকে সোহেল নামে একটি ছেলে মোবাইলে ভিডিও করেছিল। পুলিশ বিষয়টি জানতে পেরে সেটা তার কাছ থেকে সংগ্রহ করে নেয়। একজন প্রত্যক্ষদর্শী জানান, ঘটনাস্থলে স্থানীয় কাউন্সিলর শিবলু, জেহাদ চৌধুরী, রুটি সোহেল, আবেদকে দেখা গেছে। ফেনী ডায়াবেটিক হাসপাতাল থেকে ফুলগাজী উপজেলা পরিষদে যাওয়ার সময় নিজের প্রাডো গাড়িয়ে ছিলেন একরাম। পেছনেই ছিল তার উপজেলা পরিষদের গাড়ি। একরাম আক্রান্ত হলে উপজেলা পরিষদের গাড়িচালক কিছুটা সামনে এগিয়ে গিয়ে পুলিশের সহযোগিতা চান। কিন্তু পুলিশ আমলে না নিয়ে উল্টো দিকে চলে যায়। হত্যাকা-ের স্পট বিলাসী সিনেমা হলের উল্টো দিকের গলিতে বড় বাড়ি। প্রত্যক্ষদর্শীদের অভিযোগ, বড় বাড়ির কিছু ছেলেকে ঘটনাস্থলে দেখা গেছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত সে বড় বাড়ির কাউকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়নি। বিরিঞ্চি এলাকার এক দোকানদার জানান, বিগত উপজেলা নির্বাচনের আগের রাতে ফুলগাজীতে একরামের বিরুদ্ধে বহিরাগত হিসেবে তৎপরতা চালাতে যাওয়া ২৪ জনকে আটক ও মারধর করেছিল গ্রামবাসী। তাদের মধ্যে কয়েকজন ছিলেন শহরে ছাত্রলীগের চিহ্নিত কর্মী। এর মধ্যে কয়েকজনকে দেখা গেছে সেদিনের কিলিং মিশনে। ফেনী শহরে গুঞ্জন ভাসছে, রোববার ফেনী পৌর ভবনে একটি বৈঠক থেকেই একরামকে হত্যার পরিকল্পনা করা হয়। তবে সেখানে উপস্থিত একজন দূতের মাধ্যমে একরামকে সাবধানও করেছিলেন। কিন্তু বিষয়টি গুরুত্বে সঙ্গে নেননি তিনি।
ফুলগাজীবাসীর চোখে জল
রাজনৈতিক কারণে ফুলগাজীবাসীর প্রিয়-অপ্রিয় দুই ছিলেন একরামুল হক। কিন্তু উন্নয়ন কর্মকা- ও রাজনৈতিক সহনশীলতার কারণে তাকে পছন্দ করতেন বেশিরভাগ মানুষ। হত্যাকা-ের ঘটনায় ফেনীর পরিবেশ থমথমে হলেও বেদনাবিধুর ফুলগাজীর পরিবেশ। গতকাল সেখানে হরতাল চলাকালে ফেনী থেকে একরামের গ্রামের বাড়ি ফুলগাজীর বন্ধুয়া গ্রামে যেতে অন্তত ১০টি স্থানে পিকেটারদের বাধার মুখে পড়তে হয়। একরামের বাড়ির কাছে যে বেইলি ব্রিজটি বিক্ষুব্ধ জনতা উপড়ে ফেলেছিল সেখানে দেখা যায় কয়েকজন পুলিশ সদস্য সতর্ক অবস্থানে। তার গ্রামের বাড়িতে রাজ্যের নীরবতা। বন্ধুয়া গ্রামের মসজিদের ইমাম বৃদ্ধ কারী মাহমুদুল্লাহ বলেন, ফেনী থাকলেই প্রতিদিন আমার সঙ্গে কথা বলতেন একরাম। সপরিবারে ওমরাহ করতে যাওয়ার জন্য তিনি পাসপোর্টও জমা দিয়েছেন। তার এমন মৃত্যু সইতে পারছি না। বন্ধুয়া গ্রামের রফিকুল ইসলাম বলেন, একরামকে হত্যার মধ্য দিয়ে ফেনীর উত্তরাঞ্চলে আওয়ামী লীগের রাজনীতিকেই হত্যা করা হলো। এখন আর কেউ কোন্দলপ্রবণ আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে ঝুঁকি নিতে সাহস পাবে না। নিজের ইমেজ রক্ষার জন্য তিনি ভাইবেরাদরদের পর্যন্ত উপজেলা পরিষদে যেতে দিতেন না। বন্ধুয়া গ্রামের মানুষের সঙ্গে কথা বলার সময় দেখা গেছে তাদের চোখে অশ্রু টলমল। তাদের প্রত্যেকের অভিযোগ, একরামের হত্যাকা-ের পর জেলা আওয়ামী লীগ বড় ধরনের কোন প্রতিবাদ করেনি। অভিযুক্তদের নাম বাদ দিয়ে পুরনো শত্রুতাকে টেনে এনে বিরোধী দলের নেতার নামে দায়ের করা হয়েছে একটি রাজনৈতিক মামলা। প্রশ্ন দেখা দিয়েছে- জেলা আওয়ামী লীগ আদৌ একরাম হত্যার বিচার চায় কিনা।
No comments