আশার পাশাপাশি আশংকার দোলাচলে দিল্লি
আম-আদমি নেতা অরবিন্দ কেজরিওয়াল শনিবার (আগামীকাল) দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেবেন। রামলীলা ময়দান চত্বরে এখন সাজ সাজ রব। উৎসবের প্রস্তুতি চূড়ান্ত। কিন্তু এই আনন্দেও অনেকের মুখ কালো! আশার পাশাপাশি আশংকার দোলাচলে দুলছে তাদের প্রাপ্তির প্রত্যাশা। একটাই চিন্তা, এবার আবার কী হবে? অরবিন্দ ও তার সঙ্গীরা মিলে দুর্নীতিমুক্ত দিল্লি গড়তে পারবেন কিনা, তা সময় বলবে। কংগ্রেসের হাত ধরে তখতে বসে ক্ষমতার যাবতীয় বাহ্যিক আড়ম্বরের মুখে ‘ঝাঁটা’ মেরে অরবিন্দ নিজেকে ‘মুখ্যসেবক’ হিসেবে তুলে ধরতে পারবেন কিনা, সেটাই এখন দেখার বিষয়।
যেমন পূর্ব দিল্লির মোটর ভেহিক্যালস অফিস-গাড়ির লাইসেন্স মেলে এখানে। কলকাতার বেলতলার মতো এখানেও দালাল তন্ত্রের রমরমার অভিযোগ। টাকা দিলে ঘরে বসেই পাওয়া যায় গাড়ি চালানোর ছাড়পত্র। দক্ষিণা দিলে চালানোর পরীক্ষা হয় নামমাত্র- আজ সেখানেও আশংকার চোরা স্রোত। একই ছবি দিল্লির সরকারি হাসপাতালগুলোতেও। উত্তর দিল্লির এক সরকারি হাসপাতালের লেবার ওয়ার্ডের আক্ষেপ এখানে সমস্যা প্রকট! চারপাশের জেলা থেকে তো বটেই, দিল্লির প্রান্তিক অনেক মানুষই এই হাসপাতালে আসেন সন্তান প্রসবের জন্য। প্রসবের পর মিষ্টি খাওয়ানোর জন্য টাকা দেয়াটা বাধ্যতামূলক। টাকার অংকও ধার্য রয়েছে ন্যূনতম তিন হাজার টাকা নাকি দিতেই হবে। দাবি মতো টাকা না পেলে শিশুকে না দেয়ার হুমকিও দেয়া হয় বলেও অভিযোগ অনেকের। আজ সেখানে হাওয়াটা একটু অন্য রকম। মিষ্টি খাওয়ার টাকাটা বন্ধ হয়ে যাবে নাতো? আশংকার বাতাস বইছে দিল্লির অভিজাত তন্ত্রের অন্দরমহলেও। আম-আদমির চাপে ধসে পড়েছে রেলস্টেশনে ভিভিআইপিদের জন্য বিশেষ গাড়ি পার্কিং ব্যবস্থার অলিখিত নিয়ম। অরবিন্দের ১৮ দফার ঘায়ে ঘাম ছুটছে উচ্চপদস্থ আমলাদেরও। যে দিল্লি এতদিন মন্ত্রী-আমলাদের দৌর্দণ্ড প্রতাপের লাল গাড়ি দেখে অভ্যস্ত,
যাদের যাতায়াতের সময় স্তব্ধ করে দেয়া হয় ‘আম-আদমির’ যানবাহন, সেখানেই কিনা উল্টোরথ! লাল বাতির গাড়ি, সরকারি বাংলো না নেয়ার প্রশ্নে অনড় অরবিন্দ ও তার দল। জাঁকজমক করে ছয়টি বিশাল বাংলো তৈরি হয়েছিল দিল্লি সরকারের মন্ত্রীদের জন্য। লেফটেন্যান্ট গভর্নরের অফিস থেকে কয়েকশ’ মিটার দূরে আতাতুর রেহমান লেন এবং রাজনিবাস মার্গ-এ ওই ছয়টি বাংলো ১৪ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করা হয়েছিল। এএপি নেতা যোগেন্দ্র অবশ্য বলছেন, তাতে আশংকার যথেষ্ট কারণ রয়েছে দিল্লি সরকারের উচ্চপদস্থ আমলাদের অনেকের আশংকার পেছনে যথেষ্ঠ কারন রয়েছে। যোগেন্দ্রর কথায়, ‘আমরা চেষ্টা করছি একটা উদাহরণ তৈরি করার। যদি আমাদের বিধায়ক-মন্ত্রীরা এই বিলাসবহুল বাংলোতে না যান, তাহলে এখানকার ভিআইপি-সংস্কৃতিও শুকিয়ে আসবে।’ বিশেষজ্ঞ মহলের ধারণা ভিআইপি সংস্কৃতির ভবিষ্যৎ ধুলোয় মিশিয়ে দিয়ে শেষ পর্যন্ত দিল্লি বদলাবে কিনা তা এখন সময়ের অপেক্ষা। দুর্নীতির পাঁক থেকে প্রশাসনকে তোলা যাবে কিনা সেটাও চিন্তার বিষয়। তবে আশা-নিরাশা-হতাশা যাই থাকুক না কেন, আম-আদমির আগমনী ধ্বনিতে যে অনেকেরই হাসিমুখটা শুকিয়ে গেছে- দিল্লি প্রশাসনের চেহারায় সে ছাপটাই তীব্র হয়ে উঠছে দিন দিন।
No comments