হুমায়ূন আহমেদ বেঁচে থাকলে কি করতেন? by অমিত রহমান
প্রখ্যাত কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদ বেঁচে থাকলে এখন কি করতেন। পাঠকরা হয়তো বলবেন এখন এই প্রশ্ন তুলছি কেন?
তিনি তো চলেই গেছেন। এখন তো তিনি ধরাছোঁয়ার বাইরে। চাইলেও তাকে পাওয়া যাবে না। তাই তাকে নিয়ে ভাববার কি আছে। আমি বলবো অবশ্যই ভাববার আছে। হিমুর হাতে কয়েকটি নীল পদ্ম কেন লিখেছিলেন সতেরো বছর আগে। তার ভাবনার মধ্যে কি ছিল? সমাজ, রাষ্ট্র নিয়ে কেন ভেবেছিলেন? লেখক হিসেবে সমাজ বিজ্ঞানী হিসেবে তিনি ভাবতেই পারেন। দেশ যখন জ্বলছে তিনি তো নীরোর মতো বাঁশি বাজাতে পারেন না। সমাজের ছবি আঁকতে গিয়ে দীর্ঘ হোঁচট যে তিনি খেয়েছিলেন তা তো স্পষ্ট। তিনি ২০০৯ সালে দেশ নিয়ে রাজনীতি নিয়ে এবং দুই নেত্রীকে নিয়ে ভেবেছিলেন। ব্যক্তিগত মতামত তুলে ধরেছিলেন। লিখেছিলেন ‘আমার ধারণা নিম্নশ্রেণীর পশুপাখি মানুষের কথা বোঝে। অতি উচ্চশ্রেণীর প্রাণী মানুষই শুধু একে অন্যের কথা বোঝে না। বেগম খালেদা জিয়া কী বলছেন তা শেখ হাসিনা বুঝতে পারছেন না। আবার শেখ হাসিনা কী বলছেন তা বেগম খালেদা জিয়া বুঝতে পারছেন না। আমরা দেশের মানুষ কী বলছি সেটা তারা বুঝতে পারছে না। তারা কী বলছেন তাও আমাদের কাছে পরিষ্কার নয়।’ এখন দেশ জ্বলছে। মানুষ পুড়ছে। পতাকা রক্তে লাল হচ্ছে। সঙ্কটে পড়েছে গোটা দেশ। মানুষ উদ্বিগ্ন, দিশাহারা। বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ নিয়ে বন্ধু রাষ্ট্রগুলো চিন্তিত। চোখের সামনে শিল্প কারখানা পুড়ে ছাই হচ্ছে- কেউ বলতে পারছে না কারা পোড়ালো। মানুষ তা জানে এবং বুঝে কিন্তু এক অজানা ভয়ে তারা মুখ খুলছে না। সঙ্কট গভীর থেকে গভীরতর হচ্ছে। জেদ আর অহমিকাকে পুঁজি করে দুই নেত্রী একে অপরকে মোকাবিলার চেষ্টা করছেন। কিন্তু ১৬ কোটি মানুষ? তারা কি ভাবছে। আসলে তারা কিছুই ভাবতে পারছে না। কারণ, হুমায়ূন আহমেদ যা লিখে গেছেন তাতো শতকরা একশ’ ভাগ সত্যি। দুই নেত্রী একে অপরকে বুঝেন না। তারা শুধু বুঝেন ক্ষমতা। দেশ গোল্লায় যাক, তাতে কি? আমার গাড়িতে তো পতাকা উঠবে। ক্ষমতায় না থাকলেও ক্ষতি নেই। মাঝে মধ্যে ব্যতিক্রম। এতো দেখছি হীরক রাজার দেশে আছি আমরা। জনগণ যা ভাবে আমাদের নেত্রীরা তা ভাবেন না। এ মুহূর্তে দেশের মানুষ ভাবছে একটা সমঝোতার কথা। আমাদের নেত্রীরা কি তা ভাবছেন! কেউ কি তাদের কাছে গিয়ে বলতে পারবে নেত্রী বা ম্যাডাম অনেক হয়েছে। এবার আসুন জনতার কথা ভাবা যাক। সর্বনাশ এ সাহস দেখাবে কে? মন্ত্রীত্ব যাবে, নেতৃত্ব যাবে, এমপি হওয়ার স্বপ্ন যাবে, জানও যেতে পারে। অজানা নয় জানা ভয়ে তারা তটস্থ। তাই তারা অসহায় আত্মসমর্পণ করে বসে আছেন। দেশ নয়, নিজের কথা ভাবতে ভাবতে তারা কোরাস সুরে গান গাইছেন। বলছেন- আমরা আছি, আমরা থাকবো। দেশ নিয়ে ভেবে কি লাভ। যারা ভাবে তারা বোকা। এ বোকাদের দলে আমরা নেই।
পাগলও জানে ৫ই জানুয়ারির নির্বাচন কোন নির্বাচনের সংজ্ঞায় পড়ে না। কিন্তু সরকার প্রধান এটাকে আটকে ধরে থাকতে চান। তাই তিনি বলছেন পৃথিবীর কোন শক্তি এ নির্বাচন বানচাল করতে পারবে না। পুলিশ, মিলিটিারি নামিয়ে দিয়েছেন জনগণের ইচ্ছার বিরুদ্ধে। জনগণ কি চায় একবারও তা দেখার চেষ্টা করেননি। তারা যে ক্রমাগত একই বার্তা দিয়ে যাচ্ছে, এ ধরনের নির্বাচনে তাদের সায় নেই- এটা বুঝবার ক্ষমতা কি আছে গণতন্ত্রের মানস কন্যার। নাকি তিনি ক্ষমতার মোহে নিকষ কালো অন্ধকারকে আলিঙ্গন করেছেন। যেখান থেকে পৃথিবীর কোন স্বৈরশাসক ফিরে আসতে পারেননি। মিলিটারি পুলিশ দিয়ে সাময়িক স্বস্তি পাওয়া যায়। কিন্তু শান্তি পাওয়া যায় না। গাদ্দাফি কি ভাবতে পেরেছিলেন তার এ রকম পরিণতি হবে। হোসনি মোবারকের পরিণতি কি তাও আমরা দেখছি। সাদ্দাম তো জান দিয়ে প্রমাণ রেখে গেছেন বন্দুক দিয়ে জনগণের মন জয় করা যায় না। তাই যদি হতো তাহলে তাবৎ দুনিয়ায় বন্দুকের শাসন কায়েম হয়ে যেতো। যদিও রাষ্ট্রবিজ্ঞানীরা বলে গেছেন বন্দুকের কোন সুনির্দিষ্ট দিক নেই। নিজের দিকেও ঘুরে যায় কখনও কখনও। একটা সমাজ বা রাষ্ট্রের অন্যতম চালিকা শক্তি তার নাগরিক সমাজ। সরকার যখন বেপথে হাঁটার চেষ্টা করে তখন নাগরিকরা সোচ্চার হন। রাজপথে নেমে আসেন। জনগণকে কাছে টেনে এনে ব্যারিকেড তৈরি করেন। বাংলাদেশে এর বিপরীত চিত্র। দেশ ডুবছে, মানুষের স্বপ্ন ভেঙে খান খান হয়ে যাচ্ছে তখনও নাগরিক সমাজ মুখে কুলুপ এঁটে বসে আছেন। কোন কোন ক্ষেত্রে রসদ যোগাচ্ছেন। বিভাজনের স্রোতে শামিল হয়ে আওয়াজ তুলছেন- আসুন চেতনা রক্ষা করি। ফলে সৃষ্টি হচ্ছে নৈরাজ্য। কে না জানে নৈরাজ্য থেকে রাজনৈতিক-শূন্যতার সৃষ্টি হয়। আর শূন্যতার ফলে স্বৈরশাসকের জন্ম হয়। আমাদের নাগরিক নেতারা কি ভাবছেন। এখনও কি তারা ঘুমিয়ে থাকবেন।
পাগলও জানে ৫ই জানুয়ারির নির্বাচন কোন নির্বাচনের সংজ্ঞায় পড়ে না। কিন্তু সরকার প্রধান এটাকে আটকে ধরে থাকতে চান। তাই তিনি বলছেন পৃথিবীর কোন শক্তি এ নির্বাচন বানচাল করতে পারবে না। পুলিশ, মিলিটিারি নামিয়ে দিয়েছেন জনগণের ইচ্ছার বিরুদ্ধে। জনগণ কি চায় একবারও তা দেখার চেষ্টা করেননি। তারা যে ক্রমাগত একই বার্তা দিয়ে যাচ্ছে, এ ধরনের নির্বাচনে তাদের সায় নেই- এটা বুঝবার ক্ষমতা কি আছে গণতন্ত্রের মানস কন্যার। নাকি তিনি ক্ষমতার মোহে নিকষ কালো অন্ধকারকে আলিঙ্গন করেছেন। যেখান থেকে পৃথিবীর কোন স্বৈরশাসক ফিরে আসতে পারেননি। মিলিটারি পুলিশ দিয়ে সাময়িক স্বস্তি পাওয়া যায়। কিন্তু শান্তি পাওয়া যায় না। গাদ্দাফি কি ভাবতে পেরেছিলেন তার এ রকম পরিণতি হবে। হোসনি মোবারকের পরিণতি কি তাও আমরা দেখছি। সাদ্দাম তো জান দিয়ে প্রমাণ রেখে গেছেন বন্দুক দিয়ে জনগণের মন জয় করা যায় না। তাই যদি হতো তাহলে তাবৎ দুনিয়ায় বন্দুকের শাসন কায়েম হয়ে যেতো। যদিও রাষ্ট্রবিজ্ঞানীরা বলে গেছেন বন্দুকের কোন সুনির্দিষ্ট দিক নেই। নিজের দিকেও ঘুরে যায় কখনও কখনও। একটা সমাজ বা রাষ্ট্রের অন্যতম চালিকা শক্তি তার নাগরিক সমাজ। সরকার যখন বেপথে হাঁটার চেষ্টা করে তখন নাগরিকরা সোচ্চার হন। রাজপথে নেমে আসেন। জনগণকে কাছে টেনে এনে ব্যারিকেড তৈরি করেন। বাংলাদেশে এর বিপরীত চিত্র। দেশ ডুবছে, মানুষের স্বপ্ন ভেঙে খান খান হয়ে যাচ্ছে তখনও নাগরিক সমাজ মুখে কুলুপ এঁটে বসে আছেন। কোন কোন ক্ষেত্রে রসদ যোগাচ্ছেন। বিভাজনের স্রোতে শামিল হয়ে আওয়াজ তুলছেন- আসুন চেতনা রক্ষা করি। ফলে সৃষ্টি হচ্ছে নৈরাজ্য। কে না জানে নৈরাজ্য থেকে রাজনৈতিক-শূন্যতার সৃষ্টি হয়। আর শূন্যতার ফলে স্বৈরশাসকের জন্ম হয়। আমাদের নাগরিক নেতারা কি ভাবছেন। এখনও কি তারা ঘুমিয়ে থাকবেন।
No comments