নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি বনাম মন্ত্রী-এমপিদের সম্পদ বৃদ্ধি by বিমল সরকার
রাজনীতিকদের একগুঁয়েমি, জেদাজেদি,
রেষারেষি ও অপরিণামদর্শী কর্মকাণ্ডের ফলে ২০০৬ সালের শেষার্ধে বিএনপি
নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট সরকারের মেয়াদ শেষ হওয়ার ঠিক পূর্বমুহূর্তে দেশে
এক ভয়াবহ নৈরাজ্যের সৃষ্টি হয়। দেশবাসী চরম অনিশ্চয়তার মধ্য দিয়ে সময়
অতিবাহিত করে। মূলত রাজনীতিকদেরই সৃষ্ট দেশব্যাপী চরম নৈরাজ্য, বিশৃংখলা ও
অনিশ্চয়তার মাঝে সেনাবাহিনীর সমর্থন নিয়ে ফখরুদ্দীন আহমদের তত্ত্বাবধায়ক
সরকার ২০০৭ সালের ১১ জানুয়ারি ক্ষমতাসীন হয়। দেশে ও বিদেশে ওই সরকার এবং
আমাদের সেনাবাহিনী দারুণভাবে প্রশংসিত হয়। অনেকে ফখরুদ্দীন সরকারকে ‘জাতির
উদ্ধারকর্তা’ হিসেবে অভিহিত করেছিলেন সে সময়। প্রায় ২৪ মাস স্থায়ী ওই
তত্ত্বাবধায়ক সরকার শেষদিকে অবশ্য নানা কারণে সুনাম ও সাফল্যের ধারাবাহিকতা
ধরে রাখতে পারেনি।
সেনা সমর্থিত ফখরুদ্দীন সরকারের কর্মকাণ্ড ও সাফল্য-ব্যর্থতা নিয়ে নানাজনের নানা মত থাকতে পারে। কিন্তু যেসব কারণে ওই সরকার মানুষের আস্থা অর্জন ও দৃষ্টি আকর্ষণ করতে পেরেছিল, সেগুলোর অন্যতম হল দুর্নীতির বিরুদ্ধে তার অবস্থান। দুর্নীতি নামক বিষবৃক্ষটি রাষ্ট্রের রন্ধ্রে রন্ধ্রে দিন দিন এর শাখা-প্রশাখা বিস্তার করে গোটা জাতিকে কী গভীর অতলে নিয়ে গেছে, তার কিছু দৃষ্টান্ত সবার সামনে উন্মোচিত হয় তৎকালীন সরকারের কর্মতৎপরতায়ই। দেশের শীর্ষ পর্যায়ের রাজনীতিক থেকে শুরু করে সাবেক মন্ত্রী, সংসদ সদস্য, আমলা, ব্যবসায়ী এবং বিভিন্ন বিভাগের গুরুত্বপূর্ণ পদে অধিষ্ঠিত কিছু ব্যক্তির দুর্নীতির মাধ্যমে স্বল্প সময়ের ব্যবধানে বিপুল অর্থ ও বিত্তবৈভবের মালিক বনে যাওয়ার বিষয়টি দেশে-বিদেশে বহুল আলোচিত হয় তখন। ওই বঙ্গসন্তানদের লাগামহীন বিলাসিতা এবং দুর্নীতি ও লুটপাটের মাধ্যমে অঢেল সম্পদ-সম্পত্তির মালিক হওয়ার যেসব চাঞ্চল্যকর তথ্য পত্রপত্রিকা ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সুবাদে প্রতিদিন সর্বসাধারণের দৃষ্টিগোচরে আসে, তা যেন রূপকথার কল্পকাহিনীকেও হার মানায়। এসব জেনে গোটা জাতি একেবারে স্তম্ভিত হয়ে পড়ে। রাজনীতি করে, রাষ্ট্রক্ষমতায় কিংবা রাষ্ট্রক্ষমতার ছত্রছায়ায় থেকে কতিপয় ব্যক্তির অল্পদিনে শত শত, এমনকি হাজার হাজার কোটি টাকা এবং জমি ও প্লট-ফ্ল্যাটের মালিক বনে যাওয়ার ঘটনা উন্মোচিত হয়। এ পরিস্থিতিতে রাজনীতি ও রাষ্ট্রক্ষমতাসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার বিষয়টি সচেতন সবার কাছে আলোচনার বিষয় হয়ে দাঁড়ায়। দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) পুনর্গঠন এবং কমিশনের চেয়ারম্যান হিসেবে জেনারেল (অব.) হাসান মশহুদ চৌধুরীর দায়িত্বভার গ্রহণের পর চুনোপুঁটি থেকে রাঘব-বোয়াল পর্যন্ত সবারই উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা ও অস্থিরতা বেড়ে যায়। বাড়ি-গাড়ি, সম্পদ-সম্পত্তি, এমনকি পরিবার-পরিজন ফেলে রেখে অনেকেই গা-ঢাকা দেন। কেউ কেউ তো একেবারে দেশই ছেড়ে যান। ওয়ান-ইলেভেনের অব্যবহিত পর এমন ঘটনাও ঘটেছে যে, ঢাকা বা বড় বড় শহরে পরিত্যক্ত অবস্থায় গাড়ি পড়েছিল, এসবের মালিক পাওয়া যাচ্ছিল না!
২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত নবম সংসদ নির্বাচনে বিপুল জনসমর্থন নিয়ে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করে। দেখতে দেখতে এ সরকারের পাঁচ বছর মেয়াদ পূর্ণ হয়। এ সময়ে নির্বাচনী প্রতিশ্র“তি অনুযায়ী সরকার অনেক কাজই সম্পন্ন করেছে। আবার সম্পন্ন না করতে পারলেও হাত দিয়েছে অনেক গুরুত্বপূর্ণ কাজে। কিন্তু সুনির্দিষ্ট অঙ্গীকার থাকার পরও মন্ত্রী ও সংসদ সদস্যরা আয় এবং সম্পদ-সম্পত্তির সঠিক বিবরণ জমা না দেয়ায় এ সম্পর্কে সাধারণ মানুষের জানার কোনো সুযোগ হয়নি। ফলে সরকারের মেয়াদ শেষে একেকজন মন্ত্রী ও সংসদ সদস্যের সম্পদ-সম্পত্তির পরিমাণ ও উৎসের যে বিবরণ পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত হচ্ছে, তাতে সচেতন যে কারোই স্তম্ভিত হয়ে পড়ার কথা। বিশেষ করে ওয়ান-ইলেভেনের মতো ঘটনার পর গঠিত একটি সরকারের দায়িত্বপ্রাপ্তদের কাছ থেকে এমনটি কেউ আশা করেনি।
কিছুটা পেছনে ফিরে তাকালে বিষয়টি স্পষ্ট হতে পারে- ২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারি আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন সরকার গঠিত হওয়ার ঠিক এক সপ্তাহ পর অর্থমন্ত্রী সাংবাদিকদের কাছে মন্তব্য করেছিলেন, ‘আমাদের দেশে অসম্ভব বিত্তশালী কিছু রাক্ষস’ সৃষ্টি হয়েছে। একই সময় এক অনুষ্ঠানে প্রদত্ত বক্তৃতায় অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘নির্বাচনী ইশতেহারে প্রদত্ত অঙ্গীকার অনুযায়ী সরকারের স্বচ্ছতার স্বার্থে মন্ত্রী ও সংসদ সদস্যদের সম্পদের হিসাব অবশ্যই জাতির সামনে তুলে ধরা হবে। কাউকে ছাড় দেয়া হবে না। ফেব্র“য়ারি থেকেই সম্পদের হিসাব সরকারের কাছে জমা দিতে বলা হবে...’ (যুগান্তর, ১৪.০১.০৯)। এর পর সরকারের পক্ষ থেকে মন্ত্রী ও সংসদ সদস্যদের আয় ও সম্পদের হিসাব বিবরণী প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় বা স্পিকারের কাছে জমা দেয়ার জন্য দফায় দফায় নির্দেশনা দেয়া সত্ত্বেও সংশ্লিষ্ট অধিকাংশ ব্যক্তিই এক্ষেত্রে নির্লিপ্ত থাকেন। ২০১১ সালের মার্চ মাসে প্রধানমন্ত্রীর কাছে সম্পদের হিসাব বিবরণী জমা দেয়া সংক্রান্ত একটি প্রজ্ঞাপন জারি করে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। বিবরণীতে মন্ত্রীদের সম্পদ-সম্পত্তি বিষয়ক মোট ১৭টি তথ্য দিতে বলা হয়। এতেও কাজের কাজ কিছুই হয়নি।
আওয়ামী লীগ ক্ষমতাসীন হয় সম্পূর্ণ একটি ভিন্ন প্রেক্ষাপটে। সরকারের সদিচ্ছার বহিঃপ্রকাশ এবং অনেক ইতিবাচক কর্মকাণ্ড সাধারণ মানুষের মনে প্রথমদিকে ব্যাপক আশা ও উৎসাহ-উদ্দীপনার সৃষ্টি করেছিল। কিন্তু দিন দিন নানা কারণে তাতে ভাটা পড়তে শুরু করে। সবারই মনে থাকার কথা, সরকার গঠনের পর মন্ত্রিপরিষদের প্রথম বৈঠকেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মন্ত্রিপরিষদের সদস্য ও সংসদ সদস্যদের আয় ও সম্পত্তির হিসাব বিবরণী জমা দেয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন। শুধু তাই নয়, মন্ত্রী ও সংসদ সদস্যদের নিকটাত্মীয়দের সম্পদেরও হিসাব জমা দেয়ার তাগিদ দেন তিনি। এর উদ্দেশ্য ব্যাখ্যা করে প্রধানমন্ত্রী সেদিন বলেছিলেন, কেউ ক্ষমতায় এসে দুর্নীতি করে যাতে সম্পদের পাহাড় গড়তে না পারে সেজন্য শুধু মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও সংসদ সদস্যেরই নয়, তাদের নিকটাত্মীয়দেরও সম্পদ-সম্পত্তির হিসাব জমা দিতে হবে। প্রতিবছর এই সম্পদ বিবরণী থেকেই প্রতীয়মান হবে কোনো মন্ত্রী-এমপি দুর্নীতি করেছেন কিনা। তিনি আরও বলেছিলেন, যদি মন্ত্রিপরিষদের কোনো সদস্যের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ উত্থাপিত হয়, তাৎক্ষণিক ওই মন্ত্রীকে বাদ দেয়া হবে। সরকারের যাত্রা শুরু হতে না হতেই প্রধানমন্ত্রীর এহেন উদ্যোগ নিঃসন্দেহে তার সততা, জবাবদিহিতা ও সদিচ্ছার বহিঃপ্রকাশ। কিন্তু একা তিনি কী করবেন। সরকারের প্রথম বছরেই সম্পদ-সম্পত্তির হিসাব দাখিল করা নিয়ে নাকি মন্ত্রী-সংসদ সদস্যদের মাঝেই দেখা দেয় মতভেদ। ফলে বছরের পর বছর অতিবাহিত হয়ে গেলেও এ সম্পর্কে বিস্তারিত জানার আর কোনো সুযোগই হয়নি। আওয়ামী লীগ সরকারের মেয়াদ শেষে কয়েক দিন ধরে একে একে মন্ত্রী বা সংসদ সদস্যদের এবং তাদের স্ত্রীদের মালিকানার সম্পদ-সম্পত্তির বিবরণ প্রকাশিত হচ্ছে পত্রপত্রিকায়। লক্ষণীয় বিষয় হল, মন্ত্রী ও সংসদ সদস্যরা পাঁচ বছরে কী বিশাল সম্পদ-সম্পত্তির মালিক হয়েছেন, তা এখন সর্বসাধারণের গোচরে আসছে। এই চিত্র নির্বাচন কমিশনে স্বেচ্ছায় দেয়া তাদের হলফনামা থেকে বেরিয়ে এসেছে। তাদের মধ্যে অনেকেরই সম্পদের পরিমাণ নাকি এর চেয়েও অনেক অনেক গুণ বেশি। আরও চাঞ্চল্যকর খবর হচ্ছে, মন্ত্রী ও সংসদ সদস্যদের কারও কারও স্ত্রী এ সময়ে সম্পদ-সম্পত্তির দিক থেকে স্বামীকেও ছাড়িয়ে গেছেন! নগদ অর্থ, ব্যাংক ব্যালেন্স, বাড়ি-গাড়ি, আবাদি জমি, প্লট, ফ্ল্যাট, বহুতল ভবন, মার্কেট, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিকেল কলেজ, শেয়ার বিনিয়োগ, বীমা, সঞ্চয়পত্র- কোন দিক দিয়ে তারা পিছিয়ে? মন্ত্রী-
সেনা সমর্থিত ফখরুদ্দীন সরকারের কর্মকাণ্ড ও সাফল্য-ব্যর্থতা নিয়ে নানাজনের নানা মত থাকতে পারে। কিন্তু যেসব কারণে ওই সরকার মানুষের আস্থা অর্জন ও দৃষ্টি আকর্ষণ করতে পেরেছিল, সেগুলোর অন্যতম হল দুর্নীতির বিরুদ্ধে তার অবস্থান। দুর্নীতি নামক বিষবৃক্ষটি রাষ্ট্রের রন্ধ্রে রন্ধ্রে দিন দিন এর শাখা-প্রশাখা বিস্তার করে গোটা জাতিকে কী গভীর অতলে নিয়ে গেছে, তার কিছু দৃষ্টান্ত সবার সামনে উন্মোচিত হয় তৎকালীন সরকারের কর্মতৎপরতায়ই। দেশের শীর্ষ পর্যায়ের রাজনীতিক থেকে শুরু করে সাবেক মন্ত্রী, সংসদ সদস্য, আমলা, ব্যবসায়ী এবং বিভিন্ন বিভাগের গুরুত্বপূর্ণ পদে অধিষ্ঠিত কিছু ব্যক্তির দুর্নীতির মাধ্যমে স্বল্প সময়ের ব্যবধানে বিপুল অর্থ ও বিত্তবৈভবের মালিক বনে যাওয়ার বিষয়টি দেশে-বিদেশে বহুল আলোচিত হয় তখন। ওই বঙ্গসন্তানদের লাগামহীন বিলাসিতা এবং দুর্নীতি ও লুটপাটের মাধ্যমে অঢেল সম্পদ-সম্পত্তির মালিক হওয়ার যেসব চাঞ্চল্যকর তথ্য পত্রপত্রিকা ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সুবাদে প্রতিদিন সর্বসাধারণের দৃষ্টিগোচরে আসে, তা যেন রূপকথার কল্পকাহিনীকেও হার মানায়। এসব জেনে গোটা জাতি একেবারে স্তম্ভিত হয়ে পড়ে। রাজনীতি করে, রাষ্ট্রক্ষমতায় কিংবা রাষ্ট্রক্ষমতার ছত্রছায়ায় থেকে কতিপয় ব্যক্তির অল্পদিনে শত শত, এমনকি হাজার হাজার কোটি টাকা এবং জমি ও প্লট-ফ্ল্যাটের মালিক বনে যাওয়ার ঘটনা উন্মোচিত হয়। এ পরিস্থিতিতে রাজনীতি ও রাষ্ট্রক্ষমতাসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার বিষয়টি সচেতন সবার কাছে আলোচনার বিষয় হয়ে দাঁড়ায়। দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) পুনর্গঠন এবং কমিশনের চেয়ারম্যান হিসেবে জেনারেল (অব.) হাসান মশহুদ চৌধুরীর দায়িত্বভার গ্রহণের পর চুনোপুঁটি থেকে রাঘব-বোয়াল পর্যন্ত সবারই উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা ও অস্থিরতা বেড়ে যায়। বাড়ি-গাড়ি, সম্পদ-সম্পত্তি, এমনকি পরিবার-পরিজন ফেলে রেখে অনেকেই গা-ঢাকা দেন। কেউ কেউ তো একেবারে দেশই ছেড়ে যান। ওয়ান-ইলেভেনের অব্যবহিত পর এমন ঘটনাও ঘটেছে যে, ঢাকা বা বড় বড় শহরে পরিত্যক্ত অবস্থায় গাড়ি পড়েছিল, এসবের মালিক পাওয়া যাচ্ছিল না!
২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত নবম সংসদ নির্বাচনে বিপুল জনসমর্থন নিয়ে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করে। দেখতে দেখতে এ সরকারের পাঁচ বছর মেয়াদ পূর্ণ হয়। এ সময়ে নির্বাচনী প্রতিশ্র“তি অনুযায়ী সরকার অনেক কাজই সম্পন্ন করেছে। আবার সম্পন্ন না করতে পারলেও হাত দিয়েছে অনেক গুরুত্বপূর্ণ কাজে। কিন্তু সুনির্দিষ্ট অঙ্গীকার থাকার পরও মন্ত্রী ও সংসদ সদস্যরা আয় এবং সম্পদ-সম্পত্তির সঠিক বিবরণ জমা না দেয়ায় এ সম্পর্কে সাধারণ মানুষের জানার কোনো সুযোগ হয়নি। ফলে সরকারের মেয়াদ শেষে একেকজন মন্ত্রী ও সংসদ সদস্যের সম্পদ-সম্পত্তির পরিমাণ ও উৎসের যে বিবরণ পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত হচ্ছে, তাতে সচেতন যে কারোই স্তম্ভিত হয়ে পড়ার কথা। বিশেষ করে ওয়ান-ইলেভেনের মতো ঘটনার পর গঠিত একটি সরকারের দায়িত্বপ্রাপ্তদের কাছ থেকে এমনটি কেউ আশা করেনি।
কিছুটা পেছনে ফিরে তাকালে বিষয়টি স্পষ্ট হতে পারে- ২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারি আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন সরকার গঠিত হওয়ার ঠিক এক সপ্তাহ পর অর্থমন্ত্রী সাংবাদিকদের কাছে মন্তব্য করেছিলেন, ‘আমাদের দেশে অসম্ভব বিত্তশালী কিছু রাক্ষস’ সৃষ্টি হয়েছে। একই সময় এক অনুষ্ঠানে প্রদত্ত বক্তৃতায় অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘নির্বাচনী ইশতেহারে প্রদত্ত অঙ্গীকার অনুযায়ী সরকারের স্বচ্ছতার স্বার্থে মন্ত্রী ও সংসদ সদস্যদের সম্পদের হিসাব অবশ্যই জাতির সামনে তুলে ধরা হবে। কাউকে ছাড় দেয়া হবে না। ফেব্র“য়ারি থেকেই সম্পদের হিসাব সরকারের কাছে জমা দিতে বলা হবে...’ (যুগান্তর, ১৪.০১.০৯)। এর পর সরকারের পক্ষ থেকে মন্ত্রী ও সংসদ সদস্যদের আয় ও সম্পদের হিসাব বিবরণী প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় বা স্পিকারের কাছে জমা দেয়ার জন্য দফায় দফায় নির্দেশনা দেয়া সত্ত্বেও সংশ্লিষ্ট অধিকাংশ ব্যক্তিই এক্ষেত্রে নির্লিপ্ত থাকেন। ২০১১ সালের মার্চ মাসে প্রধানমন্ত্রীর কাছে সম্পদের হিসাব বিবরণী জমা দেয়া সংক্রান্ত একটি প্রজ্ঞাপন জারি করে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। বিবরণীতে মন্ত্রীদের সম্পদ-সম্পত্তি বিষয়ক মোট ১৭টি তথ্য দিতে বলা হয়। এতেও কাজের কাজ কিছুই হয়নি।
আওয়ামী লীগ ক্ষমতাসীন হয় সম্পূর্ণ একটি ভিন্ন প্রেক্ষাপটে। সরকারের সদিচ্ছার বহিঃপ্রকাশ এবং অনেক ইতিবাচক কর্মকাণ্ড সাধারণ মানুষের মনে প্রথমদিকে ব্যাপক আশা ও উৎসাহ-উদ্দীপনার সৃষ্টি করেছিল। কিন্তু দিন দিন নানা কারণে তাতে ভাটা পড়তে শুরু করে। সবারই মনে থাকার কথা, সরকার গঠনের পর মন্ত্রিপরিষদের প্রথম বৈঠকেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মন্ত্রিপরিষদের সদস্য ও সংসদ সদস্যদের আয় ও সম্পত্তির হিসাব বিবরণী জমা দেয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন। শুধু তাই নয়, মন্ত্রী ও সংসদ সদস্যদের নিকটাত্মীয়দের সম্পদেরও হিসাব জমা দেয়ার তাগিদ দেন তিনি। এর উদ্দেশ্য ব্যাখ্যা করে প্রধানমন্ত্রী সেদিন বলেছিলেন, কেউ ক্ষমতায় এসে দুর্নীতি করে যাতে সম্পদের পাহাড় গড়তে না পারে সেজন্য শুধু মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও সংসদ সদস্যেরই নয়, তাদের নিকটাত্মীয়দেরও সম্পদ-সম্পত্তির হিসাব জমা দিতে হবে। প্রতিবছর এই সম্পদ বিবরণী থেকেই প্রতীয়মান হবে কোনো মন্ত্রী-এমপি দুর্নীতি করেছেন কিনা। তিনি আরও বলেছিলেন, যদি মন্ত্রিপরিষদের কোনো সদস্যের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ উত্থাপিত হয়, তাৎক্ষণিক ওই মন্ত্রীকে বাদ দেয়া হবে। সরকারের যাত্রা শুরু হতে না হতেই প্রধানমন্ত্রীর এহেন উদ্যোগ নিঃসন্দেহে তার সততা, জবাবদিহিতা ও সদিচ্ছার বহিঃপ্রকাশ। কিন্তু একা তিনি কী করবেন। সরকারের প্রথম বছরেই সম্পদ-সম্পত্তির হিসাব দাখিল করা নিয়ে নাকি মন্ত্রী-সংসদ সদস্যদের মাঝেই দেখা দেয় মতভেদ। ফলে বছরের পর বছর অতিবাহিত হয়ে গেলেও এ সম্পর্কে বিস্তারিত জানার আর কোনো সুযোগই হয়নি। আওয়ামী লীগ সরকারের মেয়াদ শেষে কয়েক দিন ধরে একে একে মন্ত্রী বা সংসদ সদস্যদের এবং তাদের স্ত্রীদের মালিকানার সম্পদ-সম্পত্তির বিবরণ প্রকাশিত হচ্ছে পত্রপত্রিকায়। লক্ষণীয় বিষয় হল, মন্ত্রী ও সংসদ সদস্যরা পাঁচ বছরে কী বিশাল সম্পদ-সম্পত্তির মালিক হয়েছেন, তা এখন সর্বসাধারণের গোচরে আসছে। এই চিত্র নির্বাচন কমিশনে স্বেচ্ছায় দেয়া তাদের হলফনামা থেকে বেরিয়ে এসেছে। তাদের মধ্যে অনেকেরই সম্পদের পরিমাণ নাকি এর চেয়েও অনেক অনেক গুণ বেশি। আরও চাঞ্চল্যকর খবর হচ্ছে, মন্ত্রী ও সংসদ সদস্যদের কারও কারও স্ত্রী এ সময়ে সম্পদ-সম্পত্তির দিক থেকে স্বামীকেও ছাড়িয়ে গেছেন! নগদ অর্থ, ব্যাংক ব্যালেন্স, বাড়ি-গাড়ি, আবাদি জমি, প্লট, ফ্ল্যাট, বহুতল ভবন, মার্কেট, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিকেল কলেজ, শেয়ার বিনিয়োগ, বীমা, সঞ্চয়পত্র- কোন দিক দিয়ে তারা পিছিয়ে? মন্ত্রী-
No comments